প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আইসিসি-র ৯৫তম বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 11 JUN 2020 12:54PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ জুন, ২০২০

 

 


নমস্কার!!! আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন!!! ৯৫ বছর ধরে নিরন্তর দেশের সেবা করা কম কথা নয়, যে কোন সংস্থা কিংবা সংগঠনের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।


ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্স (আইসিসি) পূর্ব ভারত ও উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে যে অবদান রেখেছে, বিশেষ করে এখানকার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলিতে সেটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আইসিসি-র হয়ে এই অবদান যাঁরা রেখেছেন তাঁদের সকলকে, প্রত্যেক মহান ব্যক্তিকে আমি অভিনন্দন জানাই।


বন্ধুগণ, আইসিসি ১৯২৫ সালে স্থাপিত হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখেছে, আকাল ও পণ্য সঙ্কট দেখেছে এবং ভারতের উন্নয়নের গতিপথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।


এবারের বার্ষিক সভা এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন আমাদের দেশ বিবিধ সঙ্কটের মোকাবিলা করছে।


করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব লড়াই করছে। ভারতও লড়ছে, কিন্তু অন্যান্য সঙ্কটও নিরন্তর আমাদের পথের কাঁটা হয়ে উঠছে।


কোথাও বন্যা, কোথাও পঙ্গপালের আক্রমণ, কোথাও শিলাবৃষ্টি, কোথাও তৈলক্ষেত্রে অগ্নি সংযোগ, কোথাও ছোট ছোট ভূমিকম্প। তাছাড়া পূর্ব এবং পশ্চিম ভারতে একের পর এক তৈরি বড় ঘূর্ণিঝড় আমাদের সামনে সঙ্কট তৈরি করেছে।


এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা সকলে একসঙ্গে মিলে লড়াই করছি। কখনও কখনও সময় আমাদের পরীক্ষা করে, আমাদের পরীক্ষা দেয়ও। কখনও অনেক সমস্যা অন্যান্য অনেক সঙ্কট সঙ্গে নিয়ে আসে। কিন্তু আমরা এটা অনুভব করেছি, এ ধরনের সঙ্কটে আমাদের কৃতিত্ব, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তাও তৈরি করে দেয়। কিভাবে আমরা সঙ্কটের মোকাবিলা করব, সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করব, কতটা শক্তি নিয়ে লড়াই করব তা ভবিষ্যতের অনেক সুযোগের পথ প্রশস্ত করে দেয়।


আমাদের দেশে বলা হয়, “মন থেকে হারলে হেরে যাওয়া, মন থেকে জিতলে জয়!” অর্থাৎ, আমাদের সঙ্কল্প শক্তি, আমাদের ইচ্ছাশক্তিই আমাদের ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে দেয়। যাঁরা শুরুতে পরাজয় স্বীকার করে নেন, তাঁদের সামনে নতুন সুযোগ কম আসে। কিন্তু যাঁরা জয়ের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান, পরস্পরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যান, তাঁদের সামনে নতুন নতুন সুযোগ তত বেশি আসে।


বন্ধুগণ, আমাদের এই ঐক্যবদ্ধতা, এই মিলেমিশে বড় বড় বিপর্যয়ের মোকাবিলা করা, এটাই আমাদের সঙ্কল্প শক্তি, এটাই আমাদের ইচ্ছাশক্তি। আমাদের অনেক বড় সামর্থ্য, একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের অনেক বড় ক্ষমতা।


সঙ্কটের ওষুধ হল শক্তভাবে প্রতিরোধ। কঠিন সময়ই প্রত্যেকবার ভারতের প্রত্যয়কে শক্তিশালী করেছে, এক জাতি হিসেবে দেশবাসীকে সঙ্কল্প গ্রহণের প্রাণশক্তি দিয়েছে, সঙ্কল্পকে শক্তি যুগিয়েছে। এই ভাবনাগুলি আজ আপনাদের চেহারায় দেখতে পাচ্ছি। কোটি কোটি ভারতবাসীর প্রচেষ্টার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। করোনা সঙ্কট গোটা বিশ্বকে পর্যুদস্তু করে দিয়েছে। গোটা দুনিয়া এর সঙ্গে লড়ছে। আমাদের দেশও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।


কিন্তু এসবের মাঝে প্রত্যেক দেশবাসী আজ এই সঙ্কল্পে অটল যে বিপর্যয়কে সুযোগে রূপান্তরিত করতে হবে, একে আমাদের দেশের উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য মোড় করে তুলতে হবে।


এই উল্লেখযোগ্য মোড়টি কী? আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভরতার এই মনোভাব বছরের পর বছর ধরে প্রত্যেক ভারতীয় একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা রূপে ধারণ করে এসেছে।


কিন্তু তারপরও একটি বড় ‘যদি’ প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে, প্রত্যেক ভারতবাসীর মস্তিষ্কে বারবার প্রবল হয়ে উঠেছে। এই ‘যদি’টি হল যদি আমরা চিকিৎসা সরঞ্জামের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতাম, যদি আমরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতাম, যদি আমরা কয়লা ও খনিজ পদার্থের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতাম! যদি আমরা ভোজ্য তেল, সার উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতাম! যদি আমরা বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম উৎপাদনে আত্মনির্ভর হতাম! যদি আমরা সৌর প্যানেল, ব্যাটারি এবং চিপ ম্যানুফ্যাকচারিং-এ আত্মনির্ভর হতাম, যদি আমরা বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হতাম – এরকম না জানি কত যদি, অসংখ্য যদি, সর্বদাই প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে উথাল-পাতাল করে তুলেছে।


বন্ধুগণ, এটি একটি বড় কারণ যে জন্য বিগত ৫-৬ বছরে আমাদের সরকারের নীতি এবং রীতিতে ভারতের আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যকে সবার ওপরে রাখা হয়েছে। এখন করোনা সঙ্কট আমাদের এই গতি আরও তীব্র করার শিক্ষা দিয়েছে। এই শিক্ষা থেকেই উদ্ভূত হয়েছে - আত্মনির্ভর ভারত অভিযান।


বন্ধুগণ, আমরা দেখেছি কোন পরিবারে সন্তান, সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, তার বয়স ১৮-২০ বছর হলে আমরা বলে থাকি যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শেখো। এভাবে পরিবার থেকেই এক প্রকার আত্মনির্ভর ভারতের প্রথম পাঠ শুরু হয়ে যায়। ভারতকেও এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।


বন্ধুগণ, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সরাসরি মানে হল ভারত অন্যান্য দেশের ওপর নির্ভরতা কমাবে। প্রতিটি জিনিস যা ভারতকে বিদেশ থেকে বাধ্য হয়ে আমদানি করতে হয়, সেগুলি ভারতে কিভাবে তৈরি করা যায় আর ভবিষ্যতে সেই জিনিসগুলিই কিভাবে বিদেশে রপ্তানি করা যায় সেই লক্ষ্যে আমাদের আরও দ্রুতগতিতে কাজ করতে হবে।


তাছাড়া, আমাদের ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগগুলি এবং হস্তশিল্পীরা যে সমস্ত জিনিস উৎপাদন করেন, আমাদের স্বসহায়ক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি গরিব মানুষেরা যা তৈরি করেন, দশকের পর দশক ধরে যা আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়, পাড়ায় পাড়ায়, গলিতে গলিতে বিক্রি হয়, সেগুলিকে ছেড়ে একই জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রবৃত্তি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


আমাদের এই ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আপনারা জিনিস কিনলে তাঁদেরকে শুধু পয়সাই দেওয়া হবে না, তাঁদের পরিশ্রমকে পুরস্কৃত করা হবে। তাঁদের মান-সম্মান বাড়বে। আমরা কল্পনাও করতে পারব না, এতে কতটা পার্থক্য আসে। এতে তাঁরা কতটা গর্ব অনুভব করেন। সেজন্য এখন আমাদের স্থানীয় পণ্যের জন্য সরব হতে হবে। প্রত্যেক গ্রাম, প্রতিটি জনপদ, প্রত্যেক জেলা, প্রত্যেক রাজ্য তথা দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার সময় এসেছে।


বন্ধুগণ, স্বামী বিবেকানন্দ একবার একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “আজ ভারতবাসীর গৌরব বৃদ্ধির সহজতম উপায় হল তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিজের দেশে জনপ্রিয় করা এবং বিদেশে রপ্তানি করা।” স্বামী বিবেকানন্দের প্রদর্শিত এই পথ কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে ভারতের প্রেরণা। এখন দেশ পণ করেছে, আর দেশবাসী যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।


আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে যে বড় সংস্কার ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলিকে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির পরিধি বৃদ্ধি কিংবা অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে সমর্থনের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা এসব কিছু আজকে সত্য হয়ে উঠছে। আইবিসি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, ছোট ছোট ভুলগুলিকে অপরাধের সংজ্ঞামুক্ত করার সিদ্ধান্ত, বিনিয়োগ দ্রুত সম্পাদনের জন্য প্রকল্প উন্নয়ন সেল গঠন করা - এরকম অনেক কাজ আমরা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি।


এখন সমস্ত ক্ষেত্র বিশেষ করে, কয়লা এবং খনি উত্তোলন ক্ষেত্রকে অধিক প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য যে সংস্কারগুলি ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলি থেকে সম্পূর্ণ লাভবান হতেই শিল্প জগৎ এগিয়ে আসুক, নবীন প্রজন্মের বন্ধুরা এগিয়ে আসুন।


বন্ধুগণ, কৃষক সমাজ এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি যে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেই সিদ্ধান্তগুলি আমাদের কৃষি-অর্থনীতিকে যুগ যুগ ধরে চলা আসা দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছে। এখন ভারতের কৃষকদের নিজেদের উৎপাদিত পণ্য দেশের যে কোন জায়গায় বিক্রি করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এপিএমসি আইন এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে শিল্প জগতের মধ্যে অংশীদারিত্বের পথ খোলা হয়েছে। এর ফলে, কৃষক এবং গ্রামীণ অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন অসম্ভাবী। এসব সিদ্ধান্ত কৃষকদের এক একজন উৎপাদক রূপে এবং তাঁদের উৎপাদিত ফসলকে একটি পণ্য রূপে পরিচয় দিয়েছে।


বন্ধুগণ, কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো থেকে শুরু করে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত, তাঁদের জন্য পেনশন প্রকল্প - আমাদের এই প্রচেষ্টাগুলি কৃষকদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ মজবুত করেছে। এখন কৃষকদের একটি বড় বাজার শক্তি হিসেবে বিকশিত করার প্রচেষ্টা চলছে।


বন্ধুগণ, ভারতে এখন স্থানীয় পণ্য উৎপাদনের জন্য ক্লাস্টার-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে। এর ফলে, সকলের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যে পণ্য যে জেলা ও ব্লকে বেশি উৎপন্ন হয়, তার আশপাশে সেই পণ্য সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার উন্নয়ন করা হচ্ছে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গে যে জেলাগুলিতে বেশি পাট উৎপন্ন হয়, সেই এলাকাগুলিতে পাট-ভিত্তিক শিল্পকে শক্তিশালী করে তোলা হবে।


অরণ্য সম্পদ – আমাদের আদিবাসী বন্ধুরা যে অফুরন্ত অরণ্য সম্পদ আহরণ করেন, সেগুলির আধুনিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি, বাঁশ এবং জৈব পণ্য উৎপাদনের জন্যও স্বতন্ত্র ক্লাস্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। সিকিমের মতো গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত এখন জৈব চাষের ক্ষেত্রে অনেক বড় হাব হয়ে উঠতে পারে। আইসিসি-র সঙ্গে যুক্ত আপনাদের মতো সমস্ত ব্যবসায়ীরা সঙ্কল্প গ্রহণ করুন যে উত্তর-পূর্ব ভারতে জৈব চাষের বড় আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপনারা প্রেরণা যোগাবেন যাতে আপনারা এই উৎপাদিত জৈব সম্পদের আন্তর্জাতিক পরিচয় গড়ে তুলতে পারেন, বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে দিতে পারেন।


বন্ধুগণ, আপনারা সবাই দশকের পর দশক ধরে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে কাজ করছেন। সম্প্রতি সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছে এর দ্বারা পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষরাই সবচাইতে বেশি লাভবান হবেন।


আমি মনে করি, কলকাতা আবার একটি বড় নেতৃত্ব প্রদানের জায়গায় পৌঁছতে পারে। নিজেদের পুরনো গৌরব থেকে প্রেরণা গ্রহণ করে, ভবিষ্যতে কলকাতা সমগ্র অঞ্চলের উন্নয়নের নেতৃত্ব দিতে পারে। আপনাদের থেকে ভালো কে জানে যে যখন পূর্ব ভারতের শ্রমিকরা, পূর্ব ভারতের সম্পত্তি, পূর্ব ভারতের সম্পদের ওপর নির্ভর করে এই অঞ্চলে কাজ করবেন, এই অঞ্চলের উন্নয়নকে কত দ্রুত গতি দিতে পারে।


বন্ধুগণ, পাঁচ বছর পর অর্থাৎ, ২০২৫ সালে আপনাদের সংস্থার শতবর্ষ পূর্তি হবে।


তেমনই ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি হবে। এটি আপনাদের সংস্থার জন্য, আপনাদের প্রত্যেক সদস্যের জন্য বড় সঙ্কল্প গ্রহণের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে সফল করে তুলতে আইসিসি কেন, নিজেদের মতো করে ৫০-১০০টি নতুন লক্ষ্য স্থির করে।


সেই লক্ষ্যগুলি আপনাদের সংস্থার জন্য যেমন, তেমনই এর সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি শিল্প এবং বাণিজ্য গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির লক্ষ্য হয়ে উঠবে। আপনারা যত নিজেদের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবেন, এই অভিযান ততটাই পূর্ব ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, উত্তর-পূর্ব ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।


বন্ধুগণ, নির্মাণ শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহাসিক শ্রেষ্ঠত্বকে আমাদের পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমরা সব সময় শুনে এসেছি যে বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত কাল ভাবে। আমাদের এই ধারণাকে সম্বল করে, এ থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।


এটাই উপযুক্ত সময় যখন ভারতীয় অর্থনীতিকে নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে স্বনিয়ন্ত্রিত হওয়ার দিকে নিয়ে যেতে হবে। এটাই সময় যখন রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি নয়, এগিয়ে এসে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সাহসী বিনিয়োগ করতে হবে। এটাই সময় যখন ভারতে একটি আন্তর্জাতিক, প্রতিযোগিতামূলক, অন্তর্দেশীয় সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলতে হবে।


এজন্য শিল্প জগতকে নিজেদের বর্তমান সরবরাহ শৃঙ্খলের সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সঙ্কটমুক্ত করতে হবে আর মূল্য সংযোজনের মাধ্যমেও তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।


বন্ধুগণ, আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে এগিয়ে যেতে যেতে, করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখে আজ আপনারা এই বার্ষিক সম্মেলনে যে জনগণ, পৃথিবী এবং লাভকে এক সারিতে রেখে কথা বলেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউ কেউ হয়তো ভাববেন এই তিনটি বিষয় তো পরস্পর বিরোধী। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। জনগণ, পৃথিবী এবং লাভ পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এই তিনটি একসঙ্গে উন্নয়ন সম্ভব। এই তিনটির সহ-অস্তিত্ব সম্ভব। আমি আপনাদের কিছু উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে পারি। যেমন এলইডি বাল্ব। ৫-৬ বছর আগে বাজারে একটি এলইডি বাল্বের দাম ছিল ৩৫০ টাকা থেকেও বেশি। এখন বাজারে সেই বাল্ব ৫০ টাকায় পাওয়া যায়। আপনারা ভাবুন, দাম কম হওয়ায় সারা দেশে কোটি কোটি মানুষের বাড়িতে এলইডি বাল্ব পৌঁছে গেছে, স্ট্রিট লাইট লাগানো হয়েছে। এর পরিমাণ এত বেশি যে এর উৎপাদনে বিনিয়োগ হ্রাস পেয়েছে এবং লাভ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে কারা লাভবান হয়েছেন?


জনগণ লাভবান হয়েছেন। সাধারণ দেশবাসীর বিদ্যুতের বিলে সাশ্রয় হয়েছে। এলইডি বাল্বের কারণে আজ প্রতি বছর দেশবাসীর প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতের বিলে সাশ্রয় হচ্ছে। এই সাশ্রয় দেশের গরিব ও মধ্যবিত্তদের লাভবান করেছে। এর দ্বারা পৃথিবীর বা প্রকৃতিরও লাভ হয়েছে। সরকারি সংস্থাগুলি যত স্বল্প মূল্যে এলইডি বাল্ব বিক্রি করেছে, এর ফলে প্রতি বছর ৪ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমন হ্রাস পেয়েছে।


অর্থাৎ, উভয় পক্ষেরই লাভ হয়েছে। উভয়ের জন্যই উইন উইন সিচ্যুয়েশন। আপনারা যদি সরকারের অন্যান্য প্রকল্প ও সিদ্ধান্তগুলির দিকে তাকান, গত ৫-৬ বছরে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ও যে প্রকল্পগুলি চালু করা হয়েছে তার প্রত্যেকটাই জনগণ, পৃথিবী এবং লাভ – এর সমাহার। এই দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী ফেলেছে।


সম্প্রতি আপনারাও দেখেছেন কিভাবে সরকার অন্তর্দেশীয় জলপথকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। হলদিয়া থেকে বেনারস পর্যন্ত জলপথ চালু হয়ে গেছে। এখন উত্তর-পূর্ব ভারতেও জলপথে পরিবহণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জলপথগুলির মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হচ্ছেন কারণ, জলপথে পণ্য পরিবহণের খরচ খুবই কম। এই জলপথগুলির মাধ্যমে পৃথিবীরও লাভ হচ্ছে কারণ এর ফলে কম জ্বালানি খরচ হচ্ছে, আর আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে পেট্রোল-ডিজেলের আমদানি যত কম করতে পারব, সড়ক পথে যানবাহনের ভিড় যত কমাতে পারব, ততই বাজারে জিনিসের দাম কমবে। সমস্ত পণ্য অনেক সংক্ষিপ্ত পথেই তাড়াতাড়ি পৌঁছবে। ফলে, ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হবে।


বন্ধুগণ, ভারতে আরেকটি অভিযান এখন চলছে। সেটি হল দেশকে সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক থেকে মুক্ত করার অভিযান। এর মাধ্যমেও জনগণ, পৃথিবী এবং লাভ – এই তিনটি বিষয়ই সংহতভাবে দেখা হচ্ছে।


বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য তো এই ব্যবস্থা অত্যন্ত লাভজনক। এর ফলে, আপনাদের এখানে পাটের ব্যবসা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়েছে। আপনারা কি এই সুযোগ নেবেন না? আপনারা কি পাটের প্যাকেজিং সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু করেছেন? তাহলে দেখবেন আপনাদের পাঁচ আঙুলই ঘিয়ে ডোবানো থাকবে।


আপনাদের এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা উচিৎ। এই সুযোগ যদি হাতছাড়া করেন, তাহলে কে আপনাদের সাহায্য করবে? ভাবুন, যখন পশ্চিমবঙ্গে তৈরি পাটের থলে দেশের প্রত্যেকের হাতে উঠবে তখন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কত উপকৃত হবেন।


বন্ধুগণ, জনগণ-কেন্দ্রিক, জনগণ-চালিত এবং পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি এখন দেশে প্রশাসনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। যা আমাদের প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণ তা জনগণ, পৃথিবী এবং লাভের ভাবনার অনুকূলে রয়েছে।


ইউপিআই-এর মাধ্যমে আমাদের ব্যাঙ্কিং পরিষেবা স্পর্শহীন, শারীরিক সম্পর্কহীন এবং নগদবিহীন যা ২৪X৭ ঘন্টা পরিষেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে। ভিম অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনের নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। রুপে কার্ড এখন গরিব কৃষক, মধ্যবিত্ত, দেশের প্রত্যেক মানুষের পছন্দের কার্ড হয়ে উঠছে।


যখন আমরা আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলি তখন গর্বের সঙ্গে রুপে কার্ড ব্যবহার করা উচিৎ।


বন্ধুগণ, এখন দেশে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার পরিধি সেই ব্যক্তিদের কাছেও পৌঁছচ্ছে যাঁদেরকে দীর্ঘকাল ধরে সর্বহারার শ্রেণীতে রাখা হয়েছে। ডিবিটি এবং জন ধন-আধার-মোবাইল (জ্যাম)-এর মাধ্যমে কোন দালালি ছাড়াই কোটি কোটি সুবিধাভোগীর কাছে প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এভাবে গর্ভনমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস বা জেম-এর মাধ্যমে জনগণকে সরকারের সঙ্গে যুক্ত করে লাভ অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আপনারা এটা জানেন যে জেম প্ল্যাটফর্মে ছোট ছোট স্বনির্ভর গোষ্ঠী, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারে এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করতে পারে। আগে বছরে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যবসা হয় এরকম শিল্পোদ্যোগীরা ভাবতেই পারতেন না যে তাঁরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বিক্রি করতে পারেন।


সেজন্যই ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনাদের সদস্যদের সঙ্গে যুক্ত যে ছোট ছোট শিল্পোদ্যোগীরা রয়েছেন, তাঁদেরকেও বেশি করে জেম-এর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য প্রেরণা যোগান। আপনাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পণ্য উৎপাদকরা যদি জেম-এর সঙ্গে যুক্ত হন তাহলে তাঁদের ব্যবসা যত ছোটই হোক না কেন, সরাসরি সরকারকে পণ্য বিক্রি করতে পারবে।


বন্ধুগণ, যখন আমরা পৃথিবীর কথা বলছি, প্রকৃতির কথা বলছি, তখন আমি আপনাদের আইফা-র কথা শোনাতে চাই, অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘ যেটি ইতিমধ্যেই একটি বড় আন্তর্জাতিক অভিযানে পরিণত হয়েছে। সৌরশক্তি ক্ষেত্রে ভারতের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এর দ্বারা ভারত যতটা লাভবান হবে তার দ্বারা গোটা বিশ্বকে উপকৃত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের সমস্ত সদস্যদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও সৌরশক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে দেশ যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে তাতে অবদান রাখার জন্য নিজেদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করুন।


দেশের মধ্যেই সোলার প্যানেলের উৎপাদন ও শক্তি সংরক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি উন্নত করার জন্য উন্নতমানের ব্যাটারি আবিষ্কার ও উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনে বিনিয়োগ করুন। যারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, এরকম সংস্থাগুলিকে, এরকম অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির পাশে দাঁড়ান। পরিবর্তিত বিশ্বে সোলার রিচার্জেবল ব্যাটারির বাজার অনেক বড় হতে চলেছে। ভারতের শিল্প জগৎ কি এই বাজার সম্প্রসারণে নেতৃত্ব দিতে পারে? এক্ষেত্রে ভারত একটি বড় হাব হয়ে উঠতে পারে। আইসিসি এবং এর সদস্যরা ২০২২ সালে যখন ভারত স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করবে এবং ২০২৫-এ যখন আপনাদের সংস্থার শতবর্ষ পূর্তি হবে, এই সময়ে সমস্ত সুযোগগুলিকে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে সদ্ব্যবহার করতে হবে।


বন্ধুগণ, এখন সময় এসেছে সুযোগগুলিকে চিহ্নিত করে নিজেদের ভাগ্যকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করার। আমাদের বর্তমান সঙ্কট যত বড়ই হোক না কেন, তা থেকে সবথেকে বেশি শিক্ষা নিয়ে লাভবান হতে হবে।


আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, এজন্য সরকার সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ এবং আপনাদের সঙ্গে আছে। আপনারা নির্দ্বিধায় এগিয়ে যান। নতুন সঙ্কল্প নিয়ে, নতুন বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যান। আত্মনির্ভর ভারতের মূলে হল আত্মবিশ্বাসী ভারত।


গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা কবিতা ‘নতুন যুগের ভোর’-এ লিখেছেন -


“চলায় চলায় বাজবে জয়ের ভেরী,
পায়ের বেগেই পথ কেটে যায়
করিস না আর দেরী।”


অর্থাৎ, প্রত্যেক এগিয়ে যাওয়া পদক্ষেপে জয়ধ্বনি হবে। পায়ের গতিই নতুন পথ তৈরি করবে। এখন আর দেরি করো না।


ভাবুন, এটি কতবড় মন্ত্র। পায়ের গতিই নতুন পথ তৈরি করবে। এতবড় প্রেরণা যখন আমাদের সামনে রয়েছে, তখন আমাদের থেমে থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা যখন আপনাদের প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ সমারোহ পালন করবেন, তার আগে যখন দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি পালন করবেন, তখন আত্মনির্ভর ভারতের পথে আমাদের দেশ অনেকটাই এগিয়ে যাবে।


আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা।


সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন।


অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।


ভালো থাকবেন!!!




CG/SB/DM



(Release ID: 1630913) Visitor Counter : 238