প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

পিএম কেয়ার্স প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা অনেককটি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্ট জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করার পর প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 07 OCT 2021 3:04PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৭ অক্টোবর, ২০২১

 

ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়,

উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুরমীত সিং-জি, উত্তরাখণ্ডের প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ নবীন ও কর্মোৎসাহী মুখ্যমন্ত্রী আমার প্রিয় বন্ধু শ্রী পুস্কর সিং ধামীজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য শ্রী মনসুখ মাণ্ডব্যজি, শ্রী অজয় ভট্টজি, উত্তরাখণ্ড বিধানসভার অধ্যক্ষ শ্রী প্রেমচাঁদ আগরওয়ালজি, উত্তরাখণ্ড সরকারের মন্ত্রী ডঃ ধন সিং রাওয়াতজি, আজ তাঁর জন্মদিন, তাঁকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আজকের অনুষ্ঠানের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হওয়া নানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীগণ, বিভিন্ন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের লেফটেন্যান্ট গর্ভনরগণ, নানা রাজ্যের মন্ত্রীগণ, সাংসদ এবং বিধায়কগণ আর আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

এই দেবভূমি ঋষিদের তপস্যার ভূমি ছিল। এই দেবভূমি যোগ নগরী রূপে বিশ্ববাসীকে যুগ যুগ ধরে আকর্ষণ করে আসছে। মা গঙ্গার তটে আমরা যুগ যুগ ধরে তাঁদের আশীর্বাদ পেয়েছি। আজ থেকে নবরাত্রির পবিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে। আজ প্রথমদিন। মা শৈলপুত্রীর পুজো হয়। মা শৈলপুত্রী হিমালয়-কন্যা আর আজকের দিনে আমার এখানে আসা, এখানে এসে এই মাটিকে প্রণাম জানানো, হিমালয়ের এই মাটিকে প্রণাম জানানো, জীবনে এর থেকে আর কী করে বেশি ধন্য হতে পারতাম! আজ আমি যে উত্তরাখণ্ডে এসেছি তার জন্য আয়োজকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ, এবার টোকিও অলিম্পিকে এই দেবভূমির সুপুত্র সাফল্য অর্জন করেছে আর সেজন্য আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। উত্তরাখণ্ডের এই দিব্যভূমি আমার মতো অনেক মানুষের জীবনধারাকে পরিবর্তিত করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই ভূমি সেজন্য আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূমির সঙ্গে আমার সম্পর্ক অন্তরের, কর্মের, সত্যের ও তত্ত্বের।

বন্ধুগণ,

উত্তরাখণ্ডের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী একটু আগেই যেভাবে আমাদের মনে করিয়েছেন যে ২০ বছর আগে আজকের দিনেই আমি প্রথম জনগণের সেবা করার নতুন দায়িত্ব পেয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে জনগণের সেবা করার আমার সফর তো অনেক দশক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আজ থেকে ২০ বছর আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী রূপে নতুন দায়িত্বভার আমার ওপর অর্পণ করা হয়েছিল। এমনিতে এটাও একটা সংযোগ বলব যে, উত্তরাখণ্ড রাজ্যটিও ২০০০ সালেই গঠিত হয়েছিল, আর আমার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যাত্রা এর কয়েক মাস পরেই, ২০০১ সালে শুরু হয়েছিল।

বন্ধুগণ,

সরকারের প্রধান হিসেবে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী এবং তারপর দেশের জনগণের আশীর্বাদে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে পৌঁছনো – এসবের কল্পনা আমি কখনও করিনি। ২০ বছরের এই অখণ্ড যাত্রা আজ একুশতম বছরে পা রাখছে, আর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বছরে যে মাটি আমাকে নিরন্তর তার স্নেহ দিয়েছে, আপনত্ব দিয়েছে, সেখানে আসার সুযোগকে আমি অনেক বড় সৌভাগ্য বলে মনে করি। হিমালয়ের এই তপোভূমি যে তপস্যা এবং ত্যাগের পথ দেখায়, সেই ভূমিতে এসে কোটি কোটি দেশবাসীকে সেবা করার সঙ্কল্প আমার মনে আরও দৃঢ় হয়েছে, আরও শক্তিশালী হয়েছে। এখানে এলেই আমি একটি নতুন প্রাণশক্তির স্পন্দন অনুভব করি।

