অর্থমন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

২০২৪-২৫ -এর অর্থনৈতিক সমীক্ষার সংক্ষিপ্তসার

Posted On: 31 JAN 2025 2:23PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

 

২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের আর্থিক সমীক্ষা আজ কেন্দ্রীয় অর্থ এবং কোম্পানী বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারমন সংসদে পেশ করেছেন। এই আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৩-এ বিশ্ব অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আগামী ৫ বছরের বৈশ্বিক বৃদ্ধি হার গড়ে প্রায় ৩.২ শতাংশ হতে পারে বলে দেখিয়েছে।

এই সমীক্ষায় বিশ্ব অর্থনীতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্র জুড়ে ২০২৪-এ স্থায়ী অথচ অসম বিকাশ দেখা গেছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য ধারা হল এশিয়ার কিছু অংশ এবং বিশেষত ইউরোপে বিশ্ব নির্মাণ ক্ষেত্রে মন্দাভাব। এর কারণ হল সরবরাহ শৃঙ্খলে বাঁধা এবং বাহ্যিক চাহিদা ক্ষেত্রে দুর্বলতা। তুলনামূলকভাবে পরিষেবা ক্ষেত্র অনেক ভালো ফল করেছে এবং নানা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে তা সহায়ক হয়েছে। বেশিরভাগ অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমেছে, যদিও সমীক্ষায় বলছে পরিষেবা মুদ্রাস্ফীতি একই রকম থেকে গেছে।

সমীক্ষায় আরও তুলে ধরা হয়েছে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার স্থায়ী। ভারতের মূল জিডিপির বৃদ্ধি ২০২৫ অর্থবছরে ৬.৪ শতাংশ, যা দশকের গড়ের কাছাকাছি। 

মোট চাহিদার প্রেক্ষাপট থেকে বেসরকারী চূড়ান্ত ভোগব্যয় স্থির মূল্য সূচকের নিরিখে ৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে অনুমান করা হচ্ছে। গ্রামীন চাহিদা বৃদ্ধি এই বিকাশের পথকে তরান্বিত করছে। 

সরবরাহ ক্ষেত্রে প্রকৃত মোট মূল্য আরোপন ৬.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে অনুমান করা হচ্ছে। কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার তরান্বিত হয়ে ২০২৫ অর্থ বছরে ৩.৮ শতাংশ হতে পারে। শিল্প ক্ষেত্র ২০২৫ অর্থ বছরে ৬.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে অনুমান করা হচ্ছে। নির্মাণ ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ, গ্যাস, জল সরবরাহ এবং অন্যান্য জন উপযোগমূলক পরিষেবায় স্থায়ী বৃদ্ধি শিল্প বিকাশের পথে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিষেবা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার অব্যাহত থেকে ৭.২ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর্থিক ক্ষেত্র, রিয়েল এস্টেট, পেশাগত পরিষেবা, জন প্রশাসন, প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য পরিষেবা ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর বিকাশ এই বৃদ্ধির পরিপূরক হবে। 

বৃদ্ধির হারে উর্দ্ধগতি এবং অধোগতির কথা মাথায় রেখে সমীক্ষায় অনুমান ২০২৬ অর্থবছরে প্রকৃত জিডিপি বৃদ্ধি ৬.৩ থেকে ৬.৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

মধ্যমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর বিভাগটি বিশ্বজনীন বিষয়গুলির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছে। বিশ্বক্ষেত্রে নানা ঝুঁকিকে তুলে ধরে আর্থিক নীতি এবং বাণিজ্য নীতিতে অনিশ্চয়তার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধির স্তর শক্তিশালী করার গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। 

২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যকে চরিতার্থ করতে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল ভূ-অর্থনৈতিক বিভাজনের ভিত্তিতে উদ্ভূত বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারতে মধ্যমেয়াদী বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গী নির্ণয় করতে হবে। এর পাশাপাশি রয়েছে নির্মাণ ক্ষেত্রে চিনের শক্তি এবং শক্তি রূপান্তর প্রয়াসের ক্ষেত্রে চিনের ওপর বিশ্বের নির্ভরশীলতা। পদ্ধতিগত নিয়ন্ত্রণমুক্তি একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয় যার ওপর ভিত্তি করে অভ্যরীণ স্তরের বিকাশের চালিকাশক্তির দিকে জোর দিতে হবে। এতে ব্যবসা ক্ষেত্রে জড়িত ব্যক্তিদের যেমন আর্থিক স্বাধীনতার প্রসার ঘটাবে, সেইসঙ্গে বিভিন্ন সংগঠন স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে পারবে। সমীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে আর্থিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক নীতিকে ব্যবসায় স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের দ্বিতীয় পর্বের পথ ধরে পদ্ধতিগত নিয়ন্ত্রণমুক্তির পথে এগোনোর পথকে , যাতে  ভারতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রের বিকাশ উৎসাহ পায়। 

২০২৪-২৫ এর আর্থিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০২৫ আর্থিক বছরের মধ্যবর্তী সময়ে কৃষিক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার স্থায়ী থেকেছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৩.৫ শতাংশ, যা বিগত ৪ টি ত্রৈমাসিকের থেকে বৃদ্ধির হারে উল্লেখযোগ্য। ভালো খরিফ ফসলের উৎপাদন, স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি এবং বিভিন্ন জলাধারে প্রয়োজনীয় জলস্তর কৃষি বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। মোট খরিফ খাদ্যশস্যের উৎপাদন ২০২৪-২৫ – এ রেকর্ড- সংখ্যক ১৬৪৭.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন হয়েছে, যা ২০২৩-২৪ এর তুলনায় ৫.৭ শতাংশ বেশি এবং বিগত ৫ বছরের গড় খাদ্যশস্য উৎপাদনের থেকে ৮.২ শতাংশ বেশি। 

২০২৫ অর্থ বছরের প্রথম অর্ধে শিল্পোক্ষেত্রে উৎপাদনে ৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বছর শেষে মোট সার্বিক উৎপাদন ৬.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। প্রথম ত্রৈমাসিকে স্থায়ী বৃদ্ধি ৮.৩ শতাংশ হলেও, দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ৩টি পৃথক কারণ বশত বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়। প্রথমত, গন্তব্য দেশগুলিতে  চাহিদার অভাবে উৎপাদন রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এর পাশাপাশি সেখানকার আগ্রাসী শিল্প এবং বাণিজ্য নীতি এর ওপর প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয়ত, স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টির মিশ্র প্রভাব।  জলাধারগুলিতে জল সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং তা কৃষি সহায়ক হলেও খনি, নির্মাণ এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে তার বিরূপ প্রভাব ফেলে। তৃতীয়ত, সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিগত বছরেও নানা উৎসব এবং চলতি বছরেও সেই কারণ বশত ২০২৫ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে উৎপাদন বৃদ্ধি হ্রাস পায়। 

বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত পিএমআই নির্মাণ ক্ষেত্রে দ্রুত বৃদ্ধির হার অব্যাহত রেখেছে বলে সমীক্ষায় প্রকাশ। 

পরিষেবা ক্ষেত্র ২০২৫ অর্থবছরেও ভালো ফল করবে বলে সমীক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিক এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির ফলে ২০২৫ অর্থ বছরের মধ্যবর্তী সময়ে বৃদ্ধির হার ৭.১ শতাংশ হবে। 

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বৃদ্ধির হারে সুস্থায়ীত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির নমনীয় হার, আর্থিক, স্বাস্থ্য এবং বাহ্যিক ক্ষেত্রগুলির সমতা সহায়ক হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, খুচরো ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ অর্থ বছরে ৫.৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর সময়কালের মধ্যে ৪.৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ অর্থ বছরে ৭.৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ অর্থ বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮.৪ শতাংশে দাঁড়াবে। মূলত শাক সব্জি এবং ডালশস্যের মতো কিছু খাদ্যদ্রব্যের কারণেই মুদ্রাস্ফীতি। ভারতের ক্রেতা মূল্য মুদ্রাস্ফীতি ধীর ধীরে ২০২৬ অর্থ বছরে লক্ষ্য সীমার কাছাকাছি ৪ শতাংশে দাঁড়াবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারের সমীক্ষায় তাই ধরা পড়েছে।  

মূলধনী খরচ কেন্দ্রের মোট খরচের শতাংশের ভিত্তিতে ২০২১ অর্থ বছর থেকে ২০২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। বছর ভিত্তিক হিসেবে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সাধারণ নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় সরকারের মূলধনী খাতে খরচ ২০২৪ এর জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৮.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বছর ভিত্তিতে ২০২৪ এর এপ্রিল থেকে নভেম্বর মোট কর শুল্ক ১০.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে অবমূল্যায়ণের ফলে কেন্দ্রের এই করশুল্ক ধরে রাখার ক্ষেত্রে প্রায় কোনও রকমই বৃদ্ধি হয়নি। 

সমীক্ষায় প্রকাশ কেন্দ্রের মোট করশুল্ক এবং রাজ্যগুলির নিজস্ব করশুল্ক ২০২৪-এর এপ্রিল থেকে নভেম্বর সময়কালে তুলনামূলক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যগুলির কর ব্যয় এপ্রিল থেকে নভেম্বর এই সময়কালে বছর ধরে হিসেবের ভিত্তিতে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভর্তুকি এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি পালনের দায়বদ্ধতা। যা ২৫.৭ শতাংশ এবং ১০.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

সমীক্ষায় আরও বলা হচ্ছে, সম্পদের ক্ষতি, পরিচালন ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি এবং ব্যাঙ্কের মূলধন সংরক্ষণের দায়বদ্ধতাপূরণ বশত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সুস্থায়ীত্বের চিত্র সেইভাবে প্রতিভাত হয়নি। ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায়  মোট ঋণ এবং অগ্রিমের নিরিখে বিগত ১২ বছরে মোট অনুৎপাদক সম্পদ সর্বনিম্ন ২.৬ শতাংশ-এ দাঁড়িয়েছে।

বাহ্যিক ক্ষেত্রে সুস্থায়ীত্বের ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, পরিষেবা বাণিজ্য এবং রেকর্ড সংখ্যক ছাড় রক্ষাকবচ হয়ে দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক সমীক্ষা দেখাচ্ছে বছর ভিত্তিক হিসেবের ভিত্তিতে এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর এই সময়কালে পণ্য রপ্তানী ক্ষেত্র ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পণ্য আমদানী বৃদ্ধি পেয়েছে ৫.২ শতাংশ। ভারতের বিপুল পরিমাণ পরিষেবা রপ্তানী, দেশের সার্বিক অগ্রগতি প্রসারকে তরান্বিত করে। যাবতীয় প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও বিশ্ব পরিষেবা রপ্তানীতে সপ্তম বৃহত্তম অংশীদার হিসেবে দেশকে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে। 

পরিষেবা বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত সহ বিদেশ থেকে ছাড় আর্থিক অগ্রগতির সহায়ক হয়েছে। বেসরকারী বিনিময়ের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ঘটেছে। ভারত বিশ্বের ছাড় প্রাপক দেশগুলির অগ্রগণ্য। ওইসিডি অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এর সহায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুটি কারণই মূলত ভারতের চলতি হিসেবের ঘাটতি ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র ১.২ শতাংশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

মোট বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ২০২৫ অর্থ বছরে রেকর্ড সংখ্যক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ অর্থ বছরের প্রথম ৮ মাসে ৪৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ অর্থ বছরের ওই একই সময়কালে ৫৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াচ্ছে, বছর ভিত্তিক বৃদ্ধির হারে যা ১৭.৯ শতাংশ। বৈদেশিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগ ২০২৪-এর মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ব ভূ-রাজনৈতিক কারণে এবং আর্থিক নীতির কারণে অস্থিরতার মধ্যে দিয়েই যায়।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, সুস্থায়ী মূলধনী বিনিময়ের ফলে ভারতের বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহ, ২০২৪- এর জানুয়ারীর শেষে ৬১৬.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে সেপ্টেম্বর ২০২৪ -এ দাঁড়ায় ৭০৪.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এর পর তা ৩ জানুয়ারী, ২০২৫ -এ খানিকটা হ্রাস পেয়ে ৬৩৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় বাহ্যিক ঋণের ৯০ শতাংশ মেটাতেই সক্ষম। এছাড়াও ১০ মাসের বেশি সময়ের জন্য আমদানি সুরক্ষা দিতেও তা তৈরি। ফলে বাহ্যিক অস্থিরতা ক্ষেত্রে তা এক রক্ষাকবচ স্বরূপ। 


অর্থনৈতিক সমীক্ষা দেখিয়েছে কর্মসংস্থান ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যকে। এতে বলা হয়েছে, ভারতের শ্রম বাজার সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোভিড অতিমারীর পরবর্তীকালে আর্থিক পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরলীকরণ বৃদ্ধি পাওয়া এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা নিয়েছে। 


সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, যুবশক্তির ওপর ভর করে কর্মক্ষম কর্মীগোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিষেবা নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির প্রসার, কৃত্রিম মেধার গ্রহণ, আর্থিক বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। সেইসঙ্গে শ্রম বাজারেরও উন্নতিসাধন ঘটেছে। শিক্ষা, প্রসার এবং দক্ষতা বিকাশ কৃত্রিম মেধা মানচিত্রে অন্যতম পরিপূরক শক্তি। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে বিপুল ভাবে কৃত্রিম মেধা গ্রহণে বর্তমানে যে বাধা রয়েছে তা নীতি নির্ণায়কদের কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রকে সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে। শ্রম ক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধাভিত্তিক রূপান্তরকে ঘিরে যে সামাজিক বিরূপ প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে তা যথাসম্ভব হ্রাস করতে সরকার বেসরকারি ক্ষেত্র এবং শিক্ষা ক্ষেত্রকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে আর্থিক সমীক্ষা।

সুস্থায়ী বৃদ্ধির হারকে ধরে রাখতে আগামী দু-দশক পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ওপর আলোকপাত করেছে অর্থনৈতিক সমীক্ষা। এপ্রিল থেকে নভেম্বর ২০২৪-এ ২০৩১ কিলোমিটার রেল সংযোগ চালু হয়েছে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর ২০২৪- এর মধ্যে ১৭ জোড়া নতুন বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হয়েছে। বন্দরের দক্ষতা ২০২৫ অর্থবছরে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে ২০২৫ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর সময়কালে কন্টেনার ওঠানো নামানোর সময়সীমা ৪৮.১ এক ঘন্টা থেকে হ্রাস পেয়ে ৩০.৪ ঘন্টায় দাঁড়াবে।


অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রসারে ভারত সরকারের প্রয়াস এবং বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব বিষয়গুলিকে তুলে ধরা হয়েছে সেগুলি হল নীতিগত বিষয়, আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন নিয়ামক ব্যবস্থা। যেমন পিএম সূর্যঘর নিঃশুল্ক বিদ্যুৎ যোজনা, জাতীয় জৈব শক্তি কর্মসূচি, জাতীয় গ্রীন হাইড্রোজেন মিশন এবং পিএম কুসুম। সৌর এবং বায়ুশক্তির উৎপাদন বছরভিত্তিক হিসেবে ১৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের সামাজিক পরিষেবা ক্ষেত্রে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে ২০২১ অর্থ বছর থেকে ২০২৫ অর্থবছরে বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্রয় ব্যয়ে অসাম্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে ২০২২-২৩ -এ ০.২৬৬ থেকে তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ০.২৩৭ -এ এবং শহরাঞ্চলে ২০২২-২৩ -এ ০.৩১৪ থেকে ২০২৩-২৪ এ তা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ০.২৮৪ -এ। আয় বন্টনকে ঢেলে সাজাতে সরকারি উদ্যোগ সমূহ সদর্থক প্রভাব ফেলেছে। বিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০-র উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে সরকার একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সমগ্র শিক্ষা অভিযান, দীক্ষা, স্টার্স, পরখ, পিএমশ্রী, উল্লাস, পিএম পোষণ প্রভৃতি। 

২০১৫ অর্থ বছর থেকে ২০২২ অর্থবছরের মধ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দেশের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ে ২৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে হিসাব বহির্ভূত খরচ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ২৬.৬ শতাংশ থেকে ৩৯.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। 


অনু, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ক্ষেত্রকে ভারতীয় অর্থনীতির উদ্ভূত প্রাণবন্ত ক্ষেত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ইক্যুয়িটি তহবিল প্রসারে সরকার ৫০হাজার কোটি টাকার স্বনির্ভর ভারত তহবিল চালু করেছে। সমীক্ষায় ব্যবসা ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে সরকারি উদ্যোগের উল্লেখ করে বলেছে, ব্যবসায় প্রতিকূলতার মূল কারণগুলিকে দূর করতে রাজ্য সরকারগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক বাধাকে দূর করে উদার নৈতিক বাতাবরণ গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে আইনি রক্ষা কবচকেও প্রাধান্য দিতে হবে। ঝুঁকি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ বিধি বজায় রাখার পাশাপাশি শুল্ক হার হ্রাসের ওপরেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। 

২০২৬ অর্থ বছরে ভারতের আর্থিক সম্ভাবনা ভারসাম্যমূলক। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাণিজ্য ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা এবং পণ্যমূল্যে ঝুঁকি সত্ত্বেও ভারতের আর্থিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেসরকারি পুঁজির বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রেতা আস্থা বৃদ্ধির নজির গড়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রামীন চাহিদা প্রসারিত হয়েছে। খাদ্যদ্রব্যমূল্যে অনুমিত স্বাচ্ছন্দ্য এবং সুস্থায়ী বৃহৎ অর্থনৈতিক বাতাবরণ মধ্যবর্তীকালীন বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে উঠেছে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, তৃণমূল স্তরে পরিকাঠামোগত সংস্কার এবং বিনিয়ন্ত্রিতকরণ ভারতের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রকে তরান্বিত করবে। 


                             

SC/ AB/SG


(Release ID: 2098315) Visitor Counter : 7