নির্বাচনকমিশন
azadi ka amrit mahotsav

এই প্রথম ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দেশ জুড়ে নির্দিষ্ট ভোটারদের জন্য বাড়ি থেকে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হ’ল

নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত, তৃতীয় লিঙ্গ এবং লুপ্তপ্রায় আদিবাসী গোষ্ঠীর ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেছে

Posted On: 29 MAY 2024 2:43PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৯ মে, ২০২৪ 

 

২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে কোনও ভোটার যাতে তাঁর শারীরিক ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হন, তা সুনিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ ছ’দফা ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর দেখা যাচ্ছে যে, বয়স্ক, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত, তৃতীয় লিঙ্গ ও লুপ্তপ্রায় আদিবাসী গোষ্ঠী সহ বিভিন্ন শ্রেণীর ভোটারদের মধ্যে বিপুল সাড়া পড়েছে। ৮৫ বছরের বেশি বয়সী এবং ৪০ শতাংশ বা তার বেশি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটাররা যাতে নিজেদের বাড়ি থেকেই ভোট দিতে পারেন, সেজন্য এই প্রথম দেশ জুড়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শ্রী রাজীব কুমার এবং দুই নির্বাচন কমিশনার শ্রী জ্ঞানেশ কুমার ও ডঃ সুখবীর সিং সান্ধুর নেতৃত্বে এই সুসমন্বিত প্রয়াস বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার শ্রী রাজীব কুমার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার উন্নয়ন সাধনে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে যাতে প্রকৃত অর্থেই দেশের বৈচিত্র্য ও বহুমাত্রিকতার প্রতিফলন ঘটে, তা সুনিশ্চিত করতে কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তিকরণ ও একে সকলের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার লক্ষ্যে যে প্রয়াস কমিশন চালাচ্ছে, তা সমাজের সর্বস্তরের কাছে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। 
ভোটার তালিকা সংশোধনের মাধ্যমে এর প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দু’বছর আগে থেকে। এর জন্য বিশেষ শিবির স্থাপন করে যোগ্য ভোটারদের নাম নথিভুক্তিকরণের বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছিল। যেসব গোষ্ঠী ভোটদানের অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে, তারা যাতে এবার ভোটদান প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সেজন্য নির্বাচন কমিশন বহুমুখী কৌশল গ্রহণ করেছে। 
বাড়ি থেকে ভোটদানের ঐচ্ছিক সুবিধা: এই ধরনের প্রথম উদ্যোগ এবারের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাড়ি থেকে ভোটদানের সুবিধা দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই প্রথম দেশের সাধারণ নির্বাচনে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং অন্তত ৪০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ভোটাররা এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে নিজেদের বাড়ি থেকেই তাঁরা ভোট দিতে পারছেন। এমন সুবিধা পেয়ে কৃতজ্ঞ ভোটাররা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁদের সন্তুষ্টি ব্যক্ত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া তাঁদের হাসিমুখের ছবিতে ছেয়ে গেছে। এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচনী কর্মী ও সুরক্ষা কর্মীরা ব্যাপক পরিশ্রম করেছেন। প্রার্থীদের এজেন্টদেরও এই প্রক্রিয়ার সাক্ষী থাকতে ভোটারদের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 
আরও বেশি ভোটারদের অংশগ্রহণের জন্য উন্নত পরিকাঠামো: 
প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র যাতে একতলাতে হয়, সেখানে র‍্যাম্পের ব্যবস্থা, গাড়ি রাখার জায়গা, ভোটারদের বোঝার সুবিধার জন্য নানারকম চিহ্ন, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক লাইনের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক থাকে, নির্বাচন কমিশন তা নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও, কমিশনের সক্ষম অ্যাপ – এর মাধ্যমে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে হুইল চেয়ার ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তার সুবিধা পেতে পারেন। প্রয়োজনে তাঁদের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা এবং পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করার সংস্থান রয়েছে। এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৮ হাজার জনেরও বেশি মানুষ সক্ষম অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। 
কমিশন দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটারদের জন্য ইভিএম, সচিত্র পরিচয়পত্র এবং ভোটার স্লিপে ব্রেইল – এর ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া, প্রবীণ নাগরিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটারদের জন্য একটি ভোটার গাইডও প্রকাশ করা হয়েছে। 
অন্তর্ভুক্তিকরণের চেতনায় ভোটদানের ক্ষেত্রে মানসিক বাধা দূর করা:
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বাধা দূর করার পর কমিশন ভোটদানের ক্ষেত্রে মানসিক প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপরও জোর দিয়েছে। রূপান্তরকামী, যৌনকর্মী, লুপ্তপ্রায় আদিবাসীদের মতো বেশ কিছু গোষ্ঠীর মানুষ ভোটদানের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিবন্ধকতার সামনে পড়েন, তা দূর করতে বিশেষ শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছে। থানে জেলায় নাগরিক সমাজের সহায়তায় এমন শিবির করা হয়েছিল। সারা দেশে ৪৮ হাজার ২৬০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। সবচেয়ে বেশি তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন তামিলনাডুতে (৮ হাজার ৪৬৭ জন)। এরপর রয়েছে উত্তর প্রদেশ (৬ হাজার ৬২৮) এবং মহারাষ্ট্র (৫ হাজার ৭২০)। 
এসভিইইপি প্রয়াসের অঙ্গ হিসেবে কমিশন গত ১৬ মার্চ একটি টি টূয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেছিল। সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইন্ডিয়ান ডেফ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং দিল্লি ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের দুটি দল। 
প্রতিটি বিধানসভা আসনের অন্তর্গত এলাকায় অন্তত একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র যাতে শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত কর্মীদের দ্বারাই পরিচালিত হয়, কমিশন তার চেষ্টা করেছে। উত্তর প্রদেশে এই ধরনের ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (৩০২টি)।
বিপন্ন গোষ্ঠীগুলির নথিভুক্তিকরণ ও ভোটদানের প্রক্রিয়া সহজ করা:
ভোটদানের হার বাড়াতে হলে গৃহহীন এবং যাযাবর গোষ্ঠীর মানুষজনকেও ভোটদান প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে। এদের বাসস্থানের প্রমাণ না থাকায় ভোটদানের ক্ষেত্রে এরা নানাধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হন। এর প্রতিকারে গত দু’বছর ধরে এইসব ভোটারদের নথিভুক্তিকরণের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যন্ত আদিবাসী এলাকায় এবার ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাঁদের বাড়ি থেকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য বিশেষ যানবাহনেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবারের সাধারণ নির্বাচনেই এই প্রথম গ্রেট নিকোবরের শম্পেন আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষজন ভোট দিয়েছেন – এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
অংশীদারিত্ব:
ভোটদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং ভোটারদের মধ্যে অংশীদারিত্বের চেতনা গড়ে তুলতে নির্বাচন কমিশন শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ১১ জনকে ‘নির্বাচন কমিশনের দূত’ হিসেবে চিহ্নিত করে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যুক্ত ভোটারদের বিশেষ চাহিদা নিয়ে ভোট কর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রতিবন্ধকতা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। 
নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের একটি দল থানে জেলা এবং মুম্বাইয়ের কামাথিপুরায় গিয়ে রূপান্তরকামী ও যৌনকর্মীদের সঙ্গে ভোটদান নিয়ে মুখোমুখী আলোচনায় বসেন। তাঁদের ভোটদানে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। 
অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত প্যারা তিরন্দাজ শ্রীমতী শীতল দেবীকে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় আইকনের স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে কমিশন শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ভোটারদের কাছে সদর্থক বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করে। 
প্রান্তিক ভোটারদের কাছে পৌঁছনো:
কোনও ভোটার যাতে পিছনে পড়ে না থাকেন, তা সুনিশ্চিত করতে কমিশন দায়বদ্ধ। এজন্য দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের কাছে পৌঁছনোর বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গুজরাটের আলিয়াবেটের কথা বলা যায়। এখানে আদিবাসী ভোটারদের কাছে পৌঁছতে জাহাজের একটি কন্টেনারের উপর ভোট গ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। একইভাবে, এই প্রথম ছত্তিশগড়ের বস্তার ও কাঙ্কেরে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। 
কাশ্মীরী অভিবাসীরা যাতে এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন সেজন্য উপত্যকা থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে জম্মু ও উধমপুরে বসবাসকারীদের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ফর্ম-এম বাতিল করে দিয়েছে। আগে উপত্যকার বাস্তুচ্যুত মানুষদের জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে ফর্ম-এম পূরণ করতে হ’ত। যেসব অভিবাসী জম্মু ও উধমপুরের বাইরে বাস করেন, তাঁদের ফর্ম-এম এখনও পূরণ করতে হবে ঠিকই, কিন্তু এক্ষেত্রে আর গেজেটেড অফিসারের প্রত্যয়ন লাগবে না। তাঁরা নিজেরাই স্বপ্রত্যয়ন করতে পারবেন। দিল্লি, জম্মু ও উধমপুরের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে যেসব কাশ্মীরী অধিবাসী রয়েছেন, তাঁদের জন্য এবার বিশেষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁরা চাইলে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমেও ভোট দিতে পারবেন। 
একইভাবে, মণিপুরের বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য ১০টি জেলায় ৯৪টি বিশেষ ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়। টেঙ্গনাওপাল জেলায় একটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল একজন মাত্র ভোটারের জন্য। প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ছিল ওয়েবকাস্টিং – এর ব্যবস্থা। 

PG/SD/SB


(Release ID: 2022147) Visitor Counter : 137