প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
নবকার মহামন্ত্র দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
09 APR 2025 12:22PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৯ এপ্রিল ২০২৫
জয় জিনেন্দ্র
মন শান্ত, মন স্থির। কেবল শান্তি, এক অপূর্ব অনুভূতি। শব্দেরও অতীত, চিন্তারও অতীত। নবকার मহামন্ত্র এখনো মন ও মস্তিষ্কে অনুরণিত হচ্ছে— “নমো অরিহন্তাণং॥ নমো সিদ্ধাণং॥ নমো আয়রিয়াণং॥ নমো উবজ্ঝায়াণং॥ নমো লোয় সব্বসাহূণং॥” এক সুর, এক প্রবাহ, এক শক্তি—না কোনো উত্থান, না কোনো পতন—শুধু স্থিরতা, শুধু সমভাব। ভেতরে ভেতরে এক চেতনা, এক তাল, এক আলোর অনুভূতি। আমি এই নবকার मহামন্ত্রের আধ্যাত্মিক শক্তি এখনো নিজের মধ্যে অনুভব করছি। কয়েক বছর আগে বেঙ্গালুরুতে এমনই এক মন্ত্রোচ্চারণের সাক্ষী হয়েছিলাম। আজও একই অভিজ্ঞতা হলো। এইবার দেশ-বিদেশে একসাথে, এক চেতনায় যুক্ত লক্ষ কোটি পূণ্যাত্মারা, একসাথে উচ্চারিত শব্দ, একসাথে জাগ্রত শক্তি—এ সত্যিই অভূতপূর্ব।
শ্রাবক-শ্রাবিকাগণ, ভাই ও বোনেরা,
আমার জন্মগৃহ গুজরাটে। যেখানে প্রতিটি গলিতেই জৈন ধর্মের প্রভাব দেখা যায় এবং ছোটবেলা থেকেই জৈন আচার্যদের সান্নিধ্য পেয়েছি।
সাথীরা,
নবকার मহামন্ত্র শুধু একটি মন্ত্র নয়, এটি আমাদের আস্থার কেন্দ্র। আমাদের জীবনের মূল সুর। এর গুরুত্ব শুধু আধ্যাত্মিক নয়, এটি আত্মা থেকে সমাজ সবাইকে দিশা দেখায়। জন থেকে জগত পর্যন্ত এক যাত্রা। এই মন্ত্রের প্রতিটি পদ নয়, প্রতিটি অক্ষরই নিজেই এক একটি মন্ত্র।
যখন আমরা নবকার मহামন্ত্র জপি, আমরা পঞ্চ পরমেষ্ঠীকে প্রণাম করি।
কে এই পঞ্চ পরমেষ্ঠী?
অরিহন্ত—যাঁরা শুধু জ্ঞান লাভ করেছেন, যাঁদের ১২টি দৈবিক গুণ রয়েছে।
সিদ্ধ—যাঁরা ৮টি কর্ম ক্ষয় করে মোক্ষ লাভ করেছেন, যাঁদের ৮টি শুদ্ধ গুণ রয়েছে।
আচার্য—যাঁরা মহাব্রত পালন করেন, পথপ্রদর্শক, ৩৬টি গুণে পরিপূর্ণ।
উপাধ্যায়—যাঁরা মোক্ষ-মার্গের জ্ঞানকে শিক্ষায় রূপ দেন, ২৫টি গুণ দ্বারা সমৃদ্ধ।
সাধু—যাঁরা তপের অগ্নিতে নিজেকে সঁপে দেন, মোক্ষলাভের পথে অগ্রসর হন, যাঁদের মধ্যেও রয়েছে ২৭টি মহান গুণ।
অতএব, যখন আমরা নবকার मহামন্ত্র জপি, আমরা ১০৮টি ঐশ্বরিক গুণকে প্রণাম করি। আমরা স্মরণ করি মানবতার কল্যাণ। এই মন্ত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জ্ঞান ও কর্মই জীবনের দিশা, গুরুই আলোক, আর পথ সেই, যা অন্তর থেকে উদ্ভাসিত হয়।
নবকার मহামন্ত্র আমাদের শেখায়—নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো, আত্মযাত্রা শুরু করো। শত্রু বাইরে নয়, শত্রু ভেতরে—নেতিবাচক চিন্তা, অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা—এগুলোই প্রকৃত শত্রু। এগুলো জয় করাই আসল বিজয়। এই কারণেই জৈন ধর্ম আমাদের বাহ্যিক বিশ্ব নয়, নিজেকে জয় করতে অনুপ্রেরণা দেয়।
সাথীরা,
নবকার मহামন্ত্র আসল অর্থে মানব ধ্যান, সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মন্ত্র।
এর এক আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিত আছে। ভারতীয় অন্যান্য শ্রুতি–স্মৃতি ঐতিহ্যের মতো, এই শাশ্বত মন্ত্রও প্রথমে শতাব্দীর পর শতাব্দী মৌখিকভাবে প্রচারিত হয়েছে, পরে শিলালিপির মাধ্যমে, আর তারপর প্রাকৃত পাণ্ডুলিপির মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছেছে এবং আজও আমাদের পথ দেখাচ্ছে।
নবকার मহামন্ত্র পঞ্চ পরমেষ্ঠী বন্দনার সঙ্গে সম্যক জ্ঞান, সম্যক দর্শন, সম্যক চরিত্র এবং সর্বোপরি মোক্ষের পথে পরিচালিত করে।
আমরা জানি, জীবনের ৯টি তত্ত্ব আছে। এই ৯ তত্ত্ব জীবনকে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে ৯-এর বিশেষ গুরুত্ব। জৈন ধর্মে নবকার मহামন্ত্র, ৯ তত্ত্ব, ৯ পূণ্য —অন্যত্র নবনিধি, নবদ্বার, নবগ্রহ, নবদুর্গা, নবধা ভক্তি —সব জায়গায় ৯-এর উপস্থিতি।
জপও ৯ বার, অথবা ২৭, ৫৪, ১০৮ বার, অর্থাৎ ৯-এর গুণিতকে। কেন? কারণ ৯ পূর্ণতার প্রতীক। ৯-এর পর সবকিছু পুনরাবৃত্ত হয়। ৯-কে যতবার গুণ করো, মূল উত্তর আবার ৯-ই হয়।
এটি শুধু গণিত নয়, এটি দর্শন। যখন আমরা পূর্ণতা অর্জন করি, তখন আমাদের মন ও মস্তিষ্ক স্থিরতার সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। নতুন কিছুর আকাঙ্ক্ষা থাকে না। অগ্রগতির পরও আমরা মূল থেকে বিচ্যুত হই না এবং এটিই নবকার मহামন্ত্রের সার।
সাথীরা,
নবকার মহামন্ত্রের এই দর্শন “বিকশিত ভারতের ভিশন”-এর সঙ্গেই যুক্ত। আমি লালকেল্লা থেকে বলেছি— বিকশিত ভারত মানে উন্নয়নও, ঐতিহ্যও! এমন এক ভারত, যে থেমে থাকবে না, যে রুখবে না, যে উচ্চতায় পৌঁছাবে কিন্তু নিজের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। বিকশিত ভারত তার সংস্কৃতির জন্যে গর্ব করবে। এই কারণেই আমরা আমাদের তীর্থঙ্করদের শিক্ষাগুলি সংরক্ষণ করে চলেছি। যখন ভগবান মহাবীরের ১৫৫০তম নির্বাণ মহোৎসবের সময় এল, তখন আমরা তা সারা দেশে উদযাপন করেছি। আজ যখন প্রাচীন মূর্তিগুলো বিদেশ থেকে ফিরে আসে, তখন সেগুলোর মধ্যে আমাদের তীর্থঙ্করদের প্রতিমাও ফিরে আসে। আপনাদের গর্ব হবে জেনে যে, গত কয়েক বছরে ২০টিরও বেশি তীর্থঙ্করের মূর্তি বিদেশ থেকে ফিরে এসেছে, যেগুলি একসময় চুরি হয়ে গিয়েছিল।
সাথীরা,
ভারতের পরিচিতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জৈন ধর্মের অবদান অমূল্য। আমরা এর সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি জানি না, আপনাদের মধ্যে কতজন নতুন সংসদ ভবন দেখতে গিয়েছেন। গিয়েও থাকলে খেয়াল করে দেখেছেন কি না, জানি না। নতুন সংসদ ভবনকে গণতন্ত্রের মন্দির বলা হয়। সেখানে জৈন ধর্মের প্রভাব সুস্পষ্ট। যেমন— শার্দূল দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে স্থাপত্য গ্যালারিতে সম্মেদ শিখর দেখা যায়। লোকসভার প্রবেশমুখে তীর্থঙ্করের মূর্তি আছে, যা অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সংবিধান প্রদর্শনী ঘরের ছাদে ভগবান মহাবীরের অনন্য চিত্রকলা আছে। দক্ষিণ ভবনের প্রাচীরে একসঙ্গে ২৪ জন তীর্থঙ্করের চিত্র রয়েছে। কিছু দর্শন দেরিতে প্রাণ পায়, কিন্তু একবার পেলে দৃঢ়ভাবে পথ দেখায়। জৈন দর্শন আমাদের গণতন্ত্রকে সম্যক্ পথ দেখায়। জৈন ধর্মের সংজ্ঞাগুলি প্রাচীন আগম গ্রন্থে সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ আছে, যেমন— “বস্তুর স্বভাবই ধর্ম”, “আচরণই ধর্ম”, “জীবের রক্ষা ধর্ম”। এই আদর্শগুলির আলোকে আমাদের সরকারও “সবকা সাথ–সবকা বিকাশ” মন্ত্রে অগ্রসর হচ্ছে।
সাথীরা,
জৈন ধর্মের সাহিত্য ভারতের বৌদ্ধিক ঐশ্বর্যের মেরুদণ্ড। এই জ্ঞান সংরক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য। তাই আমরা প্রাকৃত ও পালি ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। এর ফলে জৈন সাহিত্য নিয়ে আরও গবেষণা সম্ভব হবে।
এবং সাথীরা,
ভাষা বাঁচলে তবেই জ্ঞান বাঁচবে। ভাষা বৃদ্ধি পেলে তবেই জ্ঞানের বিস্তার হবে। আপনারা জানেন, আমাদের দেশে শত শত বছর পুরনো জৈন পাণ্ডুলিপি রয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠাই ইতিহাসের আয়না, জ্ঞানের সাগর। যেমন বলা হয়েছে—
“সমতা-ই ধর্ম”
“যে জ্ঞানকে ভুলভাবে ব্যবহার করে, সে নষ্ট হয়ে যায়”
“যে কামনা ও ক্রোধকে জয় করে, সেও সত্য মুনি”
কিন্তু সাথীরা,
দুর্ভাগ্যজনকভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল। তাই আমরা “জ্ঞান ভারতম মিশন” শুরু করতে যাচ্ছি। এ বছরের বাজেটে এর ঘোষণা করা হয়েছে। এর আওতায় দেশের কোটি কোটি পাণ্ডুলিপির গণনার প্রস্তুতি চলছে। প্রাচীন ঐতিহ্যগুলিকে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করে আমরা প্রাচীনতাকে আধুনিকতার সঙ্গে যুক্ত করব। এ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা।
সাথীরা,
এই মিশন আমাদের কাছে এক “অমৃত সংকল্প”। নতুন ভারত এআই থেকে সম্ভাবনা খুঁজবে এবং আধ্যাত্ম দিয়ে বিশ্বকে পথ দেখাবে।
সাথীরা,
যতটা আমি জৈন ধর্মকে বুঝেছি, দেখেছি— জৈন ধর্ম ততটাই বৈজ্ঞানিক, আবার ততটাই সংবেদনশীল। আজকের বিশ্ব যে সংকটে জর্জরিত— যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ বা পরিবেশের সমস্যা— তার সমাধান জৈন ধর্মের মৌলিক নীতিগুলির মধ্যেই নিহিত। জৈন পরম্পরার প্রতীকচিহ্নে লেখা আছে— “পরস্পরোগ্রহো জীবানাম” অর্থাৎ বিশ্বের সব জীব একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। তাই জৈন ধর্ম সূক্ষ্মতম হিংসাকেও বর্জন করে। এটাই পরিবেশ সংরক্ষণ, পারস্পরিক সম্প্রীতি ও শান্তির শ্রেষ্ঠ বার্তা।
আমরা সবাই জানি, জৈন ধর্মের ৫টি প্রধান নীতি আছে। তবে আরেকটি প্রধান নীতি হলো— অনেকান্তবাদ। এই দর্শন আজকের যুগে আরও প্রাসঙ্গিক। যখন আমরা অনেকান্তবাদে বিশ্বাস করি, তখন যুদ্ধ বা সংঘাতের পরিস্থিতিই তৈরি হয় না। তখন মানুষ অন্যের অনুভূতিও বোঝে এবং তাদের দৃষ্টিকোণও উপলব্ধি করে। আমি মনে করি, আজ বিশ্ববাসীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই দর্শন বোঝা।
সাথীরা,
আজ বিশ্বে ভারতের প্রতি আস্থা আরও গভীর হচ্ছে। আমাদের প্রচেষ্টা ও ফলাফল এখন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন? কারণ ভারত এগিয়েছে। আর ভারত যখন এগোয়, তখন অন্যদের জন্যও পথ খুলে যায়। এটাই জৈন ধর্মের মূল দর্শন— পরস্পরোপগ্রহো জীবানাম্! জীবন পারস্পরিক সহযোগিতাতেই চলে। এই চিন্তার কারণেই আজ বিশ্বের প্রত্যাশাও ভারতের প্রতি বেড়েছে। আর আমরা সেই অনুযায়ী প্রচেষ্টা জোরদার করেছি।
আজকের সবচেয়ে বড় সংকট হলো— ক্লাইমেট চেঞ্জ। এর সমাধান কী? সুস্থায়ী জীবনশৈলী। তাই ভারত শুরু করেছে মিশন লাইফ— লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেণ্ট। আর জৈন সমাজ তো শতাব্দী ধরে এভাবেই বেঁচে এসেছে। সারল্য ও সংযম আপনাদের জীবনের মূল ভিত্তি। জৈন ধর্মে বলা হয়েছে— অপরিগ্রহ। এখন সময় এসেছে এগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার। আমার আবেদন— আপনারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে থাকুন না কেন, মিশন লাইফ-এর দূত হয়ে উঠুন।
**
বন্ধুগণ,
আজকের পৃথিবী তথ্যের দুনিয়া। জ্ঞানের ভাণ্ডার সামনে রয়েছে। কিন্তু ন বিজ্জা বিণ্ণাণং করোতি কিঞ্চি—বিবেক ছাড়া জ্ঞান শুধু ভারী হয়, গভীরতা আনে না। জৈন ধর্ম আমাদের শেখায়—জ্ঞান আর আশা -এই দুয়ের মিলনেই সঠিক পথ পাওয়া যায়। আমাদের যুব সমাজের জন্য এই ভারসাম্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। যেখানে প্রযুক্তি আছে, সেখানে কৌশলও থাকতে হবে। যেখানে কৌশল আছে, সেখানে অগ্রগতিও থাকবে। নবকার মহামন্ত্র এই জ্ঞানের উৎস হয়ে উঠতে পারে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই মন্ত্র শুধু জপ নয়, এক দিশা।
বন্ধুগণ,
আজ যখন এত বিপুল সংখ্যক মানুষ, বিশ্বজুড়ে একসঙ্গে নবকার মহামন্ত্রের জপ করেছেন, তখন আমি চাই—আজ আমরা সবাই, যেখানেই বসে থাকি, শুধু এই হলে নয়, নয়টি সংকল্প নিয়ে ফিরি।
প্রথম সংকল্প—জল বাঁচানোর সংকল্প। আপনাদের অনেকেই মহুড়ী যাত্রা করেছেন। সেখানেই ১০০ বছর আগে বুদ্ধিসাগরজি মহারাজ একটি কথা বলেছিলেন, সেটি এখনও লেখা আছে—“জল একদিন মুদির দোকানে বিক্রি হবে।” ১০০ বছর আগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আজ আমরা সেই দিনে পৌঁছেছি। দোকান থেকে জল কিনে খেতে হচ্ছে। এখন আমাদের প্রতিটি ফোঁটা জলের দাম বুঝতে হবে, প্রতিটি ফোঁটা বাঁচানো আমাদের কর্তব্য।
দ্বিতীয় সংকল্প—একটি গাছ মায়ের নামে। গত কয়েক মাসে দেশে ১০০ কোটির বেশি গাছ লাগানো হয়েছে। এখন প্রত্যেক মানুষ নিজের মায়ের নামে একটি গাছ লাগাক, মায়ের আশীর্বাদের মতো সেটিকে লালন করুক। আমি যখন গুজরাটে সেবা করার সুযোগ পেয়েছিলাম, তখন তারঙ্গাজীতে তীর্থংকর বন তৈরি করেছিলাম। চেষ্টা করেছিলাম আমাদের ২৪ তীর্থংকর যে বৃক্ষতলে সাধনা করেছিলেন, সেগুলি খুঁজে লাগানোর। দুর্ভাগ্যবশত মাত্র ১৬টি গাছ সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। ভাবুন, যে বৃক্ষতলে তীর্থংকর সাধনা করেছেন, তা যদি লোপ পায়, আমাদের হৃদয়ে বেদনা হয় না কি? আপনারাও সংকল্প নিন—প্রত্যেক তীর্থংকরের বৃক্ষ আমি রোপণ করব, এবং সেই গাছটি আমার মায়ের নামে নিবেদন করব।
তৃতীয় সংকল্প—স্বচ্ছতার মিশন। স্বচ্ছতাতেও অহিংসা আছে, হিংসা থেকে মুক্তি আছে। আমাদের প্রতিটি গলি, মহল্লা, শহর পরিচ্ছন্ন হতে হবে। প্রত্যেককেই অবদান রাখতে হবে। দেবেন তো?
চতুর্থ সংকল্প—ভোকাল ফর লোকাল। আমার তরুণ বন্ধুদের বলছি—সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আপনারা যে জিনিস ব্যবহার করেন—ব্রাশ, চিরুনি ইত্যাদি—একটি তালিকা করুন। অবাক হবেন, কত বিদেশি জিনিস আপনার জীবনে ঢুকে পড়েছে। এবার ঠিক করুন—এই সপ্তাহে তিনটি কমাবো, পরের সপ্তাহে পাঁচটি, এরপর প্রতিদিন নয়টি করে কমাবো। আর এক একটি কমাতে কমাতে এক একটি নবকার মন্ত্র জপ করব।
বন্ধুগণ,
যখন আমি ভোকাল ফর লোকাল বলি, মানে যা ভারতে তৈরি হবে, তা শুধু ভারতে নয়, বিশ্বে ছড়াবে। যে সামগ্রী তৈরিতে ভারতীয়দের পরিশ্রম আছে, ভারতের মাটির সুবাস আছে, আমাদের তা কিনতে হবে এবং অন্যকেও অনুপ্রাণিত করতে হবে।
পঞ্চম সংকল্প—দেশ দর্শন। পৃথিবী ঘুরুন, কিন্তু প্রথমে ভারতকে জানুন। আমাদের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি সংস্কৃতি, প্রতিটি কোণা, প্রতিটি ঐতিহ্য অসাধারণ ও অমূল্য। আমাদের দেখা উচিত। আমরা যদি না দেখি, তাহলে অন্যরা কেন আসবে? যদি আমরা নিজের সন্তানদের ভারতীয় মহিমা না শিখাই, তবে মহল্লায় কে শেখাবে?
ষষ্ঠ সংকল্প—প্রাকৃতিক চাষের মন্ত্র গ্রহণ করা। জৈন ধর্মে বলা হয়েছে—জীবো জীবস্স নো হন্তা—এক জীব যেন অন্য জীবের হত্যাকারী না হয়। আমাদের মা ধরিত্রীকে রাসায়নিক থেকে মুক্ত করতে হবে। কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রাকৃতিক চাষের মন্ত্র গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দিতে হবে।
সপ্তম সংকল্প—স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গ্রহণ করা। খাদ্যাভ্যাসে ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রত্যাবর্তন হওয়া উচিত। মিলেট বেশি করে থালিতে আসুক। আর খাওয়ায় তেল ১০ শতাংশ কম হোক, যেন স্থূলতা দূরে থাকে এবং অর্থ সাশ্রয়ও হয়।
বন্ধুগণ,
জৈন পরম্পরা বলে—তপেণং তণু মংসং হৈ। তপস্যা ও সংযমে শরীর সুস্থ হয়, মন শান্ত হয়। এর একটি বড় উপায় হল—যোগ ও ক্রীড়া। তাই অষ্টম সংকল্প—জীবনে যোগ ও খেলা আনা। বাড়ি, স্কুল, অফিস, পার্ক—যেখানেই হোক, খেলা ও যোগ জীবনধারার অংশ হওয়া উচিত।
নবম সংকল্প—গরিবের সাহায্য। কারও হাত ধরা, কারও জন্যে খাদ্যের যোগাড়—এটাই প্রকৃত সেবা।
বন্ধুগণ,
এই নয়টি সংকল্প আমাদের নতুন শক্তি দেবে, নতুন প্রজন্মকে দিশা দেবে, সমাজে শান্তি, সৌহার্দ্য ও করুণা বৃদ্ধি করবে। তবে একটি কথা বলব—এই নয়টি সংকল্পের মধ্যে যদি একটিও ব্যক্তিগত স্বার্থে করা হয়, তবে করবেন না। যদি আমার দলের স্বার্থে করা হয়, তবে করবেন না। কোনও বাঁধন থাকবে না।
আমাদের রত্নত্রয়, দশলক্ষণ, ষোল কারণ, পারুষণ প্রভৃতি মহাপর্ব আত্মকল্যাণের পথ উন্মোচন করে। বিশ্ব নবকার মহামন্ত্র দিবস বিশ্বে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়াবে—আমার আমাদের আচার্য ভগবন্তদের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আছে, আপনাদের প্রতিও আছে।
আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে চারটি সম্প্রদায় একসঙ্গে এই আয়োজনে যুক্ত হয়েছে। এই করতালি মোদির জন্য নয়, চার সম্প্রদায়ের সকল মহাপুরুষদের চরণে নিবেদন করছি। এই অনুষ্ঠান আমাদের অনুপ্রেরণা, ঐক্য ও শক্তির প্রতীক।
আমাদের দেশে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে। যে কেউ ভারত মাতা কি জয় বলে, তাকে আমাদের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এটাই উন্নত ভারতের শক্তি।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা সৌভাগ্যবান যে দেশে বিভিন্ন স্থানে গুরু ভগবন্তদের আশীর্বাদ পাচ্ছি। আমি এই আয়োজনের জন্য সমগ্র জৈন পরিবারকে প্রণাম করছি। দেশে-বিদেশে যেসব আচার্য ভগবন্ত, মহারাজ সাহেব, মুনি মহারাজ, শ্রাবক-শ্রাবিকা যুক্ত হয়েছেন, তাঁদেরও শ্রদ্ধাভরে প্রণাম জানাই। বিশেষ করে জিতো-কে অভিনন্দন জানাই। নবকার মন্ত্রের জন্য যত করতালি পড়েছে, তার থেকেও বেশি করতালি জিতো-র জন্য হয়েছে।
জিতো অ্যাপেক্স-এর চেয়ারম্যান পৃথ্বীরাজ কোঠারি, প্রেসিডেন্ট বিজয় ভান্ডারি, গুজরাটের গৃহমন্ত্রী হর্ষ সাংঘভি, জিতো-র অন্যান্য পদাধিকারী ও দেশ-বিদেশ থেকে যুক্ত সকল মহামানব—আপনাদের এই ঐতিহাসিক আয়োজনের জন্য অসংখ্য শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ।
জয় জিনেন্দ্র। জয় জিনেন্দ্র। জয় জিনেন্দ্র।
SC/PK.
(Release ID: 2159685)
Visitor Counter : 7
Read this release in:
Odia
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam