প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
হায়দরাবাদে ভক্তি সন্ন্যাসী শ্রী রামানুজাচার্যের ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’র উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
05 FEB 2022 10:17PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
ওম অসমদ, গুরুভ্যো নমঃ।
ওম শ্রীমতে রামানুজায় নমঃ!
আজকের এই অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে উপস্থিত তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল ডঃ তামিলসাই সৌন্দর রাজনজি, পুজনীয় শ্রী জীয়র স্বামীজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী জি কিষাণ রেড্ডিজি, মাননীয় শ্রী ডঃ রামেশ্বর রাওজি, ভাগবদ বিভূতিসম্পন্ন সকল পুজনীয় সন্ন্যাসীগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
আজ মা সরস্বতীর আরাধানার পবিত্র উৎসব। বসন্ত পঞ্চমীর শুভ উদযাপন। মা সারদার বিশেষ কৃপায় অবতার শ্রী রামানুজাচার্যজির অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তি এই উৎসব উপলক্ষে স্থাপিত হচ্ছে। আমি আপনাদের সকলকে বসন্ত পঞ্চমীর শুভকামনা জানাই। আমি মা সরস্বতীর কাছে প্রার্থনা করি যে জগদ্গুরু রামানুজাচার্যজির জ্ঞান গোটা বিশ্বকে পথ দেখাক।
বন্ধুগণ,
আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –
“ধ্যান মূলম গুরু মূর্তি!”
অর্থাৎ, আমাদের গুরুর মূর্তিই আমাদের ধ্যানের কেন্দ্র কারণ, গুরুর মাধ্যমেই আমাদের জন্য জ্ঞান স্বয়ং প্রকট হন, যাঁরা অবোধ তাঁদের বোধ হয়। এই প্রেরণা অপ্রকটকে প্রকট করে, সুক্ষ্মকেও সাকার করে এই সঙ্কল্প। এটাই ভারতের পরম্পরা। আমরা সর্বদাই সেই মূল্যবোধ এবং দর্শনগুলিকে আকার দিয়েছি, যেগুলি যুগে যুগে মানবতাকে আলোকবর্তিকা দেখিয়ে গেছে। আজ আরও একবার জগদ্গুরু শ্রী রামানুজাচার্যজির এই অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল মূর্তির মাধ্যমে ভারত মানবিক প্রাণশক্তি এবং প্রেরণাকে মূর্ত রূপ প্রদান করছে। রামানুজাচার্যজির এই মূর্তি তাঁর জ্ঞান, বৈরাগ্য এবং আদর্শসমূহের প্রতীক। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই মূর্তি শুধু আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা জোগাবে না, ভারতের প্রাচীন পরিচয়কেও শক্তিশালী করবে। আমি আপনাদের সবাইকে, সমস্ত দেশবাসীকে আর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা রামানুজাচার্যজির সকল অনুগামীদেরকেও এই শুভ অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
এখন আমি ১০৮ দিব্য দেশম মন্দির দর্শন করে এসেছি। আলোয়ার সন্ন্যাসীরা যে ১০৮ দিব্য দেশম মন্দিরের দর্শন সমগ্র ভারত ভ্রমণ করার পর করেছিলেন, এরকম অনেকটা সৌভাগ্য আজ আমার শ্রী রামানুজাচার্যজির কৃপায় এখানে এসে হয়েছে। মানবতার কল্যাণের যে যজ্ঞ তিনি একবিংশ শতাব্দীতে শুরু করেছিলেন, সেই সঙ্কল্প এখানে ১২ দিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুনরুচ্চারণ করা হচ্ছিল। পুজনীয় শ্রী জীয়র স্বামীজির কৃপায় আজ ‘বিশ্বক সেন দৃষ্টি যজ্ঞ’-এর পূর্ণাহুতিতে সামিল হওয়ার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আমি এর জন্য জীয়র স্বামীজিকে বিশেষ রূপে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। তিনি আমাকে বলেছেন যে, ‘বিশ্বক সেন দৃষ্টি যজ্ঞ’ সঙ্কল্পগুলি এবং লক্ষ্যগুলি পূরণের যজ্ঞ। আমি এই যজ্ঞের সঙ্কল্পকে, দেশের অমৃত সঙ্কল্পগুলির সিদ্ধির জন্য নতমস্তকে সমর্পণ করছি। এই যজ্ঞের ফলকে আমাদের ১৩০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্নগুলির পূর্তি অর্পণ করছি।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের অধিকাংশ সভ্যতায়, অধিকাংশ দর্শনে কোনও ভাবনাকে হয় স্বীকার করা হয়েছে অথবা তার খণ্ডন করা হয়েছে। কিন্তু ভারত একটি এমন দেশ যার মনীষীরা জ্ঞানকে খণ্ডন-মণ্ডন, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতি – এসবের ঊর্ধ্বে রেখে দেখেছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা স্বয়ং তার মাধ্যমে ওপরে উঠেছেন। দিব্যদৃষ্টি দিয়ে তাঁরা বিবাদকে দেখেছেন। আমাদের দেশে অদ্বৈতও আছে, দ্বৈতও আছে আর এই দ্বৈত-অদ্বৈতকে সমাহিত করে শ্রী রামানুজাচার্যজির বিশিষ্টাদ্বৈত ও আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস। রামানুজাচার্যজির জ্ঞানের একটি ভিন্ন সৌন্দর্য রয়েছে। সাধারণ দৃষ্টিতে যে ভাবনা পরস্পর বিরোধাভাষী বলে মনে হয়, রামানুজাচার্যজি তাকে অত্যন্ত সরলভাবে একই সূত্রে মালা গেঁথে দেন। তাঁর জ্ঞান, তাঁর ব্যাখার মাধ্যমে সাধারণ থেকে অতি সাধারণ মানুষও তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান। আপনারা দেখুন, একদিকে রামানুজাচার্যজির ভাষ্যে রয়েছে জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা, অন্যদিকে তিনিই ভক্তিমার্গের জনক। একদিকে তিনি সমৃদ্ধ সন্ন্যাস পরম্পরার সন্ন্যাসী ছিলেন, আর অন্যদিকে গীতাভাষ্যে কর্মের গুরুত্বকেও তিনি অত্যন্ত উত্তম রূপে প্রস্তুত করেছেন। তিনি নিজেও তাঁর সমগ্র জীবন কর্মের জন্য সমর্পণ করে দিয়েছিলেন। রামানুজাচার্যজি অনেক সংস্কৃত গ্রন্থও রচনা করেছেন, আবার তামিল ভাষাতেও ভক্তিমার্গে ততটাই গুরুত্ব দিয়েছেন। আজও রামানুজ পরম্পরার মন্দিরগুলিতে থিরুপ্পাওয়াই-এর পাঠ ছাড়া সম্ভবত কোনও অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না।
বন্ধুগণ,
আজ যখন বিশ্বে সামাজিক সংস্কারের প্রসঙ্গ ওঠে, প্রগতিশীলতা নিয়ে কথা হয়, তখন মনে করা হয় যে এই সংস্কার শিকড় থেকে করলে তবেই সুসম্পন্ন হবে। কিন্তু যখন আমরা রামানুজাচার্যজিকে দেখি, তখন আমরা অনুভব করি যে প্রগতিশীলতা এবং প্রাচীনত্বের মধ্যে কোনও বিরোধিতা নেই। এটা জরুরি নয় যে সংস্কারের জন্য আমাদের নিজেদের শিকড় থেকে দূরে যেতে হবে! বরং আমাদের উচিৎ নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, আমাদের বাস্তবিক শক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়া ও শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকা। আজ থেকে ১ হাজার বছর আগে কুসংস্কারের চাপে, অন্ধবিশ্বাসের চাপে তাঁকে কতটা লড়াই করতে হয়েছিল তা আজ কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু রামানুজাচার্যজি এই সমাজের সংস্কারের জন্য সমাজকে ভারতের প্রকৃত ভাবনার সঙ্গে পরিচিত করিয়েছেন। তিনি দলিত, পিছিয়ে পড়া মানুষদেরও বুকে টেনে নিয়েছেন। সেই সময় যে জাতিদের নিয়ে কিছু অন্যরকম ভাবনা ছিল, সেই জাতিগুলিকে তিনি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। যাদবগিরিতে তিনি নারায়ণ মন্দির তৈরি করেছেন, যেখানে দলিতদের দর্শন-পূজনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। রামানুজাচার্যজি বলেছেন, ‘ধর্ম বলে, “ন জাতিঃ কারণং লোকে গুণাঃ, কল্যাণ হৈতবঃ” অর্থাৎ, বিশ্বে শুধু জাতির মাধ্যমে নয়, গুণগুলির মাধ্যমেও কল্যাণ হয়।’ রামানুজাচার্যজির গুরু শ্রী মহাপূর্ণজি একবার ভিন্ন জাতির একজন বন্ধুর অন্তিম সংস্কার করেছিলেন। সেই সময় রামানুজাচার্যজি মানুষকে ভগবান শ্রীরামের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, “যদি ভগবান রাম নিজের হাতে জটায়ুর অন্তিম সংস্কার করতে পারেন, তাহলে আমাদের বৈষম্যের ভাবনার ভিত্তিও ধর্মে কিভাবে থাকতে পারে।” এই বক্তব্য নিজেই একটি বড় বার্তা।
বন্ধুগণ,
আমাদের সংস্কৃতির এটা অনেক বড় বৈশিষ্ট্য যে সংস্কারের জন্য আমাদের সমাজের মধ্যে থেকেই মনীষীরা উঠে আসেন। যুগ যুগ ধরে আমরা দেখে এসেছি, সমাজে যখনই কিছু কুসংস্কার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখনই কোনও না কোনও মহাপুরুষ আমাদের সমাজ থেকেই জন্মগ্রহণ করেন। এটা আমাদের হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা যে এমন সমাজ সংস্কারকরা সব সময় যে নিজের কালে স্বীকৃতি, সম্মান ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তা নয়, আবার অনেকে পেয়েওছেন। তাঁদের মধ্যেই প্রবল বিরোধিতা ও প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন, আবার অনেককে সহজেই মেনে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের অনেককেই নানা সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছে, আবার অনেককে হয়নি। কিন্তু তাঁদের ভাবনায়, তাঁদের তত্ত্বে এতটাই শক্তি থাকত, তাঁদের প্রত্যয় এত সুদৃঢ় ছিল যে তা সমাজের কু-রীতিগুলির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করতেন। কিন্তু যখন সমাজ তাঁদের বক্তব্যকে বুঝতে পারত, তখন যেসব ভাবনার কখনও বিরোধিতা হয়েছে, সেগুলিও দ্রুত স্বীকৃতি পেত, ততটাই সম্মান ও সমাদর পেত। এ থেকে এটা প্রমাণ হয় যে কু-রীতিগুলির পক্ষে, কুসংস্কারের পক্ষ, অন্ধবিশ্বাসের পক্ষে আমাদের সমাজে সর্বতোভাবে সামাজিক স্বীকৃতি থাকে না। যাঁরা কু-রীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন, যাঁরা সমাজ সংস্কার করেন, আমাদের দেশে তাঁরাই মান-সম্মান পান।
ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই রামানুজাচার্যজির জীবনের বিভিন্ন মাত্রার সঙ্গে পরিচিত। তিনি সমাজকে সঠিক দিশা দেওয়ার জন্য আধ্যাত্মের বার্তাগুলিকে প্রয়োগ করতেন আর ব্যবহারিক জীবনকেও প্রয়োগ করতেন। জাতির নাম নিয়ে যাঁদের সঙ্গে বৈষম্য হত, রামানুজাচার্যজি তাঁদের নাম দিয়েছিলেন ‘থিরুকুলথার’ অর্থাৎ, লক্ষ্মীর বংশে জন্মগ্রহণকারী। ‘থিরু’ মানে ‘শ্রী’। ‘থিরুকুল’ মানে ‘শ্রীকুল’। তার মানে, যাঁরা লক্ষ্মীর কুলে জন্মগ্রহণ করেন, সেই ঈশ্বরের আশীর্বাদপ্রাপ্ত মানুষজন। তিনি স্নান করে আসার সময় নিজের শিষ্য ধনুর্দাসের কাঁধে হাত রেখে হাঁটতেন। এমনভাবেই রামানুজাচার্যজি অস্পৃশ্যতার কুসংস্কার মেটানোর সঙ্কেত দিয়েছিলেন। এর ফলেই বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতো সাম্যবাদী মানুষ এবং আধুনিক নেতাও রামানুজাচার্যজির দর্শনের প্রশংসক ছিলেন। তাঁর সমকালীন সমাজকেও তিনি বলতেন, “যদি ধর্ম থেকে শিখতে হয়, তাহলে রামানুজাচার্যজির দর্শন থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর।” সেজন্য আজ রামানুজাচার্যজির বিশাল মূর্তিটি ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’ রূপে সাম্যের বার্তা দিচ্ছে। এই বার্তা নিয়ে আজ দেশ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবাক প্রয়াস’-এর মন্ত্র নিয়ে নতুন ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করছে। উন্নয়ন হোক, সকলের হোক, কোনও রকম বৈষম্যহীনভাবে হোক। সামাজিক ন্যায় যেন সবাই পায়, বৈষম্যহীনভাবে পায়। যাঁদেরকে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে প্রতারিত করা হয়েছে, তাঁরা যেন সম্পূর্ণ গরিমার সঙ্গে উন্নয়নের অংশীদার হয়ে উঠতে পারেন, সেজন্য আজ পরিবর্তিত ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করছে। আজ সরকার যে প্রকল্পগুলি চালু করেছে সেগুলির মাধ্যমে দেশের দলিত, পিছিয়ে পড়া ভাই-বোনেরা লাভবান হচ্ছেন। তাঁদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হোক, কিংবা উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সংযোগ দেওয়া হোক। ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধা হোক কিংবা বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ হোক। জন ধন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হোক, কিংবা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের মাধ্যমে কোটি কোটি শৌচালয় নির্মাণ করা হোক – এই সকল প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার দলিত, পিছিয়ে পড়া, গরিব, শোষিত, বঞ্চিত সকলের উন্নয়ন করেছে, কোনও বৈষম্য না রেখেই সকলকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
বন্ধুগণ,
রামানুজাচার্যজি বলতেন, “অঈরগলুক্কুল বেডম ইল্লৈ” অর্থাৎ, সমস্ত জীব সমান। তিনি ব্রহ্ম এবং জীবের একাত্মতার কথা বলতে শুরু করলে থামতেন না। তিনি বেদান্তের এই সূত্রকে বিশ্বাস করতেন এবং নিজের জীবনে প্রয়োগ করতেন। সেজন্য নিজের সঙ্গে অন্য কারোর কোনও পার্থক্য তিনি রাখতেন না। এমনকি তিনি নিজের কল্যাণের থেকেও বেশি জীবের কল্যাণের চিন্তা করতেন। তাঁর গুরু অনেক চেষ্টার পর যখন তাঁকে জ্ঞানদান করেন, তখন তিনি তাঁকে সেই জ্ঞান গুপ্ত রাখতে বলেন, কারণ, সেই গুরুমন্ত্র তাঁর নিজের কল্যাণের মন্ত্র ছিল। তিনি অনেক সাধনা করেছিলেন, তপস্যা করেছিলেন, নিজের তপস্যায় জীবন সমর্পণ করেছিলেন, তবেই তিনি এই গুরুমন্ত্র পেয়েছিলেন। কিন্তু রামানুজাচার্যজির ভাবনা ছিল অন্যরকম। রামানুজাচার্যজি বলেন -
“পতিষ্যে এক এভাহং, নরকে গুরু পাতকাৎ।
সর্বে গচ্ছন্তু ভবতাং, কৃপয়া পরমং পদম।”
অর্থাৎ, আমাকে যদি একা নরকে যেতে হয় তবু ঠিক আছে, কিন্তু বাকি সকলের কল্যাণ হওয়া উচিৎ। তারপর তিনি মন্দিরের শিখরে চড়ে প্রত্যেক নর-নারীকে সেই মন্ত্র শুনিয়েছিলেন যে মন্ত্রটি তাঁর গুরুদেব তাঁর কল্যাণে তাঁকে দিয়েছিলেন, এবং গুপ্ত রাখতে বলেছিলেন। সাম্যের এমন অমৃত রামানুজাচার্যজির মতো কোনও মহাপুরুষই বের করতে পারেননি, যিনি বেদ, বেদান্তের বাস্তবিক দর্শন করেছেন।
বন্ধুগণ,
রামানুজাচার্যজি ভারতের একতা এবং অখণ্ডতারও এক দেদীপ্যমান প্রেরণা। তাঁর জন্ম দক্ষিণ ভারতে হয়েছে, কিন্তু তাঁর প্রভাব দক্ষিণ থেকে উত্তর, আর পূর্ব থেকে পশ্চিম – সমগ্র ভারতে রয়েছে। অন্নামাচার্যজি তেলেগুতে তাঁর প্রশংসা করেছেন। কনকদাসজি কন্নড় ভাষায় রামানুজাচার্যজির গরিমা কীর্তন করেছিলেন। গুজরাট এবং রাজস্থানে যদি আপনারা যান, তখন সেখানেও অনেক সন্ন্যাসীর উপদেশে রামানুজাচার্যজির দর্শনের সুরভি অনুভব করবেন, আর উত্তর ভারতে রামানুজানন্দীয় পরম্পরার গোস্বামী তুলসীদাসজি থেকে শুরু করে কবীরদাসজি পর্যন্ত প্রত্যেক মহান সন্ন্যাসীর জন্য রামানুজাচার্যজি পরম গুরুর সম্মান পেয়ে এসেছেন। একজন সন্ন্যাসী কিভাবে তাঁর আধ্যাত্মিক প্রাণশক্তির মাধ্যমে গোটা ভারতকে একতার সূত্রে গ্রন্থিত করতে পারেন, রামানুজাচার্যজির জীবন থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পাই। এই আধ্যাত্মিক চেতনাই দাসত্বের হাজার বছরের কালখণ্ডে ভারতের চেতনাকে জাগ্রত রেখেছিল।
বন্ধুগণ,
এটাও একটি সুখকর সংযোগ যে শ্রী রামানুজাচার্যজিকে নিয়ে এই সমারোহ সেই সময়ে হচ্ছে যখন দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি পালন করছে। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করছি। আজ দেশ তার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কৃতজ্ঞ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছে। আমাদের ইতিহাস থেকে আমরা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা গ্রহণ করছি, প্রাণশক্তি আহরণ করছি। সেজন্য অমৃত মহোৎসবের এই আয়োজন স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের ঐতিহ্যগুলিকেও উদযাপন করছে। আমরা জানি, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু নিজের সত্ত্বা এবং নিজেদের অধিকারের লড়াই ছিল না, এই লড়াই একদিকে ঔপনিবেশিক মানসিকতার বিরুদ্ধে ছিল, আর অন্যটি ‘বাঁচো এবং বাঁচতে দাও’ – এই ভাবনা-নির্ভর ছিল। এতে একদিকে এই জাতিগত শ্রেষ্ঠতা এবং ভৌতিকতাবাদের উন্মত্ততা ছিল, আর অন্যদিকে মানবতা এবং আধ্যাত্মের ওপর আস্থা ছিল। এই লড়াইয়ে ভারত বিজয়ী হয়েছিল, ভারতের পরম্পরার জয় হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাম্য, মানবতা এবং আধ্যাত্মের সেই প্রাণশক্তিও যুক্ত হয়েছিল, যা ভারতবর্ষ রামানুজাচার্যজির মতো সন্ন্যাসীদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।
আমরা কি গান্ধীজির নেতৃত্ব ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে কল্পনা করতে পারি? আমরা কি অহিংসা এবং সত্য – এই দুই আদর্শ ছাড়া গান্ধীজির কল্পনা করতে পারি? আজও গান্ধীজির নাম যখন উচ্চারিত হয়, তখন আমাদের অন্তর্মনে ‘বৈষ্ণব জন তো তেনে কহিয়ে’-এর ধুন বাজতে শুরু করে, সেই সুরে আমরা দুলতে থাকি। এর রচয়িতা নরসী মেহতাজি, তিনি রামানুজাচার্যজির ভক্তি পরম্পরারই একজন মহান সন্ন্যাসী ছিলেন। সেজন্য আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনাকে প্রাণশক্তি জোগান দিচ্ছিল। তেমনই প্রাণশক্তি স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমাদের অমৃত সঙ্কল্পগুলিতেও যেন সঞ্চারিত হয়। আর আজ যখন আমি ভাগ্যনগরে দাঁড়িয়ে আছি, হায়দরাবাদে রয়েছি, তখন সর্দার প্যাটেলজির কথা অবশ্যই বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাইব। এমনিতে জি কিষাণ রেড্ডিজি নিজের বক্তব্যে বিস্তারিতভাবে তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন। ভাগ্যনগরে কে এমন ভাগ্যশালী রয়েছেন, কে এমন হায়দরাবাদী রয়েছেন যিনি সর্দার প্যাটেলের দূরদৃষ্টি, সর্দার প্যাটেলের সামর্থ্য এবং হায়দরাবাদের ‘আন বান সান’-এর জন্য সর্দার সাহেবের কূটনীতিকে সেলাম জানাবেন না। আজ দেশের একদিকে সর্দার সাহেবের ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ একতার শপথ পুনরুচ্চারণ করছে, অন্যদিকে রামানুজাচার্যজির ‘স্ট্যাচু অফ ইকুয়ালিটি’ সাম্যের বার্তা দিচ্ছে। এটাই একটি দেশ রূপে ভারতের চিরপুরাতন বৈশিষ্ট্য। আমাদের একতার সত্ত্বা শক্তির বুনিয়াদে দাঁড়িয়ে নেই, আমাদের একতা সাম্য এবং সমাদরের এই সূত্র থেকে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হতে থাকে।
আর বন্ধুগণ,
আজ যখন আমি তেলেঙ্গানায় রয়েছি, তখন একথার উল্লেখ অবশ্যই করব কিভাবে তেলেগু কালচার ভারতের বৈচিত্র্যকে শক্তিশালী করেছে। তেলেগু সংস্কৃতির শিকড়গুলির বিস্তার অনেক শতাব্দী ধরে মাটির গভীরে ছড়িয়ে গেছে। অনেক মহান রাজা, রানি এর ধ্বজাবাহক ছিলেন। সাতবাহন সাম্রাজ্য থেকে শুরু কাকাতিয়া সাম্রাজ্য কিংবা বিজয়নগর সাম্রাজ্য – সকলেই তেলেগু সংস্কৃতির পতাকাকে সুদৃঢ় করেছে। মহান কবিরা তেলেগু সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন। গত বছরই তেলেঙ্গানায় অবস্থিত ত্রয়োদশ শতাব্দীর কাকাতিয়া রুদ্রেশ্বর-রামাপ্পা মন্দিরকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ বা বিশ্ব ঐতিহ্য স্থল হিসেবে ঘোষণা করেছে। ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনও তেমনই পোচমপল্লীকে ভারতের সবচাইতে ভালো ‘ট্যুরিজম ভিলেজ’ বা পর্যটন-বান্ধব গ্রামের স্বীকৃতি দিয়েছে। পোচমপল্লীর মহিলাদের দক্ষতা, পোচমপল্লীর শাড়ির রূপ বিশ্ব বিখ্যাত। এটা সেই সংস্কৃতি যা আমাদের সর্বদাই সদ্ভাব, সৌভ্রার্তৃত্ব এবং নারীশক্তির সম্মান করতে শিখিয়েছে।
তেলেগু সংস্কৃতির এই গৌরবময় পরম্পরাকে আজ তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিও সম্পূর্ণ মর্যাদা ও শক্তির সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। তেলেগু সিনেমার পরিধি কেবল ততটাই নয়, যতদূর তেলেগু ভাষা বলা হয়। এর বিস্তার গোটা বিশ্বে। সিলভার স্ক্রিন থেকে শুরু করে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত এই ক্রিয়েটিভিটির চর্চা বা এই সৃষ্টিশীলতা নিয়ে আলাপ-আলোচনা সর্বত্র চলছে। ভারতের বাইরেও অনেক প্রশংসা কুড়োচ্ছেন এখানকার মেধাবী মানুষেরা। তেলেগু ভাষাভাষী মানুষের কলা ও সংস্কৃতির প্রতি এই সমর্পণ, সকলের জন্য প্রেরণার উৎস।
বন্ধুগণ,
স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে, এই অমৃতকালে শ্রী রামানুজাচার্যজির এই মূর্তি প্রত্যেক দেশবাসীকে নিরন্তর প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, স্বাধীনতার অমৃতকালে আমরা সেই কু-রীতিগুলিকেও সম্পূর্ণ রূপে সমাপ্ত করতে পারব যেগুলিকে সমাপ্ত করার জন্য শ্রী রামানুজাচার্যজি সমাজকে জাগ্রত করেছিলেন। এই ভাবনা নিয়ে পূজ্য স্বামীজিকে সাদর ধন্যবাদ জানিয়ে এই পবিত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য প্রদানের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা প্রভু রামানুজাচার্যজির দর্শন থেকে প্রভাবিত ও অনুপ্রেরণা গ্রহণ করা প্রত্যেককে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বাণীকে বিরাম দিচ্ছি।
আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
CG/SB/DM/
(Release ID: 1796354)
Visitor Counter : 220
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam