প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্যান আইআইটি-র আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 04 DEC 2020 10:22PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ৪ ডিসেম্বর, ২০২০

 

            শ্রী সুন্দরম শ্রীনিবাসন

        সভাপতি

        প্যান আইআইটি ইউএসএ,

        সুধী প্রাক্তনীবৃন্দ,

        বন্ধুগণ,

        আজ আপনাদের সঙ্গে এখানে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। চেন্নাই, মুম্বাই, গুয়াহাটি এবং অতি সম্প্রতি দিল্লী আইআইটি-র সমাবর্তনে বক্তব্য রাখার সুযোগ আমার হয়েছে। আইআইটি-র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মত-বিনিময় করার পর আমার মনে সবসময়ই একটি গভীর ছাপ ফেলে। ভারতের এবং আমাদের বিশ্বের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমি আবারও নিশ্চিন্ত হই।

        বন্ধুগণ,

        আপনারা সবাই ভারতের সন্তান যারা মানব জাতির সেবা করছেন। আপনাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিশ্বকে বড় বড় স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করে। এটাই আপনাদের সবথেকে বড় শক্তি। হয়তো আপনাদের কারিগরি ও পরিচালনগত দক্ষতা এর হাত ধরেই আসে। কেউ যদি আইআইটি-র প্রাক্তনীদের বিশ্বজুড়ে অবদানের একটি আর্থিক হিসেব কষেন, আমি নিশ্চিত তার সঙ্গে একটি ভালো আয়তনের রাষ্ট্রের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ তুলনা করা যাবে।  

        বন্ধুগণ,

        একটা সময় ছিল যখন এই ধরণের সমাবেশে ৫-৬টি আইআইটি-র প্রাক্তনীরা আসতেন। সেই সংখ্যা আজ বেড়েছে। তা আজ প্রায় ২ ডজনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। ফলে ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীদের সংখ্যাও বেড়েছে। একইসঙ্গে আইআইটি-র ব্র্যান্ড আরও যাতে শক্তিশালী হয় আমরা এটাও নিশ্চিত করেছি । ভারতে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আপনারা নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে সম্প্রতি ভারতে হ্যাকাথনের একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এই ধরণের কয়েকটি হ্যাকাথনে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। আমি দেখেছি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সমস্যার অভূতপূর্ব সমাধান এইসব তরুণ প্রজন্ম কিভাবে করেন।  

        আমরা এক্ষেত্রে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম যাতে তাদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক স্তরে দেখাতে পারেন এবং বিশ্বের ভালো জিনিসগুলি সম্পর্কে শিখতে পারেন আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চাই। দোশরা অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর দিনে ভারত বৈভব সম্মেলনের আয়োজন করেছিল।

        প্রায় ১ মাস ধরে চলা এই সম্মেলনে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবন ক্ষেত্রের সেরা প্রতিভারা একসঙ্গে বসেছিলেন। সংখ্যায় তারা ছিলেন প্রায় ২৩ হাজারের মতো। সেখানে ২৩০টি আলোচনা চক্র বসেছিল। প্রায় ৭৩০ ঘন্টা আলোচনা চলেছিল। এই সম্মেলন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছিল এবং এর থেকে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।  

        বন্ধুগণ,

        ভারতে এখন কাজের জগতের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। যেভাবে দ্রুত গতিতে কাজ হচ্ছে, আমরা তা ভাবতেও পারিনি। আমি এই প্রসঙ্গে এমন একটি বিষয়ের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যার সঙ্গে আপনারা পরিচিত। আগে যখন আইআইটি থেকে এয়্য়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়াররা উত্তীর্ণ হতেন দেশীয় সংস্থাগুলিতে তাদের নিয়োগ করার খুব একটা সুযোগ ছিলনা। আজ মহাকাশ ক্ষেত্রে আমাদের ঐতিহাসিক সংস্কারের ফলে ভারতীয় প্রতিভার জন্য মানব জাতির চূড়ান্ত পর্যায়ে সুযোগ তৈরি হয়েছে।

        আর তাই ভারতে প্রতিদিন নতুন নতুন মহাকাশ প্রযুক্তির উদ্যোগ গড়ে উঠছে। আমি নিশ্চিত আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ আগে যা করেননি সে বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা এখন ভাবনা-চিন্তা করবেন। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে। ‘সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তর’ এই নীতির প্রতি আমাদের সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।  

        এমন কোনও ক্ষেত্র বাকি নেই যেখানে আমরা সংস্কার করিনি। কৃষি, আণবিক শক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, অর্থ, ব্যাঙ্কিং, কর ব্যবস্থা- এই তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। আমরা শ্রম ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কার এনেছি, ৪৪টি কেন্দ্রীয় শ্রম আইনকে একত্রিত করে মাত্র ৪টি কোডে পরিণত করেছি। বিশ্বে আমাদের দেশেই কর্পোরেট করের হার সবথেকে কম। কয়েক সপ্তাহ আগে ১০টি প্রধান ক্ষেত্রে উৎসাহভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত ভারতীয় মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে। বিদেশে রপ্তানী এবং উৎপাদন দুই-ই এই সিদ্ধান্তের ফলে বৃদ্ধি পাবে। ব্যাটারি, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, ওষুধ প্রস্তুত, গাড়ি তৈরি, টেলিকম, সৌরশক্তিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য নানা ক্ষেত্র এর আওতাভুক্ত। প্রতিটি ক্ষেত্রই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। আপনারা এই সুযোগগুলিকে গ্রহণ করতে পারেন।  

        কোভিড-১৯-এর এই সঙ্কটের সময় ভারতে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে। এই বিনিয়োগের একটি বড় অংশ এসেছে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। স্পষ্টতই বিশ্ব ভারতকে একটি আস্থাবান ও সম্ভাবনাময় অংশীদার হিসেবে মনে করে।

        বন্ধুগণ,

        প্যান আইআইটি আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ শক্তি আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার আমাদের স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রবাসী ভারতীয়রা দেশের পুনরুত্থানে তাদের আস্থা রেখেছেন। তাঁরা নতুন ভারতের দূত হয়ে উঠেছেন। ভারতের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী সারা বিশ্বকে বোঝাতে তাঁদের বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

        বন্ধুগণ,

        ২ বছর পরে ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্ণ হবে। প্যান আইআইটি আন্দোলনকে ভারতের জন্য কিছু করার বিষয়ে আমি আবেদন রাখছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আপনাদের উদ্যোগ সুবিদিত এবং উৎসাহব্যাঞ্জক। আমি জানি আপনাদের মধ্যে অনেকেই আপনাদের জুনিয়ারদের সঠিক কেরিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরামর্শ দেন- শিক্ষা জগতে অথবা শিল্প জগতে। আজ তারা অনেকেই নিজস্ব কিছু উদ্যোগ গড়ে তুলতে চান। তারা অত্যন্ত উজ্জ্বল এবং প্রত্যয়ী তরুণ যারা কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনে মাধ্যমে তাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

        আমি আপনাদের তাদের উদ্যোগে পরামর্শ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। কিভাবে আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করবো সে বিষয়ে আপনাদের ধারণা এবং পরামর্শ ভাগ করে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা আপনাদের চিন্তাভাবনা মাই গভ-এ জানাতে পারেন। অথবা আপনারা নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের মাধ্যমে আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

        বন্ধুগণ,

        আমাদের কাজই ভবিষ্যৎ পৃথিবীকে গড়ে তুলবে। কোভিড পরবর্তী বিশ্ব হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন করে শেখা, ভাবা, উদ্ভাবন করা এবং পরিবর্তন করার। এর সঙ্গে একগুচ্ছ আর্থিক সংস্কার যুক্ত হবে, যাতে আমাদের পৃথিবী আবারও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে সহজ জীবনযাত্রার বিষয়টি সুনিশ্চিত হবে, যার ফলে দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে। শিক্ষা জগত এবং শিল্প জগতের মধ্যে সহযোগিতার ফলে এই মহামারীর সময়েও কিভাবে বিভিন্ন উদ্ভাবনমূলক কাজ হয়েছে আমরা তা দেখেছি। নিউ নির্মালের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন সমস্যার যথাযথ কিছু সমাধানের প্রয়োজন। আর একাজে আপনাদের থেকে ভালো কে আছে? আজ আইআইটি-র প্রাক্তনীরা বিশ্বজুড়ে বিপুল সংখ্যায় শীর্ষ স্থানীয় পদে আছেন। শিল্প, শিক্ষা, কলা প্রশাসন সর্বত্রই আপনাদের যথেষ্ট যোগাযোগ রয়েছে। আপনারা আসলে মানব জাতির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার প্রমাণ দিচ্ছেন। আমি আপনাদের কারুর কারুর সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে, বা বলা ভালো প্রতিদিনই মত-বিনিময় করি ! নতুন বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জন্য কি কি করা উচিত তা নিয়ে আপনাদের বিতর্ক, আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি। দায়িত্ব কিন্তু অনেক, কিন্তু আমি জানি আপনাদের কাঁধগুলোও অনেক চওড়া।

        আর এরই সঙ্গে এ বছরের সম্মেনের সাফল্য কামনা করছি। ‘দ্য ফিউচার ইজ নাউ’- এখনই ভবিষ্যৎ, আপনাদের এই ভাবনাটি যথাযথ।  

        আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা রইলো।

        ধন্যবাদ

***

 

CG/CB/NS



(Release ID: 1678621) Visitor Counter : 284