প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ইন্ডিয়া গেটে নেতাজীর হলোগ্রাম মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 23 JAN 2022 10:36PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২

 

এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমার মন্ত্রিসভার সঙ্গী শ্রী অমিত শাহজি, শ্রী হরদীপ পুরীজি, আমার মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, আইএনএ-এর সমস্ত ট্রাস্টি, এনডিএমএ-এর সকল সদস্যগণ, সমস্ত জুরি মেম্বার, এনডিআরএফ, কোস্ট গার্ডস এবং আইএমডি-এর ডায়রেক্টর জেনারেলগণ, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পুরস্কারের সকল বিজেতা বন্ধু, অন্যান্য সকল গণমান্য ব্যক্তিগণ, ভাই ও বোনেরা!

ভারতমাতার বীর সুপুত্র নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে সমগ্র দেশের পক্ষ থেকে আমি আজ তাঁকে কোটি কোটি প্রণাম জানাই। এই দিনটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক। এই কালখণ্ড ঐতিহাসিক, আর এই স্থান, যেখানে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি, সেটিও ঐতিহাসিক। ভারতের গণতন্ত্রের প্রতীক আমাদের সংসদ ভবনের পাশেই, আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড এবং লোকনিষ্ঠার প্রতীক অনেক ভবন চারপাশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সমর্পিত ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’ও কাছেই রয়েছে। এই সবকিছুর আলোয় আজ আমরা ইন্ডিয়া গেটে অমৃত মহোৎসব পালন করছি আর নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে সমাদরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, যিনি আমাদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম ভারতের বিশ্বাস জাগিয়েছিলেন, যিনি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে, বড় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, বড় সাহস নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সামনে বলেছিলেন – “আমি স্বাধীনতার ভিক্ষা নেব না, আমি একে অর্জন করব!” যিনি ভারতের মাটিতে প্রথম স্বাধীন সরকার স্থাপন করেছিলেন, আমাদের সেই নেতাজীর অনিন্দ্যসুন্দর মূর্তি আজ ডিজিটাল স্বরূপে ইন্ডিয়া গেটের কাছেই স্থাপিত হচ্ছে। অতি শীঘ্রই এই হলোগ্রাম মূর্তির জায়গায় গ্র্যানাইট পাথরের বিশাল মূর্তিও স্থাপিত হবে। এই মূর্তি স্বাধীনতার মহানায়ককে কৃতজ্ঞ রাষ্ট্রের শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে স্থাপন করা হবে। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর এই মূর্তি আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলিকে, আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের নাগরিকদের মনে জাতীয় কর্তব্যবোধ জাগ্রত করবে। আগামী প্রজন্মগুলিকে এবং বর্তমান প্রজন্মকেও নিরন্তর প্রেরণা যোগাতে থাকবে।

বন্ধুগণ,

গত বছর থেকে দেশ নেতাজীর জন্মজয়ন্তীকে ‘পরাক্রম দিবস’ রূপে পালন করা শুরু করেছে। আজ ‘পরাক্রম দিবস’ উপলক্ষে ‘সুভাষ চন্দ্র বসু বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা পুরস্কার’ও প্রদান করা হয়েছে। নেতাজীর জীবন থেকে প্রেরণা নিয়েই এই পুরস্কারগুলি প্রদানের ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত তিন বছরের সমস্ত বিজেতাকে, সমস্ত বিজয়ী ব্যক্তি ও সংস্থাকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

আমাদের দেশে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে যে ধরনের মনোভাব ছিল তা নিয়ে একটি হিন্দি প্রবাদ অত্যন্ত সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। সেটি হল – ‘যখন পিপাসা পায়, তখনই কুঁয়ো কাটা হয়।’ আর আমি যে কাশী অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিত্ব করি, সেখানকারও একটি প্রবাদ রয়েছে। কাশীর মানুষ বলেন, - ‘ভোজ খরি কোহড়া রোপে’ অর্থাৎ, যখন খাবার সময় এসে গেছে, তখন কোহড়ে সব্জির চাষ করা। অর্থাৎ, যখন বিপর্যয় ঘাড়ের ওপর এসে যেত, তখন তা থেকে বাঁচার উপায় খোঁজা হত। শুধু তাই নয়, আরও একটি অবাক করার মতো ব্যবস্থা ছিল যেটি সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। আমাদের দেশে অনেক বছর ধরে বিপর্যয় মোকাবিলাকে কৃষি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করে রাখা হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল বন্যা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি – এরকম সব বিপর্যয় এলে তা থেকে কৃষি ও কৃষকদের বাঁচানোর দায়িত্ব কৃষি মন্ত্রকের। দেশে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এমনভাবেই চলে আসছিল। কিন্তু ২০০১ সালে গুজরাটে ভূমিকম্প আসার পর যা কিছু হয়েছে তা দেশকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করেছে। এই ঘটনা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার মানে বদলে দিয়েছে। আমরা সমস্ত বিভাগ এবং মন্ত্রককে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে লাগিয়ে দিয়েছি। সেই সময়ের যে অভিজ্ঞতা তা থেকে শিক্ষা নিয়েই ২০০৩ সালে গুজরাট স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট রচিত হয়েছিল। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য গুজরাট এই ধরনের আইন প্রণয়নকারী দেশের প্রথম রাজ্য ছিল। তারপর কেন্দ্রীয় সরকার গুজরাটের আইন থেকে শিক্ষা নিয়ে ২০০৫ সালে গোটা দেশের জন্য এমনই ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট রচনা করেছে। এটি আইন হিসেবে পাস হওয়ার পরেই ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি গঠনের পথ খুলেছে। এই আইন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও দেশকে অনেক সাহায্য করেছে।

বন্ধুগণ,

ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করে তুলতে ২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের সরকার জাতীয় স্তরে চতুর্মুখী কাজ করেছে। আমরা ‘রিলিফ’ বা ত্রাণ, ‘রেসকিউ’ বা উদ্ধার, ‘রিহ্যাবিলিটেশন’ বা পুনর্বাসনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি, ‘রিফর্ম’ বা সংস্কারেও জোর দিয়েছি। আমরা ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স বা এনডিআরএফ-কে শক্তিশালী করেছি, এর আধুনিকীকরণ করেছি এবং সারা দেশে এর কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করেছি। স্পেস টেকনলজি বা মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে শুরু করে পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে বেস্ট পসিবল প্র্যাক্টিসেসগুলিকে আমরা আপন করে নিয়েছি। আমাদের এনডিআরএফ-এর বন্ধুদের পাশাপাশি সমস্ত রাজ্যের এসডিআরএফ-এর বন্ধুগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলির জওয়ানরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে এক একজনের জীবন বাঁচান। সেজন্য আজকের এই মুহূর্তটি এই ধরনের জীবন বাজি রেখে অপরের জীবন রক্ষাকারী মানুষদের, তা সে এনডিআরএফ-এর হোক কিংবা এসডিআরএফ-এর অথবা নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান হোন, তাঁদের সকলের প্রতি আজ আমাদের কৃতজ্ঞতা জানানোর সময়, তাঁদের স্যালুট জানানোর সময়।

বন্ধুগণ,

আমরা যদি নিজেদের ব্যবস্থাগুলি এরকমভাবে শক্তিশালী করে যেতে থাকি, তাহলে বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে। আমি এই করোনাকালের ১-২ বছরের উদাহরণ যদি তুলে ধরি, এই মহামারীর মধ্যেও আমাদের দেশের সামনে অনেক নতুন বিপর্যয় এসে দাঁড়িয়েছে। একদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই তো আমরা লড়ছিলামই, পাশাপাশি অনেক জায়গায় ভূমিকম্প এসেছে, অনেক জায়গায় বন্যা এসেছে। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ পূর্ব সমুদ্রতটগুলিতে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় এসেছে, গোয়া মহারাষ্ট্র, গুজরাট সহ পশ্চিম সমুদ্রতটগুলিতে ঘূর্ণিঝড় এসেছে। আগে এই ধরনের এক একটি ঘূর্ণিঝড়ে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু হত। কিন্তু এবার তেমনটি হয়নি। দেশ প্রত্যেক বিপর্যয়ের জবাব একটি নতুন শক্তি দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে এই বিপর্যয়গুলির সময়ে আমরা অধিকাংশ মানুষের জীবন বাঁচাতে সফল হয়েছি। আজ বড় বড় আন্তর্জাতিক এজেন্সি ভারতের এই সামর্থ্য, ভারতে আসা এই পরিবর্তনের প্রশংসা করছে। আজ দেশে এমন একটি ‘এন্ড-টু-এন্ড সাইক্লোন রেসপন্স সিস্টেম’ রয়েছে যাতে কেন্দ্র, রাজ্য, স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকল এজেন্সি একসঙ্গে মিলে কাজ করতে পারে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় – এইসব বিপর্যয়ের জন্য ‘ওয়ার্নিং সিস্টেম’কেও সংস্কার করা হয়েছে। ‘ডিজাস্টার রিস্ক অ্যানালিসিস’-এর জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যগুলির সাহায্যে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের জন্য ‘ডিজাস্টার রিস্ক ম্যাপস’ বা বিপর্যয় ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে সমস্ত রাজ্য এবং সংশ্লিষ্ট সকলে লাভবান হচ্ছে। সবচাইতে বড় কথা হল, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আজ দেশে গণ-অংশীদারিত্ব এবং জন-বিশ্বাসের বিষয় হয়ে উঠেছে। আমাকে বলা হয়েছে যে ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বা এনডিএমএ-এর ‘আপদা মিত্র’-এর মতো প্রকল্পে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য যুবক-যুবতীরা এগিয়ে আসছেন। ‘আপদা মিত্র’ রূপে তাঁরা বিপর্যয় মোকাবিলার দায়িত্বগুলি পালন করছেন। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে গণ-অংশীদারিত্ব ক্রমে বাড়ছে। কোথাও কোনও বিপর্যয় এলে যাঁরা এর দ্বারা আক্রান্ত নন, তাঁরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিপর্যয় মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। অর্থাৎ, বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এখন নিছকই একটি সরকারি কাজ হয়ে থেকে যায়নি, এটিও এখন ‘সবকা প্রয়াস’-এর একটা মডেল হয়ে উঠেছে।

আর বন্ধুগণ,

যখন আমি ‘সবকা প্রয়াস’-এর কথা বলি, তখন এতে প্রত্যেক ক্ষেত্রে যত প্রচেষ্টা হচ্ছে, সবক’টিকে একটি হলিস্টিক অ্যাপ্রোচে সামিল করার কথা বলি। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছি। আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে এবং আর্কিটেকচার-সংশ্লিষ্ট কোর্সগুলির পাঠ্যক্রমে ‘ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’কেও যুক্ত করেছি। ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা প্রতিরোধী পরিকাঠামো কিভাবে রচিত হবে, সেগুলিকে এই পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। সরকার, ‘ড্যাম ফেইলিওর’ বা কোনও বাঁধ ভেঙে যাওয়া বা বাঁধ সংক্রান্ত কোনও বিপর্যয়ের কথা ভেবে ‘ড্যাম সেফটি আইন’ রচনা করেছে।

বন্ধুগণ,

বিশ্বে যখনই কোনও বিপর্যয় আসে, তখন সেখানে জনগণের দুঃখজনক মৃত্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়, এতজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এত লোককে সরানো হয়েছে, আর্থিক লোকসানও অনেক হয়েছে, তারও চর্চা করা হয়। কিন্তু বিপর্যয়ে যে পরিকাঠামোর লোকসান হয় তা কল্পনারও অতীত। সেজন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে আজকের সময়ে পরিকাঠামো নির্মাণ এমন হোক, যা বিপর্যয়ের সময়েও প্রতিরোধী হবে এবং তার মোকাবিলা করতে পারবে। ভারত আজ এই লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে কাজ করছে। যে ক্ষেত্রগুলিতে ভূমিকম্প, বন্যা বা ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ বেশি থাকে, সেখানে পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে নির্মীয়মান বাড়িগুলি তৈরির ক্ষেত্রেও এসব বিপদের কথা লক্ষ্য রাখা হয়। উত্তরাখণ্ডে যে ‘চারধাম মহা পরিযোজনা’র কাজ চলছে, সেখানেও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে যে নতুন নতুন এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হচ্ছে, সেখানেও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত খুঁটিনাটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেসওয়েগুলিতে এমনকি বিমান অবতরণও সম্ভব হবে এরকম ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটাই নতুন ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি। এটাই নতুন ভারতের ভাবনাচিন্তার প্রকৃতি।

বন্ধুগণ,

‘ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’-এর এই ভাবনার সঙ্গেই ভারত বিশ্বকেও একটি বড় সংস্থার ভাবনা দিয়েছে, উপহার দিয়েছে। এই সংস্থাটি হল – ‘কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ বা সিডিআরআই। ভারতের এই উদ্যোগে ব্রিটেন আমাদের প্রধান সঙ্গী হয়েছে আর আজ বিশ্বের ৩৫টি দেশ ইতিমধ্যেই এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে, সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে আমরা ‘জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ’ বা যৌথ সামরিক মহড়া অনেক দেখেছি। এটা একটি পুরনো পরম্পরা। এ নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। কিন্তু ভারত প্রথমবার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও যৌথ মহড়ার পরম্পরা শুরু করেছে। অনেক কঠিন সময়ে আমাদের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত এজেন্সিগুলি তাদের পরিষেবা প্রদান করেছে, মানবতার প্রতি নিজেদের কর্তব্য পালন করেছে। যখন নেপালে ভয়ানক ভূমিকম্প এসেছিল, এত বড় প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প, তখন ভারত একটি মিত্র দেশ রূপে সেই বিপর্যয়ের মোকাবিলায় সামান্য দেরিও করেনি। আমাদের এনডিআরএফ-এর জওয়ানরা সেখানে দ্রুত পৌঁছে গেছেন। বিপর্যয় ব্যবস্থাপনায় ভারতের অভিজ্ঞতা শুধুই আমাদের জন্য নয়, গোটা মানবতার জন্য। আপনাদের সকলের হয়তো মনে আছে, ২০১৭ সালে ভারত ‘সাউথ এশিয়া জিও-স্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করেছিল। আবহাওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে এই জিও-স্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট দ্বারা দক্ষিণ এশিয়ার মিত্র দেশগুলি উপকৃত হচ্ছে।

বন্ধুগণ,

পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা যদি সাহসের সঙ্গে সেগুলির মোকাবিলা করি তাহলে বিপর্যয়কেও সুযোগে রূপান্তরিত করতে পারি। এই বার্তা নেতাজী আমাদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় দিয়েছিলেন। নেতাজী বলতেন, “কখনও স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখা ছেড়ো না, কখনও বিশ্বাস হারিয়ো না, বিশ্বের এমন কোনও শক্তি নেই যারা ভারতের এই ভাবনাকে নস্যাৎ করতে পারে।” আজ আমাদের সামনে স্বাধীন ভারতের স্বপ্নগুলি পূর্ণ করার লক্ষ্য রয়েছে, আমাদের সামনে স্বাধীনতার শতবর্ষ পালনের আগে নতুন ভারত নির্মাণের লক্ষ্য রয়েছে। নেতাজীর দেশকে নিয়ে যে বিশ্বাস ছিল, যে ভাবনা নেতাজীর মনে উঠে এসেছিল, তাঁর এই মনোভাবের কারণেই আমি বলতে পারি যে, বিশ্বে আজ এমন কোনও শক্তি নেই যারা ভারতকে এই লক্ষ্যে পৌঁছতে আটকাতে পারে। আমাদের সাফল্য, আমাদের সঙ্কল্পশক্তিই এর প্রমাণ। কিন্তু এই যাত্রাপথ এখন অনেক দীর্ঘ। আমাদের এখন আরও অনেক শিখর অতিক্রম করতে হবে। সেজন্য আমাদের দেশের ইতিহাস, দেশের হাজার হাজার বছরের যাত্রাপথকে এই আকারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তপস্যা, ত্যাগ এবং আত্মবলিদানের বোধ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

ভাই ও বোনেরা,

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সঙ্কল্প হল, ভারত তার নিজস্ব পরিচয় এবং প্রেরণাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করবে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাধীনতার পর দেশের সংস্কৃতি ও শিষ্টাচারগুলির পাশাপাশি অনেক মহান ব্যক্তিদের অবদানকেও মেটানোর কাজ করা হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর তপস্যার অবদান ছিল কিন্তু, তাঁদের ইতিহাসকে সীমিত রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আজ স্বাধীনতার সাত দশক পর দেশ সেই ভুলগুলি পরাক্রমের সঙ্গে শুধরাচ্ছে, ঠিক করছে। আপনারা দেখুন, বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মৃতি বিজড়িত ‘পঞ্চতীর্থ’কে দেশ তার গরিমা অনুসারে বিকশিত করছে। স্ট্যাচু অফ ইউনিটি আজ গোটা বিশ্বে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের যশগাথার তীর্থ হয়ে উঠেছে। ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীকে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ রূপে পালনের সূত্রপাতও আমরা সবাই করেছি। আদিবাসী সমাজের অবদান এবং ইতিহাসকে সামনে তুলে ধরার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে আদিবাসী সংগ্রহালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। আজ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ঐতিহ্যকেও দেশ সম্পূর্ণ গৌরবের সঙ্গে সংরক্ষণ করছে। নেতাজী দ্বারা আন্দামানে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আন্দামানের একটি দ্বীপের নাম নেতাজীর নামে রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসেই আন্দামানে একটি বিশেষ সঙ্কল্প স্মারক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্মৃতির উদ্দেশে সমর্পণ করা হয়েছে। এই স্মারকটি নেতাজীর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই জওয়ানদের প্রতিও একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি যাঁরা স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন। এটা আমার সৌভাগ্য যে গত বছর আজকের দিনেই কলকাতায় নেতাজীর পৈত্রিক বাড়িতে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। যেভাবে তিনি কলকাতা থেকে মহনিষ্ক্রমণে বেরিয়েছিলেন, যে কামরায় বসে তিনি পড়াশোনা করতেন, তাঁর বাড়ির সিঁড়িগুলি, তাঁর বাড়ির দেওয়ালগুলি, সেগুলিকে দর্শন করা, সেই অভিজ্ঞতা, সেই অনুভূতি শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

বন্ধুগণ,

আমি ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর দিনটি কখনও ভুলতে পারব না, যেদিন আজাদ হিন্দ সরকারের ৭৫ বর্ষ পূর্ণ হয়েছিল। সেদিন লালকেল্লায় হওয়া বিশেষ সমারোহে আমি আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ মাথায় দিয়ে দেশের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। সেই মুহূর্ত অদ্ভূত, সেই মুহূর্ত অবিস্মরণীয়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে লালকেল্লাতেই আজাদ হিন্দ ফৌজ-সংশ্লিষ্ট একটি স্মারক গড়ে তোলার কাজও করা হচ্ছে। ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারির সাধারণতন্ত্র দিবসের প্যারেডে আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রাক্তন সৈনিকদের দেখে আমার মন কতটা আনন্দিত হয়েছিল, প্রফুল্লিত হয়েছিল, তা আমার জীবনে একটি অমূল্য স্মৃতি হয়ে রয়েছে। এটাকে আমি নিজের সৌভাগ্য বলে মনে করি যে আমাদের সরকারেরই উদ্যোগে নেতাজীর সঙ্গে জড়িত ফাইলগুলিকে সার্বজনিক করার সুযোগ হয়েছে।

বন্ধুগণ,

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু যখনই কিছু করার কথা ভাবতেন, তখন এমন কোনও শক্তি ছিল না যে তাঁকে আটকাতে পারত। আমাদের নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর এই ‘ক্যান ডু, উইল ডু’ স্পিরিট থেকে প্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি এটা জানতেন। সেজন্যই একথা প্রায়ই বলতেন। ভারতে জাতীয়তাবাদ এমন সৃষ্টিশীল শক্তির সঞ্চার করেছে যা শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে জনগণের মনে সুপ্ত অবস্থায় ছিল। আমাদের এই জাতীয়তাবাদকেও জীবিত রাখতে হবে, আমাদের সৃষ্টিও করতে হবে আর জাতীয় চেতনাকেও জাগ্রত রাখতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলে ভারতকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর স্বপ্নের ভারতে পরিণত করার অভিযানে সফল হব। আপনাদের সবাইকে আরও একবার ‘পরাক্রম দিবস’-এর অনেক অনেক শুভকামনা জানাই, আর আমি আজ এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-এর সদস্যদেরকেও বিশেষভাবে শুভেচ্ছা জানাই কারণ, অনেক ক্ষুদ্র কালখণ্ডে তাঁরা নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ কোথাও বিপর্যয় হলে অথবা ঘূর্ণিঝড়ের মতো কোনও বিপর্যয়ের সম্ভাবনার খবর শুনলে, আমরা যখন এনডিআরএফ-এর মতো জওয়ানদের ইউনিফর্মে দেখি, সাধারণ মানুষের মনে একটি ভরসা জাগে যে এখনই সাহায্য পৌঁছে যাবে, এখনই বিপদ দূর হবে। এত কম সময়ে কোনও সংস্থা এবং তার ইউনিফর্মের পরিচয় গড়ে ওঠা কম কথা নয়! যেমন আমাদের দেশে নিরাপত্তার কোনও সমস্যা হলে সেখানে সেনা জওয়ানরা পৌঁছে গেলে সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা বোধ জাগে, তাঁরা খুশি হন। ভাবেন, ভাই এঁরা সব এসে গেছেন, আর চিন্তা নেই! তেমনই আজ এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ-এর জওয়ানরা নিজেদের পরাক্রমের মাধ্যমে জনমানসে এই আস্থা অর্জন করে দেখিয়েছেন। আমি ‘পরাক্রম দিবস’ উপলক্ষে নেতাজীকে স্মরণ করে, আমাদের এনডিআরএফ-এর জওয়ানদের, এসডিআরএফ-এর জওয়ানদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। তাঁরা নিজেদের কাজকে যেভাবে করুণা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত করে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন, সেজন্য তাঁদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। আমি জানি, এই বিপর্যয় ব্যবস্থাপনার কাজে, এই ক্ষেত্রে কর্মরত আরও অনেকে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি আজ এ ধরনের সফল মানুষদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই - যাঁরা অন্যের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজেদের জীবন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন। এরকম সবাইকে সাদর প্রণাম জানিয়ে আমি আপনাদের সবাইকে আর একবার ‘পরাক্রম দিবস’-এর অনেক অনেক শুভকামনা জানিয়ে আমার বাণীকে বিরাম দিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1792316) Visitor Counter : 189