প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
21 JUN 2020 7:48AM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২১ জুন, ২০২০
নমস্কার!!
ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা।
আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের এই দিনটি সংহতির দিন। এটি বিশ্ব বন্ধুত্বের বার্তাবাহী দিবস।
আমাদের যা যুক্ত করে, একত্রিত করে সেটাই হল যোগ। করোনার এই সঙ্কটের সময়ে সারা
পৃথিবীর মানুষ ‘মাই লাইফ মাই যোগা’ ভিডিও ব্লগিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন – এটা প্রমাণ করে যে যোগের প্রতি কতটা উৎসাহ বাড়ছে, কতটা ব্যাপক।
বন্ধুগণ,
এ বছর আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মূল ভাবনা হল ‘বাড়িতে যোগাভ্যাস এবং পরিবারের সঙ্গে যোগ’। আজ আমরা সমস্ত মিলিত কর্মসূচিকে দূরে সরিয়ে, বাড়ির মধ্যেই নিজের পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে যোগাভ্যাস করছি। যখন শিশু, প্রবীণ, যুবক, পরিবারের সকল সদস্য যোগের মাধ্যমে একত্রিত হন, তখন গোটা বাড়িতে একটা প্রাণশক্তির আবহ সঞ্চারিত হয়। সেজন্যই এবারের যোগ দিবসটি আবেগমথিত যোগের দিন। এটি আমাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়
করারও দিন।
বন্ধুগণ,
করোনা অতিমারীর ফলে আজ বিশ্বে আগের চাইতে যোগের প্রয়োজন অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে। যদি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার হয়, তবেই আমরা সমস্ত রোগকে হারাতে সক্ষম হব। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যোগের অনেক নিয়ম আছে, অনেক ধরনের আসন আছে। এই আসনগুলি এমন যেগুলি আমাদের শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে, আমাদের মেটাবলিজম (বিপাকতন্ত্র)-কে শক্তিশালী করে।
কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাস বিশেষ করে, আমাদের শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। আমাদের শ্বাসতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সবচাইতে বেশি সাহায্য করে প্রাণায়াম। অর্থাৎ, শ্বাস সংক্রান্ত যোগাসন। সাধারণত, অনুলোম-বিলোম প্রাণায়ামই বেশি জনপ্রিয়। এগুলি অত্যন্ত কার্যকরও।
3/8
কিন্তু প্রাণায়াম অনেক ধরনের রয়েছে। যেমন, শীতলী, কপালভাতি, ভ্রামরী, ভস্তৃকা – এরকম অসংখ্য প্রাণায়াম রয়েছে।
যোগের এই সমস্ত নিয়ম-কানুন, এই পদ্ধতিগুলি আমাদের শ্বাসতন্ত্রকে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সেজন্য আপনাদের প্রতি আমার বিশেষ অনুরোধ আপনারা অবশ্যই প্রাণায়ামকে নিজেদের দৈনন্দিন অভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং অনুলোম-বিলোমের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণায়াম কৌশলগুলি শিখুন, সেগুলিতে দক্ষতা অর্জন করুন। যোগের এই পদ্ধতিগুলি আজ বহু সংখ্যক কোভিড-১৯ রোগীকে দ্রুত সুস্থতার পথে নিয়ে গেছে। যোগের শক্তি হল, এগুলি রোগকে পরাজিত করতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বন্ধুগণ,
যোগ থেকে আমরা সেই আত্মবিশ্বাস ও মনোবল পাই, যেগুলির মাধ্যমে আমরা সঙ্কটের সঙ্গে লড়াই করতে পারি, জিততে পারি। যোগ থেকে আমরা মানসিক শান্তি পাই, সংযম এবং সহনশক্তিও পাই।
স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, “একজন আদর্শ ব্যক্তি তেমন মানুষ, যিনি একান্ত নির্জনেও সক্রিয় থাকেন এবং অত্যধিক গতিশীল অবস্থাতেও সম্পূর্ণ শান্তি অনুভব করেন।” যে কোন ব্যক্তির
4/8
ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় ক্ষমতা। যখন অত্যন্ত বিপরীত পরিস্থিতি থাকে তখনও সক্রিয় থাকা, ক্লান্ত হয়ে হার না মানা, ভারসাম্য বজায় রাখা - এই সমস্ত বিষয় যোগের মাধ্যমে আমাদের জীবনে স্থান করে নেয়, আমাদের জীবনকে শক্তি যোগায়। সেজন্য আপনারাও দেখেছেন, হয়তো অনুভব করেছেন, যোগ-সাধকরা কখনও সঙ্কটের সময় ধৈর্যচ্যুত হন না।
যোগের অর্থ হল – ‘সমত্বম যোগ উচ্চতে’ অর্থাৎ, অনুকূলতা-প্রতিকূলতা, সাফল্য-ব্যর্থতা, সুখ- সঙ্কট, প্রতিটি পরিস্থিতিতে একইরকম অবিচল থাকার নাম যোগ।
বন্ধুগণ,
যোগ আমাদের মনে একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহের জন্য অনুসন্ধানকে বাড়িয়ে তোলে। এটি ঐক্যের শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং মানবতার বন্ধনকে আরও গভীর করেছে। এটি কোন বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেয় না। এটি জাত-পাত, বর্ণ, লিঙ্গ, বিশ্বাস এবং জাতির সীমা অতিক্রম করে। যে কেউ যোগকে গ্রহণ করতে পারে। আপনার শুধু প্রয়োজন দিনের কিছুটা সময় এবং কিছুটা খোলা জায়গা। যোগ শুধু আমাদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে না, আমাদের মানসিক ভারসাম্য এবং আবেগের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে, যার ফলে আমরা প্রত্যয়ের সঙ্গে সমস্ত সঙ্কটের
মোকাবিলা করতে পারি।
বন্ধুগণ,
5/8
আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্য ও আশ্বাসের বাদ্যযন্ত্রের তারে সুরের ঝঙ্কার তুলতে পারি, তাহলে সেইদিন খুব বেশি দূরে নয় যখন বিশ্ব সুস্থ ও সুখী মানবতার সাফল্য অর্জন করবে। যোগব্যায়াম অবশ্যই আমাদের এটি অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে।
বন্ধুগণ,
যখন আমরা যোগের মাধ্যমে সমস্যাগুলি সমাধানের কথা বলছি, বিশ্ব কল্যাণের কথা বলছি, তখন আমি আপনাদের যোগেশ্বর কৃষ্ণের কর্মযোগের কথাও পুনঃস্মরণ করাতে চাই। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ যোগের ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় বলেছিলেন, “যোগঃ কর্মসু কৌশলম” অর্থাৎ, কর্মের দক্ষতাই হল যোগ। এই মন্ত্র আমাদের সবসময়েই এটাই শেখায় যে যোগের মাধ্যমে জীবনে অধিক যোগ্য হয়ে ওঠার ক্ষমতা অর্জন করতে পারি। আমরা যদি অনুশাসনের মাধ্যমে নিজেদের কাজ করতে পারি, নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারি তাহলে এটাও এক ধরনের যোগ।
বন্ধুগণ,
কর্মযোগের আরেকটি বিস্তার রয়েছে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে -
‘যুক্ত আহার বিহারস্য, যুক্ত চেষ্টস্য কর্মসু।
6/8
যুক্ত স্বপ্না - ওয় – বোধস্য, যোগো ভবতি দুঃখহা।।’
অর্থাৎ, সঠিক খাবার, সঠিক পদ্ধতিতে খেলাধূলা, সঠিক ঘুমের অভ্যাস এবং নিজের কাজ, সমস্ত দায়িত্ব-কর্তব্যগুলি সঠিকভাবে করাই হল যোগ।
এই কর্মযোগের মাধ্যমেই আমরা সমস্ত যন্ত্রণা এবং সমস্যার সমাধান পেতে পারি। শুধু তাই নয়, আমাদের শাস্ত্রে নিষ্কাম কর্মকে, কোনরকম স্বার্থ ছাড়াই সকলের উপকার করার ভাবনাকেও কর্মযোগ বলা হয়েছে। কর্মযোগের এই ভাবনা, ভারতের শিরায়-ধমনীতে প্রতিনিয়ত প্রবাহিত। যখনই প্রয়োজন হয়েছে, ভারতের এই নিঃস্বার্থ ভাবকে সমগ্র বিশ্ব অনুভব করেছে।
বন্ধুগণ,
যখন আমরা যোগ অনুসরণ করে চলি, কর্মযোগের ভাবনা নিয়ে চলি, তখন ব্যক্তি হিসেবে, সমাজ হিসেবে, দেশ হিসেবে আমাদের শক্তিও কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। আজ আমদের এই ভাবনা থেকে সঙ্কল্প নিতে হবে - আমাদের নিজের স্বাস্থ্যের জন্য, প্রিয়জনদের স্বাস্থ্যের জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করব। একজন সজাগ নাগরিক হিসেবে, আমরা পরিবার ও সমাজরূপে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাব।
7/8
আমরা ‘বাড়িতে যোগ ব্যায়াম এবং পরিবারের সকল সদস্যের সঙ্গে যোগ’কে আমাদের জীবনের অংশ করে তোলার চেষ্টা করব। আমরা অবশ্যই সফল হব। আমরা অবশ্যই জিতব, সেই বিশ্বাস নিয়ে, আপনাদের সকলকে আরেকবার যোগ দিবসের শুভেচ্ছা জানাই।
‘লোকাঃ সমস্তাঃ সুখীন ভবন্তু।।
ওম !!’
CG/SB/DM
(Release ID: 1633365)
Visitor Counter : 509
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam