প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বারাণসী-ভিত্তিক অসরকারি সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

Posted On: 09 JUL 2020 1:25PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৯ জুলাই, ২০২০

 

 


হর হর মহাদেব।

কাশীর পূণ্য ভূমিতে আপনাদের মতো পূণ্যাত্মা মানুষদের প্রণাম জানাই। শ্রাবণ মাস চলছে। এই সময়ে প্রত্যেকেরই বাবার চরণে আসার ইচ্ছা করে। কিন্তু যখন বাবার নগরীতে আপনাদের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পেয়েছি, তখন আমার মনে হচ্ছে যে আজ আমার বাবাকেই দর্শন করার সৌভাগ্য হয়েছে। সবার আগে আপনাদের সবাইকে ভগবান ভোলানাথের এই প্রিয় মাসের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

ভগবান ভোলানাথের আশীর্বাদেই করোনার এই সঙ্কটকালেও আমাদের কাশী আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উৎসাহে পরিপূর্ণ। এটা ঠিক যে, আজকাল দর্শনার্থীরা বাবা বিশ্বনাথ ধামে আসতে পারছেন না, শ্রাবণ মাসেও আসতে পারছেন না। আমি আপনাদের মনের কষ্ট বুঝতে পারি। এটাও ঠিক যে মানস মন্দির, দুর্গাকুন্ড, সঙ্কটমোচনের শ্রাবণ মেলা; সবকিছু স্থগিত হয়ে গেছে। কোনটাই আয়োজন করা যায়নি। কিন্তু এটাও সত্যি, এই অভূতপূর্ব সঙ্কটের সময়ে আমি এবং আমার কাশী, আমাদের কাশী, বুক চিতিয়ে এই অভূতপূর্ব সঙ্কটের মোকাবিলা করছে। আজকের এই কর্মসূচিও এই শৃঙ্খলার অন্তর্গত। যত বড় বিপদই হোক না কেন, কেউ কাশীর জনগণের প্রাণশক্তির অভাব ঘটাতে পারবে না। যে শহর বিশ্বকে গতি দেয়, তার সামনে করোনা যে কিছুই নয়, এটা আপনারা দেখিয়ে দিয়েছেন।

আমাকে বলা হয়েছে যে করোনার সময়ে ... কাশীর যে বিশেষত্ব, এই করোনার ফলে কাশীতে সেই চায়ের আড্ডাও জনশূণ্য হয়েছে, কিন্তু এখন কাশীতে ডিজিটাল আড্ডা শুরু হয়ে গেছে। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের পারদর্শী মানুষেরা এই আড্ডা পরম্পরাকে এভাবে জীবন্ত রেখেছেন। যে সঙ্গীত পরম্পরাকে বিসমিল্লা খাঁজি, গিরিজা দেবীজি, হীরালাল যাদবজির মতো মহান সাধকেরা সমৃদ্ধ করেছেন; সেই পরম্পরাকে আজ কাশীর সম্মানিত শিল্পীরা, নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ধরনের অনেক কাজ গত ৩-৪ মাসে কাশীতে নিরন্তর চলছে।

এই সময়ে আমার সঙ্গে যোগীজির নিয়মিত সম্পর্ক রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। কাশীর যেসব খবর আমার কাছে আসে, তাদের কী করা উচিৎ, কী করা উচিৎ নয়, এইসব বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চলতেই থাকে। আপনাদের মধ্যেও অনেকে বেনারস থেকে আমার সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলেন। সুখ-দুঃখের কথা হয়। আপনাদের সম্পর্কে জানতে পারি, আপনাদের প্রতিক্রিয়া জানতে পারি। আজকের এই কর্মসূচি নিয়েও আমি ভালোভাবে জানি, আপনারা কোথায় কোথায় বসেছেন, যাঁদের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয় তাঁরা আজকের কর্মসূচিতে কে কোথায় বসে আছেন তা আমি দেখতে পাচ্ছি।

সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য কে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন, হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি কেমন, নতুন কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কোয়ারেন্টিন কোথায় হচ্ছে, বাইরে থেকে আসা শ্রমিক বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা কোথায় করা হচ্ছে - এই সমস্ত খোঁজখবর আমি নিয়মিত নিতে থাকি।

বন্ধুগণ,

আমাদের কাশীতে বাবা বিশ্বনাথ, মা অন্নপূর্ণা উভয়েই সদা বিরাজমান। পুরনো দিনে মনে করা হত যে এক সময় মহাদেব নিজে মা অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা চেয়েছিলেন। তখন থেকে কাশীর উপর বিশেষ আশীর্বাদ রয়েছে যে, এখানে কেউ খালি পেটে শোবে না। মা অন্নপূর্ণা এবং বাবা বিশ্বনাথ সকলের খাবার ব্যবস্থা করে দেবেন।

আপনাদের সকল সংগঠনের জন্য, আমাদের সকলের জন্যও এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় যে এবার গরিবদের সেবার জন্য মাধ্যম হিসেবে ভগবান আমাদের সবাইকে পাঠিয়েছেন, বিশেষ করে আপনাদের সবাইকে পাঠিয়েছেন। একদিক থেকে আপনারা সবাই মা অন্নপূর্ণা এবং বাবা বিশ্বনাথের দূত হয়ে প্রত্যেক অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছেছেন।

এত কম সময়ে ফুড হেল্পলাইন থেকে শুরু করে কমিউনিটি কিচেনের ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, হেল্পলাইনের উন্নতিসাধন, ডেটা সায়েন্সের আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বারাণসী স্মার্ট সিটির কন্ট্রোল এবং কম্যান্ড সেন্টারের পরিষেবাকে এ কাজে যথাসম্ভব ব্যবহার করা। অর্থাৎ, প্রত্যেক স্তরে সকলেই গরিবদের সাহায্যের জন্য সম্পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে কাজ করেছেন। আর আমি এটাও বলতে পারি, আমাদের দেশে সেবাভাব নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের শিষ্টাচারের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এবার যে সেবার কাজ হয়েছে, সেটা সামান্য সেবার কাজ ছিল না। এখানে শুধুই দুঃখীদের চোখের জল মোছা বা কোন গরিবকে খাবার খাওয়ানোর মতো ব্যাপার ছিল না। এবারের কাজে ছিল করোনার মতো রোগকে সামনে থেকে প্রতিরোধ করার ঝুঁকিও। যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন, তাঁরা যে কোন সময়েই করোনায় আক্রান্ত হতে পারতেন। সেজন্য যাঁরা সেবা করছেন, তাঁদের সেবার পাশাপাশি, ত্যাগ ও বলিদানের জন্য প্রস্তুতিও ছিল। সেজন্য ভারতের প্রত্যেক কোণায় যাঁরা করোনা সঙ্কটকালে কাজ করেছেন, তাঁদের কারোর কাজ সামান্য ছিল না। তাঁরা শুধুই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেননি; একটা ভয় ছিল, সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়ে তার মোকাবিলা করা এবং স্বেচ্ছায় করা। এটাই ছিল এবারের সেবার নতুন রূপ।

আমাকে বলা হয়েছে, যখন জেলা প্রশাসনের কাছে খাদ্য বিতরণের জন্য যানবাহন কম পড়েছে, তখন ডাক বিভাগ তাদের পোস্টাল ভ্যানগুলিকে এই কাজে ব্যবহার করতে দিয়েছে। একবার ভাবুন। আগে সরকারের এক বিভাগ আর এক বিভাগের সাহায্য চাইলে প্রথমে প্রত্যেক কাজেই না করে দেওয়া হত। এটা তো তোমার বিভাগের কাজ, তোমাকে এটা দিলে আমি কী করে কাজ করব? তুমি কে যে তোমাকে দিতেই হবে? এরকম ঠেলাঠেলি চলত। কিন্তু এবার আমরা দেখেছি যে স্বেচ্ছায় সবাই এগিয়ে পরস্পরকে সাহায্য করেছেন। এই ঐক্যবদ্ধতা, এই একতা, এই সামগ্রিকতার ভাবনা আমাদের কাশীকে আরও মহান করে তুলেছে। এহেন মানবিক ব্যবস্থার জন্য এখানকার স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে গায়ত্রী পরিবারের সৃষ্টিশীল ট্রাস্ট, রাষ্ট্রীয় রোটি ব্যাঙ্ক, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, আমাদের সিন্ধ্রি সমাজের ভাই-বোনেরা, ভগবান অবধুত রাম কুষ্ঠ সেবাশ্রম, সর্বেশ্বরী সমূহ, ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা, কোট-প্যান্ট-টাই ছেড়ে গলিতে গলিতে গরিবদের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সমস্ত ব্যবসায়ী সমিতিগুলি এবং আমাদের আনোয়ার আহমেদজি কত সুন্দরভাবে বলেছেন, এরকম কত অসংখ্য মানুষ, আমি তো শুধুই ৫-৭ জনের কথা উল্লেখ করতে পারলাম। কিন্তু এরকম হাজার হাজার মানুষ কাশীর গৌরব বাড়িয়েছেন। কয়েকশ’ প্রতিষ্ঠান নিজেদের পূর্ণ সময় এর পেছনে ব্যয় করেছে। সবার সঙ্গে আমি কথা বলতে পারিনি। কিন্তু আমি আজ প্রত্যেকের কাজকে প্রণাম জানাই। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমি প্রণাম জানাই। আজ আপনাদের সঙ্গে কথা বলে অনেক নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি এবং আপনাদের থেকে প্রেরণাও নিচ্ছি। আপনারা যাঁরা এই সঙ্কটে কাজ করেছেন, তাঁদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে আমিও অনেক কাজ করতে চাই। আমার প্রার্থনা যে বাবা বিশ্বনাথ এবং মা অন্নপূর্ণা আপনাদের আরও সামর্থ্য দিন, আরও শক্তি দিন।

বন্ধুগণ,

করোনার এই সঙ্কটকাল বিশ্বের যাবতীয় ভাবনা-চিন্তা, কাজকর্ম, খাওয়াদাওয়া - সবকিছুর নিয়ম, পদ্ধতি বদলে রেখে দিয়েছে। যেভাবে আপনাদের সেবা এবং এই সেবার মাধ্যমে সমাজ জীবন অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছে, আমি ছোটবেলায় শুনেছি এক স্বর্ণকার ছোটখাটো সোনার জিনিস তৈরি করে বাড়িতে বাড়িতে বিক্রি করত, নিজের বাড়িতে কাজ করত, সামান্য কয়েকটি পরিবারের কাজ করেই তাঁর সংসার চলত। কিন্তু সেই মহাশয়ের একটি অভ্যাস ছিল, তিনি বাজার থেকে দাঁতন কিনতেন। আগেকার দিনে সকালবেলা এখনকার মতো ব্রাশ ব্যবহার করা হত না, সবাই দাঁতন ব্যবহার করতেন। ওই স্বর্ণকার ভদ্রলোক সকালবেলা বাজার থেকে অনেক দাঁতন কিনে হাসপাতালে গিয়ে রোগীদের এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়দের প্রত্যেককে বিনামূল্যে দাঁতন দিয়ে আসতেন। তারপর সারাদিনস্বর্ণকারের কাজ করতেন। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে এই হাসপাতালে নিয়মিত বিনামূল্যে দাঁতন সরবরাহের ফলে গোটা এলাকায় তাঁর এমন একটি ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে, তাঁর সেবার কথা দিকে দিকে এমন ছড়িয়ে যায় যে সকলেই ধীরে ধীরে তাঁর দোকানে সোনার জিনিস বানাতে চলে আসেন। কারণ, তাঁর সেবাভাব থেকে মানুষের মনে তাঁর প্রতি অগাধ বিশ্বাস জন্ম নিয়েছিল। তিনি কিন্তু এসব কিছু ভেবে সেবা করেননি। কিন্তু সেই সেবাই সমগ্র এলাকায় তাঁর বিশ্বস্ততার ভিত্তি হয়ে ওঠে। তাঁর পসার বাড়ে। অর্থাৎ আমাদের সমাজ এরকম, সেবাভাব থেকে কোন কাজ যদি কেউ করেন, তখন তিনি আসলে যা, মানুষ তাঁকে তার থেকে অনেক বেশি আস্থার দৃষ্টিতে দেখে। এই বিশ্বস্ততা থেকে গড়ে ওঠা জনগণের মনের এই ভাবই ওই সেবা পরায়ণ ব্যক্তিকে আরও কাজ করার জন্য প্রেরণা যোগায়। আর, এই চক্র চলতে থাকে। এই মানবিক সম্পর্কই সমাজকে প্রেরণা যোগায়।

আপনারা হয়তো শুনেছেন, ১০০ বছর আগে এমনই একটি ভয়ানক মহামারী হয়েছিল। আবার ১০০ বছর পরে হল। তখন ভারতের জনসংখ্যা অনেক কম ছিল। কিন্তু সেই সময়েও মহামারীতে বিশ্বের যেসব দেশে সবচাইতে বেশি মানুষ মারা গেছেন, সেই দেশগুলির মধ্যে ভারতও ছিল। কয়েক কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। আর সেজন্য এবার যখন বিশ্বব্যাপী মহামারী এসেছে, তখন গোটা বিশ্ব ভারতের নাম নিতেই ভয় পাচ্ছিল। তাদের মনে হচ্ছিল, ভাই ১০০ বছর আগে ভারতের জন্য এতো সর্বনাশ হয়েছিল, ভারতে এতো মানুষ মরেছিল, আর এখন তো ভারতের জনসংখ্যা এতো বেশি, ভারতীয়দের কারণে আমরা বিপদে পড়ে যাব। বড় বড় বিশেষজ্ঞরা এসব বলছিলেন আর ভারতের সামনে প্রশ্নচিহ্ন তুলে ধরছিলেন। কিন্তু আসলে কী হল? আপনারা দেখেছেন ২৩-২৪ কোটি জনসংখ্যার রাজ্য আমাদের উত্তরপ্রদেশ। এই রাজ্যের জন্য মানুষের মনে অনেক আশঙ্কা, দুশ্চিন্তা ছিল। এ রাজ্যের মানুষ কিভাবে বাঁচবেন? অনেকেই বলছিলেন যে উত্তরপ্রদেশে অনেক গরিব। এ রাজ্য থেকে অনেক শ্রমিক বড় বড় শহরগুলিতে কাজ করতে যান। তাঁরা দু’গজ দূরত্ব পালন করতে পারবেন কি পারবেন না? তাঁরা করোনায় না মরলেও খিদেয় মরে যাবেন। কিন্তু আপনাদের সহযোগিতায়, আপামর উত্তরপ্রদেশবাসীর পরিশ্রম এবং পরাক্রমে এই সমস্ত আশঙ্কা নস্যাৎ হয়ে গেছে।

বন্ধুগণ,

ব্রাজিলের মতো বড় দেশ যার জনসংখ্যা প্রায় ২৪ কোটি, সেখানে করোনা সংক্রমণে ৬৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু সমসংখ্যক জনসংখ্যাসম্পন্ন আমাদের উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, উত্তরপ্রদেশে করোনার সংক্রমণে যে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল, তাঁদের বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। আজ পরিস্থিতি এমন যে উত্তরপ্রদেশ শুধু সংক্রমণের গতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখেনি, এখানে যতজনের করোনা হয়েছে, প্রায় প্রত্যেকেই দ্রুতগতিতে সুস্থ হয়ে উঠছেন। এই সাফল্যের পেছনে সবচাইতে বেশি অবদান আপনাদের মতো অনেক মহানুভবদের সচেতনতা, সেবাভাব এবং সক্রিয়তা। আপনাদের মতো সামাজিক, ধার্মিক এবং পরোপকারী সংগঠনগুলির এই সেবাভাব, আপনাদের এই সঙ্কল্প, আপনাদের শিষ্টাচার; যা এই কঠিন সময়ে, কঠিন থেকে কঠিনতর সময়ে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়ার শক্তি দিয়েছে, অনেক বড় সাহায্য করেছে।

বন্ধুগণ,

আমরা কাশীবাসী মানুষ। আমাদের কবীর দাসজি বলেছিলেন
– সেবক ফল চায় না, সেবা করে দিন-রাত।

সেবা যাঁরা করেন, তাঁরা কোন পরিণামের জন্য করেন না। দিন-রাত নিঃস্বার্থ ভাব থেকেই সেবা করেন। অন্যদের নিঃস্বার্থ সেবার এই শিষ্টাচারই আজকের কঠিন সময়ে দেশবাসীর কাজে লাগছে। এই ভাবনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারও নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে করোনার সময়ে সাধারণ মানুষের দুঃখ-যন্ত্রণাকে সবাই মিলে ভাগ করে নিতে পারি। যথাসম্ভব নিরসনের চেষ্টা করতে পারি। গরিব যাতে প্রয়োজনীয় রেশন পান, তাঁর পকেটে যেন সামান্য টাকা থাকে, তিনি যেন কিছু রোজগার করতে পারেন, নিজের কাজে জন্য ঋণ নিতে পারেন - এসব দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারতে ৮০ কোটিরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। এর দ্বারা আমার বেনারসের অসংখ্য গরিব এবং শ্রমিকরা লাভবান হয়েছেন। আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে ভারত আমেরিকার দ্বিগুণ জনসংখ্যার কাছ থেকে এক পয়সাও না নিয়ে তাঁদের ভরনপোষণ করছে। এখন এই প্রকল্পকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ, দীপাবলী ও ছট পুজো, মানে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চেষ্টা ছিল যাতে উৎসবের সময়েও কোন গরিবের খাওয়াদাওয়ার সমস্যা না হয়। বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণের পাশাপাশি লকডাউনের সময় গরিবদের রান্নার জন্য যাতে জ্বালানির সমস্যা না হয়, সেদিকে তাকিয়ে উজ্জ্বলা যোজনার  সুবিধাভোগীদের গত তিন মাস ধরে বিনামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

গরিবদের জন ধন অ্যাকাউন্টে কয়েক হাজার কোটি জমা করানো থেকে শুরু করে গরিব শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের চিন্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ঠেলাওয়ালা, মুদির দোকানদারদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করা, চাষবাস, পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং অন্যান্য কাজের জন্য ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ – এরকম উদ্যোগ সরকার লাগাতার নিচ্ছে।

কিছুদিন আগেই ২০ হাজার কোটি টাকার ‘মৎস্য সম্পদা যোজনা’কে মঞ্জুর করা হয়েছে। এর ফলে, এই অঞ্চলের মৎস্য চাষীরাও লাভবান হবেন। তাছাড়া, কিছুদিন আগে উত্তরপ্রদেশে রোজগার এবং স্বরোজগারের একটি বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের হস্তশিল্পী, বুননশিল্পী ও অন্যান্য কারিগররা আর ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা আমাদের শ্রমিক বন্ধুদের মতো লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের জন্য রোজগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

করোনার এই বিপদ এতো বড় যে এর প্রতিরোধে লাগাতার কাজ করে যেতে হবে। আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগতে পারি না। আমাদের বুননশিল্পী ভাই-বোন থেকে শুরু করে নৌকার মাঝি, ব্যবসায়ী, সবাইকে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা প্রতিনিয়ত সকলের সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বেনারসকে এগিয়ে যেতেই হবে। আমি কিছুদিন আগেই বেনারসের উন্নয়ন কর্ম নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে, শহরের প্রত্যেক বিধায়কের সঙ্গে প্রযুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। অনেক বিস্তারিত কথাবার্তা হয়েছে। প্রত্যেকটি বিষয় আমি প্রযুক্তি এবং ড্রোন পদ্ধতির মাধ্যমে তদারকি করেছি। আমাদের সড়কপথ, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের মতো যাবতীয় প্রকল্পের পাশাপাশি, বাবা বিশ্বনাথ ধামের প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আমাকে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। আমি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শও দিয়েছি। কিছু সমস্যা এসেছিল, সেগুলি দূর করার জন্য যেখানে যেখানে বলতে হত, সেগুলি আমি বলেছি। এই সময়ে শুধু কাশীতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ যখন চলছে, বুঝতেই পারছেন এর মাধ্যমে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তখন কাশীতে দ্রুতগতিতে আবার আগের প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসবে।

সেজন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত সকল প্রকল্প যেমন ক্রুজ ট্যুরিজম, লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো, দশাশ্বমেধ ঘাটের পুনর্নবীকরণ, গঙ্গা আরতির জন্য অডিও-ভিডিও স্ক্রিন লাগানোর কাজ, ঘাটে ঘাটে আরও সুব্যবস্থাপনার কাজ – এরকম প্রতিটি প্রকল্প দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করার দিকে লক্ষ্য দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

আগামীদিনে আমরা সবাই কাশীকে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চাই। আর এটা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলির পর এখানকার শাড়ি, এখানকার অন্যান্য হস্তশিল্প, এখানকার ডেয়ারি, মৎস্যপালন, মৌ-পালন এবং ব্যবসার জন্য নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। বিশ্বে মোমের অনেক চাহিদা রয়েছে। আমরা মোমের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করতে পারি।

আমি কৃষকদের, যুব বন্ধুদের অনুরোধ জানাই এ ধরনের ব্যবসায় যত বেশি সম্ভব অংশীদারিত্ব সুনিশ্চিত করুন। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় আমাদের কাশী ভারতের একটি বড় রপ্তানি হাব হিসেবে বিকশিত হতে পারে এবং আমাদের এটা করা উচিৎ। কাশীকে আমরা আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের একটা প্রেরণাস্থল রূপে বিকশিত করব, প্রতিষ্ঠিত করব।

বন্ধুগণ,

আমার খুব ভালো লেগেছে যে আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা হল আর শ্রাবণ মাসে কাশীবাসীদের সঙ্গে দেখা হওয়া সৌভাগ্যের কথা। আপনারা যে ধরনের সেবাভাব নিয়ে কাজ করেছেন, এখনও যে ঐকান্তিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাই।

পরোপকার ও সেবাভাব নিয়ে কাজ করে আপনারা সবাইকে প্রেরণা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও প্রেরণা দেবেন। কিন্তু হ্যাঁ। একটি কথা আমাদের বারবার বলতে হবে, প্রত্যেককে করতে হবে, নিজে করে দেখাতে হবে। আমাদের একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক থেকে মুক্তি চাই। এই অভিযান আমাদের ছাড়লে চলবে না। আমরা যাঁরা বারাণসীর পান খাই, তাঁদের রাস্তায় থুতু ফেলার অভ্যাস ছাড়তে হবে। দু’গজের দূরত্ব, গামছা কিংবা ফেস মাস্ক এবং বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস ছাড়লে চলবে না, অন্যরাও যাতে এই অভ্যাস না ছাড়েন তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই অভ্যাসকে এখন আমাদের শিষ্টাচারে পরিণত করতে হবে, স্বভাবে পরিণত করতে হবে।

বাবা বিশ্বনাথ এবং গঙ্গা মায়ের আশীর্বাদ আপনাদের সবার ওপর বর্ষিত হতে থাকুক, এই কামনা নিয়ে আমার বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। আরেকবার আপনাদের এই মহান সেবাকার্যকে প্রণাম জানাই।

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

হর হর মহাদেব!!!

 

 



CG/SB/DM



(Release ID: 1637638) Visitor Counter : 252