প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

নতুন দিল্লিতে পিএম-কিষাণ সম্মান সম্মেলন ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 17 OCT 2022 4:36PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর, ২০২২

ভারত মাতা কি – জয়,

ভারত মাতা কি – জয়,

ভারত মাতা কি – জয়,

সর্বত্র উৎসবের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে, দরজায় কড়া নাড়ছে দীপাবলি এবং আজ এই একই প্রাঙ্গণে, একই প্ল্যাটফর্মে, স্টার্ট আপ – এর উদ্যোগীরা এবং দেশের লক্ষ লক্ষ কৃষকও রয়েছেন। জয় জওয়ান, জয় কিষাণ, জয় বিজ্ঞান এবং জয় অনুসন্ধান - একভাবে, এই অনুষ্ঠান, এই মন্ত্রের একটি জীবন্ত রূপ এখানে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

আজ, ভারতের কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট অনেকে, দেশের প্রতিটি প্রান্তে এই অনুষ্ঠানে সরাসরি এবং কার্যকরিভাবে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম থেকে, আজ কৃষকদের জীবনকে আরও সহজ করা, কৃষকদের আরও সমৃদ্ধ করা এবং আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করার লক্ষ্যে অনেক বড় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আজ, দেশে ৬০০টিরও বেশি প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্র চালু হচ্ছে। আমি শুধু এখানে যে প্রদর্শনী দেখছিলাম. সেখানে এরকম অনেক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন রয়েছে; তাই ভাবছিলাম, ওখানে আরেকটু থাকি। কিন্তু উৎসবের মরসুম, বেশি থামা উচিৎ নয়, তাই মঞ্চে উঠলাম। কিন্তু সেখানে আমি এই প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্র তৈরির একটি মডেল দেখেছি; আমি সত্যিই মনসুখ ভাই এবং তাঁর দলকে অভিনন্দন জানাই যে কৃষকদের জন্য শুধুমাত্র সার ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র নয়, পুরো সামগ্রিকতা নিয়ে এটি একটি কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কৃষকের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে, তাঁদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য তার প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে – এই কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

কিছুক্ষণ আগেই দেশের কোটি কোটি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে পিএম কিষাণ সম্মান নিধির ১৬ হাজার কোটি টাকার আরেক কিস্তি জমা পড়েছে। আপনাদের মধ্যে যে কৃষকরা এখানে বসে রয়েছেন, তাঁরা যদি নিজের মোবাইল ফোনটি দেখেন, তা হলে দেখবেন ইতোমধ্যেই আপনার অ্যাকাউন্টে ২ হাজার টাকা জমা পড়ার মেসেজ এসে গেছে। কোনও দালাল নয়, কোনও কোম্পানি নয়, সরাসরি আমার কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যায়। দীপাবলির আগে এই টাকা পাওয়ার জন্য কৃষি বাবদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে এই সহায়তা পাওয়ার জন্য আমি সমস্ত উপকৃত কৃষক পরিবারকে দেশের নানা প্রান্তে বসে থাকা সমস্ত কৃষক ও তাঁর পরিবারবর্গকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

এখানে যত স্টার্টআপ শিল্পোদ্যোগীরা বসে আছেন, স্টার্টআপ – এর যে প্রদর্শন উপলক্ষে তাঁরা এসেছেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য তাঁরা যে নতুন নতুন উদ্ভাবন করেছেন, কৃষকদের পরিশ্রম কিভাবে লাঘব হবে, তা সুনিসচিত করতে আমাদের নবীন প্রজন্মের স্টার্টআপ শিল্পোদ্যোগীরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আমি ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। প্রতিটি উদ্ভাবনই অসাধারণ। এই উদ্ভাবনগুলির জন্য আজ কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া আমার এই নবীন প্রজন্মের ভাই ও বোনেদের আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, আর এই আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য আন্তরিকভাবে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই।

