প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
হরাইজন ২০৪৭ : ভারত – ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের রজতজয়ন্তী, দু-দেশের এক শতকের সম্পর্কের দিকে এগিয়ে চলা
Posted On:
13 JUL 2023 11:30PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ১৩ জুলাই, ২০২৩
ভারত এবং ফ্রান্সের মধ্যে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দীর্ঘ মেয়াদী কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। ১৯৪৭ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর ১৯৯৮ সালে এই সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হয়। উভয় দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করছে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা, রাষ্ট্রসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনগুলির প্রতি অভিন্ন অঙ্গীকার এই সম্পর্কের মূল চালিকাশক্তি।
ভারত – ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্বের রজতজয়ন্তীতে দুই দেশ ২০৪৭ সালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবস্থান নিয়ে একটি পরিকল্পনা করেছে। ওই বছর ভারতের স্বাধীনতা এবং দুটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের শতবার্ষিকী উদযাপন ছাড়াও কৌশলগত অংশীদারিত্বের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করা হবে।
ভারত এবং ফ্রান্স আন্তর্জাতিক স্তরে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং অন্যান্য অঞ্চলে আইনানুগ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে উভয় দেশই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুটি দেশ অংশীদারিত্ব সমতা, সার্বভৌমত্ব ও কৌশলগত অংশীদারের স্বার্থ বজায় রেখে চলার নীতি অনুসরণ করে। এই কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করে তোলার জন্য ভারত ও ফ্রান্স সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাধীনতা, সাম্য ও গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে অনুসরণ করে এবং আইনের শাসনকে মান্যতা দিয়ে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হবে। এক্ষেত্রে তাদের সার্বভৌমত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকবে। উভয় দেশ বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা একযোগে করবে। এছাড়াও ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টিতেও দুই দেশ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
I) নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের অংশীদারিত্ব :
১) প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একযোগে কাজ করা :
১.১) প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি আত্মনির্ভর শিল্প ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ফ্রান্স ভারতের অন্যতম অংশীদার। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় উৎপাদনের ক্ষেত্রে দুটি দেশ একযোগে কাজ করবে। এক্ষেত্রে অন্য দেশগুলিও উপকৃত হবে।
১.২) বিগত ৫ দশক ধরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যুদ্ধ বিমানের বিভিন্ন বিষয়ে দুটি দেশের মধ্যে অসাধারণ সহযোগিতামূলক এক পরিবেশ গড়ে উঠেছে। ভারত ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের বরাত দিয়েছিল। এগুলিকে যথাযথ সময়ে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ায় দুটি দেশই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইন্ডিয়ান মাল্টিরোল হেলিকপ্টার কর্মসূচির আওতায় শিল্প ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য উভয় দেশই সব ধরনের সহযোগিতা বজায় রাখবে। ভারী জিনিস বহন করতে সক্ষম এই ধরনের হেলিকপ্টারে নানা কাজে তারা শিল্পসংস্থাগুলিকে সহায়তা করবে। এই কর্মসূচির আওতায় হিন্দুস্তান অ্যারোনেটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল এবং স্যাফরন হেলিকপ্টার ইঞ্জিনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফ্রান্স হেলিকপ্টারগুলির ইঞ্জিনের মানোন্নয়ন ঘটাবে। পরবর্তীকালে সেই প্রযুক্তি ভারতে হস্তান্তর করা হবে এবং এদেশে তা তৈরি করা হবে।
১.৩) প্রথম স্করপাইন ডুবোজাহাজ নির্মাণ কর্মসূচি – পি৭৫, কারভারি কর্মসূচির আওতায় ভারতে সাবমেরিন সাফল্যের সঙ্গে উৎপাদন করা হয়েছে। দুই দেশের নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছেন। এখন উভয় দেশ ভারতীয় ডুবোজাহাজবাহিনী গড়ে তুলতে আরও উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে।
১.৪) প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত শিল্প ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব পারস্পরিক আস্থার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। স্যাফরন হেলিকপ্টার ইঞ্জিন এবং হ্যালের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর ‘শক্তি’ ইঞ্জিনের প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মেক ইন ইন্ডিয়া কর্মসূচিকে সহায়তা করার জন্য প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে ফ্রান্সের অঙ্গীকার প্রতিফলিত।
১.৫) আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর বিভিন্ন চাহিদা পূরণে ইউরোপের প্রথম সারির নৌবাহিনীর জন্য উৎপাদিত সামগ্রীর শিল্প সংস্থা ন্যাভাল গ্রুপ ফ্রান্স এবং গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর দু-দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের যৌথ অংশীদারিত্বের আর একটি উদাহরণ।
১.৬) প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন সংক্রান্ত শিল্পে সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুটি দেশই একযোগে কাজ করে চলেছে।
১.৭) প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন সংক্রান্ত শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উদ্ভাবন সংস্থা প্যারিসে ভারতীয় দূতাবাসে একটি কারিগরি দপ্তর খুলছে।
২) ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীল ও সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ :
২.১) দুই দেশ ভারত এবং ফ্রান্স — ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সম্পর্কে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী বজায় রেখে চলে। ২০১৮ সালে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভারত-ফ্রান্স সহযোগিতার ক্ষেত্রে যৌথ কৌশলগত অংশীদারিত্বের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, দুই দেশ তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। উভয় দেশের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার স্বার্থ বজায় রেখে এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীল পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য উভয় দেশ একযোগে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে উন্নয়ন সংক্রান্ত অভিন্ন কর্মসূচির জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে। দুই দেশ একে অপরের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতাকে সম্মান করে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিউ ক্যালেডোনিয়া এবং ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ায় দুটি দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করছে। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ফরাসী নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপগুলিতে ভারত-ফ্রান্স কৌশলগত অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২.২) ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমমনস্ক অংশীদারদের ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এক্ষেত্রে গত চৌঠা ফেব্রুয়ারি দুই দেশের কৌশলগত অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ২০২০-র সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলোচনা উল্লেখযোগ্য এক উদ্যোগ।
একটি অনন্য ত্রিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত ও ফ্রান্স ইন্দো প্যাসিফিক ট্রায়েঙ্গুলার কো-অপারেশন (আইপিটিডিসি) তহবিল গঠন করবে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা দূ্রীকরণ, সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যে উদ্ভাবন এবং স্টার্ট আপ সংস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করা হবে, এছাড়াও এই অঞ্চলে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। এই তহবিলের মাধ্যমে দুটি দেশই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। ২০২১ সালে ভারত – ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যোগাযোগ সংক্রান্ত অংশীদারিত্বের যে উদ্যোগ সূচিত হয়, তার অঙ্গ হিসেবে ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি যুক্তিগ্রাহ্য ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আইপিটিডিসি থেকে অনুদান দেওয়া হবে।
৩) আমাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের মূল ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া হবে:
৩.১) আমাদের সমাজে উদ্ভাবন, বিজ্ঞান ও আর্থিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নের কেন্দ্রে মহাকাশ প্রযুক্তি সম্পর্কিত তথ্য ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপস গড়ে তোলা হবে। ভারত ও ফ্রান্স তাদের অভিন্ন স্বার্থ রক্ষার জন্য মহাকাশ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা নিবিড় করতে সহমত পোষণ করেছে।
৩.২.১) বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব : সিএনইএস এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মূলত দুটি ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। তৃষ্ণা মিশনের আওতায় জলবায়ু ও পরিবেশের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর করা হবে। এছাড়াও জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রসম্পদ, বাতাসের গুণমানের ওপর নজরদারি চালানো, মঙ্গল ও শুক্র অভিযান, গগণযান প্রকল্পে দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। এনএসআইএল এবং অ্যারিয়ান স্পেস যৌথ ভাবে একটি বাণিজ্যিক পরিষেবা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে।
৩.২.২) প্রাণবন্ত মহাকাশ কর্মসূচি : ভারত এবং ফ্রান্স মহাকাশে যৌথ ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সহমত পোষণ করেছে। এক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের মহাকাশ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিকে কাজে লাগানো হবে।
৩.২.৩) মহাকাশ ক্ষেত্রে কৌশলগত আলাপ-আলোচনায় একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার মাধ্যমে ভারত ও ফ্রান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৪) আমাদের নাগরিকদের আরও ভালো ভাবে রক্ষা করার জন্য সন্ত্রাসবাদের নতুন নতুন হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন :
৪.১) সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত এবং ফ্রান্স সর্বদা একে অন্যের পাশে রয়েছে। এই সমস্যাকে দূর করতে দুটি দেশ প্রতিটি ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বহুস্তরীয় ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করা, অনলাইনের মাধ্যমে মৌলবাদের প্রসার ঘটানোকে প্রতিরোধ করা, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করতে সুসংহত উদ্যোগ গ্রহণ, বিশেষত নো মানি ফর টেরর (এনএমএফটি) ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করতে দুই দেশ একে অপরকে সাহায্য করবে। পৃথিবী থেকে জঙ্গীবাদকে নির্মূল করার জন্য ক্রাইস্টচার্চ কল বা ক্রাইস্টচার্চের আহ্বানকে বাস্তবায়িত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
৪.২) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, মানব পাচার, আর্থিক অপরাধ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে ভারত ও ফ্রান্স তাদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) এবং ফ্রান্সের গ্রুপে দ্য ইন্টারভেনশন দ্য লা জেন্ডারমেরি ন্যাশনালের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গতি আসবে।
৪.৩) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনী যথাযথ ভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
৫) একটি কার্যকরী বহুস্তরীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা :
৫.১) রাষ্ট্রসংঘের সনদকে অনুসরণ করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নীতির মূল ধারাগুলিকে যারা অগ্রাহ্য করতে চায়, ভারত এবং ফ্রান্স তাদের সেই প্রয়াসকে অগ্রাহ্য করে। উভয় দেশ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশাসনিক সংস্কার বাস্তবায়ণের মধ্য দিয়ে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
৫.২) ভারত এবং ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারকে কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। দুদেশই মনে করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে। ভারত সহ জি ফোর-এর অধীনস্ত দেশগুলির নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকে দু-দেশই সমর্থন জানায়। এক্ষেত্রে আফ্রিকার অংশগ্রহণ বৃদ্ধির পক্ষে তারা একমত। কোন অঞ্চলের জনসাধারণের ওপর আক্রমণ নেমে আসলে সেক্ষেত্রে ভেটোর প্রয়োগ নিয়ে প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা চালানোর পক্ষপাতি উভয় দেশই।
৫.৩) পরিবেশ রক্ষা এবং উন্নয়নের পক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন যে অর্থনৈতিক চুক্তি বাস্তবায়নের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ভারত এবং ফ্রান্স সেই সম্মেলনের গৃহীত উদ্যোগগুলিকে সমর্থন জানায়। একে প্যারিস এজেন্ডা বলা হয়।
৬) উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উদ্ভাবন এবং শিক্ষামূলক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যৌথ উদ্যোগ :
৬.১) ভারত এবং ফ্রান্স নিজ নিজ অঞ্চলে স্টার্ট আপ এবং উদ্ভাবন ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করে। একবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। দু-দেশই গবেষণা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে সহমত পোষণ করে। এর মাধ্যমে দুটি দেশই আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে।
৬.১.১) বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা : ভারত – ফ্রান্স যৌথ কৌশলগত কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে উভয় দেশ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। ফ্রেঞ্চ ন্যাশনাল রিসার্চ এজেন্সি (এএনআর) বিভিন্ন সময়ের চাহিদা অনুসারে প্রযুক্তির যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে, সেই বিষয়ে গবেষণার কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে – মহাকাশ, ডিজিটাল প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, জ্বালানী, বাস্তুতন্ত্র, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। ইন্দো ফ্রেঞ্চ সেন্টার ফর দ্য প্রমোশন অফ অ্যাডভান্সড রিসার্চ সহ বিভিন্ন সংস্থাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য শক্তিশালী করে তোলা হবে। এক্ষেত্রে এক দেশ অন্য দেশের সম্পত্তি ব্যবহার করতে পারবে।
৬.১.২) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি : ২০১৯ সালে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি সংক্রান্ত ভারত – ফ্রান্স পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে উভয় দেশ সুপার কম্পিউটিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম মেধা, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম মেধা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব বা গ্লোবাল পার্টনারশিপ অন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ম অনুসারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন, উদ্ভাবন, অত্যাধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়া শক্তিশালী করতে হবে।
৬.১.৩) স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা : ভারত এবং ফ্রান্স স্বাস্থ্য এবং ওষুধ শিল্পে তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কৃত্রিম মেধার প্রয়োগ, চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রাপ্ত বর্জ্য পদার্থের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা, জৈব প্রযুক্তি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সমস্যার সমাধানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এরজন্য দুই দেশ একটি ইচ্ছাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। উভয় দেশই ওষুধ নির্মাণ শিল্প, মানবসম্পদ এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত প্রযুক্তিতে তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
৬.১.৪) ইন্দো – ফ্রেঞ্চ ক্যাম্পাস ফর হেল্থ : ২০২২ সালে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য ইন্দো-ফ্রেঞ্চ ক্যাম্পাস ফর হেল্থের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়, উভয় দেশ তাকে স্বাগত জানিয়েছে। এই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ফ্রান্সের মূল ভূখন্ড এবং লা ইউনিয়ন দ্বীপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় যেসব উদ্ভাবন মূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এই উদ্যোগে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকেও অংশীদার করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দ্বৈত স্নাতকোত্তর স্তরে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ক্যান্সার, স্নায়ুবিজ্ঞান, জৈব প্রযুক্তি এবং বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য আইআইটি দিল্লি ও সরবোনে বিশ্ববিদ্যালয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ইন্সটিট্যুট পাস্তুর এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্টিয়াল রিসার্চ ২০২২-এর জানুয়ারিতে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি মোতাবেক হায়দ্রাবাদে ইন্সটিট্যুট পাস্তুরের একটি শাখা খোলা হবে।
৬.১.৫) সাইবার সহযোগিতা : সাইবার জগতের কৌশলগত গুরুত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকায় ভারত এবং ফ্রান্স এক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই দেশ রাষ্ট্রসংঘের সাইবার সংক্রান্ত প্রথম এবং তৃতীয় কমিটির সিদ্ধান্তগুলিকে কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছে। উভয় দেশই ২০২১-২৫ সময়কালে বর্তমান কমিটির কাজে সবধরণের সহায়তা করছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের জন্য একটি কর্মীগোষ্ঠী গঠন করার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি যাতে কোন অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত না হয়, তার জন্য রাষ্ট্রসংঘের নিয়ম অনুসারে উভয় দেশ যৌথভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে যে কোন অপরাধমূলক উদ্যোগকে প্রতিহত করা, তার তদন্ত এবং দ্রুত শাস্তি দানের ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায় বিচার সুনিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাইবার জগতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে একটি সক্রিয় সাইবার পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ভারত দক্ষতা বিকাশের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। উভয় দেশ এক্ষেত্রে একে অন্যের ভালো ব্যবস্থাপনাগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৬.১.৬) ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ : ফ্রান্সের তথ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ সিএনআইএল এবং ভারতের তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চালাতে উভয় দেশই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়মাবলী নিয়েও আলোচনা চলছে। তথ্য ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে উভয় দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ।
৬.১.৭) ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা : ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত প্রসার এবং তার পরিবর্তনকে ভারত ও ফ্রান্স স্বীকৃতি দেয়। সরকারি ক্ষেত্রে ডিজিটাল পরিকাঠামো, সাইবার নিরাপত্তা, নতুন উদ্যোগ বা স্টার্ট আপ, কৃত্রিম মেধা, সুপার কম্পিউটিং, ফাইভ জি / সিক্স জি টেলিকম প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ক্ষেত্রে দক্ষতা বিকাশের জন্য দুই দেশ পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সাইবার নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির বিষয়ে ভারত ও ফ্রান্স যে পরিকল্পনা করেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য উভয় দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ। একটি সুরক্ষিত ও মুক্ত সাইবার জগৎ গড়ে তোলার জন্য দুটি দেশই সচেষ্ট।
উদ্ভাবনের জন্য স্টার্ট আপ সংস্থাগুলির প্রয়োজনীয়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আর্থিক বিকাশের সুদূরপ্রসারি সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে দুটি দেশই দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত ২০২২ সালে ভিভাটেক প্রদর্শনীতে প্রথম দেশ হিসেবে অংশগ্রহণ করে। যার মধ্য দিয়ে ডিজিটাল প্রযুক্তির এই যুগে ভারতের ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বদানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ডিজিটাল শতাব্দীতে নাগরিকদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ভারত এবং ফ্রান্স এমন একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেখানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে সুবিধা হবে। গত সপ্তাহে এনপিসিআই ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্টস লিমিটেড (এনআইপিএল) এবং ফ্রান্সের লায়রা কালেক্ট একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে, ফ্রান্স সহ ইউরোপে ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস বা ইউপিআই কার্যকর করা যাবে। এবছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্যারিসের ঐতিহ্যশালী আইফেল টাওয়ার থেকে ইউপিআই-এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন শুরু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে।
মুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং সমন্বিত ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে একটি ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্টাকচারকে (ডিপিআই) কাজে লাগানো হবে। ভারত এবং ফ্রান্স ‘ইন্ডিয়া ফ্রান্স স্ট্রাকচারস’ এবং ইন্ডিয়া ফ্রান্স ইনোভেশন ইন ইনফরমেশন টেকনলোজির মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানে উদ্যোগী হয়েছে। দুই দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থাকে একযোগে ব্যবহার করার জন্য ডিপিআই-এর সাহায্য নেওয়া হবে। ডিপিআই-এর মাধ্যমে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, নাগরিকদের ক্ষমতায়ন, প্রশাসনিক কাজে সহায়তা, অর্থনীতির উন্নয়ন, সামাজিক সংস্কার, জনপরিষেবা সরবরাহের মানোন্নয়ন এবং একটি সুস্থায়ী ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারকে সম্প্রসারিত করা হবে। ভারত এবং ফ্রান্স যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে উদ্যোগগুলি গ্রহণ করবে সেগুলি বাস্তবায়নে দুটি দেশের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, আফ্রিকা ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য অংশে দুই দেশের সহযোগিতায় ডিপিআই-এর সাহায্যে মিলিত উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে।
II) পৃথিবীর জন্য অংশীদারিত্ব
১) আমাদের জলবায়ুর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে জ্বালানী ক্ষেত্রের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করে তোলা :
১.১) ভারত ও ফ্রান্স এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করছে, যেখানে কার্বন নিঃসরণ কম হবে। ভারতের নগরায়ণ ও শিল্পায়ণ, জ্বালানী ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য এসডিজি-৭-এর গুণমান অর্জন করার উদ্দেশ্যে দুই দেশই দায়বদ্ধ। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী পরিবেশবান্ধব জ্বালানীর ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে উভয় দেশই মনে করে মিশ্র জ্বালানী ব্যবহার করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভারত এবং ফ্রান্স একযোগে কাজ করে চলেছে। দুটি দেশই মনে করে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য লড়াইয়ে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১.২) ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা প্রতিহত করার জন্য উদ্যোগ:
ভারত এবং ফ্রান্স সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশকে বহুস্তরীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সহায়তা করবে বলে স্থির করেছে। এর মধ্যে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারিত্ব, আন্তর্জাতিক সৌর জোট ও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ উদ্যোগ – আইপিওআই-এর মাধ্যমে সমুদ্র এবং স্থলভাগে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য আলাপ-আলোচনা চালানো হবে। দুটি দেশ ব্লু ইকোনমি অর্থাৎ সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নেও এই প্রয়াস অব্যাহত রাখবে। এছাড়াও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আর্থিক সহায়তার দিকটিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দুই দেশের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য যে সংগঠনগুলি রয়েছে, তাদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর জন্য কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার্সের মত সংস্থাগুলি আর্থিক সহায়তা করবে।
১.৩) ইলেক্ট্রোনিউক্লিয়ার : জইতাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উভয় পক্ষই তাকে স্বাগত জানিয়েছে। ভারত থেকে অসামরিক ক্ষেত্রে নিয়োজিত পারমাণবিক ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের পরামর্শকেও স্বাগত জানানো হয়েছে। ইপিআর রিঅ্যাক্টারকে কাজে লাগানোর জন্য ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। স্কিল ইন্ডিয়া উদ্যোগের আওতায় ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানগুলিও পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। মাঝারি এবং ছোট মডিউলার রিয়াক্টারগুলি ভারতে স্থাপনের কাজে দুটি দেশ একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে জুলস হরউইৎজ রিয়াক্টারটির সাহায্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়াতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১.৪) পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন : ভারত এবং ফ্রান্স পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উদ্ভাবন মূলক উদ্যোগে একযোগে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে। এই মর্মে দুটি দেশ শিল্প সংস্থাগুলির মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী।
১.৫) পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানীর ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতে উভয় দেশই অঙ্গীকারবদ্ধ। সৌরশক্তির ক্ষেত্রে দুটি দেশই আন্তর্জাতিক সৌর জোটের ওপর নির্ভরশীল। এই জোট অন্য দেশগুলিকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে স্টার-সি কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা করবে।
১.৬) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারত এবং ফ্রান্স তাদের সহযোগিতার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে পুরোনো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংস্কার, নদীর জল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি এবং পাম্পের মাধ্যমে জল সংগ্রহ করে তার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
১.৭) দক্ষতার সঙ্গে জ্বালানীকে ব্যবহার : ফ্রান্স বিদ্যুতের অপচয় রুখতে ভারতের উদ্যোগগুলিকে সহায়তার পরিকল্পনা করেছে। এর ফলে, শহরাঞ্চলের বড় বড় বাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুতের ব্যবহার যথাযথ হবে। স্মার্ট সিটি কর্মসূচিতে এই সফল প্রয়োগ করা হয়েছে। দুটি দেশই বিদ্যুতের তথ্য আদান-প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেবে।
২) জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্রে সঙ্কট এবং দূষণের সমস্যার সমাধানে যৌথ উদ্যোগ :
২.১) জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্রে সঙ্কট এবং দূষণের সমস্যার সমাধানের জন্য ভারত এবং ফ্রান্স তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জনস্বাস্থ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তার সমাধানে দুটি দেশ অভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ধারণায় কাজ করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে ‘প্রিজোড’ উদ্যোগের সাহায্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মহামারীর সময় হাসপাতাল এবং ওষুধের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লু ইকোনমি এবং মহাসাগর অঞ্চলে প্রশাসনকে নিয়ে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে মৎস্যসম্পদের সুস্থায়ী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। সামুদ্রিক বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও নানা সমস্যার সমাধানে প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য আইএফআরইএমইআর এবং এনআইওটি/এমওইইস-এর মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে সেই চুক্তি সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্রকে সামনে নিয়ে এসেছে। ২০২৫ সালে মহাসাগর সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের সম্মেলনের আগে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করার বিষয়ে দুটি দেশই সহমত পোষণ করে।
২.২) জলবায়ু পরিবর্তন : জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভারত ও ফ্রান্স অঙ্গীকারবদ্ধ। ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত এবং ২০৭০ সালের মধ্যে ফ্রান্স কার্বন নিঃসরণমুক্ত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
২.৩) সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য ভবন নির্মাণ : কার্বন নিঃসরণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্রের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণের মাধ্যমে দুটি দেশই সাফল্য অর্জনে আগ্রহী। নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে উভয় দেশই উচ্চাকাঙ্খী নীতি প্রয়োগে আগ্রহী। যার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে। ভারত এবং ফ্রান্স এই মর্মে নির্মাণ কাজে সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত মিশন লাইফ বা পরিবেশের জন্য জীবনশৈলীর যে নীতি গ্রহণ করেছে, ফ্রান্স ২০২২-এর অক্টোবরে তা সমর্থন করে।
২.৪) বৃত্তীয় অর্থনীতি এবং প্লাস্টিকের কারণে দূষণ : প্লাস্টিকের কারণে দূষণ বন্ধ করতে বিশ্বজুড়ে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, ভারত এবং ফ্রান্স তাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের কারণে পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে দুটি দেশই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
২.৫) জীববৈচিত্রে ক্ষতি : ভারত এবং ফ্রান্স কুনমিং-মন্ট্রিয়ল আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। উভয় দেশই ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পার্কস পার্টনারশিপ বা থার্টিন পি কার্যকর করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সমুদ্রের জীববৈচিত্র রক্ষার জন্য এর সুস্থায়ী ব্যবহারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে দুটি দেশই স্বাগত জানিয়েছে। এর ফলে মহাসাগরে জীববৈচিত্র ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে এবং সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের অবনমন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
৩) ভারতের শহরাঞ্চলে এবং বাস্তুতন্ত্রের পরিবর্তনকে সহায়তা করতে সামাজিক অন্তর্ভুক্তি :
৩.১) ভারত তার শহরাঞ্চলের উন্নয়নে ফরাসী সংস্থা এবং ফ্রেঞ্চ ডেভলপমেন্ট এজেন্সি (এএফডি)-কে অংশীদার হিসেবে পেতে আগ্রহী।
৩.২) সুসংহত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : একটি সুসংহত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত শহরাঞ্চলে বৃত্তীয় অর্থনীতিকে উৎসাহিত করতে ভারত ও ফ্রান্স যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে সেগুলি নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে সেখানে তাকে সম্পদে পরিণত করার প্রক্রিয়াটিকে শক্তিশালী করা হবে। এর পাশাপাশি সিটি ইনভেস্টমেন্টস টু ইনোভেট ইন্টিগ্রেট অ্যান্ড সাসটেইন বা সিআইটিআইআইএস-২.০ কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে রাজ্য স্তরে জলবায়ু সংক্রান্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে পৌরসভাগুলিকে উৎসাহিত করা হবে।
৩.৩) পরিবহণ ও শহরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা : ভারত এবং ফ্রান্স পরিবহণ ক্ষেত্রে তাদের আলোচনাকে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে। রেল পরিবহণের বিষয়ে দুটি দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শহরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য দুই দেশ একযোগে কাজ করবে। ইতিমধ্যেই আমেদাবাদ ও সুরাট শহরে এধরনের প্রকল্প কার্যকর করা হচ্ছে।
৩.৪) সামাজিক অন্তর্ভুক্তি : ভারত এবং ফ্রান্স একটি সমন্বিত ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে আগ্রহী। এক্ষেত্রে মহিলা ও সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য অন্নপূর্ণা, ইন্দাসইন্দ ব্যাঙ্ক, নিওগ্রোথের মত বিভিন্ন তহবিলের মাধ্যমে যে প্রকল্পগুলি বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলিকে প্রোপার্কো সহায়তা করছে।
৪) দুটি দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যকে শক্তিশালী করা এবং বিনিয়োগে সহায়তার সময় সুস্থায়ী উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে কম কার্বন নিঃসৃত হয় এধরনের জ্বালানী ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
৪.১) একটি যথাযথ পরিবেশ গড়ে তুলতে ভারত এবং ফ্রান্স ভরসাযোগ্য সরবরাহশৃঙ্খল গড়ে তুলতে আগ্রহী। এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতির বিষয়ে পরামর্শ আদান প্রদান করা হবে।
৪.২) ব্যবসা-বাণিজ্য : ভারত এবং ফ্রান্স দুই দেশের রপ্তানীকারক ও বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে দ্বিপাক্ষিক স্তরে আলাপ-আলোচনা জোরদার করেছে।
৪.৩) অন্য দেশে বিনিয়োগ : দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে এবং উন্নয়নমূলক কাজের অংশীদার হতে ভারত ও ফ্রান্স তাদের দেশের বিভিন্ন সংস্থাকে বিনিয়োগে উৎসাহ দিয়ে থাকে। অর্থাৎ ফরাসী বিনিয়োগকারীরা ভারতে এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারীরা ফ্রান্সে যাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করেন তার জন্য তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এই মর্মে ইনভেস্ট ইন্ডিয়া এবং বিজনেস ফ্রান্স চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
III) জনসাধারণের জন্য অংশীদারিত্ব:
১) মূলত যুব সম্প্রদায়ের কথা ভেবে বিনিময় কর্মসূচিতে উৎসাহ দান :
১.১) অভিবাসন ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের চুক্তি ২০২১ সালে কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, পেশাদার ব্যক্তি এবং দক্ষ শ্রমিকদের আসা-যাওয়া বৃদ্ধি পাবে। ভারত এবং ফ্রান্স দু-দেশই জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে পর্যটকদের আসা-যাওয়ার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। পুরো প্রক্রিয়ার সহায়তার জন্য বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যবসায়ীদের ভিসা দিতে সাহায্য করা হবে। সরকারি কাজে যাদের পাশপোর্ট রয়েছে তাদের স্বল্প কয়েক দিনের জন্য অন্য দেশে থাকার ক্ষেত্রে ভারত ও ফ্রান্স ভিসা প্রক্রিয়ায় বিশেষ ছাড় দেবে। ২০২৬ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। এছাড়াও দুটি দেশ একে অন্যের পেশাদারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা সহ অন্যান্য যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেবে। যার ফলে দু-দেশের দক্ষ শ্রমিকরা সহজেই যাওয়া আসা করতে পারবেন।
১.২) উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অংশীদারিত্বের জন্য দুটি দেশই উৎসাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে, কারিগরি শিক্ষা এবং ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশই ভাষাগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা, ভারতীয় স্কুলে ফরাসী ভাষা শিক্ষার প্রসার ঘটানো এবং বিভিন্ন ভাষার শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ ও আদান-প্রদানে উৎসাহ দেওয়া হবে। এর ফলে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
১.৩) ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়া আসা : ভারত এবং ফ্রান্স শিক্ষা জগতে তাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর জন্য দুই দেশ ছাত্র বিনিময় প্রথাকে শক্তিশালী করতে চায়। ভারত এবং ফ্রান্স যৌথ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীকে উৎসাহ দিয়ে থাকে। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইন্দো ফ্রেঞ্চ ক্যাম্পাসে এই কর্মসূচী পালন করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গবেষকরা যাতে অন্য দেশে যেতে পারেন সেব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফ্রান্স সেদেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিদেন পক্ষে একটি সেমিস্টার করার জন্য ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ভিসা দিতে আগ্রহী, এর মাধ্যমে তারা ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার আওতায় যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশুনা করতে পারেন। এর জন্য ফ্রান্স ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ৫ বছরের মেয়াদে শেঙ্গেন ভিসা প্রদান করবে। এর মূল উদ্দেশ্য ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভারতীয় প্রাক্তনী সংস্থা গড়ে তোলা।
২০২৫ সালের মধ্যে ২০ হাজার ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীকে স্বাগত জানাতে ফ্রান্স আগ্রহী। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ৩০ হাজারে পৌঁছাবে। এর জন্য ফ্রান্স সেদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভারতে প্রচারের বিষয়ে উৎসাহিত করছে। ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আন্তর্জাতিক পাঠদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের ফরাসী ভাষায় প্রশিক্ষণ দিতে উৎসাহ যোগাবে। ফরাসী ভাষায় স্নাতক স্তরে যোগদানে ফ্রান্স উৎসাহ দিচ্ছে। এর জন্য ভারতে মাধ্যমিক স্তরে বিশেষ পাঠদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফরাসী সরকার এটি পরীক্ষামূলক ভাবে কার্যকর করবে।
১.৪) আমাদের সুশীল সমাজের মধ্যে স্থিতিশীল আদান-প্রদান : আমাদের সুশীল সমাজ বিশেষত ফ্রান্স-ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং ভারতে অ্যালে ফ্রাসে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দু-দেশে আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও ফ্রান্স নিজেদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি ভলেন্টিয়ারিং অ্যান্ড সিভিল সার্ভিস প্রকল্পের মাধ্যমে দু-দেশের যুবক-যুবতীরা একে অন্যের দেশে যাবেন। এই কর্মসূচির আওতায় ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে ফরাসী স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে।
২) আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে আদান-প্রদানকে বৃদ্ধি করতে উৎসাহদান :
২.১) আমাদের দুটি দেশ এখন সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উপাদান বিনিময়ের জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ করার পরিকল্পনা করেছে। যার মাধ্যমে দু-দেশের সৃজনশীল শিল্প জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরা পরস্পরের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলবেন।
২.২) সংগ্রহশালা ও ঐতিহ্য রক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা : দুটি দেশেরই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং ইতিহাস রয়েছে। ভারত ও ফ্রান্স ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের ঐতিহ্যর সঙ্গে পরিচয় করাতে যৌথ ভাবে পরিকল্পনা করবে। ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ ইন্ডিয়া প্রকল্পের জন্য ইচ্ছাপত্র স্বাক্ষরিত হওয়ায় ভারত ও ফ্রান্স সন্তোষ প্রকাশ করেছে। গ্র্যান্ড ল্যুভর সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রকল্পে ফ্রান্সের অর্জিত অভিজ্ঞতা ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হবে। বিভিন্ন ঐতিহ্যশালী ভবনকে সকলের কাছে তুলে ধরার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পুরাতাত্বিক নিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ করে সেগুলির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২.৪) চলচ্চিত্র : ইউরোপে ফ্রান্সের চলচ্চিত্রের ভালো বাজার রয়েছে। অন্যদিকে সারা বিশ্বে সব থেকে বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ভারতে। ভারত তাদের বিভিন্ন চলচ্চিত্র অন্য দেশে রপ্তানি করতে আগ্রহী। এর জন্য অডিও ভিজ্যুয়াল ক্ষেত্রে যৌথ প্রয়োজনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উভয় দেশ অন্য দেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নিদর্শনগুলি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
২.৫) শৈল্পিক ও সাহিত্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা : ভারত এবং ফ্রান্স দু-দেশের মধ্যে পেশাদার ব্যক্তিত্ব এবং শিল্পীদের আদান-প্রদানে উদ্যোগী হয়েছে। ৩ মার্চ ভিলা স্বাগতমের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফ্রান্সের শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাঁদের প্রতিভার নিদর্শন তুলে ধরবে। ভারতের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারীদের ফরাসী শিল্পী ও সাহিত্যিকদের জন্য একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী গড়ে তুলবে। ভারতের ললিতকলা অ্যাকাডেমি ভারতীয় শিল্পীদের ফ্রান্সে বিভিন্ন উৎসবে যোগদানে সহায়তা করে থাকে। ফ্রান্সের জনসাধারণের মধ্যে ভারতের শৈল্পিক ঐতিহ্যকে পরিচিত করাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
২.৬) ভাষাগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা : অ্যালে ফ্রসে ভারতে ফরাসী ভাষা শিক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তাকে আরও প্রসারিত করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারতে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলিতে ফরাসী ভাষা শিক্ষার জন্য নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভারতে ৫০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী যাতে অ্যালে ফ্রসের কর্মসূচি থেকে সাফল্য অর্জন করতে পারে তার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফ্রান্সে প্রাচীন ভারতীয় শিলালিপি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে ভারতীয় ভাষা সেদেশে পড়ানো হবে। ভারত থেকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠানো হলে তারা ফ্রান্সের সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
২.৭) ফ্রান্স ভারতকে ইন্টারন্যাশনালে দ্য লা ফ্র্যাঙ্কোফোনিকে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
২.৮) খেলাধুলা এবং সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলার জন্য ভারত এবং ফ্রান্স পরস্পরকে সহযোগিতার পরিকল্পনা করেছে। ২০২৪ সালে প্যারিসে অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর হয়েছে তার মাধ্যমে ভারতীয় খেলোয়াড়রা প্রয়োজনে এই সব কেন্দ্রে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।
২.৯) ভারত ও ফ্রান্সের জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে কূটনৈতিক আস্থা অর্জনের প্রয়োজন। দক্ষিণ ফ্রান্সে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংগঠনের ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারত ফ্রান্সের মার্শেই শহরে একটি দূতাবাস খুলবে। ফ্রান্স 'ব্যুরো দ্য ফ্রান্স'-এর একটি শাখা হায়দ্রাবাদে খোলা হবে।
এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত ও ফ্রান্সের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে উঠবে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে যে কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে সেগুলিতেও সহযোগিতা বাড়বে।
AC/CB/AS/
(Release ID: 1956367)
Visitor Counter : 236
Read this release in:
Malayalam
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada