প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জাতীয় সঙ্গীত “বন্দে মাতরম”-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপনের সূচনা প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর

বন্দে মাতরমের সারমর্ম হল, ভারত, মা ভারতী, শাশ্বত ভারতের ভাবনা: প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 07 NOV 2025 12:17PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫

 


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লিতে জাতীয় সঙ্গীত “বন্দে মাতরম”-এর ১৫০তম জয়ন্তীর বর্ষব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। এই উপলক্ষে তাঁর ভাষণে শ্রী মোদী বলেন, বন্দে মাতরম শুধুমাত্র একটি শব্দ নয় – এটি হল মন্ত্র, একটি শক্তি, একটি স্বপ্ন এবং একটি একান্ত সংকল্প। বন্দে মাতরমকে মা ভারতীর প্রতি ত্যাগ ও আধ্যাত্মিক নিবেদনের প্রতিমূর্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই একটি শব্দই ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের নিবিড় একাত্মতা গড়ে তোলে, বর্তমানকে আত্মপ্রত্যয়ী করে তোলে এবং আমাদের ভবিষ্যৎকে এই সাহস নিয়ে প্রেরণা যোগায় যে, কোনও সংকল্পই অপূর্ণ থাকে না, কোনও লক্ষ্যই অধরা থাকে না।

শ্রী মোদী বলেন, অসংখ্য কণ্ঠস্বরের মধ্যে একক ছন্দ, সম্মিলিত স্বর এবং নিরন্তর ধারা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বন্দে মাতরম। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭ নভেম্বর হল একটি ঐতিহাসিক দিন। দেশ আজ বন্দে মাতরমের ১৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই পবিত্র অনুষ্ঠান নতুন প্রেরণা করে যোগাবে এবং আমাদের নাগরিকদের মধ্যে নতুন শক্তির সঞ্চার করবে। এই উপলক্ষে একটি স্মারক মুদ্রা ও ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্দে মাতরমের সারমর্ম হল ভারত, মা ভারতী, শাশ্বত ভারতের ভাবনা। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এই ভাবনা জন্ম নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, নতুন নতুন সভ্যতার বিবর্তন ঘটেছে, ইতিহাসের ভাঙাগড়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বেরও পট পরিবর্তন ঘটেছে। মানুষের এই অনন্ত যাত্রা থেকে ভারত শিখেছে, নতুন নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং সেগুলির ভিত্তিতে মূল্যবোধ ও সভ্যতার আদর্শ তৈরি হয়েছে, যার ফলশ্রুতি হিসেবে দেশের সুস্পষ্ট সাংস্কৃতিক সত্তা তৈরি হয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, ভারত ক্ষমতা এবং নৈতিকতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে, এভাবেই খাঁটি সোনার মতোই একটি পরিশুদ্ধ দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

শ্রী মোদী বলেন, ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে ভারতকে মুক্ত করার, মা ভারতীর শৃঙ্খলকে বন্ধন মুক্ত করার মন্ত্র হয়ে উঠেছিল বন্দে মাতরম। তিনি বলেন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, এটি ছিল স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন। আনম্দমঠের প্রতিটি লাইন, প্রতিটি শব্দের গূঢ় অর্থ রয়েছে। ঔপনিবেশিক যুগে বন্দে মাতরম লেখা হলেও, এটি সময়ের সীমারেখায় আবদ্ধ ছিল না। প্রতিটি যুগে, প্রতিটি কালে এর প্রাসঙ্গিকতা রয়ে গিয়েছে। 

শ্রী মোদী বলেন, বর্তমান যুগেও বন্দে মাতরমের প্রভাব রয়ে গিয়েছে। ১৮৭৫-এ বঙ্কিমচন্দ্র যখন বঙ্গ দর্শনে বন্দে মাতরম প্রকাশ করেছিলেন, তখন এটি ছিল শুধুমাত্র একটি গান। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের কণ্ঠস্বর রয়ে ওঠে। প্রত্যেক বিপ্লবীর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বন্দে মাতরম। ১৮৯৬-এ গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা অধিবেশনে বন্দে মাতরম গানটি গেয়েছিলেন। ১৯০৫-এ বৃটিশরা যখন বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বিপজ্জনক খেলা শুরু করে, তখন তাদের এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে একসূত্রে বেঁধেছিল বন্দে মাতরম। বহু বিপ্লবী বন্দে মাতরম ধ্বনি তুলে ফাঁসির মঞ্চে জীবন বলি দেন।

ভারতের জাতীয় পতাকার বিবর্তনের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশ বন্দে মাতরম গানটির ১৫০তম বর্ষ উদযাপন করছে। সেইসঙ্গে এর মাধ্যমে দেশের মহান বীরদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ১৪০ কোটি দেশবাসী তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন, যাঁরা বন্দে মাতরম শ্লোগান দিতে দিতে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, ইতিহাসের পাতায় যাঁদের নাম কখনও স্থান পায়নি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত হল স্বতন্ত্র, ভারতে মাতাকে জন্মদাত্রী, লালন-পালনকারী এবং যখন তাঁর সন্তানরা বিপদে পড়ে, তখন শত্রুর বিনাশকারী হিসেবে দেখা হয়। বন্দে মাতরমের কয়েকটি লাইন তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, মা ভারতী হলেন প্রভূত শক্তির আধার। প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি আমাদের পথ দেখান এবং শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করেন। 

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতের উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে শ্রী মোদী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশের নজিরবিহীন অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন এবং বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম আর্থিক শক্তির দেশ হিসেবে ভারতের সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে নারীশক্তির কথাও।  তাঁর কথায়, আমাদের নারীরা জানেন, কখন কীভাবে দুর্গা হয়ে উঠতে হয়, যিনি ১০ হাতে সন্ত্রাসকে দমন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই শতককে ভারতের শতক করে গড়ে তুলতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের শক্তি দেশবাসীর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। শ্রী মোদী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই যাত্রায় যারা আমাদের বিপথে চালিত করার চেষ্টা করবে এবং যারা নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সংশয় ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের বীজ বপনের চেষ্টা করবে, তাদের মোকাবিলা করতে হবে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আনন্দমঠের একটি পর্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। সেখানে ভবানন্দ বন্দে মাতরম গানটি গাইছেন এবং অন্য একজন প্রশ্ন করছেন, একজন ব্যক্তি একা কীভাবে সাফল্য অর্জন করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ভারত মাতার ১৪০ কোটি সন্তান, ২৮০ কোটি হাত রয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি তরুণ। বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ভারতের সুবিধা রয়েছে। তাই বন্দে মাতরমের প্রকৃত স্বপ্ন পূর্ণ করার পথে আমাদের কেউ কি আটকাতে পারবে, প্রশ্ন তোলেন শ্রী মোদী।

আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মেক ইন ইন্ডিয়ার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছি। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ভারতের পা রাখার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে ক্রীড়া সর্বত্র আমাদের কন্যারা সাফল্যের সাক্ষ্য রাখছেন। তাঁরা যখন যুদ্ধ বিমানে সওয়ারি হন, তখন প্রতিটি ভারতীয় গর্বের সঙ্গে বলে ওঠেন – বন্দে মাতরম!

এক পদ এক পেনশন নীতি রূপায়ণের ১১ বছর পূর্ণ করার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শত্রুপক্ষের দুরভিসন্ধি ভেস্তে দেয়, যখন সন্ত্রাসবাদ, নকশালবাদ এবং মাওবাদী উগ্রপন্থা পরাস্ত হয়, তখন আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর কণ্ঠে শোনা যায় – বন্দে মাতরম!

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত ভারতের লক্ষ্য পূরণের পথে মা ভারতী আমাদের পথ দেখাবেন। বন্দে মাতরম মন্ত্র আমাদের অসংখ্য সন্তানকে প্রেরণা যোগাবে এবং অমৃতকালের যাত্রায় সশক্ত করে তুলবে। তাঁর বক্তব্যের শেষে বন্দে মাতরমের ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সকলকে আবার অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। 

অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, দিল্লির উপ-রাজ্যপাল শ্রী বিনয় কুমার সাক্সেনা, মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী রেখা গুপ্তা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন।

 


SC/MP/SKD


(Release ID: 2187374) Visitor Counter : 10