প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জার্মানির বার্লিনে প্রবাসী ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের কমিউনিটি রিসেপশনে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের বঙ্গানুবাদ
Posted On:
02 MAY 2022 11:59PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২ মে, ২০২২
ভারতমাতা কী জয়!
নমস্কার!
এটা আমার সৌভাগ্য যে আজ জার্মানিতে এসে ভারতমাতার সন্তানদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আপনাদের সবার সঙ্গে মিলিত হয়ে খুব ভালো লাগছে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই জার্মানির ভিন্ন ভিন্ন শহর থেকে আজ এখানে বার্লিনে এসে পৌঁছেছেন। আজ সকালে আমি খুবই আশ্চর্য হয়েছিলাম যে, …এখানে শীতকাল এখন, ভারতে এই দিনগুলিতে এখন অনেক গরম, কিন্তু এখানে এত ঠান্ডা সত্ত্বেও ভোরবেলা ৪-৪-৩০ মিনিট নাগাদ এই ছোট ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আপনারা এখানে এসে পৌঁছেছেন। আপনাদের এই ভালোবাসা, আপনাদের এই আশীর্বাদ, আমার অনেক বড় শক্তি। আমি আগেও জার্মানি এসেছি। আপনাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গে আগেও দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। আপনাদের মধ্যে অনেকে যখন ভারতে গেছেন তখন তাঁদের সঙ্গেও দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। আমি এখানে দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের নতুন প্রজন্ম, আমাদের ইয়ং জেনারেশনের প্রতিনিধিরা এখানে অত্যন্ত বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়েছেন, আর এর কারণ হিসেবে আমি বলবো, যুবক – যুবতিদের মনে যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা থাকে তা তো আছেই, কিন্তু আপনারা নিজেদের ব্যস্ত সময় থেকে সময় বের করে এখানে এসেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের সবার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। একটু আগেই আমাদের দেশের রাষ্ট্রদূত বলছিলেন যে এখানে সংখ্যার নিরিখে ভারতীয়দের সংখ্যা কম, জার্মানিতে ভারতীয়দের সংখ্যা কম কিন্তু, আপনাদের ভালোবাসায় কোনও খামতি নেই, আপনাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনায় কোনও খামতি নেই, আর এই দৃশ্য আজ যখন ভারতের মানুষ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেখছেন, তখন তাঁদের মনও গর্বে ভরে উঠছে বন্ধুগণ।
সাথীগণ,
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে নিজের কথা বলতে আসিনি, এমনকি মোদী সরকারের কথাও বলতে আসিনি। কিন্তু আমার ইচ্ছা করছে যে মন খুলে আপনাদের সঙ্গে কোটি কোটি ভারতবাসীর সামর্থ্য নিয়ে কথা বলি, তাঁদের গৌরব গান করি, তাঁদের গীত গাই, আর যখন আমি কোটি কোটি ভারতবাসীর কথা বলছি, তখন শুধু তাঁদের কথা বলছি না, যাঁরা ওখানে থাকেন, আমি তাঁদের কথাও বলছি যাঁরা আপনাদের মতো বিদেশে থাকেন। আমার এই কথাগুলি বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্তে বসবাসকারী ভারতমাতার সন্তানদের উদ্দেশে বলা। আজ আমি সবার আগে জার্মানিতে অত্যন্ত মর্যাদা ও সাফল্যের সঙ্গে ভারতের পতাকাকে উঁচুতে তুলে ধরার জন্য আপনাদের মতো সকল ভারতবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর এই সময়টি ভারতের জন্য, আমাদের মতো সকল ভারতবাসীর জন্য আর বিশেষ করে আমাদের নবীন প্রজন্মের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। আজ ভারত অনেক সাফল্যের ক্ষেত্রে দৃঢ় নিশ্চয় হয়ে উঠেছে, আর ভারতবাসীও সেসব ক্ষেত্রে প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে। ভারত আজ সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আজ ভারত জানে কোথায় যেতে হবে, কিভাবে যেতে হবে, আর কবে পর্যন্ত কতদূর যেতে হবে। আর আপনারাও জানেন যে যখন কোনও দেশ স্থির নিশ্চিত হয়ে লক্ষ্যপূরণের চেষ্টা করে, তখন সেই দেশ নতুন পথেও চলতে শুরু করে, আর নিজেদের ঈপ্সিত গন্তব্য জয় করেও দেখায়। আজকের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত – অ্যাসপিরেশনাল ইন্ডিয়া, আজকের যুব ভারত, দেশের দ্রুত উন্নয়ন চায়। আজকের ভারত জানে যে এর জন্য রাজনৈতিক স্থিরতা এবং প্রবল ইচ্ছাশক্তি কতটা প্রয়োজনীয়, কতটা অনিবার্য – এ সবকিছুই আজকের ভারত খুব ভালোভাবে বোঝে এবং সেজন্যই ভারতের জনগণ তিন দশক ধরে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতার বাতাবরণ ছিল, ২০১৪ সালে তাঁরা একটি বোতাম টিপে তার অবসান ঘটিয়ে দিয়েছেন। তারপর, ভারতের ভোটাররা বিগত ৭-৮ বছর ধরে টের পাচ্ছেন যে তাঁদের ভোটের শক্তি কতটা, আর সেই একটি ভোট ভারতকে কিভাবে বদলে দিতে পারে সেটা অনুভব করছেন। ইতিবাচক পরিবর্তন এবং দ্রুত উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষাই তাঁদেরকে ২০১৪ সালে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতাসম্পন্ন সরকার নির্বাচনে উৎসাহ যুগিয়েছে, আর দীর্ঘ ৩০ বছর পর এমনটা হয়েছে।
এটা ভারতের মহান জনতার, এটাই ভারতের মহান জনতার দূরদৃষ্টির ফল যে ২০১৯-এ তাঁরা দেশের সরকারকে আগের বারের থেকেও বেশি শক্তিশালী সংখ্যাধিক্য দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। ভারতকে চতুর্দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ধরনের দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণকারী সরকার প্রয়োজন, ঠিক সেরকম সরকারকেই ভারতের জনগণ শাসন ক্ষমতা অর্পণ করেছেন। আমি জানি বন্ধুগণ যে আকাঙ্ক্ষার কত বড় আকাশ আজ আমাদের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমি এটাও জানি যে আপ্রাণ পরিশ্রম করে, নিজেদের উৎসর্গ করে, কোটি কোটি ভারতবাসীর সহযোগিতায়, সেই কোটি কোটি ভারতবাসীর নেতৃত্বে ভারত নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। ভারত এখন আর সময় নষ্ট করবে না, ভারত এখন আর সময় হারাবে না। আজ এটি কেমন সময়, এই সময়ের সামর্থ্য কেমন, আর এই সময় পাওয়া কতটা মূল্যবান তা এখন ভারত খুব ভালোভাবেই জানে।
বন্ধুগণ,
এ বছর আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পালন করছি। আমিই দেশের প্রথম এমন প্রধানমন্ত্রী যে স্বাধীন ভারতে জন্মগ্রহণ করেছি। যখন দেশ তার স্বাধীনতার ১০০তম বর্ষ পূর্তি পালন করবে, তখন এই দেশ যে উচ্চতা স্পর্শ করবে, সেই লক্ষ্য নিয়েই আজ ভারতের সরকার কাজ করছে। শতবর্ষ পূর্ণ হতে আমাদের হাতে ২৫ বছর সময় রয়েছে। আমরা অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপে, একের পর এক দৃপ্ত পদসঞ্চারে, দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,
ভারতের কখনও চেষ্টার ত্রুটি ছিল না, আর ভারতের কখনও সম্পদেরও অভাব ছিল না। স্বাধীনতার পর দেশ একটি পথ ঠিক করে, একটি দিশা নিশ্চিত করে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে যত পরিবর্তন আসা উচিৎ ছিল, যত দ্রুতগতিতে সেই পরিবর্তনগুলি আসা উচিৎ ছিল, আর এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যত ব্যাপক হওয়া উচিৎ ছিল, কোনও না কোনও কারণে আমাদের দেশে তা হয়নি, আমরা কোথাও পেছনে রয়ে গিয়েছি। বিদেশি শাসকরা বছরের পর বছর ধরে যেভাবে ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাসকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিল, সেখান থেকে দেশের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার একটাই পথ ছিল, সেটা হল আরও একবার ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে তোলা, প্রত্যেকের মন আত্মগৌরবে ভরিয়ে তোলা, আর সেজন্য সরকারের প্রতি জনগণের ভরসা রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের পরম্পরা মেনে চলায়, সরকার এবং জনগণের মধ্যে ভরসার ক্ষেত্রে একটি অনেক বড় ফাঁটল তৈরি হয়েছিল, সন্দেহের কালো মেঘ ঘনিভূত হয়ে উঠেছিল। কারণ, ব্রিটিশ শাসকরা দেশকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলেন, স্বাধীন দেশের নতুন সরকার সেই অবস্থায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা অবশ্যই করেছে, কিন্তু সে জন্য যে গতিতে কাজ করার দরকার ছিল, তাদের সেই গতির অভাব ছিল। সেজন্য সময়ের চাহিদা ছিল যে সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারের ভূমিকাকে ন্যূনতম করে তোলা, সরকারের কর্তৃত্ব হ্রাস করা। প্রয়োজন ছিল ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’-এর। প্রয়োজন ছিল যেখানে দরকার, শুধু সেখানেই যেন সরকারের উপস্থিতি থাকে, যাতে কোনও অভাব না থাকে, কিন্তু যেখানে প্রয়োজন নেই, সেখানে সরকারের প্রভাবও থাকা উচিৎ নয়।
বন্ধুগণ,
যখন দেশের সাধারণ মানুষ নিজেরাই উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব প্রদান করেন, তখনই দেশ এগিয়ে যায়। যখন দেশের মানুষ এগিয়ে এসে উন্নয়নের লক্ষ্য স্থির করেন, তখনই দেশ এগিয়ে যায়। যেমন এখন আজকের ভারতে সরকার নয়, মোদী নয়, দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষই ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ হয়ে উঠেছেন, দেশের চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছেন। সেজন্য আমরা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন থেকে সরকারের চাপও সরিয়ে দিচ্ছি, আর সরকারের অকারণ দখলদারীও সমাপ্ত করছি। আমাদের নিজেদের ‘রিফর্ম’ করার মাধ্যমে, সংশোধন করার মাধ্যমে দেশকে ‘ট্রান্সফর্ম’ করছি, পরিবর্তন আনছি। আমি সব সময়েই বলি, ‘রিফর্ম’ করার জন্য, সংস্কারের জন্য, ‘পলিটিক্যাল উইল’ বা রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি চাই। ‘পারফর্ম’ করার জন্য ‘গভর্নমেন্ট মেশিনারি এস্টাব্লিশমেন্ট’ চাই, আর ‘রিফর্ম’-এর জন্য সাধারণ মানুষের অংশীদারিত্ব চাই। তখনই গিয়ে ‘রিফর্ম’, ‘পারফর্ম’, ‘ট্রান্সফর্ম’-এর মেলবন্ধনে উন্নয়নের গাড়ি এগিয়ে যাবে। আজ ভারত ‘ইজ অফ লিভিং’বা সহজ জীবনযাপন, ‘কোয়ালিটি অফ লাইফ’বা জীবনযাপনে উৎকর্ষ , ‘ইজ অফ এমপ্লয়মেন্ট’বা সহজে কর্মসংস্থান, ‘কোয়ালিটি অফ এডুকেশন’ বা শিক্ষায় উৎকর্ষ, ‘ইজ অফ মোবিলিটি’বা সহজ যাতায়াত, ‘কোয়ালিটি অফ ট্র্যাভেল’বা যাতায়াতে উৎকর্ষ, ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’বা সহজে ব্যবসা, ‘কোয়ালিটি অফ সার্ভিসেস’বা পরিষেবায় উৎকর্ষ, ‘কোয়ালিটি অফ প্রোডাক্টস’বা পন্নের উৎকর্ষ – প্রত্যেক ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে কাজ করছে। নতুন নতুন মাত্রায় উন্নয়নকে প্রতিস্থাপিত করছে। এটা সেই দেশ, যাকে ছেড়ে আপনারা এখানে এসেছিলেন। এটা সেই দেশই যেখানে আজও একই ব্যুরোক্র্যাসি রয়েছে, একই দপ্তরগুলি রয়েছে, সেই টেবিল-চেয়ারগুলিই রয়েছে, সেই কলমধারীরাই রয়েছেন, সেই ফাইলগুলিই এখনও চলছে, সেই সরকারি মেশিনারিই কাজ করছে, কিন্তু এখন তুলনামূলক অনেক উন্নত ফল পাওয়া যাচ্ছে।
বন্ধুগণ,
২০১৪ সালের আগে যখনই আমি আপনাদের মতো বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতাম, তখন আপনাদের কাছ থেকে একটা অনেক বড় অভিযোগ প্রায়ই শুনতাম। আপনাদেরও হয়তো সেসব পুরনো দিনের কথা মনে আছে! আর আজ যখন দেশে যান, তখন যদি ওখানে দেখেন যে কোথাও লেখা আছে ‘ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস’, তাহলে এখন সেখানে অনেক বিভাগ মিলে একটি সংহত কাজ করছে বলে জানবেন। কিন্তু আগে এই ‘ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস’এর মানে আলাদা ছিল। আমি কারোর সমালোচনা করতে চাই না, কিন্তু আমাদের দেশে এটাই হত যে আগে কোথাও সড়কপথ তৈরি হত, তারপর বিদ্যুতের লাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই সড়কপথ খোড়া হত। তারপর আবার পথ ঠিক করা হত। কিছুদিন পর জলের লাইন নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার রাস্তা খোড়া হত। আবার রাস্তা ঠিক করা হলে কিছুদিন পর টেলিফোনের লাইন পাতার জন্য রাস্তা খোড়া হত বা আরও কিছু পাতার জন্য রাস্তা খোড়া হত। একটি সড়কপথ তৈরির যে বাজেট, সেই বাজেট অনুযায়ী রাস্তার কাজ সম্পূর্ণই হত না, এই কাজ চলতেই থাকত। আপনাদের শুধু একটাই উদাহরণ দিলাম, কারণ এই বিষয়টা আমি নিজের চোখে দেখেছি। এমনটি কেন হত? এর কারণ ছিল যে সরকারি বিভাগগুলির মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে কোনও তথ্যের আদানপ্রদান হত না, কোনও কথাবার্তা হত না, কোনও যোগাযোগ ও সমন্বয় ছিল না, সবাই নিজের নিজের দুনিয়া বানিয়ে তার মধ্যে বসে থাকত। প্রত্যেকের কাছে রিপোর্ট কার্ড থাকত যে আমি এত দীর্ঘ সড়কপথ তৈরি করে দিয়েছি। অন্যজন বলত যে আমি এত কিলোমিটার বিদ্যুতের তার পেতে দিয়েছি, অন্য কেউ বলত যে আমি এত মিটার দীর্ঘ জলের পাইপ পেতে দিয়েছি; কিন্তু এর পরিণামস্বরূপ ওই পথে সবসময় একটা সাইনবোর্ড লাগানো থাকত – ‘ওয়ার্ক ইন প্রগ্রেস’।
এই সিলোসগুলিকে ভাঙার জন্য এখন আমরা ‘পিএম গতি শক্তি ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ রচনা করেছি। চারিদিকে তার প্রশংসা শোনা যাচ্ছে। আমরা প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টের সিলোস ভেঙে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা পরিকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক স্টেক হোল্ডারকে বা সংশ্লিষ্ট সকলকে একটাই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছি। এখন সরকারের সমস্ত বিভাগ নিজেদের অংশের কাজ অ্যাডভান্স প্ল্যান বা অগ্রিম পরিকল্পনা করছে। এই নতুন অ্যাপ্রোচ বা ভাবনা উন্নয়নের সমস্ত কাজে গতি বাড়িয়ে দিয়েছে, আর পরিমাপও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারতের এখন সবচাইতে বড় শক্তি যেখানে সেটা হল, ‘স্কোপ’বা সুযোগ, ‘স্পিড’বা গতি এবং ‘স্কেল’বা পরিমাপ। আজ ভারতে সোশ্যাল এবং ফিজিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারের ওপর অভূতপূর্ব বিনিয়োগ হচ্ছে। আজ ভারতে নতুন শিক্ষানীতি কার্যকর করার জন্য সহমতের একটি আবহ গড়ে উঠেছে, আর অন্যদিকে নতুন স্বাস্থ্যনীতিকে বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ ভারতে রেকর্ড সংখ্যক নতুন এয়ারপোর্ট বা বিমানবন্দর তৈরি করা হচ্ছে। ছোট ছোট শহরগুলিকে এয়াররুটের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। ভারতে মেট্রো রেল কানেক্টিভিটি বাড়াতে যত কাজ এখন হচ্ছে, তা আগে কখনও হয়নি। ভারতে আজ রেকর্ড সংখ্যক নতুন মোবাইল টাওয়ার বসানো হচ্ছে, আর ভারতে ৫জি কড়া নাড়ছে। ভারতে আজ রেকর্ড সংখ্যক গ্রামকে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করা হচ্ছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, এখন ভারতের কত লক্ষ গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছেছে? আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে ভারতের অধিকাংশ গ্রাম থেকে এখন যে কেউই বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন? কিভাবে ভারতের গ্রামের মানুষ এখন বিশ্ববাসীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন। আপনারা ভারতে থাকুন কিংবা জার্মানিতে থাকুন, আপনারা এই বিষয়টা অনেক বেশি ভালো বুঝতে পারবেন। ভারতে যত দ্রুত ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি বাড়ছে আর শুধু তাই নয়, এখন তো এরপর যে কথাটা বলব তা শুনে আপনারা জোরে হাততালি দিতে বাধ্য হবেন। এজন্য জোরে হাততালি দেবেন যে, যত সস্তায় ডেটা ভারতে পাওয়া যায় তা অনেক দেশের জন্য অকল্পনীয়। গত বছর গোটা বিশ্বে হওয়া ‘রিয়েল টাইম ডিজিটাল পেমেন্টস’-এ … মনোযোগ দিয়ে শুনুন! গোটা বিশ্বে ‘রিয়েল টাইম ডিজিটাল পেমেন্টস’-এ … আমি সারা পৃথিবীর কথা বলছি! এখন ভারত ছোট কিছু ভাবে না। গত বছর গোটা বিশ্বে ‘রিয়েল টাইম ডিজিটাল পেমেন্টস’-এর ৪০ শতাংশ অংশীদারিত্ব ভারতের।
আমি আরও একটি কথা আপনাদের বলতে চাই, যা শুনে আমি জানি না আপনারা চুপচাপ বসে থাকবেন কি থাকবেন না। কিন্তু আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে যে ভারতে এখন ট্র্যাভেল করার সময়, কোথাও আসা-যাওয়ার সময় পকেটে ক্যাশ নিয়ে যাতায়াতের প্রয়োজন প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দূরদুরান্তের কোনও গ্রামেও যদি আপনারা যান, তাহলে নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই আপনারা সব ধরনের পেমেন্ট করতে পারবেন। একটা মোবাইল ফোন আপনার পকেটে থাকাই যথেষ্ট বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ,
আজ ভারতে গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে টেকনলজির যে ধরনের ইনক্লুশন করা হচ্ছে তা নতুন ভারতের নতুন পলিটিক্যাল উইলকে তুলে ধরে আর তা গণতন্ত্রের ডেলিভারির ক্ষমতারও প্রমাণ। আজ কেন্দ্র, রাজ্য এবং লোকাল গভর্নমেন্টগুলির প্রায় একইরকম পরিসংখ্যান। এটা আপনাদের কাছে হয়তো অবাক লাগবে যে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং লোকাল সেলফ গভর্নমেন্টের প্রায় ১০ হাজার পরিষেবা, প্রায় ১ মিলিয়ন সার্ভিসেস অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি সাহায্য থেকে শুরু করে ছাত্রবৃত্তি, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য – সবকিছু এখন সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়। এখন কোনও প্রধানমন্ত্রীকে আর একথা বলতে হয় না যে, আমি দিল্লি থেকে ১ টাকা পাঠালে সাধারণ মানুষের কাছে মাত্র ১৫ পয়সা পৌঁছয়। এটা কাদের থাবা ছিল যেগুলি মাঝখানের ৮৫ পয়সা টেনে নিত?
আপনাদের এটা জেনে খুব ভালো লাগবে যে বিগত ৭-৮ বছরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, এই পরিসংখ্যান আপনাদের মনে আছে কিনা জানিনা, আমি বলে দিচ্ছি, ভয় পাবেন না! এটা আপনাদেরই পরিশ্রমের ফল। আপনাদেরই কাজের পরিণাম। বিগত ৭-৮ বছরে ভারত সরকার ডিবিটি বা ডায়রেক্ট বিনিফিট ট্রান্সফার বা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছে। মাত্র একটি ক্লিকে সরাসরি প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে আমরা এই ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ তাঁদেরকে পাঠিয়েছি। অর্থাৎ, এখন আপনারা জার্মানিতে আছেন, তাহলে আপনাদের এখানকার হিসেবে ৩০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পৌঁছে গেছে। মাঝে কোনও দালাল নেই, কাটিং করার কোনও কোম্পানি নেই, কাউকে কাটমানি দিতে হয়নি। এর ফলে ব্যবস্থায় কত বড় ট্রান্সপারেন্সি বা স্বচ্ছতা এসেছে, আর এর কারণে সরকার ও জনগণের মধ্যে যে ভরসার ফাঁটল তৈরি হয়েছিল, সেই ফাঁটল ভরার অনেক বড় কাজ আমরা করতে পেরেছি। এই নীতিগুলির কারণেই, কাজ করার তীব্র ইচ্ছাশক্তি থেকেই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিশ্বাস অর্জনের কাজ সুসম্পন্ন হয়েছে।
বন্ধুগণ,
এমনিতে নাগরিকদের হাতে যখন টুলস আসে, যখন নাগরিকরা এম্পাওয়ারড বা ক্ষ্মতায়িত ক্রস্ন। হয়, এই ক্ষমতায়নের ফলে তাঁদের আত্মবিশ্বাসে টৈটম্বুর হয়ে ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক। তাঁরা তখন নিজেরাই সঙ্কল্প নিতে শুরু করেন আর তাঁরা স্বয়ং সঙ্কল্পকে সিদ্ধিতে রূপান্তরণের জন্য চূড়ান্ত পরিশ্রম করেন আর তখনই গিয়ে দেশ এগিয়ে যায় বন্ধুগণ! সেজন্য বন্ধুগণ, নতুন ভারত এখন শুধুই ‘সিকিওর ফিউচার’ বা সুরক্ষিত ভবিষ্যতের কথা ভাবে না, নতুন ভারত এখন রিস্ক বা ঝুঁকি নেয়, ‘ইনোভেট’ বা উদ্ভাবনের পথে হাঁটে, সেই উদ্ভাবনকে ‘ইনকিউবেট’ করে। আমার মনে আছে, ২০১৪ সালের কাছাকাছি আমাদের দেশে সব মিলিয়ে ২০০ থেকে ৪০০টি স্টার্ট-আপ ছিল। এত বড় দেশ আর মাত্র ২০০ থেকে ৪০০টি স্টার্ট-আপ! কতগুলি স্টার্ট-আপ? একটু মনে করে বলুন না বন্ধুরা! আজ থেকে ৮ বছর আগে ভারতে সারা দেশে ২০০, ৩০০ কিংবা ৪০০টি স্টার্ট-আপ ছিল। আর আজ কতগুলি জানেন? আজ ভারতে স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যা ৬৮ হাজারেরও বেশি। বন্ধুগণ আমাকে বলুন, আপনারা শোনার পর নিশ্চয়ই ভাবছেন, কোথায় ৪০০, কোথায় ৬৮ হাজার। এই ২০০-৪০০ থেকে ৬৮ হাজারে পরিণত হওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চয়ই আপনাদের বুককে গর্বে ভরিয়ে দিয়েছে। ঠিক কিনা! একথা শোনার পর আপনাদের বুক তো গর্বে উঁচু হয়েছে তাই না? আপনাদের মাথা উঁচু হয়েছে কিনা! আর বন্ধুগণ, শুধু এইটুকুই নয়, শুধু স্টার্ট-আপ-এর সংখ্যা বৃদ্ধির কথাই বলছি না, আজ বিশ্বের সমস্ত প্যারামিটার্স বলছে যে এগুলির মধ্যে কয়েক ডজন স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন-এ পরিণত হয়েছে, আর এখন বিষয়টা ইউনিকর্ন-এই থেমে থাকেনি বন্ধুগণ, আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি আমার দেশে অনেক কয়টি ইউনিকর্ন-ই দেখতে দেখতে ডিকাকর্ন-এ পরিণত হচ্ছে। অর্থাৎ, তারা ১০ বিলিয়ন ডলারের লেভেলও পার করে যাচ্ছে। আমার মনে পড়ে, আমি যখন গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রীর চাকরি করতাম আর আমার সহকর্মী যে কোনও বাবুকে জিজ্ঞাসা করতাম যে ছেলে-মেয়েরা কী করছে? অধিকাংশ মানুষই বলতেন যে আইএএস প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় সরকারে কর্মরত বাবুদের যদি জিজ্ঞাসা করি যে ভাই আপনার ছেলে-মেয়ে কী করে, তখন তাঁরা বলেন যে স্টার্ট-আপ চালু করেছে। এই পরিবর্তন ছোট নয় বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ,
মূল কথাটি কী? মূল কথাটি হল এটাই যে আজ সরকার ‘ইনোভেটর্স’ বা উদ্ভাবকদের পায়ে শেকল পরিয়ে নয়, তাঁদের মনকে উদ্দীপনায় সঞ্জীবিত করে তাঁদের এগোনোর পথ প্রশস্ত করে দিচ্ছে। যদি আপনাদের জিও-স্পেশিয়াল-এর ক্ষেত্রে উদ্ভাবন করতে হয়, নতুন ধরনের কোনও ড্রোন তৈরি করতে হয় কিংবা মহাকাশ ক্ষেত্রে কোনও স্যাটেলাইট কিংবা রকেট তৈরি করতে হয় তাহলে এর জন্য সবার আগে সর্বাপেক্ষা ‘নার্চারিং’ আবহ আজ ভারতে রয়েছে বন্ধুগণ! একটা সময় ছিল যখন ভারতে কোনও নতুন কোম্পানি যদি রেজিস্টার করতে চাইত তখন তাদের রেজিস্ট্রি করানোর সময় কাগজ জমা করার পর তারা যখন ভুলে যেত ততদিনেও রেজিস্ট্রি হত না, মাসের পর মাস লেগে যেত। যখন ভরসা বৃদ্ধি পায়, নাগরিকদের ওপর সরকারের ভরসা বৃদ্ধি পায় আর সরকারের ওপর নাগরিকদের ভরসা বৃদ্ধি পায়, তখন অবিশ্বাসের ফাঁটলগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, আজ যদি কোনও কোম্পানি রেজিস্টার করতে চায় তাহলে সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টা লাগে বন্ধুগণ, ২৪ ঘন্টা! আমাদের দেশে সরকারের একটি অভ্যাস ছিল যে অফিসের যে কোনও চেম্বারে ৬ নম্বর টেবিল হোক কিংবা ১ নম্বর টেবিল, জানুয়ারিতে যদি আপনাদের কাছ থেকে কিছু চান, ২ নম্বর টেবিলের আধিকারিক ফেব্রুয়ারি মাসে আবার সেটাই চাইতেন। তারপর ৫ নম্বর টেবিলের আধিকারিক ফেব্রুয়ারির শেষে বলবেন, আরে ভাই ওই কাগজটা আনতো, আমার একটু প্রয়োজন আছে। অর্থাৎ বন্ধুগণ, নাগরিকদের হাজার হাজার কমপ্লায়েন্স মেনে চলতে হত, এটা আনো, ওটা আনো, আর এত সবকিছু নিয়ে ওঁরা কী করতেন সেটা ওঁরাই জানেন আর আপনারা জানেন। বিগত কয়েক বছরে এই কর্মসংস্কৃতি বদলেছে। বন্ধুগণ, আপনারা শুনলে হয়তো অবাক হবেন, আর আমাকে এ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে, আমরা ইতিমধ্যেই ২৫ হাজারেরও বেশি কমপ্লায়েন্স সমাপ্ত করেছি। শুধু তাই নয়, যখন ২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কারণ আমার দল একথা ঘোষণা করে দিয়েছিল যে এঁকেই আমরা প্রধানমন্ত্রী বানাব, তখন আমি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের সামনে এমন ভাষণ দিতাম যে একদিন দিল্লিতে সমস্ত ব্যবসায়ীরা আমাকে ডেকে নিয়ে যান। সেখানে ব্যবসায়ীদের অনেক বড় সম্মেলন চলছিল আর সেখানে আমার আগে যে ভদ্রলোক বক্তব্য রাখছিলেন তিনি বলছিলেন যে দেখুন, অমুক আইন তৈরি হয়েছে, তমুক আইন তৈরি হয়েছে। তাঁর বক্তব্য শুনে বুঝলাম যে তিনি অনেক আইন প্রণয়ন করেছেন। সাধারণ নির্বাচনের আগে সময়টাই এমন যে সবাই বলতে থাকেন যে ঠিক আছে, আমি এটা করে দেব। কিন্তু বন্ধুগণ, আমি একটু অন্য মাটি দিয়ে তৈরি মানুষ। আমি যখন ভাষণ দিতে উঠে দাঁড়াই, ২০১৩ সালের কথা, আমি দিল্লিতে সেদিন ভাষণ দিতে উঠে দাঁড়িয়ে প্রথমেই বললাম যে ভাই, আপনারা আইন প্রণয়নের কথা বলেন, কিন্তু আমার ইচ্ছা অন্যরকম। আমি জানি না যে আপনাদেরকে আমার ইচ্ছার কথা বললে আপনারা আমাকে ভোট দেবেন কি দেবেন না। না দিলে না দেবেন, আমার ছুটি হয়ে যাবে। আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে বলছি, আমি আজ আপনাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেকদিন দেশে একটি করে আইন বাতিল করব। অনেকেই আশ্চর্য হন যে সরকার কাকে বলে সে সম্পর্কে এই মানুষটির কোনও জ্ঞান আছে কী? হয়তো তাঁরা এরকমই ভেবেছিলেন। কিন্তু বন্ধুগণ, আমি আজকে আপনাদের একটি হিসাব দিচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম পাঁচ বছরে ১ হাজার ৫০০টি আইন বাতিল করেছি বন্ধুগণ। এসব কেন করেছি? কারণ আমাদের মনে হয়েছিল যে এগুলি সব অপ্রয়োজনীয় এবং পরস্পর বিরোধী। এতসব আইনের জঞ্জালের বোঝা জনগণ কেন বহন করবেন?
এই ভারত একটি স্বাধীন দেশ। এটি শুধুই মোদীর দেশ নয়, ১৩০ কোটি নাগরিকের দেশ। এখন দেখুন, দেশে … আগে তো আমাদের দেশের বৈশিষ্ট্য দেখুন সাহেব! একটি দেশ, সংবিধান ছিল দুটি। দেশের মানুষের সঙ্গে এই দ্বিচারিতা দূর করতে এত দেরি কেন লাগল? আগেকার দিনে বলা হত ‘টিউবলাইট’, মানে যে আলো দেরিতে জ্বলে। আপনারা জানেন তো যে ভারতে দুটি সংবিধান ছিল! সাত দশক ধরে ছিল! সেই দুটি সংবিধানকে এক সংবিধানে পরিণত করতে দেশবাসীর সাতটি দশক লেগে গেছে। এতদিনে তা বাস্তবায়িত হয়েছে বন্ধুগণ! গরীবের রেশন কার্ডে আগে যদি জব্বলপুরের ঠিকানা লেখা থাকত, আর তাঁকে যদি বাধ্য হয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য জয়পুরে যেতে হত তাহলে তাঁর সেই রেশন কার্ড কোনও কাজে লাগত না। দেশ একটাই ছিল, কিন্তু রেশন কার্ড হয়ে যেত আলাদা। আজ ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান রেশন কার্ড’ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়েছে। আগে কেউ দেশে বিনিয়োগ করতে এসে গুজরাটে গেলে এক ধরনের ট্যাক্সেশন, মহারাষ্ট্রে গেলে দ্বিতীয় ধরনের ট্যাক্সেশন, পশ্চিমবঙ্গে গেলে তৃতীয় ধরনের ট্যাক্সেশন। তাঁর যদি ৩-৪টি কোম্পানি থাকে, একটি কোম্পানি গুজরাটে, দ্বিতীয় কোম্পানি মহারাষ্ট্রে আর তৃতীয় কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গে হয়, তবে তাঁকে তিনটি রাজ্যেই ভিন্ন ভিন্ন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে নিয়োগ করতে হত যাঁরা ভিন্ন ভিন্ন আইন মেনে কাজ করতেন। কিন্তু আজ বন্ধুগণ, আজ সারা দেশে অভিন্ন কর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কী হয়নি! আর আমাদের অর্থমন্ত্রী নির্মলাজি এখানে বসে আছেন। এইএপ্রিল মাসে কী হয়েছে তিনি জানেন। পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি-র রেকর্ড কালেকশন হয়েছে। ১ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা জিএসটি-র রেকর্ড কালেকশন হয়েছে। ‘ওয়ান নেশন, ওয়ান ট্যাক্স’-এর লক্ষ্যে এই শক্তিশালী পদক্ষেপ অনেক কার্যকরী প্রমাণ হয়েছে কিনা বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ,
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, আজ এই ভাবনাটি আত্মনির্ভর ভারতের ‘ড্রাইভিং ফোর্স’ বা চালিকাশক্তিতে পরিণত হচ্ছে। আত্মবিশ্বাসে টৈইটম্বুর ভারত আজ দেশের সমস্ত ‘প্রসেস’ বা কর্মপদ্ধতি সহজ করে তুলছে। তার ওপর ‘প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ’ বা উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ ভাতার মাধ্যমে বিনিয়োগকে সমর্থনও করছে। এর বড় প্রভাব ভারতের সম্ভাব্য রপ্তানির ওপরও পড়ছে। এই তো কিছুদিন আগে আমরা ৪০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছি। যদি আমরা ‘গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস’ বা পণ্য ও পরিষেবা দেখি, তাহলে গত বছর ভারত থেকে ২৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ, প্রায় ৫০ লক্ষ কোটি টাকারও ওপর রপ্তানি হয়েছে। এই পরিসংখ্যান দেখে হাততালি দেওয়ার জন্য আপনাদের হাত কি জমে গেছে বন্ধুগণ? ভারতের অনেক নতুন জেলা আজ নতুন নতুন দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে তাদের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে আর দ্রুতগতিতে রপ্তানি হচ্ছে, আর এতে একটি মজার কথাও আছে। আজ দেশে যা তৈরি হচ্ছে সেসব পণ্য ‘জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট’-এর মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ‘প্রোডাকশন’ বা উৎপাদনের উৎকর্ষে কোনও কোনও আপোস নয়, কোনরকম ‘ডিফেক্ট’ বা ত্রুটিকে মেনে নেওয়া হবে না, আর উৎপাদনের সময়ও পরিবেশের ওপর যেন কোনও কুপ্রভাব না পড়ে সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর এই তৃতীয় দশকের সবচাইতে বড় সত্য এটাই যে আজ ‘ইন্ডিয়া ইজ গোয়িং গ্লোবাল’। ভারত আজ আবার বিশ্বজনীন হয়ে উঠছে। করোনার এই কঠিন সময়ে ভারত বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশে জীবনদায়ী ওষুধ পাঠিয়ে অনেক জীবন রক্ষার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। যখন ভারত কোভিডের টিকা উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছে তখন দেশ তার উৎপাদিত টিকা পাঠিয়ে প্রায় ১০০টি দেশকে সাহায্য করেছে বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ,
আজকের তাজা খবর হল ‘রুকাবট কে লিয়ে খেদ হ্যায়’। বিঘ্নের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে বলছি, আজ গোটা বিশ্বের মানুষ গম সরবরাহের অপ্রতুলতার মুখোমুখি। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্বের বড় বড় দেশ আজ চিন্তিত। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে ভারতের কৃষকরা বিশ্ববাসীর পেট ভরানোর জন্য এগিয়ে আসছেন বন্ধুগণ।
বন্ধুগণ,
যখনই মানবতার সামনে কোনও সঙ্কট উপস্থিত হয়, তখন ভারত সমাধান নিয়ে সামনে এগিয়ে আসে। যাঁরা সঙ্কট নিয়ে আসেন, তাঁদেরকে সেই সঙ্কট নিরসনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই। আমরা কিন্তু সঙ্কট নিয়ে আসি না। আমরা প্রতিনিয়ত সমাধান নিয়ে আসি, আর তখন সারা পৃথিবীতে জয়জয়কার ওঠে, সেটাই আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি বন্ধুগণ! বন্ধুগণ এটাই নতুন ভারত, আর এটাই নতুন ভারতের শক্তি। আপনাদের মধ্যে যাঁরা অনেক বছর ধরে ভারতে আসেননি, তাঁরা বিন্দুমাত্র লজ্জা অনুভব করবেন না। আপনারা ভালোভাবে খোঁজখবর নিলে অবশ্যই অবাক হবেন যে অবশেষে এসব কী করে হয়েছে? এত বড় পরিবর্তন কিভাবে এসেছে? না বন্ধুরা! আপনাদের জবাব ভুল। মোদী কোনকিছুই করেনি, এসব কিছু করেছে ১৩০ কোটি ভারতবাসী।
বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের আবার এই যে এগিয়ে যাওয়া, এর পেছনে আপনাদের অবদানও অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। আজ ভারতে স্থানীয় পণ্যের প্রতি যে ‘ক্রেজ’ বা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, তা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্বদেশী বস্তুর ওপর সৃষ্টি হওয়া আগ্রহের সঙ্গে তুলনীয়। অনেক বছর ধরে আমরা দেখেছি যে মানুষ একথা বলতেন যে অমুক জিনিসটা আমরা অমুক দেশ থেকে কিনেছি, এই জিনিসটি সেই দেশেরই তৈরি, কিন্তু আজ ভারতের জনগণের মনে নিজেদের স্থানীয় উৎপাদন, স্থানীয় পণ্য নিয়ে গর্বের অনুভূতি জেগেছে। আপনারাও হয়তো জানেন যে আজ থেকে ২০ বছর কিংবা ১০ বছর আগে যখন আপনারা বাড়িতে চিঠি লিখতেন যে আমি অমুক তারিখে বাড়িতে আসছি, তখন বাড়ি থেকে চিঠি আসত যে আসার সময় অমুক জিনিসটা নিয়ে এসো। আজ যখন বাড়িতে যান, তখন বাড়ি থেকে যদি চিঠি আসে, আর এখানকার সবাই সেই চিঠি পান, তাহলে তাঁরা যা চেয়েছেন তা কখনই কিনে আনবেন না। আমি সত্যি কথা বলছি কি বলছি না, ঠিক তো? বন্ধুগণ, এটাই সত্যি, আর সেজন্য আমি বলছি ‘ভোকাল ফর লোকাল’। কিন্তু আপনাদের লোকাল যেন এখানকার না হয়। বন্ধুগণ, এই যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে না, এই সমস্ত জিনিস তৈরি করতে কোনও না কোনও ভারতবাসীর পরিশ্রম লেগেছে। সেই সমস্ত পণ্যের ওপর কোনও না কোনও ভারতবাসীর ঘামের গন্ধ আছে বন্ধুগণ! সেই মাটির সুরভি আছে বন্ধুগণ! আর সেজন্য যা ভারতে উৎপাদিত হয়েছে, ভারতের মাটির সুরভি যাতে আছে, ভারতের যুব সম্প্রদায়ের ঘামের গন্ধ যাতে লেগে আছে, সেসব সরঞ্জামই আমাদের ‘ফ্যাশন স্টেটমেন্ট’ হওয়া উচিৎ বন্ধুগণ! আপনারা দেখুন, একবার এই ভাবনা যদি অনুভব করেন তাহলে আপনার মনের মধ্যে যে ‘ভাইব্রেশন’ বা স্পন্দন সৃষ্টি হবে, তা আপনার চারপাশে পৌঁছে যেতে দেরি লাগবে না। আর তারপর দেখবেন, কবে যাবেন আপনারা? এখন আমি ভারত যাচ্ছি ১০ দিনের জন্য। তাহলে এখান থেকে যাঁরা চিঠি দেবেন যে ফিরে আসার সময় ভারত থেকে এই এই জিনিস নিয়ে এসো, এটা হওয়া উচিৎ নাকি হওয়া উচিৎ না বন্ধুগণ? আপনাদের এ কাজ করা উচিৎ কি উচিৎ নয় বন্ধুগণ!
বন্ধুগণ, আমি আপনাদেরকে একটি অসাধারণ উদাহরণ তুলে ধরছি। খুব সাধারণ উদাহরণ। আমি খাদির উদাহরণ দিতে চাই। আপনারা সবাই খাদি সম্পর্কে জানেন। খাদি এবং আমাদের দেশের নেতাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নেতা আর খাদি আলাদা হতে পারে না। খাদি এলে নেতাকে দেখা যায়, আর নেতা এলে খাদিকে দেখা যায়। কিন্তু যে খাদি নিয়ে মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবনে বেঁচেছেন, যে খাদি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে শক্তি যুগিয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত স্বাধীনতার পর সেই খাদিরও সেই দশাই হয়েছে, যেমনটি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নগুলির হয়েছিল। এটা কি দেশের দায়িত্ব ছিল না যে খাদি থেকে গরীব মায়ের রোজগার হত, যে খাদি দিয়ে বিধবা মা তাঁর ছেলে-মেয়েদের বড় করার জন্য আশ্রয় পেতেন, কিন্তু ধীরে ধীরে খাদিকে তার ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, আর এক প্রকার এই শিল্পটি মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে পড়ে। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হই, তখন আমি এই খাদি নিয়ে ইতিবাচক কিছু করার চেষ্টা করি। আমি বলি যে ভাই, আপনারা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলেন যে বাড়িতে কারোর কাছে অমুক ফ্যাব্রিক আছে, তমুক ফ্যাবিক আছে, অমুক জায়গার শাড়ি আছে, তমুক জায়গার পাঞ্জাবি আছে। এমনটা বলেন তো, তাই না? কী জবাব দিন তো আপনারা! আরে, সত্যি কথা বললে কী ক্ষতি হবে বন্ধুরা! সেজন্য আমি বলছিলাম বন্ধুগণ, আপনারা সবাই খাদি কিনুন আর বলুন, আমার কাছে অমুক ফ্যাব্রিক আছে, কিন্তু খাদিও আছে।
বন্ধুগণ,
এটা অনেক ছোট ব্যাপার ছিল কিন্তু আজ আমি দেশের সামনে মাথা নত করে বলছি, আমার দেশ একসময় খাদিকে ভালোবেসেছিল, আর আপনারা জেনে আনন্দ পাবেন যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে আজ প্রথমবার যখন দেশ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, এ বছর খাদির ব্যবসা ১ লক্ষ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এমনটি প্রথমবার হয়েছে। কত গরীব বিধবা মায়ের এর থেকে কর্মসংস্থান হয় বন্ধুগণ! বিগত ৮ বছরে খাদির উৎপাদনে যে প্রায় ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে, আর আপনারা এর পরিধি দেখুন বন্ধুগণ, আমি যে মেজাজ নিয়ে স্টার্ট-আপ-এর কথা বলি, ঠিক একই মেজাজ নিয়ে আমি খাদির কথাও বলি। যে মেজাজ নিয়ে আমি স্যাটেলাইটের কথা বলি, সেই একই মেজাজ নিয়ে আমি দেশের মাটির কথাও বলি।
বন্ধুগণ,
আজ আমি আপনাদের সকলকে এই অনুরোধ করব, এখন ভারতের ‘লোকাল’কে ‘গ্লোবাল’ করে তোলার ক্ষেত্রে আপনারাও আমার সঙ্গ দিন। এখানকার মানুষকে ভারতের ‘লোকাল’ বা স্থানীয় পণ্যের বৈচিত্র্য, ভারতের স্থানীয় পণ্যের শক্তি, ভারতের স্থানীয় পণ্যের সৌন্দর্যের সঙ্গে আপনারা অত্যন্ত সহজভাবে পরিচিত করাতে পারবেন। একটু ভাবুন! বিশ্বে এত বড় ইন্ডিয়া ডায়াসপোরা। প্রত্যেক ছড়িয়ে রয়েছে ইন্ডিয়ান ডায়াসপোরা আর এই ইন্ডিয়ান ডায়াসপোরার বিশেষত্ব হল এটাই যে যেভাবে দুধে চিনি মিশে যায়, ঠিক তেমনভাবেই ভারতবাসী পৃথিবীর অন্য যে কোনও দেশের মানুষের সঙ্গে, তাঁদের সমাজের সঙ্গে মিশে যেতে পারে, আর ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’ বা মূল্য সংযোজন করার সময় সকলের অজান্তেই অবলীলায় সেই দুধকে মিষ্টি করে দেয়। যাঁদের কাছে এই সামর্থ্য আছে, তাঁরা অতি সহজেই ভারতের স্থানীয় পণ্যকে নিজেদের প্রচেষ্টায় জার্মানির মাটিতে ‘গ্লোবাল’ করে তুলতে পারে। আপনারা এই কাজটি করবেন? সবার কিরকম চাপা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। একটু জোরে বলুন, করবেন? বলতে কী আছে! মোদীজি বলেছেন, এখন আরও একবার আসবেন। বন্ধুগণ, আমি আপনাদের ওপর ভরসা করি। আমার পূর্ণ বিশ্বাস যে আপনারা এই কাজটি করবেন বন্ধুগণ।
আপনাদের আরও একটি বিষয় আমি মনে করাতে চাই, সেটি হল আমাদের যোগ, আমাদের আয়ুর্বেদ, আমাদের ‘ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন্স’ বা পরম্পরাগত ঔষধের নানা প্রোডাক্ট। আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না যে আজ এগুলির এত ‘পোটেনশিয়াল’ বা সম্ভাবনা রয়েছে। আপনারা সবাই ভারতের মানুষ, এটুকু পরিচয় দিলেই সামনের ব্যক্তিটি আপনাকে হয়তো জিজ্ঞাসা করেন যে আপনি যোগ জানেন কিনা। জিজ্ঞাসা করেন কি করেন না? মনে করুন আপনি তেমন কিছুই জানেন না, শুধু নাকে হাত দিয়ে যোগ-এর মুদ্রাটা যদি দেখিয়ে দেন, তাহলেই তাঁরা ভাববেন যে আরে ভাই, এতো দেখছি মাস্টার! আজকের বিশ্বে ভারতের ঋষি-মুনিদের তপস্যার প্রভাব এতটাই যে আপনি যদি একটা ছোট্ট বোর্ড লাগিয়ে দেন, অথবা কোনও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেন আর সঠিকভাবে নাকে হাত দিয়ে প্রাণায়ামটা শিখিয়ে দিতে পারেন, তাহলেই তাঁরা ডলার দিয়ে ফি দিতে আসবেন কি আসবেন না? তার মানে আমাদের মুনি-ঋষিরা এত বছর আগে কেমন ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ তৈরি করে গেছেন যে সেটি আজও সুফলদায়ক হচ্ছে। হাজার হাজার বছর আগে যে মুনি-ঋষিরা এসব পদ্ধতি উদ্ভাবন করে গেছেন, এ ধরনের পথ দেখিয়ে গেছেন, তা আজ ভারতবাসী বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। কিন্তু আপনারা কি এই অভিযানে নিজেদের যুক্ত করতে পেরেছেন? আমি আপনাদের অনুরোধ জানাই যে আগামী ২১ জুন তারিখে ‘ইন্টারন্যাশনাল যোগা ডে’ বা আন্তর্জাতিক যোগ দিবস খুব দূরে নয়। এখন থেকে ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুন বন্ধুগণ। আপনাদের প্রতিবেশীদের সবাইকে সঠিকভাবে নাকে হাত দিয়ে প্রাণায়াম করা শিখিয়ে দিন বন্ধুগণ! আমি নাক কাটা শেখাতে বলছি না।
বন্ধুগণ,
আজ আপনাদের মধ্যে আরও একটি বিষয় আলোচনা করতে চাই, তা হল - ক্লাইমেট অ্যাকশন! পরিবেশের নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত কী করেছে, ভারতে আমরা ক্লাইমেট চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ‘পিপল পাওয়ার’ বা জনগণের শক্তি থেকে ‘টেক পাওয়ার’ বা প্রযুক্তির শক্তি পর্যন্ত – প্রত্যেক সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কাজ করছি। বিগত ৮ বছরে আমরা ভারতে এলপিজি রান্নার গ্যাসের কভারেজ ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রায় ১০০ শতাংশ করে দিয়েছি। ভারতের এলইডি বাল্ব … এখন জার্মানবাসীরা তো দ্রুত বাল্বের বিষয়টা বুঝতে পারবেন। ভারতে প্রায় প্রত্যেক বাড়িতে এখন এলইডি বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘উজালা’ যোজনার মাধ্যমে আমরা দেশে প্রায় ৩৭ কোটি এলইডি বাল্ব বিতরণ করেছি, আর এলইডি বাল্বের ব্যবহার শক্তি সাশ্রয়ের জন্য কতটা উপযোগী একথা আপনারা খুব ভালোভাবেই বোঝেন। ‘এনার্জি সেভিং’ বা শক্তি সংরক্ষণের স্বার্থে ভারত কিভাবে কাজ করেছে তা আজ আপনারা জার্মানিতে বুক ঠুকে মানুষকে বলতে পারবেন যে ভারত একটি ছোট্ট পরিবর্তন এনে কতটা শক্তি সাশ্রয় করেছে, আর এর ফলে প্রায় ৪৮ হাজার মিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে। এর পাশাপাশি, প্রতি বছর প্রায় ৪ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ কম হয়েছে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে এই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভারত বিশ্ব পরিবেশের কতটা নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করেছে।
বন্ধুগণ,
এ ধরনের বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজ ভারত অভূতপূর্ব স্তরে ‘গ্রিন জবস’-এর ক্ষেত্রে একটি নতুন সুযোগ উন্মোচন করছে আর সেই সুযোগ প্রতিদিন ক্রমবর্ধমান। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে ভারত এবং জার্মানিও এই ‘এনার্জি’ বা শক্তিক্ষেত্রে একতি অনেক বড় পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের দিকে পা বাড়িয়েছে। বন্ধুগণ, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে আমরা এই ‘ক্লাইমেট রেসপনসিবিলিটি’ বা পরিবেশের দায়বদ্ধতাকে ‘নেক্সট লেভেল’-এ বা পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি উদাহরণ দিচ্ছি। ভারতীয়রা দেশের প্রত্যেক জেলায় ৭৫টি ‘অমৃত সরোবর’ খননের সঙ্কল্প নিয়েছে। প্রত্যেক জেলায়, অর্থাৎ আপনারা কল্পনা করতে পারেন আমি কী বলছি? এর মাধ্যমে আগামী ৫০০ দিনের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার নতুন ‘ওয়াটার বডি’ বা জলাশয় তৈরি হবে, পুকুর তৈরি হবে, দীঘি তৈরি হবে, সরোবর তৈরি হবে আর এরকম বুজে যাওয়া পুকুর, দীঘি ও সরোবরগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। আমরা খুব ভালোভাবেই অনুভব করি যে জলই জীবন। জল থাকলেই আগামীকাল আছে। কিন্তু জলের জন্য ঘাম ঝরাতে হচ্ছে বন্ধুগণ! আপনারাও কী আমাদের এই অভিযানে যুক্ত হতে পারেন? আপনারা দেশের যে গ্রাম থেকে এসেছেন, সেই গ্রামে পুকুর তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনারাও সহযোগিতা করতে পারেন, আপনাদের তাঁদের প্রেরণা যোগাতে পারেন, আর স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবে ‘অমৃত সরোবর’ খননের ক্ষেত্রে বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রত্যেক ভারতবাসীর অবদান থাকলে আপনারা কল্পনা করতে পারেন বন্ধুগণ, আমরা কোথায় পৌঁছতে পারি! এই সাফল্য আপনাদের কতটা আনন্দে দেবে!
বন্ধুগণ,
ভারতে উন্নত বুদ্ধিসম্পন্ন বিখ্যাত জার্মান বিদ্বান ম্যাক্সমুলার ইন্দো-ইউরোপিয়ান ওয়ার্ল্ড-এর ‘শেয়ার্ড ফিউচার’-এর কথা বলে গেছেন। আপনাদের মধ্যে সবাই হয়তো এখানে দিনে ১০ বার তার উল্লেখ করেন। একবিংশ শতাব্দীতে তাঁর এই ভবিষ্যদ্বাণীকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার উৎকৃষ্ট সময় এসেছে। ভারত এবং ইউরোপের শক্তিশালী মেলবন্ধন বিশ্বে শান্তি এবং সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে পারে। এই মেলবন্ধন ক্রমাগত যাতে বাড়তে থাকে, আপনারাও এই উৎসাহ এবং উদ্দীপনা নিয়ে মানবকল্যাণের জন্য, ভারতের কল্যাণে কিছু না কিছু অবদান রাখেন তাহলে অনেক ইতিবাচক ফল অবশ্যই পাওয়া যাবে ।কারণ, আমরা তো ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ মন্ত্রে বিশ্বাসী দেশের মানুষ। বন্ধুগণ, আপনারা যে যেখানে আছেন অনেক উন্নতি করুন, পল্লবিত কুসুমিত হোন, আপনাদের সমস্ত স্বপ্ন পূরণ হোক, আপনাদের জন্য এটাই আমার শুভকামনা। আপনাদের সকলের জন্য অনেক শুভেচ্ছা। ১৩০ কোটি দেশবাসীর শুভকামনা আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আপনারা আনন্দে থাকুন, সুস্থ থাকুন। অনেক অনেক ধন্যবাদ!
CG/SB/DM/
(Release ID: 1823449)
Visitor Counter : 800
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam