প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রীর ইতালী সফরের বিষয়ে বিদেশ সচিবের সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের প্রতিলিপি

Posted On: 30 OCT 2021 2:27PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ অক্টোবর,  ২০২১

 

সরকারি মুখপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের সকলকে জানাই শুভ সন্ধ্যা। একটু বেশী রাতে আপনারা সকলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। ভারতে আমাদের যে সমস্ত বন্ধু লাইভ ভিডিও স্ক্রিনে যোগ দিয়েছেন, তাঁদেরও স্বাগত জানাই, নমস্কার। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এখন রোমে౼ আজ তাঁর সফরের প্রথম দিন। আপনাদেরকে আজ কি কি হ’ল সে বিষয়ে জানাবো এবং আমাদের কি কি পরিকল্পনা আছে, সে সম্পর্কেও বলবো। আমরা আনন্দিত যে, ভারতের বিদেশ সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা আমাদের মধ্যে উপস্থিত। স্যর, আর দেরী না করে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি কিছু বলার জন্য।

বিদেশ সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা : নমস্কার, শুভসন্ধ্যা। সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে আবারও দেখা হওয়াতে খুব ভালো লাগছে। আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রোমে এসেছে পৌঁছেছেন। তাঁর এবারের সফরের মূল উদ্দেশ্য ষোড়শ জি-২০ শিখর সম্মেলনে যোগ দেওয়া। কিন্তু, এই অবকাশে তিনি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। রোমে পৌঁছনোর পর প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মিঃ চার্লস মিশেল এবং ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি মিস উরশুলা ফন ড্যার লায়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আপনারা সবাই জানেন, আগামীকাল বিশ্ব অর্থনীতি এবং মহামারী থেকে স্বাস্থ্য সমস্যা উদ্ধার, স্থিতিশীল উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জি-২০ শিখর সম্মেলনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেবেন। জি-২০ গোষ্ঠীতে ভারতের শেরপা,  আমাদের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী ইতিমধ্যেই আপনাদের বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। আমি তাই প্রধানমন্ত্রী আজ কি কি করেছেন, সে সম্পর্কে বলবো। ইউরোপীয় কমিশন ও কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এবং কিছুক্ষণ আগে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘ্রির সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। আপনারা যদি আলোচনা বিষয়গুলি লক্ষ্য করেন, তা হলে বুঝতে পারবেন, জি-২০ শিখর সম্মেলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রসঙ্গ আলোচনায় স্থান পেয়েছে। স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান, কোভিড থেকে মুক্তি, আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের মতো বিষয়গুলি ছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তান ও ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিষয়ে বৈঠকে স্থান পেয়েছে।

এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রসঙ্গে বলতে হয়, আমার মনে হয় নেতৃবৃন্দ এ বছরের মে মাসে ইইউ এবং ২৭টি দেশের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের যে বৈঠক হয়েছিল, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। পঞ্চদশ ভারত ইইউ শীর্ষ সম্মেলন ২০২০-র জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত হয়। ইইউ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আজকের বৈঠকে ভারত ও ইইউ – এর মধ্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভারত ইইউ শীর্ষ বৈঠকে যে রোডম্যাপ – ২০২৫ গৃহীত হয়েছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়। যেমন আপনাদের বললাম, তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারী এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় নানা বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তন, আফগানিস্তান ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়ে ভারতের নীতির কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। আমাদের দেশে যে পরিমাণ টিকাকরণ হয়েছে এবং যতসংখ্যক মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, সেই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য ইইউ নেতৃবৃন্দ ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী ভারতকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী পিয়াজ্জা গান্ধীতে মহাত্মা গান্ধীর আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন। সেই সময়ে সেখানে ভারতীয় সম্প্রদায়ের বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। যেমনটা আমরা বলছিলাম, প্রধানমন্ত্রী আলাদা-আলাদাভাবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং ভারতের বন্ধুভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্যে সনাতন ধর্ম সংঘ, কৃষ্ণের বিষয়ে সচেতনতা প্রসারে ইতালীয় ধর্মসভা বা ইসকন, শিখ সম্প্রদায় প্রতিনিধি এবং বিশ্ব যুদ্ধ চলাকালীন ইতালীতে যুদ্ধরত ভারতীয় সৈনিকদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি স্মারকগুলি, যাঁরা রক্ষণা-বেক্ষণ করেন – তাঁদের সকলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করেন। তিনি ভারততত্ত্ববিদ ও সংস্কৃত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভারত ও ইতালীর মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।

ইতালীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পালাজো চিগিতে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকটি ছিল তাঁদের মধ্যে মুখোমুখী হওয়া প্রথম আলোচনা। ইতালীর প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ২৭ অগাস্ট আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন।  আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘি আফগানিস্তান নিয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই সময়ে তাঁদের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমার মনে হয়, ২০২০-র নভেম্বরে ভার্চ্যুয়ালী ভারত ও ইতালীর মধ্যে যে শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে, সেখানে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলির বাস্তবায়ন নিয়েও তাঁরা কথা বলেছেন। আর, সহযোগিতার বিষয় তো আলোচনায় অবশ্যই স্থান পেয়েছে।

পুনর্নবীকরণযোগ্য ও পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানীর ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে ভারত ও ইতালী একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। দুটি দেশ জ্বালানী ব্যবহারেরর পরিবর্তন নিয়ে কৌশলগত অংশীদারিত্বের কথা ঘোষণা করে। বৃহদাকারে গ্রীন করিডর প্রকল্প, স্মার্ট গ্রিডস্‌, বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের ব্যবস্থাপনা, গ্যাস পরিবহণ, সুসংহত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে সম্পদ সৃষ্টি, পরিবেশ-বান্ধব হাইড্রোজেন ব্যবহার এবং জৈব জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন বিষয়ে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানী ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানী – দুটি ক্ষেত্রেই ইতালীর অভিজ্ঞতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্বিমুখী বিনিয়োগ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। দুই প্রধানমন্ত্রীই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

আপনারা বুঝতেই পারছেন, রোম সফরের প্রথম দিন ছিল ঘটনাবহুল। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী মাননীয় পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে ভ্যাটিক্যান সিটিতে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর, তিনি জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেবেন। আমরা পরে সেসব তথ্য আপনাদের জানবো।

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : অনেক ধন্যবাদ স্যর। আমরা কয়েকটি প্রশ্ন নেবো। তবে বন্ধুরা জানিয়ে রাখি, আমাদের সময় কম। কারণ, বিদেশ সচিবকে আরেকটি অনুষ্ঠানে যেতে হবে। আমরা প্রশ্নোত্তর পর্ব সিদ্ধান্তকে দিয়েই শুরু করি।

সিদ্ধান্ত :  নমস্কার, আমি উইওন থেকে সিদ্ধান্ত বলছি। ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আজ সকালে যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানে টিকাকরণের শংসাপত্রের পারস্পরিক স্বীকৃতির বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আমার প্রশ্ন হ’ল – ভারতে তৈরি টিকা, ভারতীয় টিকাকরণের শংসাপত্রের স্বীকৃতির বিষয়টি নিয়ে কি কথা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ভারত যে বিষয়গুলি উত্থাপন করেছে, যদি সম্ভব হয়, তা হলে সেটা কি আমাদের জানাবেন।

মণীষ চাঁদ : স্যর, ইন্ডিয়া রাইটস্‌ নেটওয়ার্কের মণীষ চাঁদ বলছি। শেষ শিখর সম্মেলনে আফ্রিকার মতো অঞ্চলে অর্থাৎ তৃতীয় কোনও দেশে ভারত ও ইতালীর একযোগে কাজ করার একটি প্রস্তাব উঠেছিল। এখন অবশ্য, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সেই বিষয়টি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং তৃতীয় কোনও দেশে সহযোগিতার প্রশ্নে এ ধরনের কোনও আলোচনা কি হয়েছে?

প্রথম বক্তা :  ব্লুমবার্গ নিউজ থেকে বলছি। মাননীয় মন্ত্রী আপনি কি আমাদের একটু বলবেন, কোভিড-১৯ টিকার পারস্পরিক স্বীকৃতি বিষয়ে জি-২০ গোষ্ঠীকে ভারত ঠিক কি প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে এইসব টিকা নিয়ে সারা পৃথিবী সফর  করা যায়। আগামীকাল পোপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কি কি কথা হবে, তা কি আপনারা বলবেন? মানে আমি জানতে চাইছি, কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা রয়েছে। ভারতে খ্রীস্টানদের অবস্থা ও অন্যান্য বিষয় ...

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : আমাদের সময় খুবই কম।

প্রথম বক্তা : সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনের আগে আর্থিক তহবিল ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রশ্নে আপনারা কি আশা করেন? বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বের বিষয়, আমরা দেখেছি, জলবায়ু সংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তি ও আর্থিক দিক দিয়ে সহযোগিতা করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ধন্যবাদ।

শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা : আমরা টিকাকরণের শংসাপত্র নিয়ে প্রথমে আলোচনা করি। কারণ, সিদ্ধান্ত ও ব্লুমবার্গ দু’জনেরই একই প্রশ্ন ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় টিকাকরণের শংসাপত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রুত স্বীকৃতি, স্বাভাবিক অবস্থায় ভ্রমণ করা এবং কোভিড মহামারী থেকে বেরিয়ে আসা দেশগুলি সফরের বিষয়টি অবশ্যই আলোচিত হয়েছে। টিকার পারস্পরিক স্বীকৃতি নিয়েও কথা হয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে যাতে সহজেই ভ্রমণ করা যায়, তার জন্য দ্বৈত ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউরোপীয় কাউন্সিল এ বিষয়ে নিশ্চয়ই নীতি-নির্দেশিকা প্রকাশ করবে। বেশ কয়েকটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে। আমরা এই আলোচনায় বেশ খানিকটা এগিয়েছি। এখন প্রশ্ন হ’ল জি-২০’কে নিয়ে। জি-২০’র সঙ্গে টিকাকরণের শংসাপত্রের পারস্পরিক স্বীকৃতির প্রস্তাব নিয়েও কথা হয়েছে। তবে, আলোচনার চূড়ান্ত ফল এখনও জানা যায়নি। আমার মনে হয়, বাধাহীনভাবে আন্তর্জাতিক সফরে বেশিরভাগ দেশই খুশি হবে। তবে, এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনও আসেনি। কিন্তু, বেশিরভাগ দেশই মনে করে, সহজে যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমাদের একযোগে কাজ করা উচিৎ। এই বিষয়ে আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সকলে বিবেচনা করছেন।

মণীষের প্রশ্ন ছিল, তৃতীয় দেশ নিয়ে। আপনি আসিয়ান এবং আফ্রিকার প্রসঙ্গ তুলেছেন। আমি মনে করি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়ে ইইউ একটি কৌশলগত বিষয়কে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট উরশুলা ফান ড্যেয়ার লায়েন এবং প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল সার্বিকভাবে ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বিশেষত, ভারতের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান। আমার মনে হয়, নেতৃবৃন্দ মনে করেছেন, এ নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা চাইলে ভারতে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাতে পারেন। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করতে পারই। হয়তো, ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠিত হবে। আপনারা অনেকেই জানেন, ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিষয়ে ফ্রান্স, জার্মানী, নেদারল্যান্ডের মতো ইইউ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি বিশেষ কৌশল সম্বলিত নীতি গঠন করেছে। ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতার জন্য সমমনোভাবাপন্ন দেশগুলি যে নীরবতা বজায় রেখেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন, যাতে এ প্রসঙ্গে কোনও সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যায়।

মাননীয় পোপের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আলাদাভাবে জানাবেন। তিনি পোপের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর, প্রতিনিধি পর্যায়ের একটি বৈঠক হবে। ভ্যাটিক্যান নিয়ে পৃথক কোনও এজেন্ডা তৈরি করা হয়নি। আমি মনে করি, পোপের সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে কথা হয় না এবং আমাদের এই বিষয়টিকে সম্মান দেওয়া উচিৎ। আমার মনে হয়, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়, যেগুলি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন – কোভিড-১৯ এর ফলে উদ্ভূত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, কিভাবে আমরা এই সমস্যার মোকাবিলা একযোগে করবো, কিভাবে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখা যায় – এসব নিয়ে কথাবার্তার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিওপি-তে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয় এবং আর্থিক সাহায্যের যে প্রসঙ্গ আপনারা জানতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে বলি, আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী এর আগেই এ সম্পর্কে কিছু কথা বলেছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলির এক্ষেত্রে কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্যারিসে যে লক্ষ্যমাত্রা ধার্য  করা হয়েছে, সেগুলি অর্জন করতে হবে। আমার মনে হয়, আমরা লক্ষ্য করেছি, ইতিমধ্যেই অভীষ্ট লক্ষ্যের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এখন লক্ষ্যমাত্রা আরও প্রসারিত। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিজেদের উদাহরণের কথা উল্লেখ করেছেন। প্যারিসে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত  হয়েছিল, ভারত সেগুলি অর্জনের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করে আমরা আরও এগিয়ে যাবো। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে আর্থিক সহায়তা, পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলিতে আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করছি। এক্ষেত্রে শুধু দায়বদ্ধতা নয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করতে হবে, যাতে তারা  লক্ষ্য পূরণে সফল হয়। আমার মনে হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের জন্য এই মুহূর্তে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। ভারত এই সমস্যা সমাধানে যেসব উদ্যোগগুলি নিয়েছে, তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। এই আলোচনা এখন কোন পথে যায়, আমাদের সেদিকে নজর রাখতে হবে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেছেন, শুধুমাত্র লক্ষ্য পূরণ করলেই চলবে না, কারণ প্রকৃতপক্ষে তার অনেক বেশি পূরণ করছে না।  উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, জীবনশৈলীর পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ভারত প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে চলে। মাথাপিছু হিসাবে বিশ্বে সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ ভারতে হয়। কিন্তু, একই সঙ্গে আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক স্তরে স্থিতিশীল জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এর ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যার সমাধান হবে। তাই, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে, তা পূরণে প্রাক্‌-শর্ত হ’ল জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটানো।

আমার মনে হয়, সন্ত্রাসবাদ সমস্যাটি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে, আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনার সময়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং আফগানিস্তান এই দুটি বিষয়েই গুরুত্ব পেয়েছে। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তান প্রসঙ্গে বলেছেন, সেখানের পরিস্থিতি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সুপ্রশাসন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ ব্যবস্থা না গ্রহণ করার মতো কারণেই আজ সেখানে এই অবস্থা। আফগানিস্তান পরিস্থিতির জন্য যে বিপদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, আমার মনে হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেদিকে গুরুত্ব সহকারে নজর রাখছে। আফগানিস্তান সমস্যার মূল বিষয়গুলি খুঁজতে হবে। মৌলবাদ,  জঙ্গীবাদ এবং এর ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলি গুরুত্ব সহকারে বিচার করতে হবে। তাই, ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বন্ধুদের  ও ইতালীকে এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে হবে এবং কোন দিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন – তা নির্ধারণ করতে হবে। আফগানিস্তানে মানবিক পরিস্থিতির উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেদেশের জনসাধারণ যাতে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘি মানবিক সাহায্যের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা সেদেশ শাসন করছে এবং সেদেশের অধিবাসী – তাদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করতে হবে। যাঁদের মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন,  তাঁদের মানবিক সাহায্য দিতে হবে। শ্রী মোদী বলেছেন, আফগান জনসাধারণকে সাহায্যের প্রয়োজন এবং তাঁদের কাছে যাতে সরাসরি মানবিক সাহায্য পৌঁছয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমি একথাই বলতে চাই, ইতালীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নিরিখে দু’দেশের মধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে উষ্ণতা এবং উৎসাহ নজরে আসছে, প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘি, সেটিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চলেছেন। মিঃ দ্রাঘি, মিঃ মিশেল এবং মিস ফন ড্যার লায়েন’কে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এখন কোভিডের কারণে যাতায়াত খুব কম হচ্ছে। আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ তাঁরা গ্রহণ করেছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আরও গতি আসবে।

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : স্যর, অনেক ধন্যবাদ। আমরা মাত্র আর কয়েকটা প্রশ্নের জবাব   দিতে পারবো। প্রণয়।

প্রণয় উপাধ্যায় : আমি এবিপি নিউজের প্রণয় উপাধ্যায়। বিশ্ব জুড়ে সরবরাহ-শৃঙ্খলের বৈচিত্র্যের বিষয়টি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছে। ইইউ-এর সঙ্গে বৈঠকে ইইউ – এর প্রেসিডেন্ট এবং ইতালীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। আমার প্রশ্ন ভারত এই প্রসঙ্গে কিভাবে অগ্রসর হতে চাইছে।

দ্বিতীয় বক্তা : ভারত ইতালীর মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে আপনারা একটু জানাবেন, বিশেষত, অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে আমি জানতে চাইছি?

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : ধন্যবাদ।

বিদেশ সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা : আমি প্রথমেই খুব ছোট্ট করে প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিই। আমার মনে হয়, আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি যে, দুই প্রধানমন্ত্রীই মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইতালীর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতে বেশ কিছু ইতালীয় সংস্থা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও অটো মোবাইল ক্ষেত্রে ভারতীয় ও ইতালীয় সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। বৈদ্যুতিন যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা নিয়েও কথা হয়েছে। ইতালীর বেশ কিছু সংস্থা খুব ভালো দু-চাকা ও তিন চাকার বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরি করেছে। আমার মনে হয়, এইসব সংস্থাগুলির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আছে। দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে ভারত ও ইতালীর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

প্রণয়জী, আপনার সরবরাহ-শৃঙ্খল প্রশ্নের জবাবে জানাই, একটি গতিশীল শৃঙ্খলের যথেষ্ট প্রয়োজন আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এবং ইতালীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, সম্পূর্ণ তথ্য এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে, নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, উভয় পক্ষই চান, এ বিষয়ে আরও বেশি করে কাজ হোক। দু’পক্ষ একসঙ্গে বসে কাজ করুক, যাতে ভবিষ্যতে সুরক্ষিতভাবে একটি সরবরাহ-শৃঙ্খল তৈরি করা যায়।

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : ইতালীর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বলি, আমরা গতিশীল সরবরাহ-শৃঙ্খলের বিষয়ে একযোগে কাজ করবো।

বিদেশ সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা : বিশেষ করে ভারত – প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রেক্ষিতে।

সরকারি মুখ্যপাত্র শ্রী অরিন্দম বাগচী : আমরা এই বিশেষ সাংবাদিক বৈঠকটি এখানেই শেষ করছি। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য। স্যর, আপনাকেও ধন্যবাদ এখানে আসার জন্য। বন্ধুরা, আশা করি, আরও অনেক তথ্য আমরা আপনাদেরকে ভবিষ্যতেও দেবো। আপনারা আমাদের সোস্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট চ্যানেলে যোগাযোগ রাখবেন। অনেক ধন্যবাদ, নমস্কার।

বিদেশ সচিব শ্রী হর্ষবর্ধন শৃংলা : ধন্যবাদ।

 

CG/CB/SB



(Release ID: 1768229) Visitor Counter : 259