প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

পানিপথে দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানল কারখানা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী


“জৈব জ্বালানী হচ্ছে প্রকৃতি রক্ষার সদর্থক”

“জৈব জ্বালানী আমাদের কাছে সবুজ এবং প্রকৃতি রক্ষক জ্বালানী”

“রাজনৈতিক স্বার্থপরতা এবং শর্টকাটের রাজনীতি কখনই কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না”

“দান ধ্যানে স্বার্থপর ঘোষণা দেশকে কখনই স্বয়ম্ভর করতে পারবে না, সৎ আয়করদাতাদের ওপর তা এক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে এবং নতুন প্রযুক্তি বিনিয়োগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে”

“আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই দেশের ৭৫ শতাংশ ঘরই পাইপ বাহিত গ্যাস পাবে”

Posted On: 10 AUG 2022 6:20PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ১০  আগস্ট, ২০২২


বিশ্ব জৈব জ্বালানী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হরিয়ানার পানিপথে আজ দ্বিতীয় প্রজন্মের ইথানল কারখানা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। হরিয়ানার রাজ্যপাল শ্রী বান্দারু দত্তাত্রেয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমর, শ্রী হরদীপ সিং পুরী, শ্রী রামেশ্বর তেলী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
 
বিশ্ব জৈব জ্বালানী দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। ইথানল কারখানাকে একটা সূচনা হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিল্লি, হরিয়ানা এবং জাতীয় রাজধানী এলাকায় এই কারখানা দূষণ কমাতে সমর্থ হবে। ২০২২এর কমনওয়েলথ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় হরিয়ানার ছেলেমেয়েরা অসাধারণ সাফল্যের নজির গড়ায় প্রধানমন্ত্রী হরিয়ানাকে সাধুবাদ জানান।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ প্রকৃতির উপাসনা করে। জৈব জ্বালানী হল প্রকৃতি উপাসনার নামান্তর। আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা এটা আরও ভালো বুঝবেন। জৈব জ্বালানীর অর্থ হল সবুজ জ্বালানী, প্রকৃতি রক্ষার জ্বালানী। এই আধুনিক কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হরিয়ানায় যেখানে প্রচুর পরিমানে চাল ও গমের ফলন হয়ে থাকে সেখানকার কৃষকরা ফসলের অবশিষ্টাংশ লাভদায়ক উপায়ে ব্যবহার করতে পারবে।
 
পানিপথে এই জৈব জ্বালানী কারখানা তৈরি হওয়ার ফলে ফসলের অবশিষ্টাংশকে পুড়িয়ে না ফেলে বরং তার সদ্ব্যবহার করা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর বহুবিধ সুফল রয়েছে। প্রথম সুবিধা হল আমাদের ধরিত্রী ফসল পোড়ানোর ব্যথা থেকে রেহাই পাবে। দ্বিতীয় সুবিধা হল ফসলের অবশিষ্টাংশকে কাটা এবং তুলে ফেলার জন্য নতুন পরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে এই গ্রামগুলিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে আসবে। তৃতীয় সুবিধা এই যে ফসলের অবশিষ্টাংশ যা চাষিদের কাছে বোঝা স্বরূপ, তারা সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে এবং তাদের অতিরিক্ত আয়ের পথ প্রশস্ত করবে। চতুর্থত এর সুবিধা হল দূষণ হ্রাস পাবে এবং প্রকৃতি রক্ষায় চাষিদের অবদান আরও বৃদ্ধি পাবে। আর পঞ্চমত এর সুবিধার দিক হল, দেশ বিকল্প জ্বালানী পাবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই জাতীয় কারখানা তৈরি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থপরতার জন্য সমস্যা এড়াতে কাটছাঁটের পথকে বেছে নেওয়া কখনই কোনো সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারে না। তিনি বলেন, এই জাতীয় কাটছাঁট অল্প কিছু সময়ের জন্য তালি কুড়াতে পারে এবং রাজনৈতিক সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু কখনই সমস্যার সমাধান করতে পারে না। তিনি বলেন, এই কাটছাঁটের পন্থা অবলম্বনের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল শর্ট সার্কিট। কাটছাঁটের পন্থা না নিয়ে আমাদের সরকার বরং সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চাই। ফসলের অবশিষ্টাংশের ব্যবহার বছরভর অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু এই শর্টকাটের মানসিকতা কখনই তার সমাধান করতে পারে না।
 
সর্বাত্মক উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের পদ্ধতির কথা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। কৃষক উৎপাদক সংগঠন (এফপিও) তাদেরকে ‘পারালি’র জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে, ফসলের অবশিষ্টাংশ তুলে ফেলার জন্য যে যন্ত্র সামগ্রীর দরকার সেক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। এখন নতুন কারখানা এই সমস্যার এক স্থায়ী সমাধান করতে পারবে। তিনি বলেন, “এই ‘পারালি’কে পুড়িয়ে ফেলার বাধ্যবাধকতা থেকে কৃষকরা দুর্নাম কুড়িয়েছিল এখন সেই কৃষকরা দেশ গড়ার কাজে জৈব জ্বালানী উৎপাদন করছে বলে গর্ব অনুভব করতে পারবে।” গোবর্ধন যোজনাকেও প্রধানমন্ত্রী বিকল্প আয়ের পন্থা বলে উল্লেখ করেন।
 
দেশের জন্য এই সমস্যা থেকে মুক্তির দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নতুন সার কারখানা, ন্যানো সার এবং ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে নতুন লক্ষ্যের কথা জানান।
 
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, পেট্রোলের সঙ্গে ইথানলের মিশ্রণ ঘটানোয় গত ৭-৮ বছরে দেশ থেকে বাইরে চলে যাওয়া প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এবং ইথানলের মিশ্রণের জন্য সমপরিমান টাকা আমাদের দেশের কৃষকরা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ৮ বছর আগে আমাদের দেশে ৪০ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদন হত। বর্তমানে এই উৎপাদন প্রায় ৪০০ কোটি লিটার। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ২০১৪ পর্যন্ত আমাদের দেশে কেবলমাত্র ১৪ কোটি এলপিজি গ্যাস সংযোগ ছিল। দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা মা এবং বোনেরা রান্নাঘরের ধোঁয়ায় দিন কাটাতো। এটা যে তাঁদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারন হতো এবং কন্যা ও বোনেদের এই অসুবিধার প্রতি যথাযথ নজর দেওয়া হয়নি। কেবলমাত্র উজ্জ্বলা যোজনাতেই দরিদ্র মহিলাদের ৯ কোটিরও বেশি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “দেশে আমরা এখন প্রায় ১০০ শতাংশ এলপিজি-র আওতাধীন আনতে পেরেছি। দেশে ১৪ কোটি গ্যাস সংযোগ থেকে বেড়ে এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩১ কোটিতে।”
 
প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন ৮ বছর আগে যেখানে কেবলমাত্র ৮০০ সিএনজি স্টেশন ছিল এখন তা প্রায় সাড়ে চার হাজার ছাপিয়ে গেছে। ১ কোটিরও বেশি ঘরে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছাচ্ছে। তিনি বলেন, “আজ যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছি তখন দেশ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোচ্ছে যে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ৭৫ শতাংশেরও বেশি ঘরে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস পৌঁছে যাবে।”
 
তিনি বলেন, রাজনীতিতে যদি স্বার্থপরতা থাকে তাহলে যে কেউ ক্ষমতায় এসে বিনামূল্যে পেট্রোল, ডিজেলের কথা বলতে পারে। ফলস্বরূপ যা দাঁড়াবে তা হল আমাদের শিশুদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে এবং দেশের স্বনির্ভর হওয়ার পথে তা বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। স্বার্থপর রাজনীতির ফলে সৎ আয়করদাতাদের ওপরে বোঝা আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশ যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে সেজন্য দরকার স্বচ্ছ উদ্দেশ্য এবং দায়বদ্ধতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য দরকার কঠোর পরিশ্রম, নীতি এবং প্রচুর বিনিয়োগ।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের যদি টাকা না থাকে তাহলে ইথানল, জৈব গ্যাস এবং সোলার কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা যদি বা না থাকি দেশ কিন্তু এগিয়ে যাবে। আমাদের সন্তানরা কিন্তু থাকবে। দেশের স্বাধীনতার স্বার্থে যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের মধ্যে দেশের জন্য চিরন্তন এই চেতনা বিরাজ করেছে...। আমাদের শপথ নিতে হবে যে আমরা ওই জাতীয় হীন মানসিকতা কোনোভাবেই বাড়তে দেবো না। দেশের এ এক যৌথ দায়বদ্ধতা।”
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমৃত মহোৎসবে যখন ত্রিবর্ণ পতাকায় সারা দেশকে আঁকা হয়েছে তখন কিছু যে একটা ঘটছে সে ব্যাপারে দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে আমাদের। আমাদের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীকে অবমাননা করতে এই মহৎ অনুষ্ঠানকে কলঙ্ক লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। এই জাতীয় লোকেদের মানসিকতা বোঝাটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন আমাদের দেশে এমন বেশ কিছু মানুষ রয়েছেন যারা এই নেতিবাচক মানসিকতা এবং হতাশার আবর্তে বাঁধা পড়ে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা লেপন করার পর মানুষ আর তাদেরকে বিশ্বাস করতে চান না। মরিয়া হয়ে তারা তখন কালো জাদুর আশ্রয় নেয়। প্রধানমন্ত্রী ৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে এই কালো জাদুর মানসিকতা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। তিনি এই বলে শেষ করেন যে কালো পোষাক পরে যারা ভাবছেন যে তাদের কালো জাদু এবং তাদের কু-সংস্কারমূলক বিশ্বাস দিয়ে মানুষকে তাক লাগাবেন, তাদের মনে রাখতে হবে কোনোদিনই মানুষ তাদের বিশ্বাস করবে না।
 
প্রেক্ষাপট
 
দেশের জৈব জ্বালানীর ব্যবহার এবং উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে দীর্ঘ একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে এই কারখানা জাতীর উদ্দেশে উৎসর্গ করা তারই এক অংশ। জ্বালানী ক্ষেত্রকে মূল্য সাশ্রয়কারী, সহজলভ্য, দক্ষ এবং স্থায়ী করে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর যে নিরলস প্রচেষ্টার এটা এক অঙ্গ।
 
ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড ৯০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে দ্বিতীয় প্রজন্মের এই ইথানল কারখানা তৈরি করেছে। আইওসিএল-এর পানিপথ শোধনাগারে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অত্যাধুনিক এই কারখানা ভারতের বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। বার্ষিক প্রায় ২ লক্ষ টন ধানের খড় (পারালি) থেকে বার্ষিক ৩ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদন করা যাবে। ফসলের অবশিষ্টাংশকে ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে কৃষকদের স্বাধীকার অর্জন এবং তাদের অতিরিক্ত আয়ের পথ প্রশস্ত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এই প্রকল্প থেকে কারখানার উৎপাদন কাজে যুক্ত মানুষদের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হবে। তার পাশাপাশি ধানের খড় কাটা, তা মজুত করা, তা বয়ে নিয়ে আসা এসবের মধ্যে দিয়ে অপ্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
 
এই প্রকল্পে তরল নিষ্কাশণ প্রায় হবেই না এবং ধানের খড় (পারালি) পোড়ানো হ্রাস পাওয়ার ফলে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমন যা প্রায় বার্ষিক ৩ লক্ষ কার্বন ডাই অক্সাইডের সমপরিমাণ তা হ্রাস পাবে। দেশের রাস্তায় বার্ষিক ৬৩ হাজার গাড়ি কম চলার সুফলের সমপরিমান হিসেবে যা চিহ্নিত করা যেতে পারে।
 
 
PG/AB/NS



(Release ID: 1852352) Visitor Counter : 165