প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মধ্যপ্রদেশের রেওয়ায় ৭৫০ মেগাওয়াট সৌর প্রকল্প জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 10 JUL 2020 12:22PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ জুলাই, ২০২০

 

 

 

মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল শ্রীমতী আনন্দীবেন প্যাটেল,

মধ্যপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং,

আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী আর কে সিং,

শ্রী থাওয়ার চাঁদ গেহলট, শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, শ্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, শ্রী প্রহ্লাদ সিং প্যাটেল, মধ্যপ্রদেশ রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, উপস্থিত সাংসদ ও বিধায়কগণ,

রেওয়া সহ গোটা মধ্যপ্রদেশের আমার ভাই ও বোনেরা।

আজ রেওয়ায় সত্যিকারের ইতিহাস রচিত হচ্ছে। এতদিন রেওয়ার পরিচয় মা নর্মদা এবং সাদা বাঘের নামে জানা যেত। এবার সেগুলির সঙ্গে এশিয়ার বৃহত্তম সৌরশক্তি প্রকল্পের নামও যুক্ত হল। রেওয়ার আকাশ থেকে নেওয়া ভিডিও আপনারা দেখেছেন। হাজার হাজার সোলার প্যানেলকে দেখে মনে হচ্ছে যেন খেতের মধ্যে ফসলের ঢেউ। আবার কখনও এমন মনে হচ্ছে, কোন গভীর সমুদ্রের মধ্য দিয়ে উড়ে যাচ্ছি, নিচে নীল জল। এজন্য রেওয়ার জনগণ, মধ্যপ্রদেশের জনগণকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমার শুভকামনা জানাই।

 

রেওয়ার এই সৌর প্রকল্প গোটা এলাকাকে এই দশকে শক্তির বড় কেন্দ্র হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই সৌর প্রকল্প মধ্যপ্রদেশের জনগণকে, এখানকার শিল্পকে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করবে। তাছাড়া এখান থেকে দিল্লির মেট্রো রেলও লাভবান হবে। এছাড়াও রেওয়ার মতো সাজাপুর, নিমচ এবং ছতরপুরেও বড় সৌরশক্তি প্রকল্প গড়ে তোলার কাজ চলছে। ওঙ্কারেশ্বর বাঁধে জলের ওপর ভাসমান আরেকটি সৌর প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সমস্ত প্রকল্প যখন গড়ে উঠবে, তখন মধ্যপ্রদেশ নিশ্চিতভাবেই শস্তা এবং পরিচ্ছন্ন বিদ্যুতের হাব হয়ে উঠবে। এর দ্বারা সবচাইতে বেশি লাভবান হবেন মধ্যপ্রদেশের গরিব, মধ্যবিত্ত পরিবার, কৃষক ও আদিবাসীরা।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের পরম্পরায়, আমাদের সংস্কৃতিতে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সূর্যপূজার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে :

পুনাতু মাঁ তৎস বিতুর বরেণ্যম

অর্থাৎ, সূর্যদেব, যিনি উপাসনার যোগ্য, তিনি আমাদের পবিত্র করুন। পবিত্রতার এই অনুভূতি আজ এই রেওয়া তথা চারপাশের এলাকার মানুষের মনে অনুভূত হচ্ছে। সূর্যদেবের এই শক্তিকে আজ গোটা দেশ অনুভব করছে। এটা তাঁরই আশীর্বাদ যে আমরা সৌরশক্তি ক্ষেত্রে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি দেশের তালিকায় পৌঁছে গেছি।

 

বন্ধুগণ,

 

সৌরশক্তি শুধু আজকের নয়, একবিংশ শতাব্দীর শক্তির প্রয়োজন মেটাতে একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠবে। কারণ, সৌরশক্তি হল ‘সিওর, পিওর ও সিকিওর’। ‘সিওর’ এজন্য, শক্তি এবং বিদ্যুতের অন্যান্য উৎস ফুরিয়ে যেতে পারে কিন্তু সূর্য সদাসর্বদা গোটা বিশ্বে তাঁর আলো দিয়ে যেতে থাকবে। ‘পিওর’ এজন্য, এই শক্তির উৎপাদন পরিবেশকে দূষিত না করে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করে। ‘সিকিওর’ এজন্য, সৌরশক্তি আত্মনির্ভরতার একটি অনেক বড় প্রতীক, অনেক বড় প্রেরণা। এটি আমাদের শক্তির প্রয়োজনকেও নিরাপদ করে তোলে। যেভাবে ভারত উন্নয়নের নতুন উচ্চতার দিকে এগিয়ে চলেছে, আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনই আমাদের শক্তি এবং বিদ্যুতের প্রয়োজনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারতের জন্য বিদ্যুতের আত্মনির্ভরতাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর এই প্রয়োজন মেটাতে সৌরশক্তি একটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে। আমাদের প্রয়াস থাকবে ভারতের এই শক্তিকে যথাসম্ভব বাড়িয়ে তোলা।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা যখন আত্মনির্ভরতার কথা বলি, প্রগতির কথা বলি, তখন তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনীতি। গোটা বিশ্বের নীতি নির্ধারণকারীরা বছরের পর বছর ধরে দ্বিধায় রয়েছেন যে অর্থনীতির কথা ভাববেন না কি পরিবেশের কথা। এই কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার ফলে সিদ্ধান্ত কখনও এক পক্ষে যায়, কখনও অন্য পক্ষেও। কিন্তু ভারত এটা করে দেখিয়েছে যে এই অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষা পরস্পর বিরোধী নয়। তারা পরস্পরের সহযোগী। স্বচ্ছ ভারত অভিযান থেকে শুরু করে প্রত্যেক পরিবারকে এলপিজি রান্নার গ্যাস এবং পিএনজি-র পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানির সঙ্গে যুক্ত করার অভিযান, গোটা দেশে সিএনজি-ভিত্তিক পরিবহণ ব্যবস্থার বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, দেশে বিদ্যুৎচালিত পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি - এরকম অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনকেও উন্নত এবং পরিবেশ-বান্ধব করার চেষ্টা চলছে। ভারতের জন্য অর্থনীতি এবং পরিবেশ পরস্পরের প্রতিকূল নয়। তারা একে অপরের পরিপূরক।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, সরকারের যত কর্মসূচি রয়েছে সেগুলিতে পরিবেশ সুরক্ষা এবং ‘ইজ অফ লিভিং’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জন্য পরিবেশের নিরাপত্তা শুধু কিছু প্রকল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের জীবনশৈলীর অন্তর্গত। যখন আমরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়েছি, বিভিন্ন প্রকল্প চালু করছি, তখন আমরা এটাও সুনিশ্চিত করছি যে আমাদের এই পরিচ্ছন্ন জ্বালানির সঙ্কল্প জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে দেখা যায়। আমরা চেষ্টা করছি দেশের প্রত্যেক প্রান্তের সমাজের প্রতিটি বর্গের প্রত্যেক নাগরিক উপকৃত হন। আমি আপনাদেরকে উদাহরণ দিতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত ছ’বছরে সারা দেশে প্রায় ৩৬ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করা হয়েছে। সারা দেশের রাজপথে বাতিস্তম্ভগুলিতে ১ কোটিরও বেশি এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছে। শুনতে এটাকে স্বাভাবিক মনে হয় কারণ না চাইতেই যখন আমরা কোন সুবিধা পেয়ে যাই, তখন এর প্রভাব নিয়ে খুব একটা আলোচনা আমরা করি না। তখনই আলোচনা হয় যখন কোন কিছু আমাদের কাছে থাকে না।

 

বন্ধুগণ,

 

এই ছোট দুধ-রঙা এলইডি বাল্ব যখন ছিল না, তখন এর প্রয়োজন অনুভূত হত। কিন্তু এর দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সেরকম বিক্রি হত না বলে নির্মাতারা তা বানাতেন না। কিন্তু বিগত ছ’বছরে কত পরিবর্তন এসেছে। এলইডি বাল্বের দাম প্রায় দশগুণ কমে গেছে। অনেক কোম্পানি এই বাল্ব বাজারে এনেছে। আগে ১০০ থেকে ২০০ ওয়াটের বাল্ব যতটা আলো দিত, এলইডি ৯-১০ ওয়াটের বাল্ব ততটাই আলো দিচ্ছে। বাড়িতে বাড়িতে এবং অলি-গলিতে এলইডি বাল্ব লাগানোর ফলে প্রতি বছর প্রায় ৬ হাজার কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। আর জনগণ ভালো আলোও পাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর তাঁদের প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা কম বিল দিতে হচ্ছে। আপনারা সবাই নিশ্চয় অনুভব করছেন যে এলইডি বাল্ব লাগানোতে আপনাদের বিদ্যুতের বিল কমেছে। এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। দেশে এলইডি বাল্ব লাগানোর ফলে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কম হয়েছে। অর্থাৎ, পরিবেশ দূষণ অনেকটাই কমেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

বিদ্যুৎ সবার কাছে পৌঁছক, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পৌঁছক। আমাদের পরিবেশ আমাদের আকাশ, বাতাস, আমাদের জল বিশুদ্ধ থাকুক। এই ভাবনা নিয়েই আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি। এই ভাবনাই আমাদের সৌরশক্তি উৎপাদন নীতি এবং আমাদের রণনীতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান। আপনারা ভাবুন, ২০১৪ সালে সৌরশক্তির দাম যেখানে ইউনিট প্রতি ৭-৮ টাকা ছিল সেখানে আজ তার দাম ২-২.৫০ টাকায় পৌঁছে গেছে। এর দ্বারা অনেক শিল্প সংস্থা উপকৃত হচ্ছে, অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে, দেশবাসী লাভবান হচ্ছেন। শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বে আমাদের এই সাফল্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে যে ভারতে এত সস্তায় সৌরশক্তি কিভাবে দেওয়া হচ্ছে। যেভাবে ভারতে সৌরশক্তি নিয়ে কাজ হচ্ছে, এই আলোচনা আরও বাড়বে। এমনই সব বড় বড় পদক্ষেপের ফলেই ভারতকে পরিচ্ছন্ন শক্তির সব থেকে বড় আকর্ষণীয় বাজার বলে স্বীকার করা হয়েছে। আজ যখন বিশ্বে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে রূপান্তরণ নিয়ে আলোচনা হয়, তখন ভারতকে মডেল হিসেবে সামনে রাখা হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

বিশ্ববাসীর ভারতের কাছ থেকে এই আশা ও প্রত্যাশাকে দেখে আমরা এই অভিযানের সঙ্গে গোটা বিশ্বকে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। এই ভাবনা থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘আইসা’ বা ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স। এক বিশ্ব, এক সূর্য, এক গ্রিড – এর পেছনেও এই ভাবনাই রয়েছে। এই সৌরশক্তির উন্নত উৎপাদন এবং ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে আমরা গোটা বিশ্বকে একত্রিত করার চেষ্টা করছি যাতে আমাদের পৃথিবীর সামনে পরিবেশ দূষণের বড় সঙ্কটকে হ্রাস করা যায়। আজ ছোট ছোট দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর দেশগুলিরও বিদ্যুতের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয়।

 

বন্ধুগণ,

 

একদিক দিয়ে সৌরশক্তি সাধারণ ভোক্তাদেরকে উৎপাদকে পরিণত করেছে, তাঁদের হাতেই বিদ্যুৎ বন্টনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যান্য মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব এক রকম নেই বললেই চলে। কিন্তু সৌরশক্তির ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের বাড়ির ছাদ, দপ্তর ও কারখানার ছাদ, আর যে যেখানে একটু জায়গা পায় সেখানেই প্রয়োজন অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সেজন্য সরকার ব্যাপক উৎসাহ দিচ্ছে, সাহায্যও করছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভরতার এই অভিযানে এখন আমাদের অন্নদাতারাও যুক্ত হচ্ছেন।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের কৃষক আজ এতটাই সক্ষম, এতটাই সম্পদসম্পন্ন যে আজ তাঁরা একটি নয়, দু’ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে দেশকে সাহায্য করছেন। একটি প্রকল্প হল তাঁদের পারম্পরিক চাষবাস; যার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের সবাইকে অন্ন দেন, খাবার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এখন কৃষকরা দ্বিতীয় প্রকল্প চালু করেছেন যা বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে। তাঁদের প্রথম প্রকল্পে চাষবাসের মাধ্যমে কৃষক এমন জমি ব্যবহার করেন - যা অত্যন্ত উর্বর। কিন্তু তাঁর যে জমি তেমন উর্বর নয়, যেখানে ভালো ফসল ফলে না, সেই জমিতে এখন তাঁরা সৌরশক্তির প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। অর্থাৎ, এখন কৃষক অনুর্বর জমি থেকেও রোজগার করতে পারবেন।

 

‘কুসুম’ যোজনার মাধ্যমে আজ কৃষকের অতিরিক্ত জমিতে এ ধরনের সৌর প্রকল্প স্থাপন করতে সাহায্য করা হচ্ছে। ফসলের খেত থেকে যে সৌর বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা আমাদের কৃষকদের নিজস্ব প্রয়োজন তো মেটাবেই, তাঁরা অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে মধ্যপ্রদেশের কৃষক বন্ধুরাও এই অতিরিক্ত আয়ের ব্যবস্থাকে আপন করে নেবেন এবং ভারতকে শক্তি রপ্তানিকারক হিসেবে গড়ে তোলার এই ব্যাপক অভিযানকে সফল করে তুলবেন। আমার এই বিশ্বাস এজন্যই দৃঢ়, কারণ মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা তাঁদের সঙ্কল্প সিদ্ধ করে দেখিয়েছেন। আপনারা যে কাজ করেছেন, তা নিয়ে সারা দেশে আলোচনা হয়। আপনারা যেভাবে গম উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন, অন্যদের পেছনে ফেলে দিয়েছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। করোনার এই কঠিন সময়ে কৃষকরা যে রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন করেছেন, মধ্যপ্রদেশ সরকার যে রেকর্ড পরিমাণ ক্রয় করেছে, সেজন্য আপনারা প্রশংসার পাত্র। একই কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও মধ্যপ্রদেশের সামর্থ্য নিয়ে আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আশা করি একদিন এটাও সংবাদ শিরোনামে আসবে যে মধ্যপ্রদেশের কৃষকরা ‘কুসুম’ যোজনার মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

সৌরশক্তির ক্ষমতাকে আমরা ততদিন সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করতে পারব না যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে উন্নত সোলার প্যানেল, উন্নত ব্যাটারি, উন্নতমানের সংরক্ষণের সুবিধা না থাকবে। এখন এই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে’র মাধ্যমে এখন দেশের লক্ষ্য হল সোলার প্যানেল সহ যাবতীয় সরঞ্জামের জন্য আমাদের আমদানি নির্ভরতা সমাপ্ত করা, আর দেশের মধ্যেই সোলার পিবি মডিউল উৎপাদন ক্ষমতাকে দ্রুতগতিতে বাড়ানো। এই দেশি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা অনেক জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেমন ‘কুসুম’ যোজনার মাধ্যমে যে পাম্পগুলি লাগানো হচ্ছে, বাড়িতে বাড়িতে ছাদে প্যানেল লাগানোর জন্য ভারতে তৈরি সোলার ফোটোভোল্টেইক সেল এবং মডিউল নির্ধারিত করা হয়েছে। তাছাড়া, সরকারি বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা যে সোলার সেল মডিউল কিনবে তা যেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ হয় - এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, সৌরশক্তি প্রকল্প স্থাপনকারী কোম্পানিগুলি যাতে সোলার পিভি নিজেরা উৎপাদন করে, সেজন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আমি আজ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোগীদের, নবীন বন্ধুদের স্টার্ট-আপগুলিকে, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানাই।

 

ভাই ও বোনেরা,

 

আত্মনির্ভরতা সঠিক অর্থে তখনই সম্ভব যখন আমাদের মনে আত্মবিশ্বাস থাকবে। আত্মবিশ্বাস তখনই গড়ে ওঠে যখন গোটা দেশ, গোটা ব্যবস্থা, প্রত্যেক দেশবাসী কারোর সঙ্গে থাকে। করোনা সঙ্কট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত এই কাজটাই করছে। সরকার এই আত্মবিশ্বাস জাগানোর কাজেই লেগে পড়েছে। সমাজের যে অংশের কাছে সাধারণতঃ সরকারের কোনও সাহায্য পৌঁছত না, আজ তাঁদের কাছে সরকার সম্পদ এবং সংবেদনশীলতা - দুটোই পৌঁছে দিচ্ছে। যেমন, ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা’র কথাই ধরুন না কেন। লকডাউনের অব্যবহিত পরেই প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে দেশের ৮০ কোটিরও বেশি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁদের পকেটে যেন সামান্য টাকা থাকে সে ব্যবস্থা করা। লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার পর সরকারের মনে হয়েছে যে,- সামনেই বর্ষা ঋতু, আর তারপর থেকে শুরু হবে একের পর এক উৎসবের শৃঙ্খল। এক্ষেত্রে গরিবদের এই সাহায্য অব্যাহত থাকা উচিৎ - একথা ভেবে এই প্রকল্পকে চালু রাখা হয়েছে। এখন গরিব পরিবারগুলি নভেম্বরের শেষ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন পাবে। শুধু তাই নয়, বেসরকারি ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কর্মচারীদের ইপিএফ-এর ক্ষেত্রে, তাঁদের পক্ষ থেকে দেয় অর্থ সরকার দিচ্ছে। এভাবে ‘পিএম স্ব-নিধি যোজনা’র মাধ্যমে সেই বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে, যাঁদের কাছে সরকারি সুযোগ-সুবিধা সব থেকে কম পৌঁছয়। আজ এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঠেলাওয়ালা, মুদি দোকানদারদের মতো ছোট ছোট লক্ষ লক্ষ বন্ধুদের ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জন্য সবচাইতে উপযোগী এই ছোট ছোট ব্যবসাগুলিকে বাঁচানোর জন্য, ব্যবসায়ী বন্ধুদের পরিবার স্বচ্ছল রাখার জন্য, এরকম পদক্ষেপের কথা কি আগে কখনও শুনেছেন? অর্থাৎ, একদিকে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র হস্তশিল্প এবং বড় শিল্পোদ্যোগগুলি সম্পর্কেও ভাবা হয়েছে। অন্যদিকে, এই ক্ষুদ্র কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার কথাও ভাবা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

সরকার হোক কিংবা সমাজ, সংবেদনশীলতা এবং সতর্কতা আজকের এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের সবচাইতে বড় প্রেরণার উৎস। আজ যখন আপনারা মধ্যপ্রদেশকে, গোটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তখন আপনাদের একটি দায়িত্বও সর্বদা মনে রাখবেন। সেটি হল দু’গজ দূরত্ব, মুখ ঢাকা মাস্ক, আর ঘন ঘন ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। এই নিয়মগুলি আমাদের সর্বদা পালন করতে হবে। আরেকবার আপনাদের মধ্যপ্রদেশের এই সৌরশক্তি প্রকল্পের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আপনারা সতর্ক থাকবেন। নিরাপদ থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

 

 

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1637787) Visitor Counter : 620