প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

কার্গিলে দীপাবলি উদযাপনকালে জওয়ানদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 24 OCT 2022 2:23PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ অক্টোবর ২০২২

 

ভারতমাতার জয়!

ভারতমাতার জয়!

শৌর্য ও সাহসিকতার জন্য সুপরিচিত কার্গিল ভূমিকে অভিবাদন জানানোর জন্য আমার বারবারই এখানে আসতে ইচ্ছা করে দেশের বীর সন্তানদের আকর্ষণে। আপনারাই হলেন আমাদের চিরকালীন পরিবার। আপনাদের সঙ্গে থেকে দীপাবলি উদযাপন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। আমার দীপাবলি উদযাপনের আলোর উৎস হল এই ভূমি এবং তা আমাকে আগামী বছরের দীপাবলির জন্য আবার আগ্রহের সঙ্গেই অপেক্ষা করিয়ে রাখে। দীপাবলির দিন আমার আনন্দ এবং উৎসাহ-উদ্দীপনা কিন্তু আপনাদের ঘিরেই। একদিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান যে সীমান্ত এলাকায় আপনাদের সঙ্গে দীপাবলি উদযাপনের সুযোগ আমি পেয়েছি। এখানে একদিকে যেমন রয়েছে দেশের সার্বভৌম এই সীমান্ত এলাকা, তেমনই অন্যদিকে রয়েছে দেশের সম্মান রক্ষায় জীবন উৎসর্গীকৃত সেনানীরা। একদিকে যেমন আমরা স্পর্শসুখ লাভ করি আমাদের মাতৃভূমির, অন্যদিকে তেমনই এখানে রয়েছেন আমার বীর ও তরুণ বন্ধুরা যাঁরা এখানকার মাটি তাঁদের কপালে তিলক চিহ্ন হিসেবে এঁকে নেন। আমার বীর সৈনিকরা! এর থেকে আর কোন জায়গায় আমি এত ভালো করে দীপাবলি উদযাপন করতে পারতাম বলুন? আমাদের মতো অসামরিক নাগরিকদের আতসবাজির সঙ্গে আপনাদের আতসবাজির রয়েছে বিস্তর ফারাক। এই দুটির মধ্যে কখনই তুলনা চলে না!

বন্ধুগণ,

শৌর্য-বীর্যের কাহিনী ছাড়াও আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে এক মধুরতার স্পর্শ। ভারতে তাই উৎসব উদযাপিত হয় ভালোবাসার মধ্য দিয়ে। ভারত এই উৎসব পালন করে সমগ্র বিশ্বকে সঙ্গে নিয়েই। আজ এই দীপাবলির দিন সকল দেশবাসীকে জানাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন। একইভাবে, সকল জওয়ানদের মাঝে উপস্থিত থেকে কার্গিলের এই বিজয় ভূমি থেকে আমি অভিনন্দন জানাই বিশ্ব নিখিলকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমন একটিও যুদ্ধ হয়নি যেখানে কার্গিল থেকে বিজয় পতাকা উত্তোলিত হয়নি। বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে আলোর এই উৎসব সমগ্র বিশ্বকে শান্তির পথ দেখিয়েছে। এটাই হল ভারতের অন্তরোৎসারিত একান্ত বাসনা।

