স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভার আলোচনায় যোগ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ

Posted On: 29 JUL 2025 5:23PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ জুলাই, ২০২৫ 

 

‘অপারেশন সিঁদুর’ সফল, পহলগাঁও হামলার জঙ্গীরা ‘অপারেশন মহাদেব’ – এ নিহত, বললেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী

লোকসভায় আজ ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনায় যোগ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ। এই অভিযান পহলগাঁও জঙ্গী হামলার জবাবে ভারতের কার্যকর ও সফল পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। 
পহলগাঁও – এ ঐ হামলায় যেভাবে ধর্মের ভিত্তিতে সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে, তার নিন্দার কোনও ভাষা নেই বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। স্বজনহারাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ – এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিভিন্ন জায়গা লক্ষ্য করে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে প্রাণহানির ঘটনাতেও স্বজনহারাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। 
সোমবার ভারতীয় সেনা সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের যৌথ অভিযান ‘অপারেশন মহাদেব’ – এ তিন জঙ্গী সুলেমান, হামজা আফগানি এবং জিব্রান নিহত হয়েছে বলে সংসদে ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি জানান, লস্কর – ই - তৈবার অন্যতম শীর্ষ কমান্ডার সুলেমান পহলগাঁও – এর পাশাপাশি গগনগির – এর হামলাতেও জড়িত ছিল। অন্য দু’জনও লস্কর-ই-তৈবার শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী। ২২ এপ্রিল পহলগাঁও – এর বৈসরণ উপত্যকায় নিরীহ নাগরিকদের হত্যায় জড়িত ছিল এই দু’জনও। ‘অপারেশন মহাদেব’ – এর সাফল্যের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ’কে লোকসভার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানান। 
২০২৫ – এর ২২ মে ‘অপারেশন মহাদেব’ শুরু হয় বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানিয়েছেন। ২২ এপ্রিল বেলা ১টা নাগাদ পহলগাঁও – এ জঙ্গী হামলার পর বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে শ্রীনগর পৌঁছে যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। পরের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল তিনি বৈঠক করেন সেনাবাহিনী, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে। সেখানে স্থির হয় যে, পহলগাঁও হামলায় জড়িত জঙ্গীদের পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। ২২ মে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, জঙ্গীরা ডাচিগ্রাম অঞ্চলে লুকিয়ে রয়েছে। এই কাজে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মিত উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম বিশেষ কাজ দিয়েছে। সেই সরঞ্জাম থেকে সুনির্দিষ্ট সংকেত পাওয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় পায়ে হেঁটে যেতে হয়। অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে ঘিরে ফেলা হয় জঙ্গীদের। গত সোমবারের অভিযানে তারা নিহত হয়। 
লোকসভায় শ্রী শাহ জানান, এই তিন জঙ্গীর আশ্রয়দাতাদের ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা। নিহত তিন জঙ্গীর মৃতদেহ শ্রীনগরে নিয়ে আসার পর, তাঁদের শনাক্ত করেন চার জন। পহলগাঁও হামলার জায়গায় পাওয়া কার্ত্রিজের যে রিপোর্ট ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা দিয়েছেন, তার সঙ্গে তিন জঙ্গীর তিনটি রাইফেলেরই বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই তিনটি রাইফেল এবং তাঁদের এম্পটি শেল বলে একটি বিশেষ বিমানে করে চণ্ডীগড়ে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। 
‘অপারেশন সিঁদুর’ – এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গী নেতাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং গত সোমবারে অভিযানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী পহলগাঁও কাণ্ডে জড়িত জঙ্গীদের নিকেশ করেছে বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তাঁদের এই সাফল্য ১৪০ কোটি ভারতীয়কে গর্বিত করেছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ জঙ্গীদের এমন শিক্ষা দিয়েছে যে, এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা থেকে তারা বিরত থাকবে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, লস্কর এবং তাদের শাখা সংগঠন যেদিন পহলগাঁও হামলার দায় স্বীকার করে, সেদিনই জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে এই হামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় তদন্ত সংস্থার সাফল্যের হার ৯৬ শতাংশের বেশি। জঙ্গীরা যাতে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে পালিয়ে না যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় সেনাবাহিনী, বিএসএফ, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। তদন্ত প্রক্রিয়ার শুরুতে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। পর্যটক, টাট্টুওয়ালা, ফটোগ্রাফার, দোকানদার সমেত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ১ হাজার ৫৫ জনকে ৩ হাজার ঘন্টা ধ জেরা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার সবটারই ভিডিও রেকর্ডিং হয়। জিজ্ঞাসাবাদ এবং আরও নানা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গীদের স্কেচ তৈরি করা হয়। ২২ জুন, ২০২৫ তারিখে চিহ্নিত করা হয় জঙ্গীদের আশ্রয়দাতা বসির এবং পরভেজ’কে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানায় যে, ২১ এপ্রিল রাত ৮টা নাগাদ তিনজন জঙ্গী তাদের কাছে আসে। তাদের হাতে ছিল ২টি একে-৪৭ এবং ১টি এম৪ কার্বাইন রাইফেল। এই তিন জঙ্গীকে শনাক্ত করেছেন বসির এবং পরভেজের মা। বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ফরেন্সিক পরীক্ষাতেও। সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এই তিনটি রাইফেল থেকেই পহলগাঁও – এ সাধারণ নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছিল। 
শ্রী শাহ বলেন, আগের দিনই দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই জঙ্গীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু, এরা তিনজনই যে পাকিস্তানের নাগরিক, তা প্রমাণিত হয়েছে। দু’জনেরই পাকিস্তানী ভোটার নম্বর পাওয়া গেছে। তাদের সঙ্গে থাকা চকলেটও পাকিস্তানে তৈরি। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সারা বিশ্বের সামনে পাকিস্তানকে নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছেন। এমনকি, আমরা কেন পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছি, সেই প্রশ্নও তিনি তুলেছেন। আমাদের সাংসদরা বিশ্বের যেসব জায়গায় গেছেন, সেইসব অঞ্চলে সকলেই মেনে নিয়েছেন যে, পহলগাঁও হামলার পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এসবের প্রমাণ চাইছেন। কিন্তু, আজ দেশের ১৪০ কোটি মানুষই বুঝে গেছেন যে, তিনি এবং তাঁর দল পাকিস্তানের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন। 
শ্রী শাহ বলেন, পহলগাঁও জঙ্গী হামলায় নিহত ২৬ জনের ২৫ জনই ভারতীয়, একজন নেপালের নাগরিক। তিনি নিজে শ্রীনগরে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন এবং ২৩ ও ৩০ এপ্রিল নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠকে পৌরোহিত্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। ২৩ এপ্রিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর, আট্টারির সীমান্ত চৌকি বন্ধ করে দেওয়া হয়, পাকিস্তানী নাগরিকদের সার্ক ভিসা সাময়িকভাবে বাতিল করা হয় এবং তাদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাকিস্তানী হাইকমিশনে কর্মরত প্রতিরক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সরকার। প্রতিবেশী দেশের দূতাবাসের কর্মীর সংখ্যাও ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করে দেওয়া হয়। ঘৃণ্য ঐ হামলায় জড়িত জঙ্গীদের এবং তাঁদের মদতদাতাদের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে মন্ত্রিসভার বৈঠকেই স্থির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, পহলগাঁও হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পদক্ষেপে যে সংযম প্রতিফলিত, তার তুলনা মেলা ভার। জঙ্গীদের ৯টি ঘাঁটি আমাদের সেনাবাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু, একজনও সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়নি। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এবং ‘বিমান হামলা’ চালানো হয়েছিল পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে, যা আসলে ভারতেরই অংশ। এইবার ‘অপারেশন সিঁদুর’ – এ আমরা পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়েছি এবং জঙ্গীদের নিকেশ করেছি। নিহত হয়েছে বেশ কয়েকজন কুখ্যাত জঙ্গী। বিরোধীরা যখন শাসন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, জঙ্গীরা লুকিয়ে পড়ত। এখন আমাদের সেনাবাহিনী তাদের এক এক করে নিকেশ করছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ – এ অন্তত ১২৫ জন জঙ্গী নিহত হয়েছে। 
৭ মে রাত ১টা ২২ মিনিটে আমাদের ডিজিএমও পাকিস্তানের ডিজিএমও-কে জানান যে আমরা শুধুমাত্র জঙ্গীদের ঘাঁটি এবং তাদের সদর দপ্তরে আঘাত হেনেছি, যা আমাদের আত্মরক্ষার অধিকারের মধ্যেই পরে। আজ দেশের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার এবং সেজন্যই জঙ্গীরা আক্রমণ করবে এবং আমরা চুপচাপ বসে আলোচনা করব, এমনটা সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, উরির জঙ্গী হামলার পর, আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছি এবং পুলওয়ামা জঙ্গী হামলার পর, বিমান হামলা চালিয়েছি। পহলগাঁও জঙ্গী হামলার পর, আমরা পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে ৯টি জঙ্গীঘাঁটি ধ্বংস করেছি এবং ১০০-রও বেশি জঙ্গীকে মেরেছি। 
শ্রী শাহ বলেন, আমরা পাকিস্তানে জঙ্গী ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছি, যা পাকিস্তান নিজের উপর আক্রমণ হিসেবে ধরে নিয়ে সারা বিশ্বকে বলতে শুরু করে যে, তাদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের কোনও যোগ নেই। অথচ, উচ্চপদস্থ পাক সেনা আধিকারিকরা জঙ্গীদের শেষকৃত্যে যোগ দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, পাকিস্তান আসলে রাষ্ট্রীয় মদত দেয় সন্ত্রাসবাদকে। ৮ মে পাকিস্তান আমাদের সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি, আবাসিক এলাকাগুলিকেও আক্রমণ করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি গুরুদ্বার এবং একটি মন্দির। প্রাণ হারাদের মধ্যে সাধারণ নাগরিকরাও রয়েছেন। এর জবাবে পরের দিন ভারতীয় বায়ুসেনা পাকিস্তানের ১১টি বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়। 
পাকিস্তান আমাদের আবাসিক এলাকাতে হামলা চালালেও আমরা পাকিস্তানের আবাসিক এলাকাকে কখনোই লক্ষ্য করিনি। শুধুমাত্র পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে নিশানা করে পাল্টা হামলা চালানোয় তাদের অক্ষম করে দেওয়া হয়। এরপর, পাকিস্তানের হাতে আর কোনও বিকল্প ছিল না। ১০ মে সেদেশের ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেন। বিকেল ৫টায় সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা হয়। সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও ভারত যুদ্ধ কেন চালিয়ে গেল না, বিরোধীদের এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের বহু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে এবং সেজন্যই এইসব সিদ্ধান্ত নিতে হয় বিচার-বিবেচনা করে। আমাদের দেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে, ১৯৪৮ সালে কাশ্মীরে ভালো অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও সর্দার প্যাটেলের মতামতকে উপেক্ষা করে জওহরলাল নেহরু একার সিদ্ধান্তে সংঘর্ষ বিরতির কথা জানান। আজ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অস্তিত্বের জন্য একমাত্র দায়ী নেহরুর ঐ সিদ্ধান্ত। একইভাবে, ১৯৬০ সালে ভৌগোলিক ও কৌশলগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থাতে থাকা সত্ত্বেও নেহরু সিন্ধু জল চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারতের প্রাপ্য জলের ৮০ শতাংশই পাকিস্তানকে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 
১৯৬৫ সালের যুদ্ধে আমরা কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাজি পীরের মতো এলাকা নিয়ন্ত্রণে এনেও ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান’কে আবার ফিরিয়ে দিই। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আমাদের হাতে ছিল ৯৩ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধ বন্দি। পাক ভূখন্ডের ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এসে গিয়েছিল ভারতের দখলে। কিন্তু, তৎকালীন সরকার সিমলা চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ফেরৎ নেওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যায়। ঐ ভূখন্ড আমাদের হাতে থাকলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি-ই হ’ত না। শুধু তাই নয়, আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ১৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা আগেই ফিরিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানকে। 
১৯৬২ সালে কি হয়েছিল এবং আকসাই চীনের ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাই বা কেন চীন’কে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন তোলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ। তিনি বলেন, সংসদে আলোচনার সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, যেখানে একটি ঘাসও জন্মায় না, সেই জায়গার কার্যকারিতা কি? আকাশবাণীতে নেহরু আসাম’কে কার্যত ‘বিদায়’ দিয়ে দিয়েছিলেন। 
“সিলেক্টেড ওয়ার্কস্‌ অফ জওহরলাল নেহরু”-র ২৯তম খন্ডের ২৩১ পাতার কথা উল্লেখ করে শ্রী শাহ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য ছিল, চীন’কে রাষ্ট্রসংঘে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলেও নিরাপত্তা পরিষদে জায়গা দেওয়া হবে না। কিন্তু নেহরুজি বলেছিলেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। কারণ, তেমনটা হলে চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হবে এবং চীনের মতো বিশাল একটি দেশের পক্ষে বিষয়টি মোটেই অভিপ্রেত নয়। আজ চীন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য, ভারত নয়। 
রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন চীনের সঙ্গে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করলেও ঐ সমঝোতার বিষয়ে বিশদে কিছুই প্রকাশ করা হয়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমাদের সেনা জওয়ানরা যখন ডোকলামে চীনা সেনাবাহিনীর চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন, তখন বিরোধী নেতা শ্রী রাহুল গান্ধী চীনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের শিকড় ছড়িয়ে যাওয়া এবং পাকিস্তান নিজেই আসলে বিরোধী দলগুলির “চরম ভুল” – এর ফল। দেশভাগ মেনে না নিলে পাকিস্তান তৈরি হ’ত না। আজকের বিরোধীরা বিভাজন মেনে নিয়ে দেশকে ভাগ করেছিলেন। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকার পিওটিএ আইন নিয়ে আসে। এই আইনের বিরোধিতা করেন বিরোধীরা। রাজ্যসভায় অটলজির সরকারের সংখ্যা গরিষ্ঠতা না থাকায়, আইনটি গৃহীত হতে পারেনি। পরে, উভয় সভার যৌথ অধিবেশনে আইনটি পাশ হয়। দেশ একথা কখনই ভুলতে পারবে না। পিওটিএ আইন রুখে দিয়ে বিরোধী দল কাকে বাঁচাতে চেয়েছিল, সেই প্রশ্ন তোলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। ঐ আইন সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য আইনটি রুখে দিয়ে জঙ্গীদের বাঁচাতে চেয়েছিল বিরোধী দল। এরপর, ২০০৪ সালে ক্ষমতায় এসে সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে পিওটিএ আইন বাতিল করে দেয় আজকের বিরোধীরা। ২০০৫ সালে অযোধ্যায় রামলালার শিবির আক্রান্ত হয় এবং কয়েকজন জঙ্গী নিহত হয়। ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ১৮৭ জন যাত্রী। ঐ বছরেই দোদা-উধমপুরে হিন্দুরা আক্রান্ত হন, ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৭ সালে হায়দরাবাদ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৪৪ জন। ২০০৭ সালে লক্ষ্ণৌ এবং বারাণসীতে ১৩ জন মারা যান। ২০০৮ সালে রামপুরের সিআরপিএফ শিবিরে হামলা হয়। ঐ বছরেই শ্রীনগরে সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়ে ১০ জন নিরাপত্তা কর্মীকে হত্যা করে জঙ্গীরা। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে ভয়াবহ জঙ্গী হামালায় ২৪৬ জন প্রাণ হারান। জয়পুরে ৮টি বোমা বিস্ফোরণে ৬৪ জন নিহত হন। ঐ বছরেই আহমেদাবাদে ২১টি বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৫৭ জন। ২০০৮ সালেই দিল্লিতে ৫টি বিস্ফোরণে ২২ জন মারা যান। পুণে জার্মান বেকারি কান্ডে মারা যান ১৭ জন। ২০১০ সালে বারাণসীতে একাধিক বিস্ফোরণ হয়। ২০১১ সালে মুম্বাইয়ে ৩টি বিস্ফোরণে ২৭ জন নিহত হন। 
শ্রী শাহ বলেন, ২০০৫ – ২০১১’য় আজকের বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকার সময়ে ২৭বার ঘৃণ্য হামলা চালিয়েছে জঙ্গীরা, মারা গেছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ। কিন্তু, সরকার কি করছিল? বিরোধী দলনেতা সভাকে তা জানান, এমনটাই দাবি করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, আজকের বিরোধীদের তৎকালীন সরকার পাকিস্তানে কিছু নথি এবং ছবি পাঠিয়েই কাজ সেরে ফেলেন। 
শ্রী শাহ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মূলত কাশ্মীরেই সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে মদত দিচ্ছে পাকিস্তান। ২০১৪-২০২৫ সময়কালে দেশের অন্যত্র সন্ত্রাসবাদী হামলা কার্যত হয়নি। নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রচেষ্টার জন্যই কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্ম এখন আর সন্ত্রাসবাদের দিকে ঝুঁকছে না। সেজন্যই পাকিস্তান থেকে জঙ্গী পাঠাতে হচ্ছে।
১৯৮৬ সালে দাউদ ইব্রাহিম কাস্কর, ১৯৯৩ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন, ১৯৯৩ সালে টাইগার মেমন, ১৯৯৩ সালে আনিস ইব্রাহিম, ২০০৭ সালে লিয়াজ ভাটকাল, ২০১০ সালে ইকবাল ভাটকাল দেশ ছেড়ে পালানোর সময়ে আজকের বিরোধীরাই ক্ষমতায় ছিলেন। বিরোধী দলনেতাকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আরও বলেন, মোদী সরকার দেশের মানুষ, সংসদ এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ। ২০০৪-১৪ সময়কালে কাশ্মীরে ৭ হাজার ২১৭টি জঙ্গী হামলা হয়েছে। ২০১৫-২৫ সময়কালে এই সংখ্যা ২ হাজার ১৫০। অর্থাৎ, ৭০ শতাংশ হ্রাস। ২০০৪-১৪ সময়কালে ১ হাজার ৭৭০ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫-২০২৫ সময়কালে এই সংখ্যাটি ৩৫৭। অর্থাৎ, ৮০ শতাংশ হ্রাস। ২০০৪-২০২৪ সময়কালে ১ হাজার ৬০ জন নিরাপত্তা কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৫-২০২৫ সময়কালে এই সংখ্যা ৫৪২। বর্তমান সরকারের আমলে সংঘর্ষে জঙ্গীদের মৃত্যুর ঘটনা ১২৩ শতাংশ বেড়েছে। ৩৭০ ধারার বিলোপ কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের পরিমণ্ডল ভেঙ্গে দিয়েছে। অথচ, এই ধারাটিকেই সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আজকের বিরোধীরা এবং জঙ্গী পরিমণ্ডল ফুলেফেঁপে উঠেছিল। 
শ্রী শাহ বলেন, বর্তমান সরকার সন্ত্রাসবাদের ঘটনা শূন্যে নিয়ে যেতে চায়। মোতায়েন করা হয়েছে বহুস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়। বিচার প্রক্রিয়ার ৯৮ শতাংশ এখন সম্পন্ন হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সিং – এর মাধ্যমে। জঙ্গী সংশ্রবের দায়ে ৭০২ জন ফোন বিক্রেতার কারাদণ্ড হয়েছে এবং ২ হাজার ৬৬৬টি সিমকার্ড ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। 
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এখন কোনও জঙ্গী মারা পড়লে, সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। মরদেহ নিয়ে শোকযাত্রা করে জঙ্গীদের গৌরবান্বিত করার দিন শেষ। জঙ্গীদের আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের হাজতবাস হচ্ছে এবং তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদের সমর্থক ৭৫ জনেরও বেশি সরকারি চাকরি খুইয়েছেন। বার কাউন্সিলে জঙ্গীদের বেশ কয়েকজন সমর্থক থাকায় তা সাসপেন্ড করে নতুন করে ভোট নেওয়া হয়। নিষিদ্ধ করা হয় বহু সংগঠনকে। বিশেষ ইউএপিএ আদালত গঠন করে ইউএপিএ – এর আওতায় ২০২২ সালের মার্চ থেকে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ২৬০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাজেয়াপ্তকরণের সংখ্যা ৩৭৪। আগে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটতো প্রায়ই। এখন ঐ ধরনের ঘটনা অতীত। আগে পাকিস্তান থেকে ধর্মঘট ডেকে কাশ্মীর উপত্যকা অচল করে দেওয়া হ’ত। এখন তা কল্পনাতীত। আজকের বিরোধীরা শাসন ক্ষমতায় থাকার সময়ে উপত্যকা প্রতি বছর ১৩২ দিন কার্যত অচল থাকত। গত তিন বছরে ধর্মঘটের সংখ্যা শূন্যে দাঁড়িয়েছে। 
বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এক সময়ে হুরিয়ত নেতারা ভিআইপি-দের মতো সুবিধা পেতেন এবং তাদের সঙ্গে টেবিলে বসে আলোচনা হ’ত। এখন হুরিয়ত নিষিদ্ধ এবং তার নেতারা এখন কারাগারে। ঐ গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা চায় না সরকার। হুরিয়ত জঙ্গী সংগঠনগুলিরই একটি – প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর এই বক্তব্য সংসদে আবারও তুলে ধরেন তিনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সরকার হুরিয়তের সঙ্গে আলোচনা চায় না, তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আলোচনা চায়। শ্রী শাহ বলেন, আগে নির্বাচনের সময়ে কাশ্মীরে ভয়ের পরিমণ্ডল সৃষ্টি হ’ত। আর এখন পঞ্চায়েত ভোটে ৯৮.৩ শতাংশ ভোটদাতাই ভোট দিতে পারেন। ২০১৯ সালের পর, টিআরএফ, পিপল অ্যান্টি ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট, তেহেরিক - উল - মুজাহিদিন, জামাত - উল - মুজাহিদিন, বাংলাদেশ – হিন্দুস্তান, জম্মু – কাশ্মীর গজনবি ফোর্স, খালিস্তান টাইগার ফোর্স, হিজব উল তাহারিরের মতো বহু জঙ্গী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 
দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়, -৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে পড়ে থেকে আমাদের সৈনিকরা দেশকে রক্ষা করে চলেছেন। অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশকারীরা হয় গ্রেপ্তার হবে, নয় সংঘর্ষে নিহত হবে। পিওটিএ - এর বিরোধীরা নরেন্দ্র মোদীর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতি পছন্দ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, তারা জঙ্গীদের রক্ষা করে ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করতে চান। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন নীতি নিয়েই চলবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন। 

 


SC/AC/SB


(Release ID: 2150506)