প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষকদের আলাপচারিতার বঙ্গানুবাদ
Posted On:
07 SEP 2024 5:38PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
শিক্ষিকা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, নমস্কার! আমি ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার চন্দনকিয়ারির '১২ হাই স্কুল' থেকে আশা রাণী।
শিক্ষিকা : স্যার, একজন সংস্কৃত শিক্ষিকা হিসেবে আমার সবসময় স্বপ্ন ছিল যে আমাদের প্রাচীন শিক্ষা বা সংস্কারের মাধ্যমে শিশুরা জীবনের মূল্যবোধ ও আদর্শকে যাতে অর্জন করতে পারে সেই বিষয়ে তাদের সচেতন করে তোলা। এই লক্ষ্য নিয়েই আমি আমার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংস্কৃতের প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছি এবং এটিকে নৈতিক শিক্ষার ভিত্তি হিসাবে গড়ে তুলেছি। বিভিন্ন শ্লোকের মাধ্যমে আমি তাদের জীবনের মূল্যবোধ শেখানোর চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন যে তাদের সংস্কৃতের দিকে আকর্ষণ করে আপনি আসলে তাদের জ্ঞানের এক বিশাল ভান্ডারের দিকেও পরিচালিত করছেন? এটি এমন একটি বিষয় যা আমাদের দেশে গভীরভাবে চর্চা করা হয়। আপনি কি কখনো এই শিশুদের বুঝিয়েছেন যে বৈদিক গণিত কী? একজন সংস্কৃত শিক্ষিকা হিসেবে, বা হয়তো টিচার্স রুমে আপনার সহকর্মীদের মধ্যে কখনো কি বৈদিক গণিত নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে?
শিক্ষিকা : না, স্যার। এখনো না।
প্রধানমন্ত্রী : বেশ, আপনি অবশ্যই একবার চেষ্টা করে দেখবেন। হয়তো আপনারা সবাই এতে উপকৃত হবেন। বৈদিক গণিতের জন্য অনলাইন ক্লাসও হয়। যুক্তরাজ্যে কিছু কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই বৈদিক গণিত পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে শিশুরা সাধারণত গণিতে আগ্রহী নয়, তারাও এর এক ঝলক পেলে এটিকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো, প্রায় জাদুর মতো মনে করতে পারে। তারা আরও শিখতে আগ্রহী হবে। সুতরাং, সংস্কৃতের মাধ্যমে আপনি আমাদের দেশের কিছু অনন্য বিষয়ের সঙ্গে তাদের পরিচয়ও করিয়ে দিতে পারেন।
শিক্ষিকা : স্যার, এটি একটি চমৎকার পরামর্শ। আমি অবশ্যই এটির ওপরে কাজ করবো।
প্রধানমন্ত্রী: বেশ, আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
শিক্ষিকা: ধন্যবাদ, স্যার।
শিক্ষিকা: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাশয়, আপনাকে আমার প্রণাম। আমি মহারাষ্ট্রের কোলাপুর থেকে এসেছি, যেই জেলায় রাজর্ষি সাহু-জি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী : এখানে আসার পর কি আপনার গলা বসে গেছে, নাকি আপনার কণ্ঠস্বর স্বাভাবিকভাবেই এমন?
শিক্ষিকা: না, স্যার, আমার কণ্ঠস্বর সবসময়ই এমন।
প্রধানমন্ত্রী : আহ, আমি বুঝতে পেরেছি, আপনার কণ্ঠস্বর জন্মগতভাবেই এরকম।
শিক্ষিকা: হ্যাঁ, স্যার, আমি মহারাষ্ট্রের কোলাপুর থেকে এসেছি এবং সামালাভিয়া স্কুলের একজন শিল্পকলা শিক্ষিকা। কোলাপুর হল রাজর্ষি সাহুর জন্মস্থান।
প্রধানমন্ত্রী: তাহলে আপনি আঁকা শেখান?
শিক্ষিকা: হ্যাঁ, স্যার। আমি আঁকা, নাচ, নাটক, সঙ্গীত, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, হস্তশিল্প এবং অন্যান্য ধরনের শিল্পকলা শেখাই।
প্রধানমন্ত্রী : আচ্ছা, আমি বুঝেছি সেটা।
শিক্ষিকা : প্রায়ই এরকম দেখা যায় যে সব জায়গায় বলিউড বা হিন্দি সিনেমার নাচই প্রাধান্য পায়, কিন্তু আমার স্কুলে, যেখানে আমি ২৩ বছর ধরে শেখাচ্ছি, সেখানে আমি ভারতীয় সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে নৃত্য পরিবেশনা তৈরি করেছি। এর মধ্যে লোকনৃত্য এবং শাস্ত্রীয় নৃত্য অন্তর্ভুক্ত। আমি শিব তাণ্ডব স্তোত্রও করিয়েছি। আমি ২০০-৩০০ জন ছেলেকে নিয়ে বিশাল আকারের পরিবেশনা করি এবং বিশ্বী-ক্রমের মতো অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেছি। আমি এমনকি ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের জীবনের ওপর ভিত্তি করে একটি নাচের কোরিওগ্রাফি করেছিলাম, যা বিশ্বী-ক্রমে রেকর্ড করা হয়েছিল।আমি শিব তাণ্ডব, হনুমান চালিসা এবং দেবীমাকে উৎসর্গীকৃত ভক্তিমূলক পরিবেশনাও করেছি। এই পরিবেশনাগুলির কারণেই নাচের ক্ষেত্রে আমার কাজের জন্য আমি স্বীকৃতি পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী : আমি নিশ্চিত আপনি খুব ভাল কাজ করছেন।
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, স্যার, আমি নিজে করি এবং আমার ছাত্র - ছাত্রীরাও পরিবেশনা করে।
প্রধানমন্ত্রী: অবশ্যই, কিন্তু যে ছাত্র - ছাত্রীদের জন্য আপনি আপনার জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের জন্য আর কী করেন?
শিক্ষিকা: স্যার, আমার ছাত্র - ছাত্রীরাই তো সব করে!
প্রধানমন্ত্রী : তারা কী করে?
শিক্ষিকা : ৩০০ থেকে ৪০০ জন শিশু একটি এক একটা নাচের কোরিওগ্রাফিতে কাজ করে। আর এটি শুধু আমার স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই নয়। আমি আশেপাশের বস্তি এলাকা, যৌনকর্মীদের সন্তান এবং এমনকি হুইলচেয়ারে থাকা শিশুদেরও এই কাজে যুক্ত করি। আমি তাদের অতিথি শিল্পী হিসেবে আমন্ত্রণ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী : কিন্তু আজকালকার বাচ্চারা তো নিশ্চয়ই সিনেমার গানে বেশি আগ্রহী, তাই না?
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, স্যার। তবে, আমি তাদের লোকনৃত্যের মধ্যে যে গভীরতা আছে,আমাদের যে সংস্কৃতি আছে তা ব্যাখ্যা করি, এবং এটি আমার সৌভাগ্য যে তারা আমার কথা শোনে।
প্রধানমন্ত্রী : সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, আমি গত ১০ বছর ধরে এই সব করছি।
প্রধানমন্ত্রী : একটি শিশু যদি তার শিক্ষকের কথা না শোনে, তবে সে আর কার কথা শুনবে? আপনি কত বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন?
শিক্ষিকা : সব মিলিয়ে ৩০ বছর হল, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: আমি ধরে নিচ্ছি যে আপনি নাচের মাধ্যমে শিশুদের কিছু বার্তা দেন। আপনি কী ধরনের বার্তা তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেন?
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, আমি সামাজিক বার্তার ওপর পরিবেশনা তৈরি করি। উদাহরণস্বরূপ, আমি মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর বিপদ নিয়ে একটি নৃত্য-নাটিকা তৈরি করেছিলাম, যা পুরো শহর জুড়ে পথনাটক হিসেবে পরিবেশিত হয়েছিল। আরেকটি উদাহরণ হল আমার তৈরি একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র - 'স্পর্শ' - যেখানে পুরো কারিগরি দলটাই ছিল আমার ছাত্রছাত্রীদের।
প্রধানমন্ত্রী : তাহলে, গত কয়েক দিন ধরে নিশ্চয়ই আপনি এই বাড়িতে, ওই বাড়িতে - বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আপনি নিশ্চয়ই বেশ ক্লান্ত। আপনি কি কারোর সঙ্গে বিশেষ করে দেখা করেছেন? কেউ কি আপনার সফরের কোনো সুবিধা চাইতে এসেছিল?
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, স্যার, অনেকেই এসেছেন, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। কেউ কেউ তো জিজ্ঞেসও করেছেন যে আমন্ত্রণ জানালে আমি তাদের কলেজে যেতে রাজি কিনা।
প্রধানমন্ত্রী : তাহলে তো দেখছি আপনি ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে রেখেছেন। এর মানে কি আপনি বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানেও যুক্ত থাকেন?
শিক্ষিকা: হ্যাঁ, আমি বাণিজ্যিক কাজ করি, তবে -
প্রধানমন্ত্রী: তাহলে আপনার নিশ্চয়ই একটি বড় বাজার আছে।
শিক্ষিকা : না, স্যার, আমাকে বুঝিয়ে বলতে দিন। যদিও আমি বাণিজ্যিকভাবে কাজ করি, তবে সেই উপার্জন করা অর্থ আমি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করি। আমি চলচ্চিত্রের জন্য কোরিওগ্রাফিও করেছি, কিন্তু আমি ১১ জন অনাথ শিশুকে দত্তক নিয়েছি। তাদের সমর্থন করার জন্য আমি বাণিজ্যিকভাবে কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি তাদের জন্য কী ধরনের কাজ করেন?
শিক্ষিকা : এই শিশুরা একটি অনাথ আশ্রমে থাকত এবং তাদের শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ ছিল। আশ্রমটি তাদের স্বাভাবিক পদ্ধতি অনুসারে দশম শ্রেণীর পর আইটিআইতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। আমি সেই ধারা ভাঙতে চেয়েছিলাম, কিন্তু প্রথমে তারা রাজি হয়নি। তাই, আমি শিশুদের অনাথ আশ্রম থেকে বের করে আনি, তাদের থাকার জন্য একটি জায়গা করে দিই এবং তাদের এই প্রতিভার বিকাশ ঘটাই। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের দক্ষতা আরও বাড়িয়েছে। এখন, তাদের মধ্যে দুজন শিল্পকলা শিক্ষক হিসেবে কাজ করছে এবং আরও দুজন সিবিএসই বোর্ডের অধীনে সরকারি স্কুলে নৃত্য প্রশিক্ষক হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী : এটা সত্যিই অসাধারণ। সব শেষে, আপনি এক অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন। অন্যরা যখন এই শিশুদের ত্যাগ করেছে, আপনি তাদের ত্যাগ করেননি; আপনি তাদের গ্রহণ করেছেন এবং দত্তক নিয়েছেন। কী মহৎ কাজ!
শিক্ষিকা : স্যার, এটা আমার একটি গভীর ব্যক্তিগত বিষয়। আমি নিজেও একটি অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছি, তাই আমি বুঝি কেমন লাগে। তখন আমার কিছুই ছিল না। তাই এখন, যদি আমি সেই কম সৌভাগ্যবান শিশুদের কিছু দিতে পারি, তবে এটি আমার সবচেয়ে বড় সুযোগ।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি শুধু শিল্পকলার মাধ্যমে জীবন যাপন করেননি, আপনি মূল্যবোধ নিয়েও জীবন যাপন করেছেন। এটা সত্যিই তাৎপর্যপূর্ণ।
শিক্ষিকা : ধন্যবাদ, স্যার।
শিক্ষিকা: ধন্যবাদ, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার নাম, সাগর, সত্যিই আপনার সঙ্গে মানানসই।
শিক্ষিকা : হ্যাঁ, স্যার, আপনার সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। এটা আমার জন্য একটি বড় সৌভাগ্য।
প্রধানমন্ত্রী : আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
শিক্ষিকা : ধন্যবাদ, স্যার।
শিক্ষিকা : নমস্কার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী : নমস্কার।
শিক্ষিকা : আমি ডঃ অবিনাশা শর্মা, হরিয়ানা শিক্ষা বিভাগে ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করি। স্যার, আমি হরিয়ানার দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের জন্য একটি ভাষা শেখার কেন্দ্র তৈরি করেছি। এই শিশুরা এমন পরিবেশ থেকে আসে, যেখানে ইংরেজি ভাষা বুঝতে তাদের খুব সমস্যা হয়। এই কেন্দ্রে শুধু ইংরেজি নয়, আঞ্চলিক ভাষা এবং মাতৃভাষাও শেখানো হয়।
স্যার, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে বলা হয়েছে যে বাচ্চাদের শেখার মান বাড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা উচিত। এই কথা মাথায় রেখে, আমি আমার পরীক্ষাগারে এআই যুক্ত করেছি। 'স্পিকমিটার' এবং 'টকপ্যাল'-এর মতো কিছু টুলস আছে, যা এইআই দিয়ে চলে এবং বাচ্চাদের সঠিক উচ্চারণ শিখতে সাহায্য করে।
স্যার, আপনাকে জানাতে পেরে এটা আমার খুব ভালো লাগছে যে আমি আমার রাজ্যকে ইউনেস্কো, ইউনিসেফ এবং ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তানের মতো আন্তর্জাতিক জায়গায় তুলে ধরেছি। এই সব অভিজ্ঞতার প্রভাব আমার ক্লাসরুমেও পড়েছে। আজ হরিয়ানার একটি সরকারি স্কুল এমন এক 'গ্লোবাল ক্লাসরুম' হয়ে উঠেছে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা ইন্দোনেশিয়ার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি যদি আপনার এই অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করেন এবং কীভাবে আপনি এটা করলেন, তা আরও একটু বিস্তারিতভাবে বলেন, তাহলে অন্যরা সেটা থেকে শিখতে পারবে।
শিক্ষিকা : স্যার, মাইক্রোসফ্ট স্কার্পথেন নামে একটি প্রোগ্রাম আছে যা আমি আমার ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত করেছি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমে আমাদের শিশুরা তাদের সংস্কৃতি, তাদের ভাষা এবং তাদের পড়াশোনার উন্নতির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারে। স্যার, আমি আপনার সঙ্গে একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই। আমি যখন উজবেকিস্তান গিয়েছিলাম, তখন আমি সেখানকার অভিজ্ঞতা আমার ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করি। এর মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে, ইংরেজি যেমন তাদের পড়াশোনার ভাষা, ঠিক তেমনই উজবেকিস্তানে মানুষ তাদের মাতৃভাষা উজবেক ভাষায় কথা বলে, কিন্তু রুশ ভাষা সেখানে সরকারি ও জাতীয় ভাষা হিসেবে ব্যবহার হয়। ইংরেজি তাদের শিক্ষাগত ভাষা, যা তাদের বৃহত্তর বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে। তাদের কাছে ইংরেজি কেবল পাঠ্যক্রমের একটি অংশ নয়। এই উপলব্ধির কারণে তাদের মধ্যে ইংরেজি শেখার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে, কারণ তারা এখন দেখছে যে ইংরেজি শুধু বাইরের দেশেই বলা হয় না - এটি তাদের কাছে আরামদায়ক এবং পরিচিত হয়ে উঠছে। তবে, তাদের জন্য ইংরেজি শেখা ঠিক ততটাই কঠিন, যতটা আমাদের ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী : আপনি শিশুদেরকে বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করাচ্ছেন, এটা খুব ভাল, কিন্তু আপনি কি তাদের নিজেদের দেশের সঙ্গেও পরিচিত করাচ্ছেন?
