প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

শ্রী স্বামীনারায়ণ মন্দিরের দ্বিশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 11 NOV 2024 2:53PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ নভেম্বর, ২০২৪


জয় স্বামীনারায়ণ!

আমি ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণের চরণে প্রণাম করি। ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণের কৃপায় বড়তাল ধামে  এক বিশাল দ্বিশতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশ এবং সারা বিশ্ব থেকে ভক্তরা এখানে সমবেত হয়েছেন, আর স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের এটি চিরন্তন ঐতিহ্য যে সেবা ছাড়া কোনো কাজই শুরু হয় না। আজ, প্রত্যেকেই অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে বিভিন্ন সেবামূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন।বিগত কয়েক দিনে টেলিভিশন, মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই উৎসবের যে সব ছবি ও ভিডিও আমি দেখেছি, তা আমার আনন্দকে অনেক গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

বন্ধুগণ,
বড়তাল ধামের প্রতিষ্ঠার দ্বিশতবর্ষ উদযাপন নিছক কোনো ঘটনা বা ইতিহাসের তারিখের থেকে অনেক বেশি কিছু। এটি আমার মতো সেই সব মানুষের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ উপলক্ষ, যারা বড়তাল ধামের প্রতি অবিচল বিশ্বাস নিয়ে বড় হয়েছেন। আমাদের কাছে এই উদযাপনটি ভারতীয় সংস্কৃতির চিরন্তন প্রবাহের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আমরা বড়তাল ধামের সেই আধ্যাত্মিক চেতনাকে সংরক্ষণ করেছি, যা দুই শতক আগে ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজও এখানে ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণের শিক্ষা ও দৈব শক্তি অনুভূত হয়।আমি সকল সাধু-সন্তের চরণে প্রণাম জানাই এবং এই বিশাল দ্বিশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আপনাদের সকলকে এবং আমাদের দেশবাসীকে আমার শুভেচ্ছা জানাই। আমি আনন্দিত যে এই অনুষ্ঠানকে স্মরণীয় করে রাখতে ভারত সরকার ২০০ টাকার একটি রৌপ্য মুদ্রা  এবং একটি স্মারক ডাকটিকিট  প্রকাশ করেছে। এই প্রতীকগুলি আগত বহু প্রজন্মের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ স্মরণীয় মুহূর্তের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে।

বন্ধুগণ,
ভগবান স্বামীনারায়ণের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকেই এই ঐতিহ্যের সঙ্গে আমার বন্ধনের গভীরতা বোঝেন। এখানে উপস্থিত রাকেশ জী আপনাদের জানাতে পারবেন যে তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কত পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ। এই বন্ধন কেবল আধ্যাত্মিক নয়, সামাজিকও বটে। গুজরাটে আমার সময়কালে আমি সাধু-সন্তদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং সৎসঙ্গে যোগ দেওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছিলাম। আমি সেই মুহূর্তগুলি পেয়ে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান ছিলাম এবং প্রতিটি মুহূর্তকে খুব মূল্যবান মনে করি। ভগবান স্বামীনারায়ণের কৃপায়, আজও কোনো না কোনোভাবে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, সেই সংযোগ বজায় আছে। বহু উপলক্ষে আমি সাধু-সন্তদের আশীর্বাদ পাওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছি, যা আমাকে জাতীয় গুরুত্বের বিষয়গুলিতে গভীরভাবে চিন্তা করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

আজ বড়তাল ধামের এই পবিত্র উৎসবে আমি সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারলে খুব খুশি হতাম। আমি চেয়েছিলাম আপনাদের সবার সঙ্গে বসে অনেক প্রিয় স্মৃতিচারণ করতে এবং এই অনুষ্ঠানের আনন্দ ভাগ করে নিতে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা এই ধরনের একটি মুহূর্ত উপভোগ করতাম। তবে, আমার দায়িত্ব এবং প্রতিশ্রুতির কারণে এটি সম্ভব হয়নি। তবুও, আমি আক্ষরিক অর্থেই  আপনাদের সকলের সঙ্গে আছি। এই মুহূর্তে আমার হৃদয় সম্পূর্ণরূপে বড়তাল ধামের সঙ্গে রয়েছে।

বন্ধুগণ,
 ভারতের একটি অসাধারণ গুণ হল যে কঠিন সময়ে সব সময়ই ঋষি, মহর্ষি, সন্ত এবং মহাত্মাগণ সমাজকে পথ দেখাতে এবং উন্নত করতে এগিয়ে এসেছেন। ভগবান স্বামীনারায়ণ এমন এক মুহূর্তে আবির্ভূত হন যখন আমাদের দেশ শত শত বছরের পরাধীনতার পর দুর্বল হয়ে পড়েছিল, যখন আমরা বিশ্বাস হারিয়ে আত্ম-সমালোচনার অন্ধকারে ডুবেছিলাম। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভগবান স্বামীনারায়ণ এবং সেই সময়ের দ্রষ্টারা আমাদের মধ্যে নতুন করে আধ্যাত্মিক শক্তি সঞ্চার করেছিলেন। তাঁরা আমাদের আত্মমর্যাদাবোধকে জাগিয়ে তোলেন এবং আমাদের পরিচয়বোধে প্রাণ সঞ্চার করেন। শিক্ষাপত্রী এবং বচনামৃতের  শিক্ষা এই ক্ষেত্রে এক বিরাট অবদান রেখেছে, এবং এই শিক্ষাগুলিকে আমাদের জীবনে মূর্ত করা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের কর্তব্য।

আমি আনন্দিত যে, এই অনুপ্রেরণা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে বড়তাল ধাম মানব সেবায় এবং যুগ গঠনে নিবেদিত এক মহান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই পবিত্র স্থানটি সাগারাম জির মতো অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ভক্তদের জন্ম দিয়েছে। আজ, আপনাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে অসংখ্য শিশুর খাদ্য, আশ্রয় এবং শিক্ষার ব্যবস্থা সহ বহু উদ্যোগ পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও, দূরবর্তী বনাঞ্চলে বহু সেবামূলক কাজ চলছে। আপনারা আদিবাসী অঞ্চলে কন্যা শিশুদের শিক্ষাকে উৎসাহিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযান হাতে নিয়েছেন। দরিদ্রদের সেবা করা হোক, নতুন প্রজন্মকে লালন-পালন করা হোক, অথবা আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ করাই হোক - উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আপনাদের এই চলমান অভিযান আপনাদের উৎসর্গের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।আমি যে আবেদনই করেছি - তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে হোক বা পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে - তা সব সময়ই আপনাদের উৎসাহপূর্ণ সাড়া পেয়েছে। আপনাদের মতো সাধু ও ভক্তরা আমাকে কখনও হতাশ করেননি; আপনারা আমার প্রতিটি অনুরোধকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে তা পূরণের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন।

আমি সম্প্রতি একটি অভিযানের কথা শুনেছি যা আমি প্রস্তাব করেছিলাম: মায়ের নামে একটি গাছ লাগানো। স্বামীনারায়ণ পরিবার এই উদ্যোগের অধীনে এক লক্ষেরও বেশি গাছ লাগিয়ে তাতে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অংশ নিয়েছে।

প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি উদ্দেশ্য থাকে, এবং এই উদ্দেশ্যই আমাদের অস্তিত্বকে রূপ দেয়। এটি আমাদের চিন্তা, কর্ম ও বক্তব্যকে প্রভাবিত করে। যখন আমরা আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পাই, তখন সবকিছু বদলে যায়। ইতিহাস জুড়ে, আমাদের সাধু ও ঋষিগণ মানুষকে তাঁদের জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে সাহায্য করেছেন। সমাজের প্রতি এই আধ্যাত্মিক গুরুদের অবদান ছিল অসাধারণ। যখন একটি সমগ্র সমাজ বা দেশ একটি সাধারণ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একত্রিত হয়, তখন সাফল্য অনিবার্য, যা অসংখ্য উদাহরণের মাধ্যমে প্রমাণিত। আমরা আগেও এটি অর্জন করেছি - আমাদের দ্রষ্টারা তা অর্জন করেছেন, আমাদের সমাজ তা অর্জন করেছে এবং আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিও তা অর্জন করেছে।

আজ, আমাদের যুব সমাজের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে এবং সমগ্র জাতি একটি সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি হলো একটি ‘বিকশিত ভারত’ তৈরি করা। আমি বড়তাল ধামের  সাধু-সন্তদের এবং সমগ্র স্বামীনারায়ণ পরিবারকে অনুরোধ করছি, এই মহৎ উদ্দেশ্য, এই ‘বিকশিত ভারত’-এর বিশাল দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করুন। ঠিক যেমন এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে স্বাধীনতা আন্দোলনে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের হৃদয়ে স্বাধীনতার জন্য অদম্য আকাঙ্ক্ষা জ্বালিয়ে রেখেছিল, তেমনই আমাদেরও এখন জাতীয় উন্নয়নের জন্য একই অবিরাম উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এমন একটি দিন বা মুহূর্তও ছিল না যখন মানুষের হৃদয়ে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত ছিল না, আর ১৪০ কোটি দেশবাসীর প্রত্যেকের  মধ্যে এখন আমাদের ঠিক সেইরকম উৎসর্গ প্রয়োজন।

একসাথে, আমাদের অবশ্যই প্রত্যেককে - বিশেষ করে আমাদের যুব বন্ধুদের - এই 'বিকশিত ভারত'-এর দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত করতে আগামী ২৫ বছর উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আমাদের এই অভিযানকে জীবন্ত রাখতে হবে এবং এর মধ্যে দিয়েই শ্বাস নিতে হবে, প্রতি মুহূর্তে এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, সেই স্থান থেকেই আমাদের অবদান রাখা শুরু করা উচিত। যখন আমাদের প্রত্যেকেই এই লক্ষ্যে অবদান রাখবে, তখন সম্মিলিতভাবে আমরা উপকৃত হব। একটি 'বিকশিত ভারত' অর্জনের জন্য স্বনির্ভরতা হল একটি অপরিহার্য ধাপ। একটি স্বনির্ভর জাতি গড়ে তুলতে, আমাদের বাহ্যিক সাহায্যের প্রত্যাশা না করে নিজেদের ওপর ভরসা করতে হবে। দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকের প্রত্যেকের এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত, এবং এখানে উপস্থিত ভক্তরাও এর ব্যতিক্রম নন। আমরা 'ভোকাল ফর লোকাল'  প্রচারের মাধ্যমে শুরু করতে পারি, যার মাধ্যমে স্থানীয় পণ্য এবং ব্যবসাগুলিকে উৎসাহিত করা হবে।

একটি বিকশিত ভারতের জন্য আমাদের ঐক্য এবং জাতীয় সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্ভাগ্যবশত, কিছু মানুষ স্বার্থপর উদ্দেশ্য এবং সীমিত বোঝার দ্বারা চালিত হয়ে জাতি, ধর্ম, ভাষা, সামাজিক অবস্থান, লিঙ্গ এবং গ্রামীণ-শহুরে বিভাজনের ভিত্তিতে সমাজকে খণ্ড-বিখণ্ড করার চেষ্টা করছে। তারা ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নির্ধারিত উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। দেশের শত্রুদের দ্বারা সৃষ্ট এই হুমকিগুলির গুরুত্ব আমাদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে এবং এই সংকটের তীব্রতা বুঝতে হবে। সম্মিলিতভাবে, আমাদের এই বিভাজন সৃষ্টিকারী কাজগুলিকে ব্যর্থ করে দিতে হবে এবং তাদের সফল হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে।


বন্ধুগণ,
ভগবান শ্রী স্বামীনারায়ণ আমাদের শিখিয়েছেন যে, বড় লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে হলে অপরিসীম নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে যুব মনের মধ্যে জাতিকে দৃঢ়ভাবে গড়ে তোলার ক্ষমতা রয়েছে। তিনি এই বিশ্বাস গেঁথে দিয়েছিলেন যে যুব সমাজ দেশকে নির্মাণ করতে পারে এবং তা করবেও। এটি উপলব্ধি করার জন্য, আমাদের সক্ষম, যোগ্য ও সুশিক্ষিত তরুণদের লালন করতে হবে। একটি ‘বিকশিত ভারত’-এর জন্য আমাদের যুব সমাজকে শক্তিশালী করা অত্যাবশ্যক। দক্ষ তরুণরাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হয়ে উঠবে। বিশ্বজুড়ে আমাদের যুবকদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকবে। আজ, আমি যে বিশ্বনেতাদের সাথে দেখা করি, তাঁদের অধিকাংশই তাঁদের দেশে ভারতের যুবক, দক্ষ কর্মীবাহিনী এবং আইটি ক্ষেত্রের পেশাদারদের কাজ করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। বিশ্বের মানুষ ভারতের যুব সমাজের গতিশীলতায় মুগ্ধ। এই তরুণ প্রজন্ম শুধু আমাদের দেশের চাহিদাই মেটাবে না, বরং আন্তর্জাতিক চাহিদাও পূরণ করবে। দক্ষ যুব সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের এই প্রচেষ্টা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায় সব সময়ই মাদকাসক্তি বিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা করেছে। আমাদের সাধু, মহাত্মা এবং ভক্তরা আমাদের যুব সমাজকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার থেকে দূরে রাখতে এবং আসক্তি মুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। যুব সমাজকে মাদকাসক্তির ফাঁদে পড়া থেকে রক্ষা করার জন্য প্রচারণা ও উদ্যোগগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টাগুলি দেশের সমস্ত সমাজে এবং প্রতিটি কোণে প্রয়োজন, এবং আমাদের এই মিশনে অধ্যবসায়ী হতে হবে।

বন্ধুগণ,
একটি দেশ কেবল তখনই উন্নতি করতে পারে যখন সে তার ঐতিহ্যের জন্য গর্ববোধ করে এবং সেটিকে সংরক্ষণ করে। তাই, আমাদের মূল চালিকাশক্তি হল উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহ্য সংরক্ষণ। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলিতে গৌরবের পুনরুত্থান দেখে মন ভরে যায়—এমন অনেক স্থান, যা বিলীন হয়ে গেছে বলে মনে করা হয়েছিল, এখন তা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। অযোধ্যার রূপান্তর এর একটি প্রধান উদাহরণ, যেখানে ৫০০ বছরের লালিত স্বপ্ন অবশেষে সাকার হয়েছে। বহু প্রজন্ম এই স্বপ্নকে ধরে রেখেছিলেন, এর জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং আত্মত্যাগ করেছেন। আজ, আমরা কাশী ও কেদারনাথের পুনরুজ্জীবন দেখতে পাচ্ছি, যা এই নবজাগরণের সাক্ষ্য বহন করে। পাঁচশো বছর পর পাভাগড়ে আমাদের বিশ্বাসের পতাকা এখন সগৌরবে উড়ছে। মোঢেরার সূর্য মন্দির এবং সোমনাথের জাঁকজমক এর অন্যান্য চোখে পড়ার মতো উদাহরণ। আমরা যে দিকেই তাকাই না কেন, আমাদের চোখের সামনে একটি নতুন প্রাণশক্তি এবং এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব উন্মোচিত হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, শত শত বছর ধরে আমাদের দেশের দেব-দেবীর মূর্তিগুলি চুরি হয়ে যাচ্ছিল, আর কেউ-ই সেগুলির নিখোঁজ হওয়া নিয়ে চিন্তিত ছিল না। আজ, প্রচুর প্রচেষ্টার পর, চুরি যাওয়া আমাদের এই দেব-দেবীর মূর্তিগুলি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে এবং সেগুলিকে আমাদের মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আমরা, গুজরাটের মানুষ, আমাদের প্রাচীন সভ্যতার প্রতীক ধোলাভিরা এবং লোথালের  ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত গর্ববোধ করি। এই স্থানগুলির পুনরুদ্ধার ও পুনরুজ্জীবনের প্রচেষ্টা চলছে। ভারতের সাংস্কৃতিক চেতনাকে জাগিয়ে তোলার এই অভিযান শুধুমাত্র একটি সরকারি উদ্যোগ নয়। এটি হলো এই দেশকে এবং এই ভূমিকে ভালোবাসেন এমন সকলের যৌথ দায়িত্ব। যারা এর ঐতিহ্যকে লালন করেন, এর সংস্কৃতির জন্য গর্ববোধ করেন এবং এর উত্তরাধিকারের প্রশংসা করেন। আমাদের প্রত্যেকেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, এবং এই বিষয়ে আপনারা বিশাল অনুপ্রেরণা জোগাতে পারেন। বড়তাল ধামের অক্ষর ভবন  সংগ্রহশালা, যেখানে ভগবান স্বামীনারায়ণের সাথে সম্পর্কিত অনেক জিনিস রাখা আছে, তা এই সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের একটি অংশ, এবং এই অর্জনের জন্য আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। এই সংগ্রহশালা নতুন প্রজন্মকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদেরঙ ঐতিহ্যের একটি ঝলক দেয়। আমি নিশ্চিত যে অক্ষর ভবন ভারতের চিরন্তন আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারের একটি বিশাল তীর্থস্থানে পরিণত হবে।

বন্ধুগণ,
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ‘বিকশিত ভারত’-এর স্বপ্ন শুধুমাত্র এই ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমেই বাস্তব রূপ নেবে। যখন ১৪০ কোটি ভারতীয় একটি অভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে একত্রিত হবেন, তখন সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই আসবে। এই যাত্রাপথে আমাদের দ্রষ্টাদের নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং দেশ ও বিদেশ থেকে হাজার হাজার সাধু ও ভক্ত এখানে সমবেত হওয়ায় আমার মনে হচ্ছে যেন আমি এই পরিবারেরই একজন। এটি আমাকে আরও একটি মিশনে আপনাদের যুক্ত করার সুযোগ দিচ্ছে। এই বছর প্রয়াগরাজে পূর্ণ কুম্ভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতি ১২ বছরে অনুষ্ঠিত হওয়া এই পূর্ণ কুম্ভ হলো ভারতের বিশাল ঐতিহ্যের একটি উদযাপন, যা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ৪৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে এই কুম্ভ মেলায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কোটি মানুষ একত্রিত হবেন।আমার একটি বিনীত অনুরোধ আছে: আপনারা কি এই উদ্যোগের দায়িত্ব নিতে পারেন? আপনাদের বিশ্বজুড়ে উপস্থিতি রয়েছে এবং অনেক দেশে আপনাদের মন্দির রয়েছে। আপনারা কি বিদেশের মানুষকে কুম্ভ মেলার গুরুত্ব, কেন এটি উদযাপন করা হয় এবং এর পেছনের সাংস্কৃতিক দর্শন সম্পর্কে শিক্ষিত করতে পারেন? আপনারা কি অ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে আপনাদের প্রতিটি বিদেশী শাখা থেকে কমপক্ষে ১০০ জন বিদেশীকে প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলায় আনার চেষ্টা করতে পারেন? এটি সারা বিশ্বে সাংস্কৃতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হবে, এবং আমি নিশ্চিত যে আপনারা এটি অনায়াসে সম্পন্ন করতে পারেন।

আরেকবার, আপনাদের মাঝে সশরীরে উপস্থিত হতে না পারার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী, তবে, ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে আপনাদের সকলকে দেখার সুযোগ পেয়ে আমি কৃতজ্ঞ। এতগুলি পরিচিত মুখ দেখতে পেয়ে আমার অপার আনন্দ হচ্ছে। যদিও দূর থেকে, এই মুহূর্তটি আমাকে আনন্দে ভরিয়ে দিচ্ছে, এবং এই দ্বিশতবর্ষ উদযাপনের অংশ হতে পেরে আমি মানসিকভাবে আনন্দিত।

অনেক অভিনন্দন! আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ!

জয় স্বামীনারায়ণ।

 

SSS/AS....


(Release ID: 2177649) Visitor Counter : 14