ভাই ও বোনেরা,

যোগ এবং আয়ুর্বেদের শক্তি দিয়ে যে অঞ্চল জীবনকে আরোগ্যের সমাধান প্রদান করেছে, সেখান থেকে আজ সারা দেশের জন্য অনেক নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট জাতির উদ্দেশে সমর্পণ করা হচ্ছে। এ দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলির মাধ্যমে এই নতুন পরিষেবা পাওয়ার জন্য আপনাদের সবাইকে, দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

বন্ধুগণ,

১০০ বছরের সবচাইতে বড় সঙ্কটের মোকাবিলা আমাদের দেশের জনগণ যে সাহস ও শৌর্য্যের সঙ্গে করছে তা বিশ্ববাসী অত্যন্ত নিবিড়ভাবে দেখছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এত কম সময়ে ভারত যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, তা আমাদের দেশের সামর্থ্যকে তুলে ধরে। করোনা যখন শুরু হয়েছিল তখন দেশে মাত্র একটিই টেস্টিং ল্যাব ছিল। সেখান থেকে আজ দেশে প্রায় ৩ হাজার টেস্টিং ল্যাবের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। শুরুতে মাস্ক এবং কিটস আমদানি করতে হত, আর এখন আমরা দেশে-বিদেশে মাস্ক ও কিটস-এর অন্যতম প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে। দেশের প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতেও নতুন ভেন্টিলেটরের পরিষেবা, ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ করোনা টিকার বড় মাত্রায় দ্রুত ও সফল উৎপাদন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং দ্রুততম টিকাকরণ অভিযানের মাধ্যমে ভারত যা করে দেখিয়েছে, তা আমাদের সঙ্কল্প শক্তি, আমাদের জনগণের সেবাভাব এবং ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক।

ভাই ও বোনেরা,

ভারতের করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় সমস্যা ছিল আমাদের বিপুল জনসংখ্যা আর ভারতের বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক পরিস্থিতি উদ্ভূত নানা ধরনের প্রতিকূলতা। অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে টিকা পর্যন্ত – এই দু’ধরনের প্রতিকূলতা দেশের সামনে বারবার এসেছে, ক্রমাগত এসেছে। দেশ কিভাবে এই প্রতিকূলতাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, সে সম্পর্কে জানা ও বোঝা প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

বন্ধুগণ,

সাধারণ পরিস্থিতিতে ভারতে একদিনে ৯০০ মেট্রিক টন তরল মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদিত হত। করোনার সময় চাহিদা বৃদ্ধির পর ভারত মেডিকেল অক্সিজেনের উৎপাদন ১০ গুণ থেকেও বেশি বাড়িয়েছে। এটি বিশ্বের যে কোনও দেশের জন্য একটি অকল্পনীয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল কিন্তু ভারত এটি বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছে।

বন্ধুগণ,

এখানে উপস্থিত অনেক সম্মানিত ব্যক্তি এই বাস্তবিকতার সঙ্গে পরিচিত যে অক্সিজেন উৎপাদনের পাশাপাশি তা বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেও কত প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। অক্সিজেন যেমন-তেমন ট্যাঙ্কারে করে নিয়ে যাওয়া যায় না। এর জন্য বিশেষ ধরনের ট্যাঙ্কার চাই। ভারতে অক্সিজেন উৎপাদনের কাজ সবচাইতে বেশি পূর্ব ভারতে হয়। কিন্তু সমস্যা হল করোনার সময় সবচাইতে বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় উত্তর ও পশ্চিম ভারতে।

ভাই ও বোনেরা,

পরিবহণের এত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করেছে। দেশ এবং বিশ্বের যে কোনও জায়গা থেকে পেরেছি সেখান থেকেই অক্সিজেন ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলি আনার জন্য বিশেষ অক্সিজেন ট্রেন চালানো হয়েছে। খালি ট্যাঙ্কার দ্রুতগতিতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিমানবাহিনীর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ডিফেন্স রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)-এর মাধ্যমে তেজস ফাইটার প্লেনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে দেশে অনেকগুলি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরি করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। ১ লক্ষেরও বেশি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের জন্য অর্থের যোগান দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

ভবিষ্যতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে সারা দেশে অনেকগুলি পিএসএ অক্সিজেন প্ল্যান্টের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। বিগত কয়েক মাসে পিএম কেয়ার্স স্বীকৃত ১,১৫০-এর বেশি অক্সিজেন প্ল্যান্ট কাজ করা শুরু করেছে। এখন দেশের প্রত্যেক জেলায় পিএম কেয়ার্স-এর মাধ্যমে গড়ে তোলা অক্সিজেন প্ল্যান্টের কভারেজ সম্ভব হয়েছে। পিএম কেয়ার্সের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা অক্সিজেন প্ল্যান্টগুলি সহ কেন্দ্রীয় সরকার, বিভিন্ন রাজ্য সরকার – এই সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় সারা দেশে প্রায় ৪ হাজার নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে। অক্সিজেনের সমস্যার মোকাবিলা করতে এখন দেশ এবং দেশের হাসপাতালগুলি আগের থেকে অনেক বেশি সক্ষম হয়ে উঠছে।

বন্ধুগণ,

এটা প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য গর্বের কথা যে ইতিমধ্যেই করোনা টিকার ৯৩ কোটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। অতি সত্ত্বর আমরা ১০০ কোটি ডোজ দেওয়ার সাফল্য অর্জন করব। ভারত ‘কোউইন’ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলে গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে যে, এত বড় মাত্রায় টিকাকরণ অভিযান কিভাবে করা যেতে পারে। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চল থেকে শুরু করে ঊষর মরুভূমি, অরণ্য থেকে শুরু করে সমুদ্রতট, কোনও অঞ্চলের বাসিন্দা ১০ জন হোক কিংবা ১০ লক্ষ – প্রত্যেক এলাকায় আজ আমরা সম্পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে টিকা পৌঁছে দিচ্ছি। এর জন্য সারা দেশে ১ লক্ষ ৩০ হাজারেরও বেশি টিকাকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখানে রাজ্য সরকারের কার্যকর ব্যবস্থাপনার ফলে উত্তরাখণ্ডে অতি দ্রুত ১০০ শতাংশ উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সম্ভব হবে আর সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীজি ও তাঁর গোটা টিমকে, এখানে উপস্থিত ছোট-বড় সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের আমি হৃদয় থেকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

ভাই ও বোনেরা,

যেখানে তরাইয়ের মতো সমতল ভূমি রয়েছে, সেখানে এই কাজ সহজভাবেই করা যায়। কিন্তু এই রাজ্যে অনেক পার্বত্য অঞ্চল রয়েছে, সেখানে টিকা পৌঁছনো অনেক কঠিন কাজ। হিমালয়ের দুর্গম পথ পেরিয়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামগুলিতে টিকা নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। এটা আমরা খুব ভালোভাবেই জানি। তা সত্ত্বেও এতবড় সাফল্য অর্জনের জন্য আপনারা সকলেই অভিনন্দনের অধিকারী।

ভাই ও বোনেরা,

একবিংশ শতাব্দীর ভারত জনগণের প্রত্যাশা, জনগণের প্রয়োজনীয়তার পূর্ণ সমাধান করতে করতেই এগিয়ে যাবে। জনগণ সরকারের কাছে সমস্যা নিয়ে আসবে, আর তারপর তার সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এই প্রতীক্ষায় এখন সরকার থাকে না। সরকারি মানসিকতা আর ব্যবস্থাকে আমরা এই ভ্রম থেকে বের করে আনছি। এখন সরকার নাগরিকদের কাছে যায়। গরীবদের জন্য পাকা বাড়ি, বিদ্যুৎ, জল, শৌচালয় এবং রান্নার গ্যাসের সংযোগ, ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন, কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি হাজার হাজার কোটি টাকা পাঠানো, পেনশন ও বিমার সুবিধা প্রত্যেক ভারতবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা, জনহিতের মাধ্যমে এই ধরনের প্রতিটি কাজ করার ফলেই সরকার দ্রুতগতিতে সমস্ত সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছতে পারছে।

বন্ধুগণ,

স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও ভারত এই দৃষ্টিকোণ নিয়েই এগিয়ে চলেছে। এর ফলে গরীব ও মধ্যবিত্তদের অনেক সাশ্রয় হচ্ছে আর তাঁরা পরিষেবাও পাচ্ছেন। আগে যখন কারোর কঠিন রোগ হত, তখন তাঁরা আর্থিক সহায়তার জন্য এখানে-সেখানে নেতাদের কিংবা সরকারি অফিসগুলিতে ঘুরে ঘুরে জুতোর শুকতলা খসাতেন। আয়ুষ্মান ভারত এই সমস্যার বরাবরের জন্য সমাধান করে দিয়েছে। হাসপাতালের বাইরে দীর্ঘ লাইন, চিকিৎসায় বিলম্ব, মেডিকেল হিস্ট্রির অভাব – এই সমস্ত কারণে অনেক মানুষকে ভুগতে হত। এখন আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন প্রথমবারের মতো এই সমস্যাগুলির সমাধানের চেষ্টায় সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুগণ,

ছোটখাটো শারীরিক সমস্যার জন্য, বিভিন্ন রোগীদের রুটিন চেক-আপের জন্য বারবার শহরে আসা-যাওয়া কত কঠিন কাজ তা উত্তরাখণ্ডের জনগণের চাইতে বেশি কারা বুঝতে পারবে। মানুষের এই সমস্যা দূর করার জন্য এখন ই-সঞ্জীবনী অ্যাপ পরিষেবা চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে নিজেদের বাড়িতে বসে রোগীরা শহরের হাসপাতালগুলির চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন। এই ব্যবস্থার ফলে উত্তরাখণ্ডের জনগণ ইতিমধ্যেই অনেক উপকৃত হচ্ছেন।

ভাই ও বোনেরা,

সকলের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে প্রান্তিক মানুষদের জন্য একটি মজবুত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। ৬-৭ বছর আগে পর্যন্ত মাত্র কয়েকটি রাজ্যে এইমস-এর মতো উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা ছিল। আজ দেশের প্রত্যেক রাজ্যে এইমস-এর সমতুল পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। মাত্র ছয়টি এইমস হাসপাতাল থেকে এগিয়ে ইতিমধ্যেই সরকার ২২টি এইমস-এর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সরকারের এই লক্ষ্যও রয়েছে যে দেশের প্রত্যেক জেলায় কম করে একটা মেডিকেল কলেজ অবশ্যই তৈরি করতে হবে। সেজন্য বিগত ৭ বছরে দেশে ১৭০টি নতুন মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। আরও কয়েক ডজন নতুন মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলার কাজ চলছে। এখানে আমার উত্তরাখণ্ডেও রুদ্রপুর, হরিদ্বার এবং পিথৌরাগরে নতুন মেডিকেল কলেজের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

উত্তরাখণ্ড রাজ্য গঠনের স্বপ্ন অটলজি বাস্তবায়িত করেছিলেন। অটলজি মনে করতেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে উন্নয়নের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরই প্রেরণায় আজ দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব গতি এবং পরিমাপে কাজ হচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে উত্তরাখণ্ড সরকার এই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। বাবা কেদারের আশীর্বাদে কেদারধামের সৌন্দর্য্য আরও বাড়ানো হচ্ছে। সেখানে তীর্থযাত্রীদের জন্য নতুন নতুন পরিষেবা বিকশিত হচ্ছে। আমিও কয়েকবার ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলির প্রগতির সমীক্ষা করি। চারধামকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করা, একটি ‘অল ওয়েদার রোড’ নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। চারধাম প্রকল্প দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত ভক্ত ও তীর্থযাত্রীদের জন্য অনেক বড় সুবিধা হয়ে উঠছে। গাড়োয়াল এবং কুমায়ুন পর্বতের প্রতিকূল অঞ্চলগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করছে। কুমায়ুন পার্বত্য অঞ্চলে চারধাম মহাসড়কের প্রায় ১৫০ কিলোমিটার অংশ এই অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। ঋষিকেশ থেকে কর্ণপ্রয়াগ রেললাইনের মাধ্যমেও উত্তরাখণ্ডের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও বিস্তারিত হবে। সড়কপথ এবং রেলপথ ছাড়াও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার কাজও উত্তরাখণ্ডের জনগণকে উপকৃত করেছে। দেরাদুন বিমানবন্দরের ক্ষমতা ২৫০ যাত্রী থেকে বাড়িয়ে ১,২০০-তে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ধামীজির উৎসাহী এবং প্রাণপ্রাচুর্য্যময় নেতৃত্বে উত্তরাখণ্ডে হেলিপোর্ট পরিকাঠামোকেও অনেক উৎসাহ যোগানো হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

জল সরবরাহের ক্ষেত্রেও উত্তরাখণ্ডে আজ প্রশংসনীয় কাজ হচ্ছে। এর ফলে সবচাইতে বেশি লাভবান হচ্ছেন মহিলারা। তাঁদের জীবন আরও সহজ হয়ে উঠছে। ২০১৯ সালে জল জীবন মিশন শুরু হওয়ার আগে উত্তরাখণ্ডের মাত্র ১ লক্ষ ৩০ হাজার বাড়িতেই নলের মাধ্যমে জল পৌঁছত। আজ উত্তরাখণ্ডের ৭ লক্ষ ১০ হাজারেরও বেশি বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছতে শুরু করেছে। অর্থাৎ, মাত্র দু’বছরের মধ্যে রাজ্যের প্রায় ৬ লক্ষ বাড়িতে নলের মাধ্যমে জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের সংযোগ যেভাবে মহিলাদের স্বস্তি দিয়েছে, স্বচ্ছ ভারত মিশনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা শৌচালয়গুলি যেমন মহিলাদের সুবিধা, নিরাপত্তা এবং সম্মান দিয়েছে, তেমনই জল জীবন মিশনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই নলের মাধ্যমে জল সংযোগ মহিলাদের অনেক স্বস্তি দিচ্ছে।

বন্ধুগণ,

দেশের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে উত্তরাখণ্ডের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। এখানকার বীর জওয়ানরা, বীরাঙ্গনারা ভারতের সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন নিরাপত্তা রক্ষা বাহিনীতে মর্যাদার সঙ্গে কাজ করছেন। আমাদের সরকার প্রত্যেক ফৌজি ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের কল্যাণ নিয়েও অনেক সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমাদের ফৌজি ভাইদের ৪০ বছরের পুরনো দাবি - ‘এক পদ এক পেনশন’ আমাদের সরকারের সময়েই চালু করা হয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ধামীজিও একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকের পুত্র। তিনি বলছিলেন যে ‘এক পদ এক পেনশন’-এর সিদ্ধান্ত অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের কতটা উপকার করেছে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকারই দিল্লিতে প্রথমবার ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল তৈরি করে দেশের বীর জওয়ানদের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে। আমাদের সরকারই ব্যাটেল ক্যাজুয়ালিটিজ ওয়েলফেয়ার ফান্ডের সুবিধাভোগীদের তালিকায় স্থলসেনার পাশাপাশি, নৌ-সেনা ও বায়ুসেনার শহীদদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। আমাদের সরকারই প্রথমবার জেসিও এবং অন্যান্য র‍্যাঙ্কের পদোন্নতি নিয়ে বিগত চার দশকের জটিলতাগুলি সমাধান করেছে। প্রাক্তন সৈনিকদের পেনশন সংক্রান্ত জটিলতাগুলি দূর করার জন্য আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছি।

বন্ধুগণ,

যখন সেনাবাহিনীর বীরদের হাতে আধুনিক সমরাস্ত্র থাকে, দেশ রক্ষার জন্য অন্যান্য আধুনিক সরঞ্জাম থাকে, তখন তাঁরা সহজেই শত্রুর মোকাবিলা করতে পারেন, শত্রুর আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারেন। যে এলাকাগুলিতে সৈনিকদের কঠিন আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানেও আধুনিক সরঞ্জামের মাধ্যমে তাঁরা অনেক উপকৃত হন। আমাদের সরকার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যে আত্মনির্ভরতার অভিযান চালিয়েছে সেটাও আমাদের ফৌজি বন্ধুদের অনেকভাবেই উপকৃত করবে আর নিশ্চিতভাবেই সরকারের এই সকল প্রচেষ্টার সুফল উত্তরাখণ্ডবাসীরা পাবেন, এখানকার জনগণ পাবেন।

ভাই ও বোনেরা,

আমরা অনেক দশকের উপেক্ষা ও অবহেলা থেকে এই দেবভূমিকে বের করে আনার অত্যন্ত সৎ প্রচেষ্টা করে চলেছি। উন্নত পরিকাঠামো নির্মাণের পর খালি পড়ে থাকা গ্রামগুলিতে আবার মানুষ ফিরে যেতে শুরু করেছেন। করোনার সঙ্কটকালে এ রাজ্যের অনেক যুবক-যুবতী ও কৃষকদের সঙ্গে আমার কয়েকবার কথা হয়েছে। যখন তাঁরা বলেন যে তাঁদের বাড়ির কাছে এখন সড়ক পৌঁছে গেছে, তাঁরা এখন হোম-স্টে চালু করে রোজগার করছেন, তখন আমি খুব আনন্দ পাই। নতুন পরিকাঠামোর মাধ্যমে কৃষি, পর্যটন, তীর্থযাত্রা এবং শিল্পোদ্যোগের জন্য, নবীন প্রজন্মের জন্য অনেক নতুন কর্মসংস্থানের পথ খুলতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

এই উত্তরাখণ্ডে নবীন প্রাণশক্তিতে ভরপুর উৎসাহী কর্মীরা রয়েছেন। আগামী কয়েক বছরে উত্তরাখণ্ড তার ২৫তম প্রতিষ্ঠা বর্ষে প্রবেশ করবে। নিকট ভবিষ্যতেই উত্তরাখণ্ডের ২৫ বছর পূর্তি হতে চলেছে। তখন উত্তরাখণ্ড কোন উচ্চতায় পৌঁছবে তা ঠিক করা এবং সেই লক্ষ্য প্রাপ্তির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার এটাই সঠিক সময়। কেন্দ্রে যে সরকার রয়েছে, সেই সরকার উত্তরাখণ্ডের এই নতুন টিমকে সবদিক থেকে সাহায্য করছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মিলিত প্রচেষ্টাই এখানকার জনগণের স্বপ্নগুলি বাস্তবায়নের অনেক বড় ভিত্তি। উন্নয়নের এই ডবল ইঞ্জিন উত্তরাখণ্ডকে নতুন গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। বাবা কেদারের কৃপায় আমরা প্রত্যেক সঙ্কল্প যেন পূরণ করতে পারি এই কামনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা।

ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1763423) Visitor Counter : 176