প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
প্রধানমন্ত্রী আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে কথা বললেন
Posted On:
06 NOV 2025 1:28PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ৬ নভেম্বর, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গতকাল নতুন দিল্লির ৭ লোক কল্যাণ মার্গে আইসিসি মহিলাদের বিশ্বকাপ ২০২৫ চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে কথা বললেন। ভারতীয় দল রবিবার ২রা নভেম্বর ২০২৫-এ ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য দিন কারণ, এদিন পালিত হচ্ছে দেবদীপাবলি এবং গুরুপরব। তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভারতীয় দলের কোচ শ্রী অমল মুজুমদার বলেন, তাঁর সঙ্গে এই সাক্ষাৎ অত্যন্ত সম্মানের এবং গর্বের। তিনি দেশের কন্যাদের নেতৃত্বে এই অভিযানে খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রমের উল্লেখ করেন এবং গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে তাদের ব্যতিক্রমী নিষ্ঠার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মেয়েরা প্রতিটি অনুশীলনকালে উল্লেখযোগ্য আন্তরিকতা এবং প্রাণশক্তি নিয়ে খেলেছে এবং কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা তাদের ফললাভ নিশ্চিত করেছে।
অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর ২০১৭-তে কোনও ট্রফি ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মনে করিয়ে দেন এবং গত কয়েক বছরের পরিশ্রমে এখন সেই ট্রফি তার হাতে তুলে দিতে পেরে গভীর সম্মানিত বোধ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দিয়েছেন, এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তিনি আরও বলেন, তাঁদের লক্ষ্য, ভবিষ্যতেও তাঁর সঙ্গে দেখা করার এবং তাঁর সঙ্গে দলের ছবি তোলার।
শ্রী মোদী তাঁদের সাফল্যকে স্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, তাঁরা প্রকৃতই একটা মহান কিছু করে ফেলেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারতে ক্রিকেট শুধুমাত্র একটা খেলা নয়, এটা মানুষের জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তিনি দেখেছেন যে, যখন ভালো ক্রিকেট খেলা হয়, দেশ উত্তেজনায় টগবগ করে, সামান্যতম খারাপ খেলাতেই গোটা দেশ বিষন্ন হয়ে পড়ে। তিনি মনে করিয়ে দেন, টানা তিনটি হারের পরে কীভাবে দলকে ট্রোল করা হয়েছিল।
হরমনপ্রীত কৌর পুনরায় জানান, ২০১৭-য় ফাইনালে হারের পরে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁদের পরবর্তী সুযোগে তাঁদের সেরাটা দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। শেষপর্যন্ত ট্রফি জিততে পারায় এবং তাঁর সঙ্গে পুনরায় কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় খুশি প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী স্মৃতি মন্ধানাকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলেন। স্মৃতি মন্ধানা বলেন, ২০১৭-য় দল দেশে ট্রফি আনতে পারেনি। তবে, তার মনে আছে প্রধানমন্ত্রীকে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন প্রত্যাশা পূরণ করা যায় কীভাবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উত্তর তাঁর সঙ্গে থেকে গেছে এবং পরবর্তী ৬ থেকে ৭ বছর দলকে প্রভূত সাহায্য করেছে। বিশ্বকাপে একাধিক হৃদয় বিদারক পরাজয়ের পরেও তিনি বলেন, ভারত প্রথম মহিলা বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে সেটা তার কাছে মনে হয় অদৃষ্ট। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজ করেছেন বিশেষ করে যেভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের এখন দেখা যাচ্ছে – ইসরোর উৎক্ষেপণ থেকে অন্যান্য জাতীয় সাফল্যে - যাকে তিনি বর্ণনা করেন তাঁদের কাছে আরও ভালো খেলার জন্য এবং অন্যান্য মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে গভীর প্রেরণার কাজ করেছে। শ্রী মোদী বলেন, গোটা দেশ দেখছে এবং গর্ব অনুভব করছে এবং তিনি সত্যিই তাঁদের অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছেন। স্মৃতি মন্ধানা বলেন, এই অভিযানের সেরা অংশটি হল যে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ই বাড়ি ফিরে গিয়ে তাঁদের গল্প করতে পারবেন কারণ কারো অবদানই কিছু কম ছিল না। তিনি এও বলেন, প্রত্যাশাকে কীভাবে পূরণ করতে হয় সেই সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর পূর্বেকার পরামর্শ তাঁর মাথায় সবসময় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ঠান্ডা বিশিষ্ট আচরণ – এটাই অনুপ্রেরণার উৎস।
জেমাইমা রডরিগস তাঁর দলের কথা জানান, যখন তাঁরা তিনটি ম্যাচ হেরে যান তখন প্রমাণ হয়ে যায় কতবার জিতেছি সেটা বড় ব্যাপার নয়, হারের পর কীভাবে উঠে দাঁড়িয়েছি দলের কাছে সেটাই বড় কথা। তিনি জানান, তাঁর দল সেরাটি দিয়েছে সেই কারণে এটা একটি চ্যাম্পিয়ন দল। তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে যে একতা দেখা গেছে তা তিনি আরও কখনও দেখেননি। তিনি বলেন, যখনই কোনও খেলোয়াড় ভালো খেলেছে তখন প্রত্যেকেই তা উদযাপন করেছে যেন তারা নিজেরাই সেই রান করেছে বা উইকেট নিয়েছে। একইরকমভাবে যখনই কেউ ব্যর্থ হয়েছে তখন দলের কেউ না কেউ তাঁর কাঁধে হাত রেখে বলেছে, “ভেবো না পরের ম্যাচে পারবে”। তিনি আরও বলেন, এই একতা এবং সাহায্য করার মানসিকতা প্রকৃতই এই দলের আত্মা।
স্নেহ রানা, জেমাইমা রডরিগস-এর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, সাফল্যের সময় সকলে যেমন একজোট হয় তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ব্যর্থতার সময়ে একে অপরকে ভরসা দেওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দল হিসেবে তাঁরা স্থির করেছিলেন যাই ঘটুক না কেন তারা কখনই অন্যকে ছেড়ে যাবেন না, একে অপরকে সবসময় চাঙ্গা করে তুলবেন। তিনি পুনরায় জানান, এটাই তাদের দলের সেরা গুণ।
ক্রান্তি গৌড় আরও বলেন, হরমনপ্রীত কৌর সবসময় সকলকে হাসিমুখে থাকতে বলতেন। তিনি জানান, যদি কখনও কাউকে একটুও নার্ভাস মনে হতো দলের লক্ষ্যই ছিল হাসতে থাকা এবং একে অপরকে হাসতে দেখলে প্রত্যেকেই উৎফুল্ল এবং আত্মবিশ্বাসী থাকবে। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, দলে কেউ কি এমন ছিল যে হাসায় তাতে ক্রান্তি জানায়, জেমাইমা রডরিগস ওই কাজটাই করতো। জেমাইমা বলেন, হরলীন কৌর দেওল দলকে একজোট করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
হরলীন কৌর দেওল জানান তাঁর বিশ্বাস প্রত্যেক দলে এমন কারো থাকা উচিত যে সবসময় পরিবেশকে হালকা করতে পারে। তিনি বলেন, যখনই কেউ দেখতেন কেউ একা বসে আছে অথবা ভাবতেন তাঁর সময় ফাঁকা আছে তিনি ছোটখাটো উপায়ে সকলকে একজোট করতে চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, চারপাশের সব লোককে খুশি দেখলে তার আনন্দ হয়।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জিজ্ঞাসা করেন, পৌঁছোনোর পরে এই দল কিছু করেছিল কিনা। হরলীন কৌর দেওল হাসতে হাসতে জানান, বেশি চেঁচামেচি না করে তাঁকে চুপ করতে বলছিল অন্যরা। তিনি এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান তাঁর গায়ের চামড়া এত উজ্জ্বল কি করে। প্রধানমন্ত্রী শান্তভাবে বলেন, এব্যাপারে তিনি এত নজর দেন না। এইসময় এক খেয়োলাড় বলেন, কোটি কোটি ভারতবাসীর ভালোবাসায় তাঁকে এমন উজ্জ্বল দেখায়। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানান, বলেন, সমাজের এইরকম ভালোবাসা নিশ্চিতভাবে একটি বড় শক্তি। তিনি বলেন, তিনি সরকারের প্রধান হওয়া সহ ২৫ বছর সরকার পরিচালনা করেছেন এবং এত দীর্ঘদিন পরেও এই ধরনের আশীর্বাদের একটি দীর্ঘকালীন প্রভাব আছে।
কোচ নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং তার দলের বিভিন্ন ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানান। দু’বছর হেড কোচ হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা জানান। জুন মাসে ইংল্যান্ডের একটি ঘটনার কথা তিনি বিবৃত করেন। রাজা চার্লস-এর সঙ্গে তাঁরা দেখা করেছিলেন। প্রোটোকলের বিধি নিষেধের কারণে শুধুমাত্র ২০ জনকে অনুমতি দেওয়া হয় তাই সহায়ক কর্মীরা যোগ দিতে পারেননি। সব খেলোয়াড় এবং ৩জন কোচ শুধু উপস্থিত ছিলেন। তিনি সহায়ক কর্মীদের বলেন, তিনি অত্যন্ত দুঃখিত কারণ প্রোটোকল অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০ জনকেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর উত্তরে সহায়ক কর্মীরা বলেন, তাঁরা ওই ফটো চান না – তাঁরা ৪ অথবা ৫ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে একটি ফটো চান। আজ সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে।
হরমনপ্রীত কৌর বলেন, অনেক সময় মনে হয়েছে ব্যর্থতা তাদের গ্রাস করছে কিন্তু সেই লড়াই তাদের আরও মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে শক্তিশালী করেছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী হরমনপ্রীতকে জিজ্ঞাসা করেন, একথা বলার সময় তিনি কেমন অনুভব করছেন কারণ এটা সত্যিই খুব গভীরভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক। হরমনপ্রীত বলেন, একটা বিশ্বাস সবসময় ছিল যে, একদিন এই ট্রফি জিতবই এবং সেই ভাবনাটা ছিল দলের মধ্যে সেই প্রথম দিন থেকেই। প্রধানমন্ত্রী তাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করে বাধা সত্ত্বেও তাঁদের সাহস এবং অন্যদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করার প্রশংসা করেন। হরমনপ্রীত তাঁর দলের সকলকেই এরজন্য কৃতিত্ব দেন। তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিটি প্রতিযোগিতায় ক্রমান্বয়ে উন্নতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত দু’বছরে তারা মানসিক জোর বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দিয়েছিলেন। বুঝে গিয়েছিলেন, অতীতকে কখনও পরিবর্তন করা যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যাত্রা তাদের বর্তমানে থাকার শিক্ষা দিয়েছে। তিনি সহমত হন এবং বলেন, সেই কারণেই তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কীভাবে তিনি তাঁর সহকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করেন যাতে তারা বর্তমানে থাকার জন্য তাঁদের বিশ্বাসকে জোরদার করতে পারেন। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁদের কোচেদের কাছ থেকে পাওয়া দিশা নির্দেশ তাঁদের ঠিক পথে রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী এরপর দীপ্তি শর্মাকে তাঁর পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্টের ভূমিকা কীভাবে পালন করেন সেই সম্পর্কে জানতে চান। ঠাট্টার ছলে বলেন, তিনি নিশ্চয়ই সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে থাকেন। দীপ্তি জবাব দেন, তাঁরা শুধুমাত্র তারসঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং সময় উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি জানান, ২০১৭-য় প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছিলেন যে, একজন প্রকৃত খেলোয়াড় সেই যে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে উঠতে পারে এবং এগোতে পারে। দীপ্তি বলেন, শ্রী মোদীর কথা তাঁকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং তিনি নিয়মিত তাঁর ভাষণগুলো শোনেন। তিনি আরও বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে যখন অনেক কন্ঠস্বর সোচ্চার হয়ে ওঠে, তার ঠান্ডা মাথায় অবস্থা সামলানোর গুণটি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে তার খেলায় সাহায্য করে।
শ্রী মোদী দীপ্তিকে তাঁর হনুমানজি ট্যাটু সম্পর্কে এবং কীভাবে তা তাঁকে সাহায্য করে সেই সম্পর্কে জানতে চান। সে বলে, নিজের থেকেও হনুমানজিতে তাঁর বেশি বিশ্বাস, এবং যখনই কোনও বিপদের মুখোমুখি হন হনুমানজির নাম তাঁকে সেই বিপদ কাটাতে শক্তি দেয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘জয় শ্রী রাম’ লেখা আছে, দেখেছেন। দীপ্তি স্বীকার করে, প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনে বিশ্বাস একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সর্বশক্তিমানের কাছে আত্মসমর্পণ করলে একটা স্বাচ্ছন্দ্য আসে। এরপর তিনি মাঠে তাঁর ইতিবাচক আচরণের বিষয়ে জানতে চান, তাঁর আধিপত্ব্যের ভাবনার পিছনে সত্যটা জানতে চান। দীপ্তি বলেন, সেরকম কিছু নয়, তাঁর থ্রোগুলির সঙ্গে কিছুটা ভয়ও জুড়ে থাকে। সঙ্গী খেলোয়াড়রা প্রায়ই তাঁকে ঠাট্টা করে সহজ হতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী যে তাঁর ট্যাটু এবং ইন্সটাগ্রাম ট্যাগলাইন সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এতে দীপ্তি খুশি প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এরপর হরমনপ্রীত কৌরকে জেতার পর বলটা পকেটে ঢোকানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন – জানতে চান এটা কি আগে থেকেই পরিকল্পিত ছিল, না কেউ বলে দিয়েছিল। হরমনপ্রীত বলেন, এটা ঈশ্বরের পরিকল্পনা কারণ শেষ বল এবং ক্যাচটা যে তার কাছেই আসবে এটা তিনি আশা করেননি। কিন্তু যখন হলই তখন মনে হল এতদিনের অপেক্ষা এবং প্রয়াসের সমাপ্তি। এবং তিনি তাই সেটিকে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি জানান বলটা এখনও তার ব্যাগেই আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেফালি বার্মার দিকে তাকিয়ে বলেন, তাঁর জন্মস্থান রোহতাক তো বিখ্যাত কুস্তিগীর তৈরি করার জন্য। তবে, তিনি কি করে ক্রিকেটে এলেন, শেফালি জানালেন রোহতাকে কুস্তি এবং কবাডি অতি পরিচিত হলেও তাঁর বাবা তাঁকে ক্রিকেটার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন সে কি কখনও আখড়ায় খেলেছে, শেফালি জানায় না কখনও খেলেনি। তিনি বলেন, তাঁর বাবা ক্রিকেটার হতে চেয়েছিল কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই তিনি সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে এবং তার দাদা একসঙ্গে খেলা দেখতো তার থেকেই ক্রিকেট সম্পর্কে গভীর আগ্রহ জন্মায় এবং তাঁকে ক্রিকেটার হওয়ার দিকে এগিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জিজ্ঞেস করেন, একটা ক্যাচ নেওয়ার সময় তাঁকে হাসতে দেখেছিলেন তার কারণটা কী। তিনি জানান, তিনি মনে মনে চাইছিলেন, বলটা তার কাছে আসুক যখন সেটা এল তখন না হেসে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে এতই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে বল অন্য কোথাও যায়নি। সে বলে যদি অন্য কোথাও যেত তাহলে সে ডাইভ দিয়ে ধরতো।
বিশেষ মুহূর্তটিতে তাঁর মনে কি হচ্ছিল জানতে চাওয়ায় জেমাইমা রডরিগস বলেন, সেমি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা ছিল যে দলের কাছে ভারত অনেক সময় কম ব্যবধানে হেরেছে। তাঁর পুরো মনোযোগটা ছিল ম্যাচটি জেতার এবং শেষপর্যন্ত খেলার ওপর। সে জানায়, দল সবসময় বলেছিল খেলা ঘোরাতে একটা দীর্ঘ পার্টনারশিপের প্রয়োজন। এরজন্যই একটা দলবদ্ধ প্রয়াস দেখা গিয়েছিল। নিজে শতরান করলেও তিনি জয়ের কৃতিত্ব দেন হরমনপ্রীত কৌর, দীপ্তি, রিচা এবং আমনজোতের ওপর যাদের দারুণ ইনিংস এই জয় সম্ভব করেছে। তিনি জানান, দলের বিশ্বাস ছিল যে তাঁরা পারবেন এবং তাঁরা পেরেছেন।
ক্রান্তি গৌর জানান, বিশ্বকাপ জয় তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এবং তার গ্রামের মানুষের কাছে একটা গর্বের ব্যাপার। তিনি বলেন, যখনই তিনি বল করতেন হরমনপ্রীত কৌর বলতেন, তিনিই প্রথম উইকেটটা নেবেন, এতে তার মনোবল আরও বেড়ে যেত। তাঁর দাদা ক্রিকেট সম্পর্কে ভালোবাসা এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধার কথাও জানান। তাঁর দাদা অ্যাকাডেমিতে যোগ দিতে পারেনি বাবা চাকরি হারানোয়। তবে, টুকটাক খেলা চালিয়ে গেছে। তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ছেলেদের সঙ্গে টেনিস বল নিয়ে খেলতেন। তাঁর ক্রিকেট জীবন শুরু হয় স্থানীয় একটি প্রতিযোগিতায় এমএলএ ট্রফিতে। সেখানে একজন দলের ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে খেলতে নেওয়া হয়। লম্বা চুল থাকা সত্ত্বেও তাকে দলে নেওয়া হয় এবং প্রথম ম্যাচেই ২টো উইকেট নেন এবং ২৫ রান করে ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন। তখন থেকেই তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরু।
প্রধানমন্ত্রী জানান, শেফালি শেষ দুটো গেমে সুযোগ পেয়েছে। শেফালি জানায়, সে ডাক পাওয়ার আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছিল। প্রতীকার আহত হওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কোনও খেলোয়াড় চাইবে না অন্যের তা হোক কিন্তু যখন ডাক পড়লো তখন আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন। গোটা দল তার ওপর আস্থা রেখেছিল। যেকোনওভাবেই হোক দলের জয়ে সাহায্য করতে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।
প্রতীকা রাওয়াল বলেন, তিনি আহত হওয়ার পর দলের অনেকেই তাঁর জন্য বিশ্বকাপ জেতার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। যদিও তিনি ফাইনালে দলে ছিলেন না। তবু তাঁকে হুইল চেয়ারে মঞ্চে আনা হয় এবং পুরো সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি পুরো দলকে পরিবার হিসেবে বর্ণনা করেন যেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়কেই সমান চোখে দেখা হয়, যখন এইরকম একটি দল খেলে তখন তাদের পরাজিত করা মুশকিল হয়ে যায়। তিনি বলেন, ফাইনালে প্রকৃতই জেতার মতো দল ছিল। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানিয়ে বলেন, টিম স্পিরিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে মাঠে বা মাঠের বাইরে যেকোনও জায়গাতেই। তিনি বলেন, একসঙ্গে সময় কাটালে একটা বন্ধন তৈরি হয় এবং একে অপরের দুর্বলতা ও সামর্থ্য জানলে তা ঢাকা দেওয়ার এবং সাহায্য করার সুবিধা হয়।
শ্রী মোদী এরপর বলেন, একটা বিশেষ ক্যাচ অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। আমনজোত কৌর বলেন, যদিও তিনি এরকম অনেক ক্যাচ ধরেছেন, কোনওটাই এত বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি। দুতিন বারের চেষ্টায় ধরলেও ভালোই লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই ক্যাচটাই টার্নিং পয়েন্ট, এটা ধরার পর নিশ্চয় ট্রফি দেখা শুরু করেছিলেন। আমনজোত বলেন, এই ক্যাচটা ধরার পরই তিনি ট্রফি দেখতে শুরু করেন। যেভাবে অনেকে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে উল্লাস করছিল তাতে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান।
হরলীন কৌর দেওল জানান, ইংল্যান্ডে একটা দীর্ঘ সময় ধরে এধরনের ক্যাচ প্র্যাকটিস করতেন। ফিল্ডিং-এর সময় ক্যাচ মিস করলে হরমনপ্রীত কৌর বকাঝকা করে বলতেন ভালো ফিল্ডার কখনও এইরকম ক্যাচ ফেলে না। শ্রী মোদী হাল্কা সুরে বলেন, ওই চ্যালেঞ্জটাই কাজ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিচা ঘোষ যেখানেই খেলুক সবসময় মনে হয় জয় আসবেই। রিচা জানান এর আগে তিনি অনেকগুলো ট্রফি জিতেছেন। তিনি বলেন, ব্যাটিং করার সময় বিশেষ করে ৬ মারার সময় হরমনপ্রীত কৌর, স্মৃতি মন্ধানার মতো সহ খেলোয়াড়রা তাঁকে সাহস জোগাতো।
অন্য এক খেলোয়াড় রাধা যাদব বলেন, তিনটি ম্যাচ হারা সত্ত্বেও একতাই ছিল বড় কথা। প্রত্যেকেই একে অপরকে সমর্থন জুগিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি শুনেছেন, তাঁর জীবনের প্রথম পুরস্কারের টাকাটা তাঁর বাবাকে দিয়েছিলেন, রাধা স্বীকার করেন।
স্নেহ রানা কঠোর পরিশ্রমের দিনগুলির কথা জানান। বিশেষ বিশেষ ব্যাটারের জন্য কি রণকৌশল হবে সেই নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হতো বোলিং কোচ আবিষ্কার সালভির সঙ্গে।
উমা ছেত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরে তাঁর সুখময় অভিজ্ঞতার কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, মনে যা আসে তাই বলো। উমা বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। উত্তর-পূর্বের প্রথম মেয়ে হিসেবে ভারতের হয়ে উমা খেলছে বলে জানান কোচ। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, তিনি জানেন উমা আসামের মেয়ে।
রেণুকা সিং ঠাকুরের সঙ্গে কথাবার্তার সময় প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন এখানে পৌঁছে সে ময়ুর দেখেছে কিনা। প্রধানমন্ত্রী রেণুকার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি একা হাতে মেয়েকে গড়ে তুলেছেন।
অরুন্ধতী রেড্ডি প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর মায়ের পাঠানো বার্তা পড়ে শোনান। অরুন্ধতীর মা প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর হিরো বলে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, মাঠে এই সাফল্যের পর তাদের কাছে থেকে দেশ আর কি চাইতে পারে বলে মনে হয়। স্মৃতি জানান, তাঁরা জানতেন বিশ্বকাপ জিতলে ভারতে মেয়েদের ক্রিকেট এবং অন্য খেলায় বড় প্রভাব পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সাফল্য বড় অনুপ্রেরণার কাজ করবে। তিনি প্রত্যেককেই বলেন, বাড়ি ফিরে নিজেদের ছোটবেলার স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে। শ্রী মোদী আরও প্রস্তাব দেন, তিনটে স্কুল বেছে নিয়ে প্রতিবছর একটা করে স্কুলে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করতে।
প্রধানমন্ত্রী ফিট ইন্ডিয়া মুভমেন্টের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি খেলোয়াড়দের ফিট ইন্ডিয়ার জন্য সওয়াল করতে উৎসাহিত করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। তিনি বলেন, তিনি সবসময় তাঁদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করবেন, সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেন তিনি।
স্মৃতি মন্ধানা জানান, তাঁরা নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর কথা মনে রেখে সুযোগ পেলেই সেই বার্তা ছড়িয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন, গোটা দল এই বার্তাকে সহযোগিতা করতে সবসময় প্রস্তুত এবং যখনই ডাকা হবে তারা আসবে।
প্রধানমন্ত্রী সবশেষে বলেন, সকলে মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তিনি সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
SC / AP /AG
(Release ID: 2187053)
Visitor Counter : 5
Read this release in:
Malayalam
,
Khasi
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
हिन्दी
,
Assamese
,
Manipuri
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu