রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
৭৯তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্-সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মুর ভাষণ
Posted On:
14 AUG 2025 7:40PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৪ আগস্ট ২০২৫
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্-সন্ধ্যায় আপনাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। স্বাধীনতা দিবস এবং সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপনে ভারতের প্রতিটি নাগরিক যে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সামিল হয়ে থাকেন, তা আমাদের সকলের কাছে অত্যন্ত গর্বের। এই দিনগুলি গর্বিত ভারতীয় হিসেবে আমাদের পরিচয়কে ফের মনে করায়।
আগস্টের ১৫ আমাদের সকলের স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল একটি তারিখ। দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলেন। নারী-পুরুষ, নবীন-প্রবীণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষ বিদেশি শাসনের অর্গল ছুঁড়ে ফেলার স্বপ্ন দেখে গেছেন। তাঁদের সংগ্রামের ভিত্তি ছিল প্রবল এক আশার উৎস। স্বাধীনতার পরেও এই বিষয়টি আমাদের অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করেছে। আগামীকাল ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকাকে অভিবাদন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্রদ্ধা জানাব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের – যাঁদের অবদান ৭৮ বছর আগে ১৫ আগস্ট ভারতকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।
স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার পর আমরা প্রাপ্তবয়স্কদের সর্বজনীন ভোটাধিকার সমৃদ্ধ একটি গণতন্ত্র হয়ে উঠেছি। অন্য কথায়, আমরা, ভারতের মানুষ, আমাদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার ও শক্তি তুলে নিয়েছি নিজেদের হাতে। এক্ষেত্রে লিঙ্গগত, ধর্মগত এবং অন্য কোনো ভেদাভেদ নেই। অন্য অনেক গণতান্ত্রিক দেশেই ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে সকলের অধিকার স্বীকৃত নয়। বহু বাধা সত্ত্বেও ভারতের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় সামিল হয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। এই সাফল্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অতি প্রাচীনকাল থেকে আমাদের আস্থাশীল থাকার সাক্ষ্য বহন করে। বিশ্বের প্রাচীনতম সাধারণতন্ত্র গড়ে উঠেছিল ভারতে। গণতন্ত্রের ধাত্রীভূমি হিসেবে ভারতের মর্যাদাপ্রাপ্তি সেজন্যই সম্পূর্ণভাবে যুক্তিযুক্ত। যখন আমরা সংবিধান রচনা করেছি, তখন তাতেও প্রতিফলিত হয়েছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধকে দৃঢ় করে তুলতে আমরা গড়ে তুলেছি গণতান্ত্রিক নানা প্রতিষ্ঠান। সংবিধান এবং গণতন্ত্রের স্থান আমাদের কাছে সবার ওপরে।
অতীতের দিকে তাকানোর সময় দেশভাগের যন্ত্রণা ভুলে যেতে পারি না আমরা। আজ আমরা বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস পালন করেছি। সেই অধ্যায় প্রত্যক্ষ করেছে চরমতম হিংসাকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন দেশভাগের জেরে। ইতিহাসে সেই ক্ষমাহীন বিচ্যুতির অধ্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা আজ স্মরণ করি।
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
আমাদের সংবিধান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে চারটি বিষয়কে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে – ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সমতা এবং সৌভ্রাতৃত্ব। আমাদের সভ্যতার ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত এই নীতিগুলি আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পুনরাবিষ্কার করেছি। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলির মধ্যে কেন্দ্রীয় স্থানে রয়েছে মানুষের মর্যাদার ধারণাটি। প্রতিটি মানুষ সমান এবং সমান মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষায় সকলেরই সমানাধিকার থাকা উচিত। যাবতীয় সুযোগের পরিসর সমানভাবে উন্মুক্ত থাকা দরকার সকলের সামনে। যাঁরা দীর্ঘদিন অবহেলিত, তাঁদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত।
এই বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৪৭ সালে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করেছি। দীর্ঘদিন বিদেশি শাসনে থাকা ভারত স্বাধীনতা লাভের সময় ছিল চরম দারিদ্র্যে দীর্ণ। কিন্তু, তারপরের ৭৮ বছরে আমরা সবক্ষেত্রেই অসাধারণ অগ্রগতি সম্ভব করে তুলেছি। স্বনির্ভর দেশ হয়ে ওঠার পথে দ্রুত এবং প্রত্যয়ী পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে ভারত।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য বিশেষভাবে প্রতিফলিত। গত অর্থবর্ষে ৬.৫ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি ভারতকে বড় দেশগুলির মধ্যে দ্রুততম বিকাশশীল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্বের অর্থনৈতিক চালচিত্র আশাব্যঞ্জক না হলেও, ভারতে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। রপ্তানি বাড়ছে। সবক’টি সূচকই দেশের অর্থনীতির সুস্বাস্থ্যের দিকে ইঙ্গিত করছে। তা সম্ভব হয়েছে সুনির্দিষ্ট সংস্কারমূলক পদক্ষেপ এবং সুবিবেচনাপ্রসূত প্রশাসনিক উদ্যোগের দরুণ। আমাদের কর্মী এবং কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমও এক্ষেত্রে সমান স্বীকৃতির দাবিদার।
সুপ্রশাসনের কল্যাণে দারিদ্র্যের গ্রাস থেকে মুক্ত হয়েছেন বিরাট সংখ্যক মানুষ। দরিদ্রদের পাশাপাশি দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে আসলেও যাঁরা এখনও সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের জন্যও একের পর এক কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়ে চলেছে সরকার। এঁরা যাতে ফের দারিদ্র্যসীমার নিচে না চলে যান, তা সরকার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সামাজিক পরিষেবা বাবদ ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে। আয়ের অসাম্য কমছে। আঞ্চলিক বৈষম্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক দিক থেকে যেসব রাজ্য ও অঞ্চল দুর্বল বলে পরিচিত ছিল, সেখানকার অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা প্রকাশ্যে এসেছে এবং প্রথম সারির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে চলেছে এইসব এলাকা।
আমাদের বাণিজ্যিক জগতের নেতৃস্থানীয়রা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগপতিরা এবং ব্যবসায়ীরা অদম্য কর্মস্পৃহার প্রমাণ দিয়েছেন বরাবরই। সম্পদ সৃজনের ক্ষেত্রে যাবতীয় বাধা দূর করায় এই বিষয়টি প্রাথমিক শর্ত। বিগত দশকে পরিকাঠামো বিকাশে যে সাফল্য এসেছে, তাও এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য। ভারতমালা পরিযোজনার আওতায় আমরা জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছি। উদ্ভাবনার পথে হেঁটে রেল বিভাগ সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ট্রেন চালু করছে। কাশ্মীর উপত্যকায় রেল সংযোগের সূচনা বিরাট এক সাফল্য। এর ফলে, ঐ অঞ্চলে বাণিজ্য ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। কাশ্মীরে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির রূপায়ণে আমাদের প্রযুক্তিবিদরা যে দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন, তা দেশের ইতিহাসে এক মাইলফলক।
দেশে নগরায়নের প্রসার হচ্ছে দ্রুতগতিতে। সেকথা মাথায় রেখেই সরকার শহরাঞ্চলের নাগরিক পরিষেবা উন্নত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। শহরাঞ্চলের পরিবহণ ব্যবস্থাকে জোরদার করতে মেট্রো রেল পরিষেবার প্রসার ঘটিয়েছে সরকার। বিগত দশকে মেট্রো পরিষেবা সমৃদ্ধ শহরের সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। অটল মিশন ফর রিজুভেনেশন অ্যান্ড আর্বান ট্রান্সফর্মেশন (AMRUT) কর্মসূচি আরও বহু পরিবারের কাছে নলবাহিত জল সংযোগ ও পয়ঃপ্রণালী সংক্রান্ত পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছে।
জীবনযাপনের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে যে পরিষেবা দরকার তা নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার, এমনটাই মনে করে সরকার। গ্রামীণ এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে নলবাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ হচ্ছে জল জীবন মিশনের আওতায়।
স্বাস্থ্য পরিচর্যা ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিচর্যা কর্মসূচি আয়ুষ্মান ভারতের আওতায় গৃহীত নানা প্রকল্প এক্ষেত্রে ছবিটাই পালটে দিয়েছে। এরই মধ্যে এর বিমা আচ্ছাদনের আওতায় এসেছেন ৫৫ কোটিরও বেশি মানুষ। সরকার আয়স্তর নির্বিশেষে এই প্রকল্পের সুবিধা সত্তরোর্ধ্ব সব নাগরিককে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, দরিদ্র এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকারী হয়েছেন।
এই ডিজিটাল যুগে খুব স্বাভাবিকভাবেই যে ক্ষেত্রটিতে চমকে দেওয়ার মতো অগ্রগতি হয়েছে তা হল তথ্যপ্রযুক্তি। প্রায় সব গ্রামে পৌঁছে গেছে ৪জি মোবাইল সংযোগ। বাকি গ্রামগুলিতেও শীঘ্র তা পৌঁছে যাবে। এর ফলে, ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অর্থ আদানপ্রদানের ব্যাপক প্রসার সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে খুব কম সময়ের মধ্যেই সারা বিশ্বে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা নিতে সক্ষম হয়েছে ভারত। এর ফলে, সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর প্রক্রিয়া জোরদার হয়েছে – যা প্রকৃত প্রাপকের কাছে নির্বিঘ্নে পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা। আর্থিক অপচয় দূর করা সম্ভব হয়েছে। সারা বিশ্বের ডিজিটাল আদানপ্রদানের অর্ধেকেরও বেশি সংঘটিত হয় ভারতে। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক প্রাণবন্ত ডিজিটাল অর্থনীতি। দেশের জিডিপি-তে এই ক্ষেত্রটির অবদান বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পরবর্তী ধাপ হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আমাদের জীবনে তার প্রবেশ ঘটেছে ইতিমধ্যেই। এই ক্ষেত্রটিকে আরও জোরদার করতে সরকার ইন্ডিয়া-এআই মিশনের সূচনা করেছে। দেশের চাহিদা অনুযায়ী এআই প্রকৌশল প্রস্তুত করায় সহায়ক এই মিশন। ২০৪৭ নাগাদ বিশ্বের অন্যতম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেন্দ্র হয়ে উঠতে চায় ভারত। প্রযুক্তির যাবতীয় সুবিধা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাঁদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সরকার দায়বদ্ধ।
সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও উন্নত করে তুলতে ‘ইজ অফ ডুয়িং’-এর পাশাপাশি, ‘ইজ অফ লিভিং’-এর ধারণাটিও গুরুত্বপূর্ণ। প্রান্তিক মানুষের কল্যাণের মধ্যেই উন্নয়ন ও বিকাশের সার্থকতা। সম্ভাব্য প্রতিটি ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে আমরা উদ্যোগী। এর ফলে, আত্মপ্রত্যয় জোরদার হবে এবং বিকশিত ভারতের পথে যাত্রায় গতি আসবে।
গত সপ্তাহে, ৭ আগস্ট সারা দেশে ‘জাতীয় হস্তচালিত তাঁত দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। আমাদের তন্তুবায় এবং তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের মর্যাদা বৃদ্ধি এর লক্ষ্য। ২০১৫ থেকে আমরা এই দিনটি উদযাপন করে চলেছি স্বাধীনতা সংগ্রামের অধ্যায়ে স্বদেশী আন্দোলনকে সামনে রেখে - যার সূচনা হয় ১৯০৫ সালে। ভারতীয় কলাকুশলী এবং কারুশিল্পীদের পরিশ্রমজাত পণ্য এবং তাঁদের দক্ষতাকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে ‘স্বদেশী’র ধারণাকে আরও জোরদার করে তোলেন মহাত্মা গান্ধী। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এবং আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের পথপ্রদর্শক হল ‘স্বদেশী’। আসুন, ভারতীয় পণ্য ক্রয় এবং ব্যবহারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশ এবং সামাজিক ক্ষেত্রের নানা উদ্যোগ ভারতকে ২০৪৭ নাগাদ উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অমৃতকালে দেশের এই অগ্রগমনে সাধ্যমতো অবদান রাখতে আমরা সকলেই প্রয়াসী হয়েছি। সমাজের তিনটি স্তর এক্ষেত্রে আমাদের পথ দেখাচ্ছে – যুব প্রজন্ম, মহিলা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের স্বপ্নের বাস্তবায়নের প্রকৃত পরিবেশ খুঁজে পেয়েছে। জাতীয় শিক্ষানীতি যুগান্তকারী পরিবর্তনের বার্তা দেয়। পাশাপাশি, গুরুত্ব দেয় আমাদের মূল্যবোধ, দক্ষতা এবং ঐতিহ্যকে। কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটছে দ্রুত। ব্যবসায়িক উদ্যোগের সহায়ক পরিমণ্ডল গড়ে তুলেছে সরকার। তরুণ প্রজন্মের বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার কল্যাণে আমাদের মহাকাশ কর্মসূচির অভূতপূর্ব প্রসার ঘটেছে। আমি নিশ্চিত যে, শুভাংশু শুক্লার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাত্রা একটি প্রজন্মকে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। এই বিষয়টি ভারতের আসন্ন মানব আরোহী সমৃদ্ধ মহাকাশ উড়ান কর্মসূচি গগনযান-এর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আত্মপ্রত্যয়ে পরিপূর্ণ আমাদের তরুণ-তরুণীরা ক্রীড়াক্ষেত্রে তাঁদের নৈপুণ্য তুলে ধরছেন। যেমন দাবা। দাবা নিয়ে ভারতের তরুণ প্রজন্ম এখন যতটা উৎসাহী, আগে কখনও এমনটা ছিল না। জাতীয় ক্রীড়ানীতি, ২০২৫ আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে ভারতকে শক্তিশালী একটি দেশ হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে প্রণীত।
আমাদের মেয়েরা আমাদের গর্ব। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহ প্রতিটি বিষয়েই নিজেকে অতিক্রম করে চলেছেন তাঁরা। বিকাশ ও ক্ষমতায়নের অন্যতম সূচক হল খেলাধূলার উৎকর্ষমান বৃদ্ধি। দাবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ FIDE বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়েছেন এ দেশের ১৯ বছরের এক কিশোরী এবং ৩৮ বছরের এক মহিলা। কাজের জগতেও লিঙ্গ বৈষম্য কমছে। ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’-এর কল্যাণে মহিলাদের ক্ষমতায়ন আজ শুধুমাত্র স্লোগান নয়, তা বাস্তব।
আমাদের সমাজের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছেন তপশিলি জাতি, জনজাতি ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ। এই জনগোষ্ঠীগুলি তাদের ‘প্রান্তিক’ পরিচয় মুছে দিচ্ছে। তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রত্যাশা পূরণে সরকার একের পর এক কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে।
নিজের যাবতীয় সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। সংস্কারমূলক পদক্ষেপ এবং উপযুক্ত নীতি তার ভিত গড়ে দিয়েছে। আমি এমন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রত্যক্ষ করছি, যেখানে আমাদের প্রত্যেকে পরস্পরের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
আমরা সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছি, যেখানে ধারাবাহিক সুপ্রশাসন নিশ্চিত এবং দুর্নীতির ক্ষেত্রে যা আপোসহীন। মহাত্মা গান্ধীর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতির কথা মনে পড়ছে। তিনি যা বলেছেন, আমি তুলে ধরছি :
“দুর্নীতি এবং দ্বিচারিতা গণতন্ত্রের অনিবার্য পরিণতি হওয়া উচিত নয়।”
গান্ধীজির স্বপ্ন পূরণ এবং দুর্নীতি দূর করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করা যাক।
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
এ বছর আমরা সন্ত্রাসবাদের তীব্র আঘাতের মুখোমুখি হয়েছি। কাশ্মীরে ছুটি কাটাতে যাওয়া নিরীহ নাগরিকদের হত্যা চরম অমানবিক। ভারত প্রত্যুত্তর দিয়েছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপে, ইস্পাত-কঠিন প্রত্যয়ে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ দেখিয়ে দিয়েছে যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দেশের সুরক্ষায় যে কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। কৌশলগত দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতার মেলবন্ধনে তাঁরা সীমান্তের ওপারে জঙ্গিদের একের পর এক ঘাঁটি ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানবতার সংগ্রামের ইতিহাসে ‘অপারেশন সিঁদুর’ উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই প্রত্যুত্তরের ক্ষেত্রে আমাদের ঐক্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। যারা আমাদের বিভাজিত করতে চায়, তাদের সবচেয়ে জোরালো জবাব এটাই। সাংসদদের বহুদলীয় প্রতিনিধিদল ভারতের বক্তব্য তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যেভাবে কাজ করেছেন, তাতেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই ঐক্য। সারা বিশ্ব ভারতের অবস্থান প্রত্যক্ষ করেছে। বার্তা পৌঁছে গেছে যে আমরা আগ্রাসনে তৎপর হব না, কিন্তু আমাদের নাগরিকদের রক্ষা করতে প্রতিশোধ গ্রহণেও দ্বিধা করব না।
‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচির সাফল্য প্রমাণিত করেছে। স্পষ্ট হয়েছে যে আমরা ঠিক পথে এগোচ্ছি। আমাদের দেশজ উৎপাদন কর্মসূচি সেই স্তরে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় বহু সরঞ্জাম নির্মাণে সক্ষম। স্বাধীনতার পর ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের ইতিহাসে এই সাফল্য এক অনবদ্য মাইলফলক।
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
এই বার্তার মাধ্যমে আমি আপনাদের পরিবেশ রক্ষায় নিজের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব তা করার আহ্বান জানাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় আমাদের নিজেদেরও পরিবর্তিত করে তোলা দরকার। প্রয়োজন, নিজের আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গী বদলানো। ভূমি, নদী, পর্বত, অরণ্য ও প্রাণীসম্পদ – প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের পারস্পরিক আদানপ্রদান আরও ইতিবাচক করে তুলতে হবে। সকলের প্রচেষ্টায় আমরা এমন এক বাসগ্রহ তৈরি করে যাব, যেখানে জীবন বিকশিত হবে প্রকৃতিগত স্বাভাবিকতায়।
প্রিয় সহ-নাগরিকবৃন্দ,
সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত সেনা, পুলিশকর্মী এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অবদানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করছি আমি। শুভেচ্ছা জানাই আমাদের বিচার বিভাগ এবং নাগরিক পরিষেবা দপ্তরের কর্মীদের। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাই বিভিন্ন দেশে কর্মরত ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী ও প্রবাসী ভারতীয়দেরও!
আরও একবার স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ।
জয় হিন্দ!
জয় ভারত!
SC/AC/DM..
(Release ID: 2156557)
Read this release in:
Marathi
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam
,
Assamese
,
Manipuri
,
Odia
,
English
,
Khasi
,
Urdu
,
Hindi
,
Nepali
,
Punjabi
,
Gujarati