প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভায় বিশেষ আলোচনার সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
29 JUL 2025 10:06PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২৯শে জুলাই, ২০২৫
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এই অধিবেশনের শুরুতে, আমি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে, সকল মাননীয় সাংসদদের কাছে একটি আবেদন জানিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে এই অধিবেশনটি হল ভারতের বিজয়ের উদযাপন। সংসদের এই অধিবেশনটি ভারতের গৌরবের অধিবেশন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যখন আমি 'বিজয়োৎসবের' কথা বলি, তখন আমি বলতে চাই যে এটি সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিগুলিকে ধূলিসাৎ করার উদযাপন। যখন আমি 'বিজয়োৎসব' বলি, তখন তা হল 'সিঁদুরের' শপথ পূরণ করার কথা। যখন আমি 'বিজয়োৎসবের' কথা বলি, তখন আমি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্ব ও শক্তির কথা বলি। যখন আমি 'বিজয়োৎসব' বলি, তখন আমি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর ঐক্য ও সংকল্প এবং সেই সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির জয়কে নির্দেশ করি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজ এই একই জয়ের চেতনা নিয়ে আমি ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে এই অধিবেশনে দাঁড়িয়েছি। যারা ভারতের দৃষ্টিকোণ দেখতে ব্যর্থ, তাদের সামনে আয়না তুলে ধরতেও আমি এখানে দাঁড়িয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি এখানে ১৪০ কোটি মানুষের আবেগের সঙ্গে নিজের অভিমত যোগ করতে এসেছি। সেই আবেগের প্রতিধ্বনি এই কক্ষে গুঞ্জরিত হয়েছে - আমি তাতে আমার অভিমত যোগ করতে এখানে দাঁড়িয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
অপারেশন সিঁদুরের সময় যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, আমাকে আশীর্বাদ করেছেন, তাতে আমি তাঁদের কাছে ঋণী। আমি দেশের নাগরিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, আমি তাঁদেরকে অভিবাদন জানাই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
পহলগামে ২২শে এপ্রিল যে নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল, যেখানে সন্ত্রাসবাদীরা নিরীহ মানুষদেরকে তাদের ধর্ম জিজ্ঞাসা করে গুলি করেছিল, সেটা ছিল চরম নিষ্ঠুরতা। এটি ছিল ভারতকে হিংসার আগুনে গ্রাস করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। সারা দেশে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেওয়ার একটি ষড়যন্ত্র ছিল। আজ, আমি দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই যে সমগ্র দেশ ঐক্যের সঙ্গে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
২২শে এপ্রিলের পর আমি প্রকাশ্যে একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম এবং ইংরেজিতেও কয়েকটি বাক্য ব্যবহার করেছিলাম যাতে সমগ্র বিশ্ব সেগুলি বুঝতে পারে। আমি বলেছিলাম যে আমরা সন্ত্রাসবাদীদের ধূলিসাৎ করে দেব-এটি আমাদের সংকল্প, এবং আমি প্রকাশ্যে জানিয়েছিলাম যে তাদের মূলচক্রীরাও এমন শাস্তি পাবে যা কল্পনার অতীত। ২২শে এপ্রিল আমি বিদেশে ছিলাম। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসে একটি বৈঠক করি, সেই বৈঠকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল : সন্ত্রাসবাদকে চূড়ান্ত জবাব দিতে হবে আর এটাই আমাদের জাতীয় সংকল্প।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা, তাদের শক্তি ও সাহসের ওপর আমাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। সেনাবাহিনীকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল এবং কখন, কোথায়, কীভাবে ও কী উপায়ে জবাব দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পুরো ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছিল। এই সব কিছুই সেই বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এবং এর কিছু অংশ সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল। আমরা গর্বিত যে সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং এমনভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে যে আজও সন্ত্রাসবাদের মূলচক্রীরা রাতে ঘুমোতে পারছে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের সেনাবাহিনীর সাফল্যের পিছনে ভারতের যে দৃষ্টিকোণ ছিল, তা আমি এই সভার সামনে এবং ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। প্রথমত, পহলগাম হামলার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে ভারত বড় ধরনের পদক্ষেপ নেবে। পাকিস্তান পরমাণু হুমকির ভয় দেখাতে শুরু করে। তবুও, ভারত তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ই মে রাতে এবং ৭ই মে ভোরে অভিযান চালায় এবং পাকিস্তান কিছুই করতে পারেনি। মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে আমাদের সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে ২২শে এপ্রিলের হামলার প্রতিশোধ নেয়। দ্বিতীয়ত, মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, আমরা এর আগেও পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার লড়াই করেছি, কিন্তু এই প্রথম ভারত এমন কৌশল কার্যকর করে যেখানে আমরা এমন সব জায়গায় পৌঁছলাম, যেখানে আগে কখনো যাওয়া সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলি ছাই হয়ে গিয়েছিল। বাহাওয়ালপুর এবং মুরিদকের মতো যে স্থানগুলিকে অস্পৃশ্য বলে মনে করা হতো, সেগুলিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের ওই আস্তানাগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। তৃতীয়ত, আমরা পাকিস্তানের পরমাণু হুমকিকে শূন্য প্রমাণ করেছি। ভারত প্রমাণ করেছে যে পরমাণু হুমকির ভয় দেখিয়ে আর কাজ হবে না, এবং ভারত এই ধরনের কৌশলের কাছে কখনোই মাথা নত করবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
চতুর্থত, ভারত তার প্রযুক্তিগত ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। আমরা পাকিস্তানের একেবারে ভিতরে সুনির্দিষ্ট আঘাত করেছিলাম। তাদের বিমান ঘাঁটির সম্পদগুলির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল, এবং আজও তাদের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটি আইসিইউতে রয়েছে। এটি প্রযুক্তি-চালিত যুদ্ধের যুগ, এবং অপারেশন সিঁদুর সেই ক্ষেত্রে সফল প্রমাণিত হয়েছে। গত দশ বছরে আমরা যে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তা যদি না করতাম, তবে এই প্রযুক্তির যুগে ভারতের যে ক্ষতি হতে পারত, তা ছিল কল্পনাতীত। পঞ্চমত, অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন প্রথমবারের মতো বিশ্ব 'আত্মনির্ভর ভারতের' শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতেই তৈরি ড্রোন এবং ভারতেই তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলিকে সম্পূর্ণ রূপে উন্মোচিত করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমার চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদ ঘোষণা করার পরে শ্রদ্ধেয় রাজীব গান্ধীর সময়কালের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন। তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন এবং এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন। এই অভিযানের সময় নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী যে যৌথ অভিযান পরিচালনা করেছিল, তিনটি বাহিনীর মধ্যে যে সমন্বয় ছিল,তাতে পাকিস্তান পুরোপুরি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আগেও দেশে সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটত। কিন্তু তখন, এই ধরনের হামলার মূলচক্রীরা নিশ্চিন্ত হয়ে থাকত - তারা আত্মবিশ্বাসী ছিল যে তাদের কিছুই হবে না, তাই তারা সেই হামলার পরের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু এখন, পরিস্থিতি বদলে গেছে। এখন, কোনো হামলার পর সেই মূলচক্রীরা রাতে ঘুমোতে পারে না। তারা জানে যে ভারত আসবে,আঘাত হানবে এবং ফিরে যাবে। এটাই হলো ভারতের প্রতিষ্ঠা করা নতুন বাস্তবতা ।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
বিশ্ব এখন ভারতের পদক্ষেপের প্রসার এবং পরিধি প্রত্যক্ষ করেছে। সিঁদুর থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত, ভারত পাকিস্তানের সর্বত্র পদক্ষেপ নিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করেছে যে যারা হামলার মূল চক্রী এবং যে রাষ্ট্র তাদের আশ্রয় দেয় অর্থাৎ পাকিস্তান - তাদেরকে বড় মূল্য চোকাতে হবে। তারা আর এত সহজে পার পেয়ে যেতে পারবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
অপারেশন সিঁদুর খুব স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে ভারত তিনটি নীতি নির্ধারণ করেছে: যদি ভারতের উপর কোনো সন্ত্রাসবাদ হামলা হয়, তবে আমরা আমাদের নিজস্ব উপায়ে, আমাদের নিজস্ব শর্তে এবং আমাদের পছন্দমতো সময়ে জবাব দেব। পরমাণু হামলার ভয় দেখিয়ে আর কাজ হবে না এবং তৃতীয়ত, যেসব সরকার সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং সন্ত্রাসবাদী চক্রের মূল নায়ক যারা তাদের মধ্যে আমরা আর কোনো পার্থক্য করব না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
বিদেশ নীতি এবং বিশ্বব্যাপী সমর্থন নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। আমি আজ এই কক্ষে বিষয়গুলি পুরোপুরি স্পষ্ট করে দিতে চাই : আত্মরক্ষার জন্য ভারতকে পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিশ্বের একটি দেশও আটকায়নি। রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে অপারেশন সিঁদুরের সময় মাত্র তিনটি দেশ পাকিস্তানের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিল - মাত্র তিনটি। তা সে কোয়াড হোক, ব্রিকস হোক, ফ্রান্স হোক, রাশিয়া হোক, জার্মানি হোক - যে কোনো দেশের নাম নিন - ভারত বিপুল পরিমাণে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করেছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
ভারত বিশ্বের সমর্থন ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সমর্থন পেয়েছে, কিন্তু দুঃখের বিষয়, ভারতের সাহসী সৈনিকেরা কংগ্রেস দলের সমর্থন পাননি। ২২শে এপ্রিলের সন্ত্রাসবাদী হামলার মাত্র তিন-চার দিন পর কংগ্রেস নেতারা উপহাস ও কটাক্ষ করে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, "৫৬ ইঞ্চি ছাতি কোথায়?" "মোদী কোথায় গেলেন?" "মোদী ব্যর্থ হয়েছে।" তাদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা এতে আনন্দ পাচ্ছে, যেন তারা রাজনৈতিকভাবে একটি সুবিধা পেয়ে গেছে। পহেলগামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মুখেও তারা নিজেদের রাজনীতিকে আরও তীব্র করার চেষ্টা করেছিল।তারা তাদের স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক লাভের জন্য আমাকে লক্ষ্য করেছিল, কিন্তু এই ধরনের মন্তব্য এবং সস্তা রাজনৈতিক আক্রমণ কেবল দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলকে দূর্বল করেছে। কিছু কংগ্রেস নেতা না দেশের ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন, না দেশের সেনাবাহিনীতে - আর সেই কারণেই তারা বারবার অপারেশন সিঁদুরের বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এমনটা করে আপনারা সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা পেতে পারেন, কিন্তু দেশের মানুষের হৃদয়ে আপনারা কখনোই জায়গা করে নিতে পারবেন না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
১০ই মে ভারত অপারেশন সিঁদুরের আওতায় চলা পদক্ষেপগুলি বন্ধ করার কথা ঘোষণা করে। এই বিষয়ে বহু রকমের মন্তব্য করা হয়েছে। কিন্তু এটি সেই একই প্রচার যা সীমান্তের ওপার থেকে ছড়ানো হচ্ছে। কিছু লোক আমাদের সেনাবাহিনীর ভাগ করে নেওয়া তথ্যগুলি গ্রহণ করার চেয়ে পাকিস্তানের মিথ্যা প্রচারকে তুলে ধরতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু ভারতের অবস্থান সব সময় স্পষ্ট ছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি এই কক্ষকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, তখন আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল - সীমান্তের ওপারে সন্ত্রাসবাদীদের উৎক্ষেপণ স্থানগুলিকে ধ্বংস করা। আমাদের সৈন্যরা রাতারাতি অভিযান চালিয়েছিল এবং সূর্যোদয়ের আগেই মিশন সম্পন্ন করে ফিরে এসেছিল। এটিই ছিল লক্ষ্য। যখন বালাকোটে হামলা চালানো হয়েছিল, লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট -সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি এবং আমরা সফলভাবে সেগুলিকে ধ্বংস করেছিলাম। আমরা সেটাও অর্জন করেছিলাম। একইভাবে, অপারেশন সিঁদুরের সময়, আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল - সন্ত্রাসের কেন্দ্রস্থলগুলিতে আঘাত হানা - ঠিক সেই জায়গাগুলিতে যেখানে পহেলগাম হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেখানে প্রশিক্ষণ, সরবরাহ, নিয়োগ এবং অর্থায়ন পরিচালিত হয়েছিল। আমরা এই কেন্দ্রগুলিকে চিহ্নিত করে অপারেশন সিঁদুরের সময় সরাসরি সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে আঘাত হেনেছিলাম।
এবং মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এবারও আমাদের সেনাবাহিনী তাদের লক্ষ্যের শতকরা ১০০ ভাগ অর্জন করেছে, যা ভারতের প্রকৃত শক্তিকে তুলে ধরেছে। কিছু লোক ইচ্ছা করে তথ্যগুলি ভুলে যেতে আগ্রহী। কিন্তু দেশ ভোলে না। দেশ মনে রেখেছে যে এই অভিযানটি হয়েছিল ৬ই মে রাতে এবং ৭ই মে ভোরে। ৭ই মে সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি প্রেস কনফারেন্স করে স্পষ্টভাবে আমাদের উদ্দেশ্য জানিয়েছিল - সন্ত্রাসবাদী, তাদের মূল চক্রী এবং তাদের পরিকাঠামো ধ্বংস করা। এবং আমরা প্রেস কনফারেন্সের সময় স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে আমাদের মিশন সম্পন্ন হয়েছে। তাই, রাজনাথ সিংজি গতকাল যা বলেছিলেন, আমি গর্বের সঙ্গে তা পুনরাবৃত্তি করছি : ভারতীয় সেনাবাহিনী কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে জানিয়ে দিয়েছিল যে আমাদের লক্ষ্যগুলি অর্জিত হয়েছে - ঠিক কী করা হয়েছে তা তাদের জানাতে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া যাচাই করতে। আমরা যা করার সংকল্প করেছিলাম, সবটাই সম্পন্ন করেছিলাম। পাকিস্তান যদি বুদ্ধিমানের মতো কাজ করত, তাহলে তারা সন্ত্রাসবাদীদের প্রকাশ্যে সমর্থন করার গুরুতর ভুলটি করত না। কিন্তু তারা নির্লজ্জভাবে তাদের পক্ষে থাকার পথ বেছে নিয়েছিল।
আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলাম, এইরকম কোনো সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা বিশ্বকে বলেছিলাম যে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো সন্ত্রাসবাদ, যারা সন্ত্রাসবাদকে মদত দিচ্ছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রগুলি এবং আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি এবং একবার পাকিস্তান যখন সন্ত্রাসবাদীদের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিল ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করল, তখন ভারত এমন জোরালো আঘাত হানল যে ৯ই মে রাত এবং ১০ই মে ভোরের ঘটনা বছরের পর বছর মনে রাখা হবে।
আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পাকিস্তানের প্রতিটি কোণায় এমন শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছিল যা তারা কখনও কল্পনাও করেনি। পাকিস্তান হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য হয়েছিল। আপনারা টিভিতে দেখেছেন পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিক্রিয়াগুলি। একজন বলেছিলেন, "আমি সুইমিং পুলে ডুব দিচ্ছিলাম", অন্যজন বলেছিলেন, "আমি অফিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম — আর আমরা কিছু ভাবার আগেই ভারত আক্রমণ করে ফেলেছে!" এগুলি পাকিস্তানের মানুষের বক্তব্য, যা গোটা দেশ দেখেছে। যখন এমন কঠোর আঘাত করা হয়েছিল, পাকিস্তান স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। তখনই পাকিস্তান আমাদের ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস - কে ফোন করে অনুরোধ জানায় : "অনুগ্রহ করে থামুন, আমাদের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে, আমরা আর নিতে পারছি না। দয়া করে আক্রমণ থামান।" এটি ছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ডিজিএমও স্তরের ফোন। কিন্তু মনে রাখবেন - ভারত ৭ই মের প্রেস কনফারেন্সে আগেই ঘোষণা করেছিল যে আমাদের লক্ষ্যগুলি অর্জিত হয়েছে, এবং সতর্ক করেছিল যে যেকোনো উস্কানিমুলক প্ররোচনা ব্যয়বহুল হবে। আমি আবার বলছি : এটি ছিল ভারতের স্পষ্ট, সুচিন্তিত নীতি, যা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে তৈরি করা হয়েছিল। সেই নীতি ছিল : আমাদের লক্ষ্য সন্ত্রাসবাদ, এর মূল চক্রী এবং এর ঘাঁটিগুলি এবং প্রথম দিন থেকেই, আমরা প্রেস কনফারেন্সে জানিয়েছিলাম যে আমাদের এই পদক্ষেপ উত্তেজকমূলক নয়। আমরা যেমন ঘোষণা করেছিলাম ঠিক সেভাবেই কাজ করেছি, এবং সেই কারণেই আমরা আক্রমণাত্মক অভিযান বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
একজনও বিশ্বনেতা ভারতকে অপারেশন সিঁদুর বন্ধ করার কথা বলেননি। ৯ মে রাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতি আমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তিনি আমাকে ফোনে পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমি তখন আমার সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের সঙ্গে একটি বৈঠকে ছিলাম, তাই তার ফোন ধরতে পারিনি। পরে আমি তাকে আবার ফোন করি। আমি বললাম, “আপনি বেশ কয়েকবার ফোন করার চেষ্টা করেছেন - কী ব্যাপার?” মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি আমাকে ফোনে বলেছিলেন যে পাকিস্তান একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করছে। এটাই তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন। এখন যারা বুঝতে চায় না, তারা বুঝবে না - কিন্তু এটাই ছিল আমার স্পষ্ট উত্তর : “যদি পাকিস্তান কোনো হামলার পরিকল্পনা করে, তাহলে তাকে এর বড় মূল্য চোকাতে হবে। যদি পাকিস্তান হামলা করে, আমরা আরও বড় আঘাতের মাধ্যমে জবাব দেব।” এবং আমি আরও বলেছিলাম, “আমরা বুলেটের জবাব দেবো গোলার মাধ্যমে।” এটা ছিল ৯ মে রাতের ঘটনা — এবং ৯ মে রাত থেকে ১০ মে সকালের মধ্যে ভারত পাকিস্তানের সামরিক পরিকাঠামো ধ্বংস করে দেয়। এটাই ছিল আমাদের জবাব। এটাই ছিল আমাদের দৃঢ় সংকল্প। আর এখন পাকিস্তানও পরিষ্কার বুঝতে পারছে যে প্রত্যেকটি ভারতীয়ের জবাব আগের থেকে অনেক শক্তিশালী হবে। তারাও জানে যে আবারও যদি এমন পরিস্থিতি হয়, ভারত যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। তাই আজ, গণতন্ত্রের এই মন্দির থেকে আমি পুনরায় নিশ্চিত করতে চাই : অপারেশন সিঁদুর এখনও সক্রিয়। আর যদি পাকিস্তান আবারও সাহস দেখায়, তাহলে তারা তার জবাব পাবে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজকের ভারত আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। এটি স্বনির্ভরতার পথে সম্পূর্ণ শক্তি এবং দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে। পুরো দেশ দেখতে পাচ্ছে যে ভারত ক্রমশ আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। কিন্তু দেশ একটি অদ্ভুত বৈপরীত্যও দেখছে: যখন ভারত দ্রুত স্বনির্ভরতার দিকে এগোচ্ছে, তখন কংগ্রেস রাজনৈতিক ইস্যুর জন্য পাকিস্তানের উপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আজ, আমি প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে চলা পুরো বিতর্কটি দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত, কংগ্রেসকে তাদের ইস্যুগুলো পাকিস্তান থেকে আমদানি করতে হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজকের যুদ্ধে, তথ্য এবং আখ্যানগুলি একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। আমাদের বাহিনীকে হতাশ করতে এবং জনগণের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি করার জন্য — এআই এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে — আখ্যান তৈরি করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত, কংগ্রেস এবং তার মিত্ররা পাকিস্তানের এই প্রচার যন্ত্রের মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যখন আমাদের সেনাবাহিনী সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করেছিল, কংগ্রেস তখন কী করেছিল? তারা সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর কাছে প্রমাণ চেয়েছিল। কিন্তু যখন তারা দেশের মেজাজ — জনগণের দৃঢ় অনুভূতি — দেখতে পেল, তখন তারা তাদের সুর পাল্টে ফেলল। আর তারা কী বলতে শুরু করল? কংগ্রেস নেতারা বলতে শুরু করলেন : “এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে কি এমন বিশেষত্ব আছে? আমরাও এটা করেছি।” একজন দাবি করল তারা তিনটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। আরেকজন বলল তারা ছয়টি করেছে। তৃতীয় একজন পনেরোটির দাবি করল। আর যে নেতা যত বড়, তার দাবি করার সংখ্যাও তত বেশি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
তারপর এলো বালাকোট বিমান হামলা। এবার তারা বলতে পারল না, “আমরাও এটা করেছি,” কারণ এটা খুব স্পষ্ট ছিল। কিন্তু তার বদলে, তারা ছবির প্রমাণ চাইতে শুরু করল। “আমাদের ছবি দেখান!” “বোমাগুলো কোথায় পড়েছিল?” “কী ধ্বংস হয়েছিল?” “কতজন মারা গিয়েছিল?” তারা এসব প্রশ্ন করেই যাচ্ছিল — ঠিক যেমনটা পাকিস্তান জিজ্ঞাসা করছিল। তারা পাকিস্তানের প্রশ্নের প্রতিধ্বনি করছিল। শুধু এটাই নয়...
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যখন পাইলট অভিনন্দনকে আটক করা হয়েছিল, তখন পাকিস্তানের উদযাপন করা স্বাভাবিক ছিল — কারণ একজন ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাইলট তাদের হেফাজতে ছিলেন। কিন্তু এখানে এমন কিছু মানুষ ছিল, যারা আড়ালে ফিসফিস করে বলছিল: “এখন মোদি ফাঁদে পড়েছেন!” “দেখি মোদি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেন কিনা।” “এখন দেখি মোদি কী করেন।” কিন্তু গর্বের সাথে, এই সবের মুখে: অভিনন্দন ফিরে এলেন — মর্যাদার সাথে। আমরা তাকে ফিরিয়ে এনেছি। আর তারপর, এই সমালোচকরা নীরব হয়ে গেল। তারা উপলব্ধি করল — “এই লোকটা খুব ভাগ্যবান।” “আমরা কেবল আমাদের সেরা রাজনৈতিক অস্ত্রটা হারালাম।”
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
পহলগাম হামলার পর, যখন আমাদের একজন বিএসএফ জওয়ানকে পাকিস্তান আটক করল, তখন কিছু লোক বিশ্বাস করতে শুরু করল যে তারা আঁকড়ে ধরার মতো একটা বড় ইস্যু খুঁজে পেয়েছে — যে এবার মোদি কোণঠাসা হবেন, যে এটা তার জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি হবে। তাদের পুরো ইকোসিস্টেম সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরনের আখ্যান প্রচার করতে শুরু করল — বিএসএফ জওয়ানের কী হবে? তার পরিবারের কী হবে? সে কি ফিরবে? কখন? কীভাবে? এত জল্পনা ছড়ানো হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
সেই বিএসএফ জওয়ানও পূর্ণ সম্মান, মর্যাদা এবং গর্বের সাথে ফিরে এসেছেন। সন্ত্রাসবাদীরা কাঁদতে লাগল, তাদের পরিচালনাকারীরা হতাশায় ছিল — আর তাদের কাঁদতে দেখে, এখানকার কিছু মানুষও মন খারাপ করে বসেছিল। এখন শুধু দেখুন : যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছিল, তারা একটা ভিন্ন খেলা খেলার চেষ্টা করেছিল — কাজ হয়নি। বিমান হামলার পর, তারা আরেকটি কৌশল চেষ্টা করেছিল — সেটাও ব্যর্থ হয়েছিল। এরপর এলো অপারেশন সিঁদুর, আর তারা একটি নতুন ফন্দি শুরু করল। আর তারা কী বলতে শুরু করল? "এটা কেন থামানো হলো?" প্রথমে, তারা তো মানতেই চায়নি যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন তারা জিজ্ঞাসা করছে, "কেন আপনারা এটা থামালেন?" কী বৈপরীত্য! বিবৃতি দেওয়ার এই স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কে আর কী বলা যেতে পারে? আপনাদের কেবল বিরোধিতার একটি অজুহাত দরকার, আর সেই কারণেই শুধু আমি নই, পুরো দেশ আপনাদের দেখে হাসছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করার এই মনোভাব, তাদের প্রতি এই ধারাবাহিক নেতিবাচকতা — এটাই দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের কৌশল। দেশ কেবল কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করল, কিন্তু সবাই ভালো করেই জানে যে তাদের কার্যকালে এবং এখনও পর্যন্ত, কংগ্রেস কার্গিল বিজয়কে গ্রহণও করেনি বা উদযাপনও করেনি। তারা কখনোই এটিকে প্রাপ্য সম্মান দেয়নি। ইতিহাস সাক্ষী, মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, যখন আমাদের সেনাবাহিনী ডোকলামে তাদের বীরত্ব দেখাচ্ছিল, তখন কংগ্রেস নেতারা গোপনে কিছু নির্দিষ্ট লোকের কাছ থেকে বিবরণ শুনছিলেন — এখন সেকথা পুরো বিশ্ব জানে। পাকিস্তানে দেওয়া বিবৃতিগুলো দেখুন এবং এখানে আমাদের বিরোধিতাকারীদের বিবৃতির সঙ্গে তুলনা করুন — সেগুলি হুবহু মিলে যায়, কমা থেকে ফুল স্টপ পর্যন্ত। এ ব্যাপারে আর কী বলা যেতে পারে? আর হ্যাঁ, যখন আমরা সত্যি কথা বলি তখন তাদের গায়ে লাগে! তাদের কণ্ঠস্বর পাকিস্তানের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে গিয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
দেশ অবাক যে কংগ্রেস কার্যত পাকিস্তানকে ক্লিন চিট দিয়েছে। এই দলের ঔদ্ধত্য, তাদের অভ্যাস বদলায়নি। তারা এমনকি সাহস করে বলেছে : প্রমাণ দিন যে পহলগামের সন্ত্রাসবাদীরা পাকিস্তানি ছিল। তারা কী বলছে? এটা কী ধরনের মানসিকতা? আর একই দাবি পাকিস্তানও করছে — কংগ্রেস যা চাইছে, পাকিস্তানও ঠিক তাই চাইছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজ যখন প্রমাণের কোনো অভাব নেই, যখন সবকিছু বিশ্বের কাছে স্পষ্ট, এবং তবুও তাদের অবস্থান এমন — তখন শুধু কল্পনা করুন যদি এমন প্রমাণ না পাওয়া যেত তাহলে তারা কী করত।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
অপারেশন সিঁদুরের একটি নির্দিষ্ট অংশের দিকে অনেক মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু দেশের জন্য কিছু গৌরবময় মুহূর্ত, শক্তির প্রদর্শনও রয়েছে, যা আমাদের মনোযোগ এবং প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা — বিশ্ব এখন সে সম্পর্কে কথা বলছে। আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনগুলিকে ডালপালার মতো ভেঙে দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজ আমি এমন একটি সত্য তুলে ধরতে চাই যা পুরো দেশকে গর্বে ভরিয়ে দেবে। কিছু মানুষ কী অনুভব করবে, আমি জানি না — কিন্তু পুরো দেশ অনেক গর্ব অনুভব করবে। ৯ই মে, পাকিস্তান প্রায় ১,০০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে ভারতের উপর একটি বিশাল হামলার চেষ্টা করেছিল — হ্যাঁ, এক হাজার। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি যদি ভারতের কোনো অংশে পড়ত, তাহলে অকল্পনীয় ধ্বংসযজ্ঞ হত। কিন্তু ভারত আকাশে থাকা অবস্থাতেই সব ১,০০০ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনকে প্রতিহত করে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিটি নাগরিক এতে গর্বিত। কিন্তু কিছু কংগ্রেস নেতা যেন প্রায় অপেক্ষা করছিলেন — আশা করছিলেন যে কিছু একটা ভুল হবে। যে মোদি কোথাও ব্যর্থ হবেন। যে তিনি ফাঁদে পড়বেন। পাকিস্তান এমনকি আদমপুর বিমানঘাঁটিতে হামলার মিথ্যা দাবিও ছড়িয়েছিল। তারা সেই মিথ্যাকে সব শক্তি দিয়ে বিক্রি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল। আমি নিজেই পরের দিন আদমপুর গিয়ে সেই মিথ্যা ফাঁস করে দিয়েছিলাম। তখনই তারা বুঝতে পেরেছিল যে এই ধরনের মিথ্যা আর চলবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি বুঝতে পারি যখন আমাদের ছোট দলের সহকর্মীরা, যারা রাজনীতিতে নতুন এবং কখনও শাসনের লাগাম ধরেননি, তাদের কাছ থেকে মন্তব্য আসে। কিন্তু কংগ্রেস পার্টি এই দেশ শাসন করেছে কয়েক দশক ধরে। তারা প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবেই ওয়াকিবহল। তারা সেইসব ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই উঠে এসেছেন। তারা পুরোপুরি বোঝেন যে শাসনব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে। তাদের অভিজ্ঞতা আছে। তবুও — যখন বিদেশ মন্ত্রক অবিলম্বে প্রতিক্রিয়া জানায়, তারা তা মানতে অস্বীকার করে। বিদেশমন্ত্রী সাক্ষাৎকার দেন, বারবার বলেন — কিন্তু তারা তা স্বীকার করতে রাজি নন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এবং তবুও তারা কাউকে বিশ্বাস করেন না। যে দল এত বছর ধরে দেশ শাসন করেছে, তারা যদি দেশের ব্যবস্থার ওপর আর ভরসা না করে, তাহলে একজন ভাবতে বাধ্য হয় — তাদের কী হয়েছে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এখন মনে হচ্ছে কংগ্রেসের বিশ্বাস পাকিস্তানের রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে তৈরি এবং পরিচালিত হয়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
কংগ্রেসের একজন নতুন সদস্য — ঠিক আছে, আমরা তাকে ক্ষমা করতে পারি, তিনি নতুন। কিন্তু কংগ্রেস হাইকমান্ড তার জন্য বিবৃতি লিখে দেয় এবং তাকে দিয়ে তা পড়িয়ে নেয়, কারণ তাদের নিজেদের বলার সাহস নেই। তারা তাকে দিয়ে বলিয়েছিল যে অপারেশন সিঁদুর একটি নাটক। এটা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ২৬ জন মানুষের নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করার চেয়ে কম কিছু নয়। এটাকে ‘নাটক’ বলা — এটা কীভাবে আপনার মতামত হতে পারে? আর এইগুলো এমন বিবৃতি যা কংগ্রেস নেতারা অন্যকে দিয়ে পড়িয়ে নেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
গতকাল, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অপারেশন মহাদেবের মাধ্যমে পহেলগামের হামলাকারীদের বিচার করেছে। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম যখন কেউ একজন জোরে হেসে জিজ্ঞাসা করলেন, "ঠিক গতকালই কেন এটা করা হলো?" আমি বুঝতে পারছি না — এই মানুষগুলোর কী হয়েছে? অপারেশনটি কি শ্রাবণ মাসের কোনো পবিত্র সোমবারের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছিল? তাদের কী হয়েছে? তারা এত মরিয়া এবং আশাহীন — এবং পরিহাসের বিষয় হল, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা জিজ্ঞাসা করছিল: "ঠিক আছে, আপনি অপারেশন সিঁদুর করেছেন, কিন্তু পহেলগামের সন্ত্রাসবাদীদের কী হবে?" এখন যখন সেই সন্ত্রাসবাদীদের মোকাবিলা করা হয়েছে, তারা জিজ্ঞাসা করছে: "এখন কেন?" মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, তাদের কী হয়েছে?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের শাস্ত্র বলে:
“শাস্ত্রেণ রক্ষিতে রাষ্ট্রে শাস্ত্র চিন্তা প্রবর্ততে” যার অর্থ : যখন একটি রাষ্ট্র অস্ত্র দ্বারা সুরক্ষিত থাকে, তখনই জ্ঞান এবং আলোচনা বিকশিত হতে পারে। যখন আমাদের সীমান্ত শক্তিশালী এবং আমাদের বাহিনী সতর্ক, কেবল তখনই গণতন্ত্র সমৃদ্ধ হতে পারে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
অপারেশন সিঁদুর গত এক দশকে ভারতের সেনাবাহিনীর শক্তিশালী হওয়ার একটি সরাসরি প্রমাণ। এটা এমনি এমনি হয়নি। কংগ্রেসের শাসনকালে, সেনাবাহিনীকে স্বনির্ভর করার চিন্তা কখনও ওঠেনি। আজও, "স্বনির্ভর" শব্দটি নিয়ে ঠাট্টা করা হয় — যদিও এর উৎপত্তি মহাত্মা গান্ধীর থেকে। প্রতিটি প্রতিরক্ষা চুক্তিকে কংগ্রেস লাভের সুযোগ হিসেবে দেখত। এমনকি ছোট অস্ত্রের জন্যও, তাদের কার্যকালে ভারত বিদেশি দেশগুলির ওপর নির্ভরশীল ছিল। এমনও সময় ছিল যখন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট এবং নাইট ভিশন ক্যামেরাও পাওয়া যেত না। তালিকাটা দীর্ঘ — জিপ থেকে বোফর্স থেকে হেলিকপ্টার পর্যন্ত — প্রতিটি চুক্তিতে কেলেঙ্কারি ছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রের জন্য কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হয়েছে। স্বাধীনতার আগে - এবং ইতিহাস এর সাক্ষী - এমন একটা সময় ছিল যখন প্রতিরক্ষা উৎপাদনে ভারতের কণ্ঠস্বর শক্তিশালী ছিল। এমনকি তলোয়ারের যুগেও, ভারতীয় তলোয়ারকে উন্নত মানের মনে করা হত। আমরা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার পর, আমাদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা উৎপাদনের পরিবেশকে পরিকল্পিতভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। গবেষণা ও উৎপাদনের পথ ইচ্ছাকৃতভাবে রুদ্ধ করা হয়েছিল। যদি আমরা সেই পথেই চলতে থাকতাম, তাহলে একবিংশ শতাব্দীতে ভারত অপারেশন সিঁদুরের মতো কোনো কিছুর স্বপ্ন দেখতে পারত না। তারা দেশকে এমন অবস্থায় রেখেছিল যে আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হতো : যদি আমাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে হয়, আমরা অস্ত্র কোথা থেকে পাব? আমরা সম্পদ কোথায় পাব? গোলাবারুদ সময়মতো পৌঁছাবে তো? সরবরাহ মাঝপথে ভেঙে যাবে না তো? এই উদ্বেগ নিয়ে আমাদের বাঁচতে হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
গত দশকে, 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-র আওতায় তৈরি অস্ত্রগুলি এই অপারেশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফল নির্ধারণকারী ভূমিকা পালন করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এক দশক আগে, ভারতের সাধারণ মানুষ একটি সংকল্প নিয়েছিল: আমাদের দেশ শক্তিশালী, স্বনির্ভর এবং আধুনিক হবে। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার সংস্কারের জন্য একের পর এক সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একাধিক সংস্কার সম্পন্ন করা হয়েছে এবং এই দশকে সেনাবাহিনীর মধ্যে যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে — স্বাধীনতার পর এই ধরনের সংস্কার প্রথম। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদে নিয়োগের ধারণাটি নতুন ছিল না। বিশ্বজুড়ে এর পরীক্ষা চলছিল, কিন্তু ভারতে কখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছি এবং আমি আমাদের তিনটি সামরিক বাহিনীকে এই ব্যবস্থাটি গ্রহণ করার জন্য এবং এটিকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করার জন্য সাধুবাদ জানাই। আজ সবচেয়ে বড় শক্তি হল আমাদের বাহিনীর যৌথতা এবং সংহতি। নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী বা সেনাবাহিনী হোক না কেন — এই যৌথতা এবং সংহতি আমাদের শক্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলাফল সবার কাছে দৃশ্যমান — আমরা এটা প্রমাণ করেছি। আমরা প্রতিরক্ষা উৎপাদনকারী সরকারি সংস্থাগুলিতেও সংস্কার করেছি। প্রাথমিকভাবে, আগুন, প্রতিবাদ এবং ধর্মঘট উসকে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এগুলি এখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিন্তু এই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কর্মরত মানুষরা, জাতীয় স্বার্থকে সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, সংস্কারগুলি মেনে নিয়েছেন এবং এখন অত্যন্ত উৎপাদনশীল হয়ে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্যও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা খুলে দিয়েছি। আজ, ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্র এগিয়ে আসছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র, আমাদের যুবকদের দ্বারা পরিচালিত অনেক স্টার্ট-আপ — যাদের বয়স ২৭-৩০, যারা টায়ার-২ এবং টায়ার-৩ শহর থেকে এসেছেন — সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে, তরুণীরা এই স্টার্ট-আপগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ, শত শত স্টার্ট-আপ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করছে।
যখন ড্রোনের কথা আসে তখন আমি বলব যে ভারতে ড্রোনের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশিরভাগ কার্যক্রম তরুণদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, সম্ভবত যাদের গড় বয়স ৩০-৩৫। শত শত মানুষ এতে জড়িত, এবং অপারেশন সিঁদুরের সময় তাদের অবদানের শক্তি স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছিল। আমি তাদের সকলের প্রচেষ্টাকে আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই এবং আমি তাদের আশ্বস্ত করছি: এগিয়ে যেতে থাকুন — দেশ এখন আর থামবে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' শুধু একটি স্লোগান ছিল না। আমরা বাজেট বরাদ্দ করেছি, নীতি পরিবর্তন করেছি এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে নতুন উদ্যোগ চালু করেছি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমরা একটি পরিষ্কার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়েছি, এবং আজ, 'মেক ইন ইন্ডিয়া' উদ্যোগের অধীনে ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
গত দশকে, প্রতিরক্ষা বাজেট প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। প্রতিরক্ষা উৎপাদনে প্রায় ২৫০% বৃদ্ধি হয়েছে। গত ১১ বছরে, প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৩০ গুণেরও বেশি বেড়েছে। আজ, আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে পৌঁছেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
কিছু ঘটনা ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলে। অপারেশন সিঁদুর বিশ্ব প্রতিরক্ষার বাজারে ভারতের পতাকা দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছে। ভারতীয় অস্ত্রের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এটি দেশীয় শিল্প, বিশেষ করে মাঝারি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিকে উৎসাহিত করবে। এটি আমাদের যুবকদের কর্মসংস্থান দেবে, এবং তরুণ ভারতীয়রা এখন তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বকে তাদের শক্তি দেখাতে পারবে — এটি এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। আমি দেখছি যে আমরা প্রতিরক্ষায় স্বনির্ভরতার দিকে যে পদক্ষেপ নিচ্ছি, তাতে কিছু মানুষ এখনও বিচলিত বলে মনে হচ্ছে — যেন তাদের ধনসম্পদ লুট হয়ে গেছে। এটা কী ধরনের মানসিকতা? দেশের এমন মানুষদের চিহ্নিত করা দরকার।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে বলতে চাই — প্রতিরক্ষায় ভারতের স্বনির্ভর হওয়া কেবল আমাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বিশ্ব শান্তির জন্যও অত্যন্ত জরুরি, বিশেষ করে এই অস্ত্র প্রতিযোগিতার যুগে। আমি আগেও বলেছি — ভারত বুদ্ধের ভূমি, যুদ্ধের নয়। আমরা সমৃদ্ধি ও শান্তি চাই, কিন্তু আসুন আমরা যেন কখনও না ভুলি — সমৃদ্ধি ও শান্তির পথ শক্তির মধ্য দিয়ে যায়।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমাদের ভারত ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ, মহারাজা রণজিৎ সিং, রাজেন্দ্র চোল, মহারানা প্রতাপ, লাচিত বরফুকন এবং মহারাজা সুহেলদেবের ভূমি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
উন্নয়ন এবং শান্তির স্বার্থে, আমরা কৌশলগত ক্ষমতার উপরেও মনোযোগ দিই।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়
কংগ্রেসের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো দূরদৃষ্টি কখনোই ছিল না — অতীতেও না, আর অবশ্যই এখনও নেই। কংগ্রেস সবসময় জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস করেছে। আজ, কিছু মানুষ জিজ্ঞাসা করে কেন পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। ঠিক আছে, সেই প্রশ্নটা শুধু আমাকেই জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে, অন্য কাউকে নয়। কিন্তু সেই প্রশ্ন করার আগে, সেই মানুষগুলোকে উত্তর দিতে হবে — কার সরকার পাকিস্তানকে প্রথমে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর দখল করার অনুমতি দিয়েছিল? উত্তরটা পরিষ্কার। যখনই আমি নেহেরুজি -র কথা বলি, কংগ্রেস এবং তার পুরো ইকোসিস্টেম উত্তেজিত হয়ে যায় — আমি জানি না কেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি একটি দোঁহা শুনেছি — যদিও আমি বিশেষজ্ঞ নই, যেটা বলে: “লমহো নে খাতা কি, সাদিওঁ নে সাজা পায়ি।” (“এক মুহূর্তের ভুলের জন্য শতাব্দী ধরে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে।”) স্বাধীনতার পরপরই নেওয়া সিদ্ধান্তগুলির জন্য দেশ আজও ভুগছে। এটা অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে, এবং আমি আবারও বলছি : আকসাই চীনের পুরো অঞ্চলটিকে অনুর্বর ভূমি ঘোষণা করা হয়েছিল। এবং সেই কারণে, আমরা ৩৮,০০০ বর্গ কিলোমিটার জমি হারিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমি জানি আমার কিছু কথায় কষ্ট হতে পারে। কিন্তু ১৯৬২ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে, কংগ্রেস নেতারা প্রকৃতপক্ষে পুঞ্চ, উরি, নীলাম উপত্যকা এবং কিষাণগঙ্গা — ভারতীয় অঞ্চলগুলি — সমর্পণ করার প্রস্তাব দিচ্ছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আর এই সবকিছু করা হচ্ছিল শান্তির নামে। ১৯৬৬ সালে, কচ্ছের রণের সংঘাতের সময়, তারা বিদেশি মধ্যস্থতা মেনে নিয়েছিল। এটাই ছিল তাদের তথাকথিত “জাতীয় নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি”। এর ফলস্বরূপ, ভারতকে প্রায় ৮০০ বর্গ কিলোমিটার জমি পাকিস্তানকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে, আমাদের সেনাবাহিনী হাজি পির পাস পুনরায় দখল করেছিল — কিন্তু কংগ্রেস সেটা ফিরিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে, আমাদের হেফাজতে ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য ছিল, এবং পাকিস্তানের হাজার হাজার বর্গ কিলোমিটার জমি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। আমরা বিজয়ী অবস্থানে ছিলাম। যদি আরেকটু দূরদর্শিতা বা ইচ্ছা থাকত, তাহলে আমরা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ফিরিয়ে নিতে পারতাম। এটাই ছিল সেই মুহূর্ত — আর সেটা নষ্ট করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, এত কিছু আলোচনার টেবিলে থাকার পরও, তারা করতারপুর সাহেবকেও ফিরিয়ে আনতে পারল না! ১৯৭৪ সালে, ভারত শ্রীলঙ্কাকে কাচ্চাথিভু দ্বীপটি এমনিতেই উপহার দিয়ে দিল। আজও, আমাদের মৎস্যজীবী মানুষেরা এর কারণে দুর্ভোগ পোহায়। তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামিলনাড়ুর মৎস্যজীবী মানুষেরা কী এমন অপরাধ করেছিল যে আপনারা তাদের অধিকার কেড়ে নিলেন এবং জমিটি দিয়ে দিলেন? কয়েক দশক ধরে, কংগ্রেস সিয়াচেন থেকে সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহার করার চিন্তাভাবনা নিয়ে খেলা করেছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যদি দেশ ২০১৪ সালে তাদের একটি সুযোগ দিত, তাহলে সিয়াচেন আজ আমাদের সঙ্গে থাকত না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এখন, সেই একই কংগ্রেসের লোকেরা আমাদের কূটনৈতিক জ্ঞান দিতে চায়? আমাকে তাদের নিজেদের কূটনীতির কথা মনে করিয়ে দিতে দিন। ২৬/১১ মুম্বাই হামলার মতো একটি বিশাল সন্ত্রাসবাদী হামলার পরেও, পাকিস্তানের প্রতি তাদের ভালোবাসা শেষ করতে পারেনি। হামলার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই, বিদেশি চাপে, কংগ্রেস সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু করেছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
২৬/১১ এর ভয়ংকর হামলা হওয়ার পরেও , কংগ্রেস সরকার একজনও পাকিস্তানি কূটনীতিককে বহিষ্কার করেনি। সেটা তো বাদই দিন — তারা একটিও ভিসা বাতিল করতে পারেনি। যখন পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদী হামলা চলছিল, তখনো ইউপিএ সরকার পাকিস্তানকে “মোস্ট ফেভারড নেশন” হিসেবে রেখেছিল। তারা সেই মর্যাদা কখনও বাতিল করেনি। একদিকে, দেশ মুম্বাইয়ের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছিল, আর অন্যদিকে, কংগ্রেস পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্যে মনোযোগ দিচ্ছিল। যখন পাকিস্তান আমাদের মাটিতে রক্ত ঝরাতে সন্ত্রাসবাদী পাঠাচ্ছিল, তখন কংগ্রেস বন্ধুত্বের আশায় "শান্তি কবিতা সমাবেশ" — মুশায়রা — আয়োজন করতে ব্যস্ত ছিল। আমরা সন্ত্রাস এবং ভুল জায়গায় করা শান্তির প্রচেষ্টার সেই একতরফা আলোচনা বন্ধ করেছি। আমরা পাকিস্তানের এমএফএন মর্যাদা বাতিল করেছি, ভিসা বাতিল করেছি এবং আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
ভারতের স্বার্থ বন্ধক রাখা কংগ্রেস দলের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো সিন্ধু জল চুক্তি। কে সিন্ধু জল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন? সেই নেহেরুজি। আর বিষয়টি কী নিয়ে ছিল? এটি সেই নদীগুলো নিয়ে ছিল যা ভারত থেকে উৎপন্ন হয়েছে, আমাদের নিজস্ব নদীর জল। এই নদীগুলো হাজার হাজার বছর ধরে ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। তারা ভারতের জীবনশক্তি এবং ভারতকে সমৃদ্ধ ও উর্বর করতে প্রচুর অবদান রেখেছে। সিন্ধু নদী, যা শত শত বছর ধরে ভারতের পরিচয় ছিল — ভারত এই নামে পরিচিত ছিল — কিন্তু নেহেরুজি এবং কংগ্রেস সিন্ধু ও ঝিলাম নদী সম্পর্কিত বিরোধটি কার হাতে তুলে দিয়েছিলেন? বিশ্বব্যাংকের হাতে। তারা বিশ্বব্যাংককে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিলেন কী করা উচিত — যে নদীগুলো আমাদের, জলও আমাদের। সিন্ধু জলচুক্তি ছিল ভারতের পরিচয় ও আত্মসম্মানের সঙ্গে সরাসরি এবং গুরুতর বিশ্বাসঘাতকতা।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আজকের যুবসমাজ যখন এই কথাগুলো শোনে, তখন তারাও নিশ্চয়ই অবাক হয় যে এমন লোকেরা আমাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। কৌশলগতভাবে নেহেরুজি আর কী করেছিলেন? যে জল, যে নদীগুলি ভারত থেকে প্রবাহিত হত — তিনি সেই জলের ৮০% পাকিস্তানকে দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলেন। আর ভারতের মতো এই বিশাল দেশের জন্য মাত্র ২০% জল অবশিষ্ট ছিল। কেউ আমাকে দয়া করে বোঝান — এটা কী ধরনের জ্ঞান ছিল? এতে কোন জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হচ্ছিল? এটা কী ধরনের কূটনীতি ছিল? তারা দেশকে কী অবস্থায় রেখে গিয়েছিল? এত বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশ, যার নিজস্ব ভূমি থেকে নদীর উৎপত্তি — আর আমাদের জন্য মাত্র ২০% জল? এবং ৮০% জল সেই দেশটিকে দেওয়া হয়েছিল, যারা ভারতকে প্রকাশ্যে শত্রু বলে ঘোষণা করে, বারবার ভারতকে তার শত্রু বলে। আর সেই জলের উপর কার বৈধ অধিকার ছিল? আমাদের দেশের কৃষক, আমাদের নাগরিক — আমাদের পাঞ্জাব, আমাদের জম্মু ও কাশ্মীর। এই একটি সিদ্ধান্তের কারণে দেশের একটি বিশাল অংশ জল সংকটে পড়েছিল। এমনকি রাজ্যগুলোর মধ্যেও জল নিয়ে সংঘাত ও প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। পাকিস্তান এমন কিছুর সুবিধা ভোগ করতে থাকল যা আইনত আমাদেরই ছিল। আর এই লোকেরা বিশ্বকে কূটনীতির জ্ঞান দিতে থাকল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যদি এই চুক্তি স্বাক্ষরিত না হত, তাহলে পশ্চিমের নদীগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প গড়ে তোলা যেত। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান এবং দিল্লির কৃষকরা প্রচুর পরিমাণে জল পেতেন। পানীয় জল পাওয়ার কোনো সমস্যাই থাকত না। ভারত শিল্প উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারত। শুধু তাই নয়, নেহেরুজি পরে পাকিস্তানকে খাল তৈরি করার জন্য কোটি কোটি টাকাও দিয়েছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আরও বেশি অবাক করার মতো এবং যা দেশেকে বিস্মিত করবে — তা হলো এই জিনিসগুলি গোপন এবং দমন করে রাখা হয়েছিল। যখনই একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তার পরিষ্কারের জন্য একটি অন্তর্নির্মিত ব্যবস্থা থাকে — পলি অপসারণ — কারণ পলি, আগাছা এবং অন্যান্য আবর্জনা জমে বাঁধের ধারণক্ষমতা হ্রাস করে। তাই সাধারণত একটি পলি অপসারণ ব্যবস্থা সমন্বিত করা হয়। কিন্তু নেহেরুজি, পাকিস্তানের চাপে, এই শর্তটি মেনে নিয়েছিলেন যে বাঁধের জমে থাকা পলি এবং বর্জ্য অপসারণ করা যাবে না। পলি অপসারণের অনুমতি ছিল না। বাঁধ আমাদের জমিতে, জল আমাদের, কিন্তু সিদ্ধান্তটি পাকিস্তানের উপর নির্ভরশীল। আপনি কি বিশ্বাস করতে পারেন যে পলি অপসারণের অনুমতি নেই?শুধু তাই নয় — যখন আমি এটি বিস্তারিতভাবে পড়লাম, তখন আমি দেখতে পেলাম যে একটি বাঁধের পলি অপসারণের জন্য ব্যবহৃত গেটটি আসলে ঝালাই করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল যাতে কেউ ভুল করেও এটি খুলতে এবং পলি অপসারণ করতে না পারে। পাকিস্তান নেহেরুজিকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিল যে পাকিস্তানের অনুমতি ছাড়া ভারত তার বাঁধগুলো পরিষ্কার (পলি অপসারণ) করবে না। এই চুক্তিটি দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ছিল এবং শেষ পর্যন্ত নেহেরুজিকে নিজেই এই ভুল স্বীকার করতে হয়েছিল। নিরঞ্জন দাস গুলাটি নামে একজন ভদ্রলোক এই চুক্তির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি একটি বই লিখেছিলেন যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেহেরু তাকে বলেছিলেন,
"গুলাটি, আমি আশা করেছিলাম এই চুক্তিটি অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পথ খুলে দেবে, কিন্তু আমরা এখনও যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়েছি।” এটাই নেহেরুজি বলেছিলেন। নেহেরুজি কেবল তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখতে পেয়েছিলেন। সেই কারণেই তিনি বলেছিলেন যে আমরা যেখানে ছিলাম সেখানেই রয়েছি। কিন্তু সত্যিটা হলো, এই চুক্তির কারণে দেশ উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে গিয়েছিল। দেশের একটি বিশাল ক্ষতি হয়েছিল, আমাদের কৃষকদের ক্ষতি হয়েছিল, আমাদের কৃষির ক্ষতি হয়েছিল। নেহেরুজি কেবল এমন ধরনের কূটনীতি বুঝতেন যেখানে কৃষকের কোনো স্থান ছিল না, কোনো গুরুত্ব ছিল না। এই অবস্থায় তিনি আমাদের রেখে গেছেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। কিন্তু এর পরেও, কংগ্রেস সরকার সিন্ধু জল চুক্তিটি কখনও পুনর্বিবেচনা করেনি, বা নেহেরুজির করা গুরুতর ভুলটি সংশোধন করেনি।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
কিন্তু এখন, ভারত সেই পুরনো ভুলটি সংশোধন করেছে এবং একটি দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেহেরুজির করা সেই বিশাল ভুল — সিন্ধু জল চুক্তি — জাতীয় স্বার্থে এবং আমাদের কৃষকদের স্বার্থে স্থগিত করা হয়েছে। দেশের মঙ্গলের বিরুদ্ধে থাকা এই চুক্তিটি তার বর্তমান রূপে চলতে পারে না। ভারত এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে : রক্ত এবং জল একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এখানে বসে থাকা সদস্যরা সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় ছিলেন, যখন তাদের দেশ শাসনের সুযোগ ছিল, তখন দেশের যে অবস্থা ছিল — তা দেশের মানুষ আজও ভোলেনি। ২০১৪ সালের আগে দেশে যে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ ছিল — মানুষ আজও তা মনে করলে শিউরে ওঠে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
আমরা সবাই এটা মনে রাখি — যদিও নতুন প্রজন্ম হয়তো জানে না — কিন্তু আমরা খুব ভালোভাবে মনে রাখি। সর্বত্র ঘোষণা থাকত: আপনি রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, বিমানবন্দর, বাজার, মন্দির, বা যেকোনো ভিড় জায়গায় যান না কেন, ঘোষণা একই থাকত — “যদি অযত্নে পড়ে থাকা কোনো বস্তু দেখতে পান, সেটি স্পর্শ করবেন না, অবিলম্বে পুলিশকে জানান। এটি বোমা হতে পারে।” ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমরা এটাই শুনতে থাকতাম। এটাই ছিল দেশের অবস্থা। দেশের প্রতিটি কোণে মনে হত যেন প্রতিটি জায়গায় বোমা পাতা আছে, এবং নাগরিকদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তাদের হাত তুলে নিয়েছিল এবং কার্যত জনসাধারণের ঘোষণার মাধ্যমে সে কথা জানিয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
কংগ্রেসের দুর্বল সরকারের কারণে দেশ অনেক জীবন হারিয়েছে। আমাদের নিজেদের মানুষকে হারাতে হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
সন্ত্রাসবাদ দমন করা যেত। আমাদের সরকার গত ১১ বছরে এটি প্রমাণ করেছে — এর শক্ত প্রমাণ আছে। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে যে পরিমাণ সন্ত্রাসবাদ হামলার ঘটনা ঘটত, তার সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমেছে। সেই কারণেই দেশ এটাও জানতে চায়: যদি আমাদের সরকার সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে কংগ্রেস সরকারের কী এমন বাধ্যবাধকতা ছিল যে তারা সন্ত্রাসবাদকে বিনা নিয়ন্ত্রণে বাড়তে দিয়েছিল?
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
যদি কংগ্রেসের শাসনকালে সন্ত্রাসবাদ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, তবে এর একটি প্রধান কারণ ছিল তাদের তোষণের রাজনীতি, তাদের ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। যখন দিল্লিতে বাটলা হাউস এনকাউন্টার হয়েছিল, তখন একজন প্রবীণ কংগ্রেস নেত্রীর চোখে জল এসে গিয়েছিল — কারণ সন্ত্রাসবাদীরা নিহত হয়েছিল। এবং ভোট পাওয়ার জন্য এই বার্তাটি তখন দেশের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
২০০১ সালে, যখন দেশের সংসদে হামলা হয়েছিল, তখন একজন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা আফজাল গুরুকে সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
ভয়াবহ ২৬/১১ মুম্বাই সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছিল। একজন পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী জীবিত ধরা পড়েছিল। পাকিস্তানের নিজেদের মিডিয়া, এমনকি বিশ্বও স্বীকার করেছিল যে সেই হামলাকারীর আড়ালে পাকিস্তানিই ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের এমন একটি গুরুতর সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জবাবে কংগ্রেস কী করছিল? তারা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য কী খেলা খেলছিল? পাকিস্তানকে দায়ী করার পরিবর্তে, কংগ্রেস পার্টি এটিকে "গেরুয়া সন্ত্রাসবাদ" তকমা দিতে ব্যস্ত ছিল। কংগ্রেস বিশ্বজুড়ে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের তত্ত্ব বিক্রি করতে ব্যস্ত ছিল। একজন কংগ্রেস নেতা একজন শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিককে এমনকি বলেছিলেন যে ভারতে হিন্দু গোষ্ঠীগুলো লস্কর-ই-তৈবার চেয়েও বড় হুমকি। এটা সত্যিই বলা হয়েছিল। তোষণের স্বার্থে, কংগ্রেস বাবা সাহেব আম্বেদকর কর্তৃক রচিত ভারতের সংবিধানকে জম্মু ও কাশ্মীরে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। তারা এটিকে বাইরে রেখেছিল। কংগ্রেস বারবার তোষণ এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির বেদিতে জাতীয় নিরাপত্তাকে বলি দিয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
তোষণের স্বার্থেই কংগ্রেস সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত আইনগুলিকে দুর্বল করেছে। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ এই বিষয়ে এই কক্ষে বিস্তারিত বলেছেন, তাই আমি এর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এই অধিবেশনের শুরুতে, আমি আবেদন করেছিলাম এবং বলেছিলাম যে — দলীয় স্বার্থে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হলেও — জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে আমাদের মনকে একত্রিত হতে হবে। পহেলগামের ভয়াবহ ঘটনা গভীর ক্ষত তৈরি করেছে; এটি পুরো দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, আমরা অপারেশন সিঁদুর শুরু করেছিলাম এবং আমাদের সেনাবাহিনীর সাহসিকতা, আমাদের স্বনির্ভরতার প্রচারণার পাশাপাশি, দেশজুড়ে একটি "সিঁদুর আবেগ" তৈরি করেছে। আমরা এই সিঁদুর আবেগ আবারও দেখতে পেয়েছি যখন আমাদের প্রতিনিধি দলগুলি বিশ্বজুড়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিল। আমি সেই সব সহকর্মীকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। আপনারা ভারতের অবস্থানকে বিশ্বের সামনে দৃঢ়তার সঙ্গে নির্দ্ধিধায় তুলে ধরেছেন। কিন্তু আমি দুঃখিত — এবং বিস্মিত — যে কিছু মানুষ, যারা নিজেদেরকে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মনে করেন, তারা বিচলিত হয়েছিলেন যে ভারতের অবস্থান বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা হয়েছে। মনে হচ্ছে কিছু নেতাকে এই কক্ষে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়েছে।
মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়,
এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার সময় এসেছে। আমার মনে কয়েকটি পঙক্তি আসছে, এবং আমি সেগুলির মাধ্যমে আমার অনুভূতি প্রকাশ করতে চাই :
करो चर्चा और इतनी करो, करो चर्चा और इतनी करो,
की दुश्मन दहशत से दहल उठे, दुश्मन दहशत से दहल उठे,
रहे ध्यान बस इतना ही, रहे ध्यान बस इतना ही,
मान सिंदूर और सेना का प्रश्नों में भी अटल रहे।
हमला मां भारती पर हुआ अगर, तो प्रचंड प्रहार करना होगा,
दुश्मन जहां भी बैठा हो, हमें भारत के लिए ही जीना होगा।
(আলোচনা করুন—এবং এত আলোচনা করুন,
যে শত্রু ভয়ে কেঁপে ওঠে,
একটি মাত্র কথা মনে রাখুন —
যে সিঁদুরের সম্মান এবং আমাদের সেনাবাহিনীর বীরত্ব, প্রশ্নের মধ্যেও যেন অবিচল থাকে।
যদি ভারতমাতা আক্রান্ত হন, তবে তার কঠোর প্রতিশোধ নিতে হবে,
শত্রু যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, আমাদের কেবল ভারতের জন্য বাঁচতে হবে।)
আমি আমার কংগ্রেস সহকর্মীদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি : একটি পরিবারের চাপে পাকিস্তানকে ক্লিন চিট দেওয়া বন্ধ করুন। ভারতের বিজয়ের এই মুহূর্তকে জাতীয় উপহাসের মুহূর্তে পরিণত করবেন না। কংগ্রেসকে তার ভুল সংশোধন করতে হবে। আজ, আমি এই কক্ষে এটা সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে বলতে চাই: ভারত এখন সন্ত্রাসবাদীদের তাদের আঁতুড়ঘরেই নির্মূল করবে। আমরা পাকিস্তানকে ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে খেলতে দেব না। অপারেশন সিঁদুর শেষ হয়ে যায়নি — এটি চলছে। এটি পাকিস্তানের জন্যও একটি সতর্কতা: যতক্ষণ না তারা ভারতের বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসের পথ বন্ধ করে, ততক্ষণ ভারত সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে থাকবে। ভারতের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ হবে — এটি আমাদের গভীর সিদ্ধান্ত। এই মনোভাব নিয়ে, আমি আবারও একটি অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য সমস্ত সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই। মাননীয় অধ্যক্ষ মহাশয়, আমি ভারতের অবস্থান তুলে ধরেছি, এবং ভারতের জনগণের আবেগকে প্রকাশ করেছি। আমি আবারও এই কক্ষে দাঁড়িয়ে কাছে আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
SC/AS…
(Release ID: 2160905)
Visitor Counter : 14
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam