প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে “উত্তর প্রদেশ আত্মনির্ভর রোজগার অভিযান” উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 26 JUN 2020 4:12PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৬ জুন, ২০২০

বন্ধুগণ,
নমস্কার, আপনাদের সবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো। আমরা সকলেই নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছি। আমাদের সামাজিক জীবনেও নিজেদের গ্রামে, নিজেদের শহরে নানারকম কঠিন সমস্যা আসতে দেখেছি। এই যেমন গতকাল কী ভয়ানক বজ্রপাত হয়েছে। বিহারে, উত্তর প্রদেশে কত লোকের প্রাণ চলে গেছে! শুধু তাই নয়, কেউ ভাবেনি যে গোটা বিশ্বে সমগ্র মানবজাতির সামনে একসঙ্গে এত বড় বিপদ আসবে। একটি এমন বিপদ যেখানে মানুষ চাইলেও একে অপরকে সম্পূর্ণ সাহায্য করতে পারছেন না। এই সময়ে প্রত্যেকেই এই সমস্যায় ব্যতিব্যস্ত।
শিশু হোক কিংবা বৃদ্ধ, মহিলা কিংবা পুরুষ, দেশ ও বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তি এই বিপদের মুখোমুখি। ভবিষ্যতেও আমরা কবে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাবো তা কেউ জানে না। হ্যাঁ, এ থেকে বাঁচার একটি উপায় আমরা জানি। এই উপায় হলো দুই গজের দূরত্ব। আর মুখ ঢেকে রাখা। মাস্ক, ফেস কভার কিংবা গামছার ব্যবহার। যতদিন পর্যন্ত করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন না আসে, টীকা না আসে ততদিন আমাদের এই উপায়ের মাধ্যমেই এই রোগের প্রতিরোধ করে যেতে হবে। 
বন্ধুগণ,
আজ যখন আপনারা সবাই আমার সঙ্গে কথা বলছেন, আপনাদের চেহারায়, আপনাদের চোখে, খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই স্ক্রিনে আপনাদের সহজ আপনত্ব অনুভব করছি। এখানে এই অনুষ্ঠানে উত্তর প্রদেশের যশস্বী ও প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমান যোগী আদিত্যনাথ উপস্থিত আছেন, সরকারের মন্ত্রীরা আছেন, প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত বরিষ্ঠ আধিকারিকরা আছেন আর উত্তর প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন জেলার প্রতিনিধিত্ব করছেন এরকম অনেক বন্ধুরা রয়েছেন। 
পরিশ্রমের যে শক্তি রয়েছে তা আমরা সবাই অনুভর করেছি। পরিশ্রমের এই শক্তিকে ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযান শুরু করেছে। আজ এই শক্তি “আত্মনির্ভর উত্তর প্রদেশ রোজগার অভিযান”-কে প্রেরণা জুগিয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পটিকে যোগীজীর নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকার উৎকর্ষগত এবং পরিমাণগত উভয়ভাবেই বিস্তারিত করেছেন। 
উত্তরপ্রদেশ সরকার এই প্রকল্পের সঙ্গে অনেক নতুন প্রকল্প জুড়েছে, উপকৃতদের সংখ্যাও বাড়িয়ে এই প্রকল্পকে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত করেছে। আপনারা আগেও শুনেছেন আমি যে ডাবল ইঞ্জিনের কথা সব সময় বলি, এই প্রচেষ্টা সেই “আত্মনির্ভর উত্তর প্রদেশ রোজগার অভিযান” আমার এই বক্তব্যের প্রকৃত উদাহরণ। আজ আমার মনে সম্পূর্ণ বিশ্বাস গড়ে উঠেছে যে যোগীজীর নেতৃত্বে যেভাবে বিপর্যয়কে সুযোগে পরিবর্তিত করা হয়েছে, যেভাবে যোগীজী এবং তাঁর দল প্রাণপণে কাজ করে যাচ্ছেন দেশের অন্যান্য রাজ্যও এই প্রকল্প থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে, প্রত্যেকেই এর মাধ্যমে প্রেরণা পাবে। 
আমার আশা যে অন্যান্য রাজ্যও এই ধরণের মূল্য সংযোজিত প্রকল্প নিয়ে আসবে। আর আমি নিজে যেহেতু উত্তর প্রদেশের সাংসদ, যখন উত্তর প্রদেশে এধরণের ভালো কাজ হয় তখন আমি একটু বেশি আনন্দ পাই। কারণ আমার সংসদীয় এলাকার জনগণের প্রতি আমার দায়িত্ব রয়েছে। 
বন্ধুগণ,
সঙ্কটের সময়ে যাঁরা সাহস দেখান, ভাবনাচিন্তা করে পা ফেলেন তাঁরাই সাফল্য পান। আজ যখন গোটা বিশ্ব করোনার এতবড় সঙ্কটে বিপর্যস্ত, তখন উত্তর প্রদেশ যেরকম সাহস দেখিয়েছে, যে রকম ভাবনা চিন্তা করে পা ফেলেছে, যে সাফল্য পেয়েছে, যে ভাবে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, যে ভাবে পরিস্থিতি সামলেছে, আমি মন থেকে বলছি সত্যিই এটা অভূতপূর্ব, প্রশংসনীয় কাজ। 
সেজন্য আমি উত্তরপ্রদেশের ২৪ কোটি জনগণের প্রশংসা করছি, তাঁদের প্রণাম জানাচ্ছি। আপনারা যে কাজ করে দেখিয়েছেন তা গোটা বিশ্বের জন্য উদাহরণস্বরূপ। উত্তর প্রদেশের পরিসংখ্যান বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞদের চমকে দেওয়ার মতো অদ্ভুৎ ক্ষমতা রাখে। উত্তর প্রদেশের চিকিৎসকরা, চিকিৎসা কর্মীরা, সাফাই কর্মচারীরা, পুলিশ কর্মীরা, আশা কর্মীরা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা, ব্যাঙ্ক এবং ডাক ঘরের বন্ধুরা, পরিবহন বিভাগের বন্ধুরা, শ্রমিক বন্ধুরা প্রত্যেকে সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের অবদান রেখেছেন।
যোগীজী এবং তাঁর পুরো টিম জন প্রতিনিধি থেকে শুরু করে আধিকারিক ও কর্মচারীরা; আপনারা সকলে অসাধারণ কাজ করেছেন, প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। আপনারা সবাই মিলে উত্তর প্রদেশকে যে কঠিন পরিস্থিতি থেকে সামলেছেন, আগামী অনেক বছর ধরে উত্তর প্রদেশের প্রতিটি শিশু, প্রত্যেক পরিবার আপনাদের এই কৃতিত্বের কথা মনে রাখবে, দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখবে। 
বন্ধুগণ,
উত্তর প্রদেশের এই প্রচেষ্টা এবং সাফল্য এজন্যই বড়, কারণ, এটি এমন একটি রাজ্য যা আয়তনে ও জনসংখ্যায় বিশ্বের অনেক দেশ থেকেও বড়। এই সাফল্য উত্তর প্রদেশের জনগণ নিজেরাও অনুভব করছেন, কিন্তু আপনারা যদি পরিসংখ্যান শোনেন তাহলে অবাক হয়ে যাবেন! 
বন্ধুগণ, 
আমরা ইউরোপের চারটে বড় দেশকে যদি দেখি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেন; এই দেশগুলি ২০০/২৫০ বছর ধরে বিশ্বের সুপার পাওয়ার ছিল। আজও সারা পৃথিবীতে ওদের প্রভাব রয়েছে। আপনারা এই চারটি দেশের মোট জনসংখ্যাকে একসঙ্গে করেন তাহলে প্রায় ২৪ কোটি হয়। আর আমাদের পুরো উত্তর প্রদেশের জনসংখ্যা ২৪ কোটি। অর্থাৎ যত মানুষ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ইতালি এবং স্পেন এই চারটি দেশে থাকেন প্রায় ততজন মানুষ আমাদের উত্তর প্রদেশে থাকেন। কিন্তু করোনার ফলে এই চারটি দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১,৩০,০০০। সে জায়গায় আমাদের উত্তর প্রদেশে মারা গেছেন মাত্র ৬০০ জন। কোথায় ১,৩০,০০০ আর কোথায় ৬০০। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখের। কিন্তু আমাদের এটাও মানতে হবে এই চারটি দেশ মিলে তাদের দেশে রোগ প্রতিরোধের জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু তবুও মৃত্যুর সংখ্যা উত্তর প্রদেশের তুলনায় অনেক গুণ। এই দেশগুলি অত্যন্ত উন্নত এবং সম্পদশালী। তাদের সরকার সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে লড়াই করেছে, তবুও নিজেদের নাগরিকদের প্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে ততটা সাফল্য পায়নি। যে সাফল্য উত্তর প্রদেশ পেয়েছে! 
বন্ধুগণ, 
এই সময়ের আপনাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ আমেরিকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও হয়তো শুনেছেন। আমেরিকার সম্পদ ও সরঞ্জাম এবং আধুনিক প্রযুক্তির কোনো অভাব নেই। কিন্তু তবু আজ আমেরিকা করোনা সংক্রমণে পর্যুদস্ত। আপনারা এটাও মনে রাখবেন আমেরিকার জনসংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি। আর উত্তর প্রদেশে ২৪ কোটি। কিন্তু আমেরিকায় এখন পর্যন্ত ১,২৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে উত্তর প্রদেশে প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যুর কথা আগেই বলেছি। 
যোগীজীর নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশ সরকার সঠিক প্রস্তুতি না নিলে এতদিনে উত্তর প্রদেশেও আমেরিকার মতো বিধ্বংসলীলা আমাদের সর্বনাশ করে দিতো। আজ উত্তর প্রদেশের ৬০০-র জায়গায় ৮৫,০০০ মানুষের মৃত্যু হতে পারতো। কিন্তু যে পরিশ্রম উত্তর প্রদেশ সরকার করেছে আমরা বলতে পারি যে একপ্রকার ইতিমধ্যেই তারা ৮৫,০০০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে সফল হয়েছে। আজ যখন আমরা নিজেদের নাগরিকদের জীবন বাঁচাতে পারছি, তখন এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এর ফলে দেশের আত্মবিশ্বাস বাড়ছে, নাহলে একটা তেমন দিনও ছিলো যখন প্রয়াগ রাজে, কুম্ভ মেলায় এমন দৌড়ঝাপ হয়েছিল যে পদপিষ্ঠ হয়ে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, তখন এলাহাবাদের সাংসদ দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তৎকালীন সরকার মৃত্যুর সংখ্যা লুকাতে বেশি চেষ্টা করেছে, আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এখন উত্তর প্রদেশের মানুষের জীবন যেভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে তা অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক ঘটনা। 
বন্ধুগণ,
এক্ষেত্রেও আমাদের সর্বদা আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে। এই সাফল্য এমন সময় এসেছে যখন  ৩০/৩৫ লক্ষেও বেশি শ্রমিক বন্ধু, পরিযায়ী শ্রমিকরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে উত্তর প্রদেশে নিজেদের গ্রামে ফিরেছেন। কয়েকশো শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালিয়ে উত্তর প্রদেশ সরকার এই সঙ্কটগ্রস্থ  মানুষদের ফিরিয়ে এনেছে। অন্যান্য রাজ্য থেকে ফিরে আসা এই বন্ধুদের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু উত্তর প্রদেশ সরকার যেভাবে এই পরিস্থিতিকে সংবেদনশীলতার সঙ্গে সামলেছে তা রাজ্যকে একটি বড় সঙ্কট থেকে বের করে এনেছে। 
বন্ধুগণ, 
উত্তর প্রদেশে ২০১৭ সালের আগে যেভাবে প্রশাসন চলছিল, সরকার যেভাবে চলছিল, সেই পরিস্থিতিতে এই ধরণের সাফল্য কল্পনাও করা যায় না। পূর্ববর্তী সরকার থাকলে হাসপাতালের সংখ্যার বাহানা দেখিয়ে, শয্যার সংখ্যার বাহানা দেখিয়ে এই বিপদের সময়ে নানা টালবাহানা করতো। কিন্তু যোগীজী সে পথে হাঁটেন নি। তিনি ও তাঁর সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝেছে। তাঁরা অনুভব করেছেন যে এত বড় বড় দেশগুলির কী অবস্থা হয়েছে, তা দেখে তাঁরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করেছেন।
দ্রুত কোয়ারেন্টিন সেন্টার তৈরি করতে, আইসোলেশনের সমস্ত পরিষেবা গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাজ করে গেছে। যোগীজীর পিতাজীর স্বর্গবাস হয়েছে, পিতাজীর অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার পরিবর্তে তিনি করোনা থেকে উত্তর প্রদেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আপনাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। যে শ্রমিকরা বাইরে থেকে আসছিলেন, তাঁদের জন্য অত্যন্ত কম সময়ে প্রায় ৬০,০০০ গ্রামীণ পর্যবেক্ষণ সমিতি গঠন করেছেন। এই সমিতিগুলি গ্রামে গ্রামে কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা বিকশিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। মাত্র দুই-আড়াই মাসের মধ্যে উত্তর প্রদেশে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলিতে ১ লক্ষ শয্যা প্রস্তুত করেছেন। 
বন্ধুগণ,
লকডাউনের সময় গরীবরা যাতে ক্ষুধার্ত না থাকে তা সুনিশ্চিত করতে যোগী সরকার অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের সর্বত্র গ্রামে ফিরে আসা শ্রমিক বন্ধুদের দ্রুত গতিতে বিনামূল্যে রেশন পৌঁছনোর কাজ করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ কোটি গরীব মানুষের দৈনন্দিন আহার বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে তাঁরা কেউ খালি পেটে না ঘুমায়।
ইতিমধ্যেই উত্তর প্রদেশে গরীবদের ৪২ লক্ষ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। যাঁদের কাছে কোনো রেশন কার্ড ছিল না তাঁদের জন্যও উত্তর প্রদেশ সরকার সরকারি রেশনের দোকানের দরজাগুলি খুলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উত্তর প্রদেশের ৩ কোটি ২৫ লক্ষ গরীব মহিলার জনধন অ্যাকাউন্টে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা সরাসরি পাঠানো হয়েছে। স্বাধীনতার পর ইতিহাসে সম্ভব কোনো সরকার এত বড় মাত্রায় গরীবদের সাহায্য করেনি।
বন্ধুগণ, 
ভারতকে আত্মনির্ভরতার পথে দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযান ছাড়াও গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযানের ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। গরীব কল্যাণ রোজগার অভিযানের মাধ্যমে শ্রমিকদের আয়ের উপায় বৃদ্ধির জন্য গ্রামে গ্রামে অনেক কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরীব গৃহহীনদের জন্য পাকা বাড়ি নির্মাণ, গণ শৌচালয় নির্মাণ, পঞ্চায়েত ভবন নির্মাণ, কুয়ো এবং পুকুর খনন, সড়ক নির্মাণ, ইন্টারনেটের লাইন পাতা এই ধরণের ২৫টি কাজের তালিকা কেন্দ্রীয় সরকার তৈরি করেছে।
আজ এই তালিকা অনুযায়ী কাজের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ভারত অভিযানে সামিল হয়ে উত্তর প্রদেশ সরাসরি প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষ শ্রমিক ও কারিগর বন্ধুদের কর্ম সংস্থানের চেষ্টা করেছে। এদের মধ্যে প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে গ্রামোন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন প্রকল্পে আর প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাধ্যমে কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া স্বরোজগারের জন্য হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ঋণের পাশাপাশি আজ হাজার হাজার হস্তশিল্পীদের আধুনিক মেশিন এবং টুল-কীট প্রদান করা হয়েছে। ফলে হস্ত শিল্পীদের কাজের পরিধি বাড়বে, তাঁদের পরিষেবাও বাড়বে। আমি সমস্ত উপকৃতদের কর্ম সংস্থান পাওয়া সমস্ত বন্ধুদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
উত্তর প্রদেশের সাংসদ হিসেবে আমি নিয়মিত যোগীজীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। ১ লক্ষ ২৫ হাজার কারিগরদের চিহ্নিত করা, ৩০ লক্ষেরও বেশি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার তথ্য সংকলন করা এবং তাদের কর্মসংস্থানের সমুচিত ব্যবস্থা করা থেকে প্রমাণ হয় যে উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রস্তুতি কত নিবিড় এবং ব্যাপক। উত্তর প্রদেশের “এক জনপদ, এক পণ্য প্রকল্প” আগে থেকেই স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যগুলিকে উৎসাহ যোগাচ্ছিল, তাঁদের জন্য একটি বড় বাজার তৈরি করে দিচ্ছিল। 
এখন আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে যখন গোটা দেশে এমন স্থানীয় পণ্যকে উৎসাহ জোগানোর জন্য শিল্পোদ্যোগীদের ক্লাস্টার গড়ে তোলা হচ্ছে, তখন উত্তর প্রদেশ অনেক বেশি লাভবান হবে। এর ফলে এই রাজ্যের বস্ত্র শিল্প, রেশম শিল্প, চর্ম শিল্প, পিতল শিল্প এরকম অনেক শিল্প – ক্লাস্টার আরও শক্তিশালী হবে, তারা নতুন বাজার পাবে।
বন্ধুগণ,
আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের মাধ্যমে উত্তর প্রদেশের কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হবেন, কৃষকদের হিতার্থে, ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের হিতার্থে কয়েক দশক ধরে তিনটি বড় সংস্কারের দাবি নিরন্তর শোনা যাচ্ছিল। এখন কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি নতুন কৃষি আইন এনেছে তার মাধ্যমে কৃষকরা মান্ডির বাইরেও নিজেদের উৎপাদিত ফসল বিক্রির অধিকার পেয়েছে। অর্থাৎ কৃষকরা এখন যেখানে বেশি দাম পাবে সেখানেই উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, এখন কৃষকরা চাইলে বীজ বপনের সময়ই নিজেদের ফসলের দাম ধার্য করতে পারবে। 
এখন আলু উৎপাদনকারী কৃষক চিপস্ উৎপাদনকারী শিল্পোদ্যোগের সঙ্গে, আম উৎপাদনকারী কৃষক ম্যাঙ্গ জুস উৎপাদনকালী শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে, টমেটো চাষীরা সস উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বীজ বপনের সময় থেকেই চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারে। ফলে তারা মূল্যবৃদ্ধি কিংবা হ্রাসের চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন। 
বন্ধুগণ, 
তাছাড়া আমাদের পশু পালকদের জন্য অনেক নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দুদিন আগেই পশুপালক এবং ডেয়ারি ক্ষেত্রের জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ পরিকাঠামো তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি নতুন কৃষক, পশুপালককে ডেয়ারি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হবে, ডেয়ারি সংশ্লিষ্ট নতুন পরিষেবাগুলি গড়ে তোলা হবে। অনুমান করা যায়, যে আগামী দিনে এর ফলে গ্রামগুলিতে প্রায় ৩৫ লক্ষ নতুন কর্ম সংস্থান হবে। গত পরশুই কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর প্রদেশে পর্যটন বৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। 
বৌদ্ধ সার্কিটের কথা মাথায় রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি হল কুশিনগর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে আর দেশ বিদেশ থেকে মহাত্মা বুদ্ধের ভক্ত, কোটি কোটি মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে এখন সহজেই উত্তর প্রদেশ আসতে পারবেন। এক্ষেত্রেও স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের কর্ম সংস্থান এবং স্বরোজগারের অনেক সুযোগ তৈরি হবে। আর পর্যটন ক্ষেত্রের একটি বৈশিষ্ট্য আপনারাও জানেন এই ক্ষেতে ন্যূনতম পুঁজির মাধ্যমেই অধিকতম রোজগার সম্ভব। 
বন্ধুগণ, 
উত্তরপ্রদেশ সর্বদাই ভারতের উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গ্রাম, গরীব এবং দেশকে ক্ষমতায়িত করার যে মিশন নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি তাতে উত্তর প্রদেশের অবদান বিজেপি সরকার আসার পর লাগাতার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত তিন/সাড়ে তিন বছরে প্রত্যের বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ দ্রুতগতিতে কাজ করেছে। শুধু তিন বছরেই উত্তর প্রদেশ গরীব গৃহহীনদের জন্য ৩০ লক্ষেরও বেশি পাকা বাড়ি বানিয়েছে। মাত্র তিন বছরের পরিশ্রমে উত্তর প্রদেশ নিজেকে উম্মুক্ত স্থানে শৌচকর্ম থেকে মুক্ত করেছে। মাত্র ৩ বছরে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে উত্তর প্রদেশ ৩ লক্ষেরও বেশি নব যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি দিয়েছে। মাত্র ৩ বছরের প্রচেষ্টাতেই উত্তর প্রদেশে মায়েদের মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ কমেছে।
বন্ধুগণ,
অনেক বছর ধরে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলে এনসেফেলাইটিস মহামারীর মতো অনেক প্রাণ হরণ করতো, এই রোগে অনেক নবজাত শিশুর মৃত্যু হতো। এখন উত্তর প্রদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, মৃত্যুর হারও ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া মেডিকেল কলেজ হোক কিংবা আয়ুষ্মান ভারত অভিযান-এর মাধ্যমে অন্যান্য পরিষেবা – সর্ব ক্ষেত্রেই উত্তর প্রদেশ প্রশংসনীয় কাজ করেছে। 
বিদ্যুৎ সরবরাহ, জল সরবরাহ, সড়ক নির্মাণের মতো বুনিয়াদি পরিষেবার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। নতুন নতুন সড়ক পথ এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আর সব থেকে বড় কথা হলো আজ উত্তর প্রদেশে শান্তি আছি, আইনের শাসন বজায় আছে। সেজন্য উত্তর প্রদেশের দিকে গোটা দুনিয়ার বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি রয়েছে। সরকার দেশি এবং বিদেশী বিনিয়োগকে আকর্ষণ করার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলিকে ব্যবহার করে উত্তর প্রদেশ লাভবান হচ্ছে। আর দেখুন আজও যখন অন্যান্য রাজ্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিমশিম খাচ্ছে উত্তর প্রদেশ তখন নিজেদের উন্নয়নের জন্য এত বড় প্রকল্প শুরু করে দিয়েছে। অন্যভাবে বলতে গেলে বিপর্যয় থেকে গড়ে ওঠা এই সুযোগকে উত্তর প্রদেশ বাস্তবায়িত করছে। আরেকবার আপনাদের সবাইকে কর্ম সংস্থানের এই সমস্ত সুযোগের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মনে রাখবেন, এখনও করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই জারি রয়েছে। কাজে অবশ্যই বেরোবেন, কিন্তু দুই গজের দূরত্ব, মুখে মাস্ক পরা এবং নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। জীবন এবং জীবিকা উভয়ের নিরাপত্তার জন্য এই লড়াই উত্তর প্রদেশ জিতবে এবং ভারতও জিতবে। 
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

 

CG/SB/SKD


(Release ID: 1655527) Visitor Counter : 244