প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রেভারেন্ট ডাঃ জোসেফ মার থোমা মেট্রোপলিটানের ৯০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 27 JUN 2020 11:58AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লী, ২৭ জুন, ২০২০

 



    শ্রদ্ধেও জোসেফ মার থোমা মেট্রোপলিটান, রেভারেন্ট ফাদারস এবং মার থমা চার্চের বিশিষ্ট সদস্যবৃন্দ, এই বিশাল সমাবেশে সম্বোধন করতে পারা আমার কাছে সৌভাগ্যের বিষয়। আমরা শ্রদ্ধেয় ডাঃ জোসেফ মার থোমা মেট্রোপলিটানের ৯০ তম জন্মদিনের বিশেষ অনুষ্ঠান উদযাপন করতে সমবেত হয়েছি। আমি তাঁকে অভিনন্দন জানাই এবং তাঁর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থের কামনা করি। ডাঃ জোসেফ মার থোমা আমাদের সমাজ ও জাতির উন্নতির জন্য তাঁর জীবন উসর্গ করেছেন। তিনি দারিদ্র দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়ণের বিষয়ে সবচেয়ে বেশী আগ্রহী ছিলেন।

 


    বন্ধুগণ,


    মার থোমা চার্চ প্রভু যীশুর প্রেরিত সেন্ট থমাসের মহৎ আদর্শের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। ভারত সর্বদায় বিভিন্ন উৎস থেকে আধ্যাত্বিক শক্তির জন্য উন্মুক্ত। সেন্ট থমাস এবং তাঁর অনুসরণকারীদের অবদান ভারতীয় খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেন্ট থমাসের নম্রতার পথ অনুসরণ করি। তিনি যথাযথভাবেই বলেছিলেন, “নম্রতাই হল সবচেয়ে ভালো গুন, সর্বদা ভালো কাজে ফলপ্রসূ হয়।” মার থোমা চার্চের এই নম্রতাবোধের চেতনা আমাদের সুধী ভারতবাসীর জীবনে ইতিবাচক পরির্তন নিয়ে এসেছে। তারা স্বাস্থ্য সেবা এবং শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে কাজ করেছে। সেন্ট থমাসের অসীম জ্ঞান ছিল। মার থোমা চার্চ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং জাতীয় সংহতি রক্ষার কাজে সামনের সারিতে ছিল।


    এই চার্চ জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে ভারতীয় মূল্যবোধগুলি মার থোমা চার্চে শিকড়ে রয়েছে। এই চার্চের অবদান জাতীয় পর্যায়েও স্বীকৃত হয়েছে। মার থোমা চার্চের প্রাক্তন মেট্রোপলিটান ফিলিপোস মার ক্রিসোস্টমকে ২০১৮ সালে পদ্মভূষণ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছিল। তিনি বহু মানুষেরই অনুপ্রেরণা স্বরুপ।

 


    বন্ধুগণ,


    বিশ্ব এই মহামারীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালাচ্ছে। কোভিড-১৯ কেবল একটি শরীরের রোগ নয় মানুষের জীবনের ভয়ের কারণ স্বরুপ। এটি আমাদের অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিশ্বব্যাপী মহামারীর অর্থ মানবতার সম্পূর্ণ আরোগ্যের প্রয়োজন। আসুন আমরা পৃথিবীতে সম্প্রীতি ও সুখকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি।

 


    বন্ধুগণ,


    আপনারা জেনে খুশি হবেন যে ভারত আমাদের করোনা যোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে কোভিড-১৯এর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই চালাচ্ছে। এই বছরের শুরুর দিকে, কেউ কেউ ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে ভারতে ভাইরাসের প্রভাব খুব মারাত্মক হবে। তবে সরকারের লকডাউন এবং বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের লড়াইয়ের কারণে ভারত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ভারতে চিকিৎসার পরে সুস্থতার হার বেড়েছে।


    কোভিড বা অন্যকোন কারণে প্রাণহানীর ঘটনা দূর্ভাগ্যজনক। তবে কোভিডের কারণে ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে কম মৃত্যু হয়েছে। এক্ষেত্রে ইতালিতে মৃত্যুর হার প্রতি ১০ লক্ষে ৫৭৪ জন। আমেরিকা, ব্রিটেন, স্পেন, ফ্রান্সের মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভারতের চেয়ে অনেক বেশি। কয়েক লক্ষ গ্রামে ৮৫ কোটি মানুষ এখনও করোনা ভাইরাসের দ্বারা সংক্রমিত হননি।

 


    বন্ধুগণ,


    জনগণের দ্বারা পরিচালিত এই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ফলে এখনও পর্যন্ত ভালো ফল মিলেছে, তবে আমরা কি সাবধানতা হ্রাস করতে পারি? না। কোনোভাবেই না। আসলে আমাদের এখনও আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব, ২ গজের দূরত্ব মেনে চলতে হবে। জনবহুল স্থানগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়াকে গুরুত্ব দিতে হবে।


    এছাড়াও আমাদের ১৩০ কোটি ভারতীয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের চাকায় গতি আনতে হবে। কৃষিক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে হবে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারত সরকার অর্থনীতি সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সমুদ্র থেকে মহাকাশ, কৃষি থেকে শুরু কলকারখানা সব ক্ষেত্রেই মানুষের স্বার্থে এবং উন্নতির লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


    ‘আত্মনির্ভর ভারত’, আত্মনির্ভরশীল ভারত গঠনের যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাতে প্রত্যেক ভারতীয়ের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে এবং সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করবে। একমাস আগে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ‘প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা’র অনুমোদন দেয়। এই প্রকল্পটি আমাদের মৎস্য চাষ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে চলেছে। ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন করা হবে। এর মূল লক্ষ্যই হল রপ্তানী ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি এবং ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। আমরা উন্নত প্রযুক্তি, পরিকাঠামো এবং সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। আমি নিশ্চিত যে কেরালায় আমার মৎস্য চাষী ভাইবোনেরা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।

 


    বন্ধুগণ,


    মহাকাশ ক্ষেত্রে সংস্কার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সংস্কারগুলির মাধ্যমে মহাকাশে কার্যক্ষেত্রে বৃহত্তর ব্যবহার সুনিশ্চিত করবে। তথ্য ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। আমি দেখেছি যে কেরালার অনেক তরুণ যুবক-যুবতী এবং বিশেষত দক্ষিণ ভারতের অনেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গভীরভাবে আগ্রহী। তারা এই সংস্কার থেকে উপকৃত হবেন।

 


    বন্ধুগণ,


    ভারতকে বিকাশের ইঞ্জিনে পরিণত করতে আমাদের সরকার সর্বদা সংবেদনশীলতা এবং দূরদর্শিতা নিয়ে কাজ করছে। আমরা এই সিদ্ধান্তগুলি দিল্লীর সরকারি দপ্তর থেকে নিয়নি। বরং দেশের তৃণমূল স্তরে মানুষের প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পরই নিয়েছি। প্রত্যেক ভারতবাসীর একটি করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সুবিধা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ৮ কোটিরও বেশি পরিবারকে ধোঁয়া মুক্ত রান্নাঘরের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য দেড় কোটিরও বেশি ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।


    ভারতে বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকল্পনা হল ‘আয়ুষ্মান ভারত’। ১ কোটিরও বেশি মানুষ গুণমান সম্পন্ন চিকিৎসা পেয়েছেন। দরিদ্রদের সহায়তার জন্য আমরা এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প নিয়ে আসছি। মধ্যবিত্তের জীবন সহজ করতে আমরা বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছি। কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করেছি এবং তারা যাতে ফসলের সঠিক দাম পান তা সুনিশ্চিত করেছি ও কৃষিক্ষত্রকে মধ্যস্ততাভোগীদের হাত থেকে মুক্ত করেছি।


    মহিলাদের জন্য একাধিক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। মাতৃত্বকালীন সময়ে ছুটির দিন বাড়ানোর মাধ্যমে তাঁদের কর্মজীবনের পথে কোনো আপোস করা হয়নি। বিশ্বাস, লিঙ্গ, বর্ণ, জাতি, ধর্মবিশ্বাস বা ভাষার মধ্যে সরকার কোনো বৈষম্য রাখেনি। আমাদের ১৩০ কোটি ভারতীয়ের ক্ষমতায়ণের ইচ্ছা রয়েছে। ভারতের সংবিধান আমাদের আলোর পথ দেখায়।

 


    বন্ধুগণ,


    পবিত্র বাইবেল একাত্মতার কথাই বলে। এখন পদক্ষেপে যোগদানের সময়, আসুন আমরা আমাদের জাতির অগ্রগতির জন্য একসঙ্গে কাজ করি। এটি বিবেচনা করুন- কিভাবে আমাদের কাজ জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে? আজ ভারত বলছে- আমরা স্থানীয়ভাবে পণ্য উপাদন করব এবং স্থানীয় পণ্যই কিনব। এটি অনেক ঘরে সমৃদ্ধির প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবে। আমাদের দেশকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। মার থোমা চার্চ তার মূল্যবোধগুলি বজায় রেখে অবশ্যই আরও ভালো কাজ করবে এবং আগামীদিনে ভারতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


    আবারও, আমি অত্যন্ত সম্মানিত রেভারেন্ট ডাঃ জোসেফ মার থোমা মেট্রোপলিটনের প্রতি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।


    সবাইকে ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ   




CG/SS/NS



(Release ID: 1634791) Visitor Counter : 207