রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
প্রজাতন্ত্র দিবস ২০২৫-এর প্রাক্কালে দেশবাসীর উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণ
Posted On:
25 JAN 2025 7:17PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫
আমার প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ
নমস্কার !
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আপনাদের সামনে বলার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে আমি আপনাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই ! আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ২৬ জানুয়ারি আমাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল।
গণ-পরিষদে প্রায় ৩ বছর ধরে বিতর্কের পর ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯-এ আমাদের সংবিধান গৃহীত হয়। ২৬ নভেম্বর দিনটি ২০১৫ থেকে সংবিধান দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে।
প্রজাতন্ত্র দিবস সমস্ত নাগরিকের কাছে আনন্দ ও গর্বের বিষয়। কেউ বলতে পারেন ৭৫ বছর আগের এই দিনটি একটি দেশের জীবনে একমাত্র ক্ষণিক আলোকের মতো। কিন্তু আমি তা বলবো না। সেই সময় যখন ভারতের দীর্ঘদিনের ঘুমন্ত আত্মার পুনর্জাগরণ ঘটেছিল। প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে ভারত এক সময় জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎস হিসেবে পরিচিত ছিল। যদিও এক সময় অন্ধকার পর্ব নেমে আসে এবং ঔপনিবেশিক শাসনে অমানবিক নিপীড়ন দেশকে চরম দারিদ্রের পথে ঠেলে দেয়।
আজ আমাদের সর্বাগ্রে সেইসব সাহসী আত্মাকে স্মরণ করা উচিত, যাঁরা বিদেশী শৃঙ্খল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার লক্ষ্যে চরম বলিদান দিয়েছিলেন। কেউ কেউ অতি সুপরিচিত, আবার কেউ কেউ অল্প পরিচিত। এই বছর আমরা ভগবান বীরসা মুণ্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং দেশের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা যথাযোগ্যভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
বিশ শতকের গোড়ার দিকে তাঁদের আন্দোলন গোটা দেশে এক সংগঠিত স্বাধীনতা আন্দোলনের চেহারা নিয়েছিল। দেশের কাছে এটি অতি সৌভাগ্যের বিষয় যে, আমরা মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাবা সাহেব আম্বেডকরের মতো ব্যক্তিত্বদের পেয়েছিলাম, যাঁরা আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নতুন করে আবিষ্কারের পথে সাহায্য করেছিলেন। ন্যায়, স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্ব শুধুমাত্র তত্ত্বগত ধারণা নয়, এগুলি সর্বদা আমাদের সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ ছিল।
গণ পরিষদের গঠনও আমাদের সাধারণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাক্ষ্য দেয়। এতে দেশের সব অংশের এবং সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সম্ভবত এতে সরোজিনী নাইডু, রাজকুমারী অমৃত কৌর, সুচেতা কৃপালিনী, হংসবেন মেহতা এবং মালতী চৌধুরী সহ ১৫ জন মহিলা সদস্য ছিলেন।
সংবিধান হল ভারতীয় হিসেবে আমাদের যৌথ সত্তার ভিত্তি। এটি আমাদের পরিবার হিসেবে একসূত্রে আবদ্ধ করে। ৭৫ বছর ধরে এটি আমাদের অগ্রগতির পথ দেখিয়ে আসছে। আসুন, আজ আমরা বিনম্রভাবে ডঃ আম্বেদ্ডকরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। তিনি খসড়া কমিটির সভাপতি ছিলেন।
প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ,
স্বাধীনতার সময় এবং তার পরেও দেশের এক বড় অংশের মানুষ চরম দারিদ্র ও ক্ষুধার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আমরা সঠিক অবস্থার সৃষ্টি করি, যাতে প্রত্যেকে সমান সুযোগ নিয়ে বিকশিত হতে পারেন। আমাদের কৃষকরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করে তোলেন। পরিকাঠামো এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমাদের শ্রমিকরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। আমাদের অর্থনীতি আজ গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। ভারত আজ আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে। সংবিধান ছাড়া এই পরিবর্তন সম্ভব হত না। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আর্থিক অগ্রগতির হার ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, আমাদের তরুণদের জন্য চাকরির সংস্থান হচ্ছে, কৃষক এবং শ্রমিকদের হাতে আরও বেশি করে অর্থ আসছে এবং আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দারিদ্রসীমার ওপরে তুলে আনা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা, মুদ্রা, স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া এবং অটল পেনশন যোজনার মতো উদ্যোগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ হল, সরকার আবাসন এবং পানীয় জলের প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করছে। প্রান্তিক সম্প্রদায়, বিশেষত তপশিলি জাতি, তপশিলি উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে সব ধরনের প্রয়াস চালাচ্ছে সরকার। তপশিলি উপজাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান এবং প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী মহা অভিযান (পিএম-জনমন) সহ বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি রেল ও রাস্তা, বন্দর ও লজিস্টিক হাব সহ সামগ্রিক পরিকাঠামো উন্নয়নের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। আর্থিক ক্ষেত্রে সরকার যেভাবে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়েছে, তা দৃষ্টান্তযোগ্য। ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা নজিরবিহীন স্বচ্ছতা এনেছে। এর ফলে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের সেরা ডিজিটাল গণ-পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।
প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ,
১৯৪৭-এ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে আমাদের মধ্যে ঔপনিবেশিক মানসিকতা বজায় ছিল। দেরিতে হলেও এই ধরনের মানসিকতা বদলাতে সম্মিলিত প্রয়াস নেওয়া হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধি, ভারতীয় ফৌজদারি বিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম চালু করা হয়েছে। নতুন এসব আইনে মহিলা এবং শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রশাসনিক কাজে ধারাবাহিকতা, নীতির অসাড়তা প্রতিরোধ, আর্থিক বোঝা হ্রাস সহ নানা ধরনের বহু সুবিধার পথ প্রশস্ত করতে পারে।
বর্তমানে যে মহাকুম্ভ চলছে, তা আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলে ধরছে। আমাদের সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং আমাদের পরম্পরার পুনরুজ্জীবনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভারত হল ভাষাগত বৈচিত্র্যের এক বড় হাব। এই সূত্রেই সরকার অসমিয়া, বাংলা, মারাঠি, পালি এবং প্রাকৃতকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। আগে এই মর্যাদা পেয়েছিল তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং ওড়িয়া। ১১টি ধ্রুপদী ভাষায় সরকার গবেষণার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ,
আমাদের তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের ভারত গড়তে চলেছে। শিক্ষা এইসব তরুণদের মন গড়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেই কারণে সরকার শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়েছে। গত এক দশকে শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একথা জেনে আমি আনন্দিত যে, এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন মহিলা শিক্ষিকারা। গত এক দশকে যাঁরা শিক্ষক হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশ হলেন মহিলা। বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষায় শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে ভারত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহ শিক্ষার বিভিন্ন শাখায় নয়া উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে।
প্রাণবন্ত ও উদ্ভাবনমূলক পরিমণ্ডল গড়ে তুলতে জাতীয় কোয়ান্টাম মিশন চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স এবং সাইবার সুরক্ষা সহ প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর নজর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন সূচকে ভারত ২০২০ সালের ৪৮-তম স্থান থেকে ২০২৪-এ ৩৯-তম স্থানে উঠে এসেছে। আধুনিক গবেষণার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। এই মাসে সফল মহাকাশ ডকিং পরীক্ষার মাধ্যমে ইসরো দেশকে আবার গর্বিত করেছে। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত এই সাফল্য অর্জন করলো।
ক্রীড়া এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রেও ভারত উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। গত বছর অলিম্পিক ক্রীড়ায় আমাদের অ্যাথলিটরা সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। দাবায় আমাদের সাফল্য বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। ফিডে দাবা অলিম্পিয়াডে আমাদের পুরুষ ও মহিলারা সোনা জিতেছেন। ২০২৪-এ ডি. গুকেশ কনিষ্ঠতম দাবাড়ু হিসেবে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বিদেশে বসবাসরত আমাদের ভাই ও বোনেরা বিশ্বের নানা প্রান্তে আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে পৌঁছে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের মাধ্যমে তাঁরা আমাদের গর্বিত করছেন।
আমার প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ,
বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য এবং দেশের মাথা উঁচু করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমাদের ভবিষ্যতের মূল চাবিকাঠি রয়েছে তরুণ প্রজন্ম বিশেষত তরুণীদের হাতে। যখন আমরা আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবো, তখন তাঁদের স্বপ্ন আগামীদিনের ভারত গড়ার পথ দেখাবে। ২০৫০-এর ২৬ জানুয়ারি যখন আজকের শিশুরা আমাদের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকাকে কুর্নিশ করবেন, তখন তাঁরা পরের প্রজন্মকে বলবেন, সংবিধান পথ না দেখালে এটি সম্ভব হত না।
আমাদের প্রত্যেককে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। মিশন লাইফের মাধ্যমে ভারত বিশ্বজুড়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমরা ‘এক পেড় মা কে নাম’ নামে এক অনন্য প্রচারাভিযান শুরু করেছি। এর লক্ষ্য ছিল, ৮০ কোটি চারাগাছ রোপণ, যা নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রিয় সহ নাগরিকবৃন্দ,
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আমি আপনাদের সকলকে আবার অভিনন্দন জানাচ্ছি। সীমান্তে প্রহরারত সৈন্য এবং সেইসঙ্গে পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সদস্য, ব্যুরোক্র্যাসি এবং বিদেশে নিযুক্ত আমাদের দূতাবাস কর্মীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ,
জয় হিন্দ !
জয় ভারত !
SC/MP/NS
(Release ID: 2096340)
Visitor Counter : 56
Read this release in:
Odia
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam
,
Assamese
,
English
,
Khasi
,
Urdu
,
Hindi
,
Nepali
,
Marathi
,
Manipuri
,
Bengali-TR
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Telugu