প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 26 MAY 2022 5:41PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৬ মে, ২০২২

 

তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল মাননীয়া শ্রীমতী তামিলসাই সৌন্দর্যরাজন সৌন্দররাজনজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী মাননীয় শ্রী জি কিষাণ রেড্ডিজি, তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের মাননীয় মন্ত্রীগণ, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর একজিকিউটিভ বোর্ডের চেয়ারম্যান, ডিন, অন্যান্য অধ্যাপকবৃন্দ, শিক্ষকগণ, অভিভাবকগণ এবং আমার প্রিয় নবীন প্রজন্মের বন্ধুগণ!

আজ ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস তার গৌরবময় যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। আমরা সবাই ইন্ডিয়া স্কুল অফ বিজনেস প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পূর্তি উৎসব উদযাপন করছি। আজকের এই অনুষ্ঠানে অনেক বন্ধু তাঁদের ডিগ্রি পেয়েছেন, অনেকে গোল্ড মেডেল পেয়েছেন। অনেক মানুষের তপস্যার সম্মিলিত ফলে আজ ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর সাফল্য এই পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে। আমি আজ তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আপনাদের সবাইকে, এই ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর সকল অধ্যাপক, সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা, অন্যান্য কর্মীবৃন্দ, সকল ছাত্রছাত্রী, সমস্ত অভিভাবক, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর অ্যালুমনাইজ বা প্রাক্তনীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

২০০১ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি জাতির প্রতি সমর্পণ করেছিলেন আমাদের মাননীয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীজি। তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার একজিকিউটিভ এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরিয়েছেন। আজ ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বিজনেস স্কুলগুলির মধ্যে অন্যতম। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস থেকে পাশ করে বেরোনো পেশাদাররা দেশের ব্যবসাকে গতি প্রদান করছেন, বড় বড় কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট সামলাচ্ছেন। এখানকার ছাত্রছাত্রীরা অনেকে স্টার্ট-আপ তৈরি করেছেন, আর সেগুলি থেকে নিজেদের ব্যবস্থাপনার নৈপুণ্য দিয়ে ইউনিকর্ন-এ পরিণত করার ক্ষেত্রে নিজেদের ভূমিকা রেখেছেন। এটি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর জন্য সাফল্য তো বটেই, গোটা দেশের জন্যও অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

বন্ধুগণ,

আমাকে বলা হয়েছে যে হায়দ্রাবাদ এবং মোহালি ক্যাম্পাসের এটি প্রথম জয়েন্ট গ্র্যাজুয়েশন সেরেমনি। আজ যে ছাত্রছাত্রীরা পাশ করে বেরোচ্ছেন, তাঁদের জন্য এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত বিশেষ, কারণ এই সময় দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছে, অমৃত মহোৎসব পালন করছে। আমরা বিগত ৭৫ বছরের সাফল্যগুলিকে দেখতে পাচ্ছি আর আগামী ২৫ বছরের সঙ্কল্পগুলিরও রোডম্যাপ তৈরি করছি। স্বাধীনতার এই অমৃতকালে আগামী ২৫ বছরের জন্য যে সঙ্কল্প আমরা নিয়েছি সেগুলিকে বাস্তবায়িত করতে, সেগুলিকে সিদ্ধিতে পৌঁছে দিতে আপনাদের সকলের অনেক বড় ভূমিকা থাকবে। আজ ভারতে যে আশার সুবাতাস বইছে, মানুষের মনে যে আত্মবিশ্বাস রয়েছে, নতুন ভারত নির্মাণের জন্য যে ইচ্ছাশক্তি রয়েছে, তাও আপনাদের জন্য অনেক নতুন নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। আপনারা নিজেরা দেখুন যে আজ ভারত জি-২০ দেশগুলির সমষ্টির মধ্যে সবচাইতে দ্রুতগতিতে উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ। স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের এক নম্বরে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যার দিকে যদি তাকান তাহলে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় নম্বরে। গ্লোবাল রিটেল ইন্ডেক্স-এও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম আজ ভারতে গড়ে উঠেছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কনজিউমার মার্কেটও আজ ভারতে তৈরি হয়েছে। এরকম বেশ কিছু ক্ষেত্রের উদাহরণ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি, পরিসংখ্যান দিতে পারি। করোনার মতো বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় আমরা সবাই এবং বিশ্ববাসীও ভারতের সামর্থ্য দেখেছে। বিগত এক শতাব্দীর সবচাইতে বড় এই বিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার, যুদ্ধও এই সঙ্কটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কিছুর মাঝেও ভারত আজ বিশ্বে ‘গ্রোথ’-এর ক্ষেত্রে একটি বড় কেন্দ্র রূপে উঠে আসছে। গত বছর ভারতে সর্বকালের সবচাইতে বেশি রেকর্ড পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। আজ বিশ্ববাসী অনুভব করছে যে ভারত মানেই ব্যবসা। আর এটা শুধুই একা সরকারের প্রচেষ্টার কারণেই সম্ভব হয়নি। এতে ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর মতো বিজনেস স্কুলগুলির, এই ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়া পেশাদারদের, দেশের নবীন প্রজন্মের লক্ষ লক্ষ পেশায় দক্ষ মানুষের অনেক বড় অবদান রয়েছে তা সে স্টার্ট-আপ হোক কিংবা পরম্পরাগত ব্যবসা অথবা ম্যানুফ্যাকচারিং হোক বা সার্ভিস সেক্টর – আমাদের নবীন প্রজন্ম প্রতিদিন প্রমাণ করছে যে তাঁরা এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। আমি ঠিক কথা বলছি কিনা! আপনাদের কি নিজেদের ওপর সেই ভরসা নেই? আমার কিন্তু আপনাদের ওপর ভরসা আছে। আপনাদের কি নিজেদের ওপর আছে?

বন্ধুগণ,

সেজন্য আজ বিশ্ববাসী ভারতকে, ভারতের যুবক-যুবতীদেরকে আর ভারতের পণ্যগুলিকে একটি নতুন সম্মান এবং নতুন ভরসার সঙ্গে দেখছে।

বন্ধুগণ,

ভারত যে মাত্রায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনেক কিছু নিজের দেশে করতে পারে, যে পদ্ধতিতে আমরা এখানে কোনও নীতি বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে পারি, তা গোটা বিশ্বের জন্য অধ্যয়ন, গবেষণা এবং শিক্ষার বিষয় হয়ে ওঠে। আর সেজন্য আমরা প্রায়ই ‘ইন্ডিয়ান সলিউশন্স’ বা যে কোনও সমস্যার ভারতীয় সমাধানকে ‘গ্লোবালি ইমপ্লিমেন্ট’ বা বিশ্বের অনেক দেশে প্রয়োগ হতে দেখছি। সেজন্য আমি আজ এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে আপনাদেরকে বলব যে আপনারা নিজেদের ব্যক্তিগত লক্ষ্যগুলিকে, দেশের লক্ষ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত করুন। আপনারা যা শেখেন, আপনাদের যত অভিজ্ঞতা হয়, আপনারা যত উদ্যোগ নেন, সেগুলির মাধ্যমে কিভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষিত হবে সে ব্যাপারে সব সময় ভাবতে হবে, অবশ্যই ভাববেন। আজ দেশে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’-এর জন্য অভিযান থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০-রও বেশি অকেজো আইনকে বাতিল করা, আর হাজার হাজার ‘কমপ্লায়েন্সেস’কে সমাপ্ত করার কাজ আমরা করেছি। কর প্রদানের ক্ষেত্রেও অনেক আইন বাতিল করে জিএসটি-র মতো স্বচ্ছ ব্যবস্থা চালু করা, আন্ত্রেপ্রেনার্স এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহ প্রদান, নতুন স্টার্ট-আপ নীতি প্রণয়ন, ড্রোন নীতি প্রণয়ন, অনেক নতুন ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করা, একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজনীয়তাগুলিকে পূর্ণ করার উপযোগী নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত করার মতো অনেক বড় বড় পরিবর্তন আপনাদের মতো নবীন প্রজন্মের মানুষদের জন্যই তো করা হচ্ছে। আপনাদের মতো যুবক-যুবতীদের পক্ষ থেকে যে সমাধানগুলি আমরা পাচ্ছি, সেই সমাধানগুলিকে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলায় বাস্তবায়িত করার জন্য, আপনাদের ভাবনাগুলিকে দেশের শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য আমাদের সরকার সর্বদাই দেশের যুবশক্তির পাশে দাঁড়িয়ে আছে।

বন্ধুগণ,

আপনারা হয়তো শুনেছেন, অনেকবার আমি একই কথা বারবার উচ্চারণ করি, প্রায়ই বলতে থাকি, ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’ – সংস্কার, বাস্তবায়ন ও রূপান্তরণের এই আহ্বান, এই মন্ত্র আজ দেশে যে শাসন ব্যবস্থা চলছে তাকে সংজ্ঞায়িত করে। এটা আপনাদের মতো ম্যানেজমেন্টের ছাত্রছাত্রী ও পেশাদারদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই সমস্ত কথা আপনাদেরকে এজন্য বলছি কারণ আপনারা এখান থেকে পাশ করে বেরোনোর পর যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন, তখন অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নীতি শুধুই ড্রয়িং বোর্ডে দেখে ভালো লাগলে চলবে না, কাগজেও সুন্দরভাবে লিখিত হতে হবে আর তার ফল যদি তৃণমূল স্তরে কাজে না লাগে তাহলে সেই নীতি প্রণয়নে কোনও লাভ হয় না। সেজন্য যে কোনও নীতি রচনার সময় তার বাস্তবায়ন এবং তৃণমূল স্তরে তার সম্ভাব্য ফলাফলের ভিত্তিতেই ভাবতে হবে। ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’-এর মন্ত্র কিভাবে আমাদের দেশের অনেক নীতিকে, দেশের শাসন ব্যবস্থাকে পুনর্সংজ্ঞায়িত করেছে সে সম্পর্কে আপনাদের মতো নবীন প্রজন্মের মানুষদের জানা থাকা উচিৎ বলে আমি মনে করি।

বন্ধুগণ,

বিগত আট বছরের তুলনা যদি আপনারা তার পূর্ববর্তী তিন দশকের সঙ্গে করেন তাহলে একটি কথা অবশ্যই লক্ষ্য করবেন। আমাদের দেশে সংস্কারের প্রয়োজন তো সর্বদাই অনুভূত হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাবে তা অনেক সময় বাস্তবায়িত হয়নি। বিগত তিন দশকে ক্রমাগত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশ দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির অভাব দেখেছে। এর ফলে দেশ যে কোনও সংস্কার থেকে, বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে দূরে রয়েছে। ২০১৪ সালের পর আমরা দেশে আবার রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিকে দেখতে পাচ্ছি, আর ক্রমাগত সংস্কারও হচ্ছে। আমরা এই অচলায়তন ভাঙার কাজটি করে দেখিয়েছি যে যদি সততার সঙ্গে, ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে সংস্কারের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে জনসমর্থনও নিজে থেকেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমাদের সামনে ফিনটেক-এর উদাহরণ রয়েছে। যে দেশ কখনও ব্যাঙ্কিংকেই একটি প্রিভিলেজ বা বড় সৌভাগ্য বলে বলে মনে করত, সেই দেশে আজ ফিনটেক সাধারণ নাগরিকদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে। যে দেশে কখনও ব্যাঙ্কগুলির প্রতি ভরসা স্থাপন করার জন্য অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হত, সেখানে আজ বিশ্বের ৪০ শতাংশ ডিজিটাল লেনদেন আমাদের ভারতে হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও আগে মনে করা হত যে দেশের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি কোনও বড় বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে না বা দ্রুত সাড়া দিতে পারবে না, কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে দেশের ইচ্ছাশক্তির পরিণাম আমরা ১০০ বছরের সর্ববৃহৎ করোনা মহামারীর সময় অনুভব করেছি। করোনা যখন কড়া নাড়তে শুরু করে তখন আমাদের কাছে পিপিই কিটস তৈরি করার মতো তেমন কোনও নির্মাণ সংস্থা ছিল না। ‘করোনা স্পেসিফিক’ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ছিল না। কিন্তু দেখতে দেখতে ১ হাজার ১০০-রও বেশি পিপিই কিট উৎপাদনকারীর নেটওয়ার্ক ভারতে গড়ে উঠেছে। করোনা রোগ চিহ্নিতকরণের জন্য টেস্টিং-এর সুবিধা শুরুতে মাত্র কয়েক ডজন ল্যাবরেটরিতে হত, কিন্তু অত্যন্ত কম সময়ে দেশে ২ হাজার ৫০০-রও বেশি টেস্ট ল্যাবের নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে। কোভিড টিকার জন্য তো আমাদের দেশে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন যে আমরা বিদেশ থেকে টিকা পাব কি পাব না। কিন্তু আমরা নিজেরাই টিকা উৎপাদন করে দেখিয়েছি। এত টিকা উৎপাদন করেছি যে ভারতেই ১৯৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তার ওপর ভারত বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে টিকা পাঠিয়েছে। এভাবে মেডিকেল এডুকেশন বা চিকিৎসা-শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমরা একের পর এক এরকম অনেক সংস্কার এনেছি। এর পরিণাম হল বিগত আট বছরে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ৩৮০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬০০ অতিক্রম করেছে। দেশে মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট-গ্র্যাজুয়েটের আসন সংখ্যা ৯০ হাজার থেকে বেড়ে ১ লক্ষ ৫০ হাজারের ওপর হয়েছে।

বন্ধুগণ,

বিগত আট বছরে দেশ যে ইচ্ছাশক্তি দেখিয়েছে তার ফলে আরও একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্র সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে সংস্কারগুলিকে তৃণমূল স্তরে বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগের সেই ব্যবস্থাই রয়েছে, কিন্তু এখন ফলাফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া যাচ্ছে। আর এই আট বছরে সবচাইতে বড় প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে গণ-অংশীদারিত্ব। দেশের জনগণ নিজেরা এগিয়ে এসে সংস্কারগুলিকে গতি প্রদান করছেন। আমরা এই প্রবণতা ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’-এর সময় থেকে দেখছি, আর এখন ‘ভোকাল ফর লোকাল’ আর ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’-এর ক্ষেত্রেও আমরা গণ-অংশীদারিত্বের শক্তি দেখছি। এখন জনগণ অনেক সহযোগিতা করেন। ফলে, প্রত্যেক কাজের পরিণাম অবশ্যই পাওয়া যায় এবং দ্রুত পাওয়া যায়। অর্থাৎ, সরকারি ব্যবস্থায় সরকার সংস্কার আনছে বা ‘রিফর্ম’ করছে। আমলাতন্ত্র তা ‘পারফর্ম’ বা বাস্তবায়ন করে দেখাচ্ছে আর জনগণের সহযোগিতায় ‘ট্রান্সফর্মেশন’ বা রূপান্তরণ অবশ্যই হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

এটা আপনাদের জন্য একটি অনেক বড় কেস স্টাডির বিষয় হতে পারে। ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম-এর এই যে ডায়নামিক্স বা সক্রিয় গতিবিদ্যা তা আপনাদের জন্য একটি গবেষণার বিষয় হয়ে উঠতে পারে। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর মতো বড় প্রতিষ্ঠানকে, এর সাফল্যের নানা দিক এবং সীমাবদ্ধতাকে অধ্যয়ন করে, গবেষণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা উচিৎ। এখান থেকে যে নবীন যুবক-যুবতীরা শিক্ষালাভ করে বেরোচ্ছেন, তাঁরাও যেন ‘রিফর্ম, পারফর্ম, ট্রান্সফর্ম’-এর এই মন্ত্রকে প্রত্যেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন।

বন্ধুগণ,

আমি আপনাদের মনোযোগ দেশের স্পোর্টর্স ইকো-সিস্টেম বা ক্রীড়া বাস্তু ব্যবস্থায় আসা রূপান্তরণের দিকে আকর্ষণ করতে চাই। আপনারা কি ভেবে দেখেছেন, কিভাবে ২০১৪-র পর আমরা সমস্ত খেলাধূলার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখতে পাচ্ছি? এর সবচাইতে বড় কারণ হল আমাদের অ্যাথলিটদের মনে জেগে ওঠা নতুন আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস তখনই জন্ম নেয় যখন প্রকৃত প্রতিভার অন্বেষণ হয়, যখন প্রতিভাকে যথাযথ ‘হ্যান্ড হোল্ডিং’ করা হয়। যখন একটি স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়, তারপর প্রশিক্ষণ এবং প্রতিযোগিতার একটি উন্নত পরিকাঠামো খেলোয়াড়রা পান! ‘খেলো ইন্ডিয়া অভিযান’ থেকে শুরু করে ‘অলিম্পিক্স পডিয়াম স্কিম’ পর্যন্ত এরকম অনেক সংস্কারের ফলে আজ ক্রীড়াক্ষেত্রেও আমরা নিজেদের চোখের সামনে রূপান্তরণ হতে দেখছি, আমরা সবাই তা অনুভব করছি।

বন্ধুগণ,

ম্যানেজমেন্টের বিশ্বে পারফর্মেন্স বা কর্মক্ষমতা , ভ্যালু অ্যাডিশন বা মূল্য সংযোজন, প্রোডাক্টিভিটি বা উৎপাদনশীলতা এবং মোটিভেশন বা প্রেরণা – এই বিষয়গুলি নিয়েও অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। যদি আপনারা পাবলিক পলিসিতে এর উত্তম উদাহরণ দেখতে চান তাহলে আপনাদেরকে ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্ট প্রোগ্রাম’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা কর্মসূচি নিয়ে অবশ্যই গবেষণা করা উচিৎ। আমাদের দেশে ১০০টিরও বেশি এরকম জেলা রয়েছে যারা উন্নয়নের দৌড়ে অনেক পেছনে রয়েছে। দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্য থেকে দু-একটি করে, কোথাও একটু বেশি, এরকম উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা রয়েছে। উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক প্যারামিটারে এই জেলাগুলি অনেক কম স্কোর করত। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব দেশের সার্বিক দক্ষতার ওপর, রেটিং-এর ওপর, ওভারঅল প্রদর্শনের ওপর অত্যন্ত ঋণাত্মক প্রভাব ফেলছিল। তারা এই ভেবে কিছু করতে পারছিল না, পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিল না, অনেক দুর্দশাগ্রস্ত ছিল, আর সেজন্য সরকারগুলি আর কী করতে পারত? তাদের পিছিয়ে পড়া ঘোষণা করে দিত। এই যে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলি, যদি এই ভাবনা তাদের মনেও আসে যে এমনই চলছে, চলবে আর কোনও পরিবর্তন আসবে না, সরকারি ব্যবস্থায় যে আধিকারিকদের সবচাইতে কম প্রোডাক্টিভ মনে করা হত, অকর্মন্য মনে করা হত, তাঁকে প্রায়ই এই জেলাগুলিতে মোতায়েন করা হত, আর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবেএকথা বলা হত – তুমি যাও ভাই, তোমাদের ভাগ্য জেনে নাও!

কিন্তু বন্ধুগণ,

আমরা অ্যাপ্রোচ বদলেছি, আমরা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়েছি। যেগুলিকে গতকাল পর্যন্ত পিছিয়ে পড়া জেলা বলা হত, আমরা বলেছি যে তারা পিছিয়ে পড়া নয়, তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা। আমরা তাদের ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ ঘোষণা করি আর আমরা ঠিক করি যে আমরা এই জেলাগুলিতে উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তুলব, একটি নতুন ক্ষিদে জাগিয়ে তুলব। দেশের দক্ষ তরুণ আধিকারিকদের চিহ্নিত করে এই জেলাগুলিতে পাঠানো হয়েছে। এই জেলাগুলিতে চলতে থাকা সমস্ত কাজকে বিশেষভাবে তদারকি করা হয়েছে। ড্যাশবোর্ডে রিয়েল টাইম মনিটরিং বা দৈনন্দিন তদারকি করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেখানে যেখানে ত্রুটি পরিলক্ষিত হত, সেখানে সেই ত্রুটিগুলিকে দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর বন্ধুগণ, আপনারা একথা জেনে অত্যন্ত আনন্দিত হবেন যে আজ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে এগুলির মধ্যে বেশ কিছু জেলা আজ দেশের অন্যান্য উন্নত বলে মনে করা জেলাগুলির তুলনায় অনেক বেশি ভালো পারফর্ম করছে। যেগুলিকে কখনও পিছিয়ে পড়া জেলা বলা হত, যারা দেশের ডেভেলপমেন্ট প্যারামিটারগুলিকে প্রভাবিত করত, সেগুলিই আজ উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা হয়ে দেশের উন্নয়নকে দ্রুতগতি প্রদান করছে। এখন আমরা রাজ্যগুলিকে বলেছি যে এই ভাবনাকে আরও বিস্তারিত করুন, প্রত্যেক জেলায় এমন কিছু ব্লক থাকে যেগুলি উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে, সেই ব্লকগুলিকে চিহ্নিত করে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লক অভিযানকে এখন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশে এই যে পরিবর্তন এসেছে সেগুলি সম্পর্কে তথ্য জানতে পারলে আপনাদের নিজেদের কর্মজীবনে ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে পলিসি ডিসিশন বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হবে।

বন্ধুগণ,

আপনাদের জন্য এটা জানা এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কারণ আজ দেশে ব্যবসার অর্থ বদলে যাচ্ছে আর ব্যবসার পরিধিও আরও সম্প্রসারিত হচ্ছে। আজ ভারতে ইকনমিক ল্যান্ডস্কেপ, স্মল, মিডিয়াম, কটেজ আর এমনকি, ইনফরমাল এন্টারপ্রাইজেস পর্যন্ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ব্যবসা লক্ষ লক্ষ মানুষকে রোজগার সুযোগ করে দিচ্ছে। এগুলির সামর্থ্য অনেক বেশি। এগুলিতে এগিয়ে যাওয়ার দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। সেজন্য আজ যখন দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন অধ্যায় লিখছে তখন আমাদের আরও একটি কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আমাদের ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্র ব্যবসার প্রতিও ততটাই নজর রাখতে হবে। আমাদের তাঁদের জন্য বেশি করে বড় প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে। উন্নয়নের জন্য বেশি উন্নত সুযোগ দিতে হবে। আমাদের তাঁদেরকে দেশ-বিদেশে নতুন নতুন বাজারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে হবে। আমাদের আরও অনেক বেশি প্রযুক্তির সঙ্গে তাঁদেরকে যুক্ত করতে হবে আর এটাই এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর মতো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একটি ‘ফিউচার বিজনেস লিডার’ বা ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক নেতা রূপে আপনাদের সবাইকে প্রত্যেক ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে, দায়িত্ব সামলাতে হবে আর আপনারা দেখবেন, আপনারা ছোট ছোট ব্যবসাকে উন্নত করতে যদি সাহায্য করেন, তখন আপনারাই লক্ষ লক্ষ আন্ত্রেপ্রেনার্স গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন, কোটি কোটি পরিবারকে সাহায্য করতে পারবেন। ভারতকে ‘ফিউচার রেডি’ বা ভবিষ্যতের সবভাবে প্রস্তুত করে তুলতে আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে ভারত যেন সর্বক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে আর এক্ষেত্রে আপনাদেরও, বিভিন্ন বিজনেস প্রফেশনালদেরও অত্যন্ত বড় ভূমিকা রয়েছে আর এটা আপনার জন্য একভাবে দেশের সেবায় গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হবে।

বন্ধুগণ,

দেশের জন্য কিছু করার, দেশের জন্য কিছু করে ফেলার যে উদ্দীপনা আপনাদের মধ্যে রয়েছে তা দেশকে নিশ্চিতভাবেই নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস নিয়ে, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আমার মনে অনেক গর্ব। আপনারা সবাই, এখানে উপস্থিত সকল নবীন প্রজন্মের মানুষের প্রতি আমার অনেক অনেক ভরসা রয়েছে, অনেক বিশ্বাস রয়েছে। আপনারা একটি পারপাস সঙ্গে নিয়ে, জীবনের বিশেষ লক্ষ্যসাধ্নের জন্য এই প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। আপনারা নিজেদের লক্ষ্যকে দেশের সঙ্কল্পগুলির সঙ্গে যুক্ত করুন। আমরা যা কিছু করব সেগুলির মাধ্যমে ভারত একটি দেশ রূপে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এই দায়বদ্ধতার সঙ্গে যখন আপনারা কোনও চেষ্টা করবেন, তখন সাফল্য আপনাদের পায়ের কাছে থাকবে। আরও একবার আজ যে বন্ধুদের হাতে মেডেল তুলে দেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে, আর যাঁরা সিদ্ধি প্রাপ্ত করেছেন, তাঁদেরকে, তাঁদের পরিবার-পরিজনদের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই আর ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস যেন ভারতের উন্নয়ন যাত্রায় এমনভাবেই একের পর এক প্রজন্মকে তৈরি করতে থাকে, এমন প্রজন্ম যাঁরা দেশের জন্য সমর্পিত ভাব নিয়ে যেন কাজ করতে থাকে, এই একটি প্রত্যাশাকে সঙ্গে নিয়ে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1829090) Visitor Counter : 172