প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ভোপালে দেবী অহল্যাবাই মহিলা সশক্তিকরণ মহাসম্মেলনে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 31 MAY 2025 4:18PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩১শে মে, ২০২৫

 

মধ্যপ্রদেশের মাননীয় রাজ্যপাল, শ্রদ্ধেয় শ্রী মঙ্গুভাই প্যাটেল; আমাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী, শ্রদ্ধেয় শ্রী মোহন যাদব জি; প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে যুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ—ইন্দোর থেকে শ্রী তোখন সাহু জি, দাতিয়া থেকে শ্রী রাম মোহন নাইডু জি, সাতনা থেকে শ্রী মুরলীধর মোহল জি; রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রীদ্বয়, শ্রদ্ধেয় শ্রী জগদীশ দেবড়া জি এবং শ্রদ্ধেয় শ্রী রাজেন্দ্র শুক্লা জি; লোকসভায় আমার সহকর্মী, শ্রদ্ধেয় শ্রী ভি. ডি. শর্মা জি; অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ, গণ্যমান্য জননেতৃবৃন্দ এবং এখানে বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

সবার আগে আমি প্রণাম জানাই মা ভারতীকে, প্রণাম জানাই ভারতের মহীয়সী নারীদের। আজ এখানে এমন এক বিশাল সমাবেশে মায়েরা, বোনেরা ও কন্যারা আমাদের আশীর্বাদ দান করতে এসেছেন। আপনাদের সকলের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের এই সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে সত্যিই ধন্য মনে করছি।


ভাই ও বোনেরা,

আজ আমরা স্মরণ করছি লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই হোলকর-এর ৩০০তম জন্মজয়ন্তী। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর কাছে এটি এক ঐতিহাসিক প্রেরণার দিন—জাতি গঠনের এই মহাযজ্ঞে আমাদের প্রত্যেকের অবদান রাখার আহ্বান। দেবী অহল্যাবাই বলতেন—শাসনের প্রকৃত অর্থ হলো মানুষের সেবা করা এবং তাদের জীবনকে উন্নত করা। আজকের এই অনুষ্ঠান তাঁর সেই মহৎ দর্শনের ধারাবাহিকতা। আজ ইন্দোর মেট্রোর উদ্বোধন হলো, দাতিয়া ও সাতনা থেকে বিমান পরিষেবাও চালু হয়েছে। এসব প্রকল্প মধ্যপ্রদেশে আধুনিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে, উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং বহু নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই শুভক্ষণে আমি আপনাদের সবাইকে  আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

লোকমাতা দেবী অহল্যাবাই হোলকরের নাম উচ্চারণ করলেই হৃদয়ে এক গভীর শ্রদ্ধাবোধ জাগে। তাঁর মহিমাকে বর্ণনা করার জন্য শব্দ অপ্রতুল। দেবী অহল্যাবাই আমাদের শেখান—দৃঢ় সংকল্প থাকলে, প্রতিকূল সময়েও অসাধারণ কাজ সম্পন্ন করা যায়। আড়াই থেকে তিন শতাব্দী আগে, যখন আমাদের দেশ ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খলে, তখন তিনি এমন সব কাজ করেছিলেন, যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিস্ময়ে স্মরণ করে। আজ সেই অর্জনগুলো নিয়ে বলা সহজ, কিন্তু সেই সময়ে সেগুলো করে দেখানো কতটা কঠিন ছিল, তা আমরা কল্পনা করতে পারি।

বন্ধুগণ,

লোকমাতা অহল্যাবাই কখনও ঈশ্বরসেবা ও জনসেবাকে আলাদা করেননি। বলা হয়, তিনি সর্বদা সঙ্গে শিবলিঙ্গ বহন করতেন। অস্থির সময়ে রাজ্য পরিচালনা করা যেন কাঁটার মুকুট মাথায় ধারণ করা—এই দায়িত্ব কতটা কঠিন ছিল, তা আমরা অনুমান করতে পারি। তবুও লোকমাতা রাজ্যের উন্নয়নে এক নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন। দরিদ্রতম মানুষকেও শক্তি জোগাতে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আমাদের মন্দির, তীর্থক্ষেত্র ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যখন হুমকির মুখে, তখন তিনি এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি দেশজুড়ে অসংখ্য মন্দির ও তীর্থস্থান পুনর্নির্মাণ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরও। আজ আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি যে কাশীর সেবা করার সুযোগ আমার হয়েছে—সেই কাশী, যেখানে অহল্যাবাই দেবী উন্নয়নের অসংখ্য কাজ করেছিলেন। আজ কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে গেলে তাঁর ভাস্কর্যও দেখতে পাবেন।

বন্ধুগণ,

অহল্যাবাই দেবী এমন এক শাসনব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যেখানে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ ছিল অগ্রাধিকারে। কৃষি, বনভিত্তিক শিল্প ও হস্তশিল্পে তিনি উৎসাহ দিয়েছিলেন। কৃষকদের জন্য তিনি ছোট ছোট খালের জালিকা তৈরি করেছিলেন—তিন শতাব্দী আগেই তাঁর সেই দূরদৃষ্টি কল্পনা করুন! তিনি জল সংরক্ষণের জন্য অসংখ্য পুকুর তৈরি করেছিলেন। আজ আমরা বলি—“বর্ষার জল ধরো, প্রতিটি ফোঁটা বাঁচাও”—কিন্তু এই বার্তাই ২৫০–৩০০ বছর আগে দিয়ে গিয়েছিলেন দেবী অহল্যাবাই। কৃষকদের আয় বাড়াতে তিনি তুলা ও মশলার চাষকে উৎসাহিত করেছিলেন। আদিবাসী ও যাযাবর সমাজের জন্য অব্যবহৃত জমিকে চাষযোগ্য করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

তিনি মাহেশ্বরী শাড়ির মতো এক বিশ্বখ্যাত শিল্পের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। গুজরাতের জুনাগঢ থেকে কিছু পরিবারকে নিয়ে এসে তিনি তাদের একত্র করেছিলেন এবং মাহেশ্বরী শাড়ির বয়নদক্ষতা গড়ে তুলেছিলেন। সেই উত্তরাধিকার আজও আমাদের তন্তুবায়দের জীবিকা সমৃদ্ধ করছে।

বন্ধুগণ,

অহল্যাবাই দেবী তাঁর প্রগতিশীল সামাজিক সংস্কারের জন্য চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন। আজ আমরা যখন কন্যাদের বিবাহের ন্যূনতম বয়স বাড়ানোর কথা বলি, তখন কেউ কেউ আপত্তি তোলে। অথচ কয়েক শতাব্দী আগে অহল্যাবাই দেবী নিজেই কন্যাদের মর্যাদা ও বিকাশের কথা ভেবে এ নিয়ে ভাবছিলেন। তিনি নারীর সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, বিধবাদের পুনর্বিবাহকে সমর্থন করেছিলেন। সেই সময়ে এসব বলা তো দূরের কথা, কল্পনাই ছিল দুঃসাধ্য! অথচ তিনি দৃঢ়ভাবে এসব সংস্কারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এমনকি মালওয়া সেনায় নারীদের বিশেষ বাহিনীও সংগঠিত করেছিলেন। পশ্চিমী বিশ্ব যেখানে আজও আমাদের সমালোচনা করে, সেখানে আড়াই–তিন শতাব্দী আগে ভারতীয় নারীরা সেনায় যোগ দিয়েছিলেন।

তিনি গ্রামে ‘নারী সুরক্ষা টোলি’ গড়ে তুলেছিলেন—নারীর নিরাপত্তার জন্য। সত্যিই, মা অহল্যাবাই জাতি গঠনে নারীর অমূল্য ভূমিকার প্রতীক। আজ আমি তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় প্রণাম জানাই, তাঁর চরণে নত হই এবং প্রার্থনা করি—তিনি যেন সর্বদা আমাদের আশীর্বাদ করেন।

বন্ধুগণ,

অহল্যাবাই দেবীর একটি উক্তি আমাদের আজীবন অনুপ্রাণিত করবে—“যা কিছু আমরা পাই, তা জনতার ঋণ, এবং তা শোধ করা আমাদের কর্তব্য।” আজ আমাদের সরকার এই মন্ত্রেই চলেছে। “নাগরিক দেবো ভব”— নাগরিকই দেবতা—এটাই আমাদের শাসনের মূলমন্ত্র।

আজ মাতৃশক্তি আমাদের উন্নয়নযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু। সরকারি অধিকাংশ প্রকল্পেই মায়েরা, বোনেরা ও কন্যারা কেন্দ্রে আছেন। ৪ কোটি বাড়ি নির্মিত হয়েছে, যার অধিকাংশই আমাদের মায়েদের ও বোনেদের নামে। কোটি কোটি নারী জীবনে প্রথমবার স্বনামে বাড়ির মালিক হয়েছেন।

আজ প্রত্যেক পরিবারে নলকূপের জল পৌঁছানো হচ্ছে, যাতে আমাদের মা-বোনদের আর দূর থেকে জল আনতে না হয়, আমাদের কন্যারা পড়াশোনায় মন দিতে পারে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, শৌচাগার—যা একসময় বহু নারীর নাগালের বাইরে ছিল, আজ সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

আয়ুষ্মান ভারত যোজনার মাধ্যমে আজ নারীরা বিনামূল্যে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ১০ কোটি নারী আজ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত। লক্ষপতি দিদি তৈরির অঙ্গীকারে ইতিমধ্যেই দেড় কোটিরও বেশি বোন সেই মাইলফলক ছুঁয়েছেন। ড্রোন দিদি প্রকল্পে গ্রামীণ নারীরা কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ থেকে শুরু করে স্টার্টআপ জগৎ—নারীরা আজ সর্বত্র নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছেন। দেশের ৪৫% স্টার্টআপে অন্তত একজন নারী পরিচালক রয়েছেন।

বন্ধুগণ,

রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণেও নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম পাসের মাধ্যমে সংসদ ও বিধানসভায় নারীদের জন্য সংরক্ষণ বাস্তবায়িত হয়েছে। সত্যিই, আজকের ভারত নারীর হাতে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারত এক নতুন দায়িত্বের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে—আমাদের নিরাপত্তা, ক্ষমতা এবং সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নারীশক্তির অবদান অপরিসীম। লোকমাতা অহল্যাবাই থেকে রানি লক্ষ্মীবাই, রানি দুর্গাবতী, রানী কমলাপতি, রানী চেন্নাম্মা, রানি গায়দিনলিউ, ভেলু নাচিয়ার, সাবিত্রী ফুলে—প্রত্যেকেই আমাদের গর্বের প্রতীক। তাঁদের প্রেরণা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলি এক দৃঢ় ও শক্তিশালী ভারত গড়ার পথে।

এখন আসুন, আমরা সবাই একসঙ্গে ত্রিবর্ণ পতাকা তুলে ধরি এবং বলি—

ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!

বন্দে মাতরম্!
বন্দে মাতরম্!
বন্দে মাতরম্!

 


SC/TM


(Release ID: 2159881) Visitor Counter : 10