প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের ওপর প্রধানমন্ত্রীর ধন্যবাদ জ্ঞাপক জবাবী ভাষণ

Posted On: 08 FEB 2022 9:50PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

 

মাননীয় সভাপতি জি,

রাষ্ট্রপতি জি-র অভিভাষণ নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জি-কে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের জন্য আমাকে এই আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য সময় দিয়েছেন, সেজন্য আমি আপনার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। মাননীয় রাষ্ট্রপতি জি বিগত দিনে করোনার এই কঠিন কালখণ্ডেও দেশ কিভাবে চতুর্দিশায় উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, দেশের দলিত, পীড়িত, গরীব, শোষিত, মহিলা, যুব সম্প্রদায়ের জীবনে ক্ষমতায়নের জন্য, তাঁদের জীবনে পরিবর্তনের জন্য দেশে যত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র দেশের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই বর্ণনায় আশা রয়েছে, বিশ্বাসও রয়েছে, সঙ্কল্প রয়েছে, সমর্পণও রয়েছে। অনেক মাননীয় সদস্য তাঁর বক্তব্যের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। মাননীয় খাড়গে জি কিছুটা দেশের জন্য, কিছুটা দলের জন্য, কিছুটা নিজের জন্য অনেক কিছু বলেছেন। আনন্দ শর্মা জি বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কিছু সময়ের সমস্যায় পড়েছিলেন, কিন্তু তিনিও তাঁর মতো করে বলার চেষ্টা করেছেন আর তিনি একথাও বলেছেন যে দেশের সাফল্যগুলিকে স্বীকৃতি জানাতে হবে। শ্রদ্ধেয় মনোজ ঝা-জি একটি খুব ভালো পরামর্শ দিয়েছেন যে রাষ্ট্রপতি জির অভিভাষণ যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে হয়। প্রসূণ আচার্য জি ‘বীর বাল দিবস’ এবং নেতাজি-সংশ্লিষ্ট কিছু আইন নিয়ে বিস্তারিতভাবে প্রশংসা করেছেন। ডঃ ফৌজিয়া খান জি সংবিধানের মর্যাদা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রত্যেক সদস্য তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতে এবং রাজনৈতিক স্থিতির ভিত্তিতে নিজেদের বক্তব্য আমাদের সামনে রেখেছেন। এর জন্য আমি সমস্ত মাননীয় সদস্যদের হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

মাননীয় সভাপতি জি,

আজ আমরা দেশের স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছি। এই স্বাধীনতার ৭৫ বছরে অনেক স্তরে স্বাধীন ভারতকে দিশা দেখানোর, দেশের উন্নয়নকে গতি প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে আর সেইসব প্রচেষ্টার তুল্যমূল্য বিচার করে সেগুলির মধ্যে যেগুলি ভালো, সেগুলিকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যেখানে যেখানে ত্রুটি আছে সেগুলি সংশোধন করা, আর যেখানে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেখানে নতুন উদ্যোগ নেওয়া, আর দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পালন করবে, তখন আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে, কিভাবে নিয়ে যেতে হবে, কোন কোন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সেখানে নিয়ে যেতে পারি – এই সমস্ত কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে সুচিন্তিত পরিকল্পনা রচনার জন্য এটাই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমরা, প্রত্যেক দলের সমস্ত রাজনৈতিক নেতার্‌ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, দেশের কথা ভেবে আগামী ২৫ বছরে দেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব - সেসব নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এর ফলে যে সব সঙ্কল্প উঠে আসবে আমরা সেই সঙ্কল্পগুলির সবক’টিতেই আমাদের সামগ্রিক অংশীদারিত্ব রাখবো। এতে সকলের ‘ওনারশিপ’ থাকবে, আর সেজন্য ৭৫ বছর ধরে যে গতিতে দেশ এগিয়ে চলেছে তার থেকে অনেকগুণ বেশি গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার খাতিরে আমরা দেশকে অনেক কিছুই দিতে পারি।

মাননীয় সভাপতি জি,

করোনা একটি বিশ্বব্যাপী মহামারী, আর বিগত ১০০ বছরে মানবজাতি এত বড় সঙ্কট দেখেনি। এই সঙ্কটের তীব্রতা দেখুন! হয়তো অসুস্থ মা একটি ঘরে রয়েছেন, কিন্তু তাঁর ছেলে সেই ঘরে ঢুকতে পারবে না। সমগ্র মানবজাতির জন্য এটা কত বড় সঙ্কট ছিল। আর এখনও এই সঙ্কট বহুরূপীর মতো নতুন নতুন রং-রূপ নিয়ে কখনও কিছু, কখনও অন্য কিছু বিপদ সঙ্গে করে নিয়ে আসছে, আর গোটা দেশ, গোটা বিশ্ব, সমগ্র মানবজাতি এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। প্রত্যেকেই অব্যাহতির পথ খুঁজছেন। আজ বলতে চাই, ১৩০ কোটি জনসংখ্যাসম্পন্ন ভারতের জন্য বিশ্বে যখন প্রারম্ভিক করোনা শুরু হয়েছিল, তখন এই আলাপ-আলোচনা চলছিল যে ভারতের কী হবে? আর ভারতের কারণে বিশ্বের কত না সর্বনাশ হবে - এই দিশায় আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু এটা ১৩০ কোটি দেশবাসীর সঙ্কল্পের শক্তি এবং সামর্থ্য যে এখন তাঁরা নিজেদের জীবনে যা কিছু ছিল,  তার মধ্যেই অনুশাসন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আজ বিশ্বে ভারতের প্রচেষ্টাগুলির প্রশংসা হচ্ছে, আর তার গৌরব, এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কৃতিত্ব নেওয়ার কালখণ্ড ছিল না, এই সাফল্য সমগ্র দেশের, ১৩০ কোটি দেশবাসীর। খুব ভালো হত যদি এর সুখ্যাতি ও যশ গ্রহণের চেষ্টা আপনারা করতেন যাতে আপনাদের অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা জমা হত। কিন্তু এখন এটাও শেখাতে হবে। আসলে টিকাকরণ সম্পর্কিত অনেক কথাই একটু আগেই প্রশ্নোত্তরকালে আপনাদের মাননীয় মন্ত্রীজি বিস্তারিতভাবে বলেছেন। যেভাবে ভারত টিকা উৎপাদনে উদ্ভাবনের পথে গেছে, গবেষণায় মন দিয়েছে আর তার বাস্তবায়নও আজ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আজ বিশ্বে টিকার বিরুদ্ধে অনেক বড় আন্দোলন চলছে। কিন্তু টিকা থেকে আমার লাভ হোক কিংবা না হোক, কিন্তু নিদেনপক্ষে টিকা নেব, তাহলে আমার কারণে অন্য কারোর ক্ষতি হবে না। এই একটি ভাবনা থেকে ১৩০ কোটি দেশবাসীকে টিকা নিতে প্রেরণা জোগানো হচ্ছে। এটা ভারতের মৌলিক চিন্তাভাবনারই প্রতিফলন, যা বিশ্বের জনগণের সামনে তুলে ধরা প্রত্যেক ভারতীয়ের কর্তব্য। যদি শুধুই নিজেদের রক্ষা করার বিষয় হত, তাহলে নেব কি নেব না - তা নিয়ে বিবাদ হত না। কিন্তু যখন কোনও রোগীর মনে ভাবনা আসে যে, আমার কারণে যেন অন্য কারোর কষ্ট না হয়, সেজন্য আমি জীবন দিতে পারি। সেজন্য তাঁর মনে ভাবনা আসে যে, আমার কারণে কেউ যেন কষ্ট না পায়, আর আমাকেও ডোজ নিতে হবে, তাহলে আমি নিয়ে নিই! – আর তিনি নিয়ে নিলেন। এটি ভারতের মনের, ভারতের মানব মনের, ভারতের মানবতার বৈশিষ্ট্য। আমরা গৌরবময় রূপে বিশ্বের সামনে বলতে পারি, আজ ১০০ শতাংশ ডোজের লক্ষ্য পূরণ করেছি, আর আমরা আজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি। আমি সমস্ত সম্মানিত সদস্য, সমস্ত মাননীয় সদস্যদের, তাঁদের ও আমাদের সামনে যত অগ্রণী যোদ্ধারা রয়েছেন, আমাদের হেলথ কেয়ার ওয়ার্কাররা, আমাদের বৈজ্ঞানিকরা, তাঁরা যত কাজ করেছেন সেগুলির প্রশংসা করলে ভারতের প্রতিভাগুলিও আরও বিকশিত হবে, খেলার মাধ্যমে জানবে আর প্রস্ফুটিত হবে। কিন্তু এভাবে জীবন উৎসর্গকারী মানুষদেরও সাহস দৃঢ় হবে, আর সেজন্য এই সভা নতুন ভারতের গৌরবের সঙ্গে তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছে, তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।

মাননীয় সভাপতি জি,

এই করোনাকালে ৮০ কোটিরও বেশি দেশবাসীকে এত দীর্ঘ কালখণ্ডের জন্য বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছি। তাঁদের বাড়িতে উনুন জ্বলা কখনও না থামে, আর যেন কখনও উনুন না জ্বলার মতো পরিস্থিতি না আসে। এই কাজ ভারত নিজে করে বিশ্বের সামনে উদাহরণ রেখেছে। এই করোনাকালে যখন ভারত অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে, যখন অনেক বাধা-নিষেধ ছিল, তা সত্ত্বেও বারবার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার পরও লক্ষ লক্ষ পরিবারকে, লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষকে মাথার ওপর ছাদ, পাকা বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পর প্রতিশ্রুতি মতো আমরা লাগাতার এগিয়ে চলেছি, আর আজ গরীবদের জন্য বাড়ি তৈরি করতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছি। যত কোটি গৃহহীন পরিবার এই পাকা বাড়ি পেয়েছেন, প্রত্যেক গরীব পরিবারকে আজ লক্ষপতি বলা যেতে পারে।

মাননীয় সভাপতি জি,

এই করোনাকালে ৫ কোটি গ্রামীণ পরিবারে আমরা নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি। এই করোনাকালে যখন প্রথম লকডাউন এসেছে, তখনও অনেক ভাবনাচিন্তা করে, অনেক আলাপ-আলোচনা করে কেউ কেউ সাহসের সঙ্গে পা বাড়িয়েছেন। এই সাহসের প্রয়োজন ছিল। গ্রামের কৃষকদের লকডাউন থেকে মুক্ত রাখতে হবে। এই সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল, ঝুঁকিপূর্ণ ছিল কিন্তু আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর তার পরিণাম এটা এসেছে যে আমাদের কৃষকরা করোনার এই কালখণ্ডেও বাম্পার ফসল ফলিয়েছেন আর সরকারও ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ফসল কেনার নতুন নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। এই করোনাকালে পরিকাঠামো সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়েছে কারণ আমরা জানি যে এ ধরনের সঙ্কটকালে পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে যত বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় সেটাই কর্মসংস্থানের সুযোগগুলিকে সুনিশ্চিত করে আর সেজন্য আমরা এক্ষেত্রেও জোর দিয়েছি যাতে কর্মসংস্থানও হয় আর সমস্ত প্রকল্প আমরা বাস্তবায়িতও করতে পারি। নানারকম প্রতিকূলতা ছিল, কিন্তু সেগুলি আমরা দূর করতে পেরেছি। এই করোনাকালে জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতেও উন্নয়ন কর্মসূচি যে গতিতে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, তার থেকে অনেক বেশি গতিতে আমরা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। এই করোনা কালখণ্ডে আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায়, ক্রীড়া জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা, আমাদের জাতীয় পতাকা ওড়ানোর মতো কাজ সাফল্যের সঙ্গে করেছেন, দেশকে গৌরবান্বিত করেছেন। আজ সমগ্র দেশ আমাদের যুব সম্প্রদায় ক্রীড়া জগতে যেভাবে নিজেদের সাফল্যের সঙ্গে তুলে ধরেছেন, ঠিক সেভাবেই করোনার এই সমস্ত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও নিজেদের তপস্যা ভাঙেননি, নিজেদের কাজের গতি কম হতে দেননি। নিজের সাধনায় বিন্দুমাত্র ত্রুটি থাকতে দেননি। আর এভাবেই দেশের প্রতিটি মানুষ দেশের গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই করোনাকালে আজ যখন আমাদের দেশের নবীন স্টার্ট-আপগুলি ভারতের নবীন প্রজন্মের একটি পরিচয় হয়ে উঠেছে, একটি সিনোনিমাস হয়ে উঠেছে, আজ আমাদের দেশের যুব সম্প্রদায় স্টার্ট-আপ-এর কারণে, স্টার্ট-আপ-এর দুনিয়ায় শ্রেষ্ঠ তিনটি স্থানের মধ্যে ভারতকে স্থান করে দিয়েছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই করোনাকালে সিওপি-২৬-এর বিষয় থেকে শুরু করে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বিভিন্ন বিষয় অথবা আমাদের সমাজ জীবনের মধ্যে অনেক অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করা থেকে শুরু করে বিশ্বের ১৫০টি দেশে করোনা প্রতিরোধী ওষুধ পৌঁছে দেওয়া – এই সমস্ত ক্ষেত্রে ভারত একটি নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে। আজ ভারতের এই নেতৃত্ব প্রদানকারী ভূমিকার চর্চা সারা বিশ্বে চলছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

যখন সঙ্কটের সময় আসে, তখন প্রতিকূলতাও একের পর এক আসতে থাকে। এই অপার প্রতিকূলতার মুখোমুখি বিশ্বের প্রতিটি শক্তি নিজেদের রক্ষা করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারে না। এমন কঠিন সময়ে সেই সঙ্কটগুলি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য আমি অটল বিহারী বাজেপেয়ীজির একটি কবিতার সেই শব্দগুলি মাথায় রাখি যা আমাদের সকলের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে উঠতে পারে। অটলজি লিখেছিলেন –

“ব্যাপ্ত হুয়া বর্বর আন্ধিয়ারা,
কিন্তু চিরকর তন কি ছাতি,
চমকা হিন্দুস্তান হামারা।
শত শত আঘাতো কো সহকর, জীবিত হিন্দুস্তান হামারা।
জগ কে মস্তক পর রোলী সা, শোভিত হিন্দুস্তান হামারা।”

অর্থাৎ, বর্বর অন্ধকার সর্বব্যাপী, কিন্তু অন্ধকারের বুক চিরে আমাদের ভারত উজ্জ্বল। শত শত আঘাত সয়ে আমাদের ভারত জীবন্ত রয়েছে। বিশ্বের মুকুটে মণির মতো আমাদের ভারত শোভা পাচ্ছে।

অটলজির এই শব্দগুলি আজকের এই কালখণ্ডেও ভারতের সামর্থ্যকে তুলে ধরে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই করোনাকালে সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এতে কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে একটু বেশি জোর দেওয়া হয়েছে কারণ, সেগুলি ব্যাপক জনহিতের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল, নবীন প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। করোনাকালে যে বিশেষ ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সেগুলির মধ্যে দুটি সম্পর্কে অবশ্যই বলতে চাইব। একটি হল, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটি যাতে আমাদের দেশের সবচাইতে বেশি কর্মসংস্থান প্রদানকারী ক্ষেত্রে পরিণত হয় তা আমরা সুনিশ্চিত করেছি। এভাবে কৃষিক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও যাতে কোনও প্রতিকূলতা না আসে তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এর কারণ আমি আগেই বর্ণনা করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। সরকার রেকর্ড পরিমাণ ক্রয়ও করেছে। মহামারী সত্ত্বেও গম ও ধানের ক্রয়ের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা বেশি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পেয়েছেন আর তাও প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর স্কিমের মাধ্যমে পেয়েছেন।

অর্থ সরাসরি তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে আর আমি তো পাঞ্জাবের জনগণের অনেক ভিডিও দেখেছি কারণ, পাঞ্জাবে প্রথমবার প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, “সাহেব, আমার খেত তো একই আকারের, আমাদের পরিশ্রমও ততটাই ছিল, কিন্তু এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এত টাকা একসঙ্গে আসা, এটা জীবনে প্রথমবার হয়েছে।” এর ফলে, সঙ্কটের সময় কৃষকদের হাতে নগদের সুবিধা ছিল। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলেই এতবড় ক্ষেত্রটিকে আমরা ‘শক’ এবং ‘ডিজরাপশন’ থেকে বাঁচাতে পেরেছি। তেমনই অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ ক্ষেত্রের কথা বলব। এই ক্ষেত্রের সুবিধাভোগীরা আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ থেকে সবচাইতে বেশি লাভবান হয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রক থেকে যে পিএলআই স্কিম চালু করা হয়েছে, সেগুলির মাধ্যমে উৎপাদন শিল্প উপকৃত হয়েছে। ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম লিডিং মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার হয়ে উঠেছে আর রপ্তানি ক্ষেত্রেও এর অবদান ক্রমবর্ধমান। অটোমোবাইল এবং ব্যাটারি – এই ক্ষেত্রেও পিএলআই স্কিম উৎসাহজনক পরিণাম দিচ্ছে। যখন এতবড় স্তরে উৎপাদন শিল্প আর তাও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অর্ডার পাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। অনেক বেশি সুযোগও আসে। আর এটাই সত্য যে ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য যেগুলি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে অতিমাত্রায় নির্মিত হয়, এই সময় যে দেশ থেকে রপ্তানির পরিসংখ্যান বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এই ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যগুলিরও অনেক বড় অবদান রয়েছে। এটি ভারতের জনগণের দক্ষতা, শিল্পকুশলতা আর ভারতের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির শক্তিকে তুলে ধরে। আমাদের প্রতিরক্ষা উৎপাদন শিল্পোদ্যোগগুলির দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখব, উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে ডিফেন্স করিডর গড়ে উঠছে। যত মউ স্বাক্ষরিত হচ্ছে, যেভাবে মানুষ এই ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যেভাবে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি এই উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত উৎসাহজনক যে দেশের মানুষের মধ্যে এই সামর্থ্য রয়েছে আর দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি অত্যন্ত সাহস নিয়ে এগিয়ে আসছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

কিছু জিইএম তাদের মাধ্যমে সরকারের যত প্রয়োজনীয় পণ্য কেনা হয় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি তার একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে আর সেই প্ল্যাটফর্মের কারণে আজ অনেক সুবিধা বেড়েছে। তেমনই আমরা একটি অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সিদ্ধান্তটি হল, সরকারের ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত, ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত যত দরপত্র হবে, সেই দরপত্রগুলি গ্লোবাল হবে না। সেগুলিতে ভারতের জনগণকেই সুযোগ দেওয়া হবে আর এর ফলে আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি এবং সেগুলির মাধ্যমে আমাদের দেশের নবীন প্রজন্মের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত থাকবে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই সভাগৃহে মাননীয় সদস্যরা কর্মসংস্থান সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ তুলেছেন। অনেকেই নিজেদের পরামর্শ দিয়েছেন। কত কাজ সৃষ্টি হয়েছে তা জানার জন্য ইপিএফও পে-রোল, এই ইপিএফও পে-রোলকে সবচাইতে বিশ্বস্ত মাধ্যম মনে করা হয়। ২০২১ সালে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ নতুন মানুষ ইপিএফও পে-রোলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আর আমরা যেন এটা না ভুলি যে এঁরা সবাই সংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। আমি অসংগঠিত ক্ষেত্রের কথা বলছি না। শুধুই সংগঠিত ক্ষেত্রের কথা বলছি আর এঁদের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৫ লক্ষ কর্মীর বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। তার মানে হল যে তাঁদের বয়স প্রথম চাকরির বয়স। অর্থাৎ, জব মার্কেটে তাঁদের প্রথম এন্ট্রি হয়েছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনার আগের সময়ের তুলনায় কোভিড রেস্ট্রিকশন তোলার পর হায়ারিং দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যাসকম-এর রিপোর্টেও এই প্রবণতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৭-র পর প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ প্রায় … ন্যাসকম অনুযায়ী, ২৭ লক্ষ নতুন কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে। এটা শুধুই দক্ষতার নিরিখে নয়, তার ওপরের লেভেলের মানুষেরা রয়েছেন যাঁদের কর্মসংস্থান হয়েছে। উৎপাদন শিল্প বৃদ্ধির কারণে ভারতের আন্তর্জাতিক রপ্তানি বেড়েছে আর এর দ্বারা কর্মসংস্থান ক্ষেত্রও সরাসরি লাভবান হয়েছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

২০২১ সালে অর্থাৎ, মাত্র এক বছরে ভারতে যত ইউনিকর্ন তৈরি হয়েছে তা পূর্ববর্তী বছরগুলিতে ইউনিকর্নগুলি থেকে অনেক বেশি আর এসব কিছু যদি রোজগারের মধ্যে গোনা না হয়, তাহলে এই আলোচনাকে রোজগারের থেকে বেশি রাজনীতির আলোচনা বলেই মনে করা যেতে পারে।

মাননীয় সভাপতিজি,

অনেক মাননীয় সদস্য মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ১০০ বছর পর আসা এই ভয়ঙ্কর বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে। যদি মূল্যবৃদ্ধির কথা বলি তাহলে আমেরিকাতে ৪০ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। আমেরিকা এই সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। ব্রিটেন ৩০ বছরের মধ্যে সবচাইতে বেশি মূল্যবৃদ্ধির কারণে সঙ্কটগ্রস্ত। বিশ্বের ১৯টি দেশে যেখানে ইউরো মুদ্রা চলে, সেখানকার মূল্যবৃদ্ধির হার ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ। এই পরিবেশেও মহামারীর চাপ থাকা সত্ত্বেও আমরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে একটি সীমা পর্যন্ত আটকানোর অনেক চেষ্টা করেছি, সততার সঙ্গে করেছি। ২০১৪ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪-৫ শতাংশের কাছাকাছি। এর তুলনায় যদি ইউরোপের দিকে তাকান তাহলে বুঝতে পারবেন যে মূল্যবৃদ্ধি কাকে বলে। ইউপিএ আমলে মূল্যবৃদ্ধির হার ডবল ডিজিট স্পর্শ করছিল। আজ আমরা একমাত্র বড় অর্থনীতির দেশ যেখানে উচ্চ হারে উন্নয়ন এবং মধ্য হারে মুদ্রাস্ফীতি দেখতে পাচ্ছি। বাকি বিশ্বের অর্থনীতির দিকে যদি তাকান তাহলে অধিকাংশ দেশেই অর্থনীতির বৃদ্ধি শ্লথ হয়েছে কিংবা মূল্যবৃদ্ধি অনেক দশকের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই সভাগৃহে কিছু বন্ধু ভারতের হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরেছেন আর তুলে ধরে তাঁরা খুব আনন্দ উপভোগ করছিলেন বলে আমার মনে হচ্ছিল। আমি যখন এই ধরনের হতাশাজনক কিছু দেখি বা শুনি, তখন আমার মনে হয় সার্বজনিক জীবনে উত্থান-পতন আসতেই থাকে, জয়-পরাজয় হতেই থাকে, তার প্রভাব, ব্যক্তিগত জীবনের নিরাশার প্রভাব দয়া করে দেশের ওপর চাপিয়ে দেবেন না। আমি জানি না কিন্তু আমাদের গুজরাটে একটি প্রবাদ আছে, শরদ রাও মশাই হয়তো জানবেন। এই প্রবাদ তাঁদের মহারাষ্ট্রেও হয়তো আছে। প্রবাদটি হল – “জব হরিয়ালি হোতি হ্যায়, খেত জব হারে-ভরে হোতে হ্যায়, উস সময় আগর উসকি আঁখেঁ চলি যায়, তো জীবন ভি উসকো ওহ হারেওয়ালা আখেরি যো চিত্র হ্যায়, ওহ রহতা হ্যায়।” অর্থাৎ, কেউ যদি দৃষ্টি হারানোর আগে শস্য-শ্যামলা পরিবেশে থাকেন, তাহলে চোখ চলে যাওয়ার পরেও তাঁর জীবনে সেই শস্য-শ্যামলা চিত্রটাই থেকে যায়। তেমনই ২০১৩ পর্যন্ত যে দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে কাটিয়েছেন আর ২০১৪-য় হঠাৎ দেশের জনগণ যেভাবে আলো জ্বালিয়েছেন, তাতে তাঁদের চোখের দৃষ্টি চলে গেছে। সেজন্য তাঁরা পুরনো দৃশ্যই দেখতে থাকেন।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে – “মহাজন য়েন গতঃ স পন্থাঃ” অর্থাৎ, মহাপুরুষেরা যে পথে যান, সেই পথই অনুসরণযোগ্য হয়।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি এই সভাকক্ষে একটি কথা বলতে চাই। এখানে যাঁরাই আছেন, যেদিকেই বসে আছেন, এদিকে কিংবা ওদিকে যে কোনও জায়গায়, কিন্তু তাঁরা দেশের মানুষের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। ছোট নেতা হন কিংবা বড় নেতা, তিনি তাঁর এলাকার নেতা। তিনি তাঁর এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন, নেতৃত্ব করছেন। তাঁর এলাকার সমস্ত মানুষ তিনি কি বলছেন, তিনি কি করছেন, সেটা সব সময় শোনার চেষ্টা করেন, লক্ষ্য রাখেন। আর এটা ভাবা ঠিক নয় যে আমরা শাসন ক্ষমতায় আছি বলে আমরাই নেতা আর ওদিকে যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কিছু নয়। এটা গণতন্ত্রে সম্ভব নয়। আপনারা যেখানেই বসে থাকুন না কেন, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনারা প্রকৃত অর্থেই এক একজন নেতা আর নেতা যদি এরকমভাবে ভাবেন, এরকম হতাশায় ডুবে থাকেন, তাহলে আপনি কেমন নেতা? শুধু কি সরকার পক্ষে যাঁরা বসে আছেন তাঁরাই দেশের চিন্তা করবেন আর বিরোধী পক্ষে যাঁরা বসে আছেন তাঁরা দেশের চিন্তা করবেন না? তাঁদের এলাকার মানুষের কথা ভাববেন না? এরকম কি হওয়া উচিৎ?

আমাদের কারোর কাছ থেকে যদি না শিখতে চান, শরদ রাওজির থেকে শিখুন। আমি দেখেছি, শরদ রাওজি এই বয়সেও, অনেক অসুস্থতার মধ্যেও নিজের এলাকার মানুষদের প্রেরণা যোগাতে থাকেন। আমাদের হতাশ হওয়ার প্রয়োজন নেই ভাই! আর আপনি যদি হতাশ হন, তাহলে আপনার যে এলাকা, যদিও আপনাদের এলাকা এখন অনেক কমে গেছে, তবুও যতটা আছে এটা তো আমাদের সবার দায়িত্ব … খাড়গেজি, আপনিও মাঝেমধ্যে অধীর রঞ্জনজির মতো ভুল করেন। আপনি একটু পেছন দিকে তাকান। জয়রামজি পেছনের সারিতে গিয়ে এ কাজের জন্য ২-৩ জনকে তৈরি করেছেন। আপনারা নিজেদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখুন, ব্যবস্থা সুনিয়ন্ত্রিত রাখুন। জয়রামজি বাইরে গিয়ে খবর জেনে এসেছেন। তিনি অন্যদেরকে বোঝাচ্ছিলেন। এখন একটু পরেই সব শুরু হবে। আপনারা প্রত্যেকেই সম্মানিত নেতা।

মাননীয় সভাপতিজি,

আসল ক্ষমতায় যারাই থাকুক না কেন, কিন্তু দেশের সামর্থ্যকে কখনও অবমূল্যায়ন করা উচিৎ নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ দেশের সামর্থ্যকে গোটা বিশ্বের সামনে উন্মুক্ত মনে তুলে ধরা। সামর্থ্যের গৌরব গান করা উচিৎ, এটা দেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই সভায় আমাদের এক সাথী বললেন, ‘ভ্যাক্সিনেশন ইজ নট আ বিগ ডিল’। আমি এটা শুনে অবাক হলাম যে কিছু মানুষের ভারতের এত বড় সাফল্যকে কোনও সাফল্য বলেই মনে হয় না? একজন বন্ধু তো এটাও বললেন যে এই টিকাকরণের পেছনে বৃথাই এত খরচ করা হচ্ছে। এটা দেশের মানুষ শুনলে আপনার সম্পর্কে তাঁরা কি ভাববেন?

মাননীয় সভাপতিজি,

করোনা যখন থেকে মানবজাতির ওপর সঙ্কটের করাল গ্রাস নিয়ে এগিয়ে এসেছে, সরকার তখন থেকে দেশ ও বিশ্বের যেখান থেকে যতটা সম্ভব সম্পদ আহরণের চেষ্টা করেছে। আমাদের দেশের নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য আমাদের যতটা সামর্থ্য ছিল, যতটা বুদ্ধি ছিল, শক্তি ছিল আর সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা আমরা করেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত এই মহামারী থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর, দরিদ্রতম পরিবারের জীবন বাঁচানোর জন্য যতটা অর্থ ব্যয় করতে হয় ততটাই করার জন্য দায়বদ্ধ। কিন্তু আমি অবাক হয়ে দেখলাম যে কয়েকটি দলের অনেক বড় নেতাও যে অপরিপক্কতা দেখিয়েছেন তা থেকে দেশবাসী অনেক হতাশ হয়েছেন। আমরা দেখেছি কিভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে নানা রকম খেলা হয়েছে। ভারতীয় টিকার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হয়েছে, অভিযান চালানো হয়েছে। একটু ভাবুন, আপনারা আগে যা বলেছেন আর আজ যা হচ্ছে দুটোকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। এমনও হতে পারে যে এতে নিজেদের সংস্কারের সম্ভাবনা, সংশোধনের সম্ভাবনা থাকলে কিছু কাজে লাগবে।

মাননীয় সভাপতিজি,

দেশের জনগণ অত্যন্ত সচেতন আর আমি দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানাই যে তাঁরা প্রত্যেক ছোট-বড় নেতার এ ধরনের ভুলকেও … এই ধরনের সঙ্কটের সময়ে এসব কথাকে কানে ঢোকাননি, তাঁদের ছড়ানো গুজবে কান দেননি আর টিকার লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকা নিয়েছেন। যদি তাঁরা তাঁদের গুজবে কান দিতেন, তাহলে দেশের জন্য অনেক বড় সঙ্কট সৃষ্টি হত। কিন্তু এটাই ভালো হয়েছে যে দেশের জনগণ কিছু নেতার থেকে অনেক বেশি অগ্রগামী, এটাই দেশের জন্য অত্যন্ত শুভ সঙ্কেত।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই সমগ্র করোনাকাল এক প্রকার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সবচাইতে ভালো উদাহরণ তুলে ধরেছে। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ২৩ বার কোনও এক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সৌভাগ্য হয়েছে। সম্ভবত দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রীর তাঁদের শাসনকালে এতবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে বসার সৌভাগ্য হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই ২৩টি বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা হয়েছে আর মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শ ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যত দপ্তর ছিল সেগুলি একত্রিত করেই জনগণের সামনে পেশ করা হয়েছে। এই সভাকক্ষে যেহেতু রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করা বরিষ্ঠ নেতারা রয়েছেন, সেজন্য আমি একথা বলতে চাইব যে এই তথ্যের লেনদেন একটি অত্যন্ত বড় ব্যাপার। ২৩টি বৈঠকে বসা এই সামান্য সময়ের মধ্যে আর বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রণনীতি তৈরি করা এবং সবাইকে অন-বোর্ড নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, তা সে কেন্দ্রীয় সরকার হোক কিংবা রাজ্য সরকার অথবা কোনও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনাধীন সংস্থা হোক, সবাই মিলে চেষ্টা করে গেছে। আমরা কারোর অবদানকে ছোট করে দেখাই না। আমরা তো প্রত্যেকের অবদানকে দেশের শক্তি বলে মনে করি।

কিন্তু মাননীয় সভাপতিজি,

এতদসত্ত্বেও কিছু মানুষের আত্মচিন্তন করার প্রয়োজন রয়েছে। যখন করোনা নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত প্রেজেন্টেশন দেওয়ার ছিল, তখন একদিক থেকে চেষ্টা করা হয়েছে যাতে কিছু দল না যায়, তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে আর যাঁরা এই চেষ্টা করেছেন তাঁরা নিজেরাও আসেননি। তাঁরা সর্বদলীয় বৈঠককে বয়কট করেছেন। এজন্য আমি শ্রদ্ধেয় শরদ রাওজির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাইব। শরদ রাওজি বলেছেন, “দেখুন ভাই, এটা কোনও ইউপিএ-এর সিদ্ধান্ত নয়, আমি যাকে যাকে বলতে পারি, তাঁদেরকে বলব।” শরদ রাওজি নিজে ওই বৈঠকে আসেন আর টিএমসি সহ অন্যান্য সব দলের নেতারাও আসেন এবং তাঁরা নিজেদের বহুমূল্য পরামর্শও দেন। এই সঙ্কট দেশের ওপর এসেছিল, মানবজাতির ওপর এসেছিল। সেখানেও আপনারা বয়কট করছেন? জানি না আপনারা এই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ কোথা থেকে পান? এটা মনোভাব আপনাদেরও ক্ষতি করছে। দেশ থেমে নেই। দেশ এগিয়ে চলেছে। আপনারা এখানেই আটকে গেছেন আর প্রত্যেকেই অবাক হয়েছে, সবাই … আপনারা পরদিনের খবরের কাগজ খুলে দেখে নিন। আপনাদেরকে নিয়ে কত বিরূপ সমালোচনা হয়েছে। সবাই নিন্দা করেছে আপনারা কেন এমন করেছেন? এত বড় একটা সর্বদলীয় বৈঠক, এত বড় কাজ, কিন্তু …।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমরা হলিস্টিক হেলথ কেয়ারকে গুরুত্ব দিয়েছি। আধুনিক চিকিৎসা পরম্পরা, ভারতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি – এই দুটি ছাড়াও আয়ুষ মন্ত্রক সেই সময় অনেক কাজ করেছে। এই সভাকক্ষে কখনও কখনও এহেন মন্ত্রককে নিয়ে আলোচনাও হয় না। কিন্তু এটা দেখতে হবে, আজ বিশ্বে … আমাদের অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানার জনগণ বলবেন, আমাদের দেশ থেকে হলুদের রপ্তানি কতগুণ বেড়েছে। করোনার সময় ভারতের এই উপাচার পদ্ধতিই পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষকে যেভাবে আকর্ষণ করেছে এটা তারই পরিণাম। বিশ্ববাসীর এই আগ্রহের ফলেই আজ করোনা কালখণ্ডে ভারত তার ফার্মা শিল্পোদ্যোগকেও শক্তিশালী করে তুলতে পেরেছে। গত বছর আমাদের যে আয়ুর্বেদিক উপাদানগুলির উৎপাদন এবং সেগুলির রপ্তানি অনেক বেড়েছে, তা নতুন নতুন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে। তার মানে ভারতের যে ঐতিহ্যগত ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে তা বিশ্বে একটি নতুন পরিচয় গড়ে তুলতে শুরু করেছে। আমি চাই যে আমরা সবাই যেখানে যেখানে আমাদের পরিচিতি রয়েছে, এই বিষয়টির ওপর জোর দিই কারণ আমাদের এই সম্ভাবনার ক্ষেত্রটি অবদমিত রয়েছে। যদি আমরা এটাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারি আর এটাই সেই সময় যখন আমরা সারা পৃথিবী থেকে ভারতীয় ঔষধি ও চিকিৎসা পদ্ধতির স্বীকৃতি আদায় করে নিতে পারব, তখন সম্ভবত ভারতের ঐতিহ্যগত ওষুধের পরম্পরা ও তার শক্তি সারা পৃথিবীতে পৌঁছবে এবং মানবতার উপকারে লাগবে।

মাননীয় সভাপতিজি,

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে ৮০ হাজারেরও বেশি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার আজ কাজ করছে আর সব ধরনের আধুনিক ও অত্যাধুনিক পরিষেবা দেওয়ার জন্য সেগুলিকে সুসজ্জিত করে তোলা হচ্ছে। এই সেন্টারগুলি গ্রামে এবং বাড়ির পাশেই বিনামূল্যে নানারকম শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ উন্নত অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করছে। এই সেন্টারগুলি ক্যান্সার, মধুমেহ এবং অন্যান্য কঠিন রোগকেও গোড়াতেই চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার সেন্টার গড়ে উঠেছে আর আমরা এই সংখ্যাকে আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ করছি। অর্থাৎ, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রোগ, কঠিন রোগের ক্ষেত্রেও আমাদের স্থানীয় স্তরে সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এমনিতে পুরনো পরম্পরা এটাই ছিল যে বাজেটের আগে কিছু কর লাগিয়ে দেওয়া হত যাতে বাজেটে এ নিয়ে কোনও আলোচনা না হয়। বাজেটে দেখা যাবে না আর সেদিন শেয়ার মার্কেটও পড়বে না। আমরা এমন চালাকি করিনি। আমরা তার উল্টোটাই করেছি। আমরা বাজেটের আগে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পিএম আত্মনির্ভর সুস্থ ভারত যোজনার মাধ্যমে ক্রিটিক্যাল হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে তোলার জন্য রাজ্যগুলিকে বিতরণ করেছি। যদি আমরা এই অর্থকে বাজেটে দেখাতাম, তখন বাজেটের পরিসংখ্যান অনেক সুন্দর হত। এখনও আমাদের বাজেট খুবই সুন্দর, কিন্তু তখন আরও সুন্দর দেখাত। কিন্তু আমরা সেই মোহ থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছি। করোনার কঠিন সময়ে তৎকাল ব্যবস্থা সম্পাদনের স্বার্থে আমরা আগে এটা করেছি আর এ কাজের জন্য আমরা ৬৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি।

মাননীয় সভাপতিজি,

এবার খাড়গেজি অনেক সুন্দর বলছিলেন আর বলছিলেন … তিনি আমাকে বলছিলেন যে সেই বিষয়েই বলি। অন্য বিষয় নিয়ে না বলি। কিন্তু তিনি কি বলেছেন সেটাকেও একবার চেক করে নেওয়া যেতে পারে। তিনি এই সভাকক্ষে দাঁড়িয়ে বলেছেন যে কংগ্রেস ভারতের ভিত্তি রচনা করেছে আর বিজেপি-র নেতারা শুধুই নিজেদের ঝান্ডা লাগিয়ে দিয়েছেন।

মাননীয় সভাপতিজি,

এটি সভাকক্ষে এমনই মজার ছলে বলা কোনও বক্তব্য নয়। এটা সেই সিরিয়াস ভাবনার পরিণাম আর তা দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। সেটি হল কিছু মানুষ এটা মনে করেন যে ভারতের জন্ম ১৯৪৭ সালেই হয়েছে আর সেই ভাবনার কারণেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেই ভাবনার পরিণাম হল ভারতে বিগত ৭৫ বছরের মধ্যে যাঁরা ৫০ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁদের নীতিগুলির মধ্যে এই মানসিকতার প্রভাব ছিল আর তার ফলে অনেক বিকৃতি জন্ম নিয়েছে।

এই গণতন্ত্র আপনাদের মেহেরবানিতে আসেনি আর আপনারা ১৯৭৫-এ গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরার যে গণতন্ত্র তা নিয়ে গৌরব করা উচিৎ নয়।

মাননীয় সভাপতিজি,

জন্ম হওয়ার পর ভারতের বয়স এত কম, এমন ভাবনাসম্পন্ন যে ব্যক্তিরা রয়েছেন, তাঁদের বিশ্বের সামনে একটি বক্তব্য খোল-করতাল বাজিয়ে প্রকাশ করা উচিৎ ছিল, কিন্তু সেটা বলতেও তাঁরা পারেননি, সঙ্কুচিত হয়েছিলেন। আমাদের গর্বের সঙ্গে বলা উচিৎ ছিল যে ভারত আমাদের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ আসলে ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’। ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র ও বিতর্ক, এই প্রক্রিয়া ভারতে অনেক শতাব্দী ধরে চলে আসছে আর কংগ্রেসের সমস্যা হল, এই ডায়নেস্টির বাইরে তারা কিছু ভাবেইনি। এটাই তাদের সমস্যা। তাদের পার্টিতে যে গণতন্ত্রের কথা তাঁরা বলেন, সেটি যে নেই সেটা যাঁরা সামান্য রাজনীতি বোঝেন, ভারতের গণতন্ত্রের সবথেকে বড় বিপদ পরিবারবাদী দলগুলি থেকে রয়েছে এটা মানতেই হবে আর দলের মধ্যেও যখন কোনও একটি পরিবার সর্বোপরি হয়, তখন সবথেকে প্রথম ক্যাজুয়ালিটি তার মেধার সঙ্গে হয়। দেশে অনেক বছর ধরে এই ভাবনার ফলে অনেক লোকসানের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি চাই যে সমস্ত রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক আদর্শগুলি এবং মূল্যবোধকে তাদের দলের মধ্যে বিকশিত করুক, গণতন্ত্রের প্রতি সমর্পিত প্রাণ হোক, আর ভারতের সবচাইতে প্রাচীন দল হিসেবে কংগ্রেসেরও উচিৎ এই দায়িত্ব বেশি করে পালন করা।

মাননীয় সভাপতিজি,

এখানে একথা বলা হয়েছে যে কংগ্রেস না থাকলে কী হত? এই যে ভাবনা, এটাও ‘ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা, ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া’ – এই ভাবনারই পরিণাম।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি একটু বলতে চাই … এখানে বলা হয়েছে – আমিও ভাবছি, কংগ্রেস না হলে কী হত? কারণ মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছা ছিল, কারণ মহাত্মা গান্ধী জানতেন তিনি থাকলে কি কি হতে পারে আর তিনি বলেছিলেন, “আগেই এটাকে শেষ করো, এটাকে ছড়িয়ে দাও”। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন। যদি কংগ্রেস না থাকত, মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছানুসারে যদি হত, যদি মহাত্মা গান্ধীর ইচ্ছানুসারে কংগ্রেস না হত, তাহলে কী হত? – ভারতের গণতন্ত্র পরিবারবাদ থেকে মুক্ত হত। ভারত বিদেশি চশমার বদলে স্বদেশী সঙ্কল্পের পথে এগিয়ে যেত। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে ভারতীয় গণতন্ত্রের গায়ে জরুরি অবস্থার কলঙ্ক লাগত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে অনেক দশক ধরে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে জাতিবাদ এবং আঞ্চলিকতাবাদের খাজগুলি এত গভীর হত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে শিখদের গণহত্যা – নরসংহার হত না। অনেক বছর ধরে পাঞ্জাব সন্ত্রাসের আগুনে জ্বলত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে কাশ্মীরের পণ্ডিতদের কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়ে আসার প্রয়োজন হত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে মেয়েদের তন্দুরে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা হত না। যদি কংগ্রেস না হত, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের বাড়ি, ঘর, সড়ক, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, শৌচালয়, মৌলিক পরিষেবাগুলির জন্য এত বছর ধরে অপেক্ষা করতে হত না।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি গুনতে থাকব, আমি গুনব।

মাননীয় সভাপতিজি,

কংগ্রেস যখন ক্ষমতায় ছিল, দেশের উন্নয়ন হতে দেয়নি। এখন বিরোধী পক্ষে রয়েছে তখনও দেশের উন্নয়নে বাধা দিচ্ছে। এখন কংগ্রেসের ‘নেশন’ শব্দটি নিয়েই আপত্তি রয়েছে। ‘নেশন’ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। যদি ‘নেশন’ তাদের কল্পনায় অসাংবিধানিক হয়, তাহলে আপনাদের দলের নাম ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ কেন রাখা হয়েছিল? এখন আপনাদের মনে যদি নতুন ভাবনা জেগে থাকে, তাহলে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নাম বদলে দিন আর আপনাদের নাম রাখুন ‘ফেডারেশন অফ কংগ্রেস’। নিজেদের পূর্বসূরীদের ভুল একটু শুধরে নিন।

মাননীয় সভাপতিজি,

এখানে ‘ফেডারেলিজম’ নিয়ে কংগ্রেস, টিএমসি এবং বামপন্থীরা সহ অনেক বন্ধুরা অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। বলার প্রয়োজনও হয়তো ছিল কারণ এটা রাজ্যগুলির বরিষ্ঠ নেতাদের সভাকক্ষ। কিন্তু সমস্ত সাথীদের …

মাননীয় সভাপতিজি,

ধন্যবাদ।

মাননীয় সভাপতিজি,

গণতন্ত্রে শুধু শোনালেই হয় না, শোনাও গণতন্ত্রের অঙ্গ। কিন্তু অনেক বছর ধরে উপদেশ দেওয়ার অভ্যাস যাঁদের রয়ে গেছে, অন্যের কথা শুনলে তাঁদের সমস্যা হয়। এখানেও সমস্যা হচ্ছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

‘ফেডারেলিজম’ নিয়ে কংগ্রেস, টিএমসি এবং বামপন্থীরা সহ অনেক বন্ধুরা অনেক বড় বড় কথা বলেছেন। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। বলার প্রয়োজনও হয়তো ছিল কারণ এটা রাজ্যগুলির বরিষ্ঠ নেতাদের সভাকক্ষ। তাঁদের উপদেশ, তাঁদের মূল্যবান পথনির্দেশ এই সভাকক্ষে পাওয়া যায়। কিন্তু যখন তাঁরা এই কথাগুলি বলছিলেন, তখন আমি আজ সবাইকে অনুরোধ করব, আমরা ‘ফেডারেলিজম’ নিয়ে আমাদের যা কিছু ভাবনা তা প্রকাশ করার আগে কখনও বাবাসাহেব আম্বেদকরের লেখাগুলি অবশ্যই পড়া উচিৎ, বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথাগুলি স্মরণ করা উচিৎ। বাবাসাহেব আম্বেদকরজি একদিন সংবিধান সভায় বলেছিলেন, তিনি যা বলেছিলেন তা আমি কোট করছি। বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছিলেন, “এই ফেডারেশন একটি ইউনিয়ন কারণ এটি অটুট। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য দেশ এবং জনগণকে বিভিন্ন রাজ্যে বিভাজিত করা যেতে পারে। প্রশাসনের সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে বিভাজিত করা যায়। কিন্তু দেশ অভিন্ন রূপে এক ও অদ্বিতীয়।”

তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ‘নেশন’-এর কল্পনাকেও স্পষ্ট করেছেন আর এই কথাগুলি বাবাসাহেব আম্বেদকর সংবিধান সভায় বলেছিলেন। আমি মনে করি, ‘ফেডারেলিজম’কে বোঝার জন্য বাবাসাহেব আম্বেদকরের এত গভীর ভাবনাচিন্তা থাকার পর আমার মনে হয় এক্ষেত্রে পথ প্রদর্শনের জন্য আর কারোর পরামর্শের প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিশেষ করে আমাদের দেশে তেমনটা হয়। ‘ফেডারেলিজম’ নিয়ে এত বড় বড় ভাষণ দেওয়া হয়, এত উপদেশ দেওয়া হয়, আমরা কি সেই দিনগুলি ভুলে গিয়েছি যখন এয়ারপোর্টে সামান্য কথা কাটাকাটির পরই মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হত? অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী টি আঞ্জাইয়ার সঙ্গে কি হয়েছিল? এই সভাকক্ষেই অনেক নেতা একথা খুব ভালোভাবেই জানেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যখন এয়ারপোর্টে এসেছিলেন তখন তাঁর আতিথেয়তার ব্যবস্থাপনা পছন্দ হয়নি বলে তাঁকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই নির্দেশ অন্ধ্রপ্রদেশের কোটি কোটি মানুষের ভাবনাকে আহত করেছিল। তেমনই কর্ণাটকের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন্দ্র পাটিলজিকেও অপমানিত করে তাঁর পদ থেকে সরানো হয়েছিল। তাও কখন? যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমাদের ভাবনাচিন্তা কংগ্রেসের মতো সংকীর্ণ নয়। আমরা সংকীর্ণ ভাবনা নিয়ে কাজ করা মানুষ নই। আমাদের ভাবনায় জাতীয় লক্ষ্যগুলি রয়েছে, জাতীয় টার্গেট রয়েছে আর রয়েছে ‘রিজিওনাল অ্যাসপিরেশন্স’। এগুলির মাঝে আমরা কোনরকম ‘কনফ্লিক্ট’ দেখি না। আমরা মনে করি, ‘রিজিওনাল অ্যাসিপেরশন’কে যতটাই সম্মানের সঙ্গে পালন করতে হবে, সমস্যাগুলির সমাধান করতে হবে আর ভারতের উন্নয়নও তখনই হবে যখন দেশ উন্নয়নকে মাথায় রেখে ‘রিজিওনাল অ্যাসপিরেশন্স’কে অ্যাড্রেস করবে। এটা সকলের দায়িত্ব। যখন আমরা একথা বলি যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তখন এর শর্তই হল যখন রাজ্যগুলি উন্নতি করবে, তখনই দেশ উন্নতি করবে। রাজ্যগুলি করবে না আর দেশের উন্নতির জন্য আমরা ভাবব, এটা হতেই পারে না। আর সেজন্য প্রথম শর্ত হল রাজ্য উন্নতি করবে, তবেই দেশের উন্নতি সম্ভব আর যখন দেশের উন্নতি হয়, দেশ সমৃদ্ধ হয়, দেশের মধ্যে সমৃদ্ধি আসে, তখন সেই সমৃদ্ধি রাজ্যগুলিতেও ‘পারকোলেট’ হয় আর এজন্য দেশ সমৃদ্ধ হয়। এই ভাবনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাই। আমি একথা জানি, আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। আমার ওপর কী কী অত্যাচার হয়েছে, দিল্লির সরকার কী কী করেছে, ইতিহাস তার সাক্ষী। কী করেনি তারা আমার সঙ্গে! গুজরাটের সঙ্গে কী কী হয়নি! কিন্তু সেই কালখণ্ডেও প্রত্যেক দিন আপনারা আমার রেকর্ড দেখে নেবেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সব সময়েই একটি কথা বলতাম যে গুজরাটের মন্ত্র কী? দেশের উন্নয়নের জন্য গুজরাটের উন্নয়ন। সব সময়েই দিল্লিতে কোন দলের সরকার রয়েছে সেটা ভেবে চলতাম না। দেশের উন্নয়নের জন্য, গুজরাটের উন্নয়ন এবং তার ‘ফেডারেলিজম’-এর জন্য আমাদের সকলের দায়িত্ব এটাই হয় যে আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য নিজের রাজ্যের উন্নয়ন করব যাতে উভয় মিলে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি আর এটাই প্রকৃত পথ, আমাদের সকলেরই এই পথেই চলা উচিৎ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে যাঁরা অনেক দশক ধরে সরকার চালানোর সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা রাজ্যগুলির সঙ্গে অনেক দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। সবাই এখানে বসে আছেন, ভুক্তভোগী মানুষেরাও বসে আছেন। কিভাবে দমন-পীড়ন চালানো হত? প্রায় ১০০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন ঘোষণা করে নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলিকে উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। আপনারা কোন মুখে কথা বলছেন? আর সেজন্য গণতন্ত্রও আর আপনাদের সম্মান করেনি। তিনি কোন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন যিনি তাঁর শাসনকালে ৫০টি সরকারকে উপড়ে ফেলেছিলেন? বিভিন্ন রাজ্যের ৫০টি সরকারকে উপড়ে ফেলা হয়েছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

এই সমস্ত বিষয়ের জবাব প্রত্যেক ভারতবাসী জানে আর এর সাজা আজ আমাদের ভুগতে হচ্ছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড যিনি রয়েছেন, তাঁর নীতি তিন ধরনের কাজ নিয়ে চলে। এক, আগে ‘ডিসক্রেডিট’ করো, তারপর ‘ডিস্টেবিলাইজ’ করো আর তারপর ‘ডিসমিস’ করো। এই পদ্ধতিতে অবিশ্বাস সৃষ্টি করো, অস্থির করো তার তারপর বরখাস্ত করে দাও। এই তিন নীতি নিয়ে তিনি চলেন।

আপনি একটু বলুন মাননীয় সভাপতিজি,

আমি আজ বলতে চাই যে ফারুক আবদুল্লাহজির সরকারকে কারা অস্থির করেছিল? চৌধুরী দেবীলালজির সরকারকে কে অস্থির করেছিল? চৌধুরী চরণ সিং-জির সরকারকে কে অস্থির করেছিল? পাঞ্জাবে সর্দার বাদল সিং-এর সরকারকে কে বরখাস্ত করেছিল? মহারাষ্ট্রে বালাসাহেব ঠাকরেকে বদনাম করার জন্য কে ‘ডার্টি ট্রিক্স’ প্রয়োগ করেছিল? কর্ণাটক রামকৃষ্ণ হেগড়ে আর এস.আর.বোম্মাই-এর সরকারকে কে ফেলেছিল? পঞ্চাশের দশকে কেরালায় নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারকে কে ফেলেছিল? আজ থেকে ৫০ বছর আগে তামিলনাড়ুতে জরুরি অবস্থার সময় করুণানিধির সরকারকে কে ফেলেছিল? ১৯৮০-তে এম.জি.আর.-এর সরকারকে কে বরখাস্ত করেছিল? অন্ধ্রপ্রদেশে কে এন.টি.রামা রাওয়ের সরকারকে অস্থির করার চেষ্টা করেছিল, আর সেটাও এমন সময়ে যখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। এটা কোন দল যারা মুলায়ম সিং যাদবজিকে এজন্য বিব্রত করেছিল যে কেন্দ্রে নানা বিষয় নিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে সহমত ছিলেন না। কংগ্রেস নিজের নেতাদেরকেও ছাড়েনি। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের সঙ্গে তারা কি ব্যবহার করেছে? যে কংগ্রেস তাদেরকে কেন্দ্রে ক্ষমতায় বসার সুযোগ দিয়েছিল, সেই কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে তাঁরা কী করেছেন? তাঁরা অত্যন্ত লজ্জাজনক পদ্ধতিতে অন্ধ্রপ্রদেশে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। বিধানসভায় মাইক বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন। লঙ্কার গুঁড়ো স্প্রে করিয়েছেন। কোনরকম আলোচনা হতে দেননি। এটা কি ঠিক পদ্ধতি ছিল? সেখানে কি গণতন্ত্র ছিল? অটলজির সরকার তিনটি নতুন রাজ্য তৈরি করেছিল। আমরা রাজ্য তৈরি হওয়াকে কখনও বিরোধিতা করিনি। কিন্তু পদ্ধতি কি ছিল? অটলজি তিনটি রাজ্য তৈরি করেছিলেন। ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরাখণ্ড। কিন্তু তা নিয়ে তখন কোনও ঝড় ওঠেনি। শান্তিতে সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে। সবাই মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অন্ধ্র, তেলেঙ্গানার ক্ষেত্রেও এটা হতে পারত। আমরা তেলেঙ্গানার বিরোধী ছিলাম না। সবাই মিলেমিশে করা যেতে পারত। কিন্তু আপনাদের অহঙ্কার, ক্ষমতার নেশা গোটা দেশের মধ্যে এই কটুতা সৃষ্টি করেছে আর আজও তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রের মধ্যে সেই কটুতার বীজ রয়েছে যার ফলে তেলেঙ্গানারও ক্ষতি হচ্ছে, অন্ধ্রেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে আপনাদের কোনও রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে না। এখন আপনারা আসছেন আমাদের বোঝাতে?

মাননীয় সভাপতিজি,

আমরা ‘কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজম’ বা সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পাশাপাশি একটি নতুন পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে চলেছি আর আমরা ‘কো-অপারেটিভ কম্পিটেটিভ ফেডারেলিজম’ বা সহযোগিতামূলক প্রতিযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা বলেছি। আমাদের রাজ্যগুলির মধ্যে উন্নয়ন নিয়ে প্রতিযোগিতা হবে, স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হবে। আমরা প্রত্যেকেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। সে রাজ্যের ক্ষমতায় যে দলই থাকুক না কেন, এই প্রতিযোগিতাকে উৎসাহ দেওয়ার কাজ আমরা করব। এটা আমাদের কাজ আর আমরা করছি।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি আজ একটি উদাহরণ দিতে চাই। জিএসটি কাউন্সিলের রচনা ভারতে শক্তিশালী যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য একটি উন্নত কাঠামোর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ। রাজস্ব সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি জিএসটি কাউন্সিলে গ্রহণ করা হয় আর রাজ্যগুলির অর্থমন্ত্রী আর দেশের অর্থমন্ত্রী সবাই একই টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে কেউ বড় নয়, কেউ ছোট নয়, কেউ সামনে নয়, কেউ পেছনে নয়। সবাই একসঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য দেশবাসী গর্ব করতে পারেন। এই সভাকক্ষ সবচাইতে বেশি গর্ব করতে পারে যে জিএসটি কাউন্সিলে সমস্ত সিদ্ধান্ত, কয়েকশ’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আর এই সমস্ত সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নেওয়া হয়েছে। সকল রাজ্যের অর্থমন্ত্রী আর দেশের অর্থমন্ত্রী মিলেমিশে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর থেকে বড় যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার উদাহরণ আর কী হতে পারে? কে এই ব্যবস্থা নিয়ে গর্ব করবে না? কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের মধ্যে অনেকেই এ নিয়েও গর্ব করে না।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি ভারতে উন্নত যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার আরও একটি উদাহরণ দিতে চাই। আমরা দেখেছি, আমাদের দেশে সামাজিক ন্যায় অত্যন্ত অনিবার্য, না হলে দেশ এগোতে পারবে না। একইরকমভাবে আঞ্চলিক ন্যায়ও ততটাই প্রয়োজনীয়। যদি কোনও অঞ্চল উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে, তাহলে দেশ এগিয়ে যেতে পারবে না আর সেজন্য আমরা একটা প্রকল্প রচনা করেছি। ‘অ্যাসপিরেশনাল ডিস্ট্রিক্টস’ বা উচ্চাকাঙ্ক্ষী রাজ্য। দেশে ১০০টি এমন জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন প্যারামিটারের ভিত্তিতে বেছে নেওয়া হয়েছে, রাজ্যগুলির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে বাছা হয়েছে। এই ১০০-র বাইরে আরও এমন কিছু জেলা রয়েছে যেগুলি ‘অ্যাভারেজ ডিস্ট্রিক্ট’। সেগুলি যত তাড়াতাড়ি উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত জেলাগুলির সমকক্ষ হয়ে উঠবে, আমাদের দেশের অনুন্নয়নের বোঝা ততটাই লাঘব হবে আর সেই কাজটিই আমরা করেছি। আজ অত্যন্ত সন্তুষ্টির সঙ্গে বলব, অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলব, এই প্রকল্পের উদ্যোগ যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু একটি রাজ্য ছাড়া সকল রাজ্য তাকে গ্রহণ করেছে। ১০০টিরও বেশি জেলার পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার আর জেলা প্রশাসন আজ মিলেমিশে কাজ করছে আর সেখানে সমস্ত দলের শাসনাধীন সরকার রয়েছে। এমনটা নয় যে শুধুই ভারতীয় জনতা পার্টির ক্ষমতাসীন সরকারের জেলাগুলি বেছে নেওয়া হয়েছে। আমরা দল নিরপেক্ষভাবে, সবাই মিলেমিশে এত ভালো পরিণাম আনতে পেরেছি যে অত্যন্ত কম সময়ে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি অনেক প্যারামিটারে নিজের রাজ্যের গড় উন্নয়নের থেকেও কিছুটা এগিয়ে গেছে আর এই ফলকে আমি মনে করি অনেক ভালো পরিণাম। আমি বলতে চাই, কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলায় জন ধন অ্যাকাউন্ট আগের তুলনায় চারগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ, সকলের প্রচেষ্টায় ওই রাজ্যের গরীব মানুষের চারগুণ বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছে, প্রত্যেক পরিবারে শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সকল রাজ্যের উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলাগুলি খুব ভালো কাজ করছে। আমি মনে করি এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ আর এর মাধ্যমেই দেশের উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার শক্তি, উপযোগিতার আরও ভালো নিদর্শন সৃষ্টি করবে।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমি আজ আরও একটি উদাহরণ দিতে চাই কিভাবে রাজ্যগুলিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয়। কোন পদ্ধতিতে, কিভাবে নীতি পরিবর্তন করে এই সাহায্য করা সম্ভব হয় তার একটি উদাহরণ দিতে চাই। একটা সময় ছিল যখন আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ শুধু কিছু মানুষের সিন্দুক ভরার কাজে লাগত। এই দুর্দশা আমরা দেখেছি। এ নিয়ে অনেক আলাপ, আলোচনা, সমালোচনাও হয়েছে। এখন সেই সম্পদগুলি দেশের রাজকোষকে সমৃদ্ধ করছে। আমরা কয়লা এবং খনিক্ষেত্রে সংস্কার এনেছি। ২০০০ সালে আমরা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় খনিজ সম্পদের নিলাম করেছি। আমরা সংস্কার প্রক্রিয়া চালু রেখেছি। যেভাবে বৈধ লাইসেন্স ছাড়া চার্জ ট্রান্সফারের ৫০ শতাংশ প্রভিশনের খোলা বাজারে শুধু বিক্রি, ‘আর্লি অপারেশনালাইজেশন’-এর ৫০ শতাংশ ছাড়, বিগত এক বছরে খনিক্ষেত্র থেকে রাজস্ব প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। নিলামের মাধ্যমে যত রাজস্ব এসেছে তার অংশ রাজ্য সরকারগুলিও পেয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যে নেওয়া গেছে সেটাই সবথেকে বড় কথা। এই সংস্কার প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় রাজ্যগুলির অনেক উপকার হয়েছে আর রাজ্যগুলির উপকার হলেই দেশের উপকার হওয়া সুনিশ্চিত। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এতবড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অতুলনীয়। ওড়িশা, এই সংস্কার চালু করার ক্ষেত্রে অগ্রণী রাজ্য হিসেবে এগিয়ে এসেছে। আমি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীজিকে অভিনন্দন জানাই যে তাঁর সরকার সমস্ত সংস্কারের ক্ষেত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন।

মাননীয় সভাপতিজি,

এখানে এই বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে যে আমরা ইতিহাস বদলানোর চেষ্টা করছি। বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে। বাইরেও বলা হয়। অনেকে এ নিয়ে লেখালেখিও করছেন। আমি দেখছি যে কংগ্রেস এক প্রকার ‘আর্বান নকশাল’দের জালে ফেঁসে গেছে। তাদের সম্পূর্ণ ভাবনার পদ্ধতিকে ‘আর্বান নকশাল’রা দখল করে নিয়েছে আর সেজন্য তাদের সমস্ত ভাবনা ও কাজকর্ম ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয়। অত্যন্ত গভীরভাবে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ‘আর্বান নকশাল’রা অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে কংগ্রেসের এই দুর্দশার সুযোগ নিয়ে তাদের মনকে সম্পূর্ণরূপে দখল করে নিয়েছে। তাদের ভাবনাচিন্তার প্রবাহকে দখল করে নিয়েছে আর সেজন্যই তাঁরা বারবার একথা বলছেন যে সরকার ইতিহাস বদলে দিচ্ছে।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমরা শুধুই কিছু মানুষের স্মৃতিশক্তি শুধরে দিতে চাই, সামান্য স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিতে চাই। আমরা কোনও ইতিহাস বদলাচ্ছি না। কিছু মানুষের জন্য ইতিহাস হাতেগোনা কিছু বছর আগে শুরু হয়। আমরা শুধু তার থেকে একটু আগের কথা স্মরণ করছি, আর কিছু করছি না। যদি তাঁদের ৫০ বছরের ইতিহাসে মজা আসে, তাহলে আমরা সেটাকে আরও ১০০ বছর পেছনে নিয়ে যাচ্ছি। কেউ যদি ১০০ বছরের ইতিহাস থেকে মজা পান, আমরা তাঁদেরকে ২০০ বছরের পুরনো ইতিহাসে নিয়ে যাচ্ছি। কেউ যদি ২০০ বছরে মজা পান, তাঁদেরকে আমরা ৩০০ বছরে নিয়ে যাচ্ছি। আর যদি ৩০০-৩৫০ বছর পেছনে নিয়ে যাই তাহলে ছত্রপতি শিবাজীর নাম আসবেই আসবে। আমরা তো তাঁদের স্মৃতিশক্তিকে সতেজ করে তুলছি। আমরা ইতিহাস বদলাচ্ছি না। কিছু মানুষের কাছে ইতিহাস শুধুই একটি পরিবারের ইতিহাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাঁদের এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে আমরা কি করব? আমাদের দেশের ইতিহাস তো অনেক বড়। এটা অনেক বড় বিষয় যাতে অনেক উত্থান-পতন ছিল আর আমরা ইতিহাসের সুদীর্ঘ কালখণ্ডগুলিকে মনে করানোর চেষ্টা করছি কারণ গৌরবময় ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেওয়া এ দেশের ভবিষ্যতের জন্য সঠিক নয়। এই কাজকে আমরা নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করি আর এই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামী ২৫ বছর ধরে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার একটি বিশ্বাস সৃষ্টি করতে চাই। আমি মনে করি, এই অমৃতকালখণ্ড এখন এই চর্চা ও তার থেকে উদ্ভূত বিশ্বাস নিয়েই এগিয়ে যাবে। এই অমৃতকালখণ্ডে আমাদের মেয়েরা, আমাদের যুব সম্প্রদায়, আমাদের কৃষক, আমাদের গ্রাম, আমাদের দলিত, আমাদের আদিবাসী, আমাদের পীড়িত, আমাদের পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির অবদান থাকতে হবে, প্রত্যেকের অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। কখনও কখনও আমরা ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে তাকাব। আমাদের জনজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলির মানুষেরা ১৮৫৭-র স্বাধীনতা সংগ্রামে যে অবদান রেখেছিলেন তা আমরা কখনও পড়ার সুযোগ পাইনি। এত মহান সোনালী পৃষ্ঠাগুলি আমরা কিভাবে ভুলতে পারি? আর আমরা এই বিষয়গুলি স্মরণ করানোর চেষ্টা করছি। আমাদের চেষ্টা দেশকে আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তোলা, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

মাননীয় সভাপতিজি,

মহিলাদের ক্ষমতায়নকেও আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। ভারতের মতো দেশে ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা আমাদের বিকাশ যাত্রায় ‘সবকা প্রয়াস’-এর বিষয়। সেই ‘সবকা প্রয়াস’-এ সবচাইতে বড় অংশীদার হলেন আমাদের মা ও বোনেরা। দেশের ৫০ শতাংশ জনসংখ্যা আর সেজন্য ভারতের সমাজের বৈশিষ্ট্য হল পরম্পরা ধরে সংস্কারসাধন ও পরিবর্তন। এটাকে বলা হয় জীবন্ত সমাজ। প্রত্যেক যুগে এমন মহাপুরুষেরা জন্ম নিয়েছেন, যাঁরা আমাদের সমাজকে সমস্ত কুসংস্কার ও বিচ্চুতি থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছেন আর আজ আমরা জানি মহিলাদের উন্নতি নিয়ে চিন্তাভাবনা ভারতে নতুন নয়। বহুকাল ধরে ভারতে এই লিঙ্গ সাম্যের কথা বলা হয়েছে, তাঁদের ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই চিন্তাভাবনা অনুসরণ করেই আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বাড়িয়ে মহিলাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে পরিবারের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করেছি আর সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে চলেছি। আমাদের ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের দেশে লিঙ্গানুপাতে যে বৈষম্য ছিল, যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা অনেকটাই শুধরাতে পেরেছি। আজ যে প্রতিবেদনগুলি আসছে, সেখানে আজ আমাদের দেশের কিছু অঞ্চলে পুরুষদের তুলনায় মা ও বোনেদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, অত্যন্ত গর্বের বিষয়। যে খারাপ দিন আমরা দেখেছি তা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি আর সেজন্য আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আজ এনসিসি-তে আমাদের মেয়েরা অনেক বেশি যোগদান করছে। সেনা, বায়ুসেনা ও নৌ-সেনায় আমাদের মেয়েরা যোগদান করছেন এবং সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছেন। আমরা তিন তালাকের কুপ্রথা সমাপ্ত করেছি। আমি যেখানেই যাই, মা-বোনেরা আমাকে আশীর্বাদ জানান কারণ, তিন তালাক প্রথা যখন সমাপ্ত হয়েছে, তখন শুধু মেয়েরা সুবিচার পেয়েছেন তা নয়, সেই পিতাও সুবিচার পেয়েছেন, সেই ভাইও সুবিচার পেয়েছেন যাঁরা তাঁদের কন্যা কিংবা বোনকে তিন তালাকের কুপ্রথার ফলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হতেন। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত গোটা সমাজের কল্যাণের জন্য ছিল। এটা শুধুই মহিলাদের জন্য ছিল না, পুরুষদের বিরুদ্ধে ছিল না। এই সিদ্ধান্ত মুসলমান পুরুষদের জন্য ততটাই উপকারী সিদ্ধান্ত কারণ তাঁরাও তো কোনও মেয়ের বাবা, কোনও ভাই। সেজন্য এটা তাঁদের উপকারে লেগেছে, তাঁদের পরিবারকেও সুরক্ষিত করেছে। ফলস্বরূপ, মানুষ বলতে পারছেন আর বলতে পারছেন বলেই সবাই একসঙ্গে গর্ব অনুভব করছেন, আনন্দ করছেন। কাশ্মীর থেকে আমরা যেভাবে সংবিধানের ৩৭০ ধারাকে বাতিল করেছি, সেভাবেই সে রাজ্যের মা-বোনেদের ক্ষমতায়িত করেছি। তাঁরা যে অধিকারগুলি পেতেন না, আমরা তাঁদের সেই অধিকার পেতে সাহায্য করেছি আর সেই অধিকারের কারণেই আজ তাঁদের শক্তি বেড়েছে। আজ তাঁদের বিয়ের বয়সেও সাম্য আসছে। আজকের যুগে স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে এই বিষয়ে কোনও ব্যবধান থাকা উচিৎ নয়। ছেলে-মেয়ে যদি সমান হয় তাহলে সবক্ষেত্রে সমান হওয়া উচিৎ আর সেজন্য আমরা ছেলে-মেয়ের বিয়ের বয়স সমান হওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তাব এনেছি আর তা নিয়ে এগিয়ে চলেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ কিছুক্ষণ পরেই সংসদে এই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের মা ও বোনেদের কল্যাণের কাজ করব।

মাননীয় সভাপতিজি,

এ বছর গোয়ার ৬০ বছর পূর্তি হল। ৬০ বছর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কালখণ্ড। গোয়া মুক্তির ৬০ বছরে আজ সেই চিত্রগুলির কথা তুলে ধরতে চাই। আমাদের কংগ্রেসের বন্ধুরা যেখানেই থাকুন, তাঁরা অবশ্যই শুনছেন। গোয়ার জনগণ আমার এই কথাগুলি অবশ্যই মন দিয়ে শুনবেন। যদি সর্দার সাহেব … সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলজি যেভাবে হায়দরাবাদের জন্য রণনীতি বানিয়েছিলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেভাবে সর্দার প্যাটেল জুনাগড়ের জন্য রণনীতি তৈরি করেছিলেন, পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তেমনই সর্দার সাহেব একটি প্রেরণা নিয়ে গোয়ার জন্যও রণনীতি তৈরি করেছিলেন। গোয়া ভারত স্বাধীন হওয়ার ১৫ বছর পর দাসত্ব শৃঙ্খল মুক্ত হয়েছে আর সেই সময়ের ৬০ বছর পর খবরের কাগজ সেই সময়কার মিডিয়া রিপোর্টে বলেছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভাবছিলেন, এই ঘটনায় তাঁর আন্তর্জাতিক ইমেজ কেমন হবে। এটাই তখন পণ্ডিত নেহরুর সবচাইতে বড় চিন্তার বিষয় ছিল। যদি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমার ইমেজ বদলে যায় তাহলে কি হবে? আর সেজন্য তিনি ভাবছিলেন যে গোয়ার ঔপনিবেশিক সরকারকে আক্রমণ করলে তাঁর নিজের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে শান্তিপ্রিয় নেতার ইমেজ রয়েছে, সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। গোয়ার যা হওয়ার হোক, গোয়াবাসীকে যত কষ্ট সহ্য করতে হয় করুক, আমার ইমেজ যেন নষ্ট না হয়। সেজন্য যখন গোয়াতে সত্যাগ্রহীদের ওপর গুলি চলছিল, বিদেশি শাসকরা গুলি চালাচ্ছিল, ভারতের একটি অংশের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদেরই ভাই-বোনেদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল, তখন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে আমি সেনা দেব না, আমি সেনা পাঠাব না। সত্যাগ্রহীদের সাহায্য করতে তিনি অস্বীকার করেছিলেন। এই অন্যায় কংগ্রেস গোয়ার সঙ্গে করেছিল আর গোয়াকে ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে দাসত্ব শৃঙ্খলে বাঁধা থাকতে হয়েছিল। গোয়ার অনেক বীরপুত্রদের আত্মবলিদান দিতে হয়েছিল। লাঠি এবং গুলির সামনে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছিল। এই পরিস্থিত তৈরি হয়েছিল। নেহরুজি ১৯৫৫ সালের ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে তাঁর প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, আমি একটু কোট করতে চাই। খুব ভালো হত যদি কংগ্রেসের বন্ধুরা এখন এখানে থাকতেন। আমার মুখে নেহরুজির নাম শুনে তাঁদের দিনটা খুব ভালো যেত আর সেজন্য, তাঁদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য আমি বারবার নেহরুজির নাম নিতে থাকব। নেহরুজি বলেছিলেন, লালকেল্লার প্রাকার থেকে বলেছিলেন আর আমি তাঁকেই উদ্ধৃত করছি, কেউ ভুল বুঝবেন না, ভাষাটা লক্ষ্য করুন। কেউ ধোকা খাবেন না যে আমরা সেখানে কোনও সৈনিক তৎপরতা দেখাব, কোনও সেনাবাহিনী গোয়ার চারপাশে নেই। গোয়াবাসী এটাই চান। কেউ চিৎকার চেঁচামেচি করে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করুক যাতে আমরা সৈনিক পাঠাতে বাধ্য হয়ে যাই এটা গোয়াবাসী চাননি। আমরা সেনাদল পাঠাব না, আমরা শান্তির পথে এ সমস্যার সমাধানের পক্ষে। এটা সমস্ত পক্ষই বুঝে নিন। এরকম ১৫ আগস্ট তারিখে গোয়াবাসীর জন্য বক্তব্যে তাঁদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরদ্ধে, তাঁদের সমস্ত প্রত্যাশার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের নেতারা বয়ান দিয়েছিলেন। পণ্ডিত নেহরুজি সবার আগে বলেছিলেন, যাঁরা সেখানে যাচ্ছেন, লোধিয়াজি সহ সবাই সেখানে সত্যাগ্রহ করছিলেন, আন্দোলন করছিলেন। দেশের সত্যাগ্রহীরা যাচ্ছিলেন, আমাদের জগন্নাথ রাজ যোশী, কর্ণাটকে তাঁর নেতৃত্বে সত্যাগ্রহ চলছিল। পণ্ডিত নেহরুজি কি বলেছিলেন? যাঁরা সেখানে যাচ্ছেন, তাঁদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু কেমন মজা দেখুন। দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, সেই দেশবাসীর জন্য এই ভাষায় কতটা অহঙ্কার ছিল। তিনি বলেছিলেন, যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের যাওয়াকে শুভেচ্ছা জানাই কিন্তু এটাও মনে রাখবেন যে আপনাদেরকে সত্যাগ্রহী বলা হবে আর যে সত্যাগ্রহের নীতি, সিদ্ধান্ত আর পথকেও মনে রাখবেন। সত্যাগ্রহীদের পেছনে সেনাবাহিনী থাকে না আর সেনাবাহিনীর আহ্বানও থাকে না। অসহায় ছেড়ে দেওয়া আমাদের দেশের নাগরিকদের এটা গোয়ার সঙ্গে হয়েছিল। গোয়ার জনগণ কংগ্রেসের এই মনোভাবকে কখনও ভুলতে পারবেন না।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমাদের এখানে ‘ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন’ বা ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও বড় বড় ভাষণ দেওয়া হয়েছে আর প্রায়ই আমাদেরকে এ বিষয়ে নানা রকম জ্ঞান দেওয়া হয়। আমি আজ একটি ঘটনা আপনার সামনে তুলে ধরতে চাই আর এই ঘটনাটিও গোয়ার এক সুপুত্রকে নিয়ে। গোয়ার এক সম্মানিত সুপুত্র, গোয়ার মাটির সন্তানের কথা। অভিব্যক্তির সম্পর্ক কী হয়, কেমন হয়, এটা আমি উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরতে চাই। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র নিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের ইতিহাস আজ আমি উন্মুক্ত করছি। কী বলব, লতা মঙ্গেশকরজির মহাপ্রয়াণে আজ গোটা দেশ অত্যন্ত শোকগ্রস্থ। দেশবাসী অত্যন্ত শোকবিহ্বল। কিন্তু লতা মঙ্গেশকরজির পরিবার গোয়ার আদি বাসিন্দা। তাঁর পরিবারের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছিল এটাও দেশের জানা থাকা উচিৎ। লতা মঙ্গেশকরজির ছোট ভাই হলেন পণ্ডিত হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরজি। গোয়াবাসী তাঁর জন্য গর্ব করে কারণ তিনি গোয়ার সুপুত্র। তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে চাকরি করতেন। তাঁকে অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। কেন? তিনি কী পাপ করেছেন? তিনি যে অন্যায়টি করেছিলেন তা হল, তিনি দামোদর বীর সাভারকরের একটি দেশভক্তির কবিতা অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে পাঠ করেছিলেন। এটা হৃদয়নাথজি নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকার আপনারা চাইলে শুনতে পারেন। তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যখন তিনি দামোদর বীর সাভারকরজির সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি আপনার লেখা গানটি গাইতে চাই, তখন সাভারকরজি তাঁকে বলেছিলেন, “তুমি কি জেলে যেতে চাও? আমার কবিতা গেয়ে তুমি কি জেলে যেতে চাও?” কিন্তু হৃদয়নাথজির কবিতাটি এত ভালো লাগে যে তিনি সেই দেশভক্তির কবিতাটিতে সুর দেন আর অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে গেয়ে শোনান। আটদিনের মধ্যেই তাঁকে অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয়। এটাই তো আপনাদের ‘ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন’ বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নমুনা। এই স্বাধীনতার মিথ্যা, আপনাদের এই মিথ্যাচার আপনারাই দেশের সামনে তুলে ধরেছেন। কংগ্রেসী সরকারগুলি তাদের শাসনকালে কিভাবে অন্যায় অত্যাচার করেছে এটা শুধুই গোয়ার সুপুত্র হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরজির সঙ্গে হয়নি, এই তালিকা অনেক দীর্ঘ। মজরু সুলতানপুরীজিকে এক বছর কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। তাঁর দোষ কী ছিল? তিনি পণ্ডিত নেহরুর সমালোচনা করেছিলেন। একইভাবে, নেহরুজির দুর্ব্যবহারের সমালোচনা করার জন্য অধ্যাপক ধর্মপালজিকেও কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বিখ্যাত গায়ক ও নায়ক কিশোর কুমারজি জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরাজির সামনে মাথানত করেননি বলে আর জরুরি অবস্থার পক্ষে বক্তব্য রাখেননি বলে তাঁকেও সেই সময় বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সবাই জানি যে একটি বিশেষ পরিবারের বিরুদ্ধে যদি কেউ সামান্যতম আওয়াজ তুলতেন, সামান্যতম চোখ তুলে কথা বলতেন, তাহলে কী হত! সীতারাম কেশরীজির কথা আমরা সবাই জানি। তাঁর সঙ্গে কী হয়েছিল সেটাও আমরা জানি।

মাননীয় সভাপতিজি,

সভাকক্ষের সমস্ত সদস্যদের প্রতি আমার একটি প্রার্থনা আছে। আমার প্রার্থনা হল আপনারা সবাই ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ওপর আস্থা রাখুন, বিশ্বাস করুন, ভরসা করুন। ১৩০ কোটি দেশবাসীর সামর্থ্যের ওপর আমাদের ভরসা করতে হবে। আমাদের বড় লক্ষ্য নিয়ে এই সামর্থ্যের ভিত্তিতে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কৃতসঙ্কল্প হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

মাননীয় সভাপতিজি,

আমাদের ‘ওরা-আমরা’, ‘ওদের-আমাদের’ – এই পরম্পরাকে ত্যাগ করতে হবে আর একমত হয়ে, এক মনোভাব নিয়ে, এক লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে চলতে হবে। এটাই দেশের জন্য সময়ের চাহিদা। এই সোনালী সময়ে গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে বড় আশা নিয়ে, অনেক গর্বের সঙ্গে তাকিয়ে আছে। এই অমৃতকালে এই ধরনের সুযোগকে আমাদের হারালে চলবে না। দেশবাসীর কল্যাণের জন্য এর থেকে বড় কোনও সুযোগ আর আসবে না। এই সুযোগকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। অমৃতকালের ২৫ বছরের যাত্রা আমাদের কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে। আমাদের দেশের জন্য, আমাদের পরম্পরার জন্য আমরা যেন গর্ববোধ করি আর সভাপতিজি, আমরা অত্যন্ত বিশ্বাস নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে চলব আর আমাদের শাস্ত্রেও বলা হয়েছে – “সম গচ্ছধ্বং সম বদধ্বম সং ওহ মনাংসি জানতাম।” অর্থাৎ, আমরা একসঙ্গে চলব, একসঙ্গে আলোচনা করব, সবাই মিলেমিশে কাজ করব – এই আহ্বান রেখে আমি রাষ্ট্রপতিজির অভিভাষণকে অনুমোদন করছি। তাঁকে অনেক ধন্যবাদও জানাচ্ছি আর সমস্ত মাননীয় সদস্যদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যাঁরা এই বিতর্কে অংশগ্রহণ করেছেন, নিজেদের মতামত রেখেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, সমালোচনা করেছেন – সকলকে ধন্যবাদ জানাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1797915) Visitor Counter : 965