প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

বিহার রাজ্য জীবিকা নিধি সাখ সহকারী সংঘ লিমিটেডের সূচনা প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 02 SEP 2025 2:35PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে আজ বিহার রাজ্য জীবিকা নিধি সাখ সহকারী সংঘ লিমিটেডের সূচনা করেছেন। তিনি বলেন, পবিত্র মঙ্গলবারে প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন এই উদ্যোগের সূচনা হল। জীবিকা নিধি সাখ সহকারী সংঘের মাধ্যমে বিহারের মা ও বোনেদের নতুন সুবিধা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি। গ্রাম জুড়ে জীবিকা অর্জনের সঙ্গে যুক্ত মহিলারা এই উদ্যোগের মাধ্যমে অনেক সহজে আর্থিক সহায়তার সুযোগ পাবেন। তাদের নানা কাজ ও উদ্যোগ এর ফলে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী জীবিকা নিধি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ব্যক্তিগত উপস্থিতি ছাড়াই কেবলমাত্র মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই প্রয়োজন মেটানো যাবে। এই উদ্যোগ চালু হওয়ায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমার এবং বিহার সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায়িত নারীরা উন্নত ভারতের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। নারী ক্ষমতায়ণের ওপর জোর দিয়ে তাদের জীবন ধারণে নানাবিধ সমস্যাকে দূর করার কথা বলেছেন তিনি। সরকার মা, বোন এবং কন্যাদের জীবনধারণের স্বাচ্ছন্দ্য বিকাশে বহুবিধ উদ্যোগ নিচ্ছে। কয়েক কোটি শৌচালয় নির্মাণের ফলে উন্মুক্ত স্থলে শৌচকর্মের হাত থেকে তারা রক্ষা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী জন আবাসের মাধ্যমে কোটি কোটি স্থায়ী গৃহ নির্মিত হচ্ছে। এগুলি যাতে মহিলাদের নামে নিবন্ধীকৃত হয়, সেব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনও নারী গৃহের মালিকানা পেলে তার কণ্ঠস্বর  স্বকীয়তা পায়। 

বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুযোগ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে সরকার হর ঘর জল উদ্যোগ গড়ে তুলেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে মা ও বোনেদের অসুবিধা দূর করতে নিখরচায় ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুযোগ প্রদানে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার বিনামূল্যে রেশন সরবরাহ করছে। এর ফলে প্রতিদিন সন্তানের আহারাদির চিন্তা মুক্ত হয়েছেন মায়েরা। এছাড়াও মহিলাদের উপার্জন বৃদ্ধির লক্ষ্যে লাখপতি দিদি, ড্রোন দিদি, ব্যাঙ্ক সখীর মতো দেশজুড়ে নারী ক্ষমতায়নের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন বিহারে তাদের সরকার এই লক্ষ্যকে আগামী দিনে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

শ্রী মোদী বলেন, বিহারে মাতৃশক্তির বন্দনা করা হয়। মাতৃ সম্মান এখানে সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। গঙ্গা মা, কোশী মা, গন্ডোকী মা এবং পুনপুন মা-এর মতো ধাত্রী দেবতাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে পূজা করা হয়। তিনি বলেন, জানকীজি বিহার কন্যা। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তিনি গড়ে উঠেছেন এবং বিশ্বের সর্বত্র তিনি সীতা মা হিসেবে পূজিত হন। তিনি বলেন, নবরাত্রির মতো পবিত্র উৎসব আসন্ন। দেশজুড়ে মা দুর্গার ৯ টি রূপ এতে বন্দিত হয়। মায়েদের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাসই বিহারে মায়েদের স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন মায়েদের মর্যাদা এবং সম্মান রক্ষা তার সরকারের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। বিহারের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় গভীর অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। বিহারের বিরোধীদের জোট মঞ্চ থেকে তাঁর মাকে নিয়ে অপমানজনক মন্তব্য করা হয়েছে। এই জাতীয় অপমান কেবল তাঁর মা বলেই নয়, দেশের সমস্ত মা, বোন এবং কন্যাদের অপমান। তিনি বলেন, এই ঘটনায় তিনি নিজের মনে যে দুঃখ পেয়েছেন বিহারের জনসাধারণও তার শরিক। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৫৫ বছর ধরে দেশ এবং সমাজের সেবায় তিনি ব্যাপৃত। প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত দেশের প্রতি পূর্ণ নিষ্ঠা ভরে তিনি কাজ করেছেন। তাঁর মা এই যাত্রাপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। মা ভারতীর সেবায় তিনি যাতে পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারেন সেজন্য পারিবারিক দায়বদ্ধতা থেকে তাঁর মা তাঁকে সম্পূর্ণ নিষ্কৃতি দিয়েছেন। দেশের সেবাকর্মে মায়ের আশীর্বাদ ধন্য হয়েছেন বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর পরলোকগত মায়ের প্রতি বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে এই অপমানজনক মন্তব্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।   
তিনি বলেন, প্রত্যেক মা-ই অপার আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে সন্তানকে বড় করে তোলেন। তাঁর কাছে সন্তানের কল্যাণের থেকে বড় আর কিছু নেই। শৈশবাবস্থা থেকেই পরিবার ও সন্তানের প্রতিপালনে দারিদ্র্য ও নানা কষ্ট সহ্য করতেও তিনি তাঁর মা-কে দেখেছেন। বর্ষা আসার আগে ঘরের চালা থেকে যাতে জল না পড়ে, সন্তানরা যাতে শান্তিতে ঘুমোতে পারে সেদিকে তাঁর সতর্ক নজর থাকত। শারীরিক অসুস্থতা তাঁর কাজে বাধা হত না কারণ তিনি জানতেন একদিনের জন্যও তিনি বিশ্রাম নিলে সন্তানদের কষ্ট করতে হবে। নিজের জন্য তিনি কখনও নতুন শাড়ি কেনেন নি। কারণ সেই পয়সা তিনি জমিয়ে রাখতেন সন্তানদের কাপড় সেলাই করে দিতে। চরম দরিদ্রাবস্থা সত্ত্বেও সন্তানদের সুনিশ্চিত শিক্ষাদান ও দৃঢ় মূল্যবোধ গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সেইজন্য মায়ের স্থান তাঁর কাছে ভগবানের ঊর্ধ্বে। শ্রী মোদী বলেন, বিরোধী মঞ্চ থেকে তাঁর মা-কে লক্ষ্য করে নিন্দাজনক মন্তব্য, দেশের কোটি কোটি মায়ের অপমান। 

শ্রী মোদী বলেন, গরিব মায়ের দুঃখ, আত্মত্যাগকে রাজপরিবারে জন্মগ্রহণকারীরা বুঝতে পারবেন না। এরা সোনা ও রূপোর চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন এবং সমগ্র দেশ ও বিহারকে নিজেদের পরিবারগত উত্তরাধিকার বলে গণ্য করে থাকেন। ক্ষমতাকে তারা তাদের জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন। তবে, দেশের মানুষ গরিব মাতার সন্তানকে এবং এক পরিশ্রমী ব্যক্তিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী করেছেন। সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীদের এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। অত্যন্ত অনগ্রসর শ্রেণীর কেউ মাথা তুলে সমাজে দাঁড়াক বিরোধীরা তা চায় না। এদের নিন্দা করা এবং কটূক্তি করার অধিকার বিরোধীরা নিজেদের জন্মগত বলে মনে করে। বিহারের নির্বাচনের সময়েও তাঁর প্রতি বিভিন্ন অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার  যারা করেছেন তাতে তাদের ব্যক্তিগত মানসিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মা ও বোনেদেরকে অপমান করার মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা মহিলাদের দুর্বল মনে করে শোষণ ও পীড়নের বিষয় বলে গণ্য করে। নারী বিরোধী এই মানসিকতার মানুষরা ক্ষমতায় এলে তাতে মহিলাদের দুর্গতি চোখে পড়ে। বিহারের মানুষরা এই বাস্তবতাকে বেশি বোঝেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, তৎকালীন সরকার খুনি ও ধর্ষকদের
 সুরক্ষা জুগিয়েছে। আর এর ফল ভুগতে হয়েছে বিহারের মহিলাদের। কোনও মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে নির্বিঘ্নে ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে পরিবারগুলিকে সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হত। স্বামী, সন্তানরাও নিরাপদে রাতে ফিরতে পারবে কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা কাজ করত। সবসময় হুমকির মধ্যে মায়েদের দিন কাটাতে হত। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই সময় থেকে বেরিয়ে আসতে বিহারকে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়েছে। পরাভূত হওয়াতেই বিরোধীরা বিহারের মহিলাদের ওপরই তারা এখন সবথেকে বেশি ক্ষিপ্ত। এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি প্রতিশোধ মেটাতে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে বলে তিনি জানান। 

তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি মহিলাদের অগ্রগতির পথকে সবসময় অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেইজন্য মহিলা সংরক্ষণে যেকোনও রকম উদ্যোগ তারা কঠোরভাবে বাধা দেয়। কোনো গরিব ঘরের মহিলাকে খ্যাতিলাভ করতে দেখলে তাদের হতাশা প্রত্যক্ষ করা যায়। দেশের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতি দ্রৌপদী মুর্মু, যিনি এক আদিবাসী কন্যা এবং আর্থিক অনগ্রসর পরিবারভুক্ত, তাঁকেও বিরোধী দল বারংবার অপমান করেছে। মহিলাদের প্রতি এই ঘৃণার রাজনীতিকে দমন করতে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাঁর মাকে যারা অপমান করেছেন তিনি তাদের ক্ষমা করলেও দেশমাতৃকা মহিলাদের প্রতি কোনও অসম্মানকে সহ্য করবে না বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। 

দেশের মহিলাদের ক্ষমতায়ন তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সরকার মহিলাদের কষ্ট লাঘবে নিরন্তর কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। ফলে তাদের সরকার মানুষের আশীর্বাদ ধন্য হবে, এই আশা ব্যক্ত করে দেশের প্রতিটি মায়ের প্রতি তিনি সসম্মান অভিবাদন জানিয়েছেন। 

স্বাধীনতা দিবসে সাম্প্রতিক জাতীয় মনোভাবের উল্লেখ করে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি গ্রামের প্রতিটি রাস্তায় হর ঘর তিরঙ্গা স্লোগান ধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেন বর্তমান সময়ের দাবি হল ‘হর ঘর স্বদেশী, ঘর ঘর স্বদেশী’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই নবমন্ত্র মা ও বোনেদের ক্ষমতায়নে অত্যাবশ্যক এবং তা আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তুলবে। এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি সকল মায়ের আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সমস্ত দোকানদার এবং ব্যবসায়ীকে তাদের দোকানের সাইনবোর্ডে স্বদেশী দ্রব্য বিক্রি হয় বলে ঘোষণা করার ডাক দেন। এতে ভারতে উৎপাদিত পণ্য এবং স্থানীয় পণ্য গুরুত্ব পাবে। তিনি তাঁর ভাষণ শেষে আত্মনির্ভরতার পথে দৃঢ়তার সঙ্গে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন। 

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রীদ্বয় শ্রী সম্রাট চৌধুরী ও বিজয় কুমার সিনহা অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।      

 


SC/AB/SG


(Release ID: 2163131) Visitor Counter : 8