প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভারত-জাপান সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা

Posted On: 21 DEC 2020 10:01AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ২১ ডিসেম্বর, ২০২০

 

প্রিয় বন্ধুগণ,

ষষ্ঠ ভারত-জাপান সংবাদ সম্মেলন ভাষণ দিতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।

৫ বছর আগে আমরা পারস্পরিক আলোচনার জন্য এই সম্মেলনের সূচনা করেছিলাম। সেইসময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শিনজো আবে। তারপর নতুন দিল্লী থেকে টোকিও, ইয়াঙ্গন থেকে উলানবাতর পর্যন্ত এই সম্মেলন পর্যায়ক্রমে আয়োজিত হয়েছে। সম্মেলনের এই দীর্ঘ যাত্রাপথে যে বিষয়গুলি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তা হল মৌলিক উদ্দেশ্যপূরণে পারস্পরিক আলোচনা চালিয়ে যেতে উসাহ; গণতন্ত্রের অভিন্ন মূল্যবোধগুলি তুলে ধরা, মানবতা, অহিংসা, স্বাধীনতা ও সহনশীলতার নীতিগুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আমাদের সুপ্রাচীন আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য ও জ্ঞানের আদান-প্রদান। সংবাদ সম্মেলন আয়োজনে নিরন্তর সহায়তার জন্য আমি জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।

 

বন্ধুগণ,

এই মঞ্চ ভগবান বুদ্ধের আদর্শ ও বাণী প্রচারে বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে। ঐতিহাসিক দিক থেকে ভগবান বুদ্ধের জ্ঞানের আলো ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য জ্ঞানের এই আলো কখনোই এক জায়গায় থেমে থাকেনি। জ্ঞানের এই আলো যখনই নতুন জায়গায় পৌঁছেছে তখন বৌদ্ধ ধর্মের চিন্তাভাবনায় নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। জ্ঞানের আলো দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ার ফলেই বৌদ্ধ সাহিত্য ও আদর্শের অমূল্য সম্পদগুলি আজও বিভিন্ন বৌদ্ধ মঠে দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেশ ও বিভিন্ন ভাষাতে এই সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে। 

সামগ্রিকভাবে বুদ্ধের সাহিত্য ও আদর্শ মানব জাতির কাছে এক সম্পদ। আজ আমি বুদ্ধের এই সমস্ত ঐতিহ্যগত সাহিত্য ও পান্ডুলিপিগুলির জন্য একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। ভারতে এ ধরণের গ্রন্থাগার বা সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব হলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হব। প্রস্তাবিত এই গ্রন্থাগারের জন্য আমরা সবরকম সহায়-সম্পদের সংস্থান করবো। বিভিন্ন দেশের বৌদ্ধ সাহিত্যের ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করে এই গ্রন্থাগারে রাখা হবে। সংগৃহিত বৌদ্ধ সাহিত্যগুলি অনুবাদ করে সেগুলি সমস্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও বৌদ্ধ পন্ডিতদের কাছে বিনামূল্যো পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থাগার কেবল সাহিত্য সম্পদের এক নিরাপদ সংরক্ষনাগারই হয়ে উঠবে না। 

এই গ্রন্থাগার প্রকৃতপক্ষে গবেষণা ও ধ্যান-ধারণা বিনিময়ের এক মঞ্চ হয়ে উঠবে, যা আদতে মানুষের মধ্যে, সমাজের মধ্যে এবং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে ‘সংবাদ’ বা পারস্পরিক মতবিনিময়ের কেন্দ্র হয়ে উঠবে। গ্রন্থাগারে বৌদ্ধ সাহিত্য ও আদর্শ নিয়ে যে গবেষণাধর্মী কাজ পরিচালিত হবে তারমধ্যে ভগবান বুদ্ধের বার্তা সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলির ক্ষেত্রে আমাদের এই আধুনিক বিশ্বকে কিভাবে আলোর দিশা দেখাতে পারে তা নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। সমসাময়িক বিশ্বে দারিদ্র, জাতপাত, বৈরিতা, লিঙ্গ বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন সহ বহু সমস্যা রয়েছে। 

 

বন্ধুগণ,

প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে আমি সারনাথ গিয়েছিলাম। সারনাথ হল ভগবান বুদ্ধের জ্ঞানালোক প্রাপ্তির পর প্রথম আধ্যাত্মিক ধর্মাপদেশ স্থল। পবিত্র সারনাথের জ্যোতিপুঞ্জ থেকে ভগবান বুদ্ধের আদর্শ ও উপদেশ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভগবান বুদ্ধের করুণা, দয়া ও সর্বোপরি মানব কল্যাণের বার্তা সমগ্র বিশ্ব আত্মস্থ করে নেয়। এরপরই বিশ্ব ইতিহাসের ধারায় ধীরে ধীরে পরিবর্তনের সূচনা হয়। এই সারনাথ থেকে ভগবান বুদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তাঁর আদর্শ ও চিন্তাভাবনার কথা বিস্তারিতভাবে বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁর কাছে ধর্ম ছিল প্রার্থনা ও আচার-আচরণের অনেক ঊর্ধ্বে। ধর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মানুষ এবং এই মানুষের সঙ্গেই মানুষের সম্পর্ক রয়েছে। তাই মনুষ্য জীবনে এটি সর্বাধিক ইতিবাচক দিক। সংবাদ সম্মেলনকেও মানুষের কল্যাণে বুদ্ধের এই বার্তাকে সমগ্র বিশ্বে একতা ও করুণার মানসিকতার নিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর এখন আমাদের কাছে সে সময় উপস্থিত হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

নতুন দশকের এটিই প্রথম সংবাদ সম্মেলন। মানব সভ্যতার এক কঠিন সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী দিনগুলিতে আমাদের কর্মপরিকল্পনা কি হবে তার সঠিক রূপদানের ক্ষেত্রে এটিই আদর্শ সময়। এই দশক ও তার পরবর্তী সময়ে সেই জাতি অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে যার শিক্ষা ও উদ্ভাবনে অগ্রণী ভূমিকা থাকবে। আগামী দশকগুলি তরুণ প্রতিভাবান ও মেধাবীদের সঠিক লালন-পালনের সময় হয়ে উঠবে, যা আগামীদিনে মানবজাতির মূল্যবোধকে আরও প্রসারিত করবে। শিক্ষা এমন হবে যা উদ্ভাবনের আরও প্রসার ঘটাবে। প্রকৃতপক্ষে উদ্ভাবনই হল মানবজাতির ক্ষমতায়ণের মূল ভরকেন্দ্র। 

যে সমাজ যতবেশি উদারমনা, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ তারাই উদ্ভাবনের উপযুক্ত বাতাবরণ গড়ে তুলতে পারবে। তাই এখন সময় এসেছে আমরা বর্তমানে অগ্রগতি হিসেবে যা দেখছি সেই সম্পর্কে আত্মবিক্ষণ করার। কেবল কয়েক জনকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বের অগ্রগতি এগিয়ে যেতে পারেনা। আলোচনার এই মঞ্চ হতে হবে আরও বড় ও উদারমনস্ক। অগ্রগতির লক্ষ্যে আলোচ্য বিষয় সমূহ হবে অনেক বেশি প্রসারিত। অগ্রগতির যাত্রাপথে মানব কেন্দ্রিক প্রয়াসগুলিকেও অনুসরণ করতে হবে, যাতে আমাদের চারপাশে সম্প্রীতি বজায় রাখা যায়। 

 

বন্ধুগণ,

ঈর্ষার মাধ্যমে কখনও শান্তি অর্জন হয়না। অতীতেও মানব সভ্যতা সহযোগিতার পরিবর্তে লড়াইয়ের পথ অনুসরণ করেছে। সাম্রাজ্যবাদের সময় থেকে বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত - এই একই পথ অনুসৃত হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মহাকাশ পর্যন্ত এই প্রবণতা এখনও চলছে। আমরা সহযোগিতার লক্ষ্যে বহু আলোচনা করেছি, কিন্তু সেগুলি সবই শত্রুপক্ষকে বা বিপক্ষকে হেনন্থা করতে। এখন সময় এসেছে একসঙ্গে গর্জে ওঠার। ভগবান বুদ্ধের আদর্শ ও শিক্ষা আমাদেরকে বৈরিতা ভুলে ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে চালিত করতে পারে। তাঁর শিক্ষা আমাদের আরও উদারমনস্ক করে তুলতে পারে। ভগবান বুদ্ধের শিক্ষা আমাদের শিখিয়েছে অতীত থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষ্যে তা কাজে লাগানোর। আর এটাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সেরা পন্থা।

 

বন্ধুগণ,

সংবাদের মূল ভাবনা একজোট হওয়া। এই লক্ষ্যে আসুন আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হই। এখন সময় এসেছে প্রাচীন মূল্যবোধগুলিকে অনুসরণ করে ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করার। আমরা অবশ্যই মানবতাবাদকে আমাদের নীতির মূল কেন্দ্রে রাখব। আমরা অবশ্যই আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার মূল স্তম্ভ হিসেবে প্রকৃতির সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে সহাবস্থান করব। তাই সংবাদ হল নিজেদের মধ্যেই আলাপ-আলোচনার এক মঞ্চ, যেখানে প্রকৃতি আমাদের এগিয়ে চলার পথে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচি আয়োজনের জন্য আমি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই এবং এই মঞ্চে তাদের আলোচনার সাফল্য কামনা করি। 

 

ধন্যবাদ

***

 

 

CG/BD/NS


(Release ID: 1682371) Visitor Counter : 263