প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ফিকি-র ৯৩তম বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 DEC 2020 2:12PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ ডিসেম্বর, ২০২০

 

নমস্কার!

 

ফিকি-র সভাপতি শ্রীমতী সঙ্গীতা রেড্ডিজি, সাধারণ সচিব শ্রী দিলীপ চিনয়জি, ভারতের শিল্প জগতের বন্ধুগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!

 

আমরা ২০-২০ ম্যাচে দ্রুতগতিতে অনেক কিছু বদলাতে দেখেছি। কিন্তু ২০-২০-র এই বছরটি সবাইকে পর্যুদস্ত করেছে। দেশ এত উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে, গোটা বিশ্ব উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। কয়েক বছর পর আমরা যখন এই করোনার সঙ্কটকালকে মনে করব, তখন হয়তো অবিশ্বাস্য লাগবে। কিন্তু এর থেকেও ভালো কথা হল, যত দ্রুতগতিতে পরিস্থিতি বিগড়েছে, ততটাই দ্রুততার সঙ্গে পরিস্থিতি শুধরেছেও। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে যখন অতিমারীর এই করাল সময় শুরু হয়েছিল, আমরা একটি অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছিলাম, অনেক অনিশ্চয়তা ছিল। উৎপাদন থেকে শুরু করে সরবরাহ-শৃঙ্খল, অর্থনীতির পুনরুত্থান, এরকম অনেক বিষয় – প্রত্যেকের মনে এই প্রশ্নই ছিল যে কতদিন পর্যন্ত এরকম চলবে, কিভাবে সব ঠিক হবে? এই প্রশ্নগুলি এবং বিভিন্ন সমস্যা ও চিন্তার ফাঁদে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এখন ফেঁসে আছেন। কিন্তু আজ ডিসেম্বর মাসে এসে পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের কাছে এখন জবাবও আছে, আর নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও আছে। আজ অর্থনৈতিক সূচকগুলি অত্যন্ত উৎসাহবর্ধক, অত্যন্ত প্রেরণাদায়ক। সঙ্কটের সময়ে দেশ যা শিখেছে, সেগুলি ভবিষ্যতের সঙ্কল্পকে আরও দৃঢ় করেছে। আজ নিশ্চিতভাবেই এর সিংহভাগ কৃতিত্ব ভারতের আন্ত্রেপ্রেনিওরদের, অনেকটাই কৃতিত্ব ভারতের নবীন প্রজন্মের, ভারতের কৃষকদের, আপনাদের মতো শিল্পপতিদের, আর সমস্ত দেশবাসীর।

 

বন্ধুগণ,

 

যতবারই এ ধরনের বিশ্বব্যাপী মহামারী এসেছে, তার সঙ্গে একটি ইতিহাস, একটি বড় শিক্ষা যুক্ত হয়েছে। যে দেশগুলি এ ধরনের মহামারীর সময় নিজেদের অধিকাংশ নাগরিকদের বাঁচাতে পেরেছে, সেই দেশের অন্যান্য ব্যবস্থা ততটাই দ্রুতগতিতে পুনরুত্থানের ক্ষমতা রাখে। করোনা মহামারীর সময় ভারত তার নাগরিকদের জীবন রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। অধিকাংশ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে, আর আজ তার ফল দেশবাসী যেমন দেখতে পাচ্ছে, বিশ্ববাসীও তেমন দেখতে পাচ্ছে। ভারত যেভাবে বিগত কয়েক মাস ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেছে, নীতি প্রণয়ন করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পরিস্থিতি সামলেছে তা গোটা বিশ্বকে আশ্চর্যচকিত করে দিয়েছে। বিগত ছয় বছর ধরে ভারতের ওপর বিশ্ববাসীর যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা গত কয়েক মাসে আরও শক্তিশালী হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হোক কিংবা বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারী হোক, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের রেকর্ড বিনিয়োগ এই সময়ে ভারতে হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া নিরন্তর এগিয়ে চলেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ দেশের প্রত্যেক নাগরিক আত্মনির্ভর ভারত অভিযানকে সফল করে তুলতে দায়বদ্ধ। সকলেই লোকালের জন্য ভোকাল হওয়ার কাজ করে চলেছেন। এটি একটি জলজ্যান্ত উদাহরণ যে দেশ তার বেসরকারি ক্ষেত্রের সামর্থ্যকে কতটা বিশ্বাস করে!  ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্র শুধু যে আমাদের দেশীয় প্রয়োজন মেটাতে পারে তা নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও নিজেদের পরিচয় আরও মজবুতভাবে স্থাপন করতে সক্ষম।

 

বন্ধুগণ,

 

আত্মনির্ভর ভারত অভিযান ভারতে উৎকৃষ্ট পণ্য উৎপাদন ও ভারতীয় শিল্পকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তোলারও মাধ্যম। ২০১৪ সালে প্রথমবার যখন আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, তখন আমি বলেছিলাম যে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ 'জিরো ডিফেক্ট, জিরো এফেক্ট'!

 

বন্ধুগণ,

 

দেশে স্বাধীনতার পর থেকে এতকাল ধরে সরকারের নীতি অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষতাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রয়োগকে বাধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের প্রত্যেক  ক্ষেত্রে দক্ষতাকে উৎসাহ জোগানো হয়েছে। এমন ক্ষেত্র যেখানে ভারতের কাছে দীর্ঘমেয়াদি তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে, সেই ক্ষেত্রে সূর্যোদয় শিল্প বা নতুন ধরনের শিল্প এবং প্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পগুলিকে নতুন প্রাণশক্তি জোগানোর দিকে অধিক জোর দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই যে আমাদের এই সদ্য গড়ে ওঠা নতুন শিল্পগুলিও ভবিষ্যতে আরও বেশি শক্তিশালী এবং স্বাধীন হয়ে উঠুক। সেজন্য আপনারা হয়তো দেখেছেন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশে প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম বা উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহভাতা প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্প সেইসব শিল্পের জন্য চালু করা হয়েছে যেগুলিতে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। যারা ভালোভাবে কাজ করবে, দক্ষভাবে কাজ করবে, যারা সেই ক্ষেত্রে দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলবে, তারাই এই ভাতার দাবিদার হবে। বন্ধুগণ, জীবন হোক কিংবা প্রশাসন, আমরা প্রায়ই একটা আত্মবিরোধী বিষয় দেখি যেগুলি আত্মবিরোধী হলেও সত্য। যাঁরা প্রত্যয়ী হন, তাঁরা অন্যদের উপযুক্ত স্থান দিতে ভয় পান না। কিন্তু যাঁরা দুর্বল মনের হন, যাঁদের মনে অসুরক্ষার ভাব থাকে, তাঁরাই অন্যদেরকে সুযোগ দিতে ভয় পান। সরকারগুলির ক্ষেত্রেও প্রায়ই এরকম হয়, জনগণের বিপুল সমর্থন এবং বিশ্বাসে গড়ে ওঠা সরকারের একটা নিজস্ব প্রত্যয় থাকে, আর ততটাই একান্তভাবে কাজ করে। তাই, ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস' – এই মন্ত্র বাস্তবায়িত করার জন্য ঐকান্তিকভাবে সরকার কাজে ঝাপিয়ে পড়ে। সরকার যতটা দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়, ততটাই অন্যদের সমস্যা লাঘব হয়। একটি দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সরকার সর্বদাই চেষ্টা করে যাতে তারা সমাজের জন্য, দেশের জন্য যথাসম্ভব অবদান রাখতে পারে! একটি দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর সরকার এটা চায় না যে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতেই থাকুক, অন্যদের হাতে কিছুই না থাকুক। পূর্ববর্তী সরকারগুলির এই ধরণের ভাবনার সাক্ষী রয়েছেন আপনারা সবাই। সেজন্য দেশকে অনেক ভুগতেও হয়েছে। জনগণের মনে একটা ভাবনা গড়ে উঠেছিল যে সবকিছু সরকার করবে। ঘড়ি তৈরি করবে তা-ও সরকার, স্কুটার তৈরি করবে তা-ও সরকার, টিভি তৈরি করবে তা-ও সরকার, এমনকি পাউরুটি কিংবা কেক তৈরি করতে হলেও সরকারই করবে। আমরা দেখেছি যে এই দৃষ্টিভঙ্গির কূ-পরিণাম কী হয়!  এথেকে ভিন্ন একটি দূরদর্শী এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে উৎসাহ জোগায় যাতে তাঁরা নিজেদের ক্ষমতার সম্পূর্ণ সদ্যবহার করতে পারে।

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত ছয় বছরে ভারত এমন একটি সরকার দেখেছে যা শুধুই ১৩০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে সমর্পিত, যে সরকার প্রত্যেক স্তরে দেশবাসীকে এগিয়ে নিয়ে আসার কাজ করেছে। ভারতে আজ প্রত্যেক ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট সকলের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির কাজ চলছে। এই ভাবনা নিয়ে শিল্পোৎপাদন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ পর্যন্ত, কৃষি থেকে শুরু করে পরিকাঠামো পর্যন্ত, প্রযুক্তি শিল্প থেকে শুরু করে করব্যবস্থা পর্যন্ত, রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে রেগুলেটরি ইজিং পর্যন্ত চতুর্মুখী সংস্কারসাধন করা হয়েছে। আজ ভারতে কর্পোরেট ট্যাক্স বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে প্রতিযোগিতামূলক। আজ ভারত বিশ্বের হাতে গোনা কয়েকটি দেশের অন্যতম যেখানে ফেসলেস অ্যাসেসমেন্ট এবং ফেসলেস অ্যাপিলের সুবিধা রয়েছে। ইন্সপেক্টর রাজ এবং কর সন্ত্রাসের দীর্ঘমেয়াদি সময়কে পিছনে ফেলে ভারত নিজের দেশের শিল্পপতিদের সামর্থ্যে ভরসা রেখে এগিয়ে চলেছে। খনি উত্তোলন থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা কিংবা মহাকাশ – অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের জন্য, ভারতীয় মেধার জন্য, প্রতিযোগিতার জন্য আজ সুযোগের, এক প্রকার বলতে গেলে অগুণতি সুযোগের একটি পরম্পরা শুরু করে দিয়েছে। দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটি গড়ে তোলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

একটি স্পন্দিত অর্থনীতিতে যখন একটি ক্ষেত্র ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন তার প্রত্যক্ষ প্রভাব অন্য ক্ষেত্রগুলির ওপরও পড়ে। কিন্তু আপনারা কল্পনা করতে পারেন যে, যদি একটি শিল্পের সঙ্গে অন্যটির মধ্যে অকারণে দেওয়াল তৈরি করে দেওয়া হয়, তাহলে কী হবে। তখন কোনও শিল্পই ততটা দ্রুতগতিতে উন্নতি করতে পারবে না! যার যতটা শক্তি রয়েছে, ততটা কাজ তার করা উচিৎ। মাঝখানে দেওয়াল থাকলে একটি শিল্প যে কোনভাবে উন্নতিও করলেও তার প্রভাব কোনভাবেই অন্য ক্ষেত্রে পড়বে না। ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এই দেওয়াল তুলে দেওয়া দেশের অর্থনীতিকে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সাধারণ মানুষের ক্ষতি করেছে। এখন দেশে যে সংস্কার হচ্ছে, তা এই দেওয়ালগুলি সরিয়ে দেওয়ার কাজ করছে। সম্প্রতি আমরা যে কৃষি সংস্কার শুরু করেছি, সেটাও এই প্রক্রিয়ারই একটি পর্যায়। কৃষিক্ষেত্র এবং তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন কৃষি পরিকাঠামো, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, গুদামীকরণ, হিমঘর শৃঙ্খল – এগুলির মধ্যে আমরা এরকমই দেওয়াল দেখতে পেয়েছি। এখন এই সমস্ত দেওয়াল সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সমস্ত সমস্যা সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই দেওয়ালগুলি সরিয়ে দেওয়ার পর, এই সংস্কারের পর কৃষকরা নতুন বাজার পাবেন, নতুন বিকল্প পাবেন। তাঁরা প্রযুক্তি দ্বারা উপকৃত হবেন। দেশের হিমঘর পরিকাঠামো আধুনিক হবে। এইসব কিছুর মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে অধিক বিনিয়োগ হবে, আর এগুলির মাধ্যমে সবচাইতে বেশি লাভ যদি কারোর হয়, তা হবে আমার দেশের কৃষকদের। যাঁরা ছোট ছোট জমিতে চাষ করে জীবনধারণ করেন, সেই কৃষকদের ভালো হবে। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে দেওয়াল নয়, অধিক সংখ্যক সেতু চাই; যাতে ক্ষেত্রগুলি পরস্পরকে সমর্থন করতে পারে, সাহায্য করতে পারে!

