রাষ্ট্রপতির সচিবালয়
azadi ka amrit mahotsav

সাধারণতন্ত্র দিবস-২০২৫এর প্রাক সন্ধ‍্যায় জাতির উদ্দেশে দেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু মহোদয়া প্রদত্ত ভাষণের বাংলা ভাষান্তর অনুবাদ

Posted On: 25 JAN 2025 7:17PM by PIB Agartala

নয়াদিল্লি, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার!

১. এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আপনাদের সকলের সামনে বক্তব্য রাখতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে, আমি আপনাদের সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আজ থেকে পঁচাত্তর বছর আগে, ২৬শে জানুয়ারি, ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রতিষ্ঠাকারী গ্রন্থ, অর্থাৎ ভারতের সংবিধান, কার্যকর হয়।

২. প্রায় তিন বছর ধরে আলোচনার পর, ১৯৪৯ সালের ২৬ শে নভেম্বর সংবিধান সভা এই সংবিধান গ্রহণ করে। এই উপলক্ষে, ২০১৫ সাল থেকে ২৬শে নভেম্বর তারিখটিকে সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

৩. সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন সকল দেশবাসীর জন্য সম্মিলিত আনন্দ এবং গর্বের বিষয়। এটা বলা যেতে পারে যে একটি জাতির ইতিহাসে পঁচাত্তর বছর সময়, চোখের পলক ফেলার মতো সামান্য। কিন্তু আমার মতে, ভারতের গত পঁচাত্তর বছরের প্রেক্ষাপটে, এটা একেবারেই বলা যাবে না। এখন সময় এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঘুমিয়ে থাকা ভারতের আত্মা আবার জেগে উঠেছে আর আমাদের দেশ জগৎসভায় তার সমুচিত স্থান অর্জনের জন্য অগ্রসর হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ভারতকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উৎপত্তিস্থল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু, ভারতকে একটি অন্ধকার সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসনকালে, অমানবিক শোষণের ফলে দেশে চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছিল।

৪. আজকের দিনে, সবার আগে, আমরা সেই শৌর্য বীর্যবানদের স্মরণ করবো যাঁরা বিদেশী শাসনের শৃঙ্খল থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। এদের মধ্যে কোন কোন  স্বাধীনতা সংগ্রামী সম্পর্কে মানুষ সামান্যই জানেন, কিন্তু তাঁদের অনেকের সম্পর্কেই তাঁরা জানতেন না। এবছর, আমরা ভগবান বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছি। তিনি সেই সকল নেতৃস্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন যাঁদের ভূমিকাকে এখন জাতীয় ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

৫.  বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লড়াই একটি সংগঠিত দেশব্যাপী আন্দোলনের রূপ নেয়। এটা দেশের সৌভাগ্য যে মহাত্মা গান্ধী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাবাসাহেব আম্বেদকরের মতো মহান ব্যক্তিত্বরা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্ব কেবল তাত্ত্বিক ধারণা নয়, যেমনটি আধুনিক যুগে আমাদের পরিচিত করা হয়েছে। এই জীবন মূল্যবোধগুলি সর্বদা আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অংশ ছিল। সদ্য স্বাধীন ভারতের সংবিধান এবং সাধারণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে যারা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদেরকে এই জীবনমূল্যবোধের জোরে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করা গেছে।

৬. ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমাদের সংবিধান সভার কাঠামোতেও প্রতিফলিত হয়। সেই সভায় দেশের সকল অংশ এবং সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, সংবিধান সভায় সরোজিনী নাইডু, রাজকুমারী অমৃত কৌর, সুচেতা কৃপালানি, হংসবেন মেহতা এবং মালতী চৌধুরীর মতো ১৫ জন অসাধারণ বিদূষীও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যখন বিশ্বের অনেক অংশে নারীর সমতাকে একটি দূরবর্তী আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হত, তখন ভারতের মহিলারা জাতির ভাগ্য গঠনে সক্রিয়ভাবে অবদান রাখছিলেন।

৭. আমাদের সংবিধান একটি জীবন্ত দলিল হয়ে উঠেছে, কারণ নাগরিকদের নিষ্ঠা, কয়েক শতাব্দী ধরে আমাদের জীবনের নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রীয় উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সংবিধান ভারতীয় হিসেবে আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের মৌলিক ভিত্তি এবং আমাদের একটি পরিবার হিসেবে ঐক্যসূত্রে গাঁথে। গত ৭৫ বছর ধরে, সংবিধান আমাদের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে তুলেছে। আজকের দিনে, আমরা সংবিধান সভার খসড়া কমিটির অধ্যক্ষ ডঃ ভীমরাও আম্বেদকর, সভার অন্যান্য বিশিষ্ট সদস্য, সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাদের কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আমরা এই অসাধারণ গ্রন্থটি পেয়েছি।

 

প্রিয় দেশবাসী,

৮. সংবিধান বাস্তবায়ন পরবর্তী ৭৫ বছরে আমাদের তরুণরা সাধারণতন্ত্রের সর্বাত্মক অগ্রগতির সাক্ষী থেকেছেন। স্বাধীনতার সময় এবং তার পরেও, দেশের বিশাল অংশে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধার পরিস্থিতি অব্যাহত ছিল। কিন্তু, আমাদের আত্মবিশ্বাস কখনও হ্রাস পায়নি। আমরা এমন পরিস্থিতি তৈরি করার সংকল্প নিয়েছি যেখানে প্রত্যেকেরই উন্নয়নের সুযোগ থাকবে। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং আমাদের দেশকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন। আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং আমাদের পরিকাঠামো এবং নির্মাণ ক্ষেত্রকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। তাঁদের অসাধারণ কর্মদক্ষতার ফলে আজ ভারতীয় অর্থনীতি বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছে। আজকের ভারত, বিবিধ আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতৃত্বের স্থান অর্জন করছে। সংবিধানে বর্ণিত রূপরেখা ছাড়া এই ব্যাপক পরিবর্তন সম্ভব হত না।

৯. সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে উন্নত হয়েছে, যা আমাদের যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে, কৃষক ও শ্রমিকদের হাতে আরও বেশি অর্থ তুলে দিয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। সাহসী ও দূরদর্শী অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য আগামী বছরগুলিতেও অগ্রগতির এই গতি অব্যাহত থাকবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি আমাদের অগ্রগতির মূল ভিত্তি, যাতে উন্নয়নের সুফল আরও বেশি সংখ্যক দেশবাসীর কাছে পৌঁছায়।

১০. সরকার আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে, তাই প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা, প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বীমা যোজনা, প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা, মুদ্রা যোজনা, স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া এবং অটল পেনশন যোজনার মতো আর্থিক সহায়তা প্রকল্পগুলিকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়।

১১. এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যে সরকার জনকল্যাণকে একটি নতুন পরিভাষা দিয়েছে, সেই অনুসারে বাসস্থান এবং পানীয় জলের মতো মৌলিক চাহিদাগুলিকে অধিকার হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। নানা বঞ্চিত শ্রেণির জন্য, বিশেষ করে তফসিলি জাতি, তফসিলি জনজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিগুলিকে সাহায্য করার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তফসিলি জাতির যুবকদের জন্য নানা প্রাক মাধ্যমিক  এবং মাধ্যমিক পরবর্তী বৃত্তি, জাতীয় ফেলোশিপ, বিদেশী বৃত্তি, ছাত্রাবাস এবং কোচিং বা প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তফসিলি জাতি অভ্যূদয় যোজনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান এবং আয়ের সুযোগ তৈরি করে তফসিলি জাতিগোষ্ঠীগুলির দারিদ্র্য দ্রুত হ্রাস করা হচ্ছে। তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়গুলির সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে 'ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযান’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রী জনজাতীয় আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান - প্রধানমন্ত্রী-জনমন’ রয়েছে। মুক্ত, যাযাবর এবং আধা-যাযাবর সম্প্রদায়গুলির জন্য একটি 'উন্নয়ন ও কল্যাণ বোর্ড' গঠন করা হয়েছে।

১২. বিগত এক দশকে বিভিন্ন সড়কপথ ও রেলপথ, সমুদ্রবন্দর এবং লজিস্টিক হাব বা সরবরাহগত মজুত ভান্ডারসহ নানা প্রাকৃতিক পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। এর ফলে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হয়েছে যা আগামী দশকগুলিতে উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।

১৩. সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে তা অনুকরণীয়। বিভিন্ন আর্থিক ডিজিটাল লেনদেনের বিকল্পের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর ব্যবস্থা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রথাগত ব্যবস্থার মধ্যে আনা গেছে। এর ফলে, ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব স্বচ্ছতাও এসেছে। এই প্রক্রিয়ায়, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে আমরা একটি শক্তিশালী ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো তৈরি করেছি যা বিশ্বের সেরাগুলির মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে।

১৪. ইনসলভেনসি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোডের বা অস্বচ্ছলতা এবং দেউলিয়াপনা বিধির মতো সাহসী পদক্ষেপের ফলে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে নথিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির অ-কার্যকর সম্পদ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

 

প্রিয় দেশবাসী,

১৫. আমরা ১৯৪৭ সালেই স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, কিন্তু ঔপনিবেশিক মানসিকতার অনেক অবশিষ্টাংশ দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে, আমরা সেই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি। এই ধরণের প্রচেষ্টার মধ্যে, সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় প্রমাণ আইনের পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত। ভারতীয় আইনশাস্ত্রের ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই নতুন আইনগুলিকে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থলে রেখে শাস্তির পরিবর্তে ন্যায়বিচারের চেতনাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, এই নতুন আইনগুলিতে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

১৬. এত বড়ো মাত্রায় সংস্কারের জন্য সাহসী দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন হয়। দেশে একযোগে নির্বাচন পরিচালনার জন্য সংসদে উত্থাপিত বিলটি এমনই আরেকটি প্রচেষ্টা যার মাধ্যমে সুশাসনকে নতুন মাত্রা দেওয়া যেতে পারে। 'এক জাতি এক নির্বাচন' ব্যবস্থা শাসনব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি করতে পারে, নীতি নির্ধারণে জড়তা দূর করতে পারে, সম্পদের অন্যত্র খরচ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারে এবং আর্থিক বোঝা  হ্রাস করতে পারে। এগুলো ছাড়াও জনগন আরও নানাভাবে লাভবান হতে পারে।

 ১৭. আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদের বন্ধন আরও গভীর হয়েছে। এই সময়ে আয়োজিত প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভকে সেই সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের একটি কার্যকর প্রকাশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। আমাদের ঐতিহ্য ও রীতিনীতি সংরক্ষণ করা এবং তাদের মধ্যে নতুন শক্তি সঞ্চার করার জন্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

১৮. ভারত-ভূমি বিশাল ভাষাগত বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এই ঐশ্বর্য রক্ষা এবং এই ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, সরকার অসমীয়া, বাংলা, মারাঠি, পালি এবং প্রাকৃত ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তামিল, সংস্কৃত, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম এবং ওড়িয়া ভাষা ইতিমধ্যেই এই বিভাগে অন্তর্ভুক্ত। সরকার এখন এই ১১টি ধ্রুপদী ভাষায় গবেষণার কাজকে সক্রিয়ভাবে উৎসাহিত করছে।

১৯. আমি খুশি যে গুজরাটের ভাডনগরে ভারতের প্রথম প্রত্নতাত্ত্বিক এক্সপেরিয়েন্সিয়াল মিউজিয়ামের কাজ সম্পন্ন হতে চলেছে। এই জাদুঘরটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের সঙ্গে যুক্ত। এই স্থানে, মানুষের বসতির প্রমাণ প্রায় ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের। এই জাদুঘরে বিভিন্ন যুগের বিভিন্ন ধরণের শিল্প, কারুশিল্প এবং সাংস্কৃতিক উপকরণ প্রদর্শিত হবে।

 

প্রিয় দেশবাসী,

২০. আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্ম আগামীকালের ভারত গড়বে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রতিভা কেবল শিক্ষার মাধ্যমেই বিকশিত হয়। সেজন্য, সরকার শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে এবং শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি মান উন্নত করার জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এখন পর্যন্ত ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক। গত দশকে, শিক্ষার মান, ভৌত পরিকাঠামো এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির নানা মাত্রায় বিরাট পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। আমি জেনে খুশি যে মহিলা শিক্ষকরা এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। গত দশকে নিযুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে মহিলাদের অনুপাত ৬০ শতাংশেরও বেশি।

২১. বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নের সম্প্রসারণ এবং এগুলিকে মূলধারায় নিয়ে আসা একটি স্বাগত-যোগ্য সাফল্য। এই প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে, আমাদের তরুণদের এখন পরিকল্পিতভাবে কর্পোরেট সেক্টরে ইন্টার্নশিপের সুযোগ প্রদান করা হচ্ছে।

২২. স্কুল স্তরের শিক্ষার ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি, আমাদের দেশে শিক্ষার বিভিন্ন শাখায়, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে, নতুন নতুন উচ্চতা অর্জন করা হচ্ছে। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ফাইলিংসের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স বা বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ভারতের স্থান ক্রমাগত উন্নত হয়েছে। ২০২০ সালে, ভারত ৪৮তম স্থানে ছিল। অবস্থানের উন্নতি করে, ২০২৪ সালে, ভারত ৩৯ তম স্থানে উঠে এসেছে।

২৩.  ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করে,  ধারাবাহিক উদ্যোগে আমরা অত্যাধুনিক গবেষণা ক্ষেত্রে আমাদের অংশিদারিত্ব বাড়িয়ে চলেছি। ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশনের (জাতীয় সংখ্যাতত্ত্ব অভিযানের) উদ্দেশ্য প্রযুক্তির এই নতুন ক্ষেত্রে এক প্রাণবন্ত এবং নবীন বাস্তুতন্ত্র বিকশিত করা। আরেকটি উল্লেখযোগ্য সুত্রপাত হল ন্যাশনাল মিশন অন ইন্টারডিসিপ্লিনারি সাইবার ফিজিক্যাল সিস্টেম। এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স এবং সাইবার নিরাপত্তা সহ বেশ কয়েকটি উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলিকে কিছুদিন আগেও ফিউচারিস্টিক (ভবিষ্যৎমুখী) মনে করা হতো, কিন্তু এখন সেগুলি দ্রুত আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠছে।

২৪.  জিনোম ইন্ডিয়া প্রকল্প যেমন প্রকৃতির রহস্য অন্বেষণের ক্ষেত্রেই একটি চিত্তাকর্ষক অভিযান, এটি ভারতীয় বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী অধ্যায়ও। এর প্রধান কর্মসূচির আওতায় এই মাসেই ১০,০০০ ভারতীয়র জিনোম সিকোয়েন্সিং-কে অনুসন্ধানের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। জ্ঞানের নতুন নতুন মাত্রা উন্মোচনকারী এই প্রকল্পটি জৈবপ্রযুক্তি গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং জনস্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।

২৫. ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- ইসরো সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মহাকাশ বিজ্ঞান ক্ষেত্রে অনেক বড়ো সাফল্য অর্জন করেছে। চলতি মাসে, ইসরো সফল স্পেস ডকিং পরীক্ষার মাধ্যমে দেশকে আরেকবার গর্বিত করেছে। ভারত এখন এধরনের সক্ষমতা অর্জনকারী হিসেবে গোটা বিশ্বে চতুর্থ দেশ হয়ে উঠেছে।   

২৬. একটি দেশ হিসেবে আমাদের ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাস নানা ক্রীড়াঅঙ্গনেও প্রতিফলিত হচ্ছে, আমাদের খেলোয়াড়রা রোমাঞ্চকর সাফল্যের আখ্যান রচনা করে চলেছেন। গতবছর, আমাদের খেলোয়াড়রা বিভিন্ন অলিম্পিক ক্রীড়ায় ভালো ফল করেছে। প্যারাঅলিম্পিক খেলায় আমরা এখন পর্যন্ত নিজেদের সর্ববৃহৎ দল পাঠিয়েছিলাম, যাঁরা সর্বকালের সেরা সাফল্যের নজির স্থাপন করেছেন। ফিডে দাবা অলিম্পিয়াডে আমাদের দাবাড়ুরা বিশ্ববাসীকে নিজেদের সাফল্যের মাধ্যমে প্রভাবিত করেছেন, পুরুষ ও মহিলা দাবাড়ুরা স্বর্ণপদক জিতেছেন। ২০২৪-এ ডি গুকেশ, এখন পর্যন্ত  কনিষ্ঠতম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন।      

২৭. সারা দেশে তৃণমূল স্তরে নানা প্রশিক্ষণ পরিষেবায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে আর এর ফলে আমাদের ক্রীড়াবিদরা বিজয়ী হয়ে আমাদের গর্বিত করেছেন। পাশাপাশি, তাঁরা আগামী প্রজন্মকে আরও উচ্চতর লক্ষ্য স্থির করতে অনুপ্রাণিত করেছেন।

 

২৮২৮. বিদেশে বসবাসকারী আমাদের ভাই- বোনেরা আমাদের সংস্কৃতি  ও সভ্যতার সবচাইতে উজ্জ্বল দিকগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন, আর অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সাফল্যের মাধ্যমে আমাদের গর্বিত করেছেন। তাঁরা সবসময় নিজেদের ভারতের গৌরবগাথার সঙ্গে জুড়ে রেখেছেন। যেমন, এই মাসের শুরুতে প্রবাসী ভারতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আমি বলেছিলাম, ২০৪৭ এর মধ্যে  উন্নত ভারত গঠনে তাঁদের সক্রিয় এবং উদ্দীপনাময় অংশগ্রহণ নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী।   

 

প্রিয় দেশবাসী,

২৯. বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ভিত্তিতেই আমরা নিজেদের মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের তরুণরা, বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা দেশের উজ্জ্বল  ভবিষ্যত নির্মাণ করবেন। আমরা যখন আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবো, তখনকার ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আমাদের তরুণদের স্বপ্নে সাকার হয়ে উঠছে। আর আজকের শিশুরা যখন ২০৫০এর  ২৬শে জানুয়ারিতে জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করবে, তখন তাঁরা তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে বলে যাবে যে, আমাদের দেশের গৌরবযাত্রা, আমাদের অতুলনীয় সংবিধান থেকে পাওয়া পথনির্দেশ ছাড়া সম্ভব হতো না।   

 

৩০. আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বমঞ্চে স্বাধীন ভারতের আদর্শগুলিকে চরিতার্থ করবে। আমি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর বার্তা উল্লেখ করতে চাই। বাপু বলেছিলেন -

‘যদি স্বরাজ্যের অভিপ্রায় আমাদের সভ্য করা এবং আমাদের সভ্যতাকে শুদ্ধ ও স্থায়ী করে তোলা না  হয়, তাহলে এর কোনও মূল্যই নেই। আমাদের সভ্যতার মূল কথা হলো আমরা আমাদের সকল ক্ষেত্রে, তা সে রাজনৈতিক হোক বা ব্যক্তিগত, নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে। ’      

৩১. আসুন, আজকের দিনে আমরা গান্ধীজীর স্বপ্নগুলিকে সাকার করার জন্য নিজেদের দায়বদ্ধতাকে পুনরুচ্চারণ করি। তাঁর সত্য এবং অহিংসার আদর্শ, বিশ্ববাসীর জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকবে। তিনি আমাদের আরও শিখিয়েছেন যে অধিকার এবং কর্তব্য একই মুদ্রার দুটি দিক মাত্র। প্রকৃতপক্ষে, কর্তব্যই অধিকারের প্রকৃত উৎস। সকলের প্রতি করুণা সম্পর্কে তাঁর শিক্ষাগুলিও আমরা স্মরণ করবো। তিনি বলতেন যে, আমাদের মনে শুধু মানুষের জন্যই নয়, বরং আমাদের আশেপাশের পশু- পাখি, গাছপালা, নদী ও পাহাড়গুলির জন্যও সমবেদনার ভাব থাকা উচিত।

৩২. আমাদের প্রত‍্যেকের কর্তব্য হল জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টায় অবশ‍্যই অবদান রাখতে হবে। এই প্রেক্ষিতে দু’টো অনুকরণীয় উদ‍্যোগের উদাহরণ রয়েছে। বিশ্বস্তরে ভারত মিশন লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট- নামক একটি গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর উদ্দেশ্য পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নে প্রত্যেক ব‍্যক্তি ও সম্প্রদায়গুলিকে অধিক সক্রিয় হতে অনুপ্রাণিত করা। গত বছর, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে, আমরা আমাদের মাতৃশক্তির পাশাপাশি জীবনদায়িনী প্রকৃতি মায়ের পরিচর্যার ক্ষমতাকে সম্মান জানিয়ে ‘এক পেড় মা কে নাম’ (মায়ের নামে একটি গাছ) বার্তাসহ একটি অনন্য অভিযান শুরু করেছি। এই অভিযানে নির্ধারিত সময়সীমার অনেক আগেই আশি কোটি গাছের চারা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বিশ্ববাসী, এমন অভিনব উদ্যোগগুলি থেকে নিজেদের আন্দোলনরূপে গ্রহণ করতে পারে। 

 

প্রিয় দেশবাসী,

৩৩. আমি, আরেকবার, আপনাদের সবাইকে সাধারণতন্ত্র দিবসের অভিনন্দন জানাই। আমি আমাদের সীমান্তে প্রহরারত সৈনিকদের পাশাপাশি পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস‍্যদেরও সীমানার ভেতরকার অংশকে নিরাপদ রাখার জন‍্য অভিনন্দন জানাই। বিচার বিভাগ, বিভিন্ন অসামরিক পরিষেবা বিভাগ এবং বিদেশে আমাদের দূতাবাসগুলিতে কর্মরত কর্মীদেরও অভিনন্দন জানাই। আমার শুভকামনা, আপনারা সবাই নিজেদের সমস্ত উদ্যোগে সাফল্য অর্জন করুন।

ধন‍্যবাদ!

জয়হিন্দ!

জয় ভারত!

 

SKC/SB/PS/KMD


(Release ID: 2096288) Visitor Counter : 61


Read this release in: English