প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
গুজরাটের জামনগরে বহুবিধ উন্নয়নমূলক কর্মসূচির উদ্বোধন ও শিলান্যাস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ
Posted On:
10 OCT 2022 11:58PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১০ অক্টোবর, ২০২২
ভারতমাতা কি জয়,
ভারতমাতা কি জয়,
মঞ্চে উপস্থিত জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল, ২০১৯ – এর সাধারণ নির্বাচনে যিনি সমগ্র ভারতে সবচেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন, তেমনই গুজরাট রাজ্যের ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি এবং সংসদে আমার সহকর্মী শ্রী সি আর পাটিলজী, গুজরাট রাজ্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী ও বিধায়কগণ, উপস্থিত সমস্ত সাংসদগণ এবং বিপুল সংখ্যায় আগত আমার জামনগরের প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
বন্ধুগণ,
ভারুচ থেকে জামনগর পর্যন্ত গুজরাটের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নকে সম্প্রসারিত করার এই অভিজ্ঞতা সত্যি অদ্ভুত। আজ এখানে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস হ’ল। এইসব বিদ্যুৎ সরবরাহ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের জন্য আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এছাড়া, আজ এখানে বাল্মীকি সমাজের জন্য একটি বিশেষ কম্যুনিটি হলেরও উদ্বোধন হ’ল। এতে আমাদের বাল্মীকি সমাজের প্রিয় ভাই ও বোনেরা বিভিন্ন সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারবেন।
বন্ধুগণ,
আজ জামনগর আমাকে অবাক করে দিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে এই সভাস্থলে আসার পথে রাস্তার দু’পাশে এত অসংখ্য মানুষ, মা ও বোনেরা উপস্থিত থেকে আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশীর্বাদ দিয়েছেন, কাশীর মাটিতে তাঁদের এই উৎসাহ, বৃদ্ধা মায়েদের আশীর্বাদ থেকে পবিত্র আর কি হতে পারে! হ্যাঁ, এটা তো ছোট কাশীই। বড় কাশীর সাংসদকে আজ ছোট কাশীর জনগণ এত আশীর্বাদ দিয়েছেন যে, আমি আপ্লুত। সবে মাত্র নবরাত্রির উৎসব গেল। বিগত দু’বছর বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনা সঙ্কটকালে সব ম্রিয়মান হয়েছিল। এ বছর তাই জামনগর তথা গুজরাটের প্রতিটি প্রান্তে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নাবরাত্রি পালিত হয়েছে। উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে দশহরা সম্পন্ন হয়েছে। আর এখন দীপাবলী উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, আজ থেকে দু’দশক আগে এই সময়েই জামনগর, সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ সহ গোটা গুজরাট প্রবল ভূমিকম্পের সম্মুখীন হয়েছিল। সেই দুঃখের দিন এত ভয়ঙ্কর ছিল যে, সেই বছর গুজরাটের কোনও বাড়িতেই হয়তো নবরাত্রি ও দীপাবলি উৎসব পালন করা হয়নি। সকলে ভেবে নিয়েছিলেন যে, গুজরাট আর কোনও দিন উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু, এখানকার অসম সাহসী জনগণ নিজেদের পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে উঠে দাঁড়িয়েছেন। আত্মবিশ্বাস ও সংকল্প শক্তি সমস্ত নিরাশাকে হারিয়ে দিয়েছে। ফলে, গুজরাট শুধু উঠে দাঁড়ায়নি, দেখতে দেখতে গুজরাট দৌড়াতে শুরু করেছে। আর গোটা দেশকে গতিপ্রদানের শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আপনারা দেখুন, যে কচ্ছ একদিন মৃতদেহ ঢাকার চাদর গায়ে ঢেকে শুয়েছিল, সেই কচ্ছের উন্নয়ন দেখার জন্য, কচ্ছের জাহোজলালি অভয়ারণ্য দেখার জন্য প্রকৃতির বিশাল বৈচিত্র্য দেখার জন্য দেশ তথা বিশ্বের বহু পর্যটক এখানে আসছেন। আজ যখন আমি জামনগর এসেছি, এই সুযোগ ব্যবহার করে জামনগরবাসীর প্রতি আমার অনুরোধ, ভূমিকম্পে কচ্ছের ভুজিয়া ডুঙ্গরে আমরা যাঁদের হারিয়েছি, মাস দুয়েক আগে তাঁদের স্মৃতিতে স্মৃতিবন নামক সুন্দর একটি স্মারক নির্মিত হয়েছে। সেখানে সেই স্মৃতিফলকে, ভূমিকম্পে জামনগরের যত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের নামও লেখা রয়েছে। সেজন্য আমার অনুরোধ, যে পরিবারগুলি ভূমিকম্পে স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা অবশ্যই একবার সেই স্মৃতিবন ঘুরে আসুন। আর যেখানে আপনার প্রিয়জনদের নাম খোদিত রয়েছে, সেখানে ফুল-মালা অর্পণ করে আসুন। এছাড়া, জামনগরের কোনও ভাই-বোন যদি কচ্ছে যান, আপনারাও ভুজের এই অনিন্দ্য সুন্দর স্মৃতিবনে যেতে ভুলবেন না।
ভাই ও বোনেরা,
আজ যখন আমি জামনগর এসেছি, এই সুযোগে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে জাম সাহেব মহারাজা দিগ্বিজয় সিংজীর স্মৃতিতে শত শত প্রণাম জানাই। মহারাজা দিগ্বিজয় সিংজী ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও প্রজাবৎসল। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের যে ভারতীয়রা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আর অত্যন্ত বাৎসল্যের সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে, পোল্যান্ডে বসবাসকারী ভারতীয়দের মনে তাঁর এক বাৎসল্য মূর্তি গড়ে উঠেছে। সেই আত্মীয়ভাব থেকে আজও গোটা ভারত উপকৃত হচ্ছে। সম্প্রতি ইউক্রেনে ভারতীয় ছাত্ররা সঙ্কটগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা হাজার হাজার সেইসব ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করার পর পোল্যান্ড সরকার তাঁদের যেভাবে সাহায্য করেছে, তার পেছনে মহারাজ দিগ্বিজয় সিংজীর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা কাজ করেছে। সেই মহান জাম সাহেবের শহরকে উন্নতির নতুন নতুন শিখতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। জামনগরের জাহোজলালির পরিধি বৃদ্ধি করে প্রকৃত অর্থে আমরা মহারাজা দিগ্বিজয় সিং জামসাহেবকেই শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছি। আর বর্তমান জাম সাহেব খত্রুতুল্য সিংজীর আশীর্বাদ তো আমার উপর সবসময়েই বর্ষিত হয়। আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করে আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি যেন আমাদের জন্য আরও দীর্ঘকাল পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেন। বন্ধুগণ জামনগর, ক্রিকেট বিশ্বে সর্বদাই পরিচিত, আজও ক্রিকেট বিশ্বে সেখানে ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উড়ছে। জামনগর ও সৌরাষ্ট্রের খেলোয়াড়রা ক্রিকেট মাঠে তাঁদের পরাক্রম দেখাচ্ছেন। ট্রফি জয়ের ক্ষেত্রেও গুজরাট এগিয়ে থাকছে। এত প্রতিভাসম্পন্ন ও সেবা ভাবনা সম্পন্ন জামনগরের ভূমিকে প্রণাম জানিয়ে আমি সর্বদাই আনন্দ পাই। আর তার সঙ্গে আন্তরিকভাবে আপনাদের সেবা করার শপথ আমার মনে আরও শক্তিশালী হয়।
ভাই ও বোনেরা,
একটু আগেই ভূপেন্দ্রভাই আমাদের উন্নয়নের পঞ্চশক্তির কথা উল্লেখ করেছেন। এই উন্নয়নের ৫টি সংকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুজরাট নিজেকে আরও মজবুত করেছে। হিমালয়ের শক্তির মতো এই ৫টি সংকল্পের শক্তি গুজরাটকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। জন শক্তি, জ্ঞান শক্তি, জল শক্তি, জ্বালানী শক্তি এবং সুরক্ষা শক্তি – এই ৫টি সংকল্পের স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে গুজরাটকে আমরা সাফল্যের সঙ্গে অনিন্দ্য সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছি। আপনারা সকলে জানেন যে, ২০-২৫ বছর আগে আমাদের এখানে কি অবস্থা ছিল। আমার সামনে যে ২০-২২ বছর বয়সী যুবক-যুবতীরা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা হয়তো খুব একটা অবহিত নন যে, আমাদের এই জামনগর ও কাথিয়াবারের অবস্থা আগে কেমন ছিল। বিদ্যুৎ অপ্রতুল ছিল, বিদ্যুৎ নিয়ে খবরের কাগজে লেখা হ’ত। জলের জন্য আমাদের মেয়েদের ৩-৪ কিলোমিটার দূরে মাথায় কলসি নিয়ে যেতে হ’ত। উত্তর গুজরাটের সেই দিনগুলির সমস্যা আমরা অতিক্রম করে এসেছি। এখন যারা স্কুল-কলেজে পড়ছে, তারা শুনে আশ্চর্য হবে যে, কাথিয়াবারের অবস্থা আগে এরকম ছিল।
একটা সময় ছিল, যখন আমি রাজনীতিতে ছিলাম না, তখন আমি খবরের কাগজে জামনগরের একটি ছবি দেখেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জামনগর সফরে এসেছিলেন। কিসের জন্য? একটি জলের ট্যাঙ্ক উদ্বোধনের জন্য। আর সেই জলের ট্যাঙ্ক উদ্বোধনের খবর খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল। আর আজ আমি এখানে সেই সময় গোটা গুজরাটের বার্ষিক যে বাজেট ছিল, তারচেয়েও বেশি মূল্যের প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছি। এই একটি উদাহরণ থেকেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে, এখন কোনও অবস্থাতেই সামনে এগিয়ে যাবার গতিকে আমরা শ্লথ করতে পারি না। এখন আমাদের অনেক উচ্চতায় পৌঁছনোর জন্য এগিয়ে যেতে হবে।
যখন আমি প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম, তখন জামনগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিধায়করা আমার কাছে প্রায়ই ত্রাণ কার্যে সাহায্যের জন্য আবেদন নিয়ে আসতেন। আমাদের রাজ্যে আগে সামান্য মাটি ফেলে রোলার চালিয়ে দিলেই কাঁচা মাটির রাস্তা তৈরি হয়ে যেত। আমাদের বিধায়করা তেমন রাস্তার জন্যই আবেদন করতেন। আর এখন সময় এতটাই বদলেছে যে, এখনকার বিধায়করা শুধু পিচের রাস্তায় খুশি হন না। তাঁদের চারলেনের সড়কপথ চাই। আগে বিধায়করা তাঁর এলাকায় হ্যান্ড পাম্প বসানোর জন্য দরবার করতেন। আর এখন সৌনি যোজনার মাধ্যমে মা নর্মদার জল সমগ্র গুজরাটে পরিক্রমা করতে চলেছে। ভাই ও বোনেরা, একটা সময় ছিল যখন আমরা মা নর্মদার পরিক্রমা করে পুণ্য অর্জন করতাম আর এখন মা নর্মদা আমাদের উপর এতটাই খুশি যে, তিনি এখন গুজরাটের প্রতিটি প্রান্ত পরিক্রমা করে জনগণকে আশীর্বাদ দিচ্ছেন, নবচেতনা ও নবপ্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত করছেন।
যখন আমি রাজকোটের একটি সভাগৃহ থেকে এই সৌনি যোজনা উদ্বোধন করেছিলাম, তখন আমার বিরোধীরা খুব একটা খুশি হননি। এই প্রকল্প অসম্ভব, ভোটের আগে এগুলি মোদীজীর ভাওতা! তখন আমি বলি, ভাই আমরা হ্যান্ড পাম্পের বেশি তো ভাবতেই পারেন না। আমি এত বড় পাইপ লাইন বসাবো যে, তার ভেতরে আপনারা মারুতি গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আজ আপনাদের সামনে সেই পাইপলাইন বসে গেছে আর এর মাধ্যমে সৌনি যোজনার জলাশয়গুলি জলে ভরে উঠছে, আপনাদের চাষের ক্ষেতগুলি শস্য শ্যামলা হয়ে উঠছে। এবার তো আমার কৃষক ভাইয়েরা কার্পাস ও চিনে বাদামের ভালো দাম পেয়েছেন। এর আগে কখনও আপনারা এই দামে শস্য বিক্রি করতে পারেননি। এখন আমাদের লালপুরেও লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমিতে জল পৌঁছে গেছে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে জামনগর দ্বারকা, রাজকোট, পোরবন্দরের লক্ষ লক্ষ মানুষ পরিশ্রুত পানীয় জল পাবেন।
গুজরাটে জল জীবন মিশনের কাজ যত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে, তার জন্য আপনাদের কর্মঠ মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্রভাই ও তাঁর টিমকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। কারণ, বাড়িতে জলের বোঝা মা-বোনেদেরই বইতে হয়। বাড়িতে অতিথি এলে জলের সমস্যাই সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে। আর মা-বোনেদের মাথা থেকে এই কষ্টের কলসি কে সরাবে ভাইরা! তাঁদের পুত্রই তো সরাবে। আজ তাঁদের এই পুত্রই ‘হর ঘর জল’ অভিযানের মাধ্যমে সারা দেশে ১০০ শতাংশ বাড়িতে নলবাহিত পরিশ্রুত জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে।
আমাদের সরকার গরীব কল্যাণে সমর্পিত করোনা সঙ্কটকালে আমরা সবার আগে গরীবদের কথা ভেবেছি। কোনও গরীবের উনুন জ্বলবে না – এরকম পরিস্থিতি যেন না আসে, তা সুনিশ্চিত করতে দেশের ৮০ কোটি গরীবের বাড়িতে বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দিয়েছি। আর আমাদের দেশে কেউ এক দানা অন্ন খেলে তাঁকে আশীর্বাদ দিতে ভোলেন না। সেজন্য আমরা চোখ বন্ধ করে দেশের ৮০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ পাচ্ছি। আরও কোটি কোটি মানুষের, আপনাদের সকলের আশীর্বাদ পাচ্ছি। এই প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা এখন ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে। কোনও সঙ্কটে কোনও গরীবের উনুন জ্বলবে না – এরকম পরিস্থিতি যেন না আসে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ চালু করা আমাদের একটা বড় পদক্ষেপ। এই শহরকে যেমন ছোট কাশী বলা হয়, তেমন আগে জামনগরকে সারা দেশে তেমন কেউ চিনতেন না। আর এখন গ্রামের ভাষায় যদি বলি, জামনগর এখন পঞ্চরঙ্গী হয়ে উঠেছে। আর শহুরে ভাষায় যদি বলি তা হলে বলব, ‘কসমোপলিটন’ হয়েছে। আজ জামনগর জেলায় কাজ করতে সারা দেশ থেকে মানুষ আসেন। বিহার, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে শ্রমিকরা এসেছেন, সেই গরীবের উনুন জ্বলবে না – এরকম পরিস্থিতি যেন না আসে, তা সুনিশ্চিত করতেই আমরা ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছি। জামনগরের তৈল সংশোধনাগার দেশের ৩৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমাদের এই জামনগরের মাটিতে শোধন করা হয়। জামনগরের শিল্পোদ্যোগ উন্নয়নের জন্য আজ নরেন্দ্রভাই ও ভূপেন্দ্রভাইয়ের নেতৃত্বাধীন ডবল ইঞ্জিন সরকার নিয়মিত কাজ করে চলেছে। ২০ বছর আগে এই শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা কেমন ছিল ভাই? এখন জামনগরে প্রশস্ত সড়কপথ, অনেকগুলি ওভার ব্রিজ, ওভার পাস ও উড়ালপুল শহরের সমৃদ্ধির পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের জীবনকে গতিশীল করেছে। সমুদ্রতটে গুজরাটের পশ্চিম প্রান্তের এককোণে বসে একা জামনগর নতুন ভারতের উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
জামনগরের সঙ্গে ভারতের সমস্ত প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সুগম করতে ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে অমৃতসর, ভাতিন্ডা হয়ে জামনগর পর্যন্ত করিডর নির্মিত হচ্ছে। এই করিডর জামনগরের সঙ্গে সমগ্র উত্তর ভারতের যোগাযোগকে মজবুত করবে। এই শক্তি এখানকার উৎপাদন, ছোট-বড় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিচয় সমগ্র উত্তর ভারতে বিস্তৃত হবে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখন্ড হয়ে হিমাচল পর্যন্ত এই করিডর উত্তর ভারতে গুজরাটে উৎপাদিত কৃষি ও শিল্প পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে। আমাদের গুজরাটিদের একটি বৈশিষ্ট্য হ’ল – আমরা যে কোনও অপ্রয়োজনীয় জিনিসকেও কাজে লাগাতে সিদ্ধহস্ত। আমের রস খেয়ে তার আঁটিকেও নষ্ট হতে দিই না, তেমনই আমাদের হাইপারের নদী-নালার পারের অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত জমিতে ৪০ মেগাওয়াট সৌরশক্তি উৎপাদন প্রকল্প গড়ে উঠেছে।
বন্ধুগণ,
কৃষক কল্যাণ থেকে শুরু করে গরীব মানুষের জীবনযাত্রা উন্নত করা, শিল্পোন্নয়ন কিংবা পরিকাঠামো উন্নয়ন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ গুজরাট উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। জামনগর আজ আন্তর্জাতিক স্তরে নিজের পরিচয় তৈরি করেছে। জামনগরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেন্টার ফর গ্লোবাল ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন এবং আয়ুর্বেদ বিশ্ববিদ্যালয় গুজরাটের মাথায় নতুন মুকুট হয়ে উঠেছে। আজ জামনগরের আয়ুর্বেদ বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের জামনগর যতই ‘ছোট কাশী’ হোক না কেন, আমাদের জামনগর এখন সৌভাগ্য নগর হয়ে উঠেছে। আমাদের জামনগরের উৎপাদিত সিঁদুর, চুড়ি, টিপ, বান্ধনী – এইসব কিছুই আমাদের সৌভাগ্য নগরেরই পরিচয়। আমাদের সরকার গুজরাটের এই বান্ধনী শিল্পকলার উন্নয়নের জন্য বেশ কয়েক ধরনের নতুন নতুন উৎসাহ ভাতার ব্যবস্থা করেছে। ‘হস্তকলা সেতু যোজনা’র মাধ্যমে সরকার জামনগরের পিতল শিল্পকে পল্লবিত ও প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আমার মনে আছে, যখন আমি প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলাম, তখন জামনগর থেকে অনেকেই আমার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। তখন জামনগরের পিতল শিল্পের দুর্দিন চলছিল। আজ আমরা সেই দুর্দিন থেকে বেরিয়ে এসে এখানকার পিতল শিল্পকে পল্লবিত ও প্রস্ফুটিত হয়ে উঠতে দেখছি।
ভাই ও বোনেরা,
আজ আমাদের জামনগর, রাজকোট তথা আমার কাথিয়াবারের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পোদ্যোগগুলির শক্তি এতই যে এখানে আলপিন থেকে শুরু করে উড়ো জাহাজের কলকব্জা - সবই উৎপাদিত হয়।
বন্ধুগণ,
আজ আমাদের দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করা অনেক সহজ। ব্যবসায়ীদের সমস্যা লাঘবের জন্য আমরা সমস্ত ক্ষেত্রে সরকারের দখলদারি হ্রাস করার উদ্দেশ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির ক্ষেত্রে দখলদারি ন্যূনতম করাকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। আগে সরকারের কাছে যে কোনও কাজ চাইলে তার জন্য আলাদা-আলাদা ফর্ম ভরতে হ’ত। আপনারা শুনলে খুশি হবেন যে, এরকম ৩৩ হাজার ছোট ছোট সরকার কমপ্লায়েন্স আমরা সমাপ্ত করেছি। এরফলে, সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র।
অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজ আমলের আইন-কানুন চলতো। আমরা সেগুলি বাতিল করেছি। আমরা দেশের বাইরে ছোটখাটো কারণে জেলে পাঠাতে চাই না। সেজন্য আমরা ২ হাজারেরও বেশি আইন বাতিল করে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’কে সুগম করেছি। ফলে, ২০১৪ সালে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ – এর আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং – এ আমাদের ভারত ১৪২তম স্থানে ছিল। ৫-৬ বছর পরিশ্রম করে এখন আমরা ৬৩ নম্বর স্থানে পৌঁছেছি। এখন আরও জোর দিয়ে আমরা ৫০ নীচে নামতে চাই। এত বড় সংস্কার যেন শুধু কাগজেই না লেখা থাকে, দেশের ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা যাতে এর দ্বারা লাভবান হন, তা আমরা সুনিশ্চিত করেছি।
গোটা বিশ্বে ভারতের এই উন্নতি দেখে আমরা অনেকেরই চক্ষুশূল হয়েছি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আইএমএফ এবং বড় বড় আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ আমাদের যখন আমাদের প্রশংসা করছেন – এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। ইংল্যান্ড যেখানে গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বেশি মূল্য বৃদ্ধির শিকার, আমেরিকা যখন গত ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি মূল্য বৃদ্ধি দেখছে, অনেক উন্নত দেশের উন্নয়ন হার যখন থমকে গেছে, সুদের হার যখন বেড়ে গেছে, তখন ভারত একমাত্র দ্রুতগতিতে অর্থনৈতিক উন্নতির পথে এগিয়ে চলেছে। ২০১৪ সালে ভারত বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ছিল, আর গত ৮ বছরে আমরা এক লাফে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছি। এই সাফল্যের কারণ এটা নয় যে, মোদী আপনাদের প্রধানমন্ত্রী। কিছুদিন আগেই ৫ নম্বরে সেই দেশ ছিল, যারা ২৫০ বছর আমাদের শাসন করেছে। আজ ভারত তাদেরকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। এতে সরকারের যতটা কৃতিত্ব, তারচেয়ে বেশি আপনাদের কৃতিত্ব। আমাদের দেশের শ্রমিক, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রত্যেক ভারতবাসীর কৃতিত্ব। আপনারা দেশ শাসনের জন্য আমাদেরকে বেছে নিয়েছেন। আর সেজন্যই দেশ এগিয়ে চলেছে। আপনাদের সকলকে শত শত প্রণাম।
বন্ধুগণ,
এক সপ্তাহ আগেই গুজরাট সরকার নতুন শিল্প নীতি প্রকাশ করেছে, যা আজ দেশে-বিদেশে উচ্চ প্রশংসিত। সেজন্য ভূপেন্দ্রজী ও তাঁর টিমকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই নতুন শিল্প নীতিতে তাঁরা নতুন স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র শিল্পের জন্যও অনেক লাভজনক ব্যবস্থা রেখেছেন। এর ফলে, এইসব শিল্প ক্ষেত্রে গুজরাটের অসংখ্য যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। আমি চাই যে, গুজরাটের নবীন প্রজন্ম এই নতুন শিল্প নীতিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যান। আমি তাঁদের হাত ধরার জন্য প্রস্তুত, যাতে গুজরাট কখনও থেমে না থাকে।
আমাদের জামনগরের পোর্ট লাইন আমাদের সমুদ্রতটের বৈচিত্র্যকে আমাদের উন্নয়নের অনুকূল করে তুলতে হবে। অসংখ্য প্রজাতির জৈব বৈচিত্র্য আমাদের গুজরাটের সমুদ্রতটে রয়েছে। আর এখন ভারত ‘প্রোজেক্ট ডলফিন’ চালু করেছে। দেশে চিতা আনার পর সবাই যেমন জয়জয়কার করছেন, আমি নিশ্চিত যে, ডলফিন নিয়েও সকলে এরকম উৎসাহ দেখাবেন। এখানে আমাদের জামনগরেও ডলফিন সংরক্ষণ ও তাদের বিভিন্ন প্রজাতি বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রকল্প রচিত হয়েছে। সেজন্য জামনগর, দ্বারকা, বেটদ্বারকার সম্পূর্ণ সমুদ্রতটে একটি নতুন ইকো ট্যুরিজম বিকশিত হবে। ভাই ও বোনেরা, আপনাদের প্রিয় ভূপেন্দ্রভাইকে আমি মৃদুভাষী ও দক্ষ এজন্য বলি, কারণ তাঁর অভিজ্ঞতা গুজরাটকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। সমুদ্রতটে যারা অবৈধ বাঁধ দিয়ে চুপচাপ নানারকম অনৈতিক কাজ করছিলেন, ভূপেন্দ্রভাই কঠোরভাবে তাদের সরিয়ে দিয়েছেন। গুজরাটের সমুদ্রতট আজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এত ভালো যে গত ২০ বছর ধরে আপনারা শান্তিতে বসবাস করছেন। আর সেই শান্তি আপনাদের জীবনে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে। গুজরাটের মানুষ একতার সংকল্প নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছেন। আগে গুজরাটের যে এলাকাগুলি দাঙ্গাপ্রবণ ছিল, জামনগর সেগুলির অন্যতম। আজ গুজরাটে নরেন্দ্রভাই আর ভূপেন্দ্রভাইয়ের নেতৃত্বে ডবল ইঞ্জিন সরকার সমস্ত প্রকল্পকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। আর এই গতি বজায় রাখতে হবে। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলি জামনগর তথা সৌরাষ্ট্রের উন্নয়নের স্তম্ভ। আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা সমস্ত যুবক-যুবতী ও বয়স্কদের জীবনকে শান্তিময় করে তোলার কাজ করছি।
ভাই ও বোনেরা,
জামনগরের ভূমিকে অভিনন্দন। আপনাদের সকলকে অভিনন্দন। গোটা পথে ও এখানে যত মা ও বোনেরা বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত হয়ে আমাদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন, তাঁদের সাক্ষাতে আমাদের জীবন ধন্য। এত আশীর্বাদ পেয়ে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার সঙ্গে দু’হাত উপরে তুলে বলুন।
ভারতমাতা কি জয়,
ভারতমাতা কি জয়,
PG/SB/SB
(Release ID: 1867158)
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam