প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বারাণসীতে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 23 DEC 2021 5:13PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২১

 

হর হর মহাদেব! ত্রিলোচন মহাদেবের জয়! মাতা শীতলা চৌকিয়া দেবীর জয়!

উত্তরপ্রদেশের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ এবং জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ডঃ মহেন্দ্রনাথ পান্ডেজি, উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী শ্রী অনিল রাজভরজি, শ্রী নীলকন্ঠ তিওয়ারিজি, শ্রী রবীন্দ্র জয়সওয়ালজি, সংসদে আমার সঙ্গী শ্রী বি পি সরোদজি, শ্রীমতী সীমা দ্বিবেদীজি, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা এবং বিধান পরিষদের সকল মাননীয় সদস্যগণ, বনাস ডেয়ারির চেয়ারপার্সন শ্রী শঙ্করভাই চৌধুরি আর আজকের এই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় কৃষক ভাই ও বোনেরা!

বারাণসীর উপকন্ঠে এই পিন্দরা এলাকার জনগণকে আমার প্রণাম জানাই। প্রতিবেশী জেলা জৌনপুর থেকে আগত সমস্ত বন্ধু ও বোনেদের প্রণাম জানাই। আজ বারাণসী এবং পার্শ্ববর্তী এই সমগ্র এলাকা আরও একবার গোটা দেশ, গোটা উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলি কৃষক ও পশুপালকদের জন্য অনেক বড় কর্মসূচির শুভারম্ভের সাক্ষী হচ্ছে। আজকের দিনটি ইতিহাসে এজন্যই বিশেষ, কারণ, আজ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিং-জির জন্মজয়ন্তী। আমি তাঁকে সাদর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই। তাঁর স্মৃতিতেই দেশ আজ কৃষক দিবস পালন করছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের এখানে কিছু মানুষ গরু সম্পর্কে কথা বলা, গোবরধনকে নিয়ে কথা বলা পছন্দ করেন না। তাঁরা এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যেন গোবরধনের কথা বলে আমরা কোনও অপরাধ করছি, পাপ করছি। কিছু মানুষের কাছে গরু পাপ হতে পারে, কিন্তু আমাদের জন্য গরু হল মা। গরু আমাদের কাছে পূজনীয়। গরু-মোষ নিয়ে যাঁরা মজা করেন তাঁরা ভুলে যান যে দেশের ৮ কোটি পরিবারের জীবিকা এই পশুধনের ওপরই নির্ভরশীল। এই পরিবারগুলির পরিশ্রমেই আজ ভারত প্রত্যেক বছর প্রায় ৮.৫ লক্ষ কোটি টাকার দুধ উৎপাদন করে, আর এই অর্থ যতটা ভারতে গম এবং চাল উৎপাদন হয়, তার মূল্য থেকেও অনেক বেশি। সেজন্য ভারতের ডেয়ারি ক্ষেত্রকে মজবুত করা আজ আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম। এই পর্যায়ে আজ এখানে ‘বনাস কাশী সঙ্কুল’-এর শিলান্যাস করা হয়েছে। বন্ধুগণ, এত ভিড় হয়েছে যে এখন এই মাঠ ছোট বলে মনে হচ্ছে,  জায়গাই নেই দেখছি! আপনারা যেখানে আছেন, সেখানেই একটু কষ্ট করে বসুন। বনাস ডেয়ারির সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। রামনগরের দুধ প্ল্যান্ট চালানোর জন্য বায়ো-গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্টেরও শিলান্যাস হল। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়েছে যার ইতিবাচক প্রভাব গোটা দেশের ডেয়ারি ক্ষেত্রে পড়বে। আজ এখানে দুধের শুদ্ধতা প্রমাণের জন্য সারা দেশে যে ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা রয়েছে তার লোগো প্রকাশ করা হয়েছে। ডেয়ারি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত এই প্রচেষ্টাগুলি ছাড়াও আজ উত্তরপ্রদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাঁদের বাড়ির আইনসম্মত দলিল-দস্তাবেজ বা ‘ঘরৌনি’ অর্পণ করা হয়েছে। বারাণসীকে আরও সুন্দর, সুগম এবং সুবিধাসম্পন্ন করে তোলার জন্য ১,৫০০ কোটি টাকারও বেশি খরচ করে তৈরি বিবিধ প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা শিলান্যাসও এখান থেকে হচ্ছে। এই সকল উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আপনাদের সবাইকে শুভকামনা জানাই। উত্তরপ্রদেশ এবং সারা দেশের গো-পালকদের বিশেষ শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল যখন আমাদের গ্রামে গ্রামে কার বাড়িতে কত গৃহপালিত পশু আছে তা দিয়ে সম্পন্নতার মাত্রা নির্ধারিত হত, আমাদের পরিচয় চিহ্নিত হত, আর আমাদের দেশে তো দীর্ঘকাল ধরেই এই গৃহপালিত পশুদের ‘পশুধন’ বলা হয়ে আসছে। আর দরজার সামনে কত খুঁটি রয়েছে, তার প্রতিযোগিতা চলত। আমাদের শাস্ত্রেও কামনা করা হয়েছে –

“গাঁও মে সর্বতঃ

চৈব গওয়াম্ মধ্যে গসাম্যহম্।।”

অর্থাৎ, গাভীরা আমার চারিপাশে থাকবে আর আমরা গাভীদের মধ্যে বসবাস করব। এই ক্ষেত্রটি আমাদের দেশে বরাবরই রোজগারের একটা বড় মাধ্যম। কিন্তু অনেক দীর্ঘ সময় ধরে, অনেক দশক ধরে এই ক্ষেত্রটি যতটা গুরুত্ব পাওয়া উচিৎ ছিল, তা পূর্ববর্তী সরকারগুলির কাছ থেকে পায়নি। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকার সারা দেশে এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনছে। আমরা ‘কামধেনু আয়োগ’ গঠন করেছি, ডেয়ারি ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছি। আমরা একটা অনেক বড় অভিযান চালিয়ে লক্ষ লক্ষ পশুপালকদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের পরিষেবার সঙ্গেও যুক্ত করেছি। কৃষকরা যাতে ভালো  গুণসম্পন্ন গাভীদের খাদ্য ও বীজ পান, তার জন্য ক্রমাগত কাজ করা হচ্ছে। পশুদের যাতে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করা যায়, বাড়িতেই যেন কৃত্রিম গর্ভাধানের ব্যবস্থা করা যায়, সে কথা মাথায় রেখে সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমরা পশুদের ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ বা পা এবং মুখের যে রোগগুলি হয় - ক্ষুর পোকা, মুখ পোকা এগুলি নিয়ন্ত্রণের জন্যও সারা দেশে টিকাকরণ অভিযান চালিয়েছে। আমাদের সরকার শুধু যে শিশুদের বিনামূল্যে টিকাকরণ করছে তাই নয়, শুধু যে করোনার টিকা বিনামূল্যে দিচ্ছে তা-ও নয়, সারা দেশে পশুধনের সুরক্ষার জন্যও অনেক ধরনের টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

দেশে এ ধরনের প্রচেষ্টার পরিণাম হল, আগের তুলনায় বিগত ৬-৭ বছরে দেশে দুগ্ধ উৎপাদন প্রায় ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে। আজ ভারত গোটা বিশ্বের প্রায় ২২ শতাংশ দুগ্ধ উৎপাদন করে - প্রায় এক-চতুর্থাংশ! আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে উত্তরপ্রদেশ আজ দেশের সবচাইতে অধিক দুগ্ধ উৎপাদক রাজ্য হওয়ার পাশাপাশি ডেয়ারি শিল্প বিস্তারের ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে আছে।

ভাই ও বোনেরা,

এটা আমার অটুট বিশ্বাস যে দেশের ডেয়ারি ক্ষেত্র, পশুপালন, শ্বেত ক্রান্তির মাধ্যমে নতুন প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলে কৃষকদের আর্থিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এই বিশ্বাসের পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। প্রথম কারণটি হল পশুপালন। দেশের ছোট ছোট কৃষকরা, যাঁদের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি, তাঁদের অতিরিক্ত আয়ের একটা বড় উপায় হয়ে উঠতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভারতের ডেয়ারিজাত পণ্যের জন্য বিদেশে অনেক বড় বাজার রয়েছে। ফলে আপনাদের এগিয়ে যাওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তৃতীয়ত, পশুপালন, মহিলাদের আর্থিক উত্থান, তাঁদের শিল্পোদ্যোগ বৃদ্ধিরও অনেক বড় উপায় আর চতুর্থত, আমাদের পশুধন বায়ো-গ্যাস, জৈব চাষ এবং প্রাকৃতিক চাষেরও অনেক বড় উপায়। যে পশু দুধ দেওয়ার যোগ্য থাকে না, তারাও বোঝা হয় না কারণ তারাও প্রতিদিন কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষমতা রাখে।

ভাই ও বোনেরা,

আমাদের ডবল ইঞ্জিনের সরকার সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে, পূর্ণ শক্তি দিয়ে কৃষকদের এবং পশুপালকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ এখানে যে ‘বনাস কাশী সঙ্কুল’-এর শিলান্যাস করা হল, সেটাও সরকার এবং সরকারের এই অংশীদারিত্বের প্রমাণ। সমবায় ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বনাস ডেয়ারির সঙ্গে আজ পূর্বাঞ্চলের কৃষক ও গো-পালকদের একটি নতুন অংশীদারিত্ব শুরু হয়েছে। এই আধুনিক ডেয়ারি প্ল্যান্ট যখন তৈরি হবে, তখন শুধু পিন্দরা নয়, শিবপুর, সেবাপুরী, রোহনিয়া, গাজিপুর, জৌনপুর, চন্দৌলি, মির্জাপুর, বালিয়া, আজমগড় ও মৌ-এর মতো জেলাগুলির হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কৃষক এর মাধ্যমে লাভবান হবেন। ‘বনাস কাশী সঙ্কুল’-এর কারণে চারপাশের অনেক গ্রামে দুগ্ধ সমিতি গড়ে উঠবে, সংগ্রহ কেন্দ্র গড়ে উঠবে আর দুধ নষ্ট হওয়ার চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, এখানে ভালো প্রজাতির পশুর জন্য কৃষকদের সাহায্য করা হবে, তাঁদের পশুদের জন্য ভালো মানের আহারেরও যোগান দেওয়া হবে। দুধ, দই, ঘোল, মাখন, পনির ছাড়াও এখানে আইসক্রিম এবং বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি হবে। অর্থাৎ, বেনারসের লসসি আর ছানা দিয়ে তৈরি একটার থেকে আরেকটা ভালো মিষ্টি কিংবা লবঙ্গলতা – এসবের স্বাদ এখন আরও বাড়বে। এমনিতে এখন তো দুধের সর, মালাইয়ের ঋতু এসে গেছে। ‘বনাস কাশী সঙ্কুল’ এবার একভাবে বেনারসের রসকে আরও বাড়িয়ে দেবে।

ভাই ও বোনেরা,

সাধারণত দুধের উৎকর্ষ ও স্বীকৃতি নিয়ে আমাদের দেশে অনেক সমস্যা হয়। দুধ কেনার সময় কোনটা নিরাপদ - এটা ঠিক করা সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে খুব কঠিন কাজ! স্বীকৃতির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ব্যবস্থা থাকার ফলে পশুপালক এবং দুগ্ধ সঙ্ঘগুলির পাশাপাশি গোটা ডেয়ারি ক্ষেত্রকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এখন সারা দেশের ডেয়ারি ক্ষেত্রের এই সমস্যাকে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হয়েছে। আজ ভারতীয় মানক ব্যুরো (বিএসআই) সারা দেশের জন্য ঐক্যবদ্ধ ব্যবস্থা জারি করেছে। সার্টিফিকেশনের জন্য কামধেনু গোরুর বিশেষত্বসম্পন্ন ঐকবদ্ধ লোগো প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রমাণ, এই স্বীকৃতি, এই লোগো শুদ্ধতার পরিচয় বহন করবে আর ভারতের দুগ্ধ উৎপাদনের বিশ্বস্ততাও বাড়াবে।

বন্ধুগণ,

আজ দেশের অনেক বড় প্রয়োজন হল ডেয়ারি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত পশুদের মল-মূত্রের সঠিক ব্যবহারকে সুনিশ্চিত করা। রামনগরের দুগ্ধ প্রকল্পগুলির কাছে বায়ো-গ্যাস থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্ট নির্মাণের উদ্যোগ এমনই একটি বড় প্রচেষ্টা। এটা নিজের মতোই এমন একটি প্রকল্প যা ডেয়ারি ব্যবস্থার সমস্ত জ্বালানির প্রয়োজন বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট থেকেই মেটানো সম্ভব হবে। অর্থাৎ, কৃষকরা শুধু দুধ থেকে নয়, গোবর বিক্রি থেকেও রোজগার করতে পারবেন। সাধারণতঃ কৃষকরা গোবর থেকে যে মূল্য পান, তার থেকে অনেক বেশি মূল্য দিয়ে এই বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্টগুলি কৃষকদের থেকে গোবর কিনবে। এখানে যে বায়ো-স্লারি তৈরি হবে তার ব্যবহার বায়ো-স্লারি ভিত্তিক জৈব সার উৎপাদনের জন্য করা হবে। যে বিশেষ জৈব সার তৈরি হবে তা কৃষকরা রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক কম দামে কিনতে পারবেন। এর ফলে জৈব চাষ – প্রাকৃতিক চাষেরও উন্নয়ন হবে আর অসহায় পশুদের সেবার ক্ষেত্রেও উৎসাহ যোগানো সম্ভব হবে।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল যখন ভারতে ন্যাচারাল ফার্মিং বা প্রাকৃতিক চাষ হত আর প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেই হত। প্রাকৃতিক চাষ অর্থাৎ, চাষে কোনও বাইরের কিছু মেশানো চলবে না। যা খেত থেকে পাওয়া যাবে বা খেত সংশ্লিষ্ট পশুদের মলমূত্র ও দেহাবশেষ থেকে পাওয়া যাবে, সেসব উপাদান দিয়েই চাষের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সার থেকে শুরু করে কীটনাশক – সবকিছুই প্রাকৃতিক উৎস থেকে খুঁজে নিতে হবে বা তৈরি করে ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সময়ের পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতিক চাষের পরিধি সঙ্কুচিত হতে থাকে। রাসায়নিক চাষের প্রভাব ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ধরিত্রী মায়ের কায়াকল্পের জন্য, আমাদের মাটির নিরাপত্তার জন্য, পরবর্তী প্রজন্মগুলির ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এখন আমাদের আরও একবার প্রাকৃতিক চাষের দিকে মুখ ফেরাতে হবে, সেদিকেই ফিরতে হবে। এটাই আজ সময়ের দাবি, আর সেজন্য এখন সরকার প্রাকৃতিক চাষকে উৎসাহ যোগানোর জন্য, কৃষকদের সচেতন করার জন্য অনেক বড় অভিযানও শুরু করেছে। আজ যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব পালন করছি, তখন আমি দেশবাসীকে, বিশেষ করে আমার কৃষক ভাই-বোনেদের, বিশেষ করে আমার ক্ষুদ্র কৃষক ভাই-বোনেদের আজ কৃষক দিবসে এই অনুরোধ করব যে আপনারা প্রাকৃতিক চাষের দিকে এগিয়ে যান। প্রাকৃতিক চাষে খরচও কম হয়, উৎপাদনও বাড়ে। এই চাষের পদ্ধতি সবচাইতে সুলভ, সুরক্ষিত আর আজকের বিশ্বে প্রাকৃতিক চাষ থেকে উৎপাদিত ফসলের দামও সবচাইতে বেশি। প্রাকৃতিক চাষ আমাদের কৃষিক্ষেত্রকে আত্মনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে একটি অত্যন্ত বড় পদক্ষেপ। আমি দেশের স্টার্ট-আপ সেক্টরকেও বলব, দেশের নবীন শিল্পোদ্যোগীদের বলব যে ন্যাচারাল ফার্মিং আপনাদের জন্য অনেক নতুন নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। আমাদের নবীন প্রজন্ম, আমাদের যুব সমাজের উচিৎ এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানো। এখন এই মঞ্চে আসার আগে আমার অনেক যুব বন্ধুর সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তাঁরা কত বড় সাহসের কাজ করেছেন, কত বড় পরিবর্তন তাঁদের জীবনে এসেছে - তা শুনে আমার খুব আনন্দ হয়েছে। আমাদের চালু করার প্রকল্পগুলির প্রতি আমার বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

গ্রামে গ্রামে কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তুলতে, তাঁদের অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করতে ‘স্বামীত্ব যোজনা’ অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে যোগীজির নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ এক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। উত্তরপ্রদেশের ৪৫টি জেলায় ২৩ লক্ষেরও বেশি ‘ঘরৌনি’ তৈরি করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে প্রায় ২১ লক্ষ পরিবারকে আজ এই বাড়ির দলিল দেওয়া হয়েছে। নিজেদের বাড়ির দলিল যখন হাতে আসে, তখন গরীব, দলিত, বঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া মানুষ নিজের সম্পত্তির ওপর জবরদখলের দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পান। বিগত সরকারগুলির শাসনকালে অবৈধ দখলদারির যে প্রবৃত্তি এখানে অঙ্কুরিত হয়েছে, এই ‘স্বামীত্ব যোজনা’ তাতে লাগাম পরাবে। দলিল পাওয়ার ফলে প্রয়োজনে গরীব মানুষেরা ব্যাঙ্ক থেকে সহজেই ঋণ নিতে পারবেন। এর ফলে গ্রামের যুব সম্প্রদায়ের রোজগার এবং স্বনির্ভরতার জন্য নতুন মাধ্যম তৈরি হবে।

ভাই ও বোনেরা,

উন্নয়নের কথা যখন উঠেছে, তখন কাশীতে গড়ে ওঠা উন্নয়ন প্রক্রিয়া  নিজেই ক্রমে একটি মডেলে পরিণত হয়ে উঠছে। পুরনো পরিচয়কে বজায় রেখে আমাদের শহরগুলি কিভাবে নতুন কায়া পেতে পারে - কাশীর মানুষ তা দেখছেন। আজ যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ও শিলান্যাস হয়েছে, সেগুলি এক অনিন্দ্যসুন্দর কাশী, ‘দিব্য কাশী অভিযান’কে আরও গতি প্রদান করবে। কালভৈরবজি সহ শহরের ছয়টি ওয়ার্ডে যে পুনর্বিকাশের কাজ হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়ায় ৭০০টিরও বেশি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এর ফলে স্মার্ট এবং সুরক্ষিত পরিষেবাগুলির দিকে এগিয়ে যাওয়া কাশী অনেক শক্তিশালী হয়েছে। মহান সাধু পূজনীয় শ্রী রবিদাসজির জন্মস্থলকে বিকশিত করার কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। লঙ্গর হলটি তৈরি হয়ে গেলে এখানে সারা দেশ থেকে আসা ভক্তদের অনেক সুবিধা হবে।

ভাই ও বোনেরা,

আজ বারাণসীর যে চৌরাস্তাগুলির সৌন্দর্যায়ন হচ্ছে, প্রশস্ত করা হচ্ছে, নতুন পার্কিং স্থানগুলি নির্মাণ করা হচ্ছে, তাতে শহরে ট্র্যাফিক জ্যামের পরিস্থিতি অনেকটাই শুধরেছে। বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই যে মহাসড়কটি প্রয়াগরাজের দিকে যাচ্ছে এর ওপর কতটা চাপ থাকে, কতটা যানজট হয়, তা আপনাদের থেকে ভালো আর কে জানে। এখন এই পথটি ছয় লেনের হয়ে গেলে দিল্লি, আগ্রা, কানপুর ও প্রয়াগরাজে যাতায়াত করা যাত্রীদের এবং পণ্য পরিবহণ – সবকিছুই আরও সুবিধাজনক হবে। শুধু তাই নয়, শহরের অন্যান্য এলাকাতেও আসা-যাওয়া আরও সহজ হবে। এই সড়কটি জেলার প্রবেশ দ্বারের মতো বিকশিত হবে। বারাণসী-ভদোহি-গোপীগঞ্জ সড়কপথটি প্রশস্ত হলে শহর থেকে বেরিয়ে আসা গাড়িগুলি রিং রোড ফেজ-২ হয়ে বাইরে দিয়ে যেতে পারবে। এতে শহর ভারী যানজট থেকে মুক্তি পাবে।

ভাই ও বোনেরা,

স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং রিসার্চ হাব রূপে কাশীর পরিচয়কে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চলছে। আজ এখানে একটি আয়ুষ হাসপাতালেরও উদ্বোধন হল আর একটি নতুন হোমিওপ্যাথি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজও শুরু হল। এ ধরনের সুবিধার মাধ্যমে কাশী ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রূপে বিকশিত হতে চলেছে। ‘ক্ষেত্রীয় নির্দেশ মানক প্রয়োগশালা’ গড়ে ওঠার ফলে জল পরীক্ষা, বস্ত্র এবং কার্পেটের মান সংক্রান্ত পরীক্ষা এখানেই সম্ভব হবে। এর ফলে বারাণসী এবং চারপাশের অনেক শিল্পোদ্যোগ ও তাঁতিরা সরাসরি লাভবান হবেন। তেমনই, আন্তর্জাতিক রাইস রিসার্চ সেন্টার বা চাল গবেষণা কেন্দ্রে নতুন স্পিড ব্রিডিং ফেসিলিটি স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে ধানের নতুন নতুন প্রজাতি বিকাশিত করার ক্ষেত্রে আগের তুলনায় অনেক কম সময় লাগবে।

ভাই ও বোনেরা,

আমি যখন কাশী, উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের ডবল ইঞ্জিন কিংবা ডবল শক্তি বা ডবল উন্নয়নের কথা বলি, তখন অনেকের খুব কষ্ট হয়। তাঁরা সেই মানুষ যাঁরা উত্তরপ্রদেশকে শুধুই রাজনীতি, শুধুই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের চশমা দিয়েই দেখেছেন। তাঁরা কখনও চাননি যে উত্তরপ্রদেশের উন্নয়ন হোক, উত্তরপ্রদেশের আধুনিক পরিচয় গড়ে উঠুক। স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সড়ক, পানীয় জল, বিদ্যুৎ সরবরাহ, গরীবদের জন্য বাড়ি, রান্নার গ্যাস সংযোগ, শৌচালয় নির্মাণ – এসব কিছুকে তাঁরা উন্নয়ন বলে মনে করেন না। আমরা যখন বলি ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’ – এই ভাষাটাই তাঁদের সিলেবাসে নেই, তাঁদের ডিকশেনারিতে নেই। তাঁদের সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম কী আছে? তাঁদের ডিকশেনারি বা অভিধানে কী আছে? তাঁদের কথার ফুলঝুরিতে কী কী থাকে, তাঁদের ভাবনা-চিন্তা কেমন, তা আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন। তাঁদের সিলেবাসে আছে মাফিয়াবাদ আর পরিবারবাদ। তাঁদের সিলেবাসে আছে বাড়ি, ঘর, জমির ওপর অবৈধ দখলদারি। পূর্ববর্তী সরকারগুলির সময়ে উত্তরপ্রদেশে মানুষ যা যা পেয়েছেন আর আজ উত্তরপ্রদেশের মানুষ আমাদের সরকারের থেকে যা যা পাচ্ছেন তার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আমরা উত্তরপ্রদেশে ঐতিহ্যেরও সংরক্ষণ করছি, উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নও করছি। কিন্তু শুধুই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের উত্তরপ্রদেশের এই উন্নয়ন পছন্দ হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে তাঁরা পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে, বাবা বিশ্বনাথের কাজে, বিশ্বনাথ ধামের নির্মাণ কাজেও আপত্তি জানাচ্ছেন। আমাকে বলা হয়েছে যে গত রবিবার কাশী বিশ্বনাথ ধাম দর্শনের জন্য একদিনে ১ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি ভক্ত এসেছিলেন। উত্তরপ্রদেশকে যাঁরা অনেক দশক ধরে পেছন দিকে ঠেলছেন, তাঁরা তো এসব দেখে অসন্তুষ্ট হবেনই। তাঁদের অসন্তোষ প্রতিদিন আরও বাড়বে। যেভাবে গোটা উত্তরপ্রদেশের জনগণ ডবল ইঞ্জিন সরকারের পাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, আমাদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন আর যেভাবে এই আশীর্বাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে তাঁদের রাগ এখন সপ্তমে পৌঁছবে।

বন্ধুগণ,

ডবল ইঞ্জিনের সরকার উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের জন্য এভাবেই দিন-রাত পরিশ্রম করতে থাকবে। মহাদেবের আশীর্বাদ এবং কাশীবাসীর ভালোবাসায় উন্নয়নের নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হতে থাকবে এই বিশ্বাস নিয়ে সকল উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমার সঙ্গে জোরে বলুন – ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1785026) Visitor Counter : 206