প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

গুজরাটে বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধন এবং জাতির উদ্দেশে সমর্পণ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 16 JUL 2021 7:39PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬ জুলাই, ২০২১

 

নমস্কার!

আমার মন্ত্রিসভার সঙ্গী এবং গান্ধীনগরের সাংসদ শ্রী অমিত শাহজি, রেল মন্ত্রী শ্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবজি, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিজয় রুপাণীজি, উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিনভাই, কেন্দ্রীয় রেল রাজ্যমন্ত্রী শ্রীমতী দর্শনা জরদোশজি, গুজরাট সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীগণ, সংসদে আমার সঙ্গী এবং গুজরাট প্রদেশ ভারতীয় জনতা পার্টির অধ্যক্ষ শ্রী সি আর পাটিলজি, অন্য সাংসদগণ, বিধায়কগণ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সবাইকে নমস্কার।

আজকের দিনটি একবিংশ শতাব্দীর ভারতের আকাঙ্ক্ষার, যুব ভারতের ভাবনা এবং সম্ভাবনার অনেক বড় প্রতীক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে শুরু করে উন্নত নাগরিক পরিকল্পনা কিংবা যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আধুনিক পরিকাঠামো, নতুন ভারতের নতুন পরিচয়ে আজ আরেকটি পর্যায় যুক্ত হচ্ছে। আমি এখানে দিল্লি থেকে সমস্ত প্রকল্পের উদ্বোধন তো করেছি, কিন্তু এগুলিকে চোখের সামনে দেখার উৎসাহকে ভাষায় বর্ণনা করতে পারব না। আমি সুযোগ পেলেই নিজেও এগুলি দেখতে আসব।

ভাই ও বোনেরা,

আজ দেশের জন্য লক্ষ্য শুধুই কংক্রিটের কাঠামো দাঁড় করানো নয়, আজ দেশে এমন পরিকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে যার নিজস্ব একটি চরিত্র আছে। উন্নত পাবলিক স্পেস আমাদের জরুরি প্রয়োজন। এরকম কখনও আগে ভাবা হত না। আমাদের অতীতের নগর পরিকল্পনায় এই বিষয়টিকে একরকম লাক্সারি বলে ভাবা হত। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে রিয়েল এস্টেট এবং হাউজিং কোম্পানিগুলির প্রচারের ফোকাস কি হয় – পার্ক ফেসিং বাড়ি কিংবা সোসাইটির বিশেষ পাবলিক স্পেসের আশপাশে হয়। এটা এজন্য হয় কারণ আমাদের শহরগুলির একটি বড় জনসংখ্যা কোয়ালিটি পাবলিক স্পেস এবং কোয়ালিটি পাবলিক লাইফ থেকে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত। এখন নগরোন্নয়নের পুরনো ভাবনাকে পেছনে ফেলে দেশ আধুনিকতার দিকে এগিয়ে চলেছে।

বন্ধুগণ,

আমেদাবাদে সাবরমতীর কী অবস্থা ছিল এটা কে ভুলতে পারে? আজ সেখানে জলধারার পাশাপাশি রিভার ফ্রন্ট, পার্ক, ওপেন জিম, সি-প্লেন উড়ান – এসব কিছুই আমাদের পরিষেবার অঙ্গ। অর্থাৎ, এক প্রকার গোটা বাস্তব্যবস্থাই পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তন কাঁকরিয়াতে করা হয়েছে, পুরনো আমেদাবাদের একটি হ্রদ যে এত বড় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে - এটা আগে কখনও ভাবাই হয়নি।

বন্ধুগণ,

শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য মনোরঞ্জনের পাশাপাশি তাঁদের শিক্ষা এবং তাঁদের সৃষ্টিশীলতারও পরিসর থাকা উচিৎ। সায়েন্স সিটি এমন একটা প্রকল্প যা মনোরঞ্জন এবং সৃষ্টিশীলতাকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দেয়। এতে এমন মনোরঞ্জনমূলক গতিবিধি হয় যা শিশুদের সৃষ্টিশীলতাকে উৎসাহ যোগায়। এতে নানারকম খেলা রয়েছে, মজাও রয়েছে আর তার সঙ্গে বাচ্চারা নতুন কিছু শিখতেও পারছে। আমরা দেখেছি শিশুরা প্রায়ই মা-বাবার কাছে রোবটস এবং পশুপাখির বড় খেলনা আবদার করে। কিছু শিশু বলে, বাড়িতে ডায়নোসর নিয়ে এসো, কেউ বা সিংহ পালনের জেদ করে। এখন বাবা-মা এসব কোথা থেকে আনবেন? বাচ্চাদের সামনে বিকল্প হল সায়েন্স সিটিতে যাওয়া। তাছাড়া এই যে নতুন নেচার পার্ক তৈরি হয়েছে এখানে বিশেষভাবে আমার ছোট্ট ছোট্ট বন্ধুদের পছন্দের অনেক কিছু আছে। শুধু তাই নয়, সায়েন্স সিটিতে গড়ে ওঠা অ্যাকোয়াটিক্স গ্যালারি, সেটাতো আরও আনন্দিত করার মতো। শুধু দেশের নয়, এশিয়ার শ্রেষ্ঠ অ্যাকোয়ারিয়ামগুলির মধ্যে একটি। এক জায়গাতেই সারা পৃথিবীর সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, দর্শন শিশুদের অদ্ভূত অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ে সাহায্য করবে।

তেমনই, রোবোটিক্স গ্যালারিতে রোবোটদের কথাবার্তা আকর্ষণের কেন্দ্র তো বটেই, পাশাপাশি এটি রোবোটিক্স নিয়ে কাজ করার জন্যও আমাদের নবীন প্রজন্মকে প্রেরণাও যোগাবে। শিশুমনের জিজ্ঞাসা জাগিয়ে তুলবে। ঔষধি, চাষবাস, মহাকাশ, প্রতিরক্ষা – এরকম অনেক ক্ষেত্রে রোবোটসকে কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে, আমাদের নবীন বন্ধুরা তার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে। আর হ্যাঁ, রোবো-ক্যাফেতে রোবোটিক্স শেফ-এর তৈরি করা এবং রোবোট ওয়েটারদের পরিবেশন করা খাবার খাওয়ার আনন্দ সম্ভবতঃ সেখানে না গেলে কারোর পক্ষে উপভোগ করা সম্ভব হবে না। গতকাল যখন আমি এর ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করি, তখন এমন সব মন্তব্য পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে যে এ ধরনের ছবি তো আমরা বিদেশেই দেখি। মানুষ বিশ্বাসই করছিল না যে এই ছবিগুলি ভারতের, আমাদের গুজরাটের। আজ এই অনুষ্ঠানে আমার অনুরোধ সায়েন্স সিটিতে যেন অধিকাংশ বাচ্চাদের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া হয়, ছাত্রছাত্রীরা যেন যায়। স্কুলগুলি যেন রেগুলার ট্যুরে যায়। সায়েন্স সিটি যেন শিশুদের সমাগমে সবসময় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। তবেই এর সার্থকতা আর সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে।

বন্ধুগণ,

আমার জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে গুজরাট এবং গুজরাটের মানুষের গৌরব আরও বৃদ্ধি করার জন্য এ ধরনের অনেক কাজের আজ শুভারম্ভ হয়েছে। আজ আমেদাবাদ শহরের পাশাপাশি গুজরাটের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও আরও আধুনিক, আরও অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গান্ধীনগর এবং ওয়াডনগর স্টেশনের আধুনিকীকরণ, মেহসানা-ওয়রেঠা লাইন প্রশস্তিকরণ ও বৈদ্যুতিকীকরণ, সুরেন্দ্রনগর-পিপাওয়াও স্টেশনের বৈদ্যুতিকীকরণ, গান্ধীনগর ক্যাপিটাল-ওয়রেঠা মেমু পরিষেবার শুভ সূচনা কিংবা গান্ধীনগর ক্যাপিটাল-বারাণসী সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসের শুভ উদ্বোধন – এই সকল পরিষেবার জন্য গুজরাটবাসীদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। গান্ধীনগর থেকে বেনারসের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ এক প্রকার সোমনাথের মাটির সঙ্গে বিশ্বনাথের মাটিকে যুক্ত করার বড় কাজ।

ভাই ও বোনেরা,

একবিংশ শতাব্দীর ভারতের প্রয়োজন বিংশ শতাব্দীর নিয়মনীতি মেনে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। সেজন্য রেলওয়েকে নতুনভাবে সংস্কার করার প্রয়োজন ছিল। আমরা রেলওয়েকে নিছকই একটি পরিষেবা রূপে নয়, একটি ‘অ্যাসেট’ রূপে বিকশিত করার কাজ শুরু করেছি। আর আজ এর পরিণাম চোখে দেখা যাচ্ছে। আজ ভারতীয় রেলওয়ের পরিচয়, তার ঔজ্জ্বল্য পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে। আজ ভারতীয় রেলে পরিষেবাও বেড়েছে, পরিচ্ছন্নতাও বেড়েছে। সুরক্ষাও বেড়েছে, গতিও বেড়েছে। পরিকাঠামো থেকে শুরু করে আধুনিকীকরণ কিংবা নতুন নতুন আধুনিক ট্রেন এ ধরনের অসংখ্য প্রচেষ্টায় ট্রেনের গতি বাড়ানোর কাজ জারি রয়েছে। আগামীদিনে যখনই সম্পূর্ণরূপে ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর চালু হয়ে যাবে, তখন ট্রেনগুলির গতি আরও বাড়বে। ‘তেজস’ এবং ‘বন্দে ভারত’-এর মতো আধুনিক ট্রেন তো আমাদের ট্র্যাকগুলিতে ইতিমধ্যেই চলতে শুরু করেছে। আজ এই ট্রেনগুলি যাত্রীদের একটি নতুন এবং অদ্ভূত অভিজ্ঞতার শরিক করে তুলছে। ভিস্টাডোম কোচগুলির ভিডিও আপনারা নিশ্চয়ই সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছেন।

যাঁরা স্ট্যাচু অফ ইউনিটি দেখতে গেছেন তাঁদের নিশ্চয়ই এই পরিষেবার আনন্দ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এই কোচগুলি ‘ইজ অ্যান্ড ফিল অফ জার্নি’কে একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। ট্রেনে যাতায়াতকারী সবাই এখন এটা অনুভব করছেন যে আমাদের ট্রেনগুলি, আমাদের প্ল্যাটফর্মগুলি এবং আমাদের রেললাইনগুলি আগের থেকে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন। এক্ষেত্রে নতুন কোচগুলিতে লাগানো ২ লক্ষেরও বেশি বায়ো-টয়লেটের ভূমিকা অপরিসীম।

এভাবে আজ সারা দেশে প্রধান রেল স্টেশনগুলির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরগুলির রেল স্টেশনগুলিও এখন ওয়াই-ফাই পরিষেবা যুক্ত হয়েছে। নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্রডগেজে ‘আনম্যান্ড রেলওয়ে ক্রসিং’গুলি সম্পূর্ণরূপে সমাপ্ত করা হয়েছে। কখনও ভয়ানক সব দুর্ঘটনা আর অব্যবস্থার অভিযোগে সংবাদমাধ্যমগুলিতে ছেয়ে থাকা ভারতীয় রেল আজ ইতিবাচক পথে এগিয়ে চলেছে। আজ ভারতীয় রেল বিশ্বের আধুনিকতম নেটওয়ার্ক এবং মেগা প্রোজেক্টের জন্য আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আজ ভারতীয় রেলকে দেখার অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিকোণ উভয়েই বদলাচ্ছে। আর আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাইব, আজকের এই প্রকল্প ভারতীয় রেলের এই নতুন অবতারের একটি প্রতিরূপ মাত্র।

বন্ধুগণ,

আমি স্পষ্টভাবে মনে করি যে রেলওয়েকে দেশের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রেলওয়ের আনিভূমিক প্রসার বা হরাইজন্টাল এক্সপ্যানশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর পাশাপাশি, রেলওয়েতে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, রিসোর্স বিল্ডিং, নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং উন্নত পরিষেবার জন্য উলম্ব প্রসার বা  ভার্টিকাল এক্সপ্যানশনেরও ততটাই প্রয়োজন রয়েছে। উন্নত রেলপথ, আধুনিক রেল স্টেশন এবং রেল ট্র্যাকের ওপর অত্যাধুনিক হোটেল, গান্ধীনগর রেল স্টেশনের এই প্রয়োগ ভারতীয় রেলে একটি সার্থক পরিবর্তনের সূত্রপাত। রেলে সফরকারী সাধারণ নাগরিকরাও  যাতে এয়ারপোর্টের মতো সুবিধা পান, মহিলা এবং ছোট ছোট শিশুদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের জন্য সুব্যবস্থা, এরকম আধুনিক এবং সুবিধাসম্পন্ন রেল স্টেশন আজ দেশ, গান্ধীনগর পাচ্ছে।

বন্ধুগণ,

গান্ধীনগরের নতুন রেল স্টেশন দেশের পরিকাঠামো নিয়ে মানুষের ধারণায় আসা পরিবর্তনকেও তুলে ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে ভারতে পরিকাঠামো নিয়েও এক ধরনের শ্রেণীভেদকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আর আমি আপনাদের বলতে চাইব, আপনারা সবাই তো ভালোভাবেই গুজরাটের জনগণকে জানেন। আমরা একটা প্রয়োগ করেছিলাম; যখন গুজরাট আমাকে সেই রাজ্যে সেবা করার সুযোগ দিয়েছিল। আমাদের যতগুলি বাস স্টেশন রয়েছে, সেই বাস স্টেশনগুলিকে আরও আধুনিক করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করেছি। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে কাজ করেছি আর কখনও বাস স্টেশনগুলির কিরকম পরিস্থিতি ছিল আজ আমাদের গুজরাটে অনেক বাস স্টেশন আধুনিক হয়ে উঠেছে। বাস স্টেশনগুলিতেও এয়ারপোর্টের মতো বিভিন্ন পরিষেবা দেখা যাচ্ছে।

আর যখন আমি দিল্লিতে আসি আমি আমার আধিকারিকদের গুজরাটের বাস স্টেশনগুলি দেখার জন্য পাঠিয়েছিলাম। রেলের আধিকারিকদেরও পাঠিয়েছিলাম। আমি তাঁদের বুঝিয়েছিলাম যে আমাদের রেলওয়ে স্টেশনগুলি কেন এরকম হবে না। ‘ল্যান্ড ইউজ’-এর ‘অপ্টিমাম ইউটিলাইজেশন’ করতে হবে। রেলওয়ে স্টেশনগুলিতে অনেক বড় অর্থনৈতিক গতিবিধি শুরু করতে হবে আর রেলওয়ে নিজে যেন শুধু রেলের যাতায়াতেই সীমাবদ্ধ না থেকে এক প্রকার অর্থনীতির প্রাণশক্তির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। যেভাবে এয়ারপোর্টের উন্নয়নের কাজ করা হয়, যেভাবে গুজরাটে বাস স্টেশনগুলির উন্নয়নের কাজ হয়েছে, তেমনই রেল স্টেশনগুলিকেও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে বিকাশিত করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে চলেছি। আজ গান্ধীনগরে তার সূত্রপাত হল। জন-পরিষেবায় এ ধরনের শ্রেণী বিভেদ যা এর জন্য এবং ওর জন্য বড়লোকদের জন্য হচ্ছে, এগুলি সব ফালতু কথা। সমাজের প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষ যেন এই ব্যবস্থা দ্বারা উপকৃত হয় সেটা দেখতে হবে।

বন্ধুগণ,

গান্ধীনগরের আধুনিক রেল স্টেশন একটি উদাহরণস্বরূপ। রেলের সম্পদের সদ্ব্যবহার করার পরে এগুলি কিভাবে আর্থিক গতিবিধির কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে এটি তার নিদর্শনস্বরূপ। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্র্যাকের ওপর এরকম হোটেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে যেখান থেকে রেলের আসা-যাওয়া দেখা যায় কিন্তু অনুভব করা যায় না। মাটি ততটাই রয়েছে কিন্তু তার ব্যবহার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। পরিষেবায় উন্নত পর্যটন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যও সর্বোত্তম। যেখান দিয়ে রেল যায় তার থেকে প্রাইম লোকেশন আর কি হতে পারে?

এই রেল স্টেশন থেকে মহাত্মা মন্দিরের যে সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়, ডান্ডি কুটীর যেভাবে দেখা যায় তা অত্যন্ত অদ্ভূত। ডান্ডি কুটীর মিউজিয়াম দেখতে যাঁরা আসেন কিংবা ভাইব্র্যান্ট গুজরাট শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাঁরা আসেন, তাঁরা যখন এটা দেখবেন, তখন তাঁদের জন্যও এটা একটা পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আর আজ রেলওয়ের এই কায়াকল্প হচ্ছে, মহাত্মা মন্দিরের অত্যন্ত কাছেই হচ্ছে, এর কারণ মহাত্মা মন্দিরের গুরুত্বও অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন মানুষ ছোটখাটো কনফারেন্স করার জন্য এই হোটেল ব্যবহার করবে। মহাত্মা মন্দিরও ব্যবহার করবে। অর্থাৎ, এক প্রকার সারা বছর ধরে অনেক অনুষ্ঠানের জন্য এখানে একটি সার্বজনীক ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আর বিপরীত  দিকে এখানে ২০ মিনিট পথে আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে দেশ-বিদেশের মানুষ কত সহজে এটি ব্যবহার করতে পারবেন।

ভাই ও বোনেরা,

কল্পনা করুন, গোটা দেশে রেলওয়ের এতবড় নেটওয়ার্ক, এত বেশি সম্পদ -  এরকম কত না সম্ভাবনা সর্বত্র লুকিয়ে আছে। বন্ধুগণ, ভারতের মতো বিশাল দেশে রেলের ভূমিকা সর্বদাই অনেক বড় ছিল। রেল নিজের পাশাপাশি উন্নয়নের নতুন মাত্রা, পরিষেবার পাশাপাশি নতুন মাত্রা নিয়েও পৌঁছয়। এটা বিগত কয়েক বছরের প্রচেষ্টা যে আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির রাজধানীগুলির মধ্যে প্রথমবার রেল পৌঁছে যাচ্ছে। তেমনই অতি দ্রুত শ্রীনগরও কন্যাকুমারীর সঙ্গে রেলের মাধ্যমে যুক্ত হতে চলেছে। আজ ওয়াডনগরও এই সম্প্রসারণের অংশ হয়ে উঠেছে। আমার তো ওয়াডনগর স্টেশনের সঙ্গে কত না স্মৃতি জুড়ে রয়েছে। নতুন স্টেশন প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। এই নতুন ব্রডগেজ লাইন চালু হওয়ায় ওয়াডনগর-মৌঢেরা-পাটন হেরিটেজ সার্কিট এখন উন্নত রেল পরিষেবার মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গেছে। এর ফলে আমেদাবাদ-জয়পুর-দিল্লি মেইন লাইনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। এই লাইনের শুরু থেকেই এটি গোটা অঞ্চলে পরিষেবা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থান এবং স্বরোজগারের নতুন সুযোগও উন্মোচিত হয়েছে।

বন্ধুগণ,

মহসাণা-ওয়ারেঠা লাইন যেখানে আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে আমাদেরকে যুক্ত করে, তেমনই সুরেন্দ্রনগর-পিপাওয়াও লাইনের বৈদ্যুতিকীকরণ আমাদের ভারতীয় রেলের ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত করে। এই ভারতীয় রেলের ইতিহাসে সব থেকে কম সময়ে সম্পূর্ণ হওয়া প্রকল্পগুলির মধ্যে এটি একটি। এটি দেশের রেল লাইনের সঙ্গে সমুদ্র বন্দরকে যুক্ত করার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ হয়ে ওঠার পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের জন্য ফিডার রুটও বটে। এই রেলপথ পিপাওয়াও সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে দেশের উত্তর ভাগের জন্য ডবল স্ট্যাক কন্টেনারসম্পন্ন মালগাড়ির অবাধ যাতায়াতকে সুনিশ্চিত করতে চলেছে।

বন্ধুগণ,

দেশে যাত্রী পরিষেবা হোক কিংবা পণ্য পরিবহণ; কম সময়ে, কম খরচে আরও উন্নত পরিষেবা আজ একবিংশ শতাব্দীর ভারতের অগ্রাধিকার। সেজন্য আজ দেশ মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি বা বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার  দিকে পা বাড়াচ্ছে। সেজন্য একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ চলছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যানবাহনের ভিন্ন ভিন্ন ঊপায়কে যুক্ত করে লাস্ট মাইল কানেক্টিভিটি আত্মনির্ভর ভারতের অভিযানকে আরও গতি প্রদান করবে।

বন্ধুগণ,

নতুন ভারতের উন্নয়নের গাড়ি দুই লাইনে একসঙ্গে চলে এগিয়ে যাবে। একটি লাইন আধুনিকতার আর অন্য লাইনটি গরীব, কৃষক এবং মধ্যবিত্তদের কল্যাণের। সেজন্য আজ ভারতে একদিকে নেক্সট জেনারেশন পরিকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে এত কাজ হচ্ছে, অন্যদিকে এর দ্বারা যাতে গরীব, কৃষক, মধ্যবিত্তরা উপকৃত হন সেটাও সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।

ভাই ও বোনেরা,

গুজরাট এবং দেশের উন্নয়নের এই কাজের মাঝে, আমাদের করোনার মতো মহামারীর দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। বিগত দেড় বছরে ১০০ বছরের সর্ববৃহৎ অতিমারী আমাদের সকলের জীবনকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেছে। করোনা সংক্রমণ অনেক বন্ধুদের আমাদের কাছ থেকে অসময়ে ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু একটি দেশ রূপে আমরা পূর্ণ সামর্থ্য দিয়ে এর মোকাবিলা করছি। গুজরাটও অনেক পরিশ্রমের সঙ্গে ড়াজয়ে সংক্রমণের গতি বৃদ্ধিকে থামিয়ে দিয়েছে।

এখন আমাদের নিজেদের আচরণের মাধ্যমে আর টেস্টিং, ট্র্যাকিং এবং ট্রিটমেন্ট ও টিকাদানের মন্ত্রের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের হারকে হ্রাস করতে হবে। সেজন্য অত্যন্ত সাবধান এবং সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। এর সঙ্গেই আমাদের টিকাকরণের প্রক্রিয়াকেও নিরন্তর দ্রুত করার প্রয়োজন রয়েছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে গুজরাট ৩ কোটি টিকার মাত্রা ছুঁতে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকার টিকা পাঠানো সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য রাজ্যগুলিকে আগে থেকেই জানানোর কাজ শুরু করেছে। এর ফলে গুজরাটের টিকাকরণ কেন্দ্রগুলি নিজেদের মতো করে রণনীতি তৈরি করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাচ্ছে। সকলের প্রচেষ্টায় টিকাকরণ-সংশ্লিষ্ট আমাদের লক্ষ্যকে আমরা দ্রুতগতিতে অতিক্রম করতে পারব। এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার সকল প্রকল্পের জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন।

ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1739718) Visitor Counter : 236