প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের নিউ ভাওপুর-নিউ খুরজা শাখার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 29 DEC 2020 2:03PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০

উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দীবান প্যাটেলজি, জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলজি, সংসদে আমার সহযোগীবৃন্দ, উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রীগণ, এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, ভাই ও বোনেরা। আজকের দিনটি ভারতীয় রেলের গৌরবময় অতীতকে একবিংশ শতাব্দীর নতুন পরিচয় প্রদানকারী এবং ভারত ও ভারতীয় রেলের সামর্থ্য বৃদ্ধিকারী একটি উল্লেখযোগ্য দিন। আজ স্বাধীনতার পর সব থেকে বড় এবং আধুনিক রেল পরিকাঠামো প্রকল্প আমরা বাস্তবায়িত হতে দেখছি।

বন্ধুগণ,

আজ যখন খুরজা-ভাওপুর পথে, এই ফ্রেট করিডর রুটে প্রথম মালগাড়ি যাত্রা শুরু করল, এর চাকার গুঞ্জনে নতুন ভারতের, আত্মনির্ভর ভারতের গর্ব স্পষ্টভাবে গুঞ্জরিত এবং অনুরণিত হতে শোনা গেছে। প্রয়াগরাজের 'অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার'টিও নতুন ভারতের নতুন সামর্থ্যের প্রতীক। এটি বিশ্বের উন্নত এবং আধুনিকতম কন্ট্রোল সেন্টারগুলির মধ্যে অন্যতম। আর, এসব জেনে যে কারোর গর্ব হবে, এর ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য সংক্রান্ত যে প্রযুক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে তা ভারতেই প্রস্তুত হয়েছে এবং ভারতীয়দের দ্বারাই প্রস্তুত করা হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

পরিকাঠামো যে কোনও দেশের সামর্থ্যের সব থেকে বড় ভিত্তি। পরিকাঠামোর মধ্যেই যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কোনও দেশের শিরা-ধমনীর মতো, সংবহনতন্ত্রের মতো। এই শিরা-ধমনী বা সংবহনতন্ত্র যত উন্নত হবে, দেশও ততই সুস্থ এবং সামর্থ্যবান হয়ে উঠবে।

আজ যখন ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হওয়ার পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতেই হবে। এই ভাবনা নিয়েই বিগত ছয় বছরে ভারতে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রত্যেক দিক নিয়ে অগ্রাধিকারের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। হাইওয়ে থেকে শুরু করে রেলওয়ে, এয়ারওয়ে, ওয়াটারওয়ে এবং আই-ওয়ে। অর্থনৈতিক দ্রুতগতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই পাঁচটি চাকাকে শক্তিশালী করে তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে গতি বাড়ানো হচ্ছে। ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের একটি বড় শাখার উদ্বোধন এই লক্ষ্যে একটি অত্যন্ত বড় পদক্ষেপ।

বন্ধুগণ,

এই ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরকে সাধারণ কথ্যভাষায় মালগাড়ির জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ রেললাইন, বিশেষ ব্যবস্থা বলা যেতে পারে। কিন্তু দেশের জন্য এই ধরনের ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কেন প্রয়োজন রয়েছে? আমাদের কৃষি হোক, শিল্প হোক কিংবা বাজার – এসবক'টিই পণ্য পরিবহণের ওপর নির্ভর করে। কোথাও কোনও ফসল উৎপাদিত হলে তাকে দেশের অন্যান্য প্রান্তে দ্রুত পৌঁছে দিতে হয়। রপ্তানির জন্য সমুদ্রবন্দরগুলিতে পৌঁছে দিতে হয়। এভাবে শিল্পের ক্ষেত্রে কোথাও থেকে কাঁচামাল সমুদ্রপথে আসে, আবার কারখানায় উৎপন্ন পণ্য বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হয়, কিংবা রপ্তানির জন্য সেগুলিকে আবার সমুদ্রবন্দরে পৌঁছে দিতে হয়। এই কাজে আমাদের দেশে সবচাইতে বড় মাধ্যম সবসময়ই রেলপথ। দেশে যেভাবে জনসংখ্যা বেড়েছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হয়েছে, তেমনই এই পণ্য পরিবহণের নেটওয়ার্কের ওপরও ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরেকটা সমস্যা হল, আমাদের দেশে যাত্রীদের জন্য যে রেলগাড়ি আর মালগাড়ি সবই একই রেলপথে যাতায়াত করে। ফলে মালগাড়ির গতি শ্লথ হয়। এহেন পরিস্থিতিতে মালগাড়িগুলিকে পথ দেওয়ার জন্য কোথাও কোথাও যাত্রীবাহী গাড়িগুলিকে বিভিন্ন স্টেশনে থামিয়ে দেওয়া হয়। এতে যাত্রীবাহী গাড়িগুলিও সময়মতো পৌঁছতে পারে না। আবার মালগাড়িও দেরিতে পৌঁছয়। মালগাড়ির গতি যখন শ্লথ হয়, স্থানে স্থানে আটকে থাকে, থেমে থেকে এগোয়, তখন পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বেড়ে যায়। এর দ্বারা সরাসরি আমাদের চাষ, আমাদের খনিজসম্পদ এবং শিল্পোৎপাদনের দামের ওপর প্রভাব পড়ে। মূল্য বৃদ্ধির ফলে দেশ এবং বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতায় আমাদের পণ্য ও ফসল টিকতে পারে না, প্রায়ই হেরে যায়।

ভাই ও বোনেরা,

এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য এই ফ্রেট করিডরের প্রকল্প রচনা করা হয়েছে। শুরুতে দুটি মাত্র ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। পূর্ব ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর পাঞ্জাবের শিল্পনগরী লুধিয়ানার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ডানকুনিকে যুক্ত করেছে। শত শত কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে রয়েছে বেশ কয়েকটি কয়লা খনি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শিল্পনগরী। এগুলির জন্য ফিডার পথও তৈরি করা হচ্ছে। তেমনই, পশ্চিম ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর মহারাষ্ট্রের জেএনপিটি জংশনকে উত্তরপ্রদেশের দাদরি জংশনের সঙ্গে যুক্ত করে। প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই করিডরে গুজরাটের মুন্দ্রা, কান্ডলা, পিপাওয়াও, দহেজ এবং হাজিরার মতো বড় সমুদ্রবন্দরগুলির জন্য ফিডার পথ তৈরি করা হচ্ছে। এই দুটি ফ্রেট করিডরের পাশাপাশি দিল্লি-মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডর এবং অমৃতসর-কলকাতা ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরও উন্নত করা হচ্ছে। এভাবে উত্তরকে দক্ষিণের সঙ্গে আর পূর্বকে পশ্চিমের সঙ্গে যুক্ত করে এ ধরনের বিশেষ রেল করিডর গড়ে তোলার জরুরি প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

মালগাড়ির জন্য গড়ে ওঠা এ ধরনের বিশেষ পরিষেবার মাধ্যমে একদিকে ভারতের যাত্রীবাহী রেলগাড়িগুলির গতি বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে, বিভিন্ন কারণে মাঝপথে থেমে থাকার সমস্যা কমানো হবে, অন্যদিকে এই মালগাড়িগুলির গতিও তিনগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং আগের তুলনায় মালগাড়িগুলি দ্বিগুণ পণ্য পরিবহণে সক্ষম হবে। কারণ, এই রেলপথ দিয়ে ডবল ডেকার মালগাড়ি অর্থাৎ, দোতলা মালগাড়ি চালানো হচ্ছে। মালগাড়িগুলি যখন যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছবে তখন আমাদের পণ্য পরিবহণ নেটওয়ার্ক অনেক সস্তা হবে। আমাদের পণ্য পরিবহণের খরচ কম হওয়ার ফলে আমাদের পণ্যগুলির দামও কম হবে। ফলে আমাদের রপ্তানিতে অনেক লাভ হবে। শুধু তাই নয়, দেশের শিল্প জগতের জন্য উন্নত পরিবেশ গড়ে উঠবে। দেশে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর অগ্রগতি হবে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারত আরো আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠবে, দেশে কর্মসংস্থান ও স্বরোজগারের অনেক নতুন নতুন সুযোগও তৈরি হবে।

বন্ধুগণ,

এই ফ্রেট করিডর আত্মনির্ভর ভারতের অনেক বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে। শিল্প থেকে শুরু করে বাণিজ্য ক্ষেত্র, কৃষক থেকে শুরু করে উপভোক্তা - প্রত্যেকে এর দ্বারা লাভবান হবেন। লুধিয়ানা ও বারাণসীর বস্ত্র উৎপাদনকারীদের থেকে শুরু করে ফিরোজপুরের কৃষক, আলিগড়ের তালা নির্মাতা, রাজস্থানের মার্বেল পাথরের ব্যবসায়ী, মলিহাবাদের আম উৎপাদক কিংবা কানপুর ও আগ্রার চর্মশিল্প, ভাদোহীর কার্পেট শিল্প কিংবা ফরিদাবাদের গাড়ি শিল্প – প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এই নতুন ব্যবস্থা অনেক বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, শিল্পোৎপাদনের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পূর্ব ভারতকে এই ফ্রেট করিডর নতুন প্রাণশক্তি প্রদান করবে। এর প্রায় ৬০ শতাংশ অংশ উত্তরপ্রদেশে রয়েছে। সেজন্য উত্তরপ্রদেশের প্রত্যেক ছোট-বড় শিল্পোদ্যোগ এর দ্বারা লাভবান হবে। বিগত বছরগুলিতে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীরা যেভাবে উত্তরপ্রদেশের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছেন, তা আরও অনেক বেশি বাড়বে।

ভাই ও বোনেরা,

এই ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের মাধ্যমে কিষাণ রেলও উপকৃত হবে। গতকালই দেশে ১০০তম কিষাণ রেল চালু করা হয়েছে। কিষাণ রেলের মাধ্যমে এমনিতেও কৃষিপণ্য সারা দেশের বড় বাজারগুলিতে সুরক্ষিতভাবে কম খরচে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখন নতুন এই ফ্রেট করিডরের মাধ্যমে কিষাণ রেল গাড়িগুলি আরও দ্রুতগতিতে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। উত্তরপ্রদেশেও কিষাণ রেলের সঙ্গে অনেক স্টেশন যুক্ত হয়েছে। আর নিয়মিত নতুন নতুন স্টেশনকে এর সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের রেল স্টেশনগুলির কাছাকাছি এলাকায় গুদামজাতকরণ এবং হিমঘরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ৪৫টি পণ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রকে আধুনিক পরিষেবাসম্পন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া রাজ্যে আটটি নতুন ‘গুডস শেড’ও তৈরি করা হয়েছে। তেমনই উত্তরপ্রদেশের বারাণসী ও গাজিপুরে দুটি বড় অতি-পচনশীল পণ্য সংরক্ষণকেন্দ্র আগে থেকেই কৃষকদের পরিষেবা প্রদান করছে। কৃষকরা এগুলিতে অনেক কম খরচে ফল ও সব্জির মতো অতি-পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ করতে পারেন।

বন্ধুগণ,

যখন এ ধরনের পরিকাঠামোর মাধ্যমে দেশ এতটা লাভবান হচ্ছে, তখন এই প্রশ্ন ওঠে যে এই কাজগুলি করতে এত দেরি হল কেন? এই প্রকল্পগুলি ২০১৪ সালের আগে বাস্তবায়িত না হওয়া পূর্ববর্তী সরকারের কর্মসংস্কৃতির জলজ্যান্ত প্রমাণ। ২০০৬-এ এই প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়েছিল। তারপর শুধুই কাগজ এবং ফাইল তৈরি হচ্ছিল। তারপর সেসব ফাইল কোথায় চাপা পড়ে গেল! রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যতটা গুরুত্ব দিয়ে কথা বলা উচিৎ ছিল, যতটা জরুরি বার্তালাপ হওয়া উচিৎ ছিল তা হয়নি। ফলস্বরূপ কাজ আটকে ছিল, ঝুলে ছিল, বিভ্রান্ত হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি হয়ে উঠেছিল যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১ কিলোমিটার পথও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। এজন্য যে টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল তা সঠিকভাবে খরচ করা সম্ভব হয়নি।

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা এই প্রকল্পের চাপা পড়ে থাকা ফাইলগুলি খুঁজে বের করেছি। আধিকারিকদের নতুনভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এর বাজেট আগের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ - মানে, প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে আলাপ-আলোচনা কতটা এগোচ্ছে, তার তদারকি আমি নিজে করেছি। এর সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি, সমীক্ষা করেছি। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। তাঁদেরকে প্রেরণা জুগিয়েছে, উৎসাহ জুগিয়েছে। আমরা নতুন প্রযুক্তি এনেছি। এর পরিণামস্বরূপ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ১,১০০ কিলোমিটার ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরি হয়ে যাবে। ভাবুন, আট বছর আগে পর্যন্ত ১ কিলোমিটারও ছিল না। আর মাত্র ৬-৭ বছরে ১,১০০ কিলোমিটার।

ভাই ও বোনেরা,

পরিকাঠামো নিয়ে রাজনৈতিক উদাসীনতার জন্য শুধু ফ্রেট করিডর গড়ে ওঠার কাজই ব্যাহত হয়নি, গোটা রেলওয়ের লোকসান হয়েছে এবং রেলের সঙ্গে যুক্ত গোটা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে, তাঁদের অগ্রাধিকার ছিল, ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি যাতে নির্বাচনের সময় এর কৃতিত্ব নেওয়া যায়। কিন্তু যে রেলপথগুলিতে ট্রেন চলছিল, সেগুলি উন্নয়নের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কোনও বিনিয়োগ করা হয়নি। রেল নেটওয়ার্ক আধুনিকীকরণের বিষয়টিকে গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। আমাদের ট্রেনগুলির গতিও খুব কম ছিসল। আর গোটা নেটওয়ার্ক বিপজ্জনক মানববিহীন লেভেল ক্রসিং-এর ভরা ছিল।

বন্ধুগণ,

আমরা ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই কর্মশৈলীকেই বদলে দিয়েছি, এই গয়ংগচ্ছ ভাবনায় আমূল পরিবর্তন এনেছি। আলাদাভাবে রেল বাজেটের ব্যবস্থাকেই তুলে দিয়ে আমরা দেশে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলে যাওয়ার রাজনীতিকে বদলেছি। আমরা নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ ও পুরনো রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণে বিনিয়োগ করতে শুরু করি। রেল নেটওয়ার্ককে হাজার হাজার মানববিহীন লেভেল ক্রসিং থেকে মুক্ত করি। রেলওয়ে ট্র্যাককে তীব্র গতিসম্পন্ন ট্রেনের জন্য প্রস্তুত করি। রেল নেটওয়ার্কের প্রশস্তিকরণ এবং বৈদ্যুতিকীকরণ উভয় ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিই। আজ বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের মতো সেমি-হাইস্পিড ট্রেনগুলি চলছে এবং ভারতীয় রেলে যাত্রা আগের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিগত বছরগুলিতে রেলের ক্ষেত্রে প্রতিটি স্তরে সংস্কার আনা হয়েছে। রেলওয়েতে পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, উন্নত খাবার, পানীয় এবং অন্যান্য পরিষেবা - এই পার্থক্যগুলি আজ রেলযাত্রার সময় সকলেরই চোখে পড়ে। এভাবে রেলের সঙ্গে যুক্ত নির্মাণ শিল্পের ক্ষেত্রে ভারত আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে অনেক বড় উল্লম্ফনে সক্ষম হয়েছে। এখন ভারতীয় কারখানাগুলিতে নিজেদের ব্যবহারের জন্য যেমন আধুনিক ট্রেন ও কামরা নির্মিত হচ্ছে, তেমনই আমাদের কারখানাগুলিতে উৎপাদিত ট্রেন ও কামরা বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। শুধু উত্তরপ্রদেশের কথাই যদি ধরি, বারাণসীতে অবস্থিত লোকোমোটিভ ওয়ার্কস আজ ভারতে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন নির্মাণকারী বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। বিগত ছয় বছরে আমরা রায়বেরিলির আধুনিক কোচ ফ্যাক্টরিটিকেও তার ডেন্টিং-পেইন্টিং-এর ভূমিকা থেকে বের করে আনতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই সেই কারখানা থেকে ৫ হাজারেরও বেশি নতুন রেল কোচ উৎপাদিত হয়েছে। এখানে নির্মিত রেল কোচ এখন বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা অনুসারে, দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা উচিৎ। দেশের পরিকাঠামো, কোনও দলের বিচারধারার নয়, দেশের উন্নয়নের পথ তৈরি করে। এই পরিকাঠামো পাঁচ বছরের রাজনীতি নয়। এটা আগামী অনেক প্রজন্মের ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী অভিযান। রাজনৈতিক দলগুলিকে যদি প্রতিযোগিতা করতেই হয়, তাহলে তারা পরিকাঠামোর উৎকর্ষ নিয়ে প্রতিযোগিতা করুক, গতি এবং মাত্রা নিয়ে প্রতিযোগিতা করুক। আমি এখানে আরেকটি মানসিকতার কথা উল্লেখ করা জরুরি মনে করি, যা আমরা সাধারণত বিভিন্ন বিক্ষোভ ও আন্দোলনের সময় দেখি। এই মানসিকতা দেশের পরিকাঠামোকে, দেশের সম্পত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে এই পরিকাঠামো, এই সম্পত্তি কোনও নেতা কিংবা দলের নয়, কোনও সরকারেরও নয়। এই সম্পত্তি দেশের নিজস্ব সম্পদ। এতে প্রত্যেক গরীব মানুষের, প্রত্যেক করদাতার, প্রত্যেক মধ্যবিত্তের, সমাজের অন্যান্য বর্গের ঘাম লেগে রয়েছে। এগুলিকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করে, এর প্রতিটি আঘাত দেশের গরীব এবং সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত। সেজন্য নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার দেখাতে গিয়ে আমাদের নিজেদের জাতীয় দায়িত্বকে কখনও ভোলা উচিৎ নয়।

বন্ধুগণ,

যে রেলপথকে হামেশাই আক্রমণের লক্ষ্য করে তোলা হয়, সেটি কিরকম সেবাভাব নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে দেশের উপকারে লাগে তা আমরা করোনা সঙ্কটকালে দেখেছি। কঠিন অবস্থায় আটকে পড়া শ্রমিকদের নিজেদের গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া, ওষুধ এবং রেশন দেশের কোণায় কোণায় পৌঁছে দেওয়া কিংবা চলমান করোনা হাসপাতালের মতো পরিষেবা প্রদান, রেলের গোটা নেটওয়ার্ক, সমস্ত কর্মচারীদের এই সেবাভাব দেশবাসী সর্বদা মনে রাখবেন। শুধু তাই নয়, এই কঠিন সময়ে রেলওয়ে বাইরে থেকে গ্রামে ফিরে আসা শ্রমিক বন্ধুদের জন্য ১ লক্ষ দিনেরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সেবা, সদ্ভাব এবং দেশের সমৃদ্ধির জন্য একনিষ্ঠ প্রয়াসের এই মিশন অনবরত চলতে থাকবে।

আরেকবার আপনাদের সবাইকে উত্তরপ্রদেশ সহ দেশের সমস্ত রাজ্যকে এই ফ্রেট করিডরের নতুন পরিষেবার জন্য অনেক শুভকামনা জানাই। আর রেলওয়ের সমস্ত বন্ধুদেরও শুভকামনা জানাই। পাশাপাশি অনুরোধ জানাই যে এই ফ্রেট করিডরের পরবর্তী কাজও আমাদের দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করতে হবে, এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ২০১৪ সালের পর আমরা সমস্ত কাজে যে গতি এনেছি, তা আগামী দিনগুলিতে আরও গতি নিয়ে আসবে। সেজন্য আমার আশা, রেলের বন্ধুরা অবশ্যই দেশের এই প্রত্যাশা পূরণ করবেন।

এই বিশ্বাস রেখে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

***

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1685421) Visitor Counter : 209