প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতীয় সড়ক – ১৯ এর বারাণসী প্রয়াগরাজ অংশের ৬ লেনে প্রশস্তিকরণ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 30 NOV 2020 6:40PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩০শে নভেম্বর, ২০২০

হর হর মহাদেব !
আমার কাশীর প্রিয় ভাই ও বোনেরা, 
আপনাদের সবাইকে প্রণাম। 
বিশেষ করে রাজাতালাব, মির্জামোরাদ, কছওয়া, কাফসেঠী, রোহনিয়া, সেবাপুরী এলাকার অন্ন দেবতা কৃষকদের প্রণাম জানাই!
আপনাদের সবাইকে দেব দীপাবলি আর গুরুপরব উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। 
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জি, উপমুখ্যমন্ত্রী শ্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য জি, সংসদে আমার সহকর্মী ভাই রমেশ চন্দ্র জি এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার কাশীর প্রিয় ভাই ও বোনেরা, 
দেব দীপাবলি এবং গুরুনানক দেবজীর জন্মোৎসবে আজ কাশী আরেকটি আধুনিক পরিকাঠামো উপহার পাচ্ছে। এর মাধ্যমে কাশীর পাশাপাশি প্রয়াগরাজের জনগণও উপকৃত হবেন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। 
আমার মনে পড়ে ২০১৩ সালে এই ময়দানেই আমার প্রথম জনসভা হয়েছিল। আর তখন এখানে জাতীয় সড়কটি চার লেনের ছিল। আজ বাবা বিশ্বনাথের আর্শীবাদে এই জাতীয় সড়ক ৬ লেনে উন্নীত হল। আগে যারা হান্ডিয়া থেকে রাজাতালাব আসা যাওয়া করেছেন, তারা জানেন যে এই জাতীয় সড়কে যাতায়াত কত কঠিন ছিল ? নানা জায়গায় যানজট, অনেক ধীরে গাড়িগুলি চলতো, দিল্লি এবং অন্যান্য শহর থেকে যাঁরা আসতেন, তাঁদের এই পথে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হত। এখন এই পথে ৭০ কিলোমিটার থেকে বেশি দূরত্ব অনেক আরামে দ্রুত গতিতে যাতায়াত করা সম্ভব হবে। এই জাতীয় সড়ক প্রশস্ত হওয়ার ফলে কাশী এবং প্রয়াগরাজের মাঝে যাতায়াত এখন আরো সহজ হয়েছে। কাম্বর যাত্রার সময় কাম্বরীয়দের আর এই এলাকার অন্যান্যদের যে সমস্যা হত, তা এখন আর থাকবে না। শুধু তাই নয় কুম্ভ মেলার সময় তীর্থযাত্রীরা এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। 
ভাই ও বোনেরা, 
আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যুক্ত কোনো স্থান হোক, কিংবা অন্য যে কোনো জায়গায় যেতে হলে মানুষ অবশ্যই আগে থেকে খোঁজ খবর নেন, যে আসা - যাওয়া কতটা সহজ হবে। এই ধরণের আধুনিক পরিষেবা দেশী – বিদেশী সব ধরণের পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীদের উৎসাহিত করে, বিগত বছরগুলিতে কাশীর সৌন্দর্যায়নের পাশাপাশি এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার ক্ষেত্রে যে কাজ হয়েছে, তার লাভ অনেক সুদূর প্রসারী হবে। নতুন হাইওয়ে নির্মাণ থেকে শুরু করে, সেতু - উড়ালপুল নির্মাণ, যানজট হ্রাস করার জন্য সড়ক পথগুলির প্রশস্তিকরণ - যত কাজ বারাণসী এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখন হচ্ছে, তা স্বাধীনতার পর থেকে কখনও হয় নি, বারাণসীর সেবক হিসেবে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি সবসময়ই বারাণসীর জনগণের সমস্যা দূর করার চেষ্টা করে গেছি। তাঁদের জীবনকে সহজ করে তুলতে চেয়েছি। বিগত ৬ বছরে বারাণসীতে হাজার হাজার কোটি টাকার অনেক প্রকল্প দ্রুত গতিতে সম্পূর্ণ হয়েছে। এবং অনেক প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।  
বিমানবন্দর ও শহরের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী সুন্দর পথটি এখন বারাণসীর উন্নয়ণ যাত্রার পরিচয় বহন করে। রেল স্টেশনের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত হয়েছে। এখান থেকে কিছুটা দূরেই রিং রোড ফেজ-২-র কাজ ও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এটি সম্পূর্ণ হলে সুলতানপুর, আজমগড় এবং গাজীপুর থেকে যাতায়াত করা ভারী বাহনগুলি শহরে না ঢুকে সরাসরি এই নতুন ৬ লেন বিশিষ্ট হাইওয়ে দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারবে। তেমনি অন্যান্য যে হাইওয়েগুলির কাজ চলছে, সেগুলিও দ্রুত সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই হাইওয়েগুলি নির্মীত হলে বারাণসী, লক্ষ্মৌ, আজমগড় এবং গোক্ষপুরের মধ্যে যাতায়াত আরো সহজ হবে। 
ভাই ও বোনেরা, 
ভালো সড়কপথ , ভালো রেলপথ, ভালো এবং সুলভ বিমান পরিষেবা এগুলি সমাজের প্রত্যেক শ্রেণির মানুষকে পরিষেবা প্রদান করে। বিশেষ করে গরীবদের। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের, মধ্যবিত্তদের এগুলির মাধ্যমে সব চাইতে বেশি উপকার হয়। যখন নির্মাণ প্রক্রিয়া চলতে থাকে, তখন অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। যখন এই প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হয়, তখন জনগণের সময় বাঁচে, অর্থ সাশ্রয় হয় এবং সমস্যা হ্রাস পায়। করোনার এই সঙ্কটকালেও শ্রমিক বন্ধুদের জন্য কর্মসংস্থানের অনেক বড় মাধ্যম রূপে এই পরিকাঠামো প্রকল্পগুলি গড়ে উঠেছে। 
ভাই ও বোনেরা, 
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, উত্তরপ্রদেশে যোগীজি এবং তাঁর সম্পূর্ণ টিম, সরকার গঠনের পর থেকে এই রাজ্যে পরিকাঠামো নির্মাণে অভূতপূর্ব গতি এসেছে। আগে উত্তরপ্রদেশে পরিকাঠামোর পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা আপনারা খুব ভালো ভাবে জানেন। আজ উত্তরপ্রদেশের একটি এক্সপ্রেস প্রবেশ রূপে পরিচিত হয়ে উঠছে। উত্তরপ্রদেশে একসঙ্গে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ৫টি বিশাল প্রকল্পের কাজ চলছে। আজ পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে, বুন্দেলখন্ড এলাকা হয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ প্রত্যেক কোণায় কোণায় রাজ্যটিকে এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। দেশে দুটি বড় এবং আধুনিক ডিফেন্স করিডরের মধ্যে একটি আমাদের উত্তরপ্রদেশে নির্মীত হচ্ছে। 
ভাই ও বোনেরা,
শুধু সড়ক পথ নয়, আকাশপথে যোগাযোগও অনেক উন্নত করা হচ্ছে। ৩ - ৪ বছর আগে পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মাত্র ২টি বড় বিমানবন্দর কার্যকরীভাবে চালু ছিল। আজ উত্তরপ্রদেশে প্রায় এক ডজন বিমানবন্দর জনগণকে পরিষেবা প্রদানের জন্য গড়ে উঠছে। এখানে বারাণসী বিমানবন্দরের বিস্তারের কাজ চলছে। প্রয়াগরাজে যত দ্রুত গতিতে এয়ারপোর্ট টার্মিনাল গড়ে উঠেছে, তা একটি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। তা ছাড়া কুশীনগর বিমানবন্দরটিকেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। নয়ডায় জেরবরে আন্তর্জাতিক গ্রীণফিল্ড বিমানবন্দরের কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।  
বন্ধুগণ, 
যখন কোনো এলাকায় আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়, তখন এর দ্বারা সেই অঞ্চলের কৃষকদের অনেক লাভ হয়। কৃষিও লাভবান হয়। বিগত বছরগুলিতে আমরা নিরন্তর গ্রামে গ্রামে আধুনিক সড়কপথ সম্প্রসারণের পাশাপাশি গুদামিকরণ এবং শীততপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে চলেছি। সম্প্রতি এর জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ তহবিলও কৃষকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। এবছর দেশের ইতিহাসে প্রথমবার ভ্রাম্যমান শীততপ নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণের ব্যবস্থা অর্থাৎ কিষাণ রেল চালু করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে কৃষকরা নতুন বাজার পাচ্ছেন। বড় শহরগুলিতে তাদের উৎপাদিত ফসল পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ বেড়েছে, এর দ্বারা তাদের আয়ও অনেক বেড়েছে। 
বন্ধুগণ, 
বারাণসী সহ পূর্বাচলেই যে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার দ্বারা সমস্ত পূর্ব উত্তরপ্রদেশ লাভবান হচ্ছে। বারাণসীতে পচনশীল পণ্য কেন্দ্র এখন এখানকার কৃষকরা ফল ও সব্জি গুদামজাত করে সহজেই ঠিক সময়ে বিক্রির সুবিধা পাচ্ছেন। এর বিপুল সংরক্ষণ ক্ষমতার ফলে প্রথমবার এখানকার কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বড় মাত্রায় বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে। বারাণসীর ল্যাংড়া এবং দশহরি আম লন্ডন এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। এখন বারাণসীর আমের চাহিদা বিদেশে নিরন্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন এখানে যে প্যাকেজিংএর সুবিধা গড়ে উঠছে, তার ফলে প্যাকিংএর জন্য অন্যান্য বড় শহরে যাওয়ার আর প্রয়োজন পড়বে না। আম ছাড়া এবছর এখানকার তাজা সব্জিও দুবাই এবং লন্ডনে পৌঁছেছে। এই রপ্তানি বিমান পথে হয়েছে। অর্থাৎ উন্নত বিমান পরিষেবার মাধ্যমে এখন এখানকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কৃষকরাও সরাসরি লাভবান হচ্ছেন। গঙ্গাজিতে দেশের প্রথম অর্ন্তদেশীয় জলপথ গড়ে উঠেছে। এটি ব্যবহার করে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল কিভাবে বেশি পরিবহণ করা যায়, তা সুনিশ্চিত করার কাজ চলছে। 
বন্ধুগণ, 
সরকারের প্রচেষ্টা ও আধুনিক পরিকাঠামোর মাধ্যমে কৃষকরা কতটা লাভবান হচ্ছেন, তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল চান্দৌলির কালো চাল বা ব্ল্যাক রাইস। এই চাল চন্দৌলির কৃষকদের বাড়িতে সমৃদ্ধি নিয়ে আসছে। চন্দৌলির কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য ২ বছর আগে কালো চালের একটি প্রজাতি এখানে প্রয়োগ করা হয়েছে। গত বছর খরিফ ঋতুতে প্রায় ৪০০ কৃষককে এই চাল উৎপাদনের জন্য বিতরণ করা হয়েছিল। এই কৃষকদের একটি সমিতি গড়ে তোলা হয়েছিল। তাদের জন্য বাজার খোঁজা হয়েছিল। সাধারণ চাল যেখানে ৩৫ - ৪০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হয়, সেখানে এই অসাধারণ সুস্বাধু কালো চাল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা হল, এই কালো চাল এখন বিদেশেও বাজার পেয়েছে। প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াতে এই চাল রপ্তানি হয়েছে, তাও প্রায় ৮০০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ যেখানে ধানের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ১৮০০ টাকা, সেখানে কুইন্টাল প্রতি কালো চাল সাড়ে ৮০০০ টাকায় বিক্রিয় হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে যে এবারের কৃষি ঋতুতে প্রায় ১০০০ কৃষক পরিবার কালো চাল চাষ করছেন।
 ভাই ও বোনেরা, 
কৃষকদের আধুনিক পরিষেবা প্রদান, ছোট কৃষকদের সংগঠিত করা এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নিরন্তর জারি রয়েছে। বিগত বছরগুলিতে ফসল বীমা থেকে শুরু করে সেচ, বীজ থেকে শুরু করে বাজার - প্রত্যেক স্তরে অনেক কাজ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার মাধ্যমে দেশের প্রায় ৪ কোটি কৃষক পরিবার উপকৃত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনার মাধ্যমে প্রায় ৪৭ লক্ষ হেক্টর জমি ক্ষুদ্র সেচের আওতায় চলে এসেছে। প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকার সেচ প্রকল্পগুলির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। 
কিন্তু বন্ধুগণ, সফল প্রকল্পই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি কৃষকদের সেই বড় এবং ব্যাপক বাজারের লাভও পাওয়া উচিত। যা আমাদের দেশ, বিশ্বের বড় বড় বাজারগুলি থেকে এখন আমাদের কৃষকরা পেতে পারেন। সেজন্যে বিকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষমতায়িত করার পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের হিতের জন্য প্রণয়ন করা কৃষি সংস্কার, কৃষকদের জন্য এধরণের বিকল্প প্রদান করে। যদি কোনো কৃষক, এমন ক্রেতা পান, যিনি সরাসরি তার ক্ষেত থেকে উৎপাদিত ফসল তুলে নিয়ে যাবে, যারা নিজেরাই যানবাহন থেকে শুরু করে পরিবহণের সমস্ত ব্যবস্থা করবে, আর ভালো দাম দেবে, তাহলে কি কৃষকদের তাদের কাছে নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির স্বাধীনতা থাকা উচিত, কি উচিত নয় ? ভারতের কৃষিপণ্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। কৃষকরা কি এই বড় বাজারের সুযোগ নিতে পারে না? বেশি দামের লাভ্যাংশ রোজগারের স্বাধীনতা কি কৃষকদের থাকা উচিত নয় ?  যদি কেউ পুরানো ব্যবস্থার মাধ্যমে লেনদেনকে ঠিক মনে করেন, তাহলে তাঁদের কে বাধা দেওয়ার কথা এই আইনে কোথায় বলা হয়েছে ভাই ? 
বন্ধুগণ, 
নতুন কৃষি সংস্কারের মাধ্যমে কৃষকদের শুধুমাত্র নতুন বিকল্প এবং নতুন আইনী সংরক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আগে তো মান্ডির বাইরে হওয়া লেনদেনই বেআইনী মানা হতো। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র কৃষকদের সঙ্গে প্রায়ই প্রতারণা হতো, বিবাদ হতো, কারণ ছোট কৃষকরা তো মান্ডিতে পৌঁছতেই পারতেন না। এখন আর এমন হবে না। এখন ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর কৃষকরাও মান্ডির বাইরে হওয়া সওদা নিয়ে আইনী পদক্ষেপ নিতে পারবেন। অর্থাৎ কৃষকরা এখন শুধুই নতুন বিকল্প পেয়েছেন তাই নয়, প্রতারণা থেকে নানা ছলে বলে কৌশলে তাদেরকে ঠকানো থেকে রক্ষার জন্য আইনী সংরক্ষণও পেয়েছেন। কৃষকদের প্রকল্পের পাশাপাশি নতুন বিকল্প প্রদান করলেই আমাদের কৃষি ক্ষেত্রে কায়াকল্প হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রকল্প, কৃষকদের জন্য বিকল্প - এই দুটি পাশাপাশি চললে তবেই দেশের জন্য কায়াকল্প হয়। 
বন্ধুগণ, 
সরকারগুলি নীতি প্রণয়ন করে, কায়দা কানুন বানায়, নীতি এবং আইন প্রণয়নের সময় জনপ্রতিনিধিরা যেমন সমর্থন করেন, তেমনি এগুলি নিয়ে প্রশ্ন তোলা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এটা গণতন্ত্রের অঙ্গ এবং ভারতে এর জীবন্ত পরম্পরা রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেশ, একটি ভিন্ন প্রবণতা দেখতে পাচ্ছে। আপনাদের মতো কাশীর সমস্ত সচেতন বন্ধুরাও নিশ্চই এটা অনুভব করেছেন। আগে এমন হতো সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত কারোর পছন্দ না হলে তবেই বিরোধীতা হতো। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা একটি নতুন প্রবণতা দেখছি, আমরা এখন দেখছি যে, বিরোধীতার ভিত্তি এখন সিদ্ধান্ত নয়, গুজব ছড়িয়ে, আশঙ্কা ছড়িয়ে ভবিষ্যতে এমন হবে, কেমন হবে, আর এখন এরকম হবে, এটাকেই বিরোধীতার ভিত্তি করা হচ্ছে। এমনও অপপ্রচার করা হয়,   যে সিদ্ধান্তটি তো ঠিক আছে, কিন্তু না জানি ভবিষ্যতে কি হবে – এমনটাও হতে পারে বলে তারা নিজেদের মন গড়া ভ্রম ছড়ান। যা এখনও হয় নি, যা কখনও হবে না, তা নিয়ে সমাজকে ভ্রমিত করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক কৃষি সংস্কার নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে এই রাজনৈতিক খেলা চলছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই লোকগুলি দশকের পর দশক ধরে কৃষকদের সঙ্গে লাগাতার ছলনা করেছে। যেমন তখন ন্যূনতম সহায়কমূল্য ঘোষণা হত, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে খুব কমই ফসল কেনা হতো। ঘোষণা হতো কিন্তু কেন হতো না। বছরের পর বছর ধরে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে ছলনা করা হয়েছে। কৃষকদের নামে বড় বড় ঋণ মকুবের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হতো। কিন্তু ছোট এবং প্রান্তিক চাষিরা ঋণ মকুবের সুবিধা পেত না। অর্থাৎ এই কর মকুব নিয়েও ছলনা করা হতো। কৃষকদের নামে বড় বড় প্রকল্প ঘোষণা করা হতো। কিন্তু তারা নিজেরাই মানতে যে এক টাকার মধ্যে মাত্র ১৫ পয়সা কৃষকদের হাতো পৌঁছতো। 
অর্থাৎ প্রকল্পের নামে ছলনা। কৃষকের নামে, সার কেনায় অনেক বড় ছাড় দেওয়া হতো। কিন্তু এই ছাড় দেওয়া সার, কৃষকের ক্ষেত থেকে বেশি কালো বাজারিদের হাতে পৌঁছে যেত। অর্থাৎ ইউরিয়া সারের নামে ছলনা করা হতো। কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য অনেক ঘোষণা হতো। কিন্তু কৃষক ছাড়া অন্যদের লাভ সুনিশ্চিত করা হতো। ভোটের আগে প্রতিশ্রুত এবং জেতার পরে ছলনা, এই খেলা দীর্ঘকাল ধরে দেশে চালু ছিল। 
বন্ধুগণ, 
তাঁদের ইতিহাসই যখন ছলনার ইতিহাস, তখন দুটো বৈশিষ্ট অত্যন্ত স্বাভাবিক। প্রথমটি হল – কৃষকরা যদি সরকারের বক্তব্যে আশঙ্কিত হন, তার পেছনেও অনেক দশকের দীর্ঘ ছলনার ইতিহাস রয়েছে। আর দ্বিতীয়ত যারা বারবার প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গেছে, ছলনা করেছে, তাদের জন্য এই মিথ্যে প্রচার খুব সহজ, এটা তাদের বাধ্যতাও; আগে যা হতো, এখনও তাই হবে। কারণ তারা নিজেরা এটাই করে আসছেন। সেজন্যে আজও একই সূত্র প্রয়োগ করে দেখছেন। কিন্তু যদি বর্তমান সরকারের কর্মসংস্কৃতি এবং সাফল্যের খতিয়ান দেখবেন, তখন সত্যিটা আপনাদের সামনে উন্মুক্ত হবে। আমরা বলেছিলাম যে আমরা ইউরিয়ার কালবাজারী বন্ধ করবো এবং কৃষকদের পর্যাপ্ত ইউরিয়া দেবো। বিগত ৬ বছরে আমরা দেশের কোথাও ইউরিয়ার অভাব হতে দিই নি। আগে ইউরিয়া কালবাজার থেকে কিনতে হতো, ইউরিয়ার জন্য সারারাত লাইনে দাঁড়াতে হতো, কিংবা রাতে বাইরে ঠান্ডার মধ্যে শুতে হতো। কিন্তু অনেক বার ইউরিয়া নিতে গিয়ে কৃষকদের পুলিশের লাঠি খেতে হতো। আজ এই সমস্ত কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি করোনার লকডাউনের সময় যখন সমস্ত গতিবিধি প্রায় বন্ধ ছিল, তখনও আমাদের ইউরিয়া সরবরাহর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, যে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিনিয়োগের দেড়গুণ ন্যূনতম সহায়কমূল্য প্রদান করবো, এই প্রতিশ্রুতি শুধু কাগজেই থেকে যায় নি। এই প্রতিশ্রুতি আমরা পূরণ করেছি এবং কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্টে যাতে টাকা পৌঁছোয়, সেই ব্যবস্থা করেছি। 
বন্ধুগণ, 
শুধু ডাল নিয়ে যদি কথা বলি, ২০১৪র আগে ৫ বছরে আমাদের পূর্ববর্তী সরকার, মোট ৬৫০ কোটি টাকা মূল্যের ডাল কৃষকদের থেকে কিনে ছিলো। কিন্তু বন্ধুগণ, আপনারা বলুন তো গোটা দেশে কত ৬৫০ কোটি রয়েছে। কিন্তু আমরা ৫ বছরে কি করেছি, আমরা প্রায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ডাল ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কিনেছি। অর্থাৎ প্রায় ৭৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোথায় আগের ৫ বছরে ৬৫০ কোটি আর কোথায় আমাদের আমলে প্রায় ৫০ হাজার কোটি। তেমনি, ২০১৪ সালের আগে ৫ বছরে সরকার, গোটা দেশে ২ লক্ষ কোটি টাকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কিনে ছিল।  কিন্তু আমরা আমাদের ৫ বছরে কিনেছি ৫ লক্ষ কোটি টাকার ধান। অর্থাৎ প্রায় আড়াইগুণ বেশি টাকা কৃষকদের হাতে পৌঁছেছে। ২০১৪র আগে ৫ বছরে সরকার, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার গম কিনেছিল। আমরা গত ৫ বছরে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের গম কিনেছি। অর্থাৎ কৃষকরা প্রায় দ্বিগুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পেয়েছেন। এখন আপনারা বলুন, মান্ডিগুলিকে যদি বন্ধ করতে চাইতাম এবং দেশ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাতিল করতে চাইতাম, তাহলে আমাদের এক্ষেত্রে এতো জোর দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল। আমরা কেন এতো বিনিয়োগ করতে গেছি। আমাদের সরকার তো মান্ডিগুলিকে আরো আধুনিক করে তোলার জন্য, শক্তিশালী করে তুলতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। 
ভাই ও বোনেরা, 
আপনাদের মনে রাখতে হবে, এই মানুষেরাই পিএম কিষাণ সম্মাননিধি নিয়ে প্রত্যেক অলি-গলিতে, প্রত্য়েক সাংবাদিক সম্মেলনে, প্রত্যেক ট্যুইটারে প্রশ্ন তুলতেন। এই মানুষেরাই গুজব ছড়াতেন, এই মোদী নির্বাচনের স্বার্থে কৃষকদের জন্য কিষাণ সম্মাননিধি চালু করেছে। তারা গুজব ছড়ালো, একবারই ২০০০ টাকা পাবেন, তার পরে আর কখনও পাবেন না। তারা দ্বিতীয় অপপ্রচার করলো, যে ২০০০ এখন দিচ্ছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতলে সুদ সহ ফেরৎ নিয়ে নেবে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, একটি রাজ্যতে এমন অপপ্রচার করা হয়েছে, কৃষকদের এতো ভুল বোঝানো হয়েছে, যে তারা বলতে শুরু করেন, আমাদের ২০০০ টাকা চাই না। এমন মিথ্যে গুজব রটিয়েছে। কিছু রাজ্যে এরকম হয়েছে, যারা কৃষকের স্বার্থে অনেক কথা বলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনাকে তাদের রাজ্যে চালুই হতে দেয় নি। কারণ এই টাকা যদি কৃষকদের হাতে পৌঁছোয় আর কোথাও মোদীর নামে জয় জয়কার হয়, তাহলে তো আমাদের রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। সেই জন্য তারা কৃষকদের পকেটে টাকা যেতেই দেয় নি। আমি সে রাজ্যের কৃষকদের বলতে চাই, আগামী দিনে যখনই আমাদের সরকার তৈরি হবে, আমি সে রাজ্যের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই টাকা দিয়েই ছাড়বো। 
বন্ধুগণ, 
দেশের ১০ কোটিরও বেশি কৃষক পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই সহায়তা রাশি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বছরে ৩ বার দেওয়া হয়। আর এখন পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে গেছে। 
বন্ধুগণ, 
আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে কৃষকদের জন্য পেনশন যোজনা চালু করবো। আজ পিএম কিষাণ মানধন যোজনা চালু রয়েছে এবং অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যেই ২১ লক্ষ কৃষক পরিবার এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। 
ভাই ও বোনেরা,
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত করার এই সাফল্যের ভিত্তিতে কৃষকদের হিতে নতুন কৃষি সংস্কার আইন আনা হয়েছে। কৃষকদের সুবিচার প্রদানের ক্ষেত্রে এই আইন কতটা কাজে আসবে, তা আমরা আগামী দিনে অবশ্যই দেখবো, অনুভব করবো এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সংবাদ মাধ্যমেও এই বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হবে, আমরা দেখবো, আর আমরা পড়বো। আমার মনে হয়, দশকের পর দশক কাল ধরে প্রতারণা কৃষকদের আশঙ্কিত করে তোলে। কৃষকদের দোষ নেই, কিন্তু আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, আমার কৃষক ভাই ও বোনেদের বলতে চাই, মা গঙ্গার ঘাট দাঁড়িয়ে, বা তাঁকে সাক্ষী রেখে বলতে চাই, কাশীর মতো পবিত্র নগরী থেকে বলতে চাই, এখন ছলনার মাধ্যমে নয়, গঙ্গা জলের মতো পবিত্র ভাবনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। 
ভাই ও বোনেরা, 
আশঙ্কাগুলির ভিত্তিতে ভ্রমিত করার এই বাস্তব রূপ লাগাতার দেশের সামনে আসছে, যখন কৃষকরা একটি বিষয় নিয়ে প্রতারণাকে বুঝতে পারেন, তখন অন্য বিষয় নিয়ে গুজব ছড়ানো শুরু হয়ে যায়। ২৪ x ৭ সারা সপ্তাহ তারা এই কাজই করেন। দেশের কৃষক, এসব খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন। যে কৃষক পরিবারগুলির মনে এখনও দুঃচিন্তা রয়েছে, কোনো কিছু প্রশ্ন রয়েছে, সরকার, তাদের সে সব প্রশ্নের জবাবও নিরন্তর দিয়ে যাচ্ছে। সমাধান করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মা অন্নপূর্ণার আর্শীবাদে আমাদের অন্নদাতারা আত্মনির্ভর ভারতের নেতৃত্ব দেবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ যে কৃষকদের মনে এই কৃষি সংস্কারগুলি নিয়ে সামান্য আশঙ্কা রয়েছে, তাঁরাও ভবিষ্যতে এই কৃষি সংস্কারগুলি থেকে উপকৃত হয়ে নিজেদের আয় বৃদ্ধি করবেন। 
অবশেষে আরেকবার আপনাদের সবাইকে এই আধুনিক ৬ লেনের জাতীয় সড়কের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। কাশীর রূপ এবং স্বরূপ এভাবেই অত্যাধুনিক হয়ে উঠুক, সেই চেষ্টাই আমরা সব সময় করে যাবো। এখন আমার বারাণসীতে আরেকটি কর্মসূচী রয়েছে, সেখানেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো। করোনার ফলে এবার আমার আসতে সামান্য দেরি হল। কিন্তু আজ আপনাদের নিজের চোখে দেখতে পেয়ে আমি নতুন প্রাণশক্তি অনুভব করলাম। আপনাদের আর্শীবাদ পেলাম, কাজ করার নতুন শক্তি পেলাম। আপনারা এতো বিপুল সংখ্যায় এসে আর্শীবাদ দিচ্ছেন, এটাই আমার প্রাণশক্তি, এটাই আমার জন্য আর্শীবাদ। আমি আপনাদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আমার সঙ্গে দু’হাত মুষ্ঠিবন্ধ হাত তুলে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বলুন, ভারত মাতা কি - জয়। 
ভারত মাতা কি – জয়।
ভারত মাতা কি  - জয়। 
অনেক অনেক ধন্যবাদ। 
 

***


CG/SB/SFS



(Release ID: 1677282) Visitor Counter : 279