প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 25 NOV 2020 9:02PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

 

নমস্কার!

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বরিষ্ঠ সহযোগী এবং লক্ষ্ণৌ-এর সাংসদ শ্রী রাজনাথ সিং-জি, উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথজি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডঃ দীনেশ শর্মাজি, উচ্চশিক্ষা রাজ্য মন্ত্রী শ্রীমতী নীলিমা কটিয়ারজি, উত্তরপ্রদেশ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীগণ, লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রী আলোক কুমার রায়জি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্রগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ।

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভকামনা। ১০০ বছর সময় নিছকই একটি পরিসংখ্যান নয়। এর সঙ্গে অসংখ্য সাফল্যের একটি জাগ্রত ইতিহাস জুড়ে আছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই ১০০ বছরের স্মৃতির একটি স্মারক ডাকটিকিট, একটি স্মারক মুদ্রা এবং কভার প্রকাশ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

আমাকে বলা হয়েছে, বাইরে ১ নম্বর গেটের কাছে যে অশ্বত্থ গাছটি রয়েছে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরের অবিরাম যাত্রাপথের এক নীরব সাক্ষী। এই বৃক্ষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে দেশ এবং বিশ্বের অনেক প্রতিভাকে নিজের সামনে তৈরি হতে, গড়ে উঠতে দেখেছে। ১০০ বছরের এই যাত্রাপথে এখান থেকে পাশ করে বেরিয়ে কেউ দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, কেউ কেউ রাজ্যপাল হয়েছেন। বিজ্ঞান হোক কিংবা আইন, রাজনীতি হোক কিংবা প্রশাসন, শিক্ষা হোক কিংবা সাহিত্য, সংস্কৃতি হোক কিংবা ক্রীড়া - প্রত্যেক ক্ষেত্রে অসংখ্য প্রতিভাকে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছে, ক্ষুরধার করে তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আর্টস কোয়াড্রাঙ্গল' নিজেই অসংখ্য ইতিহাস আগলে রেখেছে। এই আর্টস কোয়াড্রাঙ্গলে একদিন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আওয়াজ গুঞ্জরিত হয়েছে আর এখানে সেই বীর তাঁর বাণীতে বলেছিলেন, “ভারতের জনগণকে নিজস্ব সংবিধান রচনা করতে দাও আর নাহলে এর পরিণাম ভোগো।” আগামীকাল যখন আমরা, ভারতের নাগরিকরা নিজেদের সংবিধান দিবস পালন করব, তখন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সেই হুঙ্কার আমাদের নতুন প্রাণশক্তি জোগাবে।

 

বন্ধুগণ,

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের এত সুনাম, এত এত সফল ছাত্রছাত্রীর নাম, চাইলেও আমি সবার নাম উচ্চারণ করতে পারব না। আমি আজ এই পবিত্র অনুষ্ঠান উপলক্ষে তাঁদের সবাইকে প্রণাম জানাই। ১০০ বছরের যাত্রাপথে অনেক মানুষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনেক ধরনের অবদান রেখেছেন। তাঁরা সকলেই অভিনন্দনের অধিকারী। আমি লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে আসা অনেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে, স্বনামধন্য প্রাক্তনীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি, আর তাঁদের সঙ্গে কথা বলার সময় যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ উঠেছে, তখন তাঁদের চোখমুখেএকটা চমক দেখতে পেয়েছি। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দিনগুলি সম্পর্কে বলতে বলতে তাঁরা এতই উৎসাহিত হয়ে উঠতেন যা আমি অনেকবার অনুভব করেছি। সেজন্যই একটা কথা আছে, "লক্ষ্ণৌ হম ফর ফিদা, হম- ফিদা- এ লক্ষ্ণৌ"। আমি বারবার এই কথাটির অর্থ, খুব ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছি। লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মীয়তা, এখানকার রোমাঞ্চ সত্যিই ভিন্ন মাত্রার। এখানকার ছাত্রছাত্রীদের হৃদয়ে টেগোর লাইব্রেরী থেকে শুরু করে ভিন্ন ভিন্ন ক্যান্টিনের চা, সামোসা এবং বন- মাখন কখনও কেউ ভুলতে পারেননি। এখন পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেজাজ এখনও লক্ষ্ণৌভি রয়ে গেছে।

 

বন্ধুগণ,

কাকতালীয়ভাবে আজ দেব ক্রবোকিনী একাদশীর দিন। শাস্ত্র অনুসারে, চাতুর্মাসের আসা-যাওয়ার সমস্যার ফলে জীবন যেন অনেকটা থেমে থাকে। এমনকি, দেবতাগণও ঘুমোতে চলে যায়। আজকের দিনটি এক প্রকার দেব জাগরণের দিন। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে, “ইয়া নিশা সর্বভুতানাং তশ্যং জাগর্তি সংযমী” অর্থাৎ, যখন সমস্ত প্রাণীর পাশাপাশি দেবতারাও ঘুমিয়ে থাকেন, তখনও সংযমী মানব জনকল্যাণের জন্য সাধনারত থাকেন। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের নাগরিকরা কতটা সংযমের সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ,

দেশকে যাঁরা প্রেরণা জোগান, উৎসাহ জোগান, তেমন নাগরিকদের শিক্ষা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানেই সম্ভব হয়। লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক দশক ধরে এই কাজ খুব ভালোভাবে পালন করছে। করোনার সময়েও এখানকার ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা সমাজকে অনেক ধরনের সমাধান দিয়েছেন

 

বন্ধুগণ,

আমাকে বলা হয়েছে যে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্র অধিকার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা বেশ কয়েকটি নতুন গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু আমি সাহস করে আরও কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা সেই বিষয়গুলি নিয়ে অবশ্যই আলাপ-আলোচনা করবেন। আমার পরামর্শ হল, যে জেলাগুলি পর্যন্ত আপনাদের শিক্ষার আওতায় রয়েছে, সেখানকার স্থানীয় পণ্য, স্থানীয় উৎপাদন ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সেগুলির অনুকূল দক্ষতা উন্নয়ন, সেগুলি নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ – এসব কিছু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন হবে না? ওই শস্য, ফলমূল ও পণ্যের উৎপাদন নিয়ে মূল্য সংযোজনের জন্য আধুনিক সমাধান, আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে গবেষণাও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি করতে পারে। সেগুলির ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং এবং ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত কৌশলও আপনাদের পাঠক্রমের অংশ হয়ে উঠতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দৈনন্দিন শিক্ষার ও কাজের অংশ হয়ে উঠতে পারে। এখন যেমন লক্ষ্ণৌ-এর চিকনকারী, আলিগড়ের তালা, মোরাদাবাদের পিতলের বাসন, ভদোহীর কালীন কার্পেট – এমনই অনেক পণ্যকে আমরা কিভাবে আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারি, তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। এই গবেষণার মাধ্যমে সরকারের নীতি নির্ধারণে অনেক সুবিধা হবে। আর তখনই আমাদের  'এক জেলা এক পণ্য'  -র ভাবনা সদর্থক রূপ পাবে। তাছাড়া আমাদের কলা ও সংস্কৃতি, আমাদের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে যুক্ত বিষয়গুলিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছে দিতে আমাদের নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। আমাদের এই সফট পাওয়ার আন্তর্জাতিক জগতে ভারতের প্রতিচ্ছবি শক্তিশালী করে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক হবে। আমারা দেখেছি গোটা বিশ্বে যোগের শক্তি কতটা। আগেও হয়তো অনেকে যোগ করতেন। কেউ একে যোগ বলতেন, কেউবা একে যোগা বলতেন। কিন্তু এখন গোটা বিশ্ব যোগকে এক প্রকার জীবনের অংশ করে তুলেছে। এই প্রেরণা তাঁরা ভারত থেকে পেয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

বিশ্ববিদ্যালয় কেবলই উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয় অনেক উঁচু লক্ষ্য, উঁচু সঙ্কল্প বাস্তবায়িত করার শক্তি অর্জনেরও একটি বড় পাওয়ার হাউজ হয়, একটি বড় প্রাণশক্তি কেন্দ্র হয়, প্রেরণা ভূমি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের চরিত্র নির্মাণের, আমাদের আন্তরিক শক্তিকে জাগিয়ে তোলার প্রেরণাস্থল হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বছরের পর বছর ধরে তাঁদের ছাত্রছাত্রীদের মেধা, শিক্ষা এবং শারীরিক উন্নতি সুনিশ্চিত করেন, ছাত্রদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করেন। ছাত্ররা নিজেদের সামর্থ্যকে যাতে চিনতে পারে সেজন্য শিক্ষকদের অনেক বড় ভূমিকা থাকে। কিন্তু বন্ধুগণ, দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের দেশে এটাই সমস্যা ছিল যে আমরা নিজেদের সামর্থ্যকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহারই করতাম না। এই সমস্যা আগে আমাদের সরকারি প্রশাসনের কর্মসংস্কৃতিতে, সরকারি আদব-কায়দার মধ্যেও ছিল। যখন সামর্থ্যের সঠিক ব্যবহার না হয়, তখন কী পরিণাম হয় সে সম্পর্কে আজ আপনাদের একটি উদাহরণ দিতে চাই। আর এখানে উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে সেটি অনেক বেশি উপযোগীও। আপনাদের থেকে খুব দূরে নয়, লক্ষ্ণৌর কাছেই রায়বেরিলি রেলওয়ে কোচ ফ্যাক্টরির কথা বলছি। অনেক বছর আগে এখানে বিনিয়োগ হয়েছিল, অনেক সম্পদ এসেছিল, অনেক মেশিনও এসেছিল, বড় বড় ঘোষণা হয়েছিল যে রেল কোচ তৈরি হবে। কিন্তু অনেক বছর ধরে সেখানে কেবলই ডেন্টিং-পেইন্টিং-এর কাজ চলত। কাপুরথলা থেকে রেলের কোচ তৈরি হয়ে এখানে আসত, আর এখানে সামান্য রং করে একটু এদিক-ওদিক করে লাইনে চলার উপযোগী করে তোলা হত। যে কারখানায় রেলের কোচ তৈরি করার সামর্থ্য ছিল, তার সম্পূর্ণ ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ কখনও হয়নি। ২০১৪ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে এসব দেখে, কারখানার শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপক – সকলের ভাবনায় পরিবর্তন আনি, কর্মসংস্কৃতি বদলে দিই। পরিণামস্বরূপ, কয়েক মাসের মধ্যেই এখান থেকে প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ কোচ তৈরি হয়ে রেলপথে নামে। তারপর থেকে প্রত্যেক বছর এখান থেকে কয়েকশ' রেল কোচ নির্মাণ হতে শুরু করে। সামর্থ্যের সঠিক ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, তা আপনাদের এত কাছেই রয়েছে। আর গোটা বিশ্ব আজ দেখছে এবং উত্তরপ্রদেশবাসীরা এজন্য গর্ব করতে পারেন, এখন থেকে কিছুক্ষণ পর বিশ্বের সব থেকে বড় রেল কোচ ফ্যাক্টরি কোনটা, এই প্রশ্ন করলে আপনারা গর্বের সঙ্গে বলতে পারবেন যে রায়বেরিলির রেল কোচ ফ্যাক্টরি।

 

বন্ধুগণ,

সামর্থ্যের সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি, ইতিবাচক ভাবনা এবং ইচ্ছাশক্তি থাকাও ততটাই জরুরি। ইচ্ছাশক্তি না থাকলে আপনাদের জীবনের কাঙ্খিত ফল পাবেন না। ইচ্ছাশক্তি থাকলে কিভাবে পরিবর্তন আসে দেশের সামনে এখন তার অনেক উদাহরণ রয়েছে। আমি শুধু আপনাদের সামনে একটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাইব। সেটি হল ইউরিয়া। একটা সময় ছিল যখন দেশে ইউরিয়া উৎপাদনের অনেক কারখানা ছিল। তা সত্ত্বেও ভারতকে বিদেশ থেকে ইউরিয়া আমদানি করতে হত। এর একটা বড় কারণ ছিল, দেশের অধিকাংশ সার কারখানাই তাদের সম্পূর্ণ ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করত না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর যখন আধিকারিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলি, তখন এসব দেখে অবাক হয়ে যাই।

 

বন্ধুগণ,

আমরা একের পর এক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিই। ফলস্বরূপ, আজ দেশের ইউরিয়া কারখানাগুলি পূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে কাজ করছে। তাছাড়া আরেকটা সমস্যা ছিল ইউরিয়ার কালোবাজারি। কৃষকদের নামে ইউরিয়া সরবরাহ করা হত, কিন্তু অন্য কোথাও পৌঁছে যেত। পথে চুরি হয়ে যেত। তার জন্য আমাদের দেশের কৃষকদের অনেক কষ্ট হত। ইউরিয়ার কালোবাজারি বন্ধ করার জন্য আমরা অনেক চিন্তাভাবনা করে ১০০ শতাংশ ইউরিয়াকেই নিম কোটিং করে দিই। এই নিম আচ্ছাদিত ইউরিয়ার ভাবনা মোদীর মাথা থেকে এসেছে তেমনটা নয়। এরকম করা যায়, সবাই জানতেন। আগেও সামান্য মাত্রায় নিম আচ্ছাদন করা হত। কিন্তু সামান্য মাত্রায় নিম আচ্ছাদিত ইউরিয়া উৎপাদন ইউরিয়া চুরিকে আটকাতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ১০০ শতাংশ নিম আচ্ছাদন করে দিই। এর জন্য যে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন ছিল, সেটা আগে ছিল না। এখন ১০০ শতাংশ ইউরিয়া নিম আচ্ছাদিত হয়ে পড়ায় সেগুলি আর চোরাই পথে রাসায়নিক কারখানায় পৌঁছতে পারছে না। কৃষকরাও পর্যাপ্ত মাত্রায় ইউরিয়া পাচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ,

নতুন প্রযুক্তি এনে পুরনো এবং বন্ধ হয়ে থাকা সার কারখানাগুলিকে আমরা আবার চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। গোরক্ষপুর থেকে শুরু করে সিন্দ্রি, বারাউনি - এই সমস্ত জায়গায় কয়েক বছরের মধ্যেই সার কারখানাগুলি আবার চালু হয়ে যাবে। সেজন্য অনেক বড় গ্যাস পাইপলাইন সমগ্র পূর্ব ভারতে পাতা হচ্ছে। এসব কথা বলার অর্থ হল, চিন্তাভাবনায় ইতিবাচকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্ভাবনাগুলিকে আমাদের সর্বদাই জীবিত রাখতে হবে। আপনারা দেখবেন, তাহলেই আপনারা জীবনে কঠিন থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারবেন।

 

বন্ধুগণ,

আপনাদের জীবনে প্রায়ই এমন সব মানুষের সম্মুখীন হবেন যাঁরা আপনাদের উৎসাহ জোগানোর বদলে হতাশ করে তুলবে। এটা হতে পারে না, আরে এটা তুই করতে পারবি না, ছেড়ে দে এটা তোর কাজ নয় – এরকম অনেক কথা শুনতে পাবেন। প্রতিদিন এরকম ১০ জনের সঙ্গে দেখা হবে যাঁরা শুধু আপনাকে হতাশ করবে। কিন্তু আপনারা নিজের ওপর ভরসা রাখুন এবং এগিয়ে যান। যদি মনে হয় নিজে যা করছেন সেটা ঠিক, দেশের স্বার্থে করছেন এবং আইন মেনে সঠিক পদ্ধতিতে করছেন, তাহলে সে কাজ করার ক্ষেত্রে কখনও কারোর বাধা-নিষেধ শুনবেন না। এক্ষেত্রে আজ আপনাদের আরও একটা উদাহরণ দিতে চাই। বন্ধুগণ, আমাদের দেশে খাদি নিয়ে যে আবহ রয়েছে, আমার জীবনে তার বিপরীত ছিল। আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, সামাজিক কাজ করতাম, কখনও রাজনৈতিক কর্মকর্তা রূপে কাজ করতাম, খাদি নিয়ে আমার খুব গর্ব হত। আমি চাইতাম যে খাদির যে দায়বদ্ধতা, খাদির প্রতি যে আকর্ষণ, খাদির প্রসিদ্ধি তা যেন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়। যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হলাম, তখন যথাসম্ভব খাদির প্রচার-প্রসারে মনোযোগ দিলাম। প্রতিবছর ২ রা অক্টোবর আমি নিজে বাজারে গিয়ে খাদি স্টোর থেকে কিছু না কিছু কিনতাম। আমার ভাবনা অত্যন্ত ইতিবাচক ছিল, ইচ্ছাশক্তিও ছিল। কিন্তু অন্যদিকে কিছু লোক আমাকে নিরুৎসাহ করতেন। তাঁরা বলতেন যে খাদি নিয়ে এত হইচই করার কী দরকার? খাদির পোশাক অত্যন্ত 'বোরিং' এবং 'আনকুল'। কিন্তু আমার তা মনে হত না। আমি মনে মনে ভাবতাম কী করলে আমাদের আজকের যুব সমাজ খাদিকে আপন করে নেবে, কিভাবে খাদির প্রচার-প্রসারে তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারব? কিন্তু আমার চারপাশের পরিবেশ আমাকে এতই হতোদ্যম করে দেয় যে আমার মনে খাদির পুনরুদ্ধারের সমস্ত উদ্যোগ, সমস্ত সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। তবুও আমি ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে অন্যভাবে এগোতে চাই। ২০০২ সালে মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তীর দিন, তাঁর জন্মস্থান পোরবন্দরে খাদির কাপড়ের একটি ফ্যাশন শো আয়োজনের পরিকল্পনা করি। আর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন ছাত্রছাত্রীদের সেই ফ্যাশন শো আয়োজনের দায়িত্ব দিই। ফ্যাশন শো তো আজকাল চলতেই থাকে। কিন্তু সেখানে খাদি এবং নবীন ছাত্রছাত্রী উভয়ের মেলবন্ধনে সেদিন যে নতুন আবহ গড়ে উঠেছিল, তা আমার মনের সমস্ত নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক করে তোলে। আমাদের সেই নবীন বন্ধুরা, সেই ফ্যাশন শো-কে এতটা সাফল্যমণ্ডিত করে যে আমি সেই অনুষ্ঠানে একটি স্লোগান তুলি, স্বাধীনতার আগে ছিল 'খাদি ফর নেশন', আর এখন আমরা বলব 'খাদি ফর ফ্যাশন'। অনেকে অবাক হয়ে যায়, খাদি কিভাবে ফ্যাশনেবল হতে পারে। কেউ এমনটা কী করে ভাবতে যে খাদি আর ফ্যাশন একসঙ্গে চলতে পারে!

 

বন্ধুগণ,

কিন্তু এবার আমার আর খুব বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। শুধুই ইতিবাচক ভাবনা আর ইচ্ছাশক্তি আমার ভাবনার নৌকায় পাল তুলে দেয়। অনেক মানুষকে সেই সাফল্যের অংশীদার করে তুলতে পারি! আজ যখন শুনি খাদি স্টোরগুলিতে এক একদিনে এক এক কোটি টাকার বস্ত্রসামগ্রী বিক্রি হয়েছে, তখন আমার সেদিনের কথা মনে পড়ে। আপনারা শুনে অবাক হবেন, আর এই পরিসংখ্যান মনে রাখবেন যে ২০১৪ সালের আগে ২০ বছরে যত টাকার খাদি সামগ্রী বিক্রি হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি খাদি সামগ্রী গত ছয় বছরে বিক্রি হয়েছে। কোথায় ২০ বছরের ব্যবসা আর কোথায় ছয় বছরের ব্যবসা।

 

বন্ধুগণ,

লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই একদিন কবিবর প্রদীপ বলেছিলেন, আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মাঠে বসে তাঁর কলম থেকে বেরিয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, “কখনও কখনও নিজের সঙ্গে কথা বল, কখনও নিজের সঙ্গে বল, নিজের নজরে তুমি কী - এটাকে মনের দাড়ি-পাল্লায় মাপো।” এই পংক্তিগুলি একজন ছাত্র হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে কিংবা জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের সকলের জন্য এক প্রকার আলোকবর্তিকা। এখনকার দৌড়ঝাঁপের জীবনে নিজের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, নিজের সঙ্গে কথা বলা, আত্মমন্থন করার অভ্যাস যেন হারিয়ে যাচ্ছে। এত বেশি ডিজিটাল গ্যাজেট, এত বেশি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, সেগুলি আপনাদের সময় চুরি করে নেয়, ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু আপনাদের এগুলির মধ্যে থেকেও নিজের জন্য সময় বের করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

আমি আগে একটা কাজ করতাম। গত ২০ বছর ধরে সেটা আর করতে পারিনি কারণ আপনারা সবাই আমাকে এমন কাজ দিয়ে দিয়েছেন যে সেই গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু যখন আমি শাসন ব্যবস্থায় ছিলাম না, তখন প্রত্যেক বছর আমার নিজের একটা কর্মসূচি ছিল। আমি নিজের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বেরিয়ে পরতাম। ৫-৭ দিনের জন্য এমন জায়গায় চলে যেতাম যেখানে কোনও মানুষ থাকত না। সামান্য জলের ব্যবস্থা থাকলেই হল। আমার জীবনের সেই মুহূর্তগুলি অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। আমি আপনাদেরকে জঙ্গলে যাওয়ার জন্য বলছি না। কিন্তু সামান্য সময় নিজের জন্য বের করুন। আপনারা কতটা সময় নিজেদেরকে দিচ্ছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে জানুন, নিজেকে চিনুন। এই লক্ষ্যে ভাবনা অত্যন্ত জরুরি। আপনারা দেখবেন, এর প্রভাব সরাসরি আপনাদের সামর্থ্যকে উন্নীত করবে। আপনাদের ইচ্ছাশক্তিকে উন্নীত করবে।

 

বন্ধুগণ,

ছাত্র জীবন সেই অমূল্য সময় যা পেরিয়ে গেলে আবার ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়। সেজন্য আপনারা ছাত্র জীবনকে উপভোগ করুন, উৎসাহ জোগান। এই সময়ে যারা আপনাদের বন্ধু হবে, তারাই সারা জীবন আপনাদের সঙ্গে থাকবে। পদ, প্রতিষ্ঠা, কলেজ- এই স্কুল-কলেজের বন্ধুরাই সারা জীবন বন্ধুত্ব রক্ষা করে। আপনাদের জীবনে তাদের একটা আলাদা স্থান থাকবে। জমিয়ে বন্ধুত্ব করুন। খুব বন্ধুত্ব পালন করুন।

 

বন্ধুগণ,

আমরা যে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছি, তার লক্ষ্যই হল দেশের প্রত্যেক যুবক-যুবতী যেন নিজেদের জানতে পারে, নিজের মনকে জাগিয়ে তুলতে পারে। নার্সারি থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত আমূল পরিবর্তনের এই সঙ্কল্প নিয়ে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হয়েছে। এতে চেষ্টা করা হয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের মনে যাতে আত্মপ্রত্যয় জেগে ওঠে। কেউ যখন নিজের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা পায়, তার জীবনে যখন নমনীয়তা থাকে, তখনই আত্মপ্রত্যয় জেগে ওঠে। নানারকম বন্ধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা শরীর ও মন কখনই উৎপাদক হয়ে ওঠে না। মনে রাখবেন, এমন অনেক মানুষ পাবেন যাঁরা সর্বদাই পরিবর্তনের বিরোধিতা করেন, কারণ তাঁরা পুরনো কাঠামো ভেঙে যাওয়ার ভয় পান। তাঁরা মনে করেন যে পরিবর্তন শুধুই নৈরাজ্য ডেকে আনে, চলমানতাকে স্তব্ধ করে দেয়। তাঁরা নতুন নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে কখনই ভাবে না। আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদের সর্বদাই এ ধরনের ভয় থেকে নিজের বের করে আনতে হবে। সেজন্য আমার লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা, ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অনুরোধ, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিকে অধ্যয়ন করুন, একে নিয়ে মন্থন করুন, তর্ক করুন, একে যত দ্রুত সম্ভব সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়িত করুন। দেশ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব পালন করবে, তখন যেন নতুন শিক্ষানীতি ব্যাপক রূপে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অঙ্গ হয়ে ওঠে! আসুন, “বয়ঃ রাষ্ট্রে জাগ্রিয়াম পুনহিতাঃ” - এই ঘোষণাকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমরা সকলেই লেগে পড়ি। আসুন, আমরা ভারতমাতার বৈভব অর্জনের জন্য পণ করি। আর সমস্ত পণকে নিজেদের কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়িত করি।

 

বন্ধুগণ,

১৯৪৭ থেকে শুরু করে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত যখন ১০০ বছর পূর্তি হবে, আমি লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করব, এর নীতি নির্ধারকদের অনুরোধ করব যে ৫-৭ দিন ধরে ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী তৈরি করে মন্থন করুন। আপনারা কিভাবে ২০৪৭ সাল পালন করবেন, তার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করুন। যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি হবে, তখন লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় কোথায় পৌঁছবে? আগামী ২৫ বছরে দেশ ও জাতি গঠনে কী কী অবদান রাখবে, দেশের কোন প্রয়োজন সাধনে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব করবে তা ঠিক করুন। বড় সঙ্কল্প নিয়ে, নতুন সাহস নিয়ে যখন আপনারা স্বাধীনতার শতাব্দী বর্ষ পালন করবেন, তখন বিগত দিনের সাফল্যগাথাগুলি থেকে প্রেরণা গ্রহণ করতে হবে। আগামীদিনের জন্য পাকদণ্ডি গড়ে তুলতে, আর তীব্র গতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণশক্তি অর্জন করতে হবে।

এই শতবার্ষিকী সমারোহ যেন শুধু স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, এই সমারোহ যেন আগামী স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের সময় পর্যন্ত ২৫ বছরের রোডম্যাপ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায়, লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমি এই মেজাজই প্রত্যাশা করি। আমার আশা,স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিতে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের জন্য নতুন উচ্চতা অর্জনে নিজের সমর্পিত করবে। আজ বিগত ১০০ বছরের ইতিহাস সাক্ষী, গত ১০০ বছরে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত সবাই যে সময় কাটিয়েছেন, যে সাফল্য পেয়েছেন, তার সাক্ষী। আর সেজন্য আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ রাখব, আপনারা নিজেদের মনে ২০৪৭-এর সঙ্কল্প নিয়ে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তিকে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যক্তি হিসেবে কী কী অবদান রাখবেন সেই ভাবনা নিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয় রূপে কী কী অবদান রাখবেন, সেই সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে যান। আমি আজ আরেকবার এই শতাব্দী সমারোহ উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই, আর আপনাদের মাঝে আসার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।

ধন্যবাদ।

***

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1676015) Visitor Counter : 272