প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ভারতীয় বংশোদ্ভুতদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 15 NOV 2022 4:40PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ১৫  নভেম্বর, ২০২২

 

নমস্তে। ভনক্কম।

আপনাদের সবাইকে নমস্কার। ইন্দোনেশিয়া তথা বালিতে আসার পর প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে একটি ভিন্ন ধরনের অনুভূতি হয়। আজ আমিও সেই স্পন্দন অনুভব করছি। যে দেশের সঙ্গে ভারতের কয়েক হাজার বছর ধরে সম্পর্ক রয়েছে; আমরা শুনেছি যে কয়েক হাজার বছর ধরে ভারত থেকে অনেক প্রজন্মের মানুষ এদেশে এসেছেন আবার ফিরেও গেছেন। কিন্তু সেই পরম্পরাকে কখনও ম্লান হতে দেননি। কয়েক হাজার বছর ধরে এই পরম্পরাকে সঞ্জীবিত রাখা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পরম্পরাকে জানা এবং প্রতি মুহূর্তে তার সঙ্গে যুক্ত থাকা- সেখানকার মানুষ, সেই ভূমি একটি ভিন্ন আনন্দের অভিজ্ঞতায় সিক্ত করতে থাকে। আপনারা কি কল্পনা করতে পারেন যে, আজ যে সময় আপনাদের সঙ্গে এই বালিতে বসে কথা বলছি, বালির নানা পরম্পরার জয়গান গাইছি, সেই সময় বালি থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে ভারতের কটক শহরে মহানদীর কিনারায় “বালি যাত্রা মহোৎসব” চলছে। এই বালি যাত্রা কী? এই মহোৎসব ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে কয়েক হাজার বছরের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে উদযাপন করছে। ইন্দোনেশিয়ার জনগণ এবার বালি যাত্রার ফটো যখন ইন্টারনেটে দেখবেন তখন গর্ববোধ করবেন, আনন্দিত হবেন, উৎসাহে উচ্ছ্বসিত হবেন। করোনা মহামারীর ফলে মাঝে কয়েক বছর এই মহোৎসব আয়োজন করা যায়নি সেজন্য এবার ওড়িশায় এই মহোৎসব বেশ জাঁকজমক সহকারে ধুমধাম করে লক্ষ লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পালন করা হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে সেখানকার মানুষ এই বালি যাত্রা উপলক্ষে একটি প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। আর সেটি হল কাগজের নৌকা তৈরি করে জলে ভাসানো। তারা এই কাগজের নৌকা জলে ভাসানোর ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার চেষ্টা করছেন। তার মানে হল ওড়িশায় আজ যাঁরা একত্রিত হয়েছেন তাঁদের শরীর সেখানে থাকলেও তাঁদের মন আপনাদের মাঝে এই বালিতে রয়েছে। 

বন্ধুগণ,

আমরা কথায় কখায় প্রায়ই বলি ‘ইটস আ স্মল ওয়ার্ল্ড ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বাক্যটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। সমুদ্রের বিশাল ঢেউগুলি ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্কের ঢেউয়ের মতোই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় জীবন্ত। কখনও ক্লান্তি অনুভব হয়না। এই সম্পর্ক সমুদ্রের অবিরাম ঢেউয়ের মতোই চলতে থাকে আর আমাদের সম্পর্ককে সঞ্জীবিত রাখে। একটা সময় ছিল যখন ‘কলিঙ্গ মেদাঙ্গ’-এর মতো সাম্রাজ্যের মাধ্যমে ভারতের দর্শন এবং ভারতের সংস্কৃতি ইন্দোনেশিয়ার ভূমিতে পৌঁছেছিল। আজ আমরা এমন একটা সময়ে পৌঁছেছি যখন ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া একবিংশ শতাব্দীর উন্নয়ন যাত্রায় পরস্পরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে চলেছে। ইন্দোনেশিয়ার মাটি ভারত থেকে আসা মানুষদের যুগে যুগে যে ভালোবাসা দিয়ে গ্রহণ করেছে, তাঁদেরকে যেভাবে নিজেদের সমাজে সম্মিলিত করেছে, সেই ভালোবাসার ফলেই আজও আপনারা ইন্দোনেশিয়ার উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য নিজেদের অবদান রেখেছেন। আমাদের অনেক সিন্ধি পরিবার আজও এখানে থাকেন। ভারত থেকে আসা আমাদের এই সিন্ধি পরিবারের ভাই বোনেরা এখানকার বস্ত্র শিল্প ক্ষেত্রে এবং ক্রীড়া পণ্য ক্ষেত্রে, ফিল্ম এবং টিভি ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রেখেছেন। আমার গুজরাটের অনেক মানুষের উপস্থিতি এখানে নানা গ্রহ-রত্ন হিরে, খনি শিল্প এমনকি কৃষি ক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয়। ভারত থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পেশার মানুষ ইন্দোনেশিয়ার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। অসংখ্য তামিলভাষী শিল্পী এখানকার সংস্কৃতি, এখানকার কলাকে আরও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আমার মনে আছে ৩-৪ বছর আগে যখন প্রথমবার ইন্দোনেশিয়ার বাপ্পা নিওম্যান নুআরতাকে যখন ভারত সরকার পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করেছিল তখন ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে মুর্হূমুর্হূ হাততালির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। তাঁর নির্মিত শিল্পকর্ম গরুর-বিষ্ণু-ক্যানকানা এতো অসাধারণ ছিল যে প্রায় প্রত্যেক ভারতবাসী তার প্রশংসা করেছে। তেমনিই ইন্দোনেশিয়ার ওয়ান দিবিয়া এবং এগাস ইন্দ্রো উদায়নাজি যখন পদ্ম পুরস্কার পেয়েছিলেন, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার তার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার সুযোগ হয়েছিল। এগাস ইন্দ্রো উদায়নাজিকে আপনারা খুব ভালোভাবেই চেনেন আর তিনি আজ এখানে উপস্থিতও রয়েছেন। তিনি বালিতে মহাত্মা গান্ধীর দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণপন পরিশ্রম করছেন। আমি কোথাও তাঁর একটা সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম, সেখানে তিনি বলছিলেন যে ভারতের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল অতিথি পরায়ণতা। অর্থাৎ “অতিথি দেব ভবঃ”। অর্থাৎ অতিথি দেব ভবঃ-র এই ভাবনা প্রত্যেক ভারতবাসীর শিরা-ধমনীতে প্রবাহিত হয়। এই সাক্ষাৎকার পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু আর একটি কথা বলা উচিত, আপনত্ব নিয়ে ভারতের প্রশংসা তিনি যতোই করুন না কেন ইন্দোনেশিয়ার জনগণের স্বভাবে আপনত্ব কম নেই। আমি যখন গতবার জাকার্তায় এসেছিলাম তখন ইন্দোনিশায় জনগণ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন তা আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি এবং অনুভব করেছি। এত মান, সম্মান, ভালোবাসা ও স্নেহ অতুলনীয়। আমার মনে আছে রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডোজির সঙ্গে ঘুড়ি উড়িয়ে আমি খুব মজা পেয়েছিলাম। আমাদের গুজরাটে সংক্রান্তির সময় ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে আর আমি ভালোই ঘুড়ি ওড়াতে পারি। এখানে ইন্দোনেশিয়াতেও সংক্রান্তির সময় অনেক ঘুড়ি ওড়ানো হয়। তবে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া সব সময় সুখের সময়ের বন্ধু নয়, আমরা দুঃখের সময়ও পরস্পরের পাশে দাঁড়াই। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ায় যখন বড় ভূমিকম্প হয় তখন ভারত সাহায্যের জন্য দ্রুত “অপারেশন সমুদ্র মৈত্রী”-তে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেজন্যই আমি সে বছর জাকার্তায় এসেছিলাম। আর তখন একটি কথা বলেছিলাম যে, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ৯০ নটিক্যাল মাইলের দূরত্ব রয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবে আমরা পরস্পরের থেকে ৯০ নটিক্যাল মাইল দূরে নেই, আমরা পরস্পরের ৯০ নটিক্যাল মাইল কাছে রয়েছি। 

বন্ধুগণ,

জীবনের প্রতি পদক্ষেপে, প্রতি মুহূর্তে এমন অনেক কিছু রয়েছে যেখানে ভারত এবং ইন্দোনেশিয়া মিলে মিশে পরস্পরের সম্পর্ককে সহজ করে রেখেছে। বালির এই ভূমি মহর্ষি মার্কণ্ডেয় এবং মহর্ষি অগস্ত্যের পদধূলিতে পবিত্র হয়েছে। ভারতে যেমন হিমালয় রয়েছে, বালিতে তেমনি অগুঙ্গ পর্বত রয়েছে। ভারতে যেমন গঙ্গা আছে, বালিতে তেমন তীর্থ গঙ্গা আছে। ভারতে প্রত্যেক শুভ কাজের আগে যেমন শ্রী গণেশ করা হয়, এখানেও তেমনি প্রত্যেকের বাড়িতে গণেশ বিরাজমান। সার্বজনিক স্থানগুলিতেও তাঁর পবিত্রতা সর্বজনবিদিত। পূর্ণিমার ব্রত, একাদশীর মহিমা, ত্রিকাল সন্ধ্যার মাধ্যমে সূর্য উপাসনার পরম্পরা, মা সরস্বতী রূপে জ্ঞানের আরাধনা- এ রকম অসংখ্য বিষয় রয়েছে যা আমাদের পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে রেখেছে আর প্রতিনিয়ত জুড়ে চলেছে। বালির প্রত্যেক নাগরিক ছোটবেলা থেকে মহাভারতের গাথা শুনে বড় হন। আমি তো দ্বারকাধীশ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভূমি গুজরাটে লালিত পালিত হয়েছি। আমার জীবন সেখানে কাটিয়েছি। বালির জনগণের মনে মহাভারতের জন্য যতটা শ্রদ্ধা রয়েছে ভারতের জনগণের মনেও বালির জনগণের জন্য ততটাই আত্মীয় মনোভাব রয়েছে। আপনারা এখানে ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান রামের আরাধনা করেন। আর আমরা যখন ভারতে ভগবান রামের জন্মভূমিতে অনিন্দ্যসুন্দর রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর নতুন করে স্থাপন করি তখন ইন্দোনেশিয়ার রামায়ণ পরম্পরাকেও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করি। কয়েক বছর আগে যখন ভারতে রামায়ণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল, তখন ভারতের নানা প্রান্ত ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া থেকে অনেক শিল্পী, এখানকার অনেক শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, নৃত্যবিশারদ ও গায়ক ভারতে এসেছিলেন। আমেদাবাদ, হায়দ্রাবাদ, লক্ষ্ণৌ ইত্যাদি অনেক শহরে নিজেদের কর্মসূচি পালন করে তাঁরা অযোধ্যায় এসেছিলেন, এবং তাঁদের সর্বশেষ অনুষ্ঠান হয়েছিল সেই অযোধ্যাতেই। আর সেই সমস্ত অনুষ্ঠান অনেক ভারতবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ভারতের যেখানেই তাঁরা গেছেন সেখানকার খবরের কাগজে তাঁদের শিল্প নৈপ্যুণ্যের কথা ছাপা হয়েছে। 

ভাই ও বোনেরা,

বালিতে হয়তো এমন কেউ নেই যিনি একবার ভারতে গিয়ে অযোধ্যা কিংবা দ্বারকা ঘুরে আসতে চান না। ভারতেও অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা এখানকার প্রমবনন মন্দির এবং গরুর বিষ্ণু কিনকানা-র অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিমা দর্শন করার জন্য উৎসাহী। করোনা কালের আগে এক বছরে ৫ লক্ষেরও বেশি ভারতবাসীর এদেশে ঘুরতে আসা এই প্রবণতার সাক্ষী। 

বন্ধুগণ,

যখন ঐতিহ্য একরকম হয়, যখন মানবতার প্রতি আস্থা সমান হয়, তখন উন্নয়নের জন্যও সমান রাস্তা গড়ে উঠতে থাকে। কয়েক মাস আগেই ১৫ আগস্ট তারিখে ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উদযাপন করেছে। ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবস ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দু’দিন পর আসে। ১৭ আগস্ট তারিখে পালিত হয়, কিন্তু ইন্দোনেশিয়া ভারত থেকে দু’দিন আগেই স্বাধীন হয়েছিল। ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে ভারতের অনেক কিছু শেখার আছে। স্বার্ধীন হওয়ার পর বিগত ৭৫ বছরের উন্নয়ন যাত্রায় ইন্দোনেশিয়াকে দেওয়ার মতো অনেক কিছু ভারতের কাছেও আছে। ভারতের মেধা, ভারতের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন, ভারতের শিল্পোদ্যোগ। আজ, এই সমস্ত কারণে ভারত বিশ্বে একটি নতুন পরিচয় গড়ে তুলেছে। আজ বিশ্বের অগণিত কোম্পানি এমন রয়েছে যাদের সিইও ভারতীয় বংশোদ্ভূত। আজ বিশ্বে যতো ইউনিকর্ন তৈরি হচ্ছে সেগুলির প্রত্যেক ১০টার মধ্যে একটা ভারতের ইউনিকর্ন রয়েছে। আজ ভারত বিশ্বের সর্বাধিক দ্রুত গতিতে উন্নয়নশীল বড় অর্থনীতির দেশ। আজ ভারত ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। আজ ভারত গ্লোবাল ফিনটেক, আইটিবিপিএন-এর জন্য আউট সোর্সিং-এর ক্ষেত্রেও বিশ্বে এক নম্বর। আজ ভারতে স্মার্ট ফোন ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বিশ্বে এক নম্বর, আর ওষুধ সরবরাহ এবং টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারত এক নম্বরে।

বন্ধুগণ,

২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আর সেই পরিবর্তন মোদী নয়, সেই বড় পরিবর্তনের নাম গতি এবং দক্ষতা। আজ ভারত অভূতপূর্ব গতি এবং অপ্রত্যাশিত মাত্রায় কাজ করছে। এখন ভারত আর ছোটো করে ভাবে না। মূর্তি নির্মাণ করলেও তা বিশ্বে সর্ব বৃহৎ, স্টেডিয়াম গড়ে তুললেও তা বিশ্বে সর্ব বৃহৎ। ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতে ৩২ কোটি থেকেও বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তার মানে হল, আমেরিকার মোট জনসংখ্যা যতো প্রায় সমসংখ্যক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে ভারত প্রয়া ৩ কোটি গরিব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে পাকা বাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। আর যখন বাড়ি তৈরি হয়ে যায় তখন মানুষ রাতারাতি লাখপতি হয়ে যায়। যখন আমি ৩ কোটি বাড়ির কথা বলছি, তার মানে অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার সমান মানুষের বাড়ি বিনামূল্যে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বিগত ৭-৮ বছরে ভারতে ৫৫ হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ গোটা বিশ্বকে প্রায় দেড় চক্কর লাগানোর মতো দৈর্ঘ্যের নতুন জাতীয় মহাসড়ক তৈরি হয়েছে। আজ ভারত আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে যত মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে তা গোটা  ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা থেকেও বেশি। করোনা সংকটের সময় ভারত সরকার তার যতো নাগরিককে বিনামূল্যে টিকার ডোজ দিয়েছে তার মোট সংখ্যা আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যার আড়াই গুণ। এই তথ্যগুলি জেনে নিশ্চয়ই আপনাদের বুক গর্বে ফুলে উঠছে। সেইজন্যই বলছি যে, ভারতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। 

বন্ধুগণ,

আজকের ভারত তার ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত, তার ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিকড়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে আকাশ ছোঁয়া ও উন্নত ভারত গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু ভারতের এই লক্ষ্য শুধুই নিজেদের জন্য নয়। আমরা স্বার্থপর নই। শুধু নিজেদের জন্য কাজ করার শিষ্টাচার আমাদের নেই। একবিংশ শতাব্দীতে আজ বিশ্ববাসী ভারতের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। আর সেই প্রত্যাশাকে ভারত নিজের দায়িত্ব বলে মনে করে। আমরা বিশ্বের ভালোর জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে সংকল্পবদ্ধ। আজ আমরা নিজেদের উন্নয়নের জন্য যখন স্বাধীনতার অমৃতকালের পথ-মানচিত্র রচনা করছি তখন এর পাশাপাশি বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আকাঙ্খা পূর্তির দিকেও লক্ষ্য রাখছি। আজ যখন ভারত আত্মনির্ভর ভারতের দূরদৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে চলেছে সেই ভাবনায় বিশ্বের কল্যাণের ভাবনাও জুড়ে রয়েছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে ‘ভারত এক সূর্য, এক পৃথিবী, এক গ্রিড’ মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সকলের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করার জন্য ভারত এক পৃথিবী এক স্বাস্থ্য অভিযান শুরু করেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো সমস্যা প্রতিরোধে বিশেষ করে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলির স্বার্থে ভারত নিয়মিত কাজ করে চলেছে। আবহাওয়া পরিবর্তন প্রতিরোধে ভারত বিশ্বকে ‘মিশন লাইফ’ অর্থাৎ ‘লাইফ স্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট’- প্রত্যেক নাগরিক যাতে এমন জীবনশৈলী পালন করে যা পরিবেশ বান্ধব হবে! আজ যখন গোটা বিশ্ব পরিবেশ বান্ধব এবং সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে আকর্ষিত হচ্ছে তখন ভারতের যোগ ও আর্য়ুবেদ সমগ্র মানবতার জন্য এক একটি বড় উপহার। আর বন্ধুগণ, যখন আর্য়ুবেদের কথা বলছি তখন ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে আর একটি সম্পর্কের কথা মনে পড়ছে। আমার মনে আছে যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন গুজরাটের আর্য়ুবেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এখানকার “ইউনিভার্সিটিস হিন্দু ইন্দোনেশিয়া”-র মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে তার কয়েক বছর পর ইন্দোনেশিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আর্য়ুবেদ হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

‘বসুধৈব কুটুম্বকম’- অর্থাৎ গোটা বিশ্বকে একটি পরিবার হিসেবে ভাবার এই ভাবনা, এই শিষ্টাচার বিশ্ব কল্যাণের পথকে প্রশস্ত করে। করোনার সংকটকালে আমরা দেখেছি ভারত জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুরু করে টিকা উৎপাদন পর্যন্ত প্রত্যেকটি প্রয়োজনীয় সম্পদের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা অর্জন করেছে। আর এর ফলে গোটা বিশ্ব উপকৃত হয়েছে। ভারতের নব অর্জিত সামর্থ অসংখ্য দেশের জন্য একটি সুরক্ষা কবচের কাজ করেছে। ইন্দোনেশিয়ার মতো আমাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধু দেশগুলির জন্য আমরা বিশেষভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছি। এভাবে আজ ভারত মহাকাশ ক্ষেত্রেও একটি প্রধান আন্তর্জাতিক মহাশক্তি রূপে উঠে আসছে। আর এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও যে ভারত অনেক দশক ধরে শুধু বিদেশী অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম আমদানি করতো, সেই দেশ আজ নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। ব্রহ্মোস মিসাইল থেকে শুরু করে তেজস যুদ্ধ বিমান- এগুলির আকর্ষণ এখন সারা পৃথিবীতে ক্রমবর্ধমান। আজ ভারত বড় বড় লক্ষ্যস্থির করছে আর সেগুলি অর্জনের জন্য কঠিন পরিশ্রম করছে। সংকল্প থেকে সিদ্ধির এই মন্ত্র আজ একবিংশ শতাব্দীর নতুন ভারতের প্রেরণা হয়ে উঠেছে। আজ এই সুযোগে আমি আপনাদের সবাইকে আগামী ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে ৯ তারিখে আমরা এই কর্মসূচি পালন করি। এবার এই সম্মেলন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে হবে। আর ইন্দোর হচ্ছে ভারতের এমন একটি মহানগর যেটি গত ৫-৬ বছর ধরে দেশের পরিচ্ছন্নতম শহরের পুরস্কার জিতেছে। সেজন্যই বলছি আপনারা এবার অবশ্যই ইন্দোরে আয়োজিত এই প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে আসুন। নিজের ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যে থেকে ওই দিনটি বের করে এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হন। যখন আপনারা ইন্দোরে আসবেন তার দু একদিন পরই আমেদাবাদে ঘুড়ি উৎসব হবে। আর ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারা ঘুড়ি উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন না এটা হতেই পারে না। আপনারা যখন ভারতে আসবেন তখন একা আসবেন না। গোটা পরিবারের সবাইকে নিয়ে চলে আসুন। সঙ্গে আপনার প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ান পরিবারগুলিকেও নিয়ে আসুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে তুলতে আপনাদের সহযোগিতা এবং সক্রিয় অবদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনারা সবাই কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের এই কর্মভূমির কল্যাণের জন্য যত অবদান রাখছেন- তা তো রাখবেনই। এটাই ভারতের শিষ্টাচার। আমরা যেখানে থাকি, সেই সমাজের জন্য কাজ করার দায়িত্বও আমাদের ভালোভাবে পালন করতে হয়। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের গুজরাটের বোহরা সমাজের অনেক ভাই-বোনেরা এখানে রয়েছেন। আমি সৌভাগ্যবান যে সৈয়দনা সাহেবের সঙ্গে আমার অনেক ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। আর বিশ্বের যেখানেই যাই বোহরা পরিবারের কেউ না কেউ আমার সঙ্গে এসে যখন দেখা করেন তখন খুব আনন্দ হয়। 

বন্ধুগণ,

আপনারা এখানে এতো বিপুল সংখ্যায় এসেছেন, নিজেদের মূল্যবান সময় বের করে এসেছেন। আর উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি আপনাদের চোখে-মুখে ওড়িশার বালি যাত্রার মতোই উৎসাহ ও উদ্দীপনা। আপনাদের এই ভালোবাসার জন্য, আপনাদের স্নেহের জন্য, ভারতের প্রতি আপনাদের এই শ্রদ্ধার জন্য আমি আপনাদের সবাইকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, অনেক অনেক শুভ কামনা জানাই। 

ধন্যবাদ বন্ধুগণ!

 

PG/SB/ NS



(Release ID: 1877415) Visitor Counter : 268