প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

গুজরাটের আমোদ-এ বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও তা জাতির উদ্দেশে উৎসর্গকালে গুজরাট তথা সারা দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 10 OCT 2022 6:34PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ অক্টোবর ২০২২

 

ভারতমাতার জয়,

ভারতমাতার জয়,

মঞ্চে উপবিষ্ট গুজরাটের জনপ্রিয় তথা সদা তৎপর মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল, সংসদে আমার সহকর্মী শ্রী সি আর পাটিল (যিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে এক রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন), মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী এবং গুজরাটের সন্তান শ্রী মনসুখ ভাই মাণ্ডব্য, গুজরাট সরকারের উপস্থিত সকল মন্ত্রী মহোদয়, সাংসদ, বিধায়ক এবং আমাকে আশীর্বাদের জন্য এখানে বিরাট সংখ্যায় সমবেত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

বন্ধুগণ,

আজ সকালে এখানে আসার পথে একটি দুঃসংবাদ শুনলাম। তা হল, মুলায়ম সিং যাদবজি আর নেই। তাঁর এই তিরোধান দেশের পক্ষে এক বিরাট ক্ষতি। মুলায়ম সিং-জির সঙ্গে আমার সম্পর্কের এক বিশেষ মাত্রা ছিল। যখনই আমরা দু’জন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরস্পরের সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হতাম, তখন আমরা উভয়েই পরস্পরের প্রতি এক বিশেষ বন্ধন অনুভব করতাম। ২০১৪-র নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি যখন আমাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে, তখন আমি দেশের কয়েকজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। এঁদের মধ্যে কিছু কিছু বিরোধী দলের নেতাও ছিলেন। কারণ, বিরোধী পক্ষের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল। সেই দিনটির কথা আমার খুবই মনে পড়ে যেদিন আমি মুলায়ম সিং-জির আশীর্বাদ প্রার্থনা করেছিলাম। সেই সময় তিনি আমাকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা আজও আমার কাছে সম্পদতুল্য। মুলায়ম সিং-জির এক বিশেষত্বই ছিল যে রাজনৈতিক দিক থেকে চরম বিরোধিতা করেও আশীর্বাদদানের ক্ষেত্রে তিনি কখনই বিমুখ হননি। ২০১৩ সালে আমি তাঁর আশীর্বাদ লাভ করি এবং পরবর্তীকালেও তা অটুট ও অব্যাহত থাকে। ২০১৯ সালে সংসদের শেষ অধিবেশন চলাকালীন তিনি আমাকে আরও একবার আশীর্বাদ করেছিলেন। সংসদের ভেতরে মুলায়ম সিং-জির মতো একজন বর্ষীয়ান নেতা যে পরামর্শ আমাকে দিয়েছিলেন তা দেশের যে কোনো রাজনৈতিক কর্মীর কাছেই এক বিরাট আশীর্বাদতুল্য। সংসদে দাঁড়িয়ে কোনরকম রাজনৈতিক কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড ছাড়াই তিনি বলেছিলেন – “মোদীজি সকলের কথা চিন্তা করেই কাজ করেন। এই কারণে আমি নিশ্চিত যে ২০১৯ সালে তিনি আবার নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে বৃত হবেন।” তিনি ছিলেন এতটাই মহান ও উদার হৃদয়ের এক মানুষ। তাঁর জীবনকালে আমি যে তাঁর আশীর্বাদ থেকে কখনই বঞ্চিত হইনি, সেজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করি। আজ মা নর্মদার তটভূমিতে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধেয় মুলায়ম সিং-জির প্রতি আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই। তাঁর পরিবার-পরিজন ও অনুগামীরা যাতে এই শূন্যতা বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি সঞ্চয় করেন, সেজন্য আমি প্রার্থনা জানাই ঈশ্বরের কাছে।

বন্ধুগণ,

আমি ভারুচে এমন এক সময় উপস্থিত হয়েছি যখন সারা দেশে উদযাপিত হচ্ছে ‘স্বাধীনতার মহোৎসব’। ভারতের ইতিহাস পাঠ এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলোচনাকালে ভারুচ – এই নামটি বিশেষ গর্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। এখানে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন এমন অনেক ব্যক্তিত্ব যাঁরা তাঁদের কর্মের মধ্য দিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে তুলেছেন। যেমন এখানকারই সন্তান কানহাইয়ালাল মানেকলাল মুন্সিজি। সংবিধান রচনার কাজে তাঁর অবদান দেশ কখনই বিস্মৃত হবে না। সোমনাথ মন্দিরের নির্মাণ প্রচেষ্টায় সর্দার প্যাটেলের সঙ্গে তিনি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে গেছেন। ভারতীয় সঙ্গীত গুরু পণ্ডিত ওঙ্কারনাথ ঠাকুর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে এক বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনিও ছিলেন এখানকারই সন্তান। এই মহান ব্যক্তিত্বদের কর্মযজ্ঞে অনুপ্রাণিত হয়ে গুজরাটকে আরও উন্নত এবং আরও অনেক গর্বিত করে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে চলেছি।

ভাই ও বোনেরা,

গুজরাট তথা সমগ্র দেশের অগ্রগতিতে ভারুচের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এক সময় ভারুচ বিখ্যাত ছিল এখানকার চিনাবাদামের জন্য। কিন্তু আজ ভারুচ পরিচিত তার শিল্প, বাণিজ্য এবং বন্দরের জন্য।

একথা বলতে আমার বাধা নেই যে আজ গুজরাটে যে শিলান্যাস ও উদ্বোধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে তার বিনিয়োগ মূল্য গুজরাটের পূর্ববর্তী সরকারের মোট বাজেট বরাদ্দের থেকেও অনেক বেশি।

আমার ভাইয়েরা,

গুজরাটে এখন এক বিরাট কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ভারুচ জেলাটি এখন হয়ে উঠেছে এক মিশ্র সংস্কৃতির শহর। ভারতের সবক’টি রাজ্যের মানুষের এটি বাসভূমি হয়ে উঠেছে বলেই আমার বিশ্বাস। যদি সমগ্র ভারুচ জেলার কথাই আপনারা চিন্তা করেন তাহলে দেখবেন যে কেরল, বাংলা এবং বিহারের মানুষজনের উপস্থিতিও এখানে চোখে পড়ার মতো। এক সময় কলকাতা, দিল্লি ও মুম্বাইকে বলা হত মিশ্র সংস্কৃতির শহর। গুজরাট আজ এতটাই উন্নত যে এই রাজ্যের অনেক জেলাই এখন মিশ্র সংস্কৃতির এক সমন্বয় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সমগ্র দেশকেই এই রাজ্যটি বরণ করে নিয়েছে তার ভালোবাসা দিয়ে। উন্নয়নের পথে গুজরাটের যাত্রা আজ এইভাবেই এক নতুন শিখরে উন্নীত হয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

এক বড় ধরনের ‘ড্রাগ পার্ক’ এখন গড়ে উঠেছে গুজরাটে এবং এটির অবস্থানও ভারুচে। রাসায়নিক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রকল্পেরও এখানে উদ্বোধন হয়েছে। এছাড়াও, অঙ্কলেশ্বর-রাজপিপলা এবং স্ট্যাচু অফ ইউনিটি-একতা নগর-এর মতো শহরগুলির মধ্যে যোগাযোগ ও সংযোগ স্থাপন প্রকল্পেরও উদ্বোধন হয়েছে। এক সময় এই প্রকল্পের বিষয়টি আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এমনকি আমি যখন এখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখনও এই প্রকল্প নিয়ে আমি কথাবার্তা আবার শুরু করেছিলাম। এখানকার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা দিল্লিতে বসবাস করেন। কিন্তু কেউই তখন আমাদের কথায় কর্ণপাত করেননি। ভারুচ জেলাটি যেভাবে ক্রমশ উন্নত হয়ে উঠছে, তাতে বরোদা কিংবা সুরাটের মতো বিমানবন্দরগুলির ওপর আর নির্ভর করে থাকতে হবে না। ভারুচের একটি নিজস্ব বিমানবন্দর থাকা উচিৎ বলেই চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল। এই কারণে অঙ্কলেশ্বরে একটি নতুন বিমানবন্দর স্থাপনের শিলান্যাস অনুষ্ঠান আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

ভারুচ হল এমনই একটা জেলা যেখানে দেশের অপেক্ষাকৃত বহু ছোট ছোট শহরের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক শিল্প সংস্থা রয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির নিরিখে এই একটিমাত্র জেলায় এই শিল্পগুলি এক বিশেষ রেকর্ড স্থাপন করেছে। দেশে এত বড় ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য যেখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে সেখানে একটি নতুন বিমানবন্দর স্থাপিত হলে উন্নয়নের যাত্রাপথে তা স্মরণীয় ঘটনা বলে প্রতিভাত হবে। নরেন্দ্র–ভূপেন্দ্র – এই ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের কর্মপ্রচেষ্টায় এই বিমানবন্দর তৈরির কাজ দ্রুততার সঙ্গেই সম্পূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হলে অনেক বড় বড় শিল্পপতি ও আধিকারিকরা এখানে এসে উপস্থিত হবেন। ফলে, এখানকার উন্নয়নও তখন আরও গতি লাভ করবে। আরও উন্নত হয়ে উঠবে এখানকার রপ্তানি বাণিজ্য।

ভাই ও বোনেরা,

গুজরাটের এক সম্পূর্ণ পৃথক ছবি আজ আমাদের সামনে উপস্থিত। এক নতুন গুজরাটকে আমরা প্রত্যক্ষ করছি। রূপান্তর প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে গুজরাট এখন এক নতুন উচ্চতার দিকে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু মাত্র দু’দশক আগেও এখানকার পরিস্থিতি কি ধরনের ছিল, তা একবার স্মরণ করার চেষ্টা করি। তখন গুজরাটকে দেখে কি মনে হত? কিই বা ছিল তার পরিচয়? ব্যবসায়ীরা এক স্থান থেকে মালপত্র সংগ্রহ করে অন্য আর এক স্থানে তা বিক্রির চেষ্টা করতেন। এইভাবেই দালালদের সাহায্যেই তাঁরা আয় ও উপার্জনের চেষ্টা করতেন। এটাই ছিল তখন এই রাজ্যের পরিচয়। এমনকি, কৃষি ও শিল্পের দিক থেকেও এখানে আমরা পিছিয়ে ছিলাম কারণ, এখানে ছিল কাঁচামালের অভাব। এই পরিস্থিতি থেকে উঠে এসে গুজরাট শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। দু’দশকের কঠোর শ্রমের মধ্য দিয়েই তা অর্জিত হয়েছে। বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংস্থাগুলির ছোট ছোট নেটওয়ার্ক আমরা এখানে গড়ে তুলতে পেরেছি। নিজস্ব বন্দর ও উপকূল রেখারও আমরা রূপকার। এক সময় আমাদের আদিবাসী ও মৎস্যজীবী ভাই-বোনেদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। জীবনধারণের জন্য তাঁদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হত। কষ্টসাধ্য ছিল তা^দের জীবন। গুজরাটে এক সময় যে এই ধরনের পরিস্থিতি ছিল তা আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে কল্পনারও অতীত। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম এবং গুজরাটবাসীর সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আজ আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে এসে উপস্থিত হয়েছি। স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসবের হাত ধরে এক অমৃতকালের মধ্যে আমরা যাত্রা শুরু করেছি। গুজরাটের তরুণ প্রজন্মের কাছে এ হল এক সোনালী সকাল। শুধুমাত্র নীতি দিয়ে কার্যসিদ্ধি হয় না। সেইসঙ্গে দরকার সদিচ্ছা তথা ইচ্ছাশক্তির। ভারুচের অবস্থা এক সময় কি ছিল তা বোধহয় কারোরই অজানা নয়। সেই সময়কালের কোনো এক সন্ধ্যায় ‘পঞ্চবটী’তে যাঁরাই গেছেন, তাঁরাই দেখতে পেয়েছেন সেখানকার আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি। দুর্বৃত্তরাজ সেখানে বিরাজ করত তখন। কিন্তু আজ এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই উন্নত যে শান্তি ও স্বস্তিতে দিনযাপন করতে পারছেন ভারুচের অধিবাসীরা।

এর সুফল ভোগ করছেন সকলেই। অতীতে কিছু সংখ্যক মানুষের জন্যই এই সুফল নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির এখন পরিবর্তন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রার সুযোগ এখন পৌঁছে গেছে আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনেদের কাছে। দরিদ্র সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ মাত্রায় এই সুফল লাভ করছেন। এক সময় ভারুচে আদিবাসী মেয়েদের সাথে কিরকম ব্যবহার করা হত তা আমরা সকলেই জানি। এই কারণে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভও জমা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে আদিবাসী ভাই-বোনেদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য ও সমর্থনও আমি লাভ করেছি। তাঁরা আমাকে আশীর্বাদ করেছেন। এক সময় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে সেরকম কিছুই এখানে ছিল না। অসুস্থ হলে মানুষকে ছুটতে হত সুরাট বা বরোদার হাসপাতালগুলিতে। মা নর্মদার তীরে বাস করেও জলের জন্য তাঁদের হাহাকার করতে হত। সেই শোচনীয় ও ভয়ঙ্কর দিনগুলি আমি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছি। ভারুচকেও পানীয় জলের কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। ভারুচ জেলায় অনেক ধর্মীয় স্থান থাকা সত্ত্বেও সেগুলিকে উন্নত করে তোলার কোনো চেষ্টাই তখন করা হয়নি। এ সমস্ত কিছুই হল ২০ বছর আগেকার ঘটনা। কিন্তু আমি যখন এখানকার অধিবাসীদের সেবা করার সুযোগ পেলাম, তখন এখানকার প্রতিটি সমস্যার সমাধানে আমি সচেষ্ট। পরিস্থিতির পরিবর্তনে আমরা তৎপর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার ক্রমশ উন্নতি ঘটতে শুরু করল। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির জন্য যারা দায়ী, সেই সমস্ত দাগী অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হল। এ কারণে গুজরাটের এখনকার ছেলে-মেয়েরা জানে না যে কার্ফু জিনিসটা কি। অথচ এক সময় ভারুচে কার্ফু জারি করা হত যখন তখন। গুজরাটের মেয়েরা আজ নিরাপদে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করতে পারছেন। শিক্ষার জন্য রাজ্যের যে কোনো স্থানে তাঁরা আজ সহজেই পৌঁছে যেতে পারছেন। শিক্ষার দিক থেকে ভারুচ জেলাটি এখন অনেকটাই উন্নত। কাজের শেষে গভীর রাত্রিতে রেল অথবা বাস স্টেশন থেকে কোনো মহিলা এখন তাঁর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে কোনরকম ভয় বা ভীতি অনুভব করেন না। এই নতুন পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছি আমরাই। এই মুহূর্তে এখানে একটি জাতীয় ক্রীড়াও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার খেলোয়াড় এখন গুজরাটে উপস্থিত। খেলার শেষে সন্ধ্যায় যখন তাঁরা গরবা দেখতে যাবেন, সারা রাত ধরে সেখানে উৎসবের আমেজ দেখে তাঁরা মুগ্ধ হয়ে যাবেন। মনে হবে যে এখানে রাত বলে বোধহয় কিছু নেই। ভারুচকে উন্নত করে তোলার জন্য প্রয়োজন ছিল শিল্পায়ন প্রচেষ্টার। আদিবাসী অঞ্চলগুলিকে উন্নত করে তোলার ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা শিল্প প্রচেষ্টাকে আমরা নিয়ে এলাম ঝাগাদিয়ায়। রুক্ষ-শুষ্ক অঞ্চলে শিল্প গড়ে তোলার কাজে আমরা ব্রতী হলাম। এর ফলে কৃষি জমি একদিকে যেমন অক্ষত রইল, অন্যদিকে সেখানে শিল্প প্রসারের কাজও বাস্তবায়িত হল। এইভাবেই একটি নির্মাণ তথা উৎপাদন এবং রপ্তানি কেন্দ্র রূপে আজ গুজরাটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দু’দশক আগে এই রূপান্তর ছিল কল্পনারও অতীত। মহাসড়ক প্রকল্প রূপায়ণের পথ ধরে দহেজ-২, দহেজ-৩, সাইখা, বিলায়েত আজ হয়ে উঠেছে উন্নয়নের নতুন নতুন দ্বারপ্রান্ত। দহেজ বর্তমানে বিনিয়োগের এক বিশেষ স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। পেট্রোলিয়াম, কেমিক্যালস এবং পেট্রো-কেমিক্যাল ক্ষেত্রে প্রকল্প রূপায়ণের কাজ এখন এগিয়ে চলেছে। ‘মুদ্রা’ যোজনার আওতায় হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ সম্ভাবনা এখন বাস্তবায়িত হয়েছে দহেজ এবং সমগ্র ভারুচ জেলাকে ঘিরে। পেট্রোল ও রাসায়নিক ক্ষেত্রে সারা দেশের কাছে দহেজ বর্তমানে হয়ে উঠেছে এক বিশেষ মডেল।

ভাই ও বোনেরা,

যে প্রকল্পগুলির আজ সূচনা হল তা শুধু গুজরাটের শক্তি বৃদ্ধিই করবে না, ভারুচ জেলাটিকেও আরও উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের কর্মপ্রচেষ্টার হাত ধরে দ্বিগুণ সুফল লাভের ঘটনা হয়ে উঠবে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত। যে রাসায়নিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আজ এখানে গড়ে তোলা হচ্ছে, তা প্রভূত উপকারে আসবে দেশের বস্ত্র শিল্পেরও। বস্ত্র শিল্প যদি উন্নত হয় তাহলে তুলা উৎপাদকদেরও আরও সমৃদ্ধ করে তুলবে। একই কথা প্রযোজ্য সারের ক্ষেত্রেও। সারের জন্য যে আমরা বিখ্যাত, একথা এখন আর কারোরই অজানা নয়। ভারুচে উৎপাদিত সার ও রাসায়নিক এখন পৌঁছে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। জিএসিএল রাসায়নিক প্রকল্পের সুবাদে লেনদেন ঘটবে ২,৫০০ কোটি টাকার। ৭০০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘটবে এর মধ্য দিয়ে। সারা দেশের ক্ষেত্রে এ এক বিরাট ঘটনা। দেশপ্রেমের এক বিশেষ নজির বললেও বোধহয় অত্যুক্তি হয় না। ভারুচের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে আমরা একথাই প্রমাণ করতে চাই যে দেশকে যদি দ্রুত অগ্রগতির পথে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য হয়, তাহলে দেশের প্রত্যেক নাগরিককেই তাতে অংশগ্রহণ করতে হবে। একজন সাধারণ নাগরিকেরও অবদান রয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। স্থানীয় ও আঞ্চলিক উৎপাদনের বিপণন প্রচেষ্টায় সামিল হতে হবে আমাদের। আসন্ন দেওয়ালি উৎসবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আতসবাজী আমাদের চারপাশকে আলোকিত করুক, এটাই আমাদের বাসনা।

ভাই ও বোনেরা,

একটি ঘটনা শুনলে আপনারা খুশিই হবেন। ২০১৪ সালে আপনাদের আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে আমি দিল্লি গিয়েছিলাম। আপনাদের আশীর্বাদ ও মূল্যবোধকে সঙ্গী করে গুজরাটের কাজ করে যাওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল আমার সঞ্চয়ে। সেই সময় বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের স্থান ছিল দশম। কিন্তু বর্তমানে ভারতের অবস্থান হল পঞ্চম। অতীতের অনগ্রসরতাকে বিসর্জন দিয়ে বর্তমান যুব সমাজ দেশকে ক্রমশ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আরও সামনের দিকে। এই সাফল্যের জন্য শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, সেইসঙ্গে দেশের কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোট ছোট স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠান – সকলেরই যথেষ্ট অবদান রয়েছে। আপনাদের কঠোর কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ভারত আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম স্থানটি অধিকার করতে পেরেছে। আপনাদের সকলকেই জানাই আমার অভিবাদন।

ভাই ও বোনেরা,

ভারুচে আরও একটি প্রকল্পের কাজ এখন চলছে যা আমাদের কাছে এক বিশেষ গর্বের বিষয়। এক সময় যদি কেউ স্বেচ্ছায় জলছত্রের ব্যবস্থা করতেন, তৃষ্ণার্ত মানুষ তাকে বদান্যতারই পরিচয় বলে মনে করতেন। এই পথ ধরেই কেন্দ্রীয় সরকার ওষুধ উৎপাদনের জন্য এক বড় ধরনের পার্ক এখানে গড়ে তুলতে চলেছে। এটা মানবতাবাদী কর্মপ্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর পথ ধরে সৃষ্ট হবে হাজার হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ। করোনা সঙ্কট কিভাবে সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করেছিল তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। সকলেরই মনে তখন প্রশ্ন ছিল, এই সঙ্কট থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি লাভ করতে পারি। গুজরাট সেই সময় আমাদের সাহায্য করেছে করোনার মোকাবিলার কাজে। সারা দেশে উৎপাদিত ওষুধের ২৫ শতাংশই পাওয়া যায় গুজরাট রাজ্যটি থেকে। এক সময় ভারুচের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল কয়েকটি মহল থেকে। কিন্তু আমাদের সরকার যখন কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন নরেন্দ্র-ভূপেন্দ্র – এই ডবল ইঞ্জিনের সরকার গড়ে ওঠে গুজরাটে এবং আমরাই তখন সেই সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাই। সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণের কাজ বানচাল করতে তৎপর হয়েছিল কিছু কিছু উগ্রপন্থী সংগঠনও। পরবর্তীকালে শহরের কিছু দুর্বৃত্তও যুক্ত হয় এই অপচেষ্টার সঙ্গে। বাংলা থেকে ঝাড়খণ্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশের কিছু কিছু অঞ্চল, ওড়িশা, অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রের গদচিরোলির উগ্রপন্থী সংগঠনগুলি আদিবাসী তরুণদের জীবনকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিল। এই সমস্ত তরুণদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে তাঁরা তাঁদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। সেই সময় উগ্রপন্থীদের তৎপরতা দমনের চ্যালেঞ্জটি আমি গ্রহণ করেছিলাম। আদিবাসী ভাই-বোনেদের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। উমরগাঁও থেকে অম্বাজি পর্যন্ত উগ্রপন্থী অধ্যুষিত অঞ্চলকে আমরা উন্নত করে তুলেছিলাম। এর ফলে ঐ পথে উগ্রপন্থীরা তখন আর গুজরাটে এসে পৌঁছতে পারেনি। গুজরাটের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস হতে দিতে আমি পারি না। গুজরাট কখনই তাদের কাছে নতিস্বীকার করবে না। এক সময় এখানে আদিবাসী মুখ্যমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও উমরগাঁও থেকে অম্বাজি পর্যন্ত বিজ্ঞান শিক্ষার ভালো স্কুল গড়ে ওঠেনি। কিন্তু আমি ক্ষমতায় আসার পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ভালো বিজ্ঞান শিক্ষার স্কুল এখানে গড়ে তুলব। আমার আদিবাসী ভাই-বোনেরা এখন এখান থেকে কানাডায় গিয়ে পাঠ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসক ও আইনজীবী হয়ে ওঠার মতো সাফল্য অর্জন করছেন। বিরসা মুন্ডার নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও যে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, একথা এক সময় অনেকেই কল্পনাও করতে পারতেন না। একইভাবে, গুজরাটের গুরু গোবিন্দ বিশ্ববিদ্যালয়টি আদিবাসী তরুণদের মধ্যে এক নতুন আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সামনে নতুন সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিয়েছে।

ভাই ও বোনেরা,

আদিবাসী সমাজের ক্ষমতায়নে ‘বনবন্ধু’ যোজনাটির গুরুত্ব অপরিসীম। আদিবাসী সমাজের মানুষ যাতে পশুপালনের কাজে যুক্ত হতে পারে এবং কৃষকরা যাতে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে তা নিশ্চিত করতে আমি সচেষ্ট হয়েছিলাম। কারণ এই প্রচেষ্টা তাঁদের জীবনযাত্রাকেই পালটে দিতে পারে। এইভাবেই আমরা আদিবাসী ভাই-বোনেদের জীবনে আমূল পরিবর্তন সম্ভব করে তুলেছি।

ভাই ও বোনেরা,

উন্নয়নের এই যাত্রাপথে আদিবাসী মানুষের অবদান অসীম ও অফুরন্ত। আদিবাসী ঈশ্বর রূপে বিরসা মুন্ডা যাতে পূজিত হন সেজন্য আদিবাসী দিবস উদযাপনের ঘোষণাও আমরা করেছি। গুজরাট সহ সারা দেশে আদিবাসীদের স্মরণে আমরা গড়ে তুলেছি বেশ কিছু স্মারকও। তাঁরা সকলেই স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে গেছেন। আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে উৎপাদনশীলতা যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়টিও ছিল আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যেই। আদিবাসী ভাই ও মৎস্যজীবী ভাইদের জন্য আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে আমরা আরও ত্বরান্বিত করেছি। ‘নিউ ইয়র্ক নিউ জার্সি’র মতো ‘ভারুচ অঙ্কলেশ্বর’-এর নামও মুখে মুখে উচ্চারিত হবে বলে আমরা আশা রাখি। আমাদের এগিয়ে চলতে হবে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তরুণ প্রজন্মের কাছে যে বার্তা আমি পৌঁছে দিতে চাই তা হল এই যে, আগামী ২৫টি বছর চিহ্নিত রয়েছে শুধু তাঁদের জন্যই। আজ আমরা এখানে সমবেত হয়েছি এক বিরাট সংখ্যায়। গুজরাটের উন্নয়নে এক নতুন সঙ্কল্প গ্রহণের মুহূর্ত এখন উপস্থিত। নর্মদা ভূমিতে বসবাসকারী আমার সমস্ত ভাই-বোনকে জানাই আমার শুভেচ্ছা। আসুন আমরা সকলে মিলে ভারুচ জেলাটিকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিই। আপনারা আমার সঙ্গে একসঙ্গে বলে উঠুন – ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়, ভারতমাতার জয়!

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে

 

PG/SKD/DM/


(Release ID: 1867115) Visitor Counter : 320