প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

ভেসক-বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 07 MAY 2020 12:34PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ০৭ মে, ২০২০

 

 


নমস্কার!!!

আপনাদের সকলকে এবং সারা বিশ্বে ভগবান বুদ্ধের অনুগামীদের বুদ্ধ পূর্ণিমা ও ভেসক অনুষ্ঠানের অনেক অনেক শুভেচ্ছা!

এটা আমার সৌভাগ্য যে, পবিত্র এই দিবসে আপনাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হচ্ছে এবং আপনাদের সকলের কাছ থেকে আমি আশীর্বাদ চাইছি। এর আগেও আমি বহুবার এ ধরনের অনুষ্ঠানে সামিল হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমি ভেসক-বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন অনুষ্ঠানে ২০১৫ ও ২০১৮’তে দিল্লিতে এবং ২০১৭’তে কলম্বোতে আপনাদের সঙ্গে সামিল হয়েছি।

অবশ্য, এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই, আমরা মুখোমুখী দেখা করতে পারছি না।

বন্ধুগণ, ভগবান বুদ্ধ বলেছিলেন, ‘ধম্মা’ বা ধর্মের অস্তিত্ব মনে। মনই হ’ল সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। এখান থেকেই সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। আর এই মনই আপনার সঙ্গে আমার যোগসূত্র গড়ে তোলে। ঠিক এই কারণেই দৈহিক উপস্থিতির অস্তিত্ব এতটা অনুভূত হয় না। আপনাদের সঙ্গে উপস্থিত হতে পারা অত্যন্ত আনন্দের। কিন্তু এবার পরিস্থিতি মোটেও অনুকূল নয়।

ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথক পৃথক জায়গায় অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই আমি বলতে পারি, এই সুযোগ আমাদের কাছে যথেষ্ট সন্তোষজনক।

বন্ধুগণ, লকডাউনের জটিল এই পরিস্থিতিতে অনলাইনে ভেসক-বুদ্ধ পূর্ণিমা দিবস উদযাপনের জন্য আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সংগঠনগুলির প্রশংসা প্রাপ্য। আপনাদের সকলের অভিনব প্রচেষ্টার ফলেই সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ অনুগামী এই অনুষ্ঠানে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন।

লুম্বিনির পাশাপাশি, বৌদ্ধ গয়া, সারনাথ ও কুশিনগরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও, এই অনুষ্ঠান একযোগে আয়োজিত হচ্ছে শ্রীলঙ্কার শ্রী অনুরাধাপুরা স্তুপ এবং অনুপম কারুকার্যে সমৃদ্ধ ভাস্কাদুয়া মন্দিরে।

পূর্জার্চনা অনুষ্ঠানে অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার নিঃসন্দেহে এক দারুন অভিজ্ঞতা। বিশ্ব জুড়ে করোনা মহামারী মোকাবিলায় যাঁরা সম্মুখসমরে রয়েছেন, তাঁদের জন্য আপনারা এই অনুষ্ঠানকে সপ্তাহব্যাপী প্রার্থনা কর্মসূচি হিসাবে পালনের অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন। আপনাদের এই মহান প্রচেষ্টার জন্য আমি অভিনন্দন জানাই।

আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে, এ ধরনের সংগঠিত প্রয়াসের মাধ্যমে আমরা সমগ্র মানবজাতি বর্তমান জটিল পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারে সক্ষম হব এবং মানুষের সমস্যার নিরসন করতে পারবো। বন্ধুগণ, প্রত্যেকের জীবন থেকে সমস্যা দূর করার বার্তা ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে দিশা দেখিয়েছে। ভগবান বুদ্ধ ভারতের সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছেন।

ভগবান বুদ্ধ জ্ঞানালোক প্রাপ্তির পর, তাঁর বাণী ও আদর্শ দিয়ে বহু মানুষের জীবন সমৃদ্ধ করেছেন। তাই, ভগবান বুদ্ধের বার্তা কোনও একটি পরিস্থিতি বা বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

সিদ্ধার্থের জন্মের আগে ও পরে বহু শতাব্দী ধরে এবং সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধে পরিণত হওয়ার পর সময়ের চক্র বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিজের নিয়মেই ঘুরে চলছে।

সময় বদলেছে, পরিস্থিতি বদলেছে, সমাজ ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু ভগবান বুদ্ধের বাণী আমাদের জীবনকে নিরন্তর অনুপ্রাণিত করে চলছে। এটা সম্ভব হয়েছে, কেবল গৌতম বুদ্ধ নামের কারণেই নয়, বরং তাঁর মহান চিন্তাভাবনা, সমস্ত মানুষের হৃদয়ে তাঁর অনুরণন ও মানবজাতিকে সঠিক দিশা দেখানোর জন্যই। গৌতম বুদ্ধ আত্মত্যাগ ও প্রায়শ্চিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নন।

গৌতম বুদ্ধ সেবা ও নিষ্ঠার সমার্থক। এক প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রতীক হিসাবে বুদ্ধ সমাজ পরিবর্তনের ক্লাইম্যাক্স। বুদ্ধ এমন এক ব্যক্তিত্ব, যিনি তাঁর জীবন আত্মত্যাগ ও আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য উজার করে দিয়েছিলেন। তাই, আমাদের সকলের সৌভাগ্য যে, বর্তমান সময়ে আমরা এমন বহু মানুষকে দেখছি, যাঁরা হাসি মুখে অন্যের সেবা, রোগীর চিকিৎসা, দরিদ্র মানুষের ক্ষুধা নিবারণ, সড়কে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার মতো কাজে দিবারাত্রি যুক্ত রয়েছেন। ভারতে ও ভারতের বাইরে এরকম বা এ ধরনের প্রতিটি মানুষের অভিনন্দন ও সম্মানপ্রাপ্য। 

বন্ধুগণ, এমন এক সময় যখন, সারা বিশ্ব জুড়ে বিশৃঙ্খলা চলছে, বহু ক্ষেত্রে দুঃখ ও হতাশার ছবি দেখা যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় ভগবান বুদ্ধের বাণী আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ভগবান বুদ্ধ বলতেন, মানুষকে সর্বদাই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাই, ক্লান্ত হওয়া বা ক্লান্তি অনুভব করা অজুহাত হয়ে উঠতে পারে না। আজ আমরা সকলেই কঠিন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য একজোট হয়ে কাজ করছি।
ভগবান বুদ্ধ ক্ষমা ও করুণার যে বার্তা দিয়েছেন, তা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

আপনারা সকলে আজ দেখতে পারছেন, ভারত নিঃস্বার্থভাবে কোনও ভেদাভেদ ছাড়াই দেশে ও দেশের বাইরে দৃঢ়তার সঙ্গে অন্যদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

লাভ বা ক্ষতির বিষয় বিবেচনায় না রেখে সক্ষমতা ও অক্ষমতার বিষয়টিকে সরিয়ে সঙ্কটের এই মুহূর্তে আমাদের কর্তব্য হ’ল যতটা সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আর এই কারণেই বিশ্বের বহু দেশ কঠিন সময়ে ভারতের কথা স্মরণ করেছে। পক্ষান্তরে, ভারতও তাদের পাশে দাঁড়াতে পিছ পা হয়নি।

আজ ভারত প্রত্যেক ভারতীয়র জীবন বাঁচাতে সর্বাত্মক প্রয়াস নিচ্ছে। সেই সঙ্গে, বাধ্য-বাধকতাগুলিও সমান গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ করছে।

বন্ধুগণ, ভগবান বুদ্ধের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাণী মানবতার সেবায় ভারতকে উদ্বুদ্ধ হতে প্রেরণা যোগায়। ভগবান বুদ্ধ ভারতের কাছে জ্ঞানালোক এবং আত্মোপলব্ধির প্রতীক। এই আত্মোপলব্ধিকে সঙ্গে নিয়ে ভারত সমগ্র মানবজাতির সেবায় কাজ করছে এবং আগামীতেও করবে। ভারতের অগ্রগতি সর্বদাই বিশ্বের সমৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

বন্ধুগণ, আমাদের সাফল্যের ভবিষ্যৎ পাথেয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাবে। তবে, যে বিষয়টির কথা আমাদের সর্বদায় বিবেচনায় রাখতে হবে, তা হ’ল – আমাদের যাবতীয় কর্মকান্ড মানুষের সেবায় ব্রতী হওয়া প্রয়োজন। যখন অন্যের প্রতি আমাদের করুণা থাকবে, দয়া থাকবে এবং সেবার মনোবৃত্তি থাকবে, তখন আত্মোপলব্ধি আমাদেরকে আরও মজবুত করবে এবং পক্ষান্তরে তা যে কোনও সমস্যার সমাধানে সাহস যোগাবে।

আমরা যাঁরা সর্বদাই মানুষের সেবায় ব্রতী রয়েছি, তাঁরা প্রকৃতই ভগবান বুদ্ধের অনুগামী। এই মানসিকতাই আমাদের জীবনকে জ্ঞানালোকিত করে এবং এগিয়ে চলার পথ দেখায়।

এই কামনার সঙ্গে আমি আপনাদের সকলকে আরও একবার ধন্যবাদ জানাই। জটিল এই পরিস্থিতিতে আপনার নিজের প্রতি যত্ন নিন, পরিবারের যত্ন নিন এবং দেশের প্রতি যত্নবান হন। নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন এবং অন্যদেরকেও যথাসম্ভব সাহায্য করুন।

সকলের স্বাস্থ্য ভালো থাকুক – এই কামনা নিয়ে আমি ভাষণ শেষ করছি।

ধন্যবাদ!! সর্ব মঙ্গলম!!!




CG/BD/SB



(Release ID: 1621818) Visitor Counter : 293