শিক্ষিকা : অবশ্যই, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : তাহলে, আমাদের দেশের এমন কোনো দিক আছে কি, যা তাদের ইংরেজি শিখতে উৎসাহিত করে?
শিক্ষিকা : স্যার, আমি এই পরীক্ষাগারে ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছি। ইংরেজি সবসময়ই পাঠ্যক্রমের অংশ, কিন্তু একটি ভাষা কীভাবে শেখা হয় - তা বোঝা খুব জরুরি। আমি যাদের পড়াই, সেই ছাত্রছাত্রীরা হরিয়ানার বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আসে। উদাহরণস্বরূপ, রোহতকের একটি শিশু নূহের অন্যান্য শিশুর চেয়ে ভিন্ন উপভাষায় কথা বলে।
প্রধানমন্ত্রী : হ্যাঁ, এটা আমার সেই দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয় যখন আমাদের বাড়িতে টেলিফোন ছিল।
শিক্ষিকা : ঠিক বলেছেন, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী : ওই বাক্সটাই ছিল ফোন। আমাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য কখনো কখনো গরীব পরিবারের একজন মহিলা আসতেন। একদিন ফোন বাজল এবং তিনি ফোনটি ধরলেন। ফোন ধরে তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন, "হ্যালো।" তিনি কীভাবে এটা শিখলেন?
শিক্ষিকা : স্যার, এটাই হল ভাষা দক্ষতা বিকাশের অংশ। শুনে শুনে এবং ব্যবহারের মাধ্যমেই ভাষার অর্জন হয়।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক তাই! সেই কারণেই কথা বলার মাধ্যমেই একটি ভাষা এত দ্রুত শেখা যায়। আমার মনে আছে, আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, তখন কাজের জন্য মহারাষ্ট্রের একটি পরিবার আমার নদিয়াদের বাড়িতে এসেছিলেন। ওই বাড়ির লোকটি ছিলেন একজন অধ্যাপক, আর তাঁর বয়স্ক মা-ও সঙ্গে ছিলেন। লোকটি সারাদিন স্কুল-কলেজে কাটাতেন, কিন্তু ছ- মাস পরেও তিনি স্থানীয় ভাষা (গুজরাটি) শিখতে পারেননি। অথচ তাঁর মা, যিনি একেবারেই অশিক্ষিত ছিলেন, তিনি খুব ভালভাবে গুজরাটি বলতে শিখে গিয়েছিলেন। একদিন আমি যখন তাদের বাড়িতে খেতে যাই, তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি কীভাবে শিখলেন? তিনি সহজভাবে উত্তর দিলেন যে, তিনি বাড়ির কাজের মহিলার কাছ থেকে শিখেছেন, যিনি শুধু গুজরাটিই বলতেন। কথা বলার মাধ্যমেই ভাষা শেখা যায়।
শিক্ষিকা: একদম ঠিক বলেছেন, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: এটা আমার স্কুলের দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের শিক্ষক বেশ কড়া ছিলেন, আর আমরা তাঁকে দেখে একটু ভয় পেতাম। রাজা জি 'রামায়ণ' এবং 'মহাভারত' লিখেছিলেন, আর 'রামায়ণ'-এর কথোপকথনগুলি সবারই জানা ছিল। শিক্ষক আমাদের রাজা জির 'রামায়ণ' ধীরে ধীরে পড়তে বলতেন, যদিও আমরা ভাষাটা ভালভাবে জানতাম না। আমি গল্পটা জানতাম, কিন্তু ভাষা নয়। তবুও, অভ্যাসের ফলে আমি ছোট ছোট অংশ বুঝতে শুরু করি। এমনকি মাত্র এক-দুটি শব্দ চিনতে পারলেও আমি বুঝতে পারতাম যে তিনি সীতা মাতার কথা বলছেন।
শিক্ষিকা: একদম ঠিক বলেছেন, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক আছে, খুব ভালো।
শিক্ষিকা: ধন্যবাদ, স্যার। ধন্যবাদ।
প্রধানমন্ত্রী: হর হর মহাদেব।
শিক্ষক: হর হর মহাদেব।
প্রধানমন্ত্রী: কাশীর মানুষের জন্য, দিনটা সবসময় 'হর হর মহাদেব' বলে শুরু হয়।
শিক্ষক: স্যার, আজ আপনার সঙ্গে দেখা করে আমি আনন্দিত। আমি কৃষি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে উদ্ভিদের রোগ নিয়ে গবেষণা করছি এবং আমার মূল লক্ষ্য হল সুস্থায়ী কৃষির প্রচার করা। দুর্ভাগ্যবশত, এটি এখনও মাঠে সঠিকভাবে কার্যকর করা হয়নি। আমার লক্ষ্য হল কৃষকদের এমন সহজ প্রযুক্তি শেখানো যা জমিতে অভূতপূর্ব ফলন দেয়।
আমার আরও বিশ্বাস যে এই উদ্যোগে শিশু, ছাত্র এবং মহিলাদের যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে আমি ছাত্রদের নিয়ে গ্রামে গ্রামে যাই, কৃষকদের সঙ্গে কাজ করি এবং মহিলাদেরকেও এতে অংশ নিতে উৎসাহিত করি। আমরা যে সহজ কৌশলগুলি তৈরি করেছি, তার মাধ্যমে আমরা সুস্থায়িত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং কৃষকরা ইতিমধ্যেই এর সুবিধাগুলি দেখতে পাচ্ছেন।
শিক্ষক: স্যার, আমরা বীজ শুদ্ধিকরণের একটি কৌশলকে নিখুঁত করেছি। আমরা কিছু স্থানীয় অণুজীব শনাক্ত করেছি এবং এগুলি দিয়ে যখন বীজগুলিকে শোধন করা হয়, তখন যে শিকড়গুলি গজায়, সেগুলি আগে থেকেই সুগঠিত হয়। এর ফলে গাছটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর হয়। শিকড় এত শক্তিশালী হওয়ায়, এটি কীট এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ শক্তি পায়, তাই রোগের আক্রমণের ভয় কম থাকে।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি তো পরীক্ষাগারে করা কাজের বর্ণনা দিচ্ছেন। জমিতে এটা কীভাবে প্রয়োগ করেন? পরীক্ষাগার থেকে জমিতে? আপনি বললেন যে আপনি নিজে কৃষকদের কাছে যাচ্ছেন। তারা এটি কীভাবে প্রয়োগ করেন এবং কীভাবে শুরু করেন?
শিক্ষক: স্যার, আমরা একটি 'পাউডার ফর্মুলেশন' বা গুঁড়ো মিশ্রণ তৈরি করেছি, যা আমরা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করি। তারা এটা ব্যবহার করে তাদের বীজ শোধন করেন, আর আমরা বহু বছর ধরে এটা করছি। এখনও পর্যন্ত, আমরা বারাণসীর আশেপাশে ১২টি গ্রামে এই কৌশলটি চালু করেছি এবং বর্তমানে ৩,০০০-এরও বেশি মহিলা এই প্রযুক্তি শিখছেন এবং ব্যবহার করছেন।
প্রধানমন্ত্রী: আর এই কৃষকরা কি অন্য কৃষকদেরও শেখাতে পারেন?
শিক্ষক: অবশ্যই, স্যার। একজন কৃষক যখন পাউডার সংগ্রহ করতে আসেন, তখন তিনি প্রায়শই আরও চারজন কৃষকের জন্য অতিরিক্ত নিয়ে যান। কৃষকরা দেখে দেখে একে অপরের কাছ থেকে শেখে এবং আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা প্রথমদিকে যাদের শিখিয়েছিলাম, তার চেয়েও অনেক বেশি কৃষক এই কৌশলটি গ্রহণ করেছেন। এই মুহূর্তে আমার কাছে সঠিক সংখ্যাটি নেই।
প্রধানমন্ত্রী: কোন কোন ফসল এই থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে?
শিক্ষক: প্রধানত শাকসবজি এবং গম।
প্রধানমন্ত্রী: আমাদের প্রধান নজর জৈব কৃষির উপর, বিশেষ করে শাকসবজি ও গমের জন্য। যাঁরা ধরিত্রী মাতার সংরক্ষণের বিষয়ে ভাবেন, তাঁরা চিন্তিত যে আমরা কীভাবে তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছি। পৃথিবীকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে, এবং জৈব কৃষি একটি আশাব্যঞ্জক সমাধান দিতে পারে। এই পদ্ধতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যেও আলোচনা চলছে।
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার, সেই দিকে অবশ্যই প্রচেষ্টা চলছে। তবে, কৃষকদের রাসায়নিক ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে রাজী করানো নিয়ে আমরা এখনও সংগ্রামে লিপ্ত। তারা ভয় পান যে যদি রাসায়নিক ব্যবহার না করেন, তাহলে তাদের ফসলের ক্ষতি হবে।
প্রধানমন্ত্রী: এর একটা সমাধান আছে। ধরুন, একজন কৃষকের চার বিঘা জমি আছে। তিনি তার ২৫ শতাংশ অর্থাৎ এক বিঘা জমিতে নতুন পদ্ধতি (জৈব কৃষি) নিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন এবং বাকি তিন বিঘায় পুরোনো পদ্ধতিতেই কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। যদি একটি ছোট অংশে জৈব কৃষি করেন, তবে কৃষকের ভরসা জন্মাবে। যদি সামান্য ক্ষতিও হয়, ধরুন ১০% বা ২০%, তবে সেটা সহ্য করার মতো এবং তিনি দেখবেন যে বাকি ফসল সুরক্ষিত আছে।
গুজরাটের রাজ্যপাল আচার্য্য দেবব্রত জি এই বিষয়ে খুব আগ্রহী এবং তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। আপনাদের মধ্যে অনেকেই যেহেতু কৃষিকাজ সংক্রান্ত, তাই আপনারা যদি তাঁর ওয়েবসাইট দেখেন, তবে জৈব কৃষি সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাবেন। এখানকার এলকেএম-এ আপনারা যা কিছু দেখেন, সবটাই জৈব পদ্ধতিতে করা হয়, এখানে কোনো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। আচার্য্য দেবব্রত জি গোমূত্র-সহ অন্যান্য জিনিস ব্যবহার করে একটি চমৎকার ফর্মুলা তৈরি করেছেন এবং এর ফলও খুবই ভাল। আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি এটি নিয়ে গবেষণা করে, তবে আপনারা দেখতে পারেন, আর কী কী করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী: ঠিক আছে, শুভকামনা রইল।
শিক্ষক : ধন্যবাদ, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: বনক্কম (নমস্কার)।
শিক্ষক : বনক্কম, প্রধানমন্ত্রী জি। আমি ধৌতরে গন্দিমাতি। আমি তামিলনাড়ুর সালেমের ত্যাগরাজ পলিটেকনিক কলেজ থেকে এসেছি এবং আমি ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পলিটেকনিক কলেজে ইংরেজি শেখাচ্ছি। আমার বেশিরভাগ পলিটেকনিক ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসে। তারা তামিল মাধ্যমের স্কুল থেকে আসে, তাই তাদের ইংরেজি বলতে বা অন্তত মুখে উচ্চারণ করতে খুব অসুবিধা হয়।
প্রধানমন্ত্রী: কিন্তু আমাদের প্রায়ই এই ভুল ধারণা থাকে যে তামিলনাড়ুতে সবাই ইংরেজি জানে।
শিক্ষক: অবশ্যই স্যার, এরা গ্রামের মানুষ যারা স্থানীয় ভাষার মাধ্যমে পড়াশোনা করে। তাই তাদের অসুবিধা হয়, স্যার। আমরা তাদের জন্যই শেখাই।
প্রধানমন্ত্রী: সেই কারণেই নতুন শিক্ষানীতি মাতৃভাষার ওপর এত বেশি জোর দিয়েছে।
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার, আমরা ইংরেজি শেখাচ্ছি। ২০২০-র জাতীয় শিক্ষা নীতি অনুযায়ী, আমরা এখন শেখার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা সহ অন্তত তিনটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত করেছি। আমরা আমাদের স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে এটি চালু করেছি এবং এখন কারিগরি শিক্ষাও মাতৃভাষায় শেখাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী: আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি সাহসের সঙ্গে এই নিয়ে পরীক্ষা করেছেন? যেমন, যদি কোনো স্কুলে ৩০টি শিশু সম্পূর্ণরূপে ইংরেজিতে পড়াশোনা করে, আর একই বয়সের আরও ৩০টি শিশু একই বিষয় তাদের মাতৃভাষায় পড়ে, তবে কোন দলটি বেশি ভালো ফল করে? আপনার অভিজ্ঞতা কী? মাতৃভাষায় শেখার সময় একটি শিশু সরাসরি ধারণাটি আয়ত্ত করে, অথচ ইংরেজিতে সে মানসিকভাবে ধারণাটিকে ইংরেজি থেকে তার স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে, যা অনেক শক্তি নষ্ট করে। শিশুদের প্রথমে তাদের মাতৃভাষায় শেখানো উচিত এবং পরে ইংরেজিকে একটি বিষয় হিসেবে ভালোভাবে পড়ানো উচিত।
ঠিক যেমন একজন সংস্কৃত শিক্ষক ক্লাসে থাকা অবস্থায় শুধুমাত্র সংস্কৃত বলেন, আমি আশা করব ইংরেজি শিক্ষকও ক্লাসরুমে ঢোকা থেকে বের হওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র ইংরেজিই বলবেন। তাঁদের ইংরেজিতেও সমান পারদর্শী হতে হবে। এটি এমন হওয়া উচিত নয় যে একটি বাক্য ইংরেজিতে বললেন আর তিনটি মাতৃভাষায় বললেন। এভাবে শিশু ভাষাটি আয়ত্ত করতে পারে না।
যদি আমরা ভাষা শেখানোর ক্ষেত্রে এমন উৎসর্গীকৃত হই, তবে তা উপকারী। আমাদের শিশুদের মধ্যে যত বেশি সম্ভব ভাষা শেখার আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, স্কুলগুলি সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে এই বছর তারা পাঁচটি ভিন্ন রাজ্যের গান শেখাবে। এক বছরে পাঁচটি গান শেখা কিন্তু কঠিন নয়। কেউ একটি অহমিয়া গান শিখতে পারে, বা একটি মালায়ালম গান, অথবা একটি পাঞ্জাবি গান। আর অবশ্যই, পাঞ্জাবি কঠিন নয়। ঠিক আছে, আপনাদের সবার জন্য শুভকামনা রইল।
শিক্ষক: প্রধানমন্ত্রী জি, আমার নাম উৎপল সাইকিয়া, আমি অসমের বাসিন্দা। বর্তমানে আমি গুয়াহাটির নর্থ ইস্ট স্কিল সেন্টারে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিসের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। আমি এখানে ছ-বছর ধরে আছি এবং আমার তত্ত্বাবধানে সফলভাবে ২০০টিরও বেশি অধিবেশন পরিচালনা করেছি। আমার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অনেকেই এখন দেশ-বিদেশের পাঁচতারা হোটেলগুলিতে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার কোর্সটির মেয়াদ কত?
শিক্ষক: এটি এক বছরের কোর্স, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কি হসপিটালিটি ট্রেনিং সম্পর্কে জানেন?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার। হসপিটালিটি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস (আতিথেয়তা ও খাদ্য ও পানীয় পরিষেবা)।
প্রধানমন্ত্রী: ফুড অ্যান্ড বেভারেজে আপনি কি শেখান?
শিক্ষক: আমরা ছাত্রদের শেখাই কীভাবে অতিথিদের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে খাবার পরিবেশন করতে হয় এবং কীভাবে পানীয় পরিবেশন করতে হয়। আমরা তাদের ক্লাসরুমে প্রস্তুত করি, বিভিন্ন কৌশল শেখাই, যেমন - অতিথিদের সমস্যা সমাধান করা এবং অতিথিদের সঙ্গে নানা পরিস্থিতি কীভাবে সামলাতে হয়, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কিছু উদাহরণ দিতে পারেন? বাড়িতে বাচ্চারা প্রায়ই বলে, "আমি এটা খেতে চাই না," অথবা "আমি ওটা খেতে চাই।" তাহলে, এটা সামলানোর জন্য আপনি আপনার কৌশলটা শেখান।
শিক্ষক: শিশুদের জন্য আমার কোনো নির্দিষ্ট কৌশল নেই, স্যার, তবে হোটেলের অতিথিদের ক্ষেত্রে আমরা ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দিই যেন তারা নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে তাদের সামলায় এবং মনোযোগ দিয়ে তাদের প্রয়োজনগুলি শোনে।
প্রধানমন্ত্রী: তাহলে আপনার প্রধান নজর কি মূলত সফট স্কিলসের উপর?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার। অবশ্যই, স্যার। সফট স্কিলস।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী কোথায় চাকরির সুযোগ পায়?
শিক্ষক: গোটা ভারতে, যেমন দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের মতো জায়গায়।
প্রধানমন্ত্রী: মূলত কি বড় হোটেলগুলিতে?
শিক্ষক: হ্যাঁ, প্রধান প্রধান হোটেলগুলিতে। আমরা ১০০ ভাগ প্লেসমেন্টের গ্যারান্টি দিই। আমাদের একটি ডেডিকেটেড প্লেসমেন্ট দল আছে যারা এটির দেখাশোনা করে।
প্রধানমন্ত্রী: যেহেতু আপনি গুয়াহাটিতে আছেন, আমি যদি হিমন্ত জী এবং তাঁর সকল মন্ত্রীকে বলি যে আপনার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাঁদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন এবং তাঁদের দক্ষতা বৃদ্ধি করুন - কারণ তাঁদের কাছে অতিথিরা আসেন এবং তাঁরা হয়তো এটাও জানেন না যে ডান হাত না বাঁ হাত দিয়ে জল দিতে হবে - এটা কি সম্ভব হবে?
শিক্ষক: হ্যাঁ, অবশ্যই। সেটা করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী: আপনারা হয়তো শুনে অবাক হবেন যে যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন সেখানে একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট স্কুল ছিল। আমি ঠিক করেছিলাম যে আমার সকল মন্ত্রী এবং তাঁদের ব্যক্তিগত কর্মীদের শনিবার ও রবিবার প্রশিক্ষণ দেওয়াব। তাঁরা শেখানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আমার সঙ্গে কাজ করা ছেলেমেয়েরা, মালী বা রাঁধুনীরা - যাঁরা আমার এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের জন্য কাজ করতেন - তাঁরাও প্রশিক্ষণ পাচ্ছিলেন। আমাদের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার একটি সিলেবাস ছিল।
এর পরে, তাঁদের কাজের ধরনে একটা চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছিল। যখন তাঁরা বাড়িতে ফিরতেন, তখন সেটা সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যেত। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা হয়তো অতটা লক্ষ্য করতেন না, কিন্তু তাঁরা যে এই নতুন দক্ষতাগুলি অর্জন করেছেন, সেটা আমার কাছে বিস্ময়কর ছিল। এটা ছিল সত্যিই অসাধারণ।
আমি সেই অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমার মনে হয়, আমাদের এই পদ্ধতিটি আরও বেশি করে গ্রহণ করা উচিত এবং এটিকে উৎকর্ষের প্রতীক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত। ছোট ছোট বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন - কেউ প্রবেশ করা মাত্রই তাঁকে নম্রভাবে অভ্যর্থনা জানানো, অথবা সরকারি অফিসের কর্মীরা কীভাবে ফোনের উত্তর দেন।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু কর্মীকে শেখানো হয় যে তাঁরা ফোন ধরলেই যেন "জয় হিন্দ" বা "নমস্কার" বলেন, আবার অন্য কেউ হয়তো রুক্ষভাবে জিজ্ঞাসা করেন, "কী চান?" - সেখানেই ভুল হয়ে যায়। এই ধরনের পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামলানোর জন্য আপনি কি তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার! আমি তাঁদের এই বিষয়গুলি শেখাই।
প্রধানমন্ত্রী: বাহ, আপনাকে অনেক অনেক অভিনন্দন!
শিক্ষক: ধন্যবাদ, স্যার!
প্রধানমন্ত্রী: তা, আপনি কি বরিসাগর জায়গাটির সঙ্গে যুক্ত ?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার। আমার দাদু ছিলেন বরিসাগরে!
প্রধানমন্ত্রী: ওহ, উনি আপনার দাদু ছিলেন? বুঝলাম! উনি আমাদের সমাজে একজন বিখ্যাত কৌতুক লেখক ছিলেন। তা, আপনি কী করেন?
শিক্ষক: স্যার, আমি আমরেলিতে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এবং গত ২১ বছর ধরে সেখানে এই জীবনের মন্ত্র নিয়ে কাজ করছি - একটি মহান স্কুল তৈরি করে একটি মহান দেশ গড়া।
প্রধানমন্ত্রী: আপনার বিশেষত্ব কী?
শিক্ষক: স্যার, আমার বিশেষত্ব হল আমাদের লোকগীতি।
প্রধানমন্ত্রী: আমি শুনেছি যে আপনি বেশ অনেক পেট্রল খরচ করেন?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার! ২০০৩ সাল থেকে, আপনার উদ্যোগের ফলেই, শিক্ষকদের বাইকে করে আমাদের স্কুলের 'প্রবেশোৎসব' (বাৎসরিক ভর্তি উৎসব) অনুষ্ঠানটি একটি সফল কর্মসূচি হয়ে উঠেছে। স্যার, আমি আমাদের ঐতিহ্যবাহী গরবা গান গাই, তবে সেগুলিতে আমি শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু যুক্ত করেছি। যেমন ধরুন, "পাঙ্খেরা"। আপনার অনুমতি পেলে, আমি কি সেটি গাইতে পারি?
প্রধানমন্ত্রী: হ্যাঁ, অবশ্যই!
প্রধানমন্ত্রী: এটা তো খুব বিখ্যাত একটি গুজরাটি লোকসংগীত, তাই না?
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার। এটা একটি গরবা গান।
প্রধানমন্ত্রী: আপনি গানের কথাগুলিকে পাল্টে দিয়েছেন যাতে শিশুরা স্কুলে যেতে এবং পড়াশোনা করতে উৎসাহিত হয় - আপনি আপনার নিজস্ব উপায়ে তাদের শেখাচ্ছেন।
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার, ঠিক তাই। আর, স্যার, আমি ২০টি ভিন্ন ভাষায় গান গাইতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী: ২০টি? ওহ, দারুণ!
শিক্ষক: হ্যাঁ, স্যার। আমি যদি কেরল সম্পর্কে শেখাই, তবে আমি তামিল ভাষায় গান গাই - যেমন, "ভা" (Va), যার অর্থ 'এসো'। রাজস্থানি ভাষায় "পধারো" (Padharo) মানে 'স্বাগতম'। আমি মারাঠি, কন্নড় এবং অন্যান্য ভাষায় গান গেয়ে শেখাই। আমি ভারতমাতাকে স্যালুট জানাই, স্যার!
প্রধানমন্ত্রী: এটা দারুণ! খুব ভাল কাজ করেছেন!
শিক্ষক: ধন্যবাদ, স্যার। 'এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত' হলো আমার জীবনের মন্ত্র, স্যার!
প্রধানমন্ত্রী: অসাধারণ!
শিক্ষক: স্যার, ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ার জন্য আমি আরও বেশি শক্তি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী: খুব ভালো!
শিক্ষক: ধন্যবাদ, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী: যখন আমি আপনার পদবি দেখলাম, তখনই আমার আপনার দাদুর কথা মনে পড়ল। উনি আমার রাজ্যে এমন একজন চমৎকার কৌতুক লেখক ছিলেন। উনি খুবই পরিচিত ছিলেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি যে আপনি তাঁর ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এটা দেখতে পেয়ে মনটা সত্যিই ভরে গেল!
বন্ধুরা, আপনাদের জন্য আমার কোনো বিশেষ বার্তা নেই, তবে আমি অবশ্যই বলব যে এই নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, যা এক দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়ার পর আসে। আগে কী হতো, সে প্রসঙ্গে আমি যাব না, তবে আজ প্রচেষ্টা হলো দেশে এমন প্রতিভাবান মানুষদের স্বীকৃতি দেওয়া, যাঁরা কিছু নতুন কাজ করছেন।
এর মানে এই নয় যে আমাদের চেয়ে ভাল শিক্ষক আর নেই, বা অন্য বিষয়ে কেউ ভাল করছেন না। এই দেশ হল রত্নগর্ভা ভূমি। কোটি কোটি শিক্ষক অসাধারণ কাজ করছেন, কিন্তু আলো আপনাদের ওপর এসে পড়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে আপনাদের মধ্যে কিছু অনন্য গুণ রয়েছে।
আপনাদের এই প্রয়াস, বিশেষত নতুন শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে, দারুণ মূল্যবান হতে পারে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এমন একটি বিষয় আছে যা আমাদের অর্থনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করতে পারত, কিন্তু ভারত সেই সুযোগটি হাতছাড়া করেছে। আমাদের সেটা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে, এবং এর শুরুটা হতে পারে আমাদের স্কুল থেকেই - অর্থাৎ পর্যটন দিয়ে।
এখন আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন, আমরা কি ছাত্রদের পড়াব নাকি পর্যটন নিয়ে ব্যস্ত থাকব? আমি বলছি না আপনারা সরাসরি পর্যটনে যুক্ত হন, তবে এটা ভাবুন: বেশিরভাগ স্কুলে ভ্রমণ বা ট্যুর কোথায় হয়? সাধারণত, ছাত্রের কী দেখা উচিত, তার বদলে শিক্ষক যা দেখেননি, সেই জায়গাগুলিতেই ট্যুর হয়। যদি কোনো শিক্ষক উদয়পুর না দেখে থাকেন, তবে তিনি সেখানে স্কুলের একটি ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন, টিকিট ও ভ্রমণের জন্য টাকা তুলবেন, আর সবাই রওনা দেবে।
পরিবর্তে, যদি আমরা সারা বছরের পরিকল্পনা আগে থেকে করে রাখি, এবং প্রতিটি ক্লাসের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্য ঠিক করি?
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে আমরা স্থির করলাম যে অষ্টম বা নবম শ্রেণির ছাত্ররা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যাবে। হতে পারে স্কুলটি সেই বছরের জন্য তিন থেকে পাঁচটি গন্তব্য বেছে নিল এবং সেই গন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ছাত্রদের প্রজেক্টের কাজ দিল। ধরুন, নির্বাচিত গন্তব্যটি হল কেরল।
১০ জন ছাত্রের দল তৈরি করে তাদের বিভিন্ন প্রজেক্টের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে - কেউ কেরলের সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে গবেষণা করবে, কেউ ধর্মীয় ঐতিহ্য নিয়ে, আবার কেউ সেখানকার মন্দির ও তাদের ইতিহাস নিয়ে। সারা বছর ধরে কেরল নিয়ে আলোচনা চলতে থাকবে, যা ছাত্রদের ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করবে। যখন তারা সত্যিই কেরলে ভ্রমণ করবে, ততদিনে সেই জায়গাটি সম্পর্কে তাদের একটি গভীর ধারণা তৈরি হবে এবং তারা যা পড়েছে তার সঙ্গে যা দেখবে সেটির সামঞ্জস্য খুঁজে পাবে।
এখন ভাবুন, যদি গোয়া রাজ্য সিদ্ধান্ত নেয় যে এই বছর তাদের সব স্কুল উত্তর-পূর্ব ভারত ভ্রমণ করবে। ধরা যাক, গোয়ার ১,০০০ থেকে ২,০০০ ছাত্র-ছাত্রী উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে গেল।
এটি শুধু ছাত্রদেরকেই একটি নতুন অঞ্চলের সঙ্গে পরিচিত করবে না, বরং উত্তর-পূর্বের পর্যটনকেও চাঙ্গা করবে। স্থানীয় মানুষ এত সংখ্যক পর্যটককে আসতে দেখে বুঝতে পারবে যে এখানে চায়ের দোকান বা ছোট দোকানের মতো আরও পরিষেবার প্রয়োজন আছে। আর এর ফলে, কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে।
ভারত এত বিশাল একটি দেশ, আর আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে কাজ করছি। আপনারা আপনাদের ছাত্রদের এই বর্তমান অনলাইন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহিত করতে পারেন, যেখানে তারা তাদের রাজ্যের ঘোরার মতো সেরা জায়গাগুলিতে ভোট দিতে পারবে।
তবে, তাদের শুধু বাক্সে টিক চিহ্ন দিলেই হবে না; কিছু গবেষণা করার পরে তাদের অংশ নেওয়া উচিত। এটি 'দেখো আপনা দেশ' কর্মসূচির অধীনে জনগণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি রাজ্যের শীর্ষ আকর্ষণগুলি চিহ্নিত করার একটি প্রচেষ্টা। এর ফলে, ভোটের মাধ্যমে গন্তব্যস্থলগুলির একটি অনলাইন র্যাঙ্কিং তৈরি হবে। একবার ভোটিং শেষ হলে, সরকার এই স্থানগুলিতে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ করবে।
কিন্তু পর্যটন কীভাবে কাজ করে? এটি সেই পুরনো বিতর্ক — আগে ডিম না মুরগি? কেউ বলেন, উন্নয়ন নেই বলেই পর্যটন নেই, আবার কেউ যুক্তি দেন যে পর্যটনই উন্নয়নের পথ দেখায়।
ছাত্রদের এই ধরনের গন্তব্যে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। একটি সুপরিকল্পিত, রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা- সহ ভ্রমণ স্থানীয় বাসিন্দাদের হোমস্টে বা অন্যান্য ছোট ব্যবসা খুলতে উৎসাহিত করতে পারে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে।
আমরা শিক্ষকেরা যদি স্কুল হিসেবে সম্মিলিতভাবে আমাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা করি, তবে আমরা দু'বছরের মধ্যে ভারতে ১০০টি সেরা পর্যটন গন্তব্য গড়ে তুলতে পারি। এতেই বোঝা যায় শিক্ষকদের মধ্যে কী ধরনের বিপ্লবী সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনাদের প্রতিদিনের স্কুল কার্যক্রমে প্রায়ই ভ্রমণের আয়োজন করা হয়, কিন্তু তার জন্য সঠিক পড়াশোনা বা প্রস্তুতি নেওয়া হয় না। যদি আপনারা সারা বছর ধরে কোনো একটি স্থান নিয়ে ভাল করে পড়াশোনা করেন এবং তারপর সেটি পরিদর্শনে যান, তবে তা কেবল ছাত্রদের শিক্ষাকেই সমৃদ্ধ করবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিকেও উপকৃত করবে।
আমি আপনাদের উৎসাহিত করব যে আপনারা আপনাদের অষ্টম বা নবম শ্রেণির ছাত্রদের কোনো একটি কাছের বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে নিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের জানান যে আপনাদের ছাত্ররা সেটি ঘুরে দেখতে আগ্রহী।
আমি যখন গুজরাটে ছিলাম, আমার একটি নিয়ম ছিল। যদি আমাকে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হত, আমি যেতে রাজি হতাম, কিন্তু আমি আমার সঙ্গে ৫০ জন অতিথিকে নিয়ে যেতাম।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবসময় ভাবত, এই অতিথিরা কারা? যখন একজন রাজনীতিবিদ এ কথা বলেন, তখন তাঁরা ধরে নেন যে এর মানে হল অনুগামী বা সমর্থক। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতাম যে, এই ৫০ জন অতিথি হবেন আশেপাশের সরকারি স্কুলের শিশুরা, বিশেষ করে দরিদ্র এলাকা থেকে আসা। এই শিশুরা সমাবর্তন চলাকালীন প্রথম সারিতে বসত।
যখন অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে আসা এই শিশুরা একটি সমাবর্তন অনুষ্ঠান দেখতে পায়, তখন তাদের মনে একটি স্বপ্ন রোপণ হয়ে যায় - কোনো একদিন আমিও টুপি আর গাউন পরব এবং একটি পুরস্কার গ্রহণ করব। এই অনুভূতি তাদের চেতনার গভীরে প্রোথিত হয়ে যায়।
যদি আপনারা আপনাদের ছাত্রদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যান এবং তাদের এই ধরনের অনুষ্ঠানের গুরুত্ব দেখান, তবে তা তাদের এমনভাবে অনুপ্রাণিত করবে যা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।
একইভাবে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেও ভাবুন: যখন ব্লক-স্তরের কোনো খেলাধুলা প্রতিযোগিতা হয়, তখন সাধারণত কেবল পিটি শিক্ষক এবং অংশগ্রহণকারী ছাত্ররাই সেখানে উপস্থিত থাকে।
কিন্তু, আদর্শগতভাবে, পুরো স্কুলের সেখানে দেখতে এবং সমর্থন জানাতে যাওয়া উচিত। এমনকি যদি সেটা কাবাডি ম্যাচও হয়, আমাদের সেখানে উপস্থিত থেকে উৎসাহ দেওয়া উচিত। এই ইভেন্টগুলি দেখলে ছাত্রদের মনে খেলোয়াড় হওয়ার অনুপ্রেরণা জন্মায়, আর খেলোয়াড়েরা তখন গর্ব অনুভব করে এই ভেবে যে তারা কেবল নিজেদের নয়, তাদের সমগ্র সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
শিক্ষক হিসাবে, আমাদের এই ধরনের অভিজ্ঞতাগুলিকে উন্নত করার জন্য ক্রমাগত নতুন উপায় খুঁজতে হবে। যা ইতিমধ্যেই আছে, তার সঙ্গে আর একটু বাড়তি প্রয়াস যোগ করলেই আমরা প্রভাবকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারি। এই পদ্ধতি কেবল স্কুলকেই আরও নামকরা করে তুলবে না, বরং শিক্ষকদের সম্পর্কে মানুষের ধারণাও বদলে দেবে।
এছাড়া, আপনারা হয়তো সবাই জানেন না যে অন্যেরা কেন পুরস্কার পেয়েছেন। আপনারা হয়তো ধরে নেবেন যে একজন পুরস্কার পেলে বাকিরাও একই কারণে পেয়েছেন। কিন্তু এই মানুষগুলির মধ্যে যে অনন্য গুণগুলি রয়েছে, যা দেশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, সেগুলো বোঝা এবং তাদের কাছ থেকে শেখাটা জরুরি। আমরাও কি সেই গুণগুলি শিখতে পারি? এই চার বা পাঁচ দিনকে একটি স্টাডি ট্যুর হিসেবে ব্যবহার করুন, যাতে অন্যরা কীভাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনাদের কাছ থেকেও শিখছি। আপনারা যেভাবে আপনাদের কাজে এগিয়ে যান, তা দেখে আমি আনন্দিত।
অতীতে আমাদের ‘পেন পাল’ ছিল; এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেই ধারণা আর নেই। কিন্তু আপনারা সবাই মিলে কেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করবেন না?
আচ্ছা, এটি কবে তৈরি হয়েছে? গতকাল? ঠিক আছে, আট-১০ দিন হয়েছে, তার মানে এটি একটি ভাল শুরু। আপনাদের অভিজ্ঞতাগুলি সেখানে ভাগ করে নিন এবং একে অপরকে সাহায্য করুন। ধরুন, এখানে আপনার সঙ্গে তামিলনাড়ুর একজন শিক্ষকের আলাপ হল। আপনি যখন তামিলনাড়ু ভ্রমণের পরিকল্পনা করবেন, তখন সেখানকার সেই শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি বুঝতে পারবেন যে তাঁরা আপনার জন্য কত বড় শক্তিতে পরিণত হবেন।
আপনারা হয়তো কেরল, জম্মু ও কাশ্মীর বা অন্য কোনো অঞ্চলের কাউকে খুঁজে পাবেন। আমি নিশ্চিত যে তাঁরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি হবেন। এই ধরনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি হলে ঐক্যের অনুভূতি জন্মাবে এবং আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করবে। আমি চাইব আপনারা এমন একটি দল তৈরি করুন, যেখানে মানুষ অনুভব করবে যে তারা একই পরিবারভুক্ত।
'এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত'-এর এই সম্মিলিত অভিজ্ঞতার চেয়ে বড় কোনো অভিজ্ঞতা হতে পারে না। এটি দেখায় যে শিক্ষকেরা ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়েও কীভাবে বিশাল পরিবর্তন আনতে পারেন।
আপনারা হয়তো সব সময় এই ধরনের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত - "শিক্ষক মানে এই, শিক্ষক মানে ওই।" এমনও মনে হতে পারে যে বক্তা যেন এবার থামেন। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি, আমি নিজের জন্য এসব বলছি না। তবে, যখন শিক্ষকদের অতিরিক্ত প্রশংসা করা হয়, তখন আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন যে যথেষ্ট হয়েছে এবং আমিও বিশ্বাস করি যে অন্তহীন প্রশংসার কোনো প্রয়োজন নেই।
চলুন, বরং আমরা ছাত্রের ওপর এবং তাদের পরিবার আমাদের ওপর যে অফুরন্ত আস্থা রেখেছে, তার ওপর মনোযোগ দিই।
সেই পরিবার তাদের সন্তানকে শুধু পেন ধরতে শেখানো, কম্পিউটার ব্যবহার শেখানো, বা ভাল ফলাফলের জন্য সিলেবাস মুখস্থ করানোর জন্য আমাদের হাতে তুলে দেয়নি। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের আমাদের কাছে পাঠান কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা ভিত্তি তৈরি করলেও, শিক্ষকই পারেন সেই 'প্লাস ওয়ান'— সেই অতিরিক্ত মূল্য — যোগ করতে যা তাদের সন্তানের প্রকৃত উন্নতির জন্য প্রয়োজন।
ছাত্রের শিক্ষায় এই 'প্লাস ওয়ান' কে যোগ করবেন? শিক্ষক। সন্তানের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ (সংস্কার) কে উন্নত করবেন? শিক্ষক। তাদের অভ্যাস উন্নত করতে কে সাহায্য করবেন? আবার সেই শিক্ষকই।
অতএব, আমাদের দায়িত্ব কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় — বাড়িতে শিশু যা পাচ্ছে, তার বাইরেও আমাদের অবশ্যই কিছু অতিরিক্ত যোগ করার চেষ্টা করতে হবে, যাতে তাদের জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আসে।
যদি আপনারা এই প্রচেষ্টা চালান, তবে আমি নিশ্চিত আপনারা সফল হবেন। আর এই কাজে আপনারা একা নন — অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে যুক্ত হোন, আপনাদের অঞ্চল ও রাজ্যের শিক্ষকদের সাথে সহযোগিতা করুন। আপনারা নেতৃত্বের ভূমিকা নিন এবং আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করুন।
আপনারা আজ যে শিশুদের শেখাচ্ছেন, তারা কিছু বছরের মধ্যেই কর্মজীবনে প্রবেশ করবে এবং যখন তাদের বয়স ২৫ বা ২৭ হবে, তখন ভারত আজকের মতো থাকবে না — এটি একটি উন্নত দেশ হবে।
আপনারা সম্ভবত সেই উন্নত ভারতে আপনাদের অবসরকালীন পেনশন তুলবেন, কিন্তু আপনারা আজ যাদের লালন-পালন করছেন, সেই ছাত্ররাই সেই জাতিকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি একটি বিরাট দায়িত্ব, মনে রাখবেন, উন্নত ভারত গড়া কেবল মোদীর স্বপ্ন নয় — এটি আমাদের সকলের সম্মিলিত লক্ষ্য।
এই উন্নত ভারতের জন্য সক্ষম প্রজন্ম তৈরি করার দায়িত্ব আমাদের সম্মিলিতভাবে নিতে হবে। আমাদের দক্ষ ও দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তুলতে হবে।
ভবিষ্যতে যদি আমরা ২৫ থেকে ৫০টি স্বর্ণপদক জয় করার স্বপ্ন দেখি, তাহলে সেই ক্রীড়াবিদরা কোথা থেকে আসবে? তারা আজকের সেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকেই উঠে আসবে, যাদের আপনারা এখন শেখাচ্ছেন।
আপনাদের অনেক স্বপ্ন আছে, আর সেই স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করার ল্যাবরেটরি বা পরীক্ষাগার আপনাদের ঠিক সামনেই — সেই কাঁচামাল হল আপনাদের শ্রেণিকক্ষের শিশুরা। এই ল্যাবরেটরিতেই আপনারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন, নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারেন এবং ভবিষ্যৎকে আকার দিতে পারেন। আপনাদের প্রয়াসের মাধ্যমেই আপনারা কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারবেন।
আপনাদের সকলের জন্য রইল আমার আন্তরিক শুভ কামনা!
ধন্যবাদ!
SSS/AS....
(Release ID: 2173087)
Visitor Counter : 2
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
हिन्दी
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam