প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
বিহারের পূর্ণিয়ায় ৪০ হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন প্রধানমন্ত্রী
Posted On:
15 SEP 2025 5:50PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বিহারের পূর্ণিয়ায় ৪০ হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন। এই উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, পূর্ণিয়া হল মা পূরাণ দেবী, ভক্ত প্রহ্লাদ এবং মহর্ষি মেহি বাবার জায়গা। অবিস্মরণীয় সাহিত্যিক ফণীশ্বরনাথ রেণু এবং সতীনাথ ভাদুড়ির জন্মস্থান পূর্ণিয়া বিনোবা ভাবের মতো কর্মযোগীর কর্মস্থল।
প্রধানমন্ত্রীর হাতে এদিন যে সব প্রকল্পের সূচনা হয় সেগুলি রেল, বিমান বন্দর ও জল সরবরাহ সংক্রান্ত। সীমাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণে এই সব উদ্যোগ বিশেষ কার্যকর হবে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় ৪০ হাজার প্রাপকের হাতে বাড়ির চাবি পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হল এই সব পরিবারের নতুন জীবনের সূচনা। ধনতেরাস, দীপাবলি এবং ছটপুজোর আবহে নতুন বাড়িতে প্রবেশ অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এখনও যাঁরা নিজের বাড়ি পাননি, তাঁরা শীঘ্রই তা পেয়ে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন। বিগত ১১ বছরে দরিদ্র মানুষের চার কোটি বাসস্থানের সংস্থান হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং জানান, আরও তিন কোটি বাড়ি তৈরী করা হচ্ছে। প্রতিটি দরিদ্র মানুষ মাথার ওপর ছাদ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর বিশ্রাম নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না, কারণ, তাঁর প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হল দরিদ্রের সেবা।
ইঞ্জিনিয়ার্স ডে উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এদিন স্যার এম বিশ্বেসরাইয়ার সশ্রদ্ধ উল্লেখ করেন। উন্নত বিহার এবং বিকশিত ভারত গড়ে তোলার কাজে প্রযুক্তিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। তাঁদের দক্ষতার সুবাদেই পূর্ণিয়া বিমান বন্দরের টার্মিনাল বিল্ডিং তৈরির কাজ মাত্র পাঁচ বছরে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। ওই বিমান বন্দর থেকে প্রথম বাণিজ্যিক উড়ানেরও যাত্রার সূচনা হয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি বলেন, পূর্ণিয়া দেশের বিমান মানচিত্রে এসে যাওয়ায় সীমাঞ্চলের শহর
ও শিল্পকেন্দ্রগুলি যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও জোরদার হল। দেশের প্রতিটি প্রান্তে আধুনিক রেল পরিষেবা গড়ে তোলায় সরকারের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একটি বন্দে ভারত, দুটি অমৃত ভারত এবং আরও একটি যাত্রীবাহী ট্রেনের যাত্রার সূচনার পাশাপাশি আড়ারিয়া – গালগালিয়া রেলপথের উদ্বোধন এবং বিক্রমশীলা – কাটারিয়া রেল প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসারে বক্সার – ভাগলপুর হাইস্পিড করিডরের মোকামা – মুঙ্গের অংশটি গড়ে তোলায় ভারত সরকার সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভাগলপুর – দুমকা – রামপুরহাট রেললাইনের ডবল ট্র্যাকিং প্রকল্পেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক বিকাশের জন্য বিহারের উন্নয়ন একান্ত জরুরী। আবার বিহারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সীমাঞ্চলের বিকাশ আবশ্যিক শর্ত। পূর্ববর্তী সরকারের অযোগ্যতার কারণে এই অঞ্চল উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য।
বিহারকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ভাগলপুরের পিরপাইন্টিতে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিহার ও কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের এবং পশুপালকদের আয় বাড়ানোর বিষয়টিতে দায়বদ্ধ বলে তাঁর মন্তব্য। শ্রী মোদী কোশি – মেচি আন্তঃরাজ্য নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের প্রথম পর্বের শিলান্যাসেরও ঘোষণা করেন। এই উদ্যোগ পূর্বাঞ্চলীয় কোশি মেইন ক্যানেলের পরিধি বাড়াবে। এর ফলে এলাকার লক্ষ লক্ষ কৃষক সেচ পরিষেবা আরও ভালোভাবে পাবেন এবং বন্যার সমস্যা মিটবে বলে তিনি আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিহারের কৃষকদের আয়ের অন্যতম উৎস মাখানা চাষ। কিন্তু এই দিকে আগেকার জমানায় কোন দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। মাখানা পর্ষদ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিহারের মানুষকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার এসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এই পর্ষদ মাখানা চাষীদের কাছে ফসলের ন্যায্য দাম পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে। মাখানা চাষ ক্ষেত্রের উন্নয়নে সরকার ৪৭৫ কোটি টাকার একটি কর্মপরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
বিরোধীদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এই রাজ্যকে বঞ্চিত করে রেখেছেন তাঁরা আজ এখানকার উন্নয়নকে ভালো চোখে দেখছেন না। বর্তমানে বিহারে প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের দিশায় জোরজার কাজ চলছে। রাজগিরে হকির এশিয়া কাপের আয়োজন, আউন্টা – সিমারিয়া সেতু, বিহারে তৈরি রেলইঞ্জিন আফ্রিকাতে রপ্তানি প্রভৃতি বিষয়গুলি সেই সাক্ষ্যই দেয়। বিরোধীদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দল সামাজিক মাধ্যমে বিহারকে বিড়ির সঙ্গে তুলনা করেছে – যা এই রাজ্যের প্রতি গভীর ঘৃণার প্রতিফলন। ওই সব দল বিহারের উন্নয়নে কখনই দায়বদ্ধ থাকতে পারে না বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। পূর্বতন একজন প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী – যিনি বলেছিলেন, সরকার একটাকা খরচ করলে ৮৫ পয়সা চলে যায় দুর্নীতিবাজদের হাতে। বিরোধীরা যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন সরকারি প্রকল্পের অর্থ তাঁদের কাছে আদৌ পৌঁছোতো কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বর্তমানে ছবিটা সম্পূর্ণ বিপরীত বলে তাঁর দাবি। এই প্রসঙ্গে তিনি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথা বলেন – যার আওতায় নিখরচায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমার সুবিধা পান সাধারণ মানুষ। যাঁরা হাসপাতাল তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁরা এই ধরনের পরিষেবা দেওয়ার কথা কখনও ভেবেছেন কিনা সেই প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিরোধীরা বিহারের মর্যাদাই শুধুই নয়, এখানকার পরিচয়ের ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। তিনি বলেন, অবৈধ অনুপ্রবেশের জেরে সীমাঞ্চল এবং পূর্ব ভারতের জনবিন্যাস পাল্টে যাওয়ার বিপদ প্রকট হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিহার, বাংলা এবং অসমের মানুষ। এই বিষয়টির মোকাবিলায় লালকেল্লার প্রাকার থেকে তাঁর ঘোষিত জনবিন্যাস মিশনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য বিরোধী দলগুলি অনুপ্রবেশকারীদের আড়াল করতে চাইছে বলেও তাঁর অভিযোগ। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের সকলকেই সরিয়ে দেওয়া উচিত। এই বিষয়টি সরকারের দায়িত্ব। অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করাই যতই চেষ্টা হোক, তাঁর সরকার এই লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। অনুপ্রবেশকারীদের যাঁরা আড়াল করছেন তাঁদের হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় আইন শেষ কথা বলবে, অনুপ্রবেশকারীদের মর্জি মতো কাজ হবে না। এক্ষেত্রে যাবতীয় ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দেবেন বিহার ও দেশের মানুষ।
বিহারে অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব করায় মহিলাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। বিরোধীদের শাসনকালে মহিলারা ধর্ষণের মতো নানা ধরনের নৃশংসতার শিকার হওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বর্তমানে এই মহিলারাই হয়ে উঠছেন লাখপতি দিদি কিংবা ড্রোন দিদি। এপ্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমারের নেতৃত্বে জীবিকা দিদি অভিযানের প্রশংসা করেন।
মহিলাদের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার একটি কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অর্থ আঞ্চলিক স্তরের কাঠামোর মাধ্যমে ব্যবহার করে গ্রামে গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে আরও ক্ষমতায়িত করে তোলা হবে এবং তার ফলে মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের পালে হাওয়া লাগবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা পরিবারসর্বস্ব রাজনীতিটুকুই শুধু বোঝেন। কিন্তু তাঁর কাছে দেশের প্রতিটি নাগরিক পরিবারের অংশ। সাধারণ মানুষের খরচাপাতি এবং সঞ্চয় নিয়ে তিনি ভাবেন। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর থেকে পুনর্মার্জিত জিএসটি ব্যবস্থাপনা কার্যকর হবে এবং এই বিষয়টি আসন্ন দেওয়ালি এবং ছটের মরশুমে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেবে অনেকটাই। সাশ্রয় হওয়া অর্থ সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারবেন, সন্তানদের পড়াশুনা ও অন্যান্য চাহিদা মেটাতে। সরকার প্রকৃতই দরিদ্রের জন্য ভাবিত হলে তার প্রত্যক্ষ প্রতিফলন অনিবার্য।
পূর্ণিয়ার সন্তানরা স্বাধীনতা সংগ্রামে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। অপারেশ সিঁদুরের মাধ্যমে শত্রুদের মোকাবিলায় দেশের সক্ষমতা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য। ওই অভিযান সফল ভাবে পরিচালনায় পূর্ণিয়ার এক সন্তানের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান, মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী রামমোহন নাইডু, শ্রী রাজীবরঞ্জন সিং, শ্রী জিতনরাম মানঝি, শ্রী গিরিরাজ সিং, শ্রী চিরাগ পাশওয়ান, শ্রী নিত্যানন্দ রাই, শ্রী রামনাথ ঠাকুর, ডঃ রাজভূষণ চৌধারি, শ্রী সতীশ চন্দ্র দুবে প্রমুখ।
প্রেক্ষাপট –
প্রধানমন্ত্রী এদিন বিহারে জাতীয় মাখানা পর্ষদের সূচনা করেন। পূর্ণিনায় বিমান বন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের উদ্বোধন করেন তিনি। ভাগলপুরের পিরপাইনটিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস হয় প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কোশি – মেচি নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পেরও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। একাধিক রেল প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ট্রেনের যাত্রার সূচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এদিন পূর্ণিয়ায় সেক্স – সর্টেড সিমেন কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন – যা গড়ে উঠেছে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশনের আওতায়। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় প্রাপকদের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেওয়ার পাশাপাশি কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড প্রকল্পের আওতায় অর্থ বিতরণ করেন তিনি।
SC/AC/AS
(Release ID: 2167117)
Visitor Counter : 14
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
हिन्दी
,
Manipuri
,
Assamese
,
Bengali-TR
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam