প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভারত-বাংলাদেশ ভার্চুয়াল সম্মেলনে যৌথ বিবৃতি

Posted On: 17 DEC 2020 4:07PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২০

১) ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ই ডিসেম্বর ভার্চুয়ালি একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয়ে উভয় পক্ষ সর্বাঙ্গীন আলোচনা করেছে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা মতবিনিময় করেছেন।

 

ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্ব

২) ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা এবং অন্যান্য অভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর ভিত্তি করে পারস্পরিক সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে সেটি সার্বভৌমত্ব, সাম্য, আস্থা এবং বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে একটি সর্বোৎকৃষ্ট অংশীদারিত্বের উদাহরণ বলে মত প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধে শহীদদের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধা ও ১৯৭১-এ যেসব ভারতীয় সৈনিক প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁদের উদ্দেশে তাঁরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দুই বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রের জনসাধারণের উচ্চাকাঙ্খার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে গণতন্ত্র ও সাম্যের মূল্যবোধকে রক্ষা করার বিষয়ে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন।

৩) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৯এর অক্টোবরে সরকারিভাবে দিল্লী সফরের সময় গৃহিত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত রূপায়ণের বিষয়ে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যৌথ পরামর্শ কমিশনের ষষ্ঠ বৈঠক, যেটি ২০২০র সেপ্টেম্বরে সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে সে বিষয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করেছে।

 

আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলায় স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সহযোগিতা

৪) কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষ নিজ নিজ দেশের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বর্তমান এই সংকটে দুটি দেশ যেভাবে যোগাযোগ রেখে চলেছে তাতে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির আওতায় বাংলাদেশকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভারতে যখন টিকা তৈরি হবে সেই টিকা বাংলাদেশও পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী আশ্বাস দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পেয়েছে।

৫) টিকা উৎপাদনে ভারত চিকিৎসা এবং অংশীদারিত্বের বিষয়ে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলা ভাষায় স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন পাঠক্রম সঞ্চালনা করায় বাংলাদেশ ভারতের প্রশংসা করেছে।

 

সাংস্কৃতিক সহযোগিতা- ঐতিহাসিক যোগাযোগের যৌথ উদযাপন

৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মুজিব বর্ষে’ ভারত যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভারত সরকার যে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে, দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে সেটি প্রকাশ করেছেন। গান্ধীজির ১৫০তম জন্ম বার্ষিকীতে গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ সরকার মহাত্মা গান্ধীকে সম্মান জানিয়ে যে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে শ্রী মোদী তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

৭) বিশ শতাব্দীর দুই মহান নেতা- মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে ডিজিটাল প্রদর্শনীর একটি ভিডিও এই অনুষ্ঠানে দেখানো হয়েছে। উভয় নেতা আশাপ্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি রাষ্ট্রসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে এই প্রদর্শনী ন্যায়, সাম্য ও অহিংসার পথ অনুসরণ করার জন্য যুব সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করবে।

৮) ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্রী শ্যাম বেনেগাল ২০২১এর জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সেটি দেখানো হবে বলে উভয় পক্ষকে জানানো হয়েছে।

৯) ২০২১ সালটি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক বছর। মুক্তিযুদ্ধের ৫০তম বর্ষ এবং ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দেশ ভারত, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশে যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।

১০) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে মুজিব নগর থেকে নদীয়া পর্যন্ত ঐতিহাসিক রাস্তাটির নাম ‘স্বাধীনতা সড়ক’ করার বাংলাদেশের প্রস্তাবটি যাতে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই রাস্তাটির ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে এই উদ্যোগ।

১১) সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, যুব সম্প্রদায় ও খেলাধুলা এবং গণমাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়াতে উভয় দেশের নাগরিকদের মধ্যে যাওয়া-আসার জন্য দুই পক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে।

 

সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতা

১২) যৌথ সীমান্ত সম্মেলন আয়োজন করার বিষয়ে উভয়পক্ষ ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। ইছামতি, কালিন্দী, রায়মঙ্গল ও হারিয়াভাঙা নদীর ১ নম্বর প্রধান পিলার থেকে স্থল সীমান্তের টার্মিনাস পর্যন্ত অঞ্চলের জন্য নতুন মানচিত্র তৈরির বিষয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। কুশিয়ারা নদী বরাবর আন্তর্জাতিক সীমানাকে স্থায়ী সীমানায় পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় কাজের বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীই মতৈক্যে পৌঁছেছেন।

১৩) রাজশাহী জেলা সন্নিহিত পদ্মা নদীতে ১.৩ কিলোমিটার নদী পথ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবটি ভারত বিবেচনা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

১৪) দুটি দেশের মধ্যে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর বেড়া দেওয়ার কাজটি শেষ করার বিষয়ে উভয় নেতা সম্মত হয়েছেন। সীমান্তে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনাটিকে উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে তাঁরা এই ধরণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সীমান্ত রক্ষী বাহিনীগুলিকে সহযোগিতা বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার পূর্ণ বাস্তবায়নের উপরও তারা জোর দেন। অস্ত্র, নেশার জিনিস, জাল টাকার চোরাচালান ও মহিলা এবং শিশু সহ মানব পাচার আটকাতে সম্প্রতি যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, দুই পক্ষই তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

১৫) বাংলাদেশ এবং ভারত দুটি দেশই ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ায় দুই নেতাই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য সমঝোতাপত্র তৈরি করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন।

১৬) জঙ্গীবাদ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় সমস্যা হওয়ায় উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে সম্ভাব্য সবরকমের দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছে।

১৭) দুটি দেশের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ এবং যাতায়াত আরও সহজ সরল করার ওপর তাঁরা গুরুত্ব দিয়েছেন। যেসব বাংলাদেশী বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ভারতের স্থলসীমান্ত দিয়ে ঢুকবেন বা বেরবেন তাঁদের জন্য বিভিন্ন বিধিনিষেধ পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করার বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছে। এই কাজ ত্রিপুরার আখাউড়া এবং পশ্চিমবঙ্গে ঘোজাডাঙা থেকে শুরু হবে।

 

উন্নয়নের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশীদারিত্ব

১৮) স্যাফটা-র আওতায় ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশী রপ্তানীকারকদের, ভারত যে ডিউটি এবং কোটা মুক্ত সুযোগ দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রশংসা করেছেন। বন্দরের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ, প্রক্রিয়াগত নানা জটিলতা ও কোয়ারানটাইনের ক্ষেত্রে নানা নীতির মতো মাশুল মুক্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করার জন্য দুই প্রধানমন্ত্রীই গুরুত্ব দিয়েছেন। এরফলে স্যাফটা-র মতো নমনীয় নীতির সুযোগ দুটি দেশই নিতে পারবে। বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ করেছে সেদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ভারতীয় অত্যাবশ্যক পণ্যগুলির সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ভারত সরকারের রপ্তানী-আমদানি নীতিতে কোনও সংশোধন হলে সেটি যেন আগে থেকে জানানো হয়। ভারত এই অনুরোধটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।

১৯) ব্যবসা-বাণিজ্য ও রেল আধিকারিকদের কোভিড-১৯এর সময়ে সহযোগিতার ফলে বর্তমান রেলপথ দিয়ে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে করা গেছে বলে উভয় নেতা উল্লেখ করেছেন। এই সময় সাইড ডোর কন্টেনার এবং পার্সেল ট্রেনগুলি উভয় দেশের মধ্যে চলাচল করেছে।

২০) দ্বিপাক্ষিক ক্ষেত্রে আর্থিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিপুল সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক, সর্বাঙ্গীন, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা)-র জন্য যৌথ সমীক্ষা দ্রুত শেষ করার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

২১) ভারত-বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্প ফোরামের প্রথম বৈঠক এ বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দুই নেতা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ও সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রক এবং বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রকের মধ্যে যে সমঝোতাপত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেই কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাটজাত সামগ্রীর রপ্তানীর সময় ডাম্পিং ও অবরোধ বিরোধী কর প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে আলোচনা চলছে দুই নেতাই তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই বিষয়টি খুব দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে বলে তারা আশাপ্রকাশ করেছেন।

 

সমৃদ্ধির জন্য যোগাযোগ

২২) ১৯৬৫ সালের আগে দুই দেশের মধ্যে যে রেল যোগাযোগ ছিল সেটি পুনরায় শুরু করার জন্য কাজের অগ্রগতির বিষয়ে উভয় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ভারতের হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত নতুন রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার যৌথভাবে উদ্বোধন করেছেন এবং আশা করেছেন এই রেল যোগাযোগ দু-দেশের জনসাধারণের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সম্পর্ককে দৃঢ় করবে। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

২৩) ভারতীয় পণ্য সামগ্রী কলকাতা থেকে আগরতলা জাহাজে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের যে পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তাতে অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত পিআইডাব্লুটিটি প্রোটোকলের দ্বিতীয় সংযোজনটি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে౼ দুই নেতা এই বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে তারা পর্যালোচনা করেছেন। সোনামুড়া থেকে দাউদকান্দি-র মধ্যে মাল পরিবহণের ক্ষেত্রে পিআইডাব্লুটিটি মেনে চলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী চলাচল করার নিয়মগুলি দ্রুত কার্যকর করার ওপর উভয় প্রধানমন্ত্রীই সহমত পোষণ করেছেন।

২৪) বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ শুরু করতে বিবিআইএন মোটর পরিবহণ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তা দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে উভয় নেতা মতৈক্যে পৌঁছেছেন। এর ফলে দুটি দেশের মধ্যে পণ্য ও যাত্রী চলাচল সহজ হবে এবং বাড়বে। এই ব্যবস্থায় পরবর্তীতে ভুটানও সামিল হবে।

২৫) ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক সড়ক প্রকল্পে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী উৎসাহ দেখিয়েছেন। এই প্রকল্পে বাংলাদেশকে সামিল করার জন্য তিনি ভারতের সাহায্য চেয়েছেন। এর ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়বে। ভারত একইভাবে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশ হয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দিতে।

২৬) ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রতিবেশী রাজ্যগুলির জন্য একটি স্থলবন্দরকে বিশেষ সুযোগ দিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারত আবারও অনুরোধ জানিয়েছে। এই কাজ আগরতলা থেকে আখাউড়ার মধ্যে শুরু হতে পারে। বাংলাদেশ প্রস্তাব দিয়েছে ফেণী নদীর ওপর ব্রিজ সম্পূর্ণ হলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য পণ্য পরিবহণের কাজে বাংলাদেশের ট্রাকগুলিকে পণ্য পরিবহণের সুযোগ দিতে।

২৭) দুটি দেশের মধ্যে উন্নয়নের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব দৃঢ় করার জন্য উভয় পক্ষ বাংলাদেশের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব এবং ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনারের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের নজরদারি কমিটির আরও সক্রিয় হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। এই কমিটি বিভিন্ন প্রকল্পগুলির দ্রুত বাস্তবায়নের কাজ নিয়মিত পর্যালোচনা করবে।

২৮) কোভিড-১৯ মহামারীর সময় উভয় পক্ষের পর্যটকদের জরুরি ভিত্তিতে যাওয়া-আসা নিশ্চিত করতে যে সাময়িক বিমান পরিবহণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে তাতে দুই দেশই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। স্থল বন্দরের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ দ্রুত শুরু করার জন্য বাংলাদেশ ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে।

 

জল সম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ক্ষেত্রে সহযোগিতা

২৯) দুই দেশের সরকারের মধ্যে ২০১১ সালে ত্রিস্তর জলবন্টন নিয়ে যে মতৈক্য হয়েছিল তা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত অন্তর্বর্তী চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন ভারত এ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ভারত সরকার এর জন্য উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।

৩০) মনু, মুহুরি, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধ কুমার নদীর জল বন্টন সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী চুক্তিটি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়ে উভয় নেতা গুরুত্ব দিয়েছেন।

৩১) কুশিয়ারা নদীর জলকে সেচের কাজে ব্যবহারের জন্য রহিমপুর খালের বাকি অংশের খনন কাজ করতে সীমান্তবর্তী প্রশাসকদের অনুমতি দেওয়ার জন্য ভারতকে বাংলাদেশ অনুরোধ জানিয়েছে। কুশিয়ারা নদীর জল সংক্রান্ত চুক্তি, যেটি এখনও স্বাক্ষর হয়নি সে বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ভারত, বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে। উভয় নেতা যৌথ নদী কমিশনের ফলপ্রসূ বৈঠকটির কথা উল্লেখ করেছেন। সচিব পর্যায়ে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকটি দ্রুত আয়োজন করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৩২) বেসরকারী সংস্থাগুলি সহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার ওপর উভয় পক্ষ জোর দিয়েছে। হাইড্রো কার্বন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরকে দুই দেশই স্বাগত জানিয়েছে। এরফলে বিনিয়োগ বাড়বে, প্রযুক্তি হস্তান্তর হবে, যৌথভাবে সমীক্ষা চালানো হবে এবং হাইড্রো কার্বনের ক্ষেত্রে নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। জ্বালানী ব্যবহারে দক্ষতা এবং জৈব জ্বালানী সহ পরিবেশ বান্ধব জ্বালানীর বিষয়ে সহযোগিতার ওপর দুই পক্ষই গুরুত্ব দিয়েছে। পরিবেশ বান্ধব, স্বচ্ছ, পুনর্নবীকরণ যোগ্য জ্বালানীর ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটি দেশ তাদের অঙ্গীকারের কথা আবারও উল্লেখ করেছে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এরজন্য সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো গেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও দৃঢ় করতে দুই দেশই সম্মত হয়েছে।

 

মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে উদ্বাস্তুদের বিষয়ে

  1. ৩৩) মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে যে ১১ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তাদের আশ্রয় এবং মানবিক সাহায্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সরকারের উদারতার প্রশংসা করেছেন। দুই প্রধানমন্ত্রীই বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিরাপদে, দ্রুত, স্থিতিশীলভাবে ফিরে যাওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে ভারতের সাহায্য বাংলাদেশ আশা করে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

 

আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব

৩৪) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতকে সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া, স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য একযোগে কাজ করা ও পরিযায়ীদের অধিকার রক্ষায় দুটি দেশ একযোগে কাজ করার জন্য ঐক্যমত্যে পৌঁছেছে। স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য ২০৩০ সালের অ্যাজেন্ডাটি বাস্তবায়িত করতে দুই প্রধানমন্ত্রী উন্নত দেশগুলির অঙ্গীকারের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

৩৫) কোভিড-১৯এর প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন। সার্ক এবং বিমস্টেকের মতো আঞ্চলিক সংগঠনগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। কোভিড-১৯ মহামারী বিষয়ে মার্চ মাসে সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির নেতাদের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তর্জাতিক এই মহামারীর মোকাবিলা করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সার্ক আপতকালীন তহবিল গঠনের প্রস্তাবকেও তিনি স্বাগত জানান। এর জন্য সার্ক মেডিক্যাল অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ রিসার্চ ইন্সটিটিউট গড়ে তোলার একটি প্রস্তাব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০২১ সালে আইওআরএ-র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সমুদ্র পথে চলাচল ও ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুরক্ষিত নয় এমন দেশগুলির ফোরাম- ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতির ভূমিকা পালন করায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন।

৩৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের কাজের প্রশংসা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য ভারত বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোয় তিনি ধন্যবাদ দিয়েছেন। এই ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার উদ্যোগকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন। বাংলাদেশ এই উদ্যোগে শরিক হতে চাই বলে শেখ হাসিনা বলেছেন।

 

দ্বিপাক্ষিক নথিতে স্বাক্ষর ও বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন

৩৭) এই উপলক্ষ্যে নিম্নলিখিত দ্বিপাক্ষিক নথিগুলি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবং ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের আধিকারিকরা এগুলি বিনিময় করেছেন।

Ø হাইড্রো কার্বন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য একটি কাঠামো গড়ে তুলতে সমঝোতা

Ø সীমান্তের দু-পারে হাতি সংরক্ষণের জন্য প্রোটোকল

Ø স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টগুলি বাস্তবায়নের জন্য ভারতের অর্থ সাহায্য সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র

Ø বরিশাল পুর নিগমের লামচোরিতে জঞ্জাল ও কঠিন বর্জ্য জমা করার জায়গায় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর

Ø ভারত-বাংলাদেশের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকদের ফোরামের জন্য নীতি-নির্দেশিকা গঠন

Ø বাংলাদেশের ঢাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মারক সংগ্রহশালা এবং ভারতের নতুন দিল্লীর জাতীয় সংগ্রহশালার মধ্যে সমঝোতাপত্র

Ø কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতাপত্র

নিম্নলিখিত দ্বিপাক্ষিক উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব প্রকল্পগুলি উদ্বোধন হয়েছে

Ø রাজশাহী শহরের সৌন্দর্যায়ন ও নগরোন্নয়ন প্রকল্প

Ø খুলনার খালিসপুর কলিজিয়েট গার্ল্স স্কুলের নির্মাণকাজ

৩৮) নিউ নর্মাল পরিস্থিতিতে এই আয়োজন করায় উভয় প্রধানমন্ত্রীই একে অন্যকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন

৩৯) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ২০২১এর মার্চ মাসে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তাতে সশরীরে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করায়, শেখ হাসিনা তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

***

 

 

CG/CB/NS



(Release ID: 1681546) Visitor Counter : 855