বন্ধুগণ,

দীপাবলি হল সন্ত্রাসকে পরাভূত করার এক বিশেষ উদযাপন, সন্ত্রাসকে নির্মূল করার এক উৎসব পালন। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে কার্গিলে। এখানে আমাদের সেনাবাহিনী চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছে সন্ত্রাসকে। সেই বিজয়কে দেশবাসী কিভাবে উদযাপন করেছে তার স্মৃতি এখনও তাঁদের মধ্যে জাগরূক। সেই বিজয়ের সাক্ষী থেকেছি আমিও। বেশ কয়েক বছর আগের আমার ছবিও তাতে ফুটে উঠেছে। আপনাদের সঙ্গে আমার সময় কাটানোর মুহূর্তকে ধরে রাখা হয়েছে ঐ ছবিগুলির মধ্যে। সেই ছবির দিকে তাকিয়ে আমি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলাম। দেশের বীর সেনাদের সঙ্গে আমার সেই মুহূর্তগুলিকে এইভাবে ক্যামেরাবন্দী করে রাখার জন্য আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। কার্গিল যুদ্ধের সময় দেশের জওয়ানরা যখন শত্রুপক্ষকে উচিৎ জবাব দিয়েছিল, আমার সৌভাগ্য যে তখন আমি তাঁদের মধ্যে উপস্থিত ছিলাম। দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে কর্তব্য আমাকে টেনে এনেছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। সেনাবাহিনীর জন্য দেশ যে ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছিল, তাই আমরা এখানে বহন করে এনেছিলাম। আমাদের সকলের কাছেই তা ছিল এক ব্রত পালনের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষ ঈশ্বরের প্রতি নিষ্ঠাবান। কিন্তু আমার কাছে সুযোগ এসেছিল আপনাদের মতো সেনানীদের অর্ঘ্য নিবেদনের। আপনারা তখন আমাদের সামনে ছিলেন দেশপ্রেমের রঙে আঁকা দেবতুল্য মানুষ। সেই সময় থেকেই অনেক স্মৃতিই জমে আছে আমার মধ্যে যা আমি কোনদিনই ভুলতে পারব না। মনে হয়, তা যেন বিজয় ঘোষণার বিউগল ধ্বনি যা প্রতিধ্বনিত হয় চারদিকেই। তখন উচ্চারিত হয় একটিই কথা – ‘মন সমর্পিত, তন সমর্পিত। অউর ইহ জীবন সমর্পিত। চাহতা হুঁ দেশ কী ধরতী তুঝে কুছ অউর ভি দুঁ!’ অর্থাৎ, মন সমর্পিত, দেহও সমর্পিত, উৎসর্গীকৃত আমার জীবন। আমি আমার মাতৃভূমিকে এর থেকেও আরও বেশি কিছু দিতে প্রস্তুত।

বন্ধুগণ,

যে দেশকে আমরা পূজা করি, অর্থাৎ আমাদের ভারত কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ একটি দেশ মাত্র নয়। আমাদের ভারত হল এক জীবিত সত্ত্বা। শ্বাশত অস্তিত্বের মধ্যে বিরাজমান অবিনশ্বর এক চেতনা। ‘ভারত’ - এই কথাটি যখন আমরা উচ্চারণ করি, এক শ্বাশত সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে আমাদের সামনে। শৌর্য-বীর্যের এক উত্তরাধিকার সততই বহমান ভারতভূমিতে। এক অমিত শক্তির ঐতিহ্য তার সমস্ত ঔজ্জ্বল্য নিয়ে প্রতিভাত হয় আমাদের সামনে। এই স্রোতোধারার কোনো ছেদ নেই, কোনো বিরতি নেই। একদিকে সুউচ্চ হিমালয় এবং অন্যদিকে ভারত মহাসাগর – এই দুইয়ের মধ্যে তা সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছে। অতীতে ঝড়-ঝঞ্ঝা প্রতিনিয়ত বিশ্বের নতুন নতুন সভ্যতাকে গ্রাস করে নিয়েছে। সেই সভ্যতা একদিন কালের গহ্বরে বিলীনও হয়ে গেছে। কিন্তু ‘ভারত’ নামের সেই অস্তিত্বের বহমান ধারা আজও রয়ে গেছে অবিকৃত ও শ্বাশত। আমার প্রিয় সেনারা, একটি জাতি কখন অমরত্ব লাভ করে? যখন তার সন্তানরা এবং অবশ্যই তার নির্ভীক পুত্র ও কন্যারা আত্মবলীয়ান হয়ে ওঠেন। নিজেদের শক্তির সম্পদে তাঁরা হয়ে ওঠেন আস্থাশীল। একটি জাতি তখনই অমরত্ব লাভ করে যখন তার সেনাবাহিনী হয়ে ওঠে শিখর হিমাদ্রির মতোই উন্নত শির। একটি জাতি তখনই অমরত্ব লাভ করে যখন তার অস্তিত্ব সম্পর্কে উচ্চারিত হয় এই কথাটি –

‘চলন্তু গিরয়ঃ কামং যুগান্ত পবনাহতাঃ।

কৃচ্ছেরোপী ন চলয়েতেব ধীরানাং নিশ্চলং মনঃ।।’

