প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উদযাপনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী


বিশ্বভারতীর পথ চলা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্বের বিষয় : প্রধানমন্ত্রী

গুরুদেবের বিশ্বভারতী নিয়ে ভাবনা আত্মনির্ভর ভারতেরই সত্ত্বা : প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 24 DEC 2020 2:02PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী উদযাপনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রেখেছেন।

এই উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১০০ বছর ধরে বিশ্বভারতীর পথ চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য গর্বেরও। তিনি বলেছেন, গুরুদেবের চিন্তন, দর্শন এবং মা ভারতীর জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রকৃত রূপায়ণ হল এই বিশ্ববিদ্যালয়। কবিগুরু যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন সেই লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন এবং শান্তিনিকেতন নিরলস উদ্যোগ নেওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বভারতী থেকে উদ্ভুত বার্তা আমাদের দেশ সারা বিশ্বে প্রচার করছে। আন্তর্জাতিক সৌর জোটের মাধ্যমে পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য ভারত বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, প্যারিস চুক্তির পরিবেশগত লক্ষ্য পূরণে বড় বড় দেশগুলির মধ্যে ভারতই একমাত্র সঠিক পথে এগিয়ে চলেছে।

প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিষয়টির কথা সকলকে স্মরণ করতে বলেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্যপূরণের সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনের লক্ষ্য একই পথে অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু এইসব আন্দোলনগুলির ভিত অনেক আগেই গড়ে উঠেছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিভিন্ন আন্দোলনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন গতি পেয়েছিল। ভক্তি আন্দোলন ভারতের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক একতাকে শক্তিশালী করেছে। তিনি বলেছেন, ভক্তিযুগে ভারতের প্রতিটি অঞ্চলের থেকে সাধু সন্ন্যাসীরা দেশের চেতনাকে জাগ্রত করার চেষ্টা করেছেন। ভক্তি আন্দোলন হল সেই পথ, যেটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ঐক্যবদ্ধ সচেতনতা ও আস্থার মাধ্যমে ভারত অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জন্যই ভারত, স্বামী বিবেকানন্দকে পেয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের নিষ্ঠা, জ্ঞান ও কর্ম- তিনটি মিলে একীভূত হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে পবিত্রতা দেখেছিলেন। ভক্তির প্রসার ঘটিয়ে তার মধ্যে কর্মকে যুক্ত করে তিনি ব্যক্তি বিশেষ এবং প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছিলেন। ভারতের প্রতিটি অংশের ভক্তি আন্দোলনে যুক্ত বিশিষ্ট সন্ন্যাসীরা একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শত শত বছর ধরে ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গে কর্ম আন্দোলনও দেশ প্রত্যক্ষ করেছে। তিনি ছত্রপতি শিবাজী, মহারাণা প্রতাপ, ঝাঁসির রানি, রানি চিন্নেম্মা, ভগবান বিরসা মুন্ডা এবং আরও অনেকের উদাহরণ এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। ভারতের মানুষ দাসত্ব ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। শ্রী মোদী বলেছেন কর্ম হল নিরন্তর নিষ্ঠার প্রকাশ এবং অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের আত্মত্যাগ হল তার চূড়ান্ত প্রকাশ। পরবর্তীতে এগুলিই ছিল আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল অনুপ্রেরণা।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভক্তি, কর্ম এবং জ্ঞান- এই ত্রিধারা স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনাকে লালিত করেছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের জন্য আদর্শের বিপ্লব গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল। ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য একই সঙ্গে নতুন একটি প্রজন্ম তৈরি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। এই কাজে বেশ কিছু মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। দেশের স্বাধীনতার জন্য যে আদর্শের আন্দোলন চলছিল তাকে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি নতুন শক্তি, নতুন দিক ও নতুন উচ্চতা দিয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, জ্ঞান আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের বিচার করার শক্তি তৈরি হয়েছে। আর কর্ম আন্দোলন আমাদের নিজেদের অধিকারের জন্য লড়াই করার সাহস জুগিয়েছে। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতা আন্দোলন, যা প্রায় ১০০ বছর ধরে চলেছিল, তা আত্মবলিদান, ব্রত এবং একনিষ্ঠ মনোভাবের অনন্য একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনগুলির মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেদ থেকে বিবেকানন্দ পর্যন্ত জাতীয় চেতনার যে ধারা বহমান তার সঙ্গে গুরুদেবের জাতীয়তাবোধও যুক্ত হয়েছিল। কিন্তু এই ধারা নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার বা আলাদা রাখার নয়। ভারতকে সারা বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন করা এর উদ্দেশ্য ছিলনা। এই ভাবনা থেকেই ভারতের জন্য যেটি সবথেকে ভালো এবং পৃথিবীর জন্য যা ভালো সেই পথই গ্রহণ করা হয়েছিল। ভারতকে এর থেকে শিক্ষালাভ করতে হবে। ‘বিশ্বভারতী’ নামটির মধ্যে ভারতের সঙ্গে পৃথিবীর যোগসূত্র নিহিত রয়েছে। বিশ্বভারতীয় জন্য গুরুদেবের ভাবনা আসলে আত্মনির্ভর ভারতের সত্ত্বা। আত্মনির্ভর ভারত অভিযান হল বিশ্বের কল্যাণের জন্য ভারতের কল্যাণ। এই অভিযান ভারতকে ক্ষমতায়িত করবে, এই অভিযান ভারতের জন্য যে সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে তা সারা পৃথিবীকে সমৃদ্ধ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।

***

 

CG/CB/NS



(Release ID: 1683351) Visitor Counter : 249