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত বছরগুলিতে এই দেওয়ালগুলি ভাঙার জন্য কিভাবে একটি সুপরিকল্পিত এবং সংহত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল দেশের কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণ। এখন আমরা 'ব্যাঙ্কিং এক্সক্লুশন'-এর মাধ্যমে বিশ্বের 'মোস্ট ইনক্লুসিভ’ দেশগুলির তালিকায় সামিল হয়েছি। আপনারাও এই পরিবর্তনের সাক্ষী, কিভাবে সমস্ত অবরোধ দূর করে ভারত 'আধার'কে সাংবিধানিক সংরক্ষণ দিয়েছে। আমরা যাঁরা কখনও ব্যাঙ্কের চৌকাঠ পাড় করেননি, সেরকম অসংখ্য মানুষকে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত করেছি। মোবাইল ডেটা সস্তা করে, মোবাইল ফোনের দাম সস্তা করে সেগুলি দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর মানুষের হাতে পৌঁছে দিয়েছি, তাঁদেরকে ফোনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করেছি। ফলস্বরূপ, জন ধন অ্যাকাউন্ট, আধার এবং মোবাইলের ত্রয়ী শক্তি যাকে আমি জেএএম বলি তা আপামর দেশবাসীকে ক্ষমতায়িত করেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর ব্যবস্থা দেশে সফলভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি আপনারাও হয়তো একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে সেই প্রতিবেদনটি পড়েছেন যেখানে ভারতে গড়ে তোলা এই ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। করোনার সময় যখন অনেক দেশের নাগরিকদের সরাসরি টাকা পাঠানোর সমস্যা হচ্ছিল, তখন তাঁরা ব্যাঙ্ক চেক এবং ডাক বিভাগের ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু একই সময়ে ভারত একটিমাত্র ক্লিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ল্কডাউনে গৃহবন্দী কোটি কোটি নাগরিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সহজেই হস্তান্তর করছিল। এক মুহূর্তের মধ্যে যখন খুশি ব্যাঙ্ক খোলা থাকুক কিংবা বন্ধ থাকুক, দেশে লকডাউন থাকা অবস্থাতেও সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে গেছে। আন্তর্জাতিক বিষয়ে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা এখন এটা বলছেন, ভারতের এই মডেল এখন অন্যান্য দেশেরও শেখা উচিৎ। এই প্রতিবেদন পড়ে, বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ শুনে কার গর্ব হবে না?

 

বন্ধুগণ,

 

একটা সময় ছিল যখন কিছু মানুষ প্রশ্ন তুলতেন যে এই অশিক্ষা এবং দারিদ্র্য সঙ্কুলিত আবহে ভারত কিভাবে প্রযুক্তিকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে? কিন্তু ভারত এসব করে দেখিয়েছে এবং অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে করে দেখিয়েছে। ভবিষ্যতেও করতে থাকবে। আজ শুধুই ইউপিআই প্ল্যাটফর্মে প্রতি মাসে প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে। এই মাসে ৪ লক্ষ টাকার নতুন রেকর্ড সবাইকে চমকে দিয়েছে। আজ গ্রামে-গঞ্জে ছোট ছোট ঠেলাওয়ালাও ডিজিটাল লেনদেন করছেন। ভারতের শিল্প জগতকে দেশের শক্তি বুঝে এগিয়ে আসতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ যেমন গ্রাম এবং ছোট শহরগুলিতে এমন আবহ গড়ে উঠেছে, যাঁরা টিভি কিংবা সিনেমা দেখে বড় হয়েছেন, তাঁদের এই পরিবর্তন দেখে অবাক হওয়া স্বাভাবিক। শহর এবং গ্রামের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব কখনই এতটা ছিল না যতটা দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাবের দূরত্ব ছিল। কিছু মানুষের জন্য গ্রাম হল এমন একটা জায়গা যেখানে যাতায়াতের কষ্ট থাকবে, যেখানে অনেক কম নাগরিক পরিষেবা থাকবে, যেখানে উন্নয়ন হয়নি, পিছিয়ে থাকা মানুষেরা যেখানে বসবাস করেন! কিন্তু আপনারা যদি আজ দেশের যে কোনও প্রান্তে গ্রামীণ এবং আধা-শহর এলাকাগুলিতে যান, তাহলে আপনারা একদমই অন্যরকম দৃশ্য দেখবেন। সর্বত্র একটি নতুন আশা, নতুন বিশ্বাস আপনারা দেখতে পাবেন। আজকের গ্রামীণ ভারত অনেক বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। আপনারা কি জানেন যে গ্রামীণ ভারতে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন শহরগুলি থেকে অনেক বেশি? আপনারা কি জানেন যে ভারতে অর্ধেকেরও বেশি স্টার্ট-আপ আমাদের টিয়ার-২ টিয়ার-৩ শহরগুলিতে গড়ে উঠেছে? প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ গ্রাম সড়কপথে যুক্ত হয়েছে? এসব কথা বলার অর্থ হল, গ্রামের মানুষ এখন বাজার, বিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং অন্যান্য পরিষেবার সঙ্গে দ্রুতগতিতে যুক্ত হচ্ছেন। গ্রামে বসবাসকারী মানুষদের আকাঙ্ক্ষা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁরা সামাজিক, অর্থনৈতিক সক্রিয়তা চান। সরকার নিজের দিক থেকে এই আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণের কাজে উৎসর্গীকৃত। যেমন সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে পিএম-ওয়ানি যোজনা। এই যোজনার মাধ্যমে সারা দেশে সরকারি ওয়াইফাই হটস্পট নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক বিস্তার ঘটবে। সমস্ত শিল্পপতিদের প্রতি আমার অনুরোধ, এই সুযোগ ব্যবহার করে গ্রাম এবং আধা-গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার এই প্রচেষ্টার অংশীদার হোন। এটা নিশ্চিত যে একবিংশ শতাব্দীর ভারতের উন্নয়নকে গ্রাম এবং ছোট ছোট শহরগুলিই সমর্থন করবে। সেজন্য আপনাদের মতো আন্ত্রেপ্রেনিওরদেরও গ্রাম এবং ছোট শহরগুলিতে বিনিয়োগের সুযোগ কখনও হাত ছাড়া করা উচিৎ নয়। আপনাদের এই বিনিয়োগ আমাদের গ্রামে বসবাসকারী ভাই-বোনেদের জন্য, আমাদের কৃষিক্ষেত্রের জন্য অনেক অনেক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলবে।

 

বন্ধুগণ,

 

দেশের কৃষিক্ষেত্রকে শক্তিশালী করে তুলতে বিগত বছরগুলিতে ভারতে দ্রুতগতিতে কাজ করা হয়েছে। আজ ভারতের কৃষিক্ষেত্র আগের থেকে অনেক বেশি স্পন্দিত। আজ ভারতের কৃষকদের কাছে নিজস্ব ফসল মান্ডির পাশাপাশি, মান্ডির বাইরেই বৈধভাবে বিক্রি করার বিকল্প রয়েছে। আজ ভারতে মান্ডিগুলির আধুনিকীকরণ তো হচ্ছেই, কৃষকদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ফসল কেনার এবং বিক্রি করার বিকল্পও দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টার লক্ষ্য হল, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি, দেশের কৃষকদের সমৃদ্ধি। যখন দেশের কৃষকরা সমৃদ্ধ হবেন, তখন দেশও সমৃদ্ধ হবে। আপনাদেরকে আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি কিভাবে আগে কৃষিক্ষেত্রকে ব্যবহার করা হত।

 

বন্ধুগণ,

 

আমাদের দেশে আগে ইথানলকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমদানি করা হত। অন্যদিকে, আমাদের দেশের আখ চাষীরা সমস্যার জর্জরিত ছিলেন। তাঁদের আখ ঠিকমতো, ঠিক দামে বিক্রি হচ্ছিল না। তাঁদের হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া ঠিক সময়ে পাচ্ছিলেন না। আমরা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে এই পরিস্থিতি বদলেছি। আমরা দেশের মধ্যেই ইথানল উৎপাদনকে উৎসাহ জুগিয়েছি। আগে দেশে চিনি উৎপন্ন হত, গুড় উৎপন্ন হত। কখনও চিনির দাম পড়ে গেলে কৃষকরা ঠিকমতো টাকা পেতেন না, আর চিনির দাম বেড়ে গেলে গ্রাহকদের সমস্যা হত। অর্থাৎ, এমন ব্যবস্থা ছিল যা আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। অন্যদিকে, আমাদের গাড়ি-স্কুটার চালানোর জন্য বিদেশ থেকে পেট্রোল আনা হত। এখন তার অনেকটা কাজ দেশে উৎপাদিত ইথানল দিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। এখন দেশে পেট্রোলের সঙ্গে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইথানল মেশানোর নীতি বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। আপনারা ভাবুন, এর মাধ্যমে দেশে কত বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। এর ফলে, আখ চাষীদের রোজগার তো বৃদ্ধি পাবেই, তাঁদের জন্য রোজগারের নতুন সুযোগও আসবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আজ যখন শিল্প জগতের অগ্রণী নেতাদের মাঝে এসেছি, তখন একথা মন খুলে বলব যে আমাদের দেশে কৃষিক্ষেত্রে যতটা বেসরকারি বিনিয়োগ করা উচিৎ ছিল, দুর্ভাগ্যবশত ততটা বিনিয়োগ হয়নি। কৃষির সম্ভাবনাকে বেসরকারি ক্ষেত্র ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। আমাদের দেশে হিমঘরের সমস্যা ছিল। বেসরকারি ক্ষেত্রের কোনও সাহায্য ছাড়াই সরবরাহ শৃঙ্খল তার অত্যন্ত সীমিত পরিধির মধ্যে কাজ করছিল। সারের জোগান প্রয়োজনের তুলনায় কম ছিল। আপনারাও দেখেছেন, ভারত কত কত সার আমদানি করত। আপনারাও জানেন। কৃষিক্ষেত্রের এ ধরনের অসংখ্য সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৪ সাল থেকে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। কিন্তু এতে আপনাদের আগ্রহ এবং আপনাদের বিনিয়োগ দুটোরই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি মনে করি, কৃষির সঙ্গে যুক্ত অনেক কোম্পানি ভালো কাজ করছে। কিন্তু এতটাই যথেষ্ট নয়। ফসল উৎপাদনকারী কৃষকদের, ফল-সব্জি উৎপাদনকারী কৃষকরা যত আধুনিক প্রযুক্তি, আধুনিক ব্যবসা এবং শিল্পের সুযোগ-সুবিধার সমর্থন পাবেন, তাঁদের প্রয়োজনগুলি দেখে আমরা যত বেশি বিনিয়োগ করব, ততটাই আমাদের দেশের কৃষকদের এবং সার্বিক ফসলের ক্ষতি কম হবে। ততটাই তাঁদের আয় বৃদ্ধি পাবে। আজ গ্রামীণ ক্ষেত্রে কৃষি-নির্ভর শিল্পের অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। আগে পূর্ববর্তী সরকারগুলির যে নীতিই থাকুক না কেন, বর্তমান সরকারের নীতিগুলি গ্রামীণ কৃষি-ভিত্তিক অর্থনীতি বিকশিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত অনুকূল। নীতি এবং ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে সরকার সম্পূর্ণরূপে কৃষকদের হিতে কাজ করার জন্য দায়বদ্ধ।

 

বন্ধুগণ,

 

কৃষির পাশে যখন পরিষেবা ক্ষেত্র দাঁড়াবে, উৎপাদন ক্ষেত্র দাঁড়াবে, সামাজিক ক্ষেত্র দাঁড়াবে, আমরা যখন পরস্পরের পরিপূরক হব, এই পরিপূরক হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যখন আমাদের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করব, তখন দেশের কৃষিও এগোবে, দেশও এগোবে। ফিকি-র মতো সংগঠনগুলিকে এক্ষেত্রে সেতুর কাজ করতে হবে। প্রেরণা জোগানোর কাজ করতে হবে। অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকে সরকার যে শক্তি প্রদান করেছে,  আপনারা সেই শক্তিকে গুণীতক হারে বাড়াতে পারেন। স্থানীয় মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলকে আরও ক্ষমতায়িত করে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতের ভূমিকাকে কিভাবে ব্যাপকতর করে তোলা যায়, এই স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। ভারতের কাছে বাজার আছে, মানবসম্পদও আছে, আর মিশন মোডে কাজ করার ক্ষমতাও আছে। অতিমারীর এই সঙ্কটকালে আমরা দেখেছি, আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়া ভারত প্রত্যেক পদক্ষেপে কিভাবে বিশ্ববাসীকে উপকৃত করছে। আমাদের ঔষধ নির্মাণ ক্ষেত্র কঠিন সময়েও বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়নি। এখন যখন ভারত ভ্যাক্সিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে, এই ভ্যাক্সিনের টীকাকরণের ফলে তখন ভারতের কোটি কোটি মানুষের জীবন তো সুরক্ষা কবচ পাবেই পাশাপাশি বিশ্বের অনেক দেশেও আশার সঞ্চার করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা সবাই একটি মন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত আর তা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমাদের দেশে বলা হয়েছে -

 

তন্মে মনঃ শিব সঙ্কল্প মস্তু!”

 

অর্থাৎ, আমার মন যেন উত্তম সঙ্কল্পসম্পন্ন হয়, এই ভাবনা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের লক্ষ্য, দেশের সঙ্কল্প, দেশের নীতিগুলি স্পষ্ট। পরিকাঠামো হোক কিংবা নীতি, সংস্কারের ক্ষেত্রে ভারতের ইচ্ছাশক্তি অত্যন্ত সুদৃঢ়। আমরা যে মহামারীরূপী স্পিড ব্রেকারের সম্মুখীন হয়েছিলাম, আমরা এখন তা পেরিয়ে এসেছি। এখন নতুন বিশ্বাস নিয়ে আমাদের সবাইকে আগের থেকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে। নতুন দশকে বিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ পরিবেশকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এখন এগিয়ে যেতে হবে। ২০২২ সালে দেশ তার স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করবে। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন যাত্রায় ফিকি-রও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফিকি-র শতবর্ষ পূর্তিরও বেশি দেরি নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আপনাদেরকে রাষ্ট্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজদের ভূমিকাকে আরও বিস্তারিত করতে হবে, আরও ব্যাপক করে তুলতে হবে। আপনাদের প্রচেষ্টা আত্মনির্ভর ভারতের অভিযানকে আরও গতি দেবে। আপনাদের প্রচেষ্টায় লোকালের জন্য ভোকালের মন্ত্র গোটা বিশ্বে পৌঁছবে। অবশেষে, আমি ডঃ সঙ্গীতা রেড্ডিকে সভানেত্রী রূপে একটি উজ্জ্বল কর্মকালের জন্য অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। পাশাপাশি, ভাই উদয়শঙ্করজিকে ভবিষ্যতের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সকলের মাঝে আসার সুযোগ পেয়েছি, সেজন্য আমি আপনাদের সকলের প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

 

ধন্যবাদ!

***

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1680314) Visitor Counter : 172