প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে স্মারক মুদ্রা প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 16 OCT 2020 2:42PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬ অক্টোবর, ২০২০

 

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজি, শ্রীমতী স্মৃতি ইরানিজি, শ্রী পুরুষোত্তম রুপালাজি,শ্রী কৌলাশ চৌধরিজি, শ্রীমতী দেবশ্রী চৌধুরিজি, ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিগণ, সভায় উপস্থিত অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

 

বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক শুভকামনা। সারা পৃথিবীতে যাঁরাই অপুষ্টি দূর করার জন্য লাগাতার কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের সবাইকেও আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

আমার ভারতের কৃষকবন্ধুরা - আমাদের অন্নদাতারা, আমাদের কৃষি বৈজ্ঞানিক, আমাদের অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মকর্তারা, তাঁদের সবাইকে নিয়ে দেশে অপুষ্টির বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমাদের একটি বড় মজবুত দুর্গ রয়েছে, মজবুত ভিত্তি রয়েছে। তাঁরা নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ভারতের অন্নভাণ্ডারকে ভরে রাখেন, তেমনই দূর-দুরান্তের গ্রামাঞ্চলে, অরণ্য প্রদেশে, দেশের সর্বত্র দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষের কাছে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সরকারকে সাহায্য করেন। এই সকল প্রচেষ্টার মাধ্যমেই ভারত করোনার এই সঙ্কট সময়েও অপুষ্টির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (এফএও)-এর জন্যও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিনআজ এই গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এতগুলি বছর ধরে এই সংগঠন ভারত সহ গোটা বিশ্বে এফএও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অনাহার মেটানো এবং পুষ্টি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। আজ যে ৭৫ টাকার বিশেষ মুদ্রা জারি করা হচ্ছে তা ভারতের ১৩০ কোটিরও বেশি জনগণের পক্ষ থেকে আপনাদের সেবা ভাবনার সম্মান স্মারকআমরা খুব খুশি যে, এফএও-র ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছে। এটা একটা বড় সাফল্য। আর ভারত অত্যন্ত আনন্দিত যে এক্ষেত্রেও ভারতের সহযোগিতা এবং ভারতের অংশীদারিত্ব অত্যন্ত ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। আমরা সবাই জানি, ডঃ বিনয় রঞ্জন সেন যখন এফএও-র ডায়রেক্টর জেনারেল ছিলেন, তখন তাঁর নেতৃত্বেই ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছিল। ডঃ সেন নিজের জীবনে আকাল এবং অনাহারের ব্যথা-যন্ত্রণা অনেক ঘনিষ্ঠভাবে অনুভব করেছিলেন। নীতি নির্ধারক হয়ে ওঠার পর তিনি যে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেছেন তা আজও গোটা বিশ্বে অনেকের কাজে লাগছে। তিনি যে বীজ বপন করেছিলেন, তার সেই যাত্রা আজ মহীরুহ হয়ে নোবেল পুরস্কারের আকাশ স্পর্শ করেছে

 

বন্ধুগণ,

 

এফএও বিগত দশকগুলিতে অপুষ্টির বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইকেও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছে। দেশে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে কয়েকটি বিভাগের মাধ্যমে যে বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টাগুলি হয়েছে, সেগুলির পরিধি সীমাবদ্ধ ছিল কিংবা বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডে ছড়িয়ে ছিল। আমরা জানি যে অল্প বয়সে গর্ভধারণ করা, শিক্ষার অপ্রতুলতা, জনমানসে সচেতনতার অভাব, পর্যাপ্ত পরিমাণে শুদ্ধ পানীয় জলের অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা - এরকম অনেক কারণে আমরা সেই কাঙ্খিত পরিণাম পাইনি যা অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এতদিনে পাওয়া উচিৎ ছিল। আমি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন এই তথ্যগুলি মাথায় রেখে গুজরাটে অনেক নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছিলাম। কোথায় সমস্যা, সাফল্য কেন আসছে না, আর সাফল্য কিভাবে পাওয়া যাবে - এই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার একটি দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আমি গুজরাট থেকে পেয়েছি। এই অভিজ্ঞতাগুলি নিয়ে ২০১৪ সালে যখন আমি দেশের সেবা করার সুযোগ পাই তখন অনেক কিছুই নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ পেয়েছি, চেষ্টাও চালিয়েছি।

 

আমরা সংহত দৃষ্টিকোণ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছি। সমস্তরকম শ্লথতা, দীর্ঘসূত্রিতা সমাপ্ত করার জন্য আমরা একটি বহুমুখী রণনীতি নিয়ে কাজ শুরু করেছি। একদিকে ন্যাশনাল নিউট্রিশন মিশন শুরু করি এবং অন্যদিকে সেই বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করি যেগুলি অপুষ্টি বৃদ্ধির কারণ ছিল। অনেক বড় স্তরে পরিবার এবং সমাজের ব্যবহারে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করি। স্বচ্ছ ভারত মিশনের মাধ্যমে ভারতে ১১ কোটিরও বেশি শৌচালয় নির্মাণ করা হয়। দূর-দুরান্তের এলাকাগুলিতে শৌচালয় নির্মাণের ফলে পরিচ্ছন্নতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনই সারা দেশে ডায়রিয়ার মতো অনেক রোগের প্রাদুর্ভাব হ্রাস পেয়েছে। এভাবে 'মিশন ইন্দ্রধনুষ'-এর মাধ্যমে গর্ভবতী মা ও শিশুদের টিকাকরণের পরিধিও দ্রুতগতিতে বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ভারতে প্রস্তুত রোটা ভাইরাসের মতো নতুন টিকাও যুক্ত করা হয়েছে। গর্ভাবস্থা এবং নবজাত শিশুর প্রথম ১ হাজার দিনের লালন-পালনকে মাথায় রেখে মা ও শিশু উভয়ের পুষ্টি এবং যত্নের জন্য একটি বড় অভিযান শুরু করা হয়েছে। জল জীবন মিশনের মাধ্যমে গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে নলের মাধ্যমে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

 

আজ দেশের গরীব বোন ও মেয়েদের এক টাকায় স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এই সকল প্রচেষ্টারই ফল হল দেশে প্রথমবার পড়াশোনার জন্য মেয়েদের গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও ছেলেদের তুলনায় বেশি হয়েছে। মেয়েদের বিবাহের সঠিক বয়স কী হওয়া উচিৎ এটা ঠিক করার জন্যও জরুরি আলোচনা চলছে। সারা দেশ থেকে সচেতন কন্যারা আমাকে এমন সব চিঠি পাঠাচ্ছেন, তাঁরা অনুরোধ জানাচ্ছেন যে দ্রুত যেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির রিপোর্ট এখনও পর্যন্ত কেন আসেনি। আমি সেইসব কন্যাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে অতি দ্রুত রিপোর্ট পেলেই সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে।

 

বন্ধুগণ,

 

অপুষ্টি থেকে দেশের গরীব মানুষদের মুক্তি দেওয়ার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু হয়েছে। এখন দেশে এমন সব ফসলকে উৎসাহ যোগানো হচ্ছে যেগুলির মধ্যে পুষ্টিকর উপাদান যেমন প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক এসবের পরিমাণ বেশি থাকে। মোটা আনাজ, জোয়ার, বাজরা, রাগি, কোডো, ঝাংগোরা, বার্‌রি, কোটকী - এরকম শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আর এই শস্যগুলি যেন মানুষ তাঁদের খাবারে যোগ করেন, সেজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমি আজ এফএও-কে বিশেষ ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাঁরা ২০২৩ সালকে 'আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ' ঘোষণা করার ভারতের প্রস্তাবকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন

 

বন্ধুগণ,

 

ভারত যখন আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রস্তাব রেখেছিল তখন তার পেছনে 'সর্বজন হিতায়, সর্বজন সুখায়' - এই ভাবনাটাই ছিল। জিরো বাজেটে সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের মন্ত্র ভারত বিশ্বের সমস্ত দেশে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। ২০২৩ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস’ ঘোষণা করার প্রস্তাবের পেছনেও আমাদের মনে সেই ভাবটাই রয়েছে। সেই ভাবনা নিয়ে আমরা এগিয়ে এসেছি। এর ফলে, শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীর দুটো বড় লাভ হবে। একটা হল পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহ বাড়বে, সেগুলির জোগানও বাড়বে। আর দ্বিতীয়ত, যাঁরা ক্ষুদ্র কৃষক তাঁদের জমি খুব কম থাকে। সেচের ব্যবস্থা তেমন থাকে না। বৃষ্টির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল থাকেন। এমন ছোট ছোট কৃষকদের খুব লাভ হবে। এই ছোট ও মাঝারি কৃষকদের অধিকাংশই তাঁদের জমিতে এই মোটা আনাজ উৎপাদন করেন। যেখানে জলের সমস্যা রয়েছে, জমি ততটা উর্বর নয়, সেখানেও এই মোটা আনাজের উৎপাদন কৃষকদের অনেক সাহায্য করে। অর্থাৎ, ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস’-এর প্রস্তাব পুষ্টি এবং ছোট কৃষকদের আয় উভয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতে পুষ্টি অভিযানকে উৎসাহ জোগানোর জন্য আজ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আজ গম এবং ধান সহ অনেক ফসলের ১৭টি নতুন বীজের বৈচিত্র্য দেশের কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রায়ই আমরা দেখি যে কিছু ফসলের সামান্য বৈচিত্র্য কোনও না কোন পুষ্টিকর উপাদান বা মাইক্রো-নিউট্রিয়েন্টের অভাব থাকে। এই ফসলগুলির ভালো প্রজাতি, বায়ো-ফর্টিফায়েড প্রজাতি এই ত্রুটিগুলি দূর করে দেয় এবং ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি করে। বিগত বছরগুলিতে দেশে এ ধরনের বৈচিত্র্যময় প্রজাতি, এ ধরনের বীজগুলি নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি সেজন্য আমাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বৈজ্ঞানিক, কৃষি বৈজ্ঞানিকদের অনেক শুভেচ্ছা জানাতে চাই। ২০১৪ সালের আগে যেখানে এ ধরনের মাত্র একটি বৈচিত্র্য কৃষকদের কাছে পৌঁছেছিল, সেখানে আজ ভিন্ন ভিন্ন ফসলের ৭০টি বায়ো-ফর্টিফায়েড ভ্যারাইটি কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এর মধ্যে কিছু বায়ো-ফর্টিফায়েড ভ্যারাইটি স্থানীয় এবং পারম্পরিক ফসলগুলির সাহায্যেই বিকশিত করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

বিগত কয়েক মাসে গোটা বিশ্বে করোনা সঙ্কটের ফলে ক্ষুধা ও অপুষ্টি নিয়ে অনেক ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বড় বড় বিশেষজ্ঞরা তাঁদের চিন্তা ব্যক্ত করেছেন যে কী হবে, কিভাবে হবে? এই চিন্তাগুলির মাঝে ভারত বিগত ৭-৮ মাস ধরে প্রায় ৮০ কোটি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছে। এই সময়ের মধ্যে ভারত প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার খাদ্যশস্য গরীবদের বিনামূল্যে বন্টন করেছে। আর আমার মনে আছে যখন এই অভিযান শুরু করা হয়েছিল, তখন একটি বিশেষ লক্ষ্য রাখা হয়েছিল যে চাল কিংবা গমের সঙ্গে বিনামূল্যে ডালও দেওয়া হবে!

 

গরীবদের প্রতি, খাদ্য সুরক্ষার প্রতি এটাই ভারত সরকারের দায়বদ্ধতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই বিষয় নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয়নি কিন্তু, আজ ভারত তার যত নাগরিককে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য সরবরাহ করছে, তা গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার মোট জনসংখ্যা থেকেও বেশি। কিন্তু অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের দু-একটি বড় প্রবণতা চোখের অন্তরালে থেকে যায়। খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ভারত যা করেছে, সেক্ষেত্রেও অনেকটা এমনই অদেখা থেকে গেছে। আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে। এখানে আমাদের যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন তাঁরা হয়তো বুঝতে পারবেন যে ভারত এই লক্ষ্যে কতটা সাফল্য পেয়েছে। আপনারা কি জানেন যে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের মাত্র ১১টি রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন চালু ছিল, আর এরপরই গোটা দেশে এই আইনটিকে কার্যকরীভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে?

 

আপনারা কি জানেন যে করোনার ফলে যেখানে গোটা বিশ্ব সংঘর্ষরত, সেখানে ভারতের কৃষকরা এ বছর বিগত বছরের খাদ্য উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন! আপনারা কি জানেন যে সরকার গম, ধান এবং ডালের সমস্ত ধরনের প্রজাতির খাদ্যশস্য কেনার সমস্ত পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে? আপনারা কি জানেন যে গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বিগত ছয় মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষি সরঞ্জাম রপ্তানিতে ৪০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে? আপনারা কি জানেন যে দেশের ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য 'এক দেশ এক রেশন কার্ড' ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে?

 

বন্ধুগণ,

 

আজ ভারতে নিরন্তর এমন সব সংস্কার করা হচ্ছে যা বিশ্ব খাদ্য সুরক্ষার প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতাকে তুলে ধরে। কৃষি এবং কৃষকদের ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে ভারতের গণখাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একের পর এক সংস্কার করা হচ্ছে। সম্প্রতি যে তিনটি বড় কৃষি সংস্কার হয়েছে, তা দেশের কৃষিক্ষেত্রের বিস্তারে, কৃষকদের আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বন্ধুগণ, আমাদের দেশে এপিএমসি নামক একটি ব্যবস্থা অনেক বছর ধরে চলছে। এই ব্যবস্থার একটি নিজস্ব পরিচয় আছে, নিজস্ব শক্তি আছে। বিগত ছয় বছরে দেশে কিছু কৃষি মাণ্ডির উন্নত পরিকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ২,৫০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই মাণ্ডিগুলিতে তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো উন্নত করার জন্যও কয়েকশ' কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এই মাণ্ডিগুলিকে ই-ন্যাম অর্থাৎ, ন্যাশনাল এগ্রিকালচার মার্কেটের সঙ্গেও যুক্ত করা হয়েছে। এপিএমসি আইনে যে সংশোধন করা হয়েছে তার লক্ষ্য এই এপিএমসি-কে অধিক প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা। কৃষকদের কৃষি বিনিয়োগের দেড়গুণ মূল্য যেন তাঁরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে পান, সেজন্যও অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

 

ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এবং সরকারি ক্রয়, দেশের খাদ্য সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য, ভালো ব্যবস্থাপনা চালু করার জন্য আমরা দায়বদ্ধ। নতুন বিকল্পের মাধ্যমে দেশের ছোট কৃষকরা মাণ্ডি পর্যন্ত পৌঁছতে না পারার ফলে যে সমস্যায় পড়তেন, দালালদের কাছে তাঁদের ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হতেন, এখন তাঁরা স্বয়ং বাজারে পৌঁছতে পারবেন। এর ফলে কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের দাম বেশি পাবেন। দালালদের হটিয়ে দেওয়ার ফলে কৃষকদের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনই সাধারণ ক্রেতাদেরও সাশ্রয় হবে। সকলেই লাভবান হবেন। শুধু তাই নয়, আমাদের যুব সম্প্রদায় অ্যাগ্রো-স্টার্ট-আপ রূপে কৃষকদের জন্য আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। এর জন্যও নতুন নতুন পথ খুলবে।

 

বন্ধুগণ,

 

ছোট কৃষকদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশনস অর্থাৎ, এফপিওগুলির একটি বড় নেটওয়ার্ক সারা দেশে গড়ে তোলা হচ্ছে। দেশে এমন ১০ হাজার কৃষি উৎপাদক সংঘ গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এই সংঘ বা সংগঠনগুলি ছোট কৃষকদের পক্ষ থেকে বাজারের সঙ্গে দরাদরি করতে পারবে। এই সংগঠনগুলি ছোট কৃষকদের জীবনকে এমনভাবে পরিবর্তিত করবে যেভাবে দুধ কিংবা চিনির ক্ষেত্রে সমবায় আন্দোলনের মাধ্যমে, গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে সফল পরিবর্তন এসেছে।

 

বন্ধুগণ,

 

ভারতে শস্যের অপচয় সর্বদাই একটি বড় সমস্যা। এখন যখন এসেনশিয়াল কমোডিটি অ্যাক্ট-এ সংশোধন করা হয়েছে, এই অপচয় নিশ্চিতভাবেই হ্রাস পাবে। এখন গ্রামে গ্রামে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি শিল্পপতিরাও লাভবান হবেন। এক্ষেত্রে আমাদের এফপিওগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সরকার সম্প্রতি ১ লক্ষ কোটি টাকার পরিকাঠামো তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিল থেকে এফপিওগুলিও গ্রামে গ্রামে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং মূল্য সংযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে নিতে পারবে।

 

বন্ধুগণ,

 

যে তৃতীয় আইনটি পাশ হয়েছে, সেটি কৃষকদের ফসলের দামে হ্রাস-বৃদ্ধি থেকে মুক্তি দেবে এবং কৃষির ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তিকে উৎসাহ যোগাবে। এর মাধ্যমে কৃষকদের সামনে অনেক বেশি বিকল্প থাকার পাশাপাশি, আইনগত দিক থেকেও তাঁদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখন কৃষকরা কোনও বেসরকারি এজেন্সি বা শিল্পোদ্যোগের সঙ্গে সমঝোতা করবেন, তখন ফসল বোনার আগেই উৎপাদিত ফসলের দাম ঠিক হয়ে যাবে। সেজন্য বীজ, সার, কৃষি সরঞ্জাম সমস্ত কিছু এই চুক্তিবদ্ধ সংস্থাই সরবরাহ করবে।

 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, যদি কৃষকরা কোনও কারণে চুক্তি উলঙ্ঘন করতে চান, তাহলে তাঁদেরকে কোনও জরিমানা দিতে হবে না। কিন্তু যদি কৃষকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনকারী সংস্থা চুক্তি ভাঙতে চায়, তাহলে তাদেরকে জরিমানা দিতে হবে। আর আমরা এদিকেও লক্ষ্য রেখেছি যে এই চুক্তি শুধুই উৎপাদিত ফসলের ওপর হবে। কৃষকের জমিতে কোনরকম দখলদারি বা সঙ্কট আসতে দেওয়া হবে না। অর্থাৎ এই সংস্কারের মাধ্যমে সবদিক থেকে কৃষকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যখন ভারতের কৃষকরা অধিক ক্ষমতায়িত হবেন, তাঁদের আয় বৃদ্ধি পাবে, তখন অপুষ্টির বিরুদ্ধে অভিযানও শক্তিশালী হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে ভারত এবং এফএও-র মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা এই অভিযানকে আরও গতিশীল করবে।

 

আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে এফএও-র ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের নিরন্তর উন্নতি হোক এবং বিশ্বের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম দেশ, বিশ্বের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম নাগরিকরা দৈনন্দিন জীবনের এই সঙ্কট থেকে মুক্তি লাভ করুন। এই কামনা নিয়ে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সঙ্কল্পকে পুনরুচ্চারণ করে আরেকবার অনেক অনেক শুভকামনা জানাই।

 

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

ধন্যবাদ!

 

 

CG/SB/DM


(Release ID: 1665290) Visitor Counter : 597