প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির আবরণ উন্মোচন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 NOV 2020 9:05PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ নভেম্বর, ২০২০

 

শুরুতেই আমি উপস্থিত নবীন বন্ধুদের একটি জয়ধ্বনি করার জন্য অনুরোধ জানাই। আপনারা অবশ্যই আমার সঙ্গে বলুন, আমি বলব স্বামী বিবেকানন্দ, আপনারা বলবেন অমর রহে, অমর রহে।

 

স্বামী বিবেকানন্দ - অমর রহে! অমর রহে!

স্বামী বিবেকানন্দ - অমর রহে! অমর রহে!

 

দেশের শিক্ষামন্ত্রী ডঃ রমেশ পোখরিয়াল 'নিশাঙ্ক'জি, জেএনইউ-র উপাচার্য অধ্যাপক জগদীশ কুমারজি,  প্রো-ভাইস চ্যান্সেলার অধ্যাপক আর পি সিংজি, আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের জন্য জেএনইউ-র প্রাক্তন ছাত্র ডঃ মনোজ কুমারজি, ভাস্কর শ্রী নরেশ কুমাবতজি, বিভিন্ন স্থান থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিশাল সংখ্যায় এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমার প্রিয় নবীন বন্ধুরা। আমি জেএনইউ প্রশাসন, সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

বন্ধুগণ,

 

স্বামী বিবেকানন্দজি বলতেন, "মূর্তিতে আস্থার পেছনে রহস্য হল আপনারা এই একটি বিষয় থেকে দিব্য দূরদৃষ্টি গড়ে তুলতে পারেন।" আমি কামনা করি জেএনইউ-তে প্রতিষ্ঠিত স্বামীজির এই মূর্তিটি সবাইকে প্রেরণা জোগাবে, প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলবে। এই মূর্তি আপনাদের সেই সাহস দিক, সেই শৌর্য দিক যা স্বামী বিবেকানন্দ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে দেখতে চাইতেন। এই মূর্তি আপনাদের সেই করুণা ভাব শিক্ষা দিক, সেই সংবেদনশীলতার শিক্ষা দিক যা স্বামীজির দর্শনের মূল ভিত্তি।

 

এই মূর্তি আমাদের দেশের প্রতি অগাধ সমর্পণের শিক্ষা দিক, দেশ প্রেমের শিক্ষা দিক, আমাদের দেশের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসার শিক্ষা দিক যা স্বামীজির জীবনের মূল আদর্শ, তার মূল বার্তা। এই মূর্তি দেশকে একতার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে প্রেরণা জোগাক যা স্বামীজির মূল ভাবনার প্রেরণা ছিল। এই মূর্তি দেশকে নবীনদের নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রেরণা জোগাক, যেমনটি স্বামীজি দেশবাসীর কাছে প্রত্যাশা করেছিলেন। এই মূর্তি স্বামীজির ক্ষমতায়িত সমৃদ্ধ ভারতের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রেরণা জুগিয়ে যাক।

 

বন্ধুগণ,

 

এটি নিছকই একটি মূর্তি নয়। এটি সেই ভাবনার উচ্চতার প্রতীক যার শক্তিতে একজন সন্ন্যাসী গোটা বিশ্বের সামনে ভারতের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তাঁর ছিল বেদান্ত সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান। তাঁর একটি বিশেষ দর্শন, বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। তিনি জানতেন যে ভারত বিশ্বকে কী কী দিতে পারে! তিনি ভারতের শাশ্বত বিশ্ব বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে বিশ্বময় ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভারতের সাংস্কৃতিক বৈভব, দর্শন ও পরম্পরাকে তিনি বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন এবং অত্যন্ত গৌরবময় পদ্ধতিতে তুলে ধরেছেন।

 

আপনারা কি ভাবতে পারেন, যখন চারিদিকে নিরাশা ছিল, হতাশা ছিল, দাসত্বের বোঝায় আমরা আমাদের দেশের মানুষ ভারাক্রান্ত ছিল, তখন স্বামীজি আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেছিলেন, বিগত শতাব্দীর গোড়ার দিকের কথা। তিনি কী বলেছিলেন? মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত থেকে যাওয়া একজন সন্ন্যাসী ঘোষণা করেছিলেন, পাশাপাশি ভারতীয় দর্শনকে তুলে ধরেছিলেন।

 

তিনি বলেছিলেন – “এই শতাব্দী আপনাদের"। অর্থাৎ, বিগত শতাব্দীর গোড়াতেই তিনি তাঁর দূরদৃষ্টি দিয়ে এই শব্দ উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন – “এই শতাব্দী আপনাদের, কিন্তু একবিংশ শতাব্দী নিশ্চিতভাবেই ভারতের হবে।" বিগত শতাব্দীর গোড়ায় কত সঠিকভাবে তিনি এই শব্দগুলি উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন। এই বর্তমান শতাব্দীতে তাঁর সেই শব্দগুলিকে প্রমাণিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

 

ভারতীয়দের সেই আত্মবিশ্বাস, সেই উদ্দীপনা আপনাদের সামনে এই মূর্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। এই মূর্তি সেই জ্যোতিপুঞ্জের দর্শনে উজ্জীবিত করবে, যেমনটি পরাধীনতার দীর্ঘ সময়কালে নিজেদের, নিজেদের সামর্থ্যকে, নিজেদের পরিচয়কে ভুলতে থাকা ভারতবাসীকে জাগিয়ে তুলেছিল, জাগানোর কাজ করেছিল। ভারতে নতুন চেতনার সঞ্চার করেছিল।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশ আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য এবং সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ আত্মনির্ভর ভারতের ভাবনা ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতবাসীর মিলিত আত্মচেতনার, আমাদের আকাঙ্ক্ষার অংশ হয়ে উঠেছে। যখন আমরা আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলি, তখন এর লক্ষ্য শুধুই ভৌত বা বস্তুবাদী আত্মনির্ভরতায় সীমাবদ্ধ থাকে না। আত্মনির্ভরতার গভীর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। এর পরিধিও সুদূরপ্রসারী, এর গভীরতাও অতল, এর উচ্চতাও আকাশচুম্বী। আত্মনির্ভর ভারত তখনই গড়ে উঠবে যখন সম্পদের পাশাপাশি ভাবনা এবং শিষ্টাচারের মাধ্যমেও আমরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠব।

 

বিদেশে একবার কেউ স্বামীজিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনারা এমন পোশাক কেন পরেন না যাতে আপনাদের ভদ্রলোক বলে মনে হয়? এই প্রশ্ন শুনে স্বামীজি একটি অসাধারণ জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবে ভারতের আত্মবিশ্বাস ও ভারতের মূল্যবোধের গভীরতা ফুটে উঠেছিল। অত্যন্ত বিনম্রতার সঙ্গে স্বামীজি সেই ভদ্রলোককে জবাব দিয়েছিলেন – “আপনাদের সংস্কৃতিতে দেখছি একজন দর্জি ভদ্রলোক গড়ে তোলে, কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে চরিত্রগঠনই নির্দ্ধারন করে দেয় কারা ভদ্রলোক।" এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিও আত্মনির্ভর ভাবনা এবং শিষ্টাচার সম্পন্ন মানুষ গড়ে তোলে, আপনাদের মতো নবীন বন্ধু গড়ে তোলে।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশের যুব সম্প্রদায়ই সারা পৃথিবীতে 'ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া'র যথার্থ ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। আমাদের নবীনরা ভারতের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেজন্য আপনাদের প্রতি প্রত্যাশা শুধুই হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা ভারতের প্রাচীন পরিচয় নিয়ে গর্ব করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। একবিংশ শতাব্দীর ভারতের নতুন পরিচয়ও গড়ে তোলার প্রত্যাশা থাকবে আপনাদের প্রতি। অতীতে আমরা বিশ্বকে কী কী দিয়েছি সেসব মনে রাখা এবং সেগুলি পুনরুচ্চারণ করা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এই আত্মবিশ্বাসের শক্তি নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হবে। ভারত একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বে কী কী অবদান রাখবে তার জন্য একের পর এক উদ্ভাবন করে যাওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের নবীন সাথীরা দেশের নীতি এবং পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের মনে এই প্রশ্ন অবশ্যই উঠছে যে ভারতের আত্মনির্ভরতার মানে কি শুধু নিজের আত্মসমালোচনা, নিজের মধ্যেই মগ্ন থাকা? এর জবাবও আমাদের স্বামী বিবেকানন্দজির দর্শন থেকে আমরা পাব। স্বামীজিকে একবার কেউ জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কোনও সন্ন্যাসীর কি দেশের বদলে পৃথিবীর সমস্ত দেশকে নিজের বলে মানা উচিৎ নয়? এই প্রশ্নের উত্তরে স্বামীজি সহজভাবে জবাব দিয়েছিলন, যে ব্যক্তি নিজের মাকে ভালোবাসা এবং অবলম্বন দিতে না পারে, তিনি অন্যের মায়েদের নিয়ে কিভাবে ভাববেন? সেজন্য আমাদের আত্মনির্ভরতা সম্পূর্ণ মানবতার কল্যাণের জন্যই এবং আমরা এটা বাস্তবায়িত করে দেখাচ্ছি। যখন যখন ভারতের সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনই তার মাধ্যমে বিশ্ববাসী লাভবান হয়েছেন। ভারতের আত্মনির্ভরতায় "আত্মবৎ সর্বভুতেষু"র ভাবনা যুক্ত রয়েছে, সমগ্র পৃথিবীর কল্যাণের ভাবনা যুক্ত রয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ প্রতিটি ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব সংস্কারযজ্ঞ চলছে তা এই আত্মনির্ভরতার ভাবনা থেকেই করা হচ্ছে। দেশের জনগণ ভোটের মাধ্যমে এই সংস্কারগুলিকে সমর্থনও করেছেন। আপনারা সবাই তো জেএনইউ-তে ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাগুলিকে নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণ করেন। আপনাদের থেকে ভালোভাবে কে জানে যে ভারতে এই সংস্কারগুলি নিয়ে কত ধরনের সমালোচনা হয়েছে। এটা কি সত্য নয় যে ভারতে এতদিন ভালো সংস্কারকেও রাজনীতির নিরিখে বাজে পদক্ষেপ বলে মনে করা হত? তাহলে এখন ভালো সংস্কারগুলি ভালো রাজনৈতিক পদক্ষেপ কিভাবে হয়ে উঠেছে?

 

এই বিষয়ে জেএনইউ-র বন্ধুরা অবশ্যই গবেষণা করুন, কিন্তু অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি একটি কথা আপনাদের সামনে অবশ্যই তুলে ধরতে চাই। আজ আমাদের ব্যবস্থায় সরকার যত সংস্কারসাধন করছে, তার পেছনে ভারতকে সমস্ত দিক দিয়ে উন্নত করে তোলার সঙ্কল্প রয়েছে। আজ যে সংস্কারগুলি করা হচ্ছে, সেগুলির মূল উদ্দেশ্য এবং সেগুলির প্রতি নিষ্ঠা অত্যন্ত পবিত্র। আজ যে সংস্কারগুলি করা হচ্ছে সেগুলির আগেই সেগুলির সপক্ষে সুরক্ষা কবচ তৈরি করে নেওয়া হচ্ছে। এই সুরক্ষা কবচগুলির সব থেকে বড় ভিত্তি হল বিশ্বাস এবং ভরসা। এখন যেমন কৃষক-বান্ধব সংস্কারগুলি করা হয়েছে সেগুলি নিয়ে যদি কথা বলি, কৃষকরা অনেক দশক ধরেই ভারতে রাজনৈতিক ভাবনা-চিন্তার বিষয় ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তৃণমূলস্তরে তাঁদের উন্নয়নের জন্য খুব কম পদক্ষেপই নেওয়া হয়েছে।

 

বিগত ৫-৬ বছরে আমরা কৃষকদের জন্য একটি সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। সেচের উন্নত পরিকাঠামো, মাণ্ডিগুলির আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগ, ইউরিয়ার সহজলভ্যতা, মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড, উন্নত বীজ, ফসল বিমা, শস্য উৎপাদনের খরচের তুলনায় দেড়গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অনেকবার বাড়ানো, আর কৃষকদের কাছ থেকে রেকর্ড পরিমাণ শস্য কেনা। এই সমস্ত সুরক্ষা কবচ যখন কৃষকদের জন্য আমরা গড়ে তুলতে পেরেছি, তখনই তাঁদের মনে আমাদের প্রতি বিশ্বাস জেগে উঠেছে আর সেই বিশ্বাসকে সম্বল করেই আমরা কৃষি সংস্কার যজ্ঞে হাত দিয়েছি।

 

আগে কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। আর এখন কৃষকদের আকাঙ্ক্ষা পূর্তির জন্য কাজ করা হচ্ছে। এখন কৃষকদের পারম্পরিক সুবিধাগুলির থেকে বেশি বিকল্প বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যখন বিকল্প বেশি পাওয়া যায়, তখন ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও বৃদ্ধি পায় যা থেকে কৃষকরা সরাসরি লাভবান হবেন। এই সংস্কারগুলির ফলে এখন কৃষক উৎপাদক সঙ্ঘ, অর্থাৎ এফপিও-গুলির মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি রপ্তানিকারক হয়ে ওঠার পথ খুলে গেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষকদের পাশাপাশি গরীবদের হিতের কথা ভেবে যে সংস্কারগুলি আনা হচ্ছে, সেগুলিকেও এরকম বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘকাল ধরে গরীবদেরকে শুধুই স্লোগান দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হত। কিন্তু বাস্তবে দেশের গরীবদেরকে কখনও ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টাই করা হয়নি। গরীবরাই সব থেকে বেশি অবহেলিত ছিলেন, তাঁরাই সবচাইতে বেশি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তাঁরাই সবচাইতে বেশি অর্থনৈতিকভাবে বর্জিতও ছিলেন। এখন গরীবদের জন্য নিজস্ব পাকা বাড়ি, শৌচাগার, বিদ্যুৎ সংযোগ, রান্নার গ্যাস সংযোগ, নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং, সস্তায় মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগের পরিষেবা অন্যান্য নাগরিকদের মতো গরীবদের কাছেও পৌঁছচ্ছে। এগুলিই আমাদের গরীবদের জন্য তৈরি সুরক্ষা কবচ যা তাঁদের আকাঙ্ক্ষাগুলিকে ডানা মেলতে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে উপযোগী প্রমাণিত হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আরেকটি সংস্কার যা সরাসরি আপনাদের, জেএনইউ-র মতো দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রভাব ফেলবে তা হল নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি। এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মূল ভাবনা হল মূল্যবোধসম্পন্ন আস্থাবান, প্রত্যয়ী এবং চারিত্রিক দৃঢ়তাসম্পন্ন নবীন ভারতের নির্মাণ। তাঁর সুদূরপ্রসারী ভাবনায় স্বামী বিবেকানন্দ এরকমই ভারতের কল্পনা করেছিলেন। তিনি চাইতেন যে ভারতের শিক্ষা এমন হোক যা নবীন প্রজন্মকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে এবং তাঁদেরকে সমস্তরকম ভাবে আত্মনির্ভর করে তুলবে।

 

জীবনের দুই-আড়াই দশক পর নবীন বন্ধুদের জীবনে যে প্রত্যয় গড়ে ওঠে তা স্কুলে পড়াশোনা করার সময় থেকেই গড়ে ওঠা প্রয়োজন। শুধু বইয়ের পড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, শুধুই লেখাপড়ার কারাগারে বন্দী থাকলে চলবে না, মার্কশিট, ডিগ্রি, ডিপ্লোমার মধ্যেই নবীন প্রজন্মের প্রাণশক্তিকে বেঁধে রাখলে চলবে না, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে এই মনোভাবকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিকরণ, এটাই হল নতুন শিক্ষানীতির মূল কথা। ভাষা শুধু একটা মাধ্যম মাত্র। এটি জ্ঞানের পরিমাপকারী নয়। এই ভাবনাই হল নতুন শিক্ষানীতির মূল কথা। দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষদের, দেশের কন্যা-সন্তানদের প্রয়োজন ও সুবিধা অনুসারে উন্নত শিক্ষার অধিকার যেন তাঁরা পায়, এটাই এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

শুধু সংস্কার করলেই হয় না। যেভাবে সেই সংস্কারগুলিকে আমরা নিজেদের জীবনে, নিজেদের ব্যবহারে আপন করে নেব, সেটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সার্থক পরিবর্তন তখনই দ্রুতগতিতে সম্ভব হবে, যখন আপনাদের মতো সমস্ত নবীন বন্ধুরা সততার সঙ্গে এই প্রচেষ্টা করবেন। বিশেষ করে, আমাদের শিক্ষক সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবীদের ওপর সব থেকে বেশি দায়িত্ব। বন্ধুগণ, জেএনইউ-র এই ক্যাম্পাসে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান আছে। আমি কোন জায়গার কথা বলছি? সবরমতী ধাবা? আছে না! সেখানে অনেকের বাকি খাতা চলে। আমি শুনেছি, আপনারা ক্লাসের পর সেই ধাবায় যান এবং চা ও পরোটা নিয়ে খেতে খেতে তর্ক জুড়ে দেন। নিজেদের চিন্তা-ভাবনা বিনিময় করেন। এমনিতে ভরা পেটে তর্ক-বিতর্কে ভালোই আনন্দ হয়, কিন্তু এতদিন পর্যন্ত আপনাদের ভাবনা-চিন্তা, তর্ক, আলাপ-আলোচনার যে ক্ষিদে সবরমতী ধাবায় মিটত, সেই তর্ক-বিতর্ক, ভাবনার আদান-প্রদানের বিস্তার এখন স্বামীজির এই মূর্তির ছত্রছায়াতেও সম্ভব হতে পারে। আপনারা আরেকটি নতুন জায়গা পেয়ে গেলেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে বিষয়টি সবচাইতে বেশি লোকসানদায়ক হয়েছে তা হল আমাদের ব্যক্তিগত মতাদর্শকে রাষ্ট্রহিত থেকেও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, আমার মতাদর্শ যদি বলে, রাষ্ট্রহিত ছাড়াও অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আমি ভাবব, সেই অনুযায়ী কাজ করব, এটা আমার মতে সঠিক পথ নয়, এটা ভুল পথ। আজ প্রত্যেকেই নিজের মতাদর্শ নিয়ে গর্ব করে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তবুও আমাদের বিচারধারা রাষ্ট্রহিতের ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রের চিন্তাভাবনার অনুকূল হওয়া উচিৎ, রাষ্ট্র বিরোধী কখনই নয়।

 

আজ দেশের ইতিহাসের দিকে যদি তাকান, যখনই দেশের সামনে কোনও কঠিন সমস্যা এসেছে, প্রত্যেক ভাবনা, প্রত্যেক রাজনৈতিক মতাদর্শ রাষ্ট্রহিতে একসঙ্গে পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার লড়াইয়ে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে সমস্ত বিচারধারার মানুষেরা একসঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁরা দেশের স্বার্থে একসঙ্গে লড়াই করেছিলেন।

 

এমন নয় যে বাপুজির নেতৃত্বে কোনও ব্যক্তিকে নিজের মতাদর্শ ছেড়ে এগিয়ে আসতে হয়েছে। সে সময় এমন পরিস্থিতি ছিল, তখন প্রত্যেকেই দেশকে স্বাধীন করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তারপর জরুরি অবস্থার কথা মনে করুন। জরুরি অবস্থার সময়েও দেশবাসী এরকম ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আর আমারও সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছিল। আমি নিজের চোখে সমস্ত আন্দোলনটাকে দেখেছি এবং অনুভব করেছি। আমি তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী।

 

জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনে কংগ্রেসের কয়েকজন প্রাক্তন নেতা এবং কর্মকর্তাও ছিলেন। আবার আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক ও জনসঙ্ঘের কর্মকর্তারাও ছিলেন। সমাজবাদীরাও ছিলেন, কমিউনিস্টরাও ছিলেন। জেএনইউ-র সঙ্গে যুক্ত কত মানুষ তখন একসঙ্গে এসে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। এই ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে কাউকে নিজের মতাদর্শ ত্যাগ করতে হয়নি, কাউকে মাথা নোয়াতে হয়নি। শুধু একটাই উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রহিত। আর সেই উদ্দেশ্যই ছিল সব থেকে বড়। সেজন্য বন্ধুগণ, যখন রাষ্ট্রের একতা, অখণ্ডতা ও রাষ্ট্রহিতের প্রশ্ন আছে তখন নিজস্ব মতাদর্শের বোঝায় চাপা পড়ে সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। তাহলে দেশের লোকসান হবে।

 

হ্যাঁ আমি স্বীকার করি, নিজস্ব স্বার্থে যাঁরা সুযোগ সন্ধানী তাঁদের সঙ্গে নিজের মতাদর্শ ছেড়ে সমঝোতা করা ততটাই ভুল কাজ। আজকের তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই ধরনের সুযোগ সন্ধানীরা বেশিদিন সফল হয় না। আমরা এটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের সুযোগ সন্ধানীদের থেকে দূরে থেকে একটি সুস্থ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আপনাদের ক্যাম্পাসে আপনাদের ছাত্রাবাসগুলির নামকরণ হয়েছে 'গঙ্গা', ‘সবরমতী', ‘গোদাবরী', ‘তাপ্তী', 'কাবেরি', ‘নর্মদা’, ‘ঝিলম', ‘সতলুজ' – এরকম বড় বড় নদীগুলির নামে। এই নদীগুলির মতোই আপনারা সবাই দেশের ভিন্ন ভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন, ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ নিয়ে এসেছেন, এখানে একসঙ্গে পড়াশোনা করছেন। নিজস্ব মত, ভাবনা-চিন্তা পরস্পরের সঙ্গে বিনিময়, নতুন নতুন ভাবধারার এই প্রবাহকে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কখনও শুকিয়ে যেতে দেওয়া চলবে না। আমাদের দেশ সেই মহান ভূমি যেখানে ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাভাবনা ও মতাদর্শের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে, বিকশিত হয়েছে এবং প্রস্ফুটিতও হয়েছে। এই পরম্পরাকে শক্তিশালী করে তোলার দায়িত্ব আপনাদের মতো নবীন প্রজন্মকেই নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। এই পরম্পরার ফলেই ভারত বিশ্বের সব থেকে স্পন্দিত গণতন্ত্রের দেশ হয়ে উঠেছে।

 

আমি চাই, আমাদের দেশের নবীন প্রজন্ম যেন কখনও কোনও মতাদর্শকে ভাবনা-চিন্তা না করে গ্রহণ না করে। কেউ একজন বলে দিল আর আপনি মেনে নিলেন - এমনটা যেন না হয়! আপনারা তর্ক করুন, তর্ক-বিতর্ক হোক, সুস্থ আলাপ-আলোচনা হোক, মনন-মন্থন হোক, বার্তালাপ হোক, তারপরই আপনি কোনও একটা পরিণামে পৌঁছবেন।

 

স্বামী বিবেকানন্দজি কখনও কোনও চাপানো মতাদর্শকে স্বীকার করেননি। আর হ্যাঁ, একটি কথা আমি বিশেষ করে আপনাদের বলতে চাই, তা হল হাস্যরস। নিজেদের মধ্যে হাসি-মজা। এটা অনেক বড় 'লুব্রিকেটিং ফোর্স'। আপনাদের মধ্যে হাস্যরস, ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপ – এ সমস্ত কিছুই অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখবেন। কখনও কখনও তো আমি অনেক নবীন বন্ধুদের দেখি যাঁরা এত বেশি মতাদর্শের চাপে পৃষ্ট, যেন সারা পৃথিবীর সমস্ত বোঝা তাঁদের মাথায় রয়েছে। অনেকবার আমরা নিজেদের ক্যাম্পাস জীবনে, পড়াশোনার সময়, ক্যাম্পাস রাজনীতির সময় এই হাস্যরস, এই হাসি-মজাকে ভুলে যাই। সেজন্য আমাদের এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। প্রত্যেকের মধ্যে যে মজা করার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেটাকে হারিয়ে যেতে দিলে চলবে না।

 

আমার নবীন বন্ধুগণ, ছাত্র জীবন নিজেকে চেনার জন্য একটি অনেক বড় পরিসর। আমাদের জীবনে নিজেকে চেনার অত্যন্ত প্রয়োজন রয়েছে। আমি চাই, আপনারা প্রত্যেকে নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন। জেএনইউ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত স্বামীজির মূর্তি আমাদের প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র নির্মাণ, রাষ্ট্রপ্রেম এবং রাষ্ট্র জাগরণের প্রতি প্রেরণা জোগাবে। আমাদের নবীন প্রজন্মের প্রতিটি মানুষ এর দ্বারা প্রেরিত হবেন - এই কামনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

 

আপনারা সবাই জীবনে সফল হোন, সুস্থ থাকুন। আগামী উৎসবের দিনগুলি মহাসমারোহে পালন করুন। নিজের আত্মীয়-পরিজনের মধ্যে থাকুন। এই দীপাবলির আবহে প্রিয়জনদেরও আনন্দে রাখার চেষ্টা করুন। এই আশা নিয়ে আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ। 

***

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1672814) Visitor Counter : 342