এর অর্থ হল, কালের করাল গ্রাসে সুউচ্চ পর্বতমালাও এক সময় হার স্বীকার করে। কিন্তু, আপনাদের মতো বীর সেনারা সকল সময়েই দৃঢ়, অবিচল অথচ সতত চঞ্চল। সুতরাং, আপনাদের বাহুবল হিমালয়ের উচ্চতাকেও পরাভূত করতে পারে। আপনাদের নিষ্ঠার মানসিকতা মরুভূমির কাঠিন্যকেও জয় করতে পারে। অসীম নীলাকাশ ও অতলস্পর্শী সাগরও আপনাদের সাহসিকতার কাছে পরাভব মানতে বাধ্য। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এই সাহস ও বীরত্বের সাক্ষী হয়ে রয়েছে কার্গিলের যুদ্ধক্ষেত্রটি। দ্রাস, বাতালিক এবং টাইগার হিল এই ঘটনারই সাক্ষ্য বহন করে যে পর্বতের শিখরে দণ্ডায়মান শত্রুপক্ষ ভারতীয় সেনাদের শৌর্য ও বীর্যের কাছে নিছক পৌত্তলিক ছাড়া আর কিছুই নয়। যে দেশের রয়েছে অনন্ত শৌর্যের অধিকারী এক সেনাবাহিনী তার অস্তিত্ব কেন হবে না মৃত্যুহীন, অবিচল ও শ্বাশত।

বন্ধুগণ,

দেশের সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব আপনাদের ওপর। আপনারাই হলেন দেশের প্রতিরক্ষার শক্তিশালী স্তম্ভ। আপনাদের জন্যই দেশবাসী শান্তিতে নিদ্রা যেতে পারেন। দেশ তখনই নিরাপদ থাকে যখন তার সীমান্ত হয় সুরক্ষিত, তার অর্থনৈতিক বনিয়াদ হয় সুদৃঢ় এবং সমাজের মধ্যে প্রতীয়মান হয় আত্মবিশ্বাসের দৃঢ়তা। যখনই আপনারা শোনেন যে সীমান্ত সুরক্ষিত থাকার কারণে দেশ এখন বেশ শক্তিশালী, তখনই আপনাদের সকলের সাহস বৃদ্ধি পায় বহুগুণ। দেশবাসী যখন পরিচ্ছন্নতার অভিযানে সামিল হয়, দরিদ্রতম মানুষটিও তখন একটি পাকা বাড়ির মালিক হতে পারেন। তাঁদের কাছে যখন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানীয় জল দ্রুত পৌঁছে যায়, তখন গর্ববোধ করে দেশের প্রত্যেকটি জওয়ানও। সীমান্ত প্রহরার কাজে সে নিযুক্ত থাকলেও তাঁর গ্রামে, তাঁর পরিবারে এই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে যাওয়ার কারণে সে হয়ে ওঠে গর্বিত। সংযোগ ব্যবস্থার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সহজেই পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সে তখন অনেকটাই খুশি হয়ে ওঠে।

বন্ধুগণ,

দেশের অর্থনীতি যখন ৭-৮ বছরের মধ্যেই দশম স্থান থেকে পঞ্চম স্থানে উন্নীত হয়, আমি জানি যে তখন আপনারাও সত্যিই গর্ববোধ করেন। আপনাদের মতো তরুণ বন্ধুরা যখন দেশের সীমান্ত পাহারা দিয়ে চলেছেন, তখন আপনাদের অন্যান্য বন্ধুবান্ধব দেশে ৮০ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ সংস্থা গড়ে তুলেছেন, সেই খবরে আপনারাও উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন। মাত্র দু’দিন আগেই দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় ইসরো একইসঙ্গে ৩৬টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। দেশের এই সাফল্যে আমার বীর সৈনিক বন্ধুরাও নিশ্চয়ই গর্বিত হয়ে ওঠেন। কয়েক মাস আগে ইউক্রেনে যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা লক্ষ্য করেছি যে আমাদের প্রিয় ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা সেখানে আটকে পড়া ভারতীয়দের সুরক্ষিত থাকতে সাহায্য করেছে। ভারতের এই গৌরবময় ভূমিকা আজ বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভারত বর্তমানে ঘরে-বাইরে শত্রুর মোকাবিলা করে চলেছে। একদিকে যেমন আপনারা হলেন সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী, অন্যদিকে তেমনই দেশের ভেতরের শত্রুদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। সন্ত্রাসকে নির্মূল করার কাজে একের পর এক সফল প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। গত কয়েক দশক ধরে নকশালবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক সময় দেশের এক বৃহত্তর অংশকে গ্রাস করেছিল নকশালদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ। কিন্তু সেই শক্তি এখন ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। একইভাবে, দেশ এখন লড়াই করে চলেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। দুর্নীতি যতই শক্তি সঞ্চয় করুক না কেন, পরাজয় তার সুনিশ্চিত। সুপ্রশাসনের অভাব এক সময় দেশের সম্ভাবনাকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যেই সীমিত রেখেছিল। ফলে, তা হয়ে উঠেছিল দেশের উন্নয়নের পথে এক বিশেষ অন্তরায়। কিন্তু আজ ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াস’ – এই মন্ত্রকে সম্বল করে অতীতের সমস্ত ভুলভ্রান্তিকে আমরা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছি। কঠোর সিদ্ধান্ত এখন বাস্তবায়িত হয় দ্রুততার সঙ্গেই এবং এই কাজ করা হয় জাতীয় স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই।

বন্ধুগণ,

সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতের যুদ্ধের প্রকৃতিও যেন প্রযুক্তির হাত ধরে ক্রমশ পরিবর্তিত হচ্ছে। এই নতুন যুগে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দেশের সেনাবাহিনীর শক্তিও যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, জাতীয় প্রতিরক্ষার স্বার্থে নতুন নতুন পদ্ধতি ও অন্যান্য কৃৎকৌশলও তেমনই উদ্ভাবিত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মধ্যে সংস্কার প্রচেষ্টার কথা চিন্তা করা হয়েছিল বহু দশক ধরেই। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হচ্ছে এই সময়েই। দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলির মধ্যে উন্নততর সমন্বয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল রকম পদক্ষেপই আমরা গ্রহণ করছি। যে কোনো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো পথ ও উপায় আমরা এখন খুঁজে পেয়েছি। এই কারণেই সৃষ্টি করা হয়েছে সিডিএস-এর মতো একটি পদও। সীমান্ত অঞ্চলে আধুনিক পরিকাঠামোর এক নেটওয়ার্কও গড়ে তোলা হচ্ছে যাতে আমাদের সেনাবন্ধুরা আরও সহজভাবে, আরও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে তাঁদের কর্তব্য পালন করতে পারেন। দেশের নানা স্থানে স্থাপন করা হচ্ছে সৈনিক স্কুলও। এই স্কুলগুলিতে মিলিটারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও খোলা হয়েছে দেশের কন্যা-সন্তানদের জন্য। আজ এখানে আমার সামনে তাঁদের মুখও আমি দেখতে পাচ্ছি। এজন্য খুবই গর্ববোধ হচ্ছে আমার। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কন্যা-সন্তানরা যোগ দেওয়ার পর দেশের সামরিক শক্তিও আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীদিনেও তা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

বন্ধুগণ,

দেশের নিরাপত্তার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল এক আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার সুচিন্তিত ভাবনা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তুলে দেওয়ার বিষয়টিও এই আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার ভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত অস্ত্র ও পন্থাপদ্ধতি পরিহার করে যেভাবে আমরা স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে চলেছি, তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের তিনটি বাহিনীই আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার শপথ গ্রহণ করেছে। তারা স্থির করেছে যে ৪০০-রও বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করার পরিবর্তে এখন থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এবং দেশেই উৎপাদিত অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম ব্যবহার করা হবে। এর ইতিবাচক দিকটি হল দেশে উৎপাদিত সাজসরঞ্জাম ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে জওয়ানদের আত্মবিশ্বাসও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

‘ব্রাহ্মস’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ‘প্রচণ্ড’-এর মতো লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং ‘তেজস’-এর মতো ফাইটার জেটগুলি ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তির সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের রয়েছে ‘বিক্রান্ত’-এর মতো একটি অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজও। সমুদ্রের নিচে থেকে যুদ্ধবিগ্রহ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের রয়েছে ‘আরিহান্ত’, ‘পৃথ্বী’ এবং ‘আকাশ’-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র। শত্রুপক্ষের যুদ্ধাস্ত্র ধ্বংস করে দেওয়ার মতো ‘তাণ্ডব’, ‘ত্রিশূল’ ও ‘পিনাক’ও রয়েছে আমাদের হাতে। শত্রুপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ভারতে রয়েছে ‘অর্জুন’-এর মতো বীর যোদ্ধা। ভারত তার সেনাবাহিনীর জন্য যুদ্ধাস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম উৎপাদনের মধ্যেই নিজের ক্ষমতাকে সীমিত রাখেনি। এ দেশে উৎপাদিত যুদ্ধাস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের নিরিখে ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। এছাড়াও, ‘ড্রোন’ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রচেষ্টার সঙ্গে ভারত নিজেকে যুক্ত করেছে।

প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক থেকে আমরা যুদ্ধের বিরোধী। আমাদের শৌর্য-বীর্যের ঐতিহ্য এবং সামাজিক মূল্যবোধের কারণে যুদ্ধকে আমরা শেষ অস্ত্র হিসেবেই বেছে নিয়ে থাকি। লঙ্কা বা কুরুক্ষেত্র, যেখানেই যুদ্ধবিগ্রহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছি তা নিরস্ত করার। কারণ, আমরা বরাবরই বিশ্ব শান্তির পক্ষে এবং যুদ্ধের বিপক্ষে। কিন্তু, শক্তি সঞ্চয় না করলে শান্তিও প্রতিষ্ঠিত হয় না।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশ তথা প্রতিরক্ষা শক্তির কাছে একটি বড় অন্তরায় হল দাসত্বের মানসিকতা। দেশ বর্তমানে এই মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে শুরু করেছে। বহুকাল ধরেই আমাদের রাজধানীতে রাজপথ ছিল দাসত্বের এক প্রতীক। কিন্তু আজ তা ‘কর্তব্য পথ’ নামে নামাঙ্কিত। এর মধ্য দিয়ে এক নতুন ভারত গড়ে তোলার আত্মবিশ্বাসকে আমরা আরও দৃঢ় করতে চেয়েছি। ইন্ডিয়া গেট এক সময় ছিল ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রতীক। আজ আমরা সেখানে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস-এর একটি বিরাট প্রতিমূর্তি স্থাপন করেছি। জাতীয় যুদ্ধস্মারক, জাতীয় পুলিশ স্মারক, বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ এখন থেকে জাতির সুরক্ষায় আমাদের আরও বেশি করে অনুপ্রাণিত করবে। এগুলি হয়ে উঠবে এক নতুন ভারতের প্রতীক চিহ্ন। ভারতীয় নৌ-বাহিনীকেও এখন দাসত্বের প্রতীক মুক্ত করা হয়েছে। অসমসাহসী এবং বীর যোদ্ধা শিবাজীর শৌর্য-বীর্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নৌ-বাহিনীর পতাকায় এক নতুন প্রতীক চিহ্ন যোগ করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

সারা বিশ্ব এখন তাকিয়ে রয়েছে ভারতের সম্ভাবনাগুলির দিকে। ভারত যত শক্তিশালী হয়ে উঠছে, শান্তির আশাও তত জেগে উঠছে। ভারত যত শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সমৃদ্ধির সম্ভাবনাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের শক্তি বৃদ্ধির অর্থ বিশ্বের ভারসাম্যহীনতাকে দূর করা। স্বাধীনতার এই অমৃতকাল ভারতের এই শক্তিরই সাক্ষ্য বহন করবে। আপনাদের মতো বীর সৈনিকদের পালন করতে হবে আরও বড় একটি ভূমিকা কারণ, আপনারাই হলেন ভারতের গর্ব।

ভারতমাতার জয়!

ভারতমাতার জয়!

ভারতমাতার জয়!

বন্দে মাতরম!

বন্দে মাতরম!

বন্দে মাতরম!

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে

 

PG/SKD/DM/


(Release ID: 1870991)