বন্ধুগণ,

আজ ‘এক জাতি, এক সার’ রূপে কৃষকদের সুলভে উন্নত মানের ‘ভারত ব্র্যান্ড’ সার সরবরাহের যে প্রকল্প শুরু হ’ল, তা কৃষকদের কাজে লাগবে। ২০১৪ সালের আগে সারের যোগান কত বড় সঙ্কট হয়ে উঠেছিল। কিভাবে ইউরিয়া কালোবাজারি হ’ত, কিভাবে কৃষকদের অধিকার হরণ করা হ’ত, আর পরিবর্তে কৃষকদের লাঠি খেতে হ’ত। এটা আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা কোনও দিনও ভুলতে পারবেন না। অনেক বছর আগেই দেশে বড় বড় ইউরিয়া কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ, একটি নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গিয়েছিল - সার আমদানী করো আর নিজের পকেট ভরো। সেজন্য কারখানাগুলি বন্ধ হলে এক শ্রেণীর মানুষের আনন্দ পাওয়ারই কথা। আমরা সরকারে আসার পর একদিকে ১০০ শতাংশ ইউরিয়াকে নিম আচ্ছাদিত করিয়ে ইউরিয়ার কালোবাজারি বন্ধ করি। অন্যদিকে, অনেক বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা দেশের সবচেয়ে বড় ৬টি ইউরিয়া কারখানা আবার চালু করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি।

বন্ধুগণ,

এখন তো ইউরিয়া উৎপাদনে আত্মনির্ভরতার জন্য ভারত দ্রুতগতিতে লিকুইড ন্যানো ইউরিয়া উৎপাদনের পথে এগিয়ে চলেছে। এই ন্যানো ইউরিয়া কম খরচে অধিক উৎপাদনশীলতাকে সুনিশ্চিত করে। আগে যাঁদের এক বস্তা ইউরিয়া কিনতে হ’ত, তাঁদের এখন একটি ন্যানো ইউরিয়ার একটি বোতল কিনলেই হয়ে যায়। এটাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাফল্য। আর সেজন্য কৃষকরা ইউরিয়ার বস্তা পরিবহণের খরচ, পরিশ্রম ও বাড়িতে রাখার জায়গা – এইসব থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এখন আপনারা বাজারে গিয়ে অন্য জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি, দু-এক বোতল ন্যানো ইউরিয়া কিনে পকেটে রেখে দিলেন – ব্যস!

সার ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে আমাদের যত প্রচেষ্টা তা দুটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। প্রথম পরিবর্তনটি হ’ল আজ থেকে সারা দেশে ৩ লক্ষ ২৫ হাজারেরও বেশি সারের দোকানকে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সমৃদ্ধি কেন্দ্র রূপে বিকশিত করার অভিযান চালু করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলিতে শুধু সার নয়, উন্নত মানের অধিক ফলনশীল বীজ, অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম যেমন পাওয়া যাবে, তেমনই মাটির গুণমান পরীক্ষা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য কৃষকরা এক জায়গায় পাবেন।

আমাদের কৃষক ভাই-বোনদের আর এখন কৃষি সংক্রান্ত এই বিবিধ বিষয়ের জন্য নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হবে না। আমার কৃষক ভাইদের এই মুক্তির আশ্বাসের পাশাপাশি, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আমরা এনেছি, যেটি সম্পর্কে একটু আগেই আমাদের নরেন্দ্র সিং তোমারজী আপনাদের বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে বুঝিয়েছেন। সেই পরিবর্তন হ’ল – সারের ব্র্যান্ড, তার নাম এবং উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার গুণমান সম্পর্কিত। এখনও পর্যন্ত এই কোম্পানিগুলির প্রচারাযাভিনের কারণে সেই এলাকায় যাঁরা বিভিন্ন সার বিক্রি করতেন, তাঁরা যে কোম্পানি থেকে যত বেশি কমিশন পেতেন, সেই ব্র্যান্ডের সারই বেশি বেচতেন। ফলে, কৃষকরা প্রয়োজন অনুসারে যথাযথ গুণমানসম্পন্ন সার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন। এই প্রতিযোগিতা ও ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকার ফলে কৃষকরা বিক্রেতা এজেন্টদের খামখেয়ালিপনার শিকার হতেন। কখনও তো প্রতিবেশী বা অন্যান্য কারও প্ররোচনায় তাঁদের একই কাজের জন্য দ্বিগুণ খরচ করতে হ’ত।

ডিএপি, এমওপি, এনপিকে – কোন কোম্পানির সার তাঁরা কিনবেন, এ নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। এক ব্র্যান্ড থেকে অন্য ব্র্যান্ড সার কেনার ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, অর্থ সাশ্রয়ের চিন্তা, উৎপাদনশীলতা নিয়ে ভাবনায় কখনও বিভ্রান্ত হয়ে তাঁরা বেশি খরচ করে ফেলতেন। এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এখন ‘এক দেশ, এক সার’ – এর ভাবনা নিয়ে কৃষকদের সবধরনের ভ্রম থেকে মুক্তি দিতে চলেছি। এখন ভারতের যে কোনও প্রান্তে যান, একই রকম গুণমানসম্পন্ন ‘ভারত ব্র্যান্ড’ – এর ইউরিয়া পাবেন। ব্র্যান্ড একটা হলে কোম্পানির নাম নিয়ে প্রতিযোগিতা আর সারের উৎকর্ষ ও ব্যবহারের পরিমাণ নিয়ে সমস্ত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে কৃষকরা মুক্তি পাবেন। এর ফলে, সারের দাম যেমন কমবে, সারা দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার পেতে কোনও অসুবিধা হবে না।

বন্ধুগণ,

আজ আমাদের দেশের প্রায় ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র কৃষক, যাঁদের ১-২ হেক্টরের বেশি জমি নেই। শুধু তাই নয়, সময়ের সঙ্গে যখন পরিবার শাখা-প্রশাখায় বাড়ে, তখন সেই ছোট জমিও আরও ভাগ হয়ে যায়। এর উপর রয়েছে সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সমস্যা। দীপাবলি তো এসে গেছে, কিন্তু এখনও বৃষ্টি বন্ধ হচ্ছে না।

বন্ধুগণ,

তেমনই মাটিতে কোনও সমস্যা থাকলে ধরিত্রী মাতা যদি অসুস্থ থাকেন, তা হলে তার উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পায়। তেমনই জলে যদি কোনও সমস্যা থাকে, তা হলেও উৎপাদনশীলতা কমে। কৃষকরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে এসব সমস্যায় অসহায় হয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতিতে কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের কৃষিতে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। খোলা মনে অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তিকে আপন করে নিতে হবে। এই ভাবনা নিয়েই আমরা কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছি। আজ দেশের ২২ কোটি কৃষককে ইতিমধ্যেই মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা তাঁদের মাটির গুণমান সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পেতে পারেন। একইভাবে, ভালো গুণমানসম্পন্ন বীজ যাতে তাঁরা পান, সেজন্যও সচেতনভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। বিগত ৭-৮ বছরে ১ হাজার ৭০০-রও বেশি এমন বৈচিত্র্যসম্পন্ন বীজ কৃষকদের দেওয়া হয়েছে, যা পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে অধিক উৎপাদন সুনিশ্চিত করছে।

আমাদের দেশে যে পারম্পরিক মোটাদানার শস্য পাওয়া যায়, সেগুলির বীজের গুণমান বৃদ্ধির জন্যও অনেক হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। ভারতীয় কৃষকদের মোটাদানার শস্য উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় আগামী বছর গোটা বিশ্বে ‘মোটাদানার শস্যের আন্তর্জাতিক বর্ষ’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আগামী এক – দেড় বছর ধরে সারা পৃথিবীতে আমাদের দেশে উৎপাদিত মোটাদানার শস্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা হবে। এটা আপনাদের সামনে একটা বড় সুযোগ। আপনারা ভেবে নিন কিভাবে বিশ্বের বাজারে পৌঁছবেন।

বিগত ৮ বছরে দেশে সেচ নিয়ে যত নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে আপনারা সবাই অবহিত। আমাদের দেশে আগে কৃষি ক্ষেত্রকে জলে টইটম্বুর করে রাখার প্রচলন ছিল। কোনও গাছের অঙ্কুর শীস যদি জলের বাইরে বেরিয়ে পড়তো, তা হলে সেই ক্ষেতকে আরও জলে ডুবিয়ে পুকুরের মতো করে দেওয়া হ’ত। এতে বিপুল পরিমাণ জল যেমন নষ্ট হ’ত, মাটির উৎপাদনশীলতাও হ্রাস পেত। আমরা কৃষকদের মন থেকে সেই ভাবনা সরিয়ে ‘প্রতি বিন্দুতে অধিক ফসল’, ‘ক্ষুদ্র সেচ’ – এর উপর অনেক বেশি জোর দিচ্ছি। স্প্রিংক্লার ব্যবহার করে বিন্দু বিন্দু জলসেচের উপরও জোর দিচ্ছি।

আগে আমাদের আখচাষীরা বিশ্বাসই করতেন না যে, কম জলে আখের চাষ হতে পারে। এখন এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, স্প্রিংক্লারের মাধ্যমে বিন্দু বিন্দু জলসেচ করিয়ে জল সাশ্রয় যেমন হয়, তেমনই আখের উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। যে পশুকে বেশি জল খাওয়ানো হয়, সে বেশি দুধ দেয় বলে আখের ক্ষেতে সেচে বেশি জল ব্যবহার করলেই ভালো ফসল হবে – একথা ঠিক নয়। গত ৭-৮ বছরে দেশের প্রায় ৭০ লক্ষ হেক্টর জমিকে ক্ষুদ্র সেচের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভবিষ্যতের সমস্যাগুলি সমাধানের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হ’ল প্রাকৃতিক চাষ। এর জন্য সারা দেশে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন আমরা অনুভব করছি। প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে গুজরাট, হিমাচল প্রদেশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের পাশাপাশি, উত্তরাখন্ডের কৃষকরাও ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে কাজ করছেন। গুজরাটে তো প্রাকৃতিক কৃষি নিয়ে জেলা ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও অনেক প্রকল্প চালু হয়েছে। বিগত বছরগুলিতে এই প্রাকৃতিক কৃষিজাত শস্য, ফল ও সব্জির বাজার যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, তা থেকে উৎসাহিত হয়ে এর উৎপাদনও অনেক গুণ বেড়েছে।

বন্ধুগণ,

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষকদের উপকৃত করতে পিএম কিষাণ সম্মান নিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সরাসরি প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই টাকা দিয়ে তাঁরা সহজেই বীজ, সার ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম কিনতে পারছেন। এভাবে পিএম কিষাণ নিধি যে সারা দেশের কৃষকদের অনেক দুশ্চিন্তা লাঘব করেছে, তা আমরা কৃষকদের মুখ থেকেই শুনেছি।

বন্ধুগণ,

আজ উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রের সঙ্গে বাজারের দূরত্ব লাঘবের ক্ষেত্রেও আমরা সফল হয়েছি। এর ফলেও আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকরাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন, বিশেষ করে যাঁরা ফল, সব্জি, দুধ ও মাছের মতো দ্রুত পচনশীল পণ্য ‘কিষাণ রেল’ এবং ‘কৃষি উড়ান হাওয়াই সেবা’ বাজারে পৌঁছে দিতে পারছেন। এই আধুনিক পরিষেবাগুলি আজ কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রকে সারা দেশের বড় বড় শহরের বড় বাজার ও বিদেশের বাজারগুলির সঙ্গেও যুক্ত করছে।

পরিণাম-স্বরূপ, কৃষি ক্ষেত্রে রপ্তানী বেড়েছে, নতুন নতুন দেশে রপ্তানী বেড়েছে। রপ্তানী ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় ১০টি দেশের অন্যতম। গত দু’বছর করোনা সঙ্কটকালে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের দেশের কৃষি রপ্তানী ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

গুজরাট থেকে প্রচুর পরিমাণে কমলম ফল, যাকে পাহাড়ি ভাষায় ড্রাগন ফ্রুট বলা হয়, তা এখন বিদেশের বাজারে যাচ্ছে। হিমাচল প্রদেশ থেকে কালো রসুন, আসাম থেকে বার্মিজ আঙুর, লাদাখ থেকে খুবানি, জলগাঁও-এর কলা, ভাগলপুরের জরদারি আম – এরকম অনেক ফল প্রথমবার বিদেশে রপ্তানী হয়েছে। ‘এক জেলা, এক পণ্য’ – এর মতো প্রকল্পগুলির মাধ্যমে এ ধরনের পরিবেশ অনুকূল ফসল উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। আজ জেলাস্তরেও এক্সপোর্ট হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

বন্ধুগণ,

বিশ্ব বাজারে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সরবরাহ ক্ষেত্রেও আমাদের অংশীদারিত্ব এখন গুণীতক হারে বাড়ছে। ফলে, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের মূল্য বেশি পাওয়ার পথ খুলছে। এই প্রথম উত্তরাখন্ডের মোটাদানার শস্য ডেনমার্কে রপ্তানী হয়েছে। তেমনই কর্ণাটকের অর্গানিক জ্যাকফ্রুট পাউডারও বিশ্ব বাজারে রপ্তানী হচ্ছে। এক্ষেত্রে ত্রিপুরাও কোমর বেঁধে এগোচ্ছে। এই সমস্ত বীজ আমরা গত ৮ বছর ধরে বপণ করেছি, যার ফসল এখন পাকতে শুরু করেছে।

বন্ধুগণ,

আপনারা ভাবুন, আমি কিছু পরিসংখ্যান দিচ্ছি। এ থেকেই বোঝা যাবে যে উন্নয়ন আর পরিবর্তন কিভাবে আসে। ৮ বছর আগে সারা দেশে মাত্র ২টি বড় ফুড পার্ক ছিল, আজ সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সমস্ত এফপিও বা কৃষক উৎপাদক সংঘ আর বোনেদের পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এক্ষেত্রে অধিক অংশগ্রহণ করে। হিমঘর, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানীর মতো প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে আমাদের ক্ষুদ্র কৃষকরা যাতে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন, তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের সরকার চেষ্টা করে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বীজ থেকে বাজার পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবর্তন এনে আমরা সম্পূর্ণ ব্যবস্থাকে বদলে দিচ্ছি। আমাদের কৃষি মান্ডিগুলিকেও আধুনিক করে তোলা হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা বাড়িতে বসেই দেশের যে কোনও মান্ডিতে যাতে তাঁদের ফসল বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য ই-ন্যাম অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করছে। এই ই-ন্যাম এর সঙ্গে ইতিমধ্যেই দেশের ১ কোটি ৭৫ লক্ষেরও বেশি কৃষক এবং আড়াই লক্ষেরও বেশি ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। আর আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন এর মাধ্যমে হয়েছে। আপনারা হয়তো লক্ষ্যে করেছেন যে, দেশের গ্রামের জমি-বাড়ির মানচিত্রায়নের মাধ্যমে কৃষকদেরকে প্রপার্টি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। এই কাজ ত্বরান্বিত করতে আমরা ড্রোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি সাহায্য নিচ্ছি।

বন্ধুগণ,

কৃষিকে আরও লাভজনক করে তুলতে আমাদের স্টার্টআপগুলি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন যুগের সূচনা করেছে। আজ এখানেও বিপুল সংখ্যায় স্টার্টআপ শিল্পোদ্যোগীরা রয়েছেন। আজ থেকে ৮ বছর আগে দেশে মাত্র শ-খানেক স্টার্টআপ কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করতো। আর আজ সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজারেরও বেশি হয়েছে। ভারতের নবীন প্রজন্মের মেধাবী যুবক-যুবতীরা নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে ভারতীয় কৃষি তথা দেশের নতুন গ্রামীণ অর্থনীতির ভবিষ্যতকে নতুনভাবে গড়ে তুলছেন। বিনিয়োগ থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহণ পর্যন্ত প্রতিটি সমস্যার সমাধানে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

এখন দেখুন, ‘কিষাণ ড্রোন’ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের জীবন আরও সহজ হবে। কোথাকার মাটি কেমন, তার জন্য কোন সার ব্যবহার প্রয়োজন, কি ধরনের সেচ পদ্ধতি দরকার, মাটির কোনও অসুখ থাকলে কি ওষুধ ব্যবহার করতে হবে –  তা অনুমান ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধ স্প্রে করতে ড্রোন কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে, স্প্রে এবং সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমবে, কৃষকদের শরীর ক্ষতিকারক রাসায়নিকের কুপ্রভাব থেকে বাঁচবে, এমনকি ফসলের উৎপাদনও বাড়বে।

ভাই ও বোনেরা,

আজ আপনাদের সামনে আরেকটি বড় সমস্যার কথা তুলে ধরতে চাই। দেশকে সবরকমভাবে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য আমরা যেভাবে মিশন মোডে কাজ করছি, এক্ষেত্রে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র এবং কৃষকদের ভূমিকা কী হবে? আজ দেশে যে জিনিসগুলি আমদানী করতে আমাদের সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয়, তা হ’ল – ভোজ্যতেল, সার এবং অপরিশোধিত তেল। এগুলি কিনতে প্রতি বছর দেশের কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। আর যেসব দেশ থেকে আমরা এগুলি আমদানী করি, সেখানে কোনও সমস্যা হলে এর কুপ্রভাবও আমাদের উপর পড়ে।

করোনা সঙ্কটকালে নানা প্রতিকূলতার সমাধান খুঁজতে আমাদের হয়রান হতে হয়েছিল। আর করোনা সঙ্কট পুরোপুরি কাটার আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আর যেসব জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে, সেখান থেকে আমরা অনেক জিনিস আমদানী করতাম। কাজেই যুদ্ধের কুপ্রভাবে আমরাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছি। যেমন – সারের কথাই ধরুন। ইউরিয়া, ডিএপি ইত্যাদি সারের দাম এখন বিশ্ব বাজারে এত দ্রুত বাড়ছে যে, আমাদের দেশকে অনেক আর্থিক বোঝা বহন করতে হচ্ছে। আজ আমরা বিদেশের বাজার থেকে ৭৫-৮০ টাকা দরে ইউরিয়া কিনি। কিন্তু, আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের উপর যাতে কোনও চাপ না পড়ে, তা সুনিশ্চিত করতে সেই ইউরিয়া আমরা মাত্র ৫-৬ টাকা কেজি দরে আমাদের কৃষকদের দিচ্ছি। কৃষকদের কম দামে সার সরবরাহের জন্য সরকারি রাজকোষ থেকে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়, সেই পরিমাণ টাকা অনেক উন্নয়নের কাজকে আটকে দিচ্ছে। এ বছর শুধু ইউরিয়া কেনার পেছনে কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

আমদানী ক্ষেত্রে এই খরচ কমাতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেশকে আত্মনির্ভর করে তোলার সংকল্প নিতে হবে। সবাই মিলে সেই পথে চলতে হবে, যাতে বিদেশ থেকে খাদ্য ও কৃষির জন্য কম জিনিস আমদানী করতে হয় সেই সংকল্প করতে হবে। অপরিশোধিত তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রেও রপ্তানী নির্ভরতা কমাতে দেশে জৈব জ্বালানী ইথানল উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশের কৃষকরা এর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন। কৃষকদের উৎপাদিত ইথানল দিয়ে এখন গাড়ি চলছে। বর্জ্য ও গোবর থেকে উৎপাদিত বায়ো গ্যাস দিয়ে বায়ো সিএনজি উৎপাদনের কাজ চলছে। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য আমরা ‘মিশন অয়েল পাম’ শুরু করেছি।

আজ আমি সমস্ত কৃষক বন্ধুদের অনুরোধ জানাই যে, আপনারা এই মিশনে অংশগ্রহণ করে লাভবান হন। তিল শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা ভোজ্যতেলের আমদানী কমাতে পারি। আমাদের দেশের কৃষকরা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সক্ষম। ২০১৫ সালে আমি আপনাদের অনুরোধ জানিয়েছিলাম, ডালশস্যের উৎপাদন বাড়াতে আপনারা আমার অনুরোধকে শিরোধার্য করে দেশকে ডালশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। না হলে, আগে আমাদের বিদেশ থেকে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে ডাল কিনতে হ’ত। কিন্তু, আমাদের কৃষকরা প্রায় ৭০ শতাংশ ডাল উৎপাদন বাড়িয়েছেন। একই রকম ইচ্ছাশক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ভারতের কৃষিকে আরও আধুনিক করে তুলতে হবে, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার অমৃতকালে কৃষিকে আমরা আরও আকর্ষণীয় ও সমৃদ্ধ করে তুলব। এই সঙ্কল্প নিয়ে আমার সমস্ত কৃষক ভাই-বোনদের ও স্টার্টআপ – এর সঙ্গে যুক্ত সমস্ত শিল্পোদ্যোগী যুবক-যুবতীদের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

PG/SB/SB



(Release ID: 1868927) Visitor Counter : 259