প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
নিউজ ১৮ রাইজিং ভারত শিখর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মূল পাঠ
Posted On:
08 APR 2025 11:20PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৮ এপ্রিল ২০২৫
নমস্কার!
আপনারা আমাকে এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশ ও বিশ্বের সম্মানিত অতিথিদের সঙ্গে, আপনাদের দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন, আমি নেটওয়ার্ক ১৮-কে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি আনন্দিত যে, আপনারা এই বছরের সম্মেলনকে ভারতের যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এই বছরের শুরুতে, বিবেকানন্দ জয়ন্তীর দিনে, এখানেই ভারত মণ্ডপমে "বিকশিত ভারত ইয়ং লিডার্স ডায়ালগ" অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন আমি যুবকদের চোখে দেখেছিলাম স্বপ্ন, সংকল্প এবং ভারতকে বিকশিত করার এক অদম্য জেদ। ২০৪৭ পর্যন্ত আমরা ভারতকে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই, যে রূপরেখা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি, তার প্রতিটি ধাপ যদি মন্থন করা হয়, তবে অবশ্যই অমৃত নিঃসৃত হবে। আর সেই অমৃতই অমৃতকালকে শক্তি দেবে, দিশা দেবে এবং ভারতকে গতি দেবে। আমি আপনাদের এই সামিটের জন্য অভিনন্দন জানাই, শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ বিশ্বের দৃষ্টি ভারতের দিকে এবং বিশ্বের আশা-আকাঙ্ক্ষাও ভারতের কাছেই। কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা বিশ্বের একাদশতম বৃহৎ অর্থনীতি থেকে পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছি। অল্প সময়ে বহু আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা এসেছিল, কিন্তু ভারত থেমে যায়নি, দ্বিগুণ গতিতে এগিয়েছে। এক দশকে আমরা আমাদের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ করেছি। যারা ভাবত ভারত ধীরে-সুস্থে এগোবে, তারা আজ দ্রুত ও নির্ভীক ভারতকে প্রত্যক্ষ করছে। আর তাতে কোনো সন্দেহ নেই যে শীঘ্রই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে। এই নজিরবিহীন বৃদ্ধির চালিকাশক্তি কারা? ভারতীয় যুবসমাজ, তাদের আশা এবং আকাঙ্ক্ষা। যুব ভারতের এই আকাঙ্ক্ষাগুলো পূরণ করাই আজ দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
বন্ধুগণ,
আজ ৮ এপ্রিল। কাল-পরশুই ২০২৫ সালের প্রথম ১০০ দিন পূর্ণ হবে। এই প্রথম ১০০ দিনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যেই যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সুস্পষ্ট।
বন্ধুগণ,
এই ১০০ দিনে আমরা শুধু সিদ্ধান্তই নিইনি, ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়েছি। আমাদের নীতি সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করেছে। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর শূন্য কর – এর সর্বাধিক উপকার পাচ্ছেন তরুণ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তারা। মেডিকেলে ১০ হাজার নতুন আসন, আইআইটিতে ৬,৫০০ নতুন আসন – অর্থাৎ শিক্ষার সম্প্রসারণ। ৫০ হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব – এখন দেশের প্রতিটি প্রান্তে উদ্ভাবনের জোয়ার। এআই ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য উৎকর্ষ কেন্দ্র – যুবকদের ভবিষ্যত গড়ে দেবে। ১০ হাজার নতুন প্রধানমন্ত্রী রিসার্চ ফেলোশিপ – চিন্তা থেকে বাস্তবতার যাত্রা আরও সহজ হবে। যেমন মহাকাশ ক্ষেত্র উন্মুক্ত হয়েছে, তেমনই পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রেরও অগ্রগতি হয়েছে। এখন উদ্ভাবনের কোনো সীমা নেই। গিগ অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত তরুণদের প্রথমবারের মতো সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা দেওয়া হবে। আগে যারা অন্যের থেকে পিছিয়ে ছিলেন, তারাই এখন নীতির কেন্দ্রে। তাছাড়া তপশিলী জাতি, উপজাতি এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য ২ কোটি টাকার মেয়াদী লোন। এই সমস্ত সিদ্ধান্তের উপকার সরাসরি ভারতের যুবসমাজের কাছে পৌঁছে যাবে। কারণ যুবশক্তি এগোলেই, ভারত এগোবে।
বন্ধুগণ,
এই ১০০ দিনে ভারত প্রমাণ করেছে, ভারত থামবে না, ভারত ঝুঁকবে না, ভারত পিছিয়ে থাকবে না। এই ১০০ দিনে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়েছে, যারা উপগ্রহ ডকিং ও আনডকিং প্রযুক্তি অর্জন করেছে। ভারত সফলভাবে সেমি-ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন পরীক্ষা করেছে। ভারত ১০০ গিগাওয়াট সৌরশক্তির ক্ষমতা অর্জন করেছে। "ন্যাশনাল ক্রিটিকাল মিনারেল মিশন" শুরু হয়েছে। কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের জন্য সারে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা হয়েছে – অর্থাৎ অন্নদাতাদের দুশ্চিন্তা সরকারের অগ্রাধিকার। ছত্তিশগড়ে ৩ লক্ষ পরিব
যোজনার অধীনে ৬৫ লক্ষেরও বেশি সম্পত্তি কার্ড বিতরণ হয়েছে এবং এই ১০০ দিনেই বিশ্বের অন্যতম উঁচু সুড়ঙ্গ – সোনমার্গ টানেল জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে। আইএনএস সুরাত, আইএনএস নীলগিরি, আইএনএস বাঘশির – ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তিতে নতুন রত্ন যোগ হয়েছে। সেনাবাহিনীর জন্য ভারতে তৈরি লাইট কমব্যাট হেলিকপ্টার ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং ওয়াকফ আইন সংশোধনী বিল পাস হয়েছে যা সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য এক বড় পদক্ষেপ। এই ১০০ দিন ১০০ সংকল্প পূরণের দিন।
বন্ধুগণ,
অগ্রগতির এই মন্ত্রই উন্নত ভারতের পিছনের আসল শক্তি। আপনারা জানেন, মাত্র দুই দিন আগে আমি রামেশ্বরমে ছিলাম। সেখানে ঐতিহাসিক পাম্বান সেতুর উদ্বোধনের সুযোগ পেয়েছিলাম। প্রায় সওয়া একশো বছর আগে ইংরেজরা সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করেছিল। সেই সেতু ইতিহাসের সাক্ষী, একবার সুনামি ও ঘূর্ণিঝড় সেই সেতুকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল। বহু বছর ধরে দেশ অপেক্ষা করেছে, মানুষ দাবি জানিয়ে গেছে, কিন্তু আগের সরকারের ঘুম ভাঙেনি। আমাদের সরকার আসার পর নতুন পাম্বান সেতুর কাজ শুরু হয়। আর এখন দেশ পেয়েছে তার প্রথম সমুদ্রের মধ্যবর্তী "ভার্টিক্যাল লিফট" রেল সেতু।
বন্ধুগণ,
প্রকল্পকে ঝুলিয়ে রাখলে দেশ এগোয় না। দেশ এগোয় অগ্রগতির মাধ্যমে, দ্রুত কাজ শেষ করার মাধ্যমে। আমি আরও কিছু উদাহরণ দেব। যেমন অসমের বোগিবিল ব্রিজ। ১৯৯৭ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবেগৌড়া এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। বাজপেয়ী সরকার এল, কাজ শুরু হলো। তারপর কংগ্রেস সরকার আসায় কাজ আবার থেমে গেল। অরুণাচল ও অসমের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোগান্তিতে রইলেন, কিন্তু সরকারের কোনো হেলদোল হয়নি। ২০১৪ সালে আপনারা যখন আমাদের সেবা করার সুযোগ দিলেন, তখন এই প্রকল্প ফের শুরু হলো। আর মাত্র ৪ বছরের মধ্যে, ২০১৮-তেই সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেল। এরকমই কেরালার কোল্লম বাইপাস সড়ক প্রকল্প। ১৯৭২ সাল থেকে থেমে ছিল! ভেবে দেখুন, ৫০ বছর! এলডিএফ হোক বা ইউডিএফ, কেউ ৫০ বছরে কিছু করেনি। আমরা সরকারে এসে ৫ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করেছি।
সাথীগণ,
নবি মুম্বাই বিমানবন্দর নিয়েও ১৯৯৭ সালে আলোচনা শুরু হয়েছিল। ২০০৭-এ অনুমোদন পেলেও কংগ্রেস সরকার কোনো কাজ করেনি। আমাদের সরকার দ্রুত এই প্রকল্প এগিয়েছে। শীঘ্রই নবি মুম্বাই বিমানবন্দর থেকে বাণিজ্যিক উড়ানও শুরু হবে।
সাথীগণ,
এর মধ্যে সংসদ ভবনও আসবে, ভারত মণ্ডপমও আসবে।
সাথীগণ,
আজ ৮ই এপ্রিলও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ মুদ্রা যোজনার ১০ বছর পূর্ণ হলো। এখানে উপস্থিত যুবকরা নিশ্চয়ই তাঁদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনেছেন, আগে কোনো গ্যারান্টি ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত খোলা যেত না। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য গ্যারান্টি চাই, কারও সহায়তা চাই। ব্যাংক ঋণ সাধারণ পরিবারের জন্য ছিল কেবল স্বপ্ন। গরিব পরিবার, এসসি/এসটি, ওবিসি, ভূমিহীন শ্রমিক, নারীরা— যাদের কাছে বন্ধক রাখার মতো কিছুই ছিল না, তাদের স্বপ্নের কি কোনো দাম ছিল না? তাদের পরিশ্রমের কি কোনো মূল্য ছিল না? আমাদের মুদ্রা যোজনা তাদের স্বপ্নকে পথ দেখিয়েছে, যুবকদের নতুন দিশা দেখিয়েছে। গত ১০ বছরে মুদ্রা যোজনার অধীনে ৫২ কোটি টাকার ঋণ গ্যারান্টি ছাড়াই দেওয়া হয়েছে— ৫২ কোটি টাকা! আর শুধু পরিমাণ নয়, অগ্রগতি-ও বিস্ময়কর। যতক্ষণে একটি সিগন্যাল লাল থেকে সবুজ হয়, ততক্ষণে ১০০ মুদ্রা ঋণ অনুমোদিত হয়ে যায়। আপনার দাঁত মাজা শেষ হতে না হতেই ২০০ ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়। যতক্ষণে আপনি রেডিওতে একটি গান শোনা শেষ করেন, ততক্ষণে ৪০০ ঋণ অনুমোদিত হয়ে যায়। আজকাল ইনস্ট্যান্ট ডেলিভারি অ্যাপের মতো, যতক্ষণে আপনার অর্ডার আসে, ততক্ষণে ১,০০০ মুদ্রা ঋণ মঞ্জুর হয়ে যায়। যতক্ষণে আপনি ওটিটিতে একটি পর্ব শেষ করেন, ততক্ষণে মুদ্রা যোজনা ৫,০০০ ব্যবসার ভিত্তি গড়ে দেয়।
সাথীগণ,
মুদ্রা যোজনা গ্যারান্টি নেয়নি, ভরসা দিয়েছে। জেনে আরও ভালো লাগবে, এই যোজনার কারণে ১১ কোটি মানুষ প্রথমবার নিজের কাজের জন্য ঋণ পেয়েছেন। অর্থাৎ তারা প্রথমবার উদ্যোক্তা হয়েছেন। ১০ বছরে ১১ কোটি নতুন স্বপ্ন ডানা মেলেছে। আপনারা জানেন, মুদ্রা থেকে কত টাকা গ্রাম ও ছোট শহরে পৌঁছেছে? প্রায় ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা! এতটাই, যা অনেক দেশের জিডিপি থেকেও বেশি।
সাথীগণ,
এমনই উদাহরণ প্রগতিশীল জেলাগুলির। আগের সরকার শতাধিক জেলাকে পিছিয়ে পড়া ঘোষণা করে ফেলে রেখেছিল। বহু জেলা ছিল উত্তর-পূর্বে ও আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে। যেখানে সেরা সরকারী কর্মকর্তাদের পাঠানো উচিত ছিল, সেখানে শাস্তিমূলক পোস্টিং দেওয়া হতো। এটাই ছিল পুরনো মানসিকতা— ‘পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো পিছিয়েই থাকুক’। আমরা তা বদলেছি, এই জেলাগুলিকে প্রগতিশীল ঘোষণা করেছি। প্রাশাসনিক স্তরে লক্ষ্য করেছি, প্রধান প্রকল্পগুলি মিশন মোডে প্রয়োগ করেছি, পরিসংখ্যান ধরে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছি। আজ অনেক প্রগতিশীল জেলা রাজ্যের সূচক অতিক্রম করেছে, কেউ কেউ জাতীয় সূচকেরও ওপরে চলে গেছে। এর সবচেয়ে বড় সুফল যুবকদের মিলেছে। এখন তারা বলে— আমরা পারি, আমরাও এগোতে পারি। আজ বিশ্বের বহু স্বনামধন্য শিক্ষাঙ্গণ এই কর্মসূচির প্রশংসা করছে। এই সাফল্য থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা ৫০০ প্রগতিশীল ব্লক নিয়ে কাজ করছি। যখন প্রকৃত বৃদ্ধি আসে, তখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং সুস্থায়ী হয়।
সাথীগণ,
কোনো দেশের দ্রুত উন্নতির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা অপরিহার্য। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কল্পনা করেছিলেন— চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির। কিন্তু দশকের পর দশক ভারত ভয়ের, সন্ত্রাসের পরিবেশে ডুবে গিয়েছিল। এর সবচেয়ে বড় ক্ষতি যুবকরাই ভোগ করেছে। হিংসা, বিচ্ছিন্নতা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। জম্মু-কাশ্মীরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বোমা ও গোলাগুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আগের শাসকরা সাহস দেখাতে পারেনি। আমাদের সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও সংবেদনশীলতার কারণে আজ জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি বদলেছে। আজ সেখানে যুবকরা উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।
সাথীগণ,
নকশালবাদ দেখুন। একসময় ১২৫-এরও বেশি জেলা নকশাল-আক্রান্ত ছিল। অসংখ্য পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা তাদের মূলস্রোতে ফেরাতে কাজ করেছি। গত ১০ বছরে ৮,০০০-রও বেশি নকশাল আত্মসমর্পণ করেছে। আজ নকশালপ্রভাবিত জেলা ২০-রও কমে নেমে এসেছে। উত্তর-পূর্বে দশকের পর দশক সহিংসতা চলেছে। আমাদের সরকার গত ১০ বছরে ১০টি বড় শান্তি চুক্তি করেছে। ১০,০০০-রও বেশি যুবক অস্ত্র ছেড়ে উন্নয়নের স্রোতে ফিরেছে। সাফল্য শুধু এটাই নয় যে হাজার হাজার যুবক অস্ত্র ছাড়ল, বরং আরো হাজার হাজার যুবকের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাঁচল।
সাথীগণ,
দশকের পর দশক জাতীয় সমস্যাকে চিহ্নিত না করে রাজনৈতিক মতাদর্শের নিচে চাপা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একুশ শতকের প্রজন্মর উপরে বিশ শতকের ভুলের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। ভারতের উন্নয়নে তুষ্টিকরণের রাজনীতি বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। সম্প্রতি সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধন হয়েছে। আগের আইনের মূলে ছিল ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি। স্বাধীনতার সময়ই এর বীজ বপন করা হয়েছিল। স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে বিভাজন মেনে নিতে হয়েছিল— এমন কত দেশ আছে? এটা ঘটেছিল কারণ তখন জাতির স্বার্থের চেয়ে ক্ষমতার মোহ বড় হয়ে উঠেছিল।
সাথীগণ,
তুষ্টিকরণে কংগ্রেস পেল ক্ষমতা, কিছু নেতা পেল প্রভাব ও সম্পদ। কিন্তু সাধারণ মুসলমান পেল কী? গরিব মুসলমান পেল অবহেলা, পেল অশিক্ষা, পেল বেকারত্ব। মুসলিম নারীরা পেল শাহ বানোর মতো অবিচার, যেখানে তাদের সাংবিধানিক অধিকার কাঁটাতারে ছিন্নভিন্ন হলো। তাদের ওপর চাপানো হলো চুপ থাকার নির্দেশ, প্রশ্ন না করার চাপ। অথচ মৌলবাদীরা পেল নারীর অধিকার দমন করার অনুমতিপত্র।
সাথীগণ,
তুষ্টিকরণ ভারতের সামাজিক ন্যায়ের মূল ভাবনার বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে ওয়াকফ আইনের সংশোধন হয়েছিল মুসলিম মৌলবাদী ও ভূমি মাফিয়াদের খুশি করার জন্য। সংবিধান বিরুদ্ধ আইন তৈরি করে গ্রাম, ক্ষেত, মন্দির, গির্জা, গুরুদ্বার, সরকারি জমি সব কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হল। শুধুমাত্র একটি নোটিশ এলে মানুষরে নিজের জমি বাঁচাতে দৌড়াতে হত। যে আইন ন্যায় দেওয়ার জন্য তা হয়ে উঠেছিল ভয়ের কারণ।
সাথীগণ,
আমি সংসদকে অভিনন্দন জানাই— সর্বসমাজের এবং মুসলিম সমাজের স্বার্থে এমন এক চমৎকার আইন পাস করার জন্য। এখন ওয়াকফের পবিত্র নিয়মও সুরক্ষিত থাকল, আবার গরিব-পিছিয়ে পড়া মুসলমান, নারী-শিশুর অধিকারও সুরক্ষিত থাকল। ওয়াকফ বিল নিয়ে সংসদে ১৬ ঘণ্টা আলোচনা হলো, জেপিসিতে ৩৮টি বৈঠক, ১২৮ ঘণ্টা বিতর্ক, প্রায় এক কোটি অনলাইন প্রস্তাব। এটাই প্রমাণ করে— আমাদের গণতন্ত্র এখন সংসদের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
সাথীগণ,
আজ বিশ্ব প্রযুক্তি ও এআই-এর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আরও জরুরি হয়ে উঠেছে— শিল্প, সঙ্গীত ও সংস্কৃতির মতো দিকগুলিতে মনোযোগ দেওয়ার। কারণ আমরা যন্ত্রমানব তৈরি করতে চাই না, মানুষ তৈরি করতে চাই। বিনোদন আজ বিশ্বের বৃহত্তম শিল্পগুলির একটি, আগামীতেও আরও প্রসারিত হবে। তাই আমরা ওয়েভস (World Audio-Visual and Entertainment Summit) আয়োজন করেছি। আগামী মাসে মুম্বাইতে এর বিশাল আয়োজন হবে। এটি শিল্পী ও স্রষ্টাদের জন্য একটি বিশ্বমানের মঞ্চ হবে। ভারতে তৈরি করার মন্ত্র নিয়ে আমরা এই শিল্পকে নতুন স্তরে নিয়ে যাচ্ছি। WAVES ভারতীয় শিল্পীদের বিশ্বমুখী করবে, আবার বিদেশি শিল্পীদেরও ভারতে নিয়ে আসবে। আমি নেটওয়ার্ক ১৮-কে বলব এটি জনপ্রিয় করার জন্য এগিয়ে আসতে। যুবকদের বলব, এই আন্দোলনের অংশ হোন। ওয়েভস-এর তরঙ্গ ঘরে ঘরে, মনে মনে পৌঁছানো উচিত।
সাথীগণ,
নেটওয়ার্ক ১৮-এর এই সম্মেলন দেশের যুবকদের সৃজনশীলতা, চিন্তা ও সংকল্পশক্তিকে তুলে ধরেছে— এটি প্রশংসনীয়। আপনারা যুবকদের অংশীদার করেছেন, সমস্যার সমাধান খুঁজতে সুযোগ দিয়েছেন, আর শুধু শ্রোতা নয়, পরিবর্তনেরও অংশীদার করেছেন। এখন আমি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে আহ্বান জানাই— এই সম্মেলনের ভাবনাগুলিকে লিপিবদ্ধ করুন, গবেষণা করুন, নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছে দিন।
আপনাদের উৎসাহ, আপনাদের ভাবনা, আপনাদের অংশগ্রহণই ভারতের উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার শক্তি।
আমি আবারও এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত সব সাথীকে, বিশেষত আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
অনেক ধন্যবাদ!
SC/PK.
(Release ID: 2160006)
Visitor Counter : 5
Read this release in:
Assamese
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam