প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আইআইটি দিল্লির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 07 NOV 2020 2:42PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৭ নভেম্বর,  ২০২০

 

নমস্কার,

 আমার মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী রমেশ পোখরিয়াল ‘নিশাঙ্ক’জী, শ্রী সঞ্জয় ধোত্রেজী, বোর্ড অফ গভর্নর্স – এর চেয়ারম্যান ডঃ আর চিদাম্বরমজী, আইআইটি দিল্লির নির্দেশক অধ্যাপক ভি রামগোপাল রাওজী, বোর্ড এবং সিনেট – এর সদস্যগণ অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাগণ, অভিভাবক-অভিভাবিকাগণ, আমার নবীন বন্ধুগণ, ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ!

আজ প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ আইআইটি দিল্লির মাধ্যমে দেশ ২ হাজারেরও বেশি উন্নত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পাচ্ছে। যে ছাত্রছাত্রীরা আজ ডিগ্রি পাচ্ছেন, তাঁদের সবাইকে, বিশেষ করে তাঁদের অভিভাবক-অভিভাবিকা, গাইড, শিক্ষক-শিক্ষিকা - সবাইকে আজ এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভকামনা।

আজ আইআইটি দিল্লির ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান। আর এবছরই এই মহান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার হীরক জয়ন্তীবর্ষ পালন করছে। আইআইটি দিল্লি এই উপলক্ষে আগামী এক বছরের জন্য তার ‘ভিশন ডক্যুমেন্ট’ও তৈরি করেছে। আমি এই মহান প্রতিষ্ঠানের হীরক জয়ন্তীবর্ষ এবং এই দশকের জন্য আপনাদের লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাচ্ছি এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিচ্ছি।

আজ মহান বৈজ্ঞানিক ডঃ সি ভি রমণজীর জন্মজয়ন্তী। এই শুভদিনটিকে আপনাদের সমাবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করায় দিনটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গেল। এই উপলক্ষে আমি শ্রদ্ধেয় সি ভি রমণজীকেও সাদর প্রণাম জানাই। তাঁর অবিস্মরণীয় কীর্তিগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে আমাদের সবাইকে, বিশেষ করে আমাদের নবীন বৈজ্ঞানিক বন্ধুদের প্রেরণা জুগিয়ে যাবে।

 

বন্ধুগণ,

এই করোনা সঙ্কটকালে গোটা বিশ্ব অনেক বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে। কোভিড-উত্তর বিশ্ব অনেক ভিন্ন হতে চলেছে। আর সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে প্রযুক্তি। এক বছর আগে কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি যে, সমস্ত মিটিং, পরীক্ষা, ভাইবা এমনকি সমাবর্তনেরও স্বরূপ এমন সম্পূর্ণভাবে বদলে যাবে। ‘ভার্চ্যুয়াল’ বাস্তবতা এবং ‘অগমেন্টেড’ বাস্তবতাই আজ ‘ওয়ার্কিং’ বাস্তবতার স্থান গ্রহণ করছে, ক্রমে আরও পরিবর্তিত হতে চলেছে।

আপনারা হয়তো ভাবছেন, আপনাদের ব্যাচটি তেমন ভাগ্যবান না। আমি নিশ্চিত যে, আপনারা নিজেদের জিজ্ঞাসা করছেন – এসব কি আমাদের স্নাতক হওয়ার বছরের মধ্যেই হওয়ার ছিল? তবে, যদি একটু অন্যভাবে ভাবেন, আপনারা নিজেদের দ্রুত পরিবর্তন ও রূপান্তরণের সুবিধা পেয়েছেন। এখন আপনারা কাজের জায়গা এবং তার বাইরেও উদ্ভূত নতুন নিয়মগুলি শিখতে এবং খাপ খাইয়ে নিতে যথেষ্ট সময় পাবেন। সুতরাং, এই রূপান্তরণের আবহকে সর্বাধিক ব্যবহার করুন এবং এর উজ্জ্বল দিকটিও ভাবুন – তা হলেই বুঝতে পারবেন যে, আপনাদের ব্যাচটিও ভাগ্যবান। ক্যাম্পাসের শেষ বছরটি অতুলনীয়ভাবে উপভোগ করতে পেরেছেন। গত অক্টোবরে কী ছিল আর এই অক্টোবরে কিভাবে সবকিছু বদলে গেছে, তা দেখুন। আপনারা যদি ভালোবাসা নিয়ে ফিরে তাকান, পরীক্ষার আগে গ্রন্থাগার এবং পাঠকক্ষের সন্ধ্যা ও রাত্রিগুলি শিক্ষকদের লেকচারের মাঝে কফি ও মাফিন – এসব কিছুর স্মৃতি আপনাদের তাড়িয়ে বেড়াবে। আমাকে আরও বলা হয়েছে, আইআইটি দিল্লিতে প্রত্যেকেরই দু’ধরনের বন্ধু রয়েছেন। এক. কলেজের বন্ধুরা, আর দুই. হস্টেলে ভিডিও গেমস্‌ – এর বন্ধুরা। আপনারা নিশ্চয়ই উভয় প্রকৃতির বন্ধুদের মিস করবেন।

 

বন্ধুগণ,

এর আগে আমি এরকম আইআইটি মাদ্রাজ, আইআইটি বম্বে এবং আইআইটি গুয়াহাটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া, আরও কয়েকটি জায়গায় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মুখোমুখী হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এই সমস্ত জায়গায় আমি দেখেছি যে, একটা জিনিস আমাকে বারবার আনন্দ দিয়েছে, তা হ’ল – উদ্ভাবন। আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের সাফল্যের জন্য আপনাদের এই উদ্ভাবনগুলির শক্তি অপরিসীম। কোভিড-১৯ বিশ্বকে আরও কয়েকটি জিনিস শিখিয়ে দিয়েছে। বিশ্বায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পাশাপাশি, আত্মনির্ভরতাও ততটাই প্রয়োজন।

 

বন্ধুগণ,

আত্মনির্ভর ভারত অভিযান আজ দেশের নবীন প্রজন্মকে, প্রযুক্তিবিদদের, প্রযুক্তি-নির্ভর বাণিজ্যের নেতৃবৃন্দকে অনেক নতুন সুযোগ দিয়েছে। তাদের জন্য এই আত্মনির্ভর ভারত অভিযান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। তাঁদের সমস্ত নতুন নতুন ভাবনা, যা নতুন উদ্ভাবনগুলিকে মুক্তভাবে বাস্তবায়িত করতে পেরেছে, পরিমাপ করতে পেরেছে এবং সেই অনুসারে বিপণন করতে পেরেছে। এসব কাজের জন্য আজ সর্বাধিক অনুকূল আবহ তৈরি হয়েছে। আজ ভারত তার যুবসম্প্রদায়কে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এর সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ, যাতে তাঁরা কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। দেশ আপনাদের ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ এর আবহ দেবে। কিন্তু, আপনাদের একটা কাজ করতে হবে। নিজেদের প্রতিভা, অভিজ্ঞতা, মেধা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে এর পরিবর্তে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম নাগরিকদের জন্য ‘ইজ অফ লিভিং’ প্রদান করতে হবে। সরকার আপনাদের কাজের অনুকূল সমস্ত ব্যবস্থা ও পরিবেশ দেবে, যাতে আপনারা নতুন নতুন উদ্ভাবনের প্রয়োগে নতুন নতুন পণ্যের জোগান দেয় এবং পরিষেবা প্রদান করে।

সম্প্রতি প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে যে বড় বড় সংস্কার আনা হয়েছে, সেগুলির পেছনেও এই একটাই ভাবনা রয়েছে। প্রথমবার কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং নতুন নতুন স্টার্ট আপ – এর জন্য অসংখ্য সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রথমবার মহাকাশ ক্ষেত্রেও বেসরকারি বিনিয়োগের পথ খুলেছে। দু’দিন আগেই বিপিও সেক্টরে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এর জন্যও একটি বড় সংস্কার আনা হয়েছে। সরকার ‘আদার সার্ভিস প্রভাইডার’ বা ‘ওএসপি গাইডলাইনস্‌’কে অতি সরল করে দিয়েছে। সমস্ত বাধা-নিষেধ তুলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকার আর কোনোভাবেই নাক গলাবে না। প্রত্যেকের বিশ্বাস ও ভরসা অর্জন করে কাজ করবেন। এর ফলে, বিপিও ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য যে সম্পাদনের বোঝা ছিল, আরও নানারকম বাধা-নিষেধ ছিল, সেগুলি অনেক হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি সহ অন্যান্য অনেক প্রয়োজন থেকেও বিপিও ইন্ডাস্ট্রিকে মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে প্রযুক্তি শিল্পে বাড়ি থেকে কাজ করা কিংবা যে কোনও জায়গা থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে যেসব আইনি প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেই আইনগুলিকেও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, দেশে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র আন্তর্জাতিকভাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং আপনাদের মতো নবীন প্রতিভাবানরা আরও বেশি বিকাশের সুযোগ পাবেন।

দেশে আপনাদের সবরকম প্রয়োজন বুঝে ভবিষ্যতের প্রয়োজনগুলিকে অনুধাবন করে, একের পর এক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, পুরনো নিয়মগুলি পরিবর্তন করা হচ্ছে। আমি মনে করি, বিগত শতাব্দীর নিয়ম-কানুন দিয়ে বর্তমান শতাব্দীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। নতুন শতাব্দীর জন্য চাই নতুন সংকল্প, নতুন নিয়ম-কানুন, নতুন আদব-কায়দা। আজ ভারত সেই দেশগুলির অন্যতম, যে দেশে কর্পোরেট ট্যাক্স ন্যূনতম। আমাদের স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া অভিযানের ফলস্বরূপ ভারতে আজ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন স্টার্ট আপ সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে। সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার ফলে বিগত ৫ বছরে দেশে পেটেন্টের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রেশন বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ গুণ। এগুলির মধ্যে ফিনটেকের পাশাপাশি, কৃষি, প্রতিরক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্র সংশ্লিষ্ট স্টার্ট আপ – এর সংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত বছরগুলিতে ২০টিরও বেশি ইউনিকর্নস্‌ ভারতীয় কোম্পানিগুলি ভারতেই উৎপাদন করেছে। এভাবে দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে। যেভাবে দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দু-এক বছরে এহেন কোম্পানির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে, আর এমনও হতে পারে, আজ এখান থেকে যাঁরা পাশ আউট হয়ে বেরোচ্ছেন, আপনারাও এক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি জোগাবেন।

 

বন্ধুগণ,

ইনকিউবেশন থেকে শুরু করে অর্থ-সংস্থান পর্যন্ত অনেক পর্যায়ে আজ স্টার্ট আপগুলিকে অনেক ধরনের সাহায্য করা হচ্ছে। অর্থের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। তাদেরকে তিন বছরের জন্য করমুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, স্টার্ট আপগুলিকে সেলফ সার্টিফিকেশন, ইজি এক্সিট – এর মতো অনেক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আজ আমরা ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপ লাইন – এর মাধ্যমে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এর ফলে, গোটা দেশে বিশ্বমানের আধুনিকতম পরিকাঠামো গড়ে উঠবে, যা বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজন-সাধনে সহায়ক হবে।

 

বন্ধুগণ,

আজ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকতম সম্ভাবনা অর্জন করতে নতুন নতুন পদ্ধতিতে কাজ হচ্ছে। আপনারা যখন এখান থেকে বৃহত্তর জগতে পা রাখবেন, কর্মক্ষেত্রে একটি নতুন মন্ত্র নিয়ে নিজেদের উজ্জীবিত করতে হবে। এই মন্ত্রটি হ’ল – উৎকর্ষকে গুরুত্ব দিতে হবে, কখনও আপোস করবেন না, পরিমাণগত নিশ্চিতকরণ এবং আপনার উদ্ভাবনগুলির বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রয়োগ, নির্ভরতা নিশ্চিত করা, বাজারে দীর্ঘমেয়াদী আস্থা অর্জন, নিজেদের কাজে অভিযোজনের যোগ্যতা অর্জন, পরিবর্তনের জন্য উন্মুক্ত থাকা এবং জীবনের পথ হিসাবে অনবিশ্চয়তাকে বেছে নেওয়া!

যদি আপনারা এই বিষয়গুলিকে মূলমন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে কাজ করেন, তা হলে এগুলির চমক আপনাদের পরিচয়ের পাশাপাশি ব্র্যান্ড ইন্ডিয়াকেও আরও বেশি উজ্জ্বল করবে। আমি আপনাদের এসব কথা এজন্য বলছি, কারণ আমার মতে আপনারাই ব্র্যান্ড ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার। আপনারা যা করবেন, তার মাধ্যমেই দেশের স্থানীয় পণ্যগুলি আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধি পাবে। আপনারা যা করবেন, তার মাধ্যমে দেশের সমস্ত ইতিবাচক প্রচেষ্টা আরও গতিশীল হবে। দেশের গরিব ও গ্রামের উন্নয়নের জন্য সরকার যে সমস্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, সেগুলিও আপনাদের উৎসর্গীকৃত পদক্ষেপ এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমেই সিদ্ধ হতে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

প্রযুক্তি কিভাবে আমাদের সরকারের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের কাছে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষমতায়িত মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে, তা বিগত বছরগুলিতে দেশের নবীন প্রতিভারা করে দেখিয়েছেন। আজ গৃহ নির্মান থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ সংযোগ, শৌচাগার, রান্নার গ্যাস সংযোগ, নলের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ – এ ধরনের সমস্ত পরিষেবা, ডেটা আনালিসিস এবং মহাকাশ প্রযুক্তির সহযোগিতায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আজ বার্থ সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে লাইফ সার্টিফিকেট পর্যন্ত সমস্ত পরিষেবা ডিজিটাল মাধ্যমে করা হচ্ছে। জন ধন আধার মোবাইলের ট্রিনিটি জেজেএম, ডিজি লকার্স পরিষেবা, আর সম্প্রতি ডিজিটাল হেলথ আইডি’র মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের জীবন সহজ করে তোলার জন্য সরকার দ্রুতগতিতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে, প্রযুক্তির শেষ মুহূর্তের কর্মসম্পাদনকে কিংবা সরবরাহকে দক্ষ করে তুলেছে। দুর্নীতির অবকাশ হ্রাস পেয়েছে। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বে অনেক উন্নত দেশগুলির থেকেও এগিয়ে আছে। ভারতে নির্মিত ইউপিআই – এর মতো প্ল্যাটফর্ম এখন বিশ্বের অনেক বড় বড় উন্নত দেশগুলিতে চালু করার কথা ভাবছে।

 

বন্ধুগণ,

সম্প্রতি সরকার আরেকটি প্রকল্প শুরু করেছে, যেখানে প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রকল্পটি হ’ল – স্বামীত্ব যোজনা। এর মাধ্যমে প্রথমবার ভারতের গ্রামের জমি ও সম্পত্তি, প্রত্যেক গ্রামবাসীর বাড়ির স্থাবর-সম্পত্তি মানচিত্রায়ন করা হচ্ছে। আগে এই কাজ হাতে-কলমে সরেজমিনে তদন্ত করে করতে হ’ত। সেক্ষেত্রে অনেক দুর্নীতি, পক্ষপাত এবং আশঙ্কা থেকে বিবাদ-মামলা-মোকদ্দমা হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। আপনারা শুনলে খুশি হবেন, কারণ আপনারা প্রযুক্তি-নির্ভর মানুষ। আজ ড্রোনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে এই মানচিত্রায়ন করা হচ্ছে। ফলে, গ্রামের মানুষ সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট। তাঁদের গণঅংশীদারিত্বের মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে এই অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের সাফল্য থেকে এটা প্রমাণ হয়, ভারতের সাধারণ মানুষও ক্রমে কতটা প্রযুক্তি-নির্ভর হয়ে উঠছে।

 

বন্ধুগণ,

প্রযুক্তির প্রয়োজন এবং এর প্রতি ভারতবাসীর আস্থা - এটাই আপনাদের ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা। গোটা দেশে আপনাদের জন্য যেমন অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনই অনেক সমস্যার সমাধানের জন্য দেশবাসী আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে ভূগর্ভস্থ জলস্তর কিভাবে অক্ষুণ্ন রাখা যাবে, এর জন্য কার্যকর প্রযুক্তি চাই। সৌরশক্তি উৎপাদনে এবং ব্যাটারি সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি, টেলিমেডিসিন, রিমোর্ট সার্জারি প্রযুক্তি, বিগ ডেটা অ্যানালিসিস – এ ধরনের ক্ষেত্রে অনেক কাজের অবকাশ রয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

আমি এভাবে আপনাদের সামনে একের পর এক দেশের অনেক প্রয়োজনের কথা তুলে ধরতে পারি। এই প্রয়োজনগুলি আপনাদের নতুন নতুন চিন্তাভাবনা, প্রাণশক্তি, প্রচেষ্টা এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে সফল হতে পারে। সেজন্য আপনাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনারা আগে দেশের প্রয়োজনগুলিকে বুঝুন। তৃণমূল স্তরে যেসব পরিবর্তন হচ্ছে, আত্মনির্ভর ভারতের স্বার্থে সাধারণ মানুষের আকাঙ্খাগুলি পূরণের জন্য কাজ করতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই। আর এক্ষেত্রেও আপনাদের অ্যালুমনি নেটওয়ার্কও আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।

 

বন্ধুগণ,

আপনারা অত্যন্ত সহজেই অ্যালুমনি মিট – এর আয়োজন করতে পারেন। অন্যান্য কলেজের ক্ষেত্রে অ্যালুমনি মিটের জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কিন্তু আপনাদের জন্য এই আয়োজন অনেক সহজ। আপনারা অত্যন্ত কম সময়ে সপ্তাহান্তে ছুটিতে বে-এড়িয়া, সিলিকন ভ্যালি, ওয়াল স্ট্রিট কিংবা কোনও সরকারি সচিবালয়ের সঙ্গে যোগসাধন করে প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যালমনি মিট করে ফেলতে পারেন। ভারতের স্টার্ট আপ ক্যাপিটালগুলি এখন কখনও মুম্বাই, কখনও পুণে, কখনও ব্যাঙ্গালোর, সেখানকার আইআইটি প্রাক্তনীদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনারা যুক্ত হতে পারেন। আপনাদের এই অদ্ভূত ক্ষমতাই আপনাদের সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠবে।

 

বন্ধুগণ,

আপনারা সকলেই ব্যতিক্রমী দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী। আপনারা ১৭-১৮ বছর বয়সেই জেইই-র মতো কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আইআইটি-তে এসেছেন। কিন্তু আপনাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দুটি জিনিসের প্রয়োজন। প্রথমটি হ’ল নমনীয়তা আর দ্বিতীয়টি হ’ল নম্রতা। প্রথমে আমি নমনীয়তার সম্ভাবনার কথা বলছি। যে কোনও মুহূর্তে আপনাকে পরিস্থিতির বাইরে বেরিয়ে নিজেকে সেই পরিস্থিতির উপযোগী করে তুলতে হবে, যাতে জীবনের যে কোনও মুহূর্তে এই অভিযোজন আপনার পরিচয় হয়ে উঠতে পারে। কারণ, কোনও ব্যক্তি বা কোনও কিছুর লাইট ভার্সন হয়ে উঠবেন না। কারও নকল না করে নিজের মধ্যে মৌলিকত্ব আনবেন। আপনারা উৎকর্ষের যে মানে বিশ্বাস করেন, সেখানে নিজেকে চ্যাম্পিয়ন করে তুলুন। পাশাপাশি, নিজেকে কোনও দলের উপযোগী করে তুলতে দ্বিধা করবেন না। স্বতন্ত্র প্রচেষ্টার একটা সীমা আছে। টিম ওয়ার্ক সেই এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্থ করে এবং সম্পূর্ণতা আনে। দ্বিতীয় বিষয়টি হ’ল নম্রতা। আপনাদের সাফল্য আপনাদের কৃতিত্বের জন্য নিজেদের প্রত্যয়ী এবং গর্বিত হতে হবে। আপনার কাছে যা আছে, বিশ্বের খুব কম লোকের কাছেই তা আছে। এই ভাবনা আপনাদের যেন অহঙ্কারে না ভরিয়ে তোলে এবং আরও বেশি মাটির কাছাকাছি রাখে।

 

বন্ধুগণ,

এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, যিনি নিজেকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ জানান, তিনিই প্রতিদিন শেখেন। জীবনে চলার পথে নিজেকে সবসময়ে ছাত্র হিসাবে ভাববেন। এই ছাত্রের মতো আচরণই জীবনে চলার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতটা জানেন, সেটাকে কখনও যথেষ্ট ভাববেন না। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে

“সত্যং জ্ঞানং অনন্তং ব্রহ্ম’

 অর্থাৎ, ‘জ্ঞান ও সত্য ব্রহ্মের মতো অনন্ত ও অপরিসীম’। আপনারা যত নতুন নতুন উদ্ভাবন করবেন, সবই এই সত্য এবং জ্ঞানের বিস্তার। সেজন্য আপনাদের উদ্ভাবনে দেশ, দেশবাসীর জন্য, গ্রাম ও গরিবের জন্য, আত্মনির্ভর ভারতের জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

আপনাদের জ্ঞান, আপনাদের দক্ষতা, আপনাদের সামর্থ্য দেশের কাজে লাগবে – এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের পিতা-মাতার প্রত্যাশা পূরণের জন্য, তাঁদের স্বপ্নপূরণ করতে আপনাদের জীবনের নতুন যাত্রা শুরু হোক। আপনাদের গুরুজনেররা যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষকরা যে দীক্ষা দিয়েছেন, সেগুলি আপনাদের জীবনে সাফল্যের পথে প্রতিটি পদক্ষেপে কাজে লাগবে। আর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে, আমাদের দেশের জনগণ আপনাদের জন্য গর্বিত, আমাদের জাতীয় ক্ষেত্রে আপনাদের মতো আইআইটি থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা মানবতার উন্নয়নে পূর্ণ সংযোজন করে এসেছেন। এই সামর্থ্য নিয়ে আপনারাও আজ নতুন জীবনে পা রাখছেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে, আপনাদের পরিবারের সবাইকে, আপনাদের গুরুজনদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি।

অনেক অনেক শুভকামনা।

 ***

 

CG/BD/SB


(Release ID: 1671141) Visitor